#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৫ক]
____________________
৮৩.
” আমি আগেই সর্তক করেছিলাম তোমরা কেউ পাত্তা দাওনি আমার কথা এবার বোঝো।সামনে আর কি কি দেখতে হবে আল্লাহ ভালো জানেন।”
তীব্র ক্রোধ নিয়ে কথাটি বললো হাসিন।মুজাহিদ হাসান মাথা নুইয়ে বসে আছেন মেয়েটার খোঁজ পাওয়া গেল না ঈশান বলছে জানে না তবে কোথায় আছে সে?মেয়েটা সুস্থ অবস্থায় থাকলে নিশ্চিয়ই একবার না একবার ফোন করতো কিন্তু এই দুটো দিনে একবারেও সে ফোন করলো না।সহ্যর শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছেন মুজাহিদ হাসান।ঈশা নিখোঁজ হলো দুইদিন হয়ে গেলো বংশে তার বনাম উঠেছে মেয়ে নাকি পালিয়েছে।এসব কথা রটিয়েছেন ঈশার মামি সেটি আর সন্দেহের অবকাশ নেই।পুলিশকে জানাতে চেয়েও বার বার পিছিয়ে আসছেন মুজাহিদ হাসান তবে যে মেয়েটার বদনাম ভয়াবহ ভাবে রটবে।
সুলতানা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন হেঁচকি তুলে বলেন,
” তোমার মামাকে বোঝাও হাসিন পুলিশকে জানাতে বলো মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘরে মেয়ে ফিরবে না।”
” মামি ঠিক বলেছে মামা একবার ভেবে দেখো।”
” আমি ঈশানকে সন্দেহ করছি আমার মেয়ে ঈশানের কাছেই আছে।”
কথাটি বেশ দৃঢ়তা নিয়ে বললেন তিনি।মুজাহিদ হাসানের কথায় প্রচন্ড বিরক্তবোধ করলো হাসিন।কিছুক্ষণ আগে তারা ঈশানের বাড়ি থেকে ফিরেছে।ঈশার ব্যপারে জানতে চাইলে ঈশান এমন ভাব ধরে যেন ঈশা নামের কোন মেয়েকে সে চেনে না।ঈশানের এই হেয়ালিতে প্রচন্ড রেগে যায় হাসিন দুজনের মাঝে ঝামেলা বাঁধার আগে মুজাহিদ হাসান হাসিনকে নিয়ে ফিরে আসেন।
” মামা ঈশানকে সন্দেহ করা আর কাটা চামচে পানি খাওয়া এক কথা।ওই ব্যাটার ভাব দেখেছো?ওর ভাবে থুথু মা রি।”
” ঈশানের কাছে ঈশা আছে।ঈশান নাকি ইদানীং বাড়ি থাকে না।সেদিন রাসেল আর ঈশানের নাকি ঈশাকে নিয়ে কি কথা বলছিলো কোন ফ্লাটে আছে যাই হোক ঈশানের মা হাতে নাতে ধরবেন ছেলেকে আমাকে বলছে অন্তত আর একদিন অপেক্ষা করতে।”
” তোমাকে বললো আর তুমি বিশ্বাস করলে?উনি জানতেন উনার ছেলে খারাপ তাও আমাদের গলায় ছেলেটাকে ঝুলিয়ে দিতে চাইছিলেন।ঈশাকে একবার পাই আমি নিজে ছেলে খুঁজে বিয়ে দিব এসব বড়লোক ঘরের নষ্ট ছেলের কাছে আমার বোনকে আমি দিব না।”
হাসিনের কথায় সহমত পোষণ করলেন সুলতানা।
” ঠিক বলেছিস আমার মেয়ের উপর শকুনের নজর পড়েছে।”
দুজনের সম্মতির মাঝেও মুজাহিদ হাসান এখনো নিরব তার মুখে রা নেই।
.
