#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৩ ক]
____________________
৭৬.
ঈশানের চোখে চোখ পড়তে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় মীরা ঈশানের সাথে যতবার সাক্ষাৎ হয়েছে প্রতিবার ছেলেটার রাগী মুখটাই দেখেছে সে।মাঝে মাঝে মীরার মনে প্রশ্ন জাগে এই ছেলের সাথে প্রেম করার মতো সাহস বোধহয় একমাত্র ঈশারি আছে।মীরার চোরা চাহনি দেখে কিঞ্চিৎ হাসলো ঈশান।
” মিস মীরা সব ঠিক ঠাক?”
“জি।”
” কিন্তু আমার কোন কিছু ঠিক নেই ঈশা নেই আমি ভালো থাকি কী করে বলুন তো?”
মীরা জবাবা দিলো না সে এখনো আড় চোখে তাকাচ্ছে ঈশানের দিকে।ভয়ে জড়োসড়ো এইটুকুনি হয়ে গেছে সে।
” আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি ঈশান ভাইয়া?”
” ঈশা কোথায়?”
” একই প্রশ্ন আমারো।”
” আপনি নিশ্চয়ই জানেন ঈশা কোথায় আছে ঈশার সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক।”
” আমি জানতাম আপনি আমাকে এই প্রশ্নটাই করবেন।ঈশার সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি আমরা সবাই চাই ঈশা ফিরে আসুক।”
ঈশান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।গতকাল থেকে মীরা আর দিহানের উপর নজর রাখা হয়েছে যতটুকু পারা যায় তাদের সম্পর্কে খোঁজ করেছে ঈশান কিন্তু সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।তবুও মনের প্রশান্তির জন্য এদের জিজ্ঞেসবাদ করলো ঈশান।দিহান দাঁড়িয়ে ছিল কিছুটা দূরে হাত ইশারায় তাকে ডাকলো ঈশান।
” বলুন ভাইয়া।”
” ঈশা কি কোন পাসপোর্ট করিয়েছে?”
” না ভাইয়া।এসব হলে আমরা অবশ্যই জানতাম।ঈশা হুটহাট গায়েব হওয়ার মেয়ে না আর আপনি যেটা বললেন ও হয়তো স্বাধীনতা চাইছে?আমার মনে হচ্ছে এসব কিছুই না আঙ্কেল আন্টি কখনো ঈশার চাওয়া পাওয়াতে বাধা দেয়নি।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ঈশা এসব করেনি।”
“তাহলে কি ওর বাবা মা করতে বাধ্য করছে?”
” তবে?”
” সেটাও বুঝতে পারছি না।”
হতাশার শ্বাস ছাড়লো ঈশান।অদূরে বসে অনু কাঁদছে দু’চোখ মেয়েটার ফুলে আছে।
.
ঈশাকে খুঁজতে যে ঈশান এমন চিরুনি অভিযান চালাবে তা পূর্বেই সন্দেহ করেছিল মুজাহিদ হাসান।মেয়েটা নিরাপদ স্থানে আছে কিন্তু ঈশান তাকে যে করে হোক খুঁজে বের করবেই এটা কি ছেলেটার জেদ নাকি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা?মেয়ের চিন্তায় সুলতানা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে পাতালে গেলেও ঈশাকে খুঁজে বের করবে ঈশান।
” যে পরিস্থিতি দেখলাম আমার মেয়েটার মনে হয় নিস্তার নেই।”
মুজাহিদ হাসানের কথায় মাথা দুলালেন সুলতানা।
” আমার মেয়েটা শেষ আমার মেয়েটার জীবন আমরা নিজেরাই শেষ করে দিলাম।”
” দোয়া করো ঈশাকে যেন খুঁজে না পায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেয়েটাকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিব।”
” এক কাজ করি ঈশানের মাকে সবটা জানিয়েদি তাহলে…”
” না না এই কাজ ভুলেও করা যাবে না।তার থেকে ভালো ঈশার পালিয়ে যাবার খবরটা ওনাকে জানানো যায় এতে নিশ্চিয়ই ঈশার প্রতি উনার ঘৃণা জমে যাবে।একবার যখন মনটা বিষিয়ে উঠবে তখন এই বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।”
.
আজ ঈশানের সারাটা দিন গেলো ঈশাকে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে উঠেনি তার।প্রতিটা স্থানে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে,শহরের প্রতিটা মহিলা হোস্টেলে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু ঈশার কোন হদিস নেই।জীবনের এমন কঠিন পর্যায়ে যে ঈশান পড়বে তা কখনো সে ভাবেনি।হাতের ফোনটা বেজে উঠতে স্কিনে মাহমুদার নাম্বার দেখে দ্রুত ফোন ধরলো ঈশান।
“আমি এসব কি শুনলাম?”
” কি শুনেছো তুমি?”
” ঈশা নাকি পালিয়েছে?”
” হুম।”
” আমায় আগে বলনি কেন?মেয়েটা কোথায় গেছে?সত্যি করে বলো ঈশান তুমি ঈশার সাথে খারাপ কিছু করনি তো?”
” আজব!আমি ওর সাথে খারাপ কি করবো?”
” তোর যে রাগ তোমার যে জেদ এতে মা রা মা রি বকাবকি তো সাধারণ ব্যপার।রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করোনি তো?”
” আমাদের মাঝে কোন ঝগড়া হয়নি কিছুই হয়নি হঠাৎ কি হলো কিচ্ছু জানি না।”
” এই কারণে কি কাল আমায় এত ব্যস্ততা দেখিয়েছো?সত্যটা বললে কি তোমার জাত চলে যেত?”
” আম্মু প্লিজ এসব বলে আমার মাথা বাকিটাও খারাপ করো না আমি অনেক প্যারায় আছি।”
” আমি কিচ্ছু জানতে চাই না আমি চাই ঈশা সুস্থা স্বভাবিক আগের মতো আমার কাছে আসবে ব্যস এইটুকুই।”
ঈশান ফোন রাখলো মাহমুদা কি করে জানলো এসব কথা?রুমা কি বলেছে?হয়তো।
৭৭.
সময় পেরিয়ে গেল আরো দুইদিন ঈশা এখানে আসার তিনদিন পূর্ণ হলো।মেয়েটা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে মলিন নিষ্প্রাণ।ঈশার দিকে যতবার তাকান মনটা ভেঙ্গে যায় শম্পার।অলক বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যা সাতটায় বসার ঘরে ঈশাকে দেখে পুনরায় চিন্তা পড়লো সে।এই মেয়েটা কে?সে কোথায় দেখেছে এই মেয়েটাকে?
” নেহা একটু ভেতরে আসবে?”
অলকের ডাকে সাড়ালো দিলো নেহা।নেহার ভাই অলক বাড়ি থেকে অফিসটা বড্ড দূরে হয়ে যায়।তাই যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধার জন্য এই বাড়িতে তার থাকা হয়।
নেহাকে আসতে দেখে বিছানায় বসলো অলক নেহা বসলো তার ভাইয়ের পাশে।
” কিছু বলবে ভাইয়া?”
” ঈশা মেয়েটা কে?এখানে কেন থাকছে?”
” আর বললো না,মেয়েটার যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে নাকি খুব বড়লোক,বাড়ি ঘর,সম্মান প্রতিপত্তি কোন অংশে কম নেই।কিন্তু হঠাৎ তারা নাকি জানতে পারে ছেলের নাকি কি কি সমস্যা আছে।সেসব আমি জানি না আমাদের বলেনি।তাই মেয়েটা পালিয়ে এসেছে এখানে, অবশ্য মেয়েটা পালিয়ে আসেনি মেয়েটার বাবা মা এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে আর ছেলেকে বলেছে মেয়ে পালিয়েছে।যে মেয়ে পালায় সেই মেয়েকে কে আর ঘরের বউ করতে চাইবে?”
” এত নাটকের কি দরকার ছিল?বিয়ে ভেঙে দিলেই হতো।”
” ছেলেদের সাথে এরা পাল্লা দিয়ে পারবে?তাই তো এত নাটক।”
” ওহ যাও তুমি।”
নেহা চলে গেলো অপরদিকে অলক অবশেষে চিনতে পারলো ঈশাকে।সেদিন রাতে তার বস ঈশান শাহরিয়ারের সাথে একটি মেয়েকে দেখে খটকা লাগে অলকের।তাদের অফিসে এতদিন সমালোচনা হয়েছিল তাদের বস ঈশানের নাকি এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে গেছে কিন্তু কে সেই ভাগ্যবতী নারী তার দেখা পায়নি কেউ।অলক কয়েক ঘন্টা মন দিয়ে ভাবলো ঈশার ব্যপারে সে কি ঈশানকে সব কথা জানাবে?নাকি মেয়েটার পক্ষ নেবে।ভাবনা চিন্তার অতলে হারিয়ে গেলো অলক কিন্তু স্বার্থের দুয়ারে ডুবলো সে।মনে মনে স্বার্থের কথা ভেবে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে নিল।
রাত নয়টায় বাড়ির বাইরে গেলো অলক বাড়ি পেরিয়ে প্রধান সড়কে উঠে হাটলো উদ্দেশ্যহীন।পকেট থেকে ফোন নিয়ে দ্রুত ডায়াল করলো ঈশানের নাম্বারে।অফিসের কর্মচারী হিসেবে কাজের যত কথা আছে সব কথা রাসেলের সাথে বলা হয় তাদের।সামনাসামনি যোগাযোগ ছাড়া ফোন কলে কখনো ঈশানের সাথে কথা হয়নি অলকের।তাই কোথা থেকে কি শুরু করবে মনে মনে সাজিয়ে নিল অলক।
ঈশানের ফোনে অলকের নাম্বার ছিল।স্কিনে অলক নামটা ভেসে উঠতে কিছুটা বিরক্ত হয় এখন অফিসের আলাপ করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না।মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে সে।কাধে ঝুলে আছে ভেজা তোয়ালেটা।অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও অলকের ফোন ধরলো ঈশান।
“স্যার আমি অলক।”
” বলো অলক।হঠাৎ আমায় ফোন করলে?অফিসের বিষয়ে কোন কথা থাকলে রাসেলকে ফোন দাও আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত।”
” না না অফিস নয়।আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা জানানোর ছিল।”
” গুরুত্বপূর্ণ!”
” জ..জি অনুমতি পেলে বলতে পারি।”
” বলো”
” সেদিন মেলায় আপনার পাশে একজন মেয়েকে দেখেছিলাম আমরা যতদূর জানি আপনার এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে গেছে স্যার।তবে উনি কি আপনার উডবি ওয়াইফ?”
” আমি তোমায় আমার পার্সনাল কথা কেন শেয়ার করবো?তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি অলক।”
“দয়া করে রেগে যাবেন না স্যার আপনার পাশে যিনি ছিল তিনি..”
” হ্যা সে আমার উডবি ওয়াইফ আর কিছু? ”
” উনার নাম ঈশা?”
” তুমি ওর নাম কি করে জানলে?অলক সোজাসাপটা কথা বলো কেন ফোন করেছো?”
“ঈশা ম্যাডাম নিখোঁজ তাই না?”
” তুমি জানলে কি করে?”
” ঈশা ম্যাডামের খোঁজ আমি জানি স্যার।তিনি আমার নাকের ডগায় ঘুরছেন।”
” কি!আমায় সবটা খুলে বলো অলক প্লিজ তুমি যা চাও তাই পাবে প্লিজ অলক।”
ঈশানের কথায় ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো অলক।
” উনি আমার বোনের শ্বশুর বাড়িতে আছেন আর এখানে আসার মূল কারণ তার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ছেলের নাকি গোপন কোন তথ্য তারা জেনেছে।ছেলের চরিত্রে সমস্যা যাই হোক এমন ছেলের সাথে ঈশার বাবা মা কিছুতেই মেয়ে বিয়ে দেবেন না।ছেলের ক্ষমতার কাছে তাদের নত হতেই হবে তাই তো মেয়েকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।”
দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো ঈশান।রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে। ঈশার বাবা মা এতটা চালবাজ।খুব ভালো অভিনয় করেছে তারা এরাই পুরুষ্কার পাওয়ার যোগ্য।
” ঈশা কোথায় আছে আমায় ঠিকানাটা দাও অলক।”
” তার আগে বলুন কোন সিনক্রিয়েট করবেন না আমার বোনের শ্বশুর বাড়িতে আমি চাই না কোন বদনাম রটাতে।”
” সিনক্রিয়েট তো আমি এমনিতেও করবো না।দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার।এবার বলো তুমি কি চাও অলক?বাড়ি,গাড়ি,জমি,নাকি দেশ ছাড়তে চাও?”
” আমার কিচ্ছু চাই না আমাকে শুধু প্রমশন করে দিন।উচ্চপদস্থ কোন আসন গ্রহন করার ব্যবস্থা করে দিন।একদিনে ত্বরান্বিত বড়লোক হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই, আমি না হয় ধীরে ধীরে পয়সা কামাবো।”
” তুমি খুব বুদ্ধিমান অলক।”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে শব্দ করে হাসলো ঈশান তার হাসিতে তাল মেলালো অলক।
.
রাত প্রায় এগারোটা বাজতে চললো অলক এখনো বাড়ি ফিরেনি তাই এখনো কেউ খেতে বসেনি।ঈশা তার কক্ষে ঘুমে কাবু।হঠাৎ দরজা করাঘাতের শব্দে দরজা খুলতে যায় নেহা।সে ভেবেছিল তার ভাই এসেছে কিন্তু দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়।
” আপনি কে?কাকে চাই?”
” ঈশাকে চাই।”
” ঈ..ঈশা!ঈশা কে আমরা চিনি না চলে যান এখান থেকে।”
নেহা ভয় পেয়ে যায় দ্রুত দরজা রুদ্ধ করতে গেলে থাবা মেরে পুনরায় দরজা খুলে ফেলে ঈশান।নেহাকে সাইড কাটিয়ে বড় বড় পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে সে।তার সঙ্গে একে একে প্রবেশ করে বাইশ জন গার্ড রাসেল গিয়ে দাড়ালো ঈশানের পাশে।এক সঙ্গে এতগুলো মানুষ দেখে ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো নেহা।একে একে রুম থেকে বেরিয়ে আসে বাকি সদস্যরা।শম্পা সাঈদ ঈশানকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না এরা ঈশাকে খুঁজতে এসেছে।
সাঈদ কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে হাত ইশারায় তাকে থামিয়ে দেয় ঈশান।
” কোন কথা হবে না কোন আওয়াজ হবে না।আমি আমার কাজ সেরে চলে যাব।যদি কেউ কোন চা….”
ভেতরের কক্ষে পর্দার আড়ালে দুটো ছোট্ট পা দেখে চুপ হয়ে যায় ঈশান।এখানে একটা বাচ্চা আছে, ছোট ছোট পা ফেলে বাচ্চাটা এগিয়ে আসছে।পর্দা ঠেলে মায়ের সঙ্গে চোখা চোখি এক গাল হাসলো বাচ্চাটা।এই ছোট্ট বাচ্চাটি পিতামাতা নেহা এবং সাঈদ আর বাচ্চাটির নাম নুহা।বাচ্চাটিকে ঝটপট হাতে কোলে তুলে নেয় ঈশান।তার দাড়ি ভরতি গাল বাচ্চাটার গালে মেশাতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।অদ্ভুত! এই বাচ্চাটা কি ঈশানকে আগে দেখেছে?একদমি না অথচ ঈশানের সাথে কত সুন্দর মিশে গেছে।বাচ্চাটাকে কোল থেকে নামালো না ঈশান কয়েক মিনিট তার সাথে খুনশুটি করে দিয়ে দিলো রাসেলের কোলে।বাকিদের উদ্দেশ্য করে বলে,
” আমি আমার হবু স্ত্রীকে নিয়ে যেতে এসেছি আশা করি আপনাদের কোন বাঁধা থাকবে না?”