টিভির দিকে ধ্যান জ্ঞান সব ঢেলে দিয়েছে ঈশা খুব মনোযোগ সহকারে একটি মুভি দেখছে সে।এত মনোযোগ দিয়ে মুভি দেখার মূল কারণ তার প্রিয় নায়কের মুভি চলছে।নায়কটার প্রতিটা অভিনয় খুব নিখুঁত সুন্দর।ঈশান আধা ঘন্টা যাবৎ ঈশাকে পরখ করছে।সেদিন অতীত জানানোর পর ঈশা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বরং রুমে ফিরে সটান হয়ে শুয়ে ঈশানকে বেরিয়ে যেতে বলে।মেয়েটার মতিগতি বুঝে এলো না ঈশানের।
” ঈশা।”
” হু।”
” টিভিটা অফ করো এবার।”
” চুপ করেন।”
ঈশান থমকে গেল।কিছুটা এগিয়ে এলো ঈশার পাশে।
” এত মন দিয়ে মুভি দেখছো যে?”
” নায়কটা ভীষণ প্রিয় ভাল্লাগে।”
” ভীষণ!”
” হুম।”
” কেন ভালোলাগে?”
” কিছু ভালোলাগার কারণ হয় না এমনি ভালো লাগে চোখের নেশা।”
ঈশান উঠে দাড়ালো।টিভির মেন সুইচ অফ করে।রিমোটটা নিয়ে নিলো ঈশার হাতে।
” আরে কি করছেন বন্ধ করলেন কেন?”
” চোখের নেশা এত নেশা?আমার দিকে তো কোনদিন এত মনোযোগী হওনি।”
” ঈশান অবুঝের মতো আচরণ কেন করছেন?”
” হ্যাঁ আমি অবুঝ।দুই ঘন্টাতেও টিভি চলবে না।এই মেয়ে তাকাও আমার দিকে তাকাও।”
ঈশা তাকালো না মুখ ঘুরিয়ে বসলো সে।ঈশার প্রত্যাখ্যান মোটেও সহ্য না ঈশানের তাই তো জেদ দেখি বাহু টেনে ধরলো তার।
” আমার দিকে তাকালে কি গায়ে ফোসকা পড়বে?”
” হাত ছাড়বেন?”
” আমার ব্যাপারে কি ভেবেছো?সেদিন সবটা বলার পরেও চুপ রইলে কেন?”
” প্রমাণ ছাড়া মুখের কথা আমি কি বিশ্বাস করবো?”
” আমি যে ভালোবাসি বলেছিলাম এই ভালোবাসায় কি এমন প্রমাণ দিয়েছিলাম যে তার ভিত্তিতে তুমি আমায় গ্রহণ করেছিলে?বলো আমায়।”
” আমি বাড়ি ফিরতে চাই ঈশান।আমি আপনাকে বিশ্বাস করি আমি মেনে নিয়েছি আপনি এসব কিছুই করেননি কিন্তু আমার মা বাবা মানবে?কখনো না।”
” আমি মানিয়ে নিব।”
” পারবেন না।”
” তোমাকে তো পেরেছি।”
ঈশা চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।কয়েক মিনিট পর তার চাহনি নিবদ্ধ হলো খোলা জানলার বাইরে অন্ধকার আকাশটায়।ঈশান যেন এতে একটু বেশি বিরক্তবোধ করলো।গাল টেনে ধরলো ঈশার নিজের দিকে ফিরিয়ে কড়া সুরে বলে,
” তুমি শুধু তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে অপলক,নিরন্তর শেষ নিশ্বাস অবধি।”
ঈশা হাসলো সে তাকিয়ে রইলো ঈশানের চোখে।
৮৪.