ঈশানের দেখে স্তব্ধ সবাই তাদের মুখে রা নেই।ঈশান বড় বড় পায়ে শব্দহীন পুরোটা ঘর খুঁজে দেখলো।ঈশাকে।অবশেষে পেলো শেষের একটি কক্ষে মেয়েটা কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে।ঈশানের সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষে ঝরে পড়লো।হাটু মুড়ে বসলো ঈশার পাশে।
“বাহ!আমার দিন দুনিয়া অশান্ত করে তিনি শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন।”
ঈশান ক্লান্ত মুখে কিঞ্চিৎ হাসলো ঈশার এলোমেলো চুলে বুলিয়ে দিলো হাত।ঈশার গাল চাপড়ে তাকে জাগানোর চেষ্টা চালালো ঈশান।কয়েকবার চেষ্টার ফলে মেয়েটা উঠেও গেলো সম্মুখ ঈশানকে দেখে ছিটকে উঠে বসলো সে।কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় সবটা কেমন কেমন লাগছে সবচেয়ে বড় কথা ঈশানকে দেখে তার সবটা থমকে গেছে।
” কি ভেবেছিলে আমি তোমায় পাব না?চোর পুলিশ খেলতে আর ভালো লাগছে না ঈশা, চলো বাড়ি যাই।”
” আমি কোথাও যাব না।কোথাও না।
ঈশা লাফিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো তার উদ্দেশ্য এক ছুটে পালানো কিন্তু বসার ঘরে আসতে পা থমকে যায় তার।পুরো ঘরটা অচেনা মানুষে ভরতি বাড়ির সবাই চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে ঈশার বুঝতে বাকি নেই এখানে কি হয়েছে।ঈশান এসে দাঁড়ালো ঈশার পিছু।
” চলো ঈশা সবাইকে বিদায় জানাও।”
” আমি যাব না।”
” কেন?কেনো যাবে না?”
” কৈফয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।”
” আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।আমাকে খারাপ হতে বাধ্যে করো না।”
” যে খারাপ তাকে আর কী খারাপ করবো?”
ঈশান ঈশার জেদের কাছে হার মানতে রাজি নয় মেয়েটাকে ভয় দেখানো প্রয়োজন।নেহার কোল থেকে নুহাকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো ঈশান ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” তুমি যদি না যাও বাচ্চাটাকে আমি নিয়ে যাব।”
নেহা শব্দ করে কেঁদে উঠলো দ্রুত বসে পড়লো ঈশানের পদতলে।সে তার বাচ্চাকে হারাতে পারবে না কিছুতেই না।নেহার দিকে তাকিয়ে কলিজাটা মুষড়ে উঠলো ঈশার ঈশানের কোল থেকে নুহাকে নিয়ে বলে,
” আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক আমি চাই না।আমি যাব চলুন।”
ঈশান হাসলো সে জানতো ঈশাকে এভাবে বাধ্য করা সম্ভব।নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে ঈশানের পাশাপাশি চলছিল ঈশা।কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর পিচ ঢালা সড়ক আর সেখানে ঈশানের গাড়ি রাখা।তাই এইটুকু রাস্তা তাদের হেটে যেতে হবে।
” তুমি ভেবেছিলে আমার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁঁচবে?কি বলেছিলাম মনে নেই?”
” আপনি জঘন্য।”
” এই জঘন্য মানুষটার সাথেই তোমার থাকতে হবে।কথা দিয়েছিলে তো আজীবন পাশে থাকবে এই কথা তোমার রাখতে হবে ঈশা।”
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৩ খ]
_____________________
এই মুহুর্তে ঈশানে মনে হচ্ছে সে সেই আগের ঈশার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।সেই প্রথম দিনের ঈশা যে তার সাথে কথা বলতে একবারেও ভাবেনি মনে রাখেনি সংশয় শুধুই ছিলো জেদ।ঈশানের সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ঈশানের গালে চড় বসালো ঈশা।আশেপাশে গার্ডরা নড়ে চড়ে উঠে কেউ কেউ এগিয়ে যায় ঈশাকে বাঁধা দিতে কিন্তু তাদের হাত ইশারায় থামিয়ে দিলো ঈশান।ঈশার চোখে ভাসছে নোনা জল সেই চোখে চোখ রেখে হাসলো ঈশান।হাসবে না কেন সে?কে যেন বলেছে চোখ কথা বলে এই যে মেয়েটার চোখ কথা বলছে।ভালোবাসার শুভ্র মেঘগুলো রাগ জেদ অভিমানের কাছে হেরে কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। ঈশা তার গায়ে হাত তুলেছে এটা তার আত্মসম্মানে লেগেছে কিন্তু এখন এত হিসেব নিকেশে প্রশ্রয় দেবে না সে।কেন দেবে?ভালোবাসা হলো সমান সমান এত হিসেবের কি আছে?এই তো সেদিনে কথা মাহমুদার হাতে চড় খেয়ে থমকে ছিলো ঈশান।রাসেল ভয়ে ঈশানকে আগলে নেয় ভেবেছিলো ছেলেটা উলটা পালটা কান্ড ঘটাবে কিন্তু তাকে অবাক করে
কিছুক্ষণ পরে আবার স্বাভাবিক হয় ঈশান।পুণরায় লেনাদেনার হিসেব কষতে বসে মাহমুদার সঙ্গে।মাকে সে ভালোবাসে মা র বে কা ট বে যা ইচ্ছে করবে তবুও সে মাকে ভালোবাসে।দ্বিতীয় ভালোবাসার মানুষটি ঈশা এই যে রাগে জেদে আরেকবার ভুল করেছে তবুও ঈশান নিরব।ঈশা তাকে মেরেছে তাতে কি পরবর্তীতে দ্বিগুণ ভালোবাসা আদায় করে শোধ তুলবে যাই হোক ঈশানের কাছ থেকে এই মেয়ের নিস্তার নেই কোন ভাবেই না।
” ও ঈশা একটা চড় কেন দিলে আরেকটা দাও।”
” মন তো চাইছে কিন্তু বিবেকে বাঁধছে।আমি ভুলে গেছিলাম আপনি মানুষ নয় পশুর সমতুল্য ওই যে হিংস্র পশু যারা সর্বদা নিজের সার্থ বোঝে।”
“আমার ভালোবাসার মূল্য নেই তোমার কাছে?”
” আমার জীবনে যদি কোন ভুল থাকে তবে তার মাঝে আপনাকে ভালোবাসাটা হবে সব ভুলের মাঝে প্রধান ভুল।”
” সব মেনে নিবো তবে আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করো না মেয়ে এটা আমি মানতে পারবো না।”
“ধরে নেন আমি ভুল করেছি এবার আমায় ক্ষমা করুন চলে যান এখান থেকে।”
“বাসায় চলো ঈশা আমায় দেখে কি তোমার মায়া লাগে না?আমি যে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত তুমি বুঝতে পারছো না?”
” আমি যাব না ঈশান।”
” কেন যাবে না?”
“বাংলা কথা বুঝেন না?বলেছি যখন যাব না তখন যাব না।”
“তুমি এত জেদি কেন বলতো?আমার রাগ জেদের কাছে সবাই পরাজিত হয় আর আমি হই তোমার কাছে একে বোধহয় বলে ভালোবাসার হাতিয়ার।”
” আপনি চলে যান।যদি না জান তবে তবে উমম… আমি কিন্তু আমার ক্ষতি করবো।”
ঈশান হতাশার শ্বাস ছাড়লো।হাটুতে ভর করে ঝুঁকে পড়লো খানিকটা।ঈশা তার সম্মুখে ছিলো সুযোগ বুঝে মেয়েটার হাত ধরে টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।আশেপাশে গার্ডরা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে।লজ্জায় মিহিয়ে যায় ঈশা অথচ ঈশান নিলজ্জের মতো ঈশার কপালে নিজের কপাল ঘেষে।ঈশার মাথা ঈশানের বুকের মাঝে ঠেকেছে যার দরুনে তাকে ঝুকতে হয়েছে বেশ কিছুটা।
” ছয় ফিট লম্বা হয়ে কি লাভ হলো বলতো?সেই তো পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি বউয়ের কথায় উঠ বস করছি।”
ঈশা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো নিজেকে কিন্তু ঈশান তাকে ছাড়লো না।দুজনের হাত টানাটানির মাঝে তাকে কোলে তুলে নেয় ঈশান।ছেলেটার কান্ডে ভীষণ লজ্জায় পড়ে ঈশা আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
৭৮.
মাঝ রাতে ঈশাকে এই বাড়িতে দেখে ভূত দেখার মতো অবস্থা হলো মাহমুদার।তিনি কি না কি করবেন করবেন তিনি ভেবে পেলেন না।ঈশান গটগট পায়ে ঈশাকে নিয়ে দোতলার দিকে গেলো।একটি ফাঁকা কক্ষে ঈশাকে এনে দাঁড় করালো সে।দ্রুত এসি ছেড়ে রুমটা পরখ করে বলে,
” ঠিক আছে?এই রুমে থাকতে পারবে তো?নাকি আমার রুমে যাবে?”
ঈশান আড় চোখে তাকালো ঈশার দিকে মেয়েটা দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে মেঝেতে।মেয়েটাকে রাগিয়ে দিতে ঈশান পুনরায় বলে,
” না থাক এখন আমার রুমে গিয়ে কাজ নেই যখন যাওয়ার হবে তখন তুমি যেতে না চাইলেও আমি নিয়ে যাব।”
” আপনি বুঝতে কেন পারছেন না আমি থাকবো না আপনার সাথে।”
” কি বললে?আমার রুমে থাকতে চাও?ঈশা তুমি অনেক দুষ্টু হয়ে যাচ্ছ।”
” আরে বয়রা নাকি?”
” কি বললে খিদে পেয়েছে?দাঁড়াও আমি ব্যবস্থা করছি।”
ঈশান যেতে উদ্যত হলে তার পথ রুদ্ধ করে ঈশা।ছেলেটার বুকে থাবা মে রে সরিয়ে রাগ নিয়ে বলে,
” কি শুরু করেছেন আপনি?আমার ইচ্ছার অনিচ্ছার কোন দাম নেই আপনার কাছে?”
” তুমি কেন যেতে চাইছো সেটা আগে বলো।”
” কোন চরিত্রহীনের সাথে থাকতে চাই না আমি।”
” সত্যটা না জেনে আমার চরিত্রে তুমিও দাগ লাগিয়ে দিচ্ছো?”
” কোন কিছু অজানা নয় আমার কাছে সবটা জানি আমি।”
” যা জান সব একপক্ষের আমার টা শুনবে কে তবে?সব জানতে পারবে একটু অপেক্ষা করো তোমার এই উত্তেজিত মস্তিষ্কে আমার কোন কথাই ঢুকবে না।আগে মাথা ঠান্ডা করো।”
” শুনতে চাই না আমি যা বোঝার বুঝে নিয়েছি।আমার এখন মনে হচ্ছে আপনি প্রতিশোধ নিতে আমায় বিয়ে করতে চাইছেন।পদে পদে আপনাকে অপমান করার শোধ নিতে চাইছেন তো?”
” দুই লাইন বেশি বোঝা কি তোমার বদ অভ্যসে তৈরি হয়েছে?”
” ঈশান..”
“আমি কোন কথা শুনতে চাই না।থাকো তুমি আমাকে এবার স্বস্তি দাও শান্তি দাও যা কথা হবে কাল সকালে হবে।”
ঈশান দ্রুত বেরিয়ে যায় কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার আগে বাইরে থেকে ঈশার দরজা লাগিয়ে দিতে ভুললো না।অপরদিকে মাহমুদাকে জানিয়ে রাখা হলো সে যেন ঈশার কক্ষে না যায়।প্রচন্ড রাগ আর বিরক্তি নিয়ে ঈশান চলে গেলো নিজের কক্ষে।
.
ঈশান তার কক্ষের দ্বার রুদ্ধ করার অপেক্ষায় ছিলেন মাহমুদা।ঘড়ির কাটা এসে থামলো চারের ঘরে।নিশব্দে ঈশার কক্ষে প্রবেশ করেন মাহমুদা।মেয়েটা মাথায় রাত রেখে কাঁদছে দরজায় মাহমুদাকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।
” ঈশা তোমার কি হয়েছে?”
” আমি চলে যাব আন্টি আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন দয়া করে আমি আপনার পায়ে…”
ঈশা মাহমুদার পা ধরার আগে তিনি ছিটকে সরে যান।মেয়েটাকে আগলে নেন নিজের কাছে।
” কি হয়েছে তোমার?ঈশান কিছু বলেছে?আমায় বলো ছেলেটার ব্যবস্থা আমি করছি।”
” আপনার আড়ালে আপনার ছেলে কি করে বেড়ায় আপনি জানেন?”
ঈশা একে একে সবটা বললো প্রথমে মাহমুদা কিছুতেই কথাগুলো বিশ্বাস করতে চাননি কিন্তু যখন ঈশা বললো ঈশান রেপিস্ট তখনি কলিজাটা ছিন্নভিন্ন হলো তার।
” মিথ্যা অপবাদ আমার ছেলেকে তুমি দিও না।”
” আমি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি?তার কাছের মানুষেরাই তার নামে অভিযোগ জানাচ্ছে।ঈশান আমাকে বলেছে তার বাবার সাথে তার সম্পর্ক ভালো নয় কেন ভালো নয়?কারণ ঈশান অন্যয় করেছে ঈশান একজন রেপিস্ট।”
” আমার ঈশান অন্যয় করেনি।না জেনে এসব বলছো যখন প্রমাণ হবে সবটা মিথ্যে তখন কি করবে?”
” ঈশান যে অয়ন ভাইকে গুম করেছিল এসব কিন্তু আমার পরিবার জেনে গেছে তারা এই সম্পর্ক মানবে না।হাজার বাহানা দিয়েও সম্পর্ক জোড়াতালি দেওয়া সম্ভব নয়।”
” আমার তো মনে হচ্ছে এই সম্পর্ক তুমি ভাঙ্গতে চাইছো।যদি ভেঙ্গে যাও তবে সত্যটা জেনে নাও ঈশানের ফুফাতো বোনের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই ওরা বন্ধুর মতো চলাফেরা করেছে কিন্তু ওই মেয়ের চরিত্রের….”
” চুপ করুন আর কত সত্যকে আড়াল করবেন আন্টি?নিজের ছেলেকে বাঁচাতে একটা মেয়ের চরিত্রে দাগ দিচ্ছেন?”
” তুমি আমার ছেলের যোগ্য নও।চলে যাবে তো?যাও আমি তোমার যাওয়ার ব্যবস্থা করবো।”
রাত বাড়লো চারিদিকে স্তব্ধ পরিবেশ। ঈশার প্রতি যে ক্ষোভ জমা হয়েছে মাহমুদার তা হয়তো সহজে মিটবে না।তিনি নিজ দায়িত্বে দারোয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে ঈশাকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করলো।ছাড়া পেয়ে ঈশা এক দৌড়ে আঁধারে মিলিয়ে গেলো।মাহমুদা তাকিয়ে রইলেন মেয়েটার দিকে মনে মনে বললেন,
” অন্তত সবটা শুনে যেতে।আমার ছেলের চরিত্রের দোষ নেই এই কথা আমি কাকে বোঝাবো?”
মাহমুদা দীর্ঘ আক্ষেপ নিয়ে গেটে বন্ধ করলেন।নিজ কক্ষের ঝুলন্ত বারান্দা থেকে সবটা দেখলো ঈশান।অন্ধকার বারান্দায় তাকে দেখতে পায়নি মাহমুদা যদি দেখতে পেতো তাহলে এক নিমিষে তার অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে দিত ঈশানের ওই রক্তিম চোখের তীর্যক চাহনিতে।
৭৯.
শম্পা ইতিমধ্যে মুজাহিদ হাসানকে জানিয়ে দিয়েছে ঈশাকে নিয়ে গেছে ঈশান আর এই ঘটনা জানার পর অস্থিরতা কমছে না তার।ভয়ে বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে গলদেশ।মেয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা গেছেন সুলতানা।তাদের এই লুকোচুরি খেলার ভবিষ্যত কি?নিজেরা ভেবেও এর সমাধান পাননা তারা।
গালে অন্য কারো স্পর্শে কেঁপে উঠলো ঈশা।পিটপিট চোখে তাকাতে সম্মুখে ঈশানকে দেখে ঘুরে অন্য পাশে শুয়ে পড়লো।ঈশার কান্ডে কিঞ্চিৎ হাসলো ঈশান তবুও বিরক্ত করা ছাড়লো না ঈশাকে পুনরায় গালে চুলে বুলিয়ে দিল অবাধ্য হাত।ঈশা বিরক্ত হলো দ্রুত উঠে বসে চোখ মুখ কুচকে তাকালো ঈশানের দিকে।
” আমার জিন্দেগী জাহান্নাম বানিয়ে কি ক্ষান্ত হননি?এখন আবার কি শুরু করেছেন?”
” এক ঘুমে দুপর করেছো এবার উঠে যাও।আমার ঘুম হারাম করে তুমি আরামে ঘুমাচ্ছো?মনে কি দয়া মায়া নেই তোমার?”