এতদিন ক্লাস করা হয়নি অনুর।ঈশার ছিল না সে কি করে ক্লাসে যাবে?তবে আজ ক্লাস নয় রাসেলের সাথে দেখা করা মূল কারণ ছিল মেয়েটার।ক্লাস শেষ বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ তার পাশে ছিল দিহান এবং মীরা।রাসেল আসলে তারা দুজন চলে যাবে।রাসেল এলো বেশ কিছুটা সময় পর ছেলেটার সাথে রাজীব ছিল।দুজনে একসাথে গাড়ি থেকে নেমে এলো অনুর কাছে।মীরা রাজীবকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রাজীবের চাহনি কেমন যেন।তাকিয়ে আছে নির্ণিমেষ।দিহান বিষয়টা বুঝতে পারলো সে মীরাকে আড়াল করে দাঁড়ালো রাজীবের মুখোমুখি।লহমায় পালটে গেল রাজীবের চাহনি।এই মেয়েটাকে সে না চাইতেও ভালোবেসে ফেলেছে।নাহ ভালোবাসেনি হয়তো, তবে ভালোলাগে, মায়া কাজ করে যেটা তার জন্য অপরাধ।
” গুন্ডাটাকে এখানে কেন এনেছো?”
ফিসফিস করে কথাটি রাসেলকে বললো অনু।রাজীবকে তারা কেউ পছন্দ করে না এর মূল কারণ রাজীব সেদিন ঈশাকে আঘাত দিয়েছিল।
” ও চলে যাবে কাজে এসেছে।”
” যেতে বলো এক্ষুনি।”
” চুপ করো অনুরূপি।”
অনু চুপসে গেলো রাজীব রাসেলের সাথে কথা শেষ করে চলে গেলো নিজ গন্তব্যে।দিহান আর মীরাও দাঁড়ালো না তারাও চলে গেলো।রাসেল অনু নিয়ে গেলো একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়াটা এক সাথে করবে তারা।
” ঈশান ভাই কি সত্যি ঈশাকে ভুলে যাবে?তাদের সম্পর্ক কি আসলেই শেষ?”
” তোমার কি মনে হয় এত কিছুর পরেও সব ঠিকঠাক থাকবে?”
” একটা সত্য কথা বলবে রাসেল?এতদিন জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারিনি।ঈশান ভাই কি আসলেই রেপিস্ট?”
” অনু!”
চোখ রাঙিয়ে বেশ জোরে ধমকে উঠলো রাসেল।তার ধমকে রেস্টুরেন্টের সবাই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।সবার চাহনিতে লজ্জায় পড়লো অনু।কিছুটা অভিমান জমলো মনে।
” খবরদার এই কথা আমার সামনে আর কোন দিন বলবে না।”
” আ..আমি বলিনি সবাই এটাই বলছে।”
” সবাই বলছে বলুক তুমি বলবে না।”
” কৌতূহল** থেকে বলে ফেলেছি রাসেল আমি ভীষণ দুঃখিত।”
” এসব মিথ্যে তুমি এসব কখনো মাথায় ঢোকাবে না বুঝলে?”
” হুম।”
রাসেল জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো।মেয়েটার সাথে অনেকদিন বাদে দেখা হয়েছে কিন্তু রাগের মাথায় ধমক দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি।জড়তা নিয়ে অনুর হাত ধরলো রাসেল এগিয়ে এনে হাতে ছোঁয়ালো ঠোঁট।
” আমি ভীষণ যন্ত্রণায় আছি সরি।”
” আমি বুঝতে পারছি রাসেল।আমার একটা ভয় কাজ করছে জানো তো কী?”
” কী?”
” তোমাদের পরিবারটাকে অপছন্দ করতে শুরু করেছে সবাই।এমনকি আমার পরিবারো তোমাদের ভুল বুঝেছে।সবাই বলছে ঈশার শ্বশুর বাড়ির লোক … যাই হোক এসব ঝামেলার মাঝে আমাদের সম্পর্কের মান কোথায়?”