” আমি আপনার ঘুম হারাম করেছি?আর আপনি যে আমার জীবনটা রসাতলে ডুবিয়ে দিলেন।”
” ওসব কথা ছাড়ো।কি ভেবেছিলে শাশুড়ী পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে আর শাশুড়ীর ছেলে কিচ্ছু জানবে না?গেমটা কেমন খেললাম জান?”
ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।অপন মনে তাকালো জানলার বাইরে।গতকাল রাতে ঈশানের বাড়ি ছেড়ে দৌড়তে দৌড়তে আচমকা হোচট খায় সে।হঠাৎ কয়েকজন অপরিচিত লোক এসে তার হাত মুখ বেঁধে দিলো তুলে নিলো গাড়িতে।বেশ কয়েক ঘন্টা পর গাড়িতে উপস্থিত হয় ঈশান।তারপর পালটে গেলো তাদের গন্তব্য।বার বার ঈশানের কাছে হেরে যেন নত স্বীকার করেছে ঈশা কিন্তু আদৌ কি তা সত্যি?
ওয়াশরুম ছেড়ে বারান্দায় দাড়ালো ঈশা দূর দুরান্তে কয়েকটি বিল্ডিং ছাড়া আর মানুষজনের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না।নয় তলা একটি ভবনে সে মানুষের দেখা পাবে কি করে?গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলেও হয়তো শুনবে না।আজকের আকাশে কালো মেঘ জমেছে গাঢ় মেঘ।ওড়নার সাহায্যে ভেজা মুখটা মুছলো ঈশা।আকস্মিক উদরে কারো হাত ছোঁয়ায় চমকে গেল সে।এই হাত ঈশানের বুঝতে সময় লাগলো না তার ঈশানের হাত ছাড়িয়ে সরে গেলো দূরে।
” ঈশান!”
” চরিত্রহীনরা মাঝে মাঝে এমন অসভ্যতা করে এটা কোন ব্যপার না।”
ঈশানের সূক্ষ্ম খোঁচা বুঝতে পারলো ঈশা।বারান্দা ছেড়ে কক্ষে ফিরলো সে পুরো রুমটা গোছগাছ অন্য রকম সৌন্দর্যে ঘেরা।
” এটা রাসেলের ফ্লাট আর আপাতত আমাদের বুঝলে?”
” না বুঝিনি।”
” ঠিক আছে কাছে আসো পাশে বসো ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি।আসো না।”
ঈশানের কথায় বিরক্ত হওয়ার ভাব দেখালো ঈশা।উঠে গিয়ে পুরো ফ্লাটটা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো।এখান থেকে যে তার পালানো হবে না তাতে সে সুনিশ্চিত কিন্তু এই ঈশানের জীবনটা ছারখার করে দিতে হবে এতটাই ছারখার করবে যে ঈশান তার নাম শুনলে বিরক্ত হয়।
” কি ভাবছো পালাবে?”
” নাহ আমি ভাবছি আপনার ওই নোংরা চোখের আড়াল হবো কি করে।আপনার ওই নোংরা চোখের নোংরা দৃষ্টি আর কয় জনের উপর নিক্ষেপ করেছেন ঈশান?”
” কসম করছি যদি ওই নোংরা দৃষ্টিতে দেখার স্বাদ জাগে তবে আমি শুধু তোমাকেই দেখবো বিকজ,ওয়ান্ট টু লস মাই ভার্জিনিটি টু মাই লাভড ওয়ান।
ঈশানের শেষোক্ত বাক্যে হোচট খেল ঈশা।লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো তার মুখ, দু’কান কেমন ঝাঝা করছে মনে হচ্ছে গরম ধৌয়া উঠছে।এই ছেলের সামনে আর এক মুহূর্তেও না।
#চলবে___
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৪]
_________________
ঈশার কাছে কোন ফোন নেই বাবা মায়ের খোঁজ নেওয়া হলো না নিশ্চিয়ই তারা চিন্তা করছেন?জীবনের এই গোলকধাঁধা থেকে কবে নিস্তার পাবে জানা নেই তার।কালো মেঘে ঘেরা আকাশটা মৃদ্যু ঢাকছে শন শন বাতাস সানন্দে ঘরে প্রবেশ করছে মন প্রাণ সতেজ হলো ঈশার।সে আড় চোখে তাকালো জানলার বাইরে আলিশান এই কক্ষে তার একটুও মন টিকছে না ঈশানের সাথে একা থাকাটাই কি সবচেয়ে বড় ভয়?বদ্ধ ঘর,শীতল পরিবেশ একা দুজন কপোতকপতি যদি উনিশ থেকে বিশ হয়ে যায়?ভাবতেই গায়ে কাটা দিলো ঈশার।
” এই ঈশা..”
ঈশানের কণ্ঠে ঘাড় ঘুরালো ঈশা ছেলেটা হন্তদন্ত পায়ে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।
” দুপুরে কী খাবে?”
” বিষ আছে?একটু বিষ দেন।”
ঈশান পুনরায় হন্তদন্ত পায়ে পুরো ঘর পাইচারি করলো সে যেন কিছু খুঁজছে।ঈশার কক্ষে ফিরে এসে দ্রুর প্রবেশ করলো ওয়াশরুমে এবং বের হলো টয়লেট ক্লিনার হারপিক হাতে।ঈশানের কান্ডে ভ্রু যুগল কুচকে গেলো ঈশার।
” সলিড বিষ তো নেই হারপিক আছে আশা করি এটাতে তোমার কাজ হবে।নাও।”
সে তো কথার কথা বলেছে আর ঈশান সিরিয়াসলি ভেবে নিলো?আহাম্মক বনে ঈশানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ঈশা।মুখ ঘুরিয়ে বলে,
” না হারপিকে চলবে না।ঘুমের ওষুধ আছে?”
” কি দরকার?”
” মানুষ ঘুমের ওষুধ দিয়ে কি করে?”
” তোমার মনে কি চলছে বলতো?এমন আবহাওয়া দেখে কি মাথা টাথা উল্টে গেছে?আমাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কি করতে চাও তুমি?যা করার সামনা সামনি করো বাঁধা দিব না ফাজিল মেয়ে।”
ঈশান বকতে বকতে চলে গেলো পাশের রুমে।অপর দিকে ঈশা তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে। এই ছেলে কি দুই লাইন কম বুঝতে পারে না?বেশি বুঝে কোন আক্কেলে?
বাতাসের গতি বেড়েছে এলোমেলো উড়ন্ত পর্দাগুলোর দিকে ঈশা তাকিয়ে ছিল আপন মনে।তখন কক্ষে আসে ঈশান হাতে তার এক প্লেট ভাত আর মাংস।ঈশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
” এটা খেয়ে নাও।”
” খাব না।আগে আমাকে বাবার সাথে কথা বলতে দিন।”
” না খেলে না খাবে তবুও কথা বলতে দিব না।”
” আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে?”
“বাড়াবাড়ি আমি নয় তুমি করছো যদি কোন সমস্যা থাকে সামনা সামনি আলোচনা করো,সবটা খুলে বলো।এভাবে সবার চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর কোন মানে নেই।”
” মানে আছে ঈশান।”
” তোমার কোন কথাই আমি শুনতে চাই না এখন খাবে।দ্রুত খাবারটা শেষ করো।”
ঈশা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলো ঈশানো বসে ছিল কিছুটা দূরে।সে দেখতে চায় ঈশা কতটা বাড় বেড়েছে আজ যদি খাবার না খায় তবে একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে।ঈশা ঘুরে তাকালো পেছনে ঈশান তাকে সূক্ষ্মভাবে পরখ করছে ছেলেটার চাহনি মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না।ঈশা খাবারের থালটা এগিয়ে নিল ছোট ছোট লোকমা তুলে শেষ করলো পুরো খাবারটা।
কথায় আছে যত গর্জে তত বর্ষে না হলোও তাই কালো মেঘে গম্ভীরভাব এঁটে থাকা আকাশটা কয়েক মুহূর্তে ঝকঝকে সাদা মেঘে ঢেকে গেছে।দূরে থাকা সূর্য্যি মামাটা ফিক করে হাসছে তার রোদের ফালি এসে নামলো ঈশার জানলায়।দেয়ালে থাকা মস্ত বড় টিভিটা অন করলো ঈশান সবটা দেখে শুনে বুঝে রিমোট ছুড়লো ঈশার দিকে।
” আমি বাইরে যাব ভালো না লাগলে টিভি দেখবে।খিদে পেলে কিচেনে চেক করবে পেয়ে যাবে।আরেকটা কথা, ছাড়া পাওয়ার জন্য চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে কোন লাভ নেই এটা ব্যস্তময় এলাকা এখানে কারো সময় নেই তোমার দিকে ঘুরে তাকানোর।আর তুমি তো আছো নয়তলার উপরে এত কোলাহলের মাঝে তোমায় তাদের নজরে আসে কী না সন্দেহ।আর যদি চিৎকার করার চেষ্টাও করো লাভ নেই আমার লোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।”
ঈশানের কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো ঈশা।টিভির রিমোটটা সাইডে রেখে বলে,
” আমায় ছাড়বেন কবে ঈশান?”
” যেদিন তুমি সত্যিটা বলবে।”
” আপনার সত্যি আপনি নিজেও জানেন।”
” এখন তুমি আমার মাথা গরম করো না।যা কথা হবার রাতে হবে এর মাঝে নিজেকে প্রস্তুত করো।”
৮০.
ঈশান বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যায় মাহমুদা এতক্ষণ যাবৎ ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন।ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঈশান নেই দারোয়ানের কাছে জানতে চাইলে সেও মিথ্যা বলে কাটিয়ে দিয়েছে যে ঈশান সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হয়েছে।সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে হাতে অনেক কাজ বাকি অপরদিকে ঈশাকে নিয়ে এতটা ঝামেলা সব মিলিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েছে ঈশান।এক চাটিয়া ঈশানের সব কাজের ভার পড়েছে রাসেলের উপর।মনে মনে ভীষণ খারাপ লাগছে ঈশানের।অফিস থেকে রাসেলকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ঈশান।
মাহমুদাকে দেখে কিঞ্চিৎ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো সে।ঈশাকে পালিয়ে যাওয়ায় সাহায্য করেছিলেন মাহমুদা আর তাই তো ছেলের চোখে চোখ রাখতে লজ্জায় ডুবে ম র ছেন তিনি।
” ঈশান ঈশার কোন খোঁজ জানো?”
“না।”
” ওহ।”
মাহমুদা নিশ্চিন্ত হলেন ঈশান মেয়েটাকে পায়নি।তবুও জেরা করতে বলেন,
” তুমি খুঁজি দেখোনি ভালো ভাবে?কোথায়…”
” প্লিজ আম্মু অভিনয়ে কাঁচা তুমি।তাই এবার অফ যাও।”
” কি বল..”
” ঈশাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য তুমি করেছিলে তাই না?তুমি এতদিন দেখোছো তোমার ছেলে কতটা মরিয়া হয়ে ওই মেয়েটাকে খুঁজে বের করেছে আর তুমি ওঁকে পালিয়ে যেতে দিলে!”
” কেন পালিয়ে যেতে দিব না?আমার ছেলে যে এতটা খারাপ হয়েছে সেটা কি আমি জানতাম?তুমি অয়ন নামের ছেলেটার সাথে কি করেছিলে তোমার কি একটুও খারাপ লাগা কাজ করেনি?তুমি অমানুষে রূপান্তরিত হয়েছ।”
” আমি যা করেছি তা নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই যা করেছি বেশ করেছি।”
” আমিও যা করেছি বেশ করেছি ঈশাকে যেতে সাহায্য করেছি।”
মা ছেলের তর্কাতর্কির মাঝে নিরব দর্শক হয়ে রইলো রাসেল।সে জানে ঈশান এখন নতুন খেলায় মত্ত এতদিন যে পেরেশানির মাঝে তাকে রাখা হয়েছে এবার বাকিদের বাদর নাচ নাচিয়ে ছাড়বে সে।
.
বাড়ি ফিরে ঈশান অফিসের কাজে লেগে পড়ে।অফিস থেকে দুজন এসেছিলো তাদের দেওয়া প্রতিটি ফাইল বুঝে নিয়ে মাত্র অবসর হলো সে।দেয়াল ঘড়িতে জানান দিচ্ছে সাড়ে আটটা বেজে গেছে।তাই তো আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না এবার ফিরতে হবে ঈশার কাছে।মাহমুদার মাঝে আজ সারাটা দিন অস্থিরতা কাজ করছে ঈশার কোন খোঁজ তিনি পাননি।ঈশা যখন ঘর ছেড়ে বের হচ্ছিল তখন মাহমুদার নাম্বার থেকে মুজাহিদ হাসানকে ফোন করে জানিয়ে দেয় সে আসছে তারপর আর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না।
” আজ রাতে কি ফ্লাটে থাকবি?”
” হুম।মাকে বলবি অফিস যাচ্ছি সেখানে কাজ করবো রাত জেগে।”
” আন্টি যদি সন্দেহ করে?”
” করবে না।তুই শুধু নিজেকে দৃঢ় রাখিস তবেই চলবে।”
দুজনের কথার মাঝে মাহমুদা এসে বসেন।হঠাৎ সদর দরজার কাছে মুজাহিদ হাসানকে দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি।
” ভাইজান আপনি?”
” অসময়ে এসে বিরক্ত করে ফেললাম।”
” ছিহ এসব কি বলছেন।আসুন আসুন বসুন।”
ঈশানের মুখোমুখি বসলেন মুজাহিদ হাসান।ছেলেটা গম্ভীর মুখে সালাম জানিয়েছে।মাহমুদা বাড়ির গৃহকর্মীদের ইশারা করলেন নাস্তা পানি ব্যবস্থা করতে।মুজাহিদ হাসানের ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত,ভেঙে পড়া মুখখানি দেখে বড্ড মায়া হলো মাহমুদার।
” এখানে আসার আমার মূল উদ্দেশ্যে হলো আমার মেয়ে।তা তো আশা করি বুঝতে পারছেন।”
” আপনার মেয়ের জন্য আমি আমার ছেলের বিরোধীতা করেছি গত রাতেই তাকে চলে যেতে সাহায্য করেছি। এরপর আপনার মেয়ে কোথায় আছে তার দ্বায় তো আমাদের নয়।”
” ঈশান নিশ্চয়ই জানে ঈশা কোথায় আছে।সে যখন ঈশাকে এতটা আড়াল থেকে খুঁজে বের করেছে তখন…”
মুজাহিদ হাসানের কথায় কপট হাসলো ঈশান।কিছুটা রাগ নিয়ে বলে,
” সরি আঙ্কেল ঈশার ব্যপারে আমি আর কিছু জানি না জানতেও চাই না।ক্রিমিনাল মাইন্ড আমার আপনাদের না?এতটা দিন শহরের অলিতে গলিতে কুকুরের মতো ছুটেছি,আমার লোকেরা নিরলস ভাবে ওঁকে খুঁজে গেছে অথচ আপনারা সব জেনেও আমাদের সাথে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন?আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সামনাসামনি আসুন,দৃঢ়তা নিয়ে কথা বলুন অথচ আপনারা কি করলেন?আপনাদের ভাষ্যমতে আমি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলি, হ্যাঁ ঠিক তাই।আমার জেদ,আমার রাগ,আমার একগুঁয়ে স্বভাব সবটা এখন কন্ট্রোল রেখে চলি।অয়নের সাথে যা করেছি তা নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই ঠিক করেছি।ওঁকে আমি মেন্টালি টর্চার করতে চেয়েছি যেমনটা সে তার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে করেছে।ভাববেন না অতীত জানি কি করে আপনাদের সাথে আত্মীয়তা করেছি সব না জেনে তো করিনি।আর কার কথার ভিত্তিতে আমাকে রেপিস্ট বানিয়ে দিলেন সেসব আমি দেখছি,এতবড় অপবাদ! যাই হোক ঈশা যাওয়ার সে গেছে তাকে নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না।আমার জীবনে ঈশা একটি লস প্রজেক্ট।”
ঈশান আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না গটগট পায়ে চলে গেলো নিজের কক্ষে।মাহমুদা ভীষণ বিব্রত বোধ করলেন।ঈশানের প্রতিটা বাক্যে মিশে ছিল ক্রোধ এবং ঘৃণা তবে কি সত্যি সে ঈশাকে ছেড়ে দিচ্ছে!
৮১.