” সময় সব ঠিক করে দেবে এখন এসব ভেবো না।”
” ঈশা কোথায় কী সত্যি তোমরা জানো না?ঈশান ভাই এত সহজে ছেড়ে দিলো ঈশাকে?আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।যদি ঈশান ভাইয়া ঈশাকে ছেড়ে দেয় তবে বিশ্বাস শব্দটা আমার জীবন থেকে মুছে যাবে।”
” তুমি বসো আমি একটু মুখে পানি ছিটিয়ে আসি।”
রাসেল উঠে গেলো হাত মুখ ধুয়ে ফিরলো সে।দুজনের মাঝে কথা হচ্ছিলো তাদের কথার মূল টপিক ঈশা ঈশান।ওয়েটার এগিয়ে এসে দুজনের জন্য কাচ্চির প্লেট এগিয়ে দিলো।অনু হতভম্ব চাহনি নিক্ষেপ করলো রাসেলের দিকে।
” তুমি এটা কখন অর্ডার দিয়েছো?”
” যখন ফ্রেশ হতে গেলাম তখন।কেন?”
” আমি কাচ্চি খাব না।”
” কেন খাবে না?এটা তো তোমার পছন্দের তাই অর্ডার করলাম।”
” আমি এখন ডাইটে আছি তাই কোন কাচ্চি চলবে না।”
রাসেল অনুকে আগা গোড়া একবার জহুরি চোখে দেখলো।
” এই চামচিকা তোমার আবার কিসের ডাইট?”
” আরো স্লিম হবো দেখতে সুন্দর লাগবে।”
” এই মেয়ে তোমার ঢং থামাও দেখি গাল দেখি।”
রাসেল টেনে দিলো অনুর গাল।কিছুটা রাগ নিয়ে বসিয়ে দিলো আদুরে একটা চড়।
” এই হাড্ডি ওয়ালা গাল দিয়ে আমি কি করবো?তাই তো বলি আমার অনুরূপি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে কেন?আমি ভাবলাম ঈশার শোকে নাওয়া খাওয়া ছেড়েছো।এখন তো দেখি উনি ডাইটে আছে।শুনে রাখো আমার আগে অনুকে চাই,এসব হাড্ডি ওয়ালা অনুকে চলবে না।”
রাসেল এবার তর্জনীর আঙুল আর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো অনুর গাল।মেয়েটার গোমড়া মুখখানী দেখে হাসি পেলো রাসেলের।অনুর দুই গাল সংকোচন হয়ে দু’ঠোঁট পাউট হতে চোখের পলকে তার ঠোঁটে আলতো ভাবে ঠোঁট মেশালো সম্মুখে থাকা মানুষটি।অনু দ্রুত ঠোঁট আড়াল করলো হাতের সাহায্যে তার কান্ড দেখে হাসলো রাসেল।
” নাও খাওয়া শুরু করো এরপর আরো অনেক কিছু খাবো।তোমাকে আগের মতো নাদুসনুদুস হতে হবে তো।”
.
ঈশার সামনে সারাটা রুম জুড়ে পাইচারি করছে ঈশান এই ছেলের মতলবটা কি?ঈশান অফিস থেকে ফিরেছে এলোমেলো টাই,গায়ের স্যুটটা চেয়ারে ছুড়ে রেখেছে যা মাটিতে ছুঁই ছুঁই অবস্থা।এলোমেলো চুল কিয়ৎক্ষণ বাদে খামছে ধরছে।ঈশা নিরবে পর্যবেক্ষণ করলো ঈশানকে।দ্রুত উঠে গিয়ে পানি এনে এগিয়ে দিলো।ঈশান বারণ করলো না এক নিশ্বাসে শেষ করলো পুরো পানির গ্লাসটা।
” আমার কিছু কথা আছে ঈশা ব্যপারটা সিরিয়াস।”
” বলুন।”
” চলো আমরা বিয়ে করি।তোমার হাসিন ভাই তোমার জন্য ছেলে খুঁজতেছে।”
” কি!মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার?আমাকে তারা খুঁজে পেল না আর আমার জন্য ছেলে খুঁজতে লেগে গেলো?”