ঈশান ফ্লাটে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে গেলো।ঈশার রুমে গিয়ে দেখলো মেয়েটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেয়ালে ঝুলে থাকা টিভিটা এখনো চলছে।তবে মেয়েটাকি টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে?হয়তো।ঈশান ঝটপট বসলো ঈশার পাশে জ্বর এলো কি না দেখা দরকার।কপালে হাত দিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হলো ঈশানের নাহ জ্বর নেই।আসার সময় হোটেল থেকে খাবার এনেছে ঈশান।দ্রুত ডিনার শেষে তাদের এই ঝামেলার নিষ্পত্তি করা দরকার।
” কখন এলেন?”
ঈশার কণ্ঠে চমকে গেলো ঈশান এই মেয়ে তো ঘুমচ্ছিলো তাহলে উঠলো কখন?নাকি নাটক করছিলো?
” তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে।”
” কড়া বডি স্প্রের গন্ধ যার একবার নাকে আসে তার মস্তিষ্কে জট ধরে যায় গা গুলায়।কি লাগিয়েছেন এটা বড্ড বাজে স্মেল আমার সামনে আসবেন না সরুন তো।”
বাজে স্মেল!মুখটা হা হয়ে গেল ঈশানের।নামি দামি ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে তার উপর দামটাও নেহাত কম নয়।অথচ এই মেয়ে বলছে বাজে স্মেল!
” নতুন কিনেছি।”
” আগের টা ভালো ছিল।”
ঈশার সরল উত্তর।উঠে বসলো সে ঈশান তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।এই চাহনিতে পাত্তা দিল না ঈশা তার মন বলছে ঈশান কোন তালগোল পাকাচ্ছে।
” এই অবেলায় ঘুমালে কেন?ভেবেছিলাম বসে বসে ফ্যাচফ্যাচ কাঁদবে আমাকে তো তুমি পুরো সারপ্রাইজড করে দিলে।”
” এতদিন ভয়ে ঘুমাতে পারিনি কখন আপনার কাছে ধরা পড়ি এখন তো পড়ে গেছি আর তো কোন ভয় নেই।”
“কেন পালাবে না?”
” প্রয়োজন নেই।”
” মনে কি চলছে তোমার?”
” তা জেনে আপনার কাজ নেই।”
ঈশান কথা বাড়ালো না দুজনে একসাথে রাতের খাবারটা সেরে যে যার মতো রইলো।এই ফ্লাটের বারান্দাটা তুলনামূলক বেশ বড় উপর থেকে আশেপাশের পরিবেশটাও নজর কাড়া।অনন্য ভবনে জ্বলতে থাকা লাইট গুলো দূর থেকে মনে হলো যেন তারোকার আস্তরন।বারান্দায় হাটু মুড়ে চুপচাপ বসে রইলো ঈশা তার কাছে এসে উপস্থিত হয় ঈশান।ছেলেটাকি কিছু বলতে চায়?কিন্তু তার বলার আগে মুখ খুললো ঈশা।
” আপনি বাড়ি ফিরে যান ঈশান আমি একাই থাকতে পারবো।”
“ভয় লাগছে নাকি?”
” তা তো অবশ্যই।”
” ভেবো না চুপচাপ আছি।এতদিন যে কুকুরের মতো ছুটিয়েছো তার সাজা ভোগ তোমায় করতেই হবে।কিন্তু তার আগে আমার জবাব যাই ঠিক কি কারণে এতটা স্পর্ধা দেখিয়েছো।”
ঈশা চুপচাপ রইলো।তার দৃষ্টি এখনো বাইরে নিমজ্জিত।ঈশানের কণ্ঠ কিছুটা নরম হয়ে এলো মুখোমুখি বসলো ঈশার।
” ঈশা সত্যিটা বলো প্লিজ।আমাদের এত সুন্দর সম্পর্কে কেন ফাটল ধরাচ্ছো?”
” মা বাবা সেদিন জেনে গেছেন আপনি অয়ন ভাইকে কি ড ন্যা প করেছিলেন।আমি তৈরি হচ্ছিলাম আপনার সাথে বের হবো বলে,কিন্তু এর মাঝে আম্মু আমায় ডেকে নিয়ে গেলো অয়ন ভাইয়ের কিছু ছবি দেখানো হলো যেই ছবিতে আপনিও উপস্থিত ছিলেন।আমি সবাইকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু কেউ মানতে নারাজ।যে বাবা সবসময় আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন তিনিও ঘোর বিরোধীতা শুরু করলেন।অয়ন ভাইয়ের সত্যিটা জানাতে চেয়েছি আম্মু শুনলো না উলটো নানান কথা তুললেন।আমি যখন মানতে চাইনি তখন বাবা একটি কল রেকোর্ড শোনালেন যেটি আপনার বাবার ছিল তিনি অন্য কাউকে ফোনে বলছিলেন আপনার কথা।ওখানে আমার নামো উল্লেখ করা হয় আমি নাকি যখন জানবো আপনি রেপিস্ট তখন আমার রিয়েকশন কি হবে।এসব শোনার পরেও আমি চেয়েছিলাম আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে কিন্তু আম্মু এর ঘোর বিরোধীতা করেন আমি বোঝাতে চাইলে গায়ে হাত তোলে।পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি চিরকুট লিখে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।আর তারা বাকি কাজ করেন।তাদের ধারণা আমরা যদি বিয়ে ভেঙেদি আপনাদের ইগোতে লাগবে আর তাই পরিস্থিতি অনুকূলে যাবে।”
” তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পারলে না?অন্তর একবার সবটা জানাতে।”
” আমি ভেবেছি অনেক ভেবেছি আমার মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরেছে আর তাতেই আমি সমাধান খুঁজে নিয়েছি।আমি জানতাম আপনার বাবার সাথে আপনার কথা নেই,কেন নেই?আপনি এই অঘটন ঘটিয়েছেন বলে?
আপনি বছরের পর বছর এ দেশে পড়ে আছেন কিন্তু আপনার পরিবারের কাছে যাওয়ার কোন তাড়া নেই।আপনি সবসময় আমার কাজিনদের সাথে দেখলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন এর কারণ কি?আপনি আপনার কাজিনের সাথে খারাপ করেছেন বলে আমাকেও সন্দেহ করছেন।আমি আদৌ জানি না এসব সত্যি কি মিথ্যে।আমি যেন এই গোলকধাঁধার মাঝে চেপে ম র ছি। ”
” আমার দিক থেকে শুনতে হলে তোমায় আমাকে বিশ্বাস করতে হবে তুমি করো তো আমায় বিশ্বাস?”