” হ্যাঁ তাই তো!কিন্তু আমায় এ কথা অনু বলেছে।”
” ওটা আরেক মাথা মোটা নিশ্চয়ই মজা করেছে।”
” না মজা নয় তারা সবাই সন্দেহ করছে তুমি আমার কাছে আছো।”
” তো?”
” আমাকে পটিয়ে তোমাকে নিয়ে যাবে তারপর তোমায় অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেবে হয়তো এটাই চাইছে তারা।”
” চাইলে চাইছে আপনার সমস্যা কী?”
” তুমি বিয়ে করবে?”
” পরিবার রাজি থাকলে আমি রাজি হবো না কেন?”
” কি বললে তুমি?আরেকবার বলো।”
ঈশা চুপচাপ বিছানায় বসলো ঈশান ক্ষেপেছে।হাটু মুড়ে বসেছে ঈশার সম্মুখে।ঈশার হাত টেনে বেশ কয়েকবার হাত ছোঁয়ালো ঠোঁটে।
” চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
” না এ হয় না।”
” তুমি একবার বলো সবটা সম্ভব হয়ে যাবে।”
” আমি কখনোই সম্মতি দিব না।এভাবে আমি কোন কিছু চাই না।”
” একা একটা ছেলের সাথে তিনদিন আছো এসব জানলে কেউ বিয়ে করবে তোমায়?
” না করলে না করবে আমার সাথে আমার পরিবার আছে।”
” যদি পরিবারটা না থাকে?”
” ঈশান পাগল হয়ে যাচ্ছেন আপনি ।অসুস্থ মস্তিষ্ক আপনার দ্রুত চিকিৎসা করান।”
” ভয় পেলে?”
” আমার পরিবারের আর একটি সদস্যর ক্ষতি হলে আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না।”
ঈশার উত্তেজিত মুখখানী দেখে হাসে ঈশান।ঈশার হাত টেনে ঠোঁট ছোয়ালো বারংবার।
” তুমি কী চাও?ভালোবাসি বলতে বলতে এই দোহাই দিয়ে হারিয়ে যাবে?”
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৫খ]
_________________
অফিসের কয়েকটি কাগজ ফাইলে ঘুছিয়ে রেখে উঠে পড়লেন মুজাহিদ হাসান।একটু আগে দারোয়ান এসে বলে গেলো তার সাথে নাকি কেউ দেখা করতে এসেছে।মুজাহিদ হাসান অফিসের বাইরে গেলেন কালো স্যুট পরা কোন ছেলেকে তার নজরে এলো না।দারোয়ান তো বললো কালো স্যুট পরা ছেলে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রচন্ড বিরক্তবোধ করলেন তিনি।কাজের সময়ে এত তামাশা মোটেও ভালো লাগে না।
” আসসালামু আলাইকুম ফাদার ইন ল।”
ভীষণ চমকে গেলেন তিনি।কানের কাছে কে সালাম করলো?ঘুরে তাকাতে ঈশানের হাস্যজ্বল মুখখানী দেখে বিব্রত বোধ করলেন।
” তুমি এখানে?”
” আসতে কি মানা?”
” কেন এসেছো সেটা বলো।”
“সামনে একটি রেস্টুরেন্ট আছে চলুন সেখানে বসি।”
” আমার ওত সময় নেই অফিসে অনেক কাজ।”
“শুধু বিশ মিনিট চলুন তো।”
ঈশান মুজাহিদ হাসানকে যেন আবদার নয় আদেশ করলো।মেশিনের মতো আদেশ পেয়ে ঈশানের সাথে চললেন তিনি।তাদের গন্তব্যে ফুরালো কোলাহল মুক্ত একটি রেস্টুরেন্টে।ঈশান দুটি কফি অর্ডার করে বসলো মুজাহিদ হাসানের মুখোমুখি।কোন ভনিতা ছাড়া সে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
” এভাবে আর কতদিন চলবে?এবার এর সমাধান চাই।”
” কিসের সমাধান চাও তুমি?আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে তোমার কাছে আছে আর এটাও বিশ্বাস করি তার কোন ক্ষতি তুমি করবে না।সে স্পর্ধা তোমার নেই।”
” ঠিক বলেছেন।আমার প্রতি এতটা বিশ্বাস রাখার জন্য কৃতজ্ঞ আমি।”
” আমি বলেছিলাম তুমি প্রমাণ করো তুমি নির্দোষ।কি পারবে তো প্রমাণ করতে?”
” প্রমাণ করার কিছুই নেই যা আমি করিনি বুকে হাত রেখে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি।আপনি রাজীবের কথায় আমাকে অবিশ্বাস করছেন!আমাদের এত সুন্দর সম্পর্কটা ভেঙে দিতে চাইছেন একটা বাইরের মানুষের কথায়!”
শুকনো কেশে উঠলো মুজাহিদ হাসান।ঈশানের পিছনে এত সব চালবাজি রাজীব করেছে কিন্তু এই কথা ঈশান কি করে জানলো?মুজাহিদ হাসানের অবস্থা দেখে পৈশাচিক হাসলো ঈশান।পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে মোলায়েম সুরে বলে,
” কুল কুল ফাদার ইন ল এভাবে কাশছেন কেন?আপনি কী ভেবেছেন অন্যর গানে আপনারা নৃত্য করবেন আর আমি বসে বসে দেখবো এত সহজ?এত!।আপনার কোন ধারণা নেই এই বিয়ে ফাইনাল করতে আমাকে কতটা খাটতে হয়েছে এমনি এমনি তো সব আমি ছাড়বো না।”
মুজাহিদ হাসান চুপসে রইলেন।তার হাভ ভাব দেখে ঈশানের বেশ হাসি পেলো।শর্ষের মধ্যে ভূত আছে ঘটনা টা তাই ঘটলো। রাজীব এতদিন ঈশানের সামনে নাটক দেখিয়ে এলো কিন্তু পেছনে ছুরিটা মা র লো সে।ঈশানের প্রতি রাজীবের কীসের এত শত্রুতা সেদিনের সেই চড়ের জন্য?ঈশার গলায় আঘাতটা মারাত্মক ছিল বলেই রাগের মাথায় চড় মেরেছিল ঈশান।রাজীবের শত্রুতার ভিন্ন কারণ থাকতে পারে নাকি রাজীবকে সরিয়ে দিহান আর মীরার সম্পর্কে পূর্ণতায় সাহায্য করায়।ঈশান সেদিন ঈশার গলায় আঘাত লাগা থেকে শুরু করে রাজীবের সম্পর্কে সবটা বললো।সবটা শুনে হতভম্ব মুজাহিদ হাসান গলার এই আঘাত নিয়ে বারবার ঈশার কাছে জানতে চাইলেও মেয়েটা মিথ্যে বলেছে অথচ কারণটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।ঈশানের কথাটি শুনে চুপচাপ রইলেন তিনি।কিয়ৎক্ষণ বাদে বলেন,
” অবশ্য রাজীব মিথ্যে কিছু বলেছে?বলেনি সে আমাদের সতর্ক করেছে।”
” মেনে নিলাম মিথ্যে বলেনি তবে মেয়েকে পালানোর জন্য বলেছিলেন কার কথায়?রাজীবের কথায় নয় কী?”
” তুমি অয়নকে বেঁধে রেখেছিলে কেন সে তোমার কি ক্ষতি করেছে?”