” বিশ্বাস করি কিন্তু… ”
” না বিশ্বাস করো না তুমি।করলে এতটা দূর আসতে হতো না আমাদের।তবে আমার দিক থেকে শোনো।
দেশ ছাড়ার পর আমাদের জীবনটা এক নিমিষে পালটে গেল।সেখানে প্রতিটা ধাপে ধাপে সময় মেনে চলে সবাই।পড়াশোনার ব্যাপারেও সবাই ভীষণ মনোযোগী।আমার বন্ধু সংখ্যা খুব বেশি ছিল না আমার বন্ধু ছিল রাসেল আর ফুফাতো বোন লিজা।আমরা তিনজন ছিলাম ভীষণ ঘনিষ্ঠ।কিন্তু লিজার বন্ধুর অভাব ছিল না সেখানকার স্থানীয় এবং ফিলিপাইন আফ্রিকার কিছু ছেলের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।যেহেতু ওরা লিজার বন্ধু তাই আমাদের সাথেও ওদের সাক্ষাৎ বাড়তে থাকে।ওদের সাথে আমাদের ভীষণ ভালো সময় কাটে।বছর পেরিয়ে যায়, যার সাথে সাথে ওদের প্রতি বিশ্বাস,আস্থা,মায়া সবটা বাড়তে থাকে।আমরা প্রত্যকে প্রত্যকের বাড়িতে যেতাম আমাদের সম্পর্ক তখন ভীষণ ভালো ছিল।সময়ের তালে তালে আমরাও বড় হয়ে গেলাম আমাদের চাহিদা বাড়লো,সাহস বাড়লো এক কথায় আমরা আমরাই সেরা।ওখানকার স্থানীয় ‘নিক’ তার মা বাবা সেদিন বাড়ি ছিল না তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেদিন ওদের বাড়িতে থাকবো রাত জেগে মুভি দেখবো,সন্ধ্যার পর নিজেদের মাঝে একটা পার্টি হবে। লিজা ছাড়াও আমাদের আরো দুইজন মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল।আমি রাসেল লিজা ছাড়া বাকি সবাই ছিল খিস্ট্রান ধর্মের। আমরা ছেলে ছিলাম পাঁচজন এবং মেয়ে তিনজন।নিক নামের ছেলেটার বাড়িতে সেদিন পার্টি শেষে মুভি দেখার কোন পরিস্থিতি ছিল না।কারণ আমরা সবাই সেদিন অতিরিক্ত ড্রিংকস করে ফেলি।এতটাই ড্রিংকস করি নিজেদের মাঝে কোন হুঁশ ছিল না।আমাদের বাকি বন্ধুদের কালচার অনুযায়ী ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ানো,মদ্যপান এসব ওদের জন্য স্বাভাবিক।কিন্তু আমরা এসবে অভ্যস্ত ছিলাম না তবে লিজা একটু ওই স্বভাবের ছিল সে নিজের ব্যক্তিত্ব ভুলে বাকিদের মতো চলতে থাকে।মাঝে মাঝে আমাদের অন্য ছেলে বন্ধুদের কিস করতো সে যেটা আমার আর রাসেলের মোটেও পছন্দ ছিল না এসবের কারণে ওর সাথে আমাদের প্রায় সময় ঝামেলা লাগে।ফুফুকে বলতে চেয়েও বলে লাভ নেই ফুফু নিজেও এসবে কেয়ার করতেন না।অনেক বার নালিশ করেছি ফলাফল শূণ্য।সেদিন রাতে পার্টি শেষে রাসেলের ঘুম ভাঙ্গে সকাল প্রায় দশটায়।ঘুম থেকে উঠে সে দেখলো অনন্য ছেলে ফ্রেন্ডরা এখনো ঘুমে মেয়েরা তাদের রুমে সে ভাবলো লিজা বাকি মেয়েদের সাথে আছে।রাসেল নিকের খোঁজে যায় নিকের রুমে গিয়ে সে দন্দ্বে পড়ে যায়।দ্রুত আমাকে ডেকে তুলে তখনো নেশাটা আমাদের মাথা থেকে ঠিক ঠাক ভাবে যায়নি।তবুও রাসেলের তাড়া দেখে আমিও নিকের রুমে গেলাম।
তখন নিকের রুমে গিয়ে আমি স্তব্ধ হ্যাং হয়ে যাই। আমার মাথায় সেদিন আসমানটাই ভেঙ্গে পড়ে।দুজনে সেদিন রাতে ইন্টিমেট হয়েছিল আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না।ওদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে আমার চোখে যেন শূল ফুটেছে।রাসেলের রাগে তখন থরথর করে কাঁপছিলো।লিজার অর্ধ ঢাকা অনাবৃত দেহটি আমাদের চোখের সামনে ছিল দ্রুত দুজনে রুম ছাড়ি।এরপর যা হওয়ার তাই হলো বন্ধুদের মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি হয়।লিজা আমার আর রাসেলের পা ধরে মাফ চায় এসব কথা বাড়িতে জানা জানি হলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।নেশার ভ্রমে করেছে ভেবে বাকি বন্ধুরা এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিলো তারা বললো এটা চেপে যেতে।আমার মনে সেদিন ক্ষোভ ছিল।না চাইতেও লিজাকে সেদিন একটা সুযোগ দিলাম।কাউকে কিছু জানাইনি।পেরিয়ে গেলো আরো বেশ কিছু মাস।নিকের কাছে এসব ছিল সাধারণ ব্যপার তাই সে এরপরেও আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখে যায়।তবে আমি ওই বন্ধু মহলটা ছাড়তে শুরু করি ধীরে ধীরে যতটা পারা যায় লিজাকে এড়িয়ে যেতাম তবে কি করছে না করছে খেয়াল রাখতাম।সেদিন রাসেলের জন্মদিন ছিল আমরা সব বন্ধুরা বাইরে রেস্টুরেন্টে খাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।আমাদের আরেক বন্ধু ডেভিট আর রাসেলের মাঝে কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া হয় তাই রাসেলের পক্ষ নিয়ে লিজা ডেভিটের বাড়ি যায় ওঁকে আনতে।আমরাও বারণ করিনি সময় যায় কিন্তু লিজা আর ডেভিট আসেনা অনেকবার ফোন দেওয়ার পর ফোন তুলেনি তারা। ভাবলাম কোন বিপদ আপদ্ হলো কি না।রাসেলকে রেখে আমি একাই গেলাম ডেভিটের বাড়ি।অনেকবার ডোর বেল বাজালাম কেউ দরজা খুললো না মনে মনে সন্দেহ জাগলো পেছন সাইডে ডেভিটের রুমের জানলা খোলা ছিল আর তখন আবার দেখলাম লিজার সেই একই ভুল মাথায় আমার রক্ত উঠে গেছিলো।রাগের দরুনে অকথ্য ভাষায় লিজাকে গালি দিতে থাকি মেয়েটা আমায় দেখে ভয় পেয়ে যায়।আমি বিকাল পেরিয়ে রাত হয় আমি আর বাসায় ফিরিনি ফোন বন্ধ করে ক্লাবে ছিলাম।লিজার একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার ভেবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম।বাড়ি ফিরলাম ভোরে তখনো জানতাম না আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে লিজা বাড়ি ফিরে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে দিয়েছে ততক্ষণে।আমার মা কাঁদছেন বাবা ক্ষেপে আছেন।ফুফা ফুফু তো যা নয় তাই বলছেন।লিজার অভিযোগ আমি মাতাল অবস্থায় ওর সাথে জোরাজোরি করেছি এবং এক পর্যায়ে আমরা অন্তরঙ্গ হয়েছি।আর এসবের সাক্ষি ছিল ওই ডেভিট।সেদিন সবাই আমার বিরুদ্ধে যাওয়ার আরেকটি মূল কারণ আমি মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরেছিলাম। আর লিজার অভিযোগটাও যেন তার জোরালো প্রমাণ।সবাই আমাকে অনেক ভাবে অপমান করে,বাবা গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেন।কেউ আমাকে বিশ্বাস করলো না।রাসেল আর মা তো পা গ ল হয়ে যাচ্ছিলেন তারা জানেন এমন ভুল আমি কখনো করবো না।এর মাঝেও ফুফুর চক্রান্ত ছিল তিনি সব সত্যি জানতেন আর তিনি যে সত্যিটা জানতেন এটা আমি ওদের মা মেয়ের আলাপেই বুঝেছিলাম।ফুফুর টার্গেট আমার আর লিজার বিয়ে দেওয়া।বাবাকে নানান ভাবে বুঝিয়ে কানে বিষ ঢেলে দিলেন।বাবা সিদ্ধান্ত নেন মেয়েটাকে রে প আমি করেছি আর ওঁকে আমি বিয়ে করবো।এত বড় অপবাদ! নিজেকে নির্দোষ অনেক ভাবে প্রমাণ করেছি কিন্তু আমার বাবা জেদি একগুঁয়ে মানুষ তিনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের বিয়ে দিয়ে ছাড়বেন তবে তাই হবে।আমি না পেরে রুমার হাজবেন্ডের সাহায্য নিয়ে দেশ ছেড়েছি।নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি এর পরেও উনি আমাকে ওই দেশে নেওয়ার নানান বাহানা করেন।আমার পেছনে লোক লাগান আরো কত কি।আমি তো শুধু শহর ছাড়িনি আমি আমার বাবাকেও ছেড়েছি।আমার একটাই আফসোস আমার জন্মদাতা পিতা আমাকে বুঝলো না।প্রতিটি পরিবারে এমন একটা বিষের কৌটা থাকে যার কারণে বাকি সদস্যদের বিষদিগ্ধা হতে হয়।আমার পরিবারে সেই বিষটা হলো আমার ফুফু।আমার বাবা একটা চরিত্রহীন মেয়েকে আমার ঘাড়ে তুলে দিতে চাইছেন যার চরিত্র কখনো ঠিক হওয়ার নয়।একটা বিধবা মেয়েকে কোন দ্বিধা ছাড়া মেনে নিতাম কিন্তু চরিত্রহীনকে কখনো মানতে পারবো না।
#চলবে__