” ক্ষতি করেছে অনেক ক্ষতি।একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করেছে দুটো বাচ্চা মেরেছে,আপনার মেয়ের দিকে কুনজর দিয়েছে।নানান বাহানায় ঈশার শরীর নোংরা ভাবে ছুঁয়েছে।আমার গায়ে হাত তুলেছে।”
” আমার ঈশা..”
” আপনার মেয়ে এসব বলেনি?বলবে কি করে কেউ তো বিশ্বাস করবে না।ভদ্রের লেভাস ধরে থাকা অয়ন ছেলেটাকে সবাই উপর থেকে ভালো জানে।অয়নের মা পরিকল্পনা এঁটেছেন তার ছেলের সাথে আপনার মেয়ে বিয়ে দেবেন।এসব নিয়ে আপনার সহধর্মিণী মানে ঈশার মায়ের মাথা ইতোমধ্যে সাফ করে দিয়েছেন।আপনি শুধু ঈশাকে বাসায় তুলুন দেখবেন আপনার স্ত্রী বলবে অয়নের সাথে ঈশার বিয়ে।”
” অসম্ভব ওই লোভী বর্বর পরিবারে আমি মেয়ে দেব না।প্রয়োজনে সারাজীবন ঘরে বসিয়ে রাখবো তবুও না।”
” দিতে হবে না আমি আছি না?”
শেষোক্ত বাক্যটি মুচকি হাসির ছলে বললো ঈশান।তার হাসিতে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো মুজাহিদ হাসানের তিনি চোখ রাঙিয়ে বলেন,
” তোমার কাছেও না।তুমি একটা মেয়েকে ছি ছি ছি।”
” এসব কোন প্রমাণ আছে?বিশ্বাস হলো মনের ব্যপার এত বছরেও আমি এত প্রমাণ দিয়ে নিজেকে নির্দোষ করতে পারিনি এখনো পারবো না যদি আপনারা বিশ্বাস না করেন।আমার বাবা চান আমি তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করি অবশ্য ফুফুর ছোট থেকেই এই পরিকল্পনা কিন্তু আমার পরিবার রাজি ছিল না শেষ পর্যায়ে এত নোংরা খেলায় মেতে উঠলো যাই হোক এসব বলে লাভ নেই।আমি ঈশাকে কথা দিয়েছিলাম রাগের মাথায় মা রা মা রি ছেড়ে দিব আর আমি আমার কথা রাখতে সর্বদা প্রস্তুত।আপনি আপনার পরিবারকে বোঝাবেন আমি আজ ঈশাকে নিয়ে যাব আর এই সাপ্তাহের মাঝে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে।আর কোন ধরা বাঁধা আমি চাই না।”
” তোমার বাবা না এলে এই বিয়ে কিছুতেই আমি দেব না।তিনি আসবেন আর সত্যিটা বলবেন।”
ঈশান এবার একটু বেশি বিরক্তবোধ করলো।জোরাজোরির ব্যপারটা তার মোটেও পছন্দ না।কিন্তু নিয়তি তাকে বার বার সেদিকেই ধাবিত করছে।কফির মগে আঙুল ঘুরিয়ে শান্ত স্বরে ঈশান বলে,
” আপনার মেয়ে আমার কাছে এটা আশা করি ভুলে জাননি?আপনার একটি হ্যাঁ না তে আপনার মেয়ের জীবন পালটে যাবে।আরেকটা কথা পুলিশের ভয় আমাকে দেখাবেন না আমিও পালটা চাল চালতে পারি আমাদের সাথে বিয়ের নাম করে আপনারা অন্যত্র মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন এটা কি আমাকে ঠকানো নয়?”
মুজাহিদ হাসান পালটা উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না।তিনি চুপচাপ মাথা নুইয়ে বসে রইলেন।ঈশানকে তিনি পছন্দ করতেন কিন্তু এখন আর হয়তো করেন না কিন্তু ঈশানের মাকে বড্ড শ্রদ্ধা করেন।কোমল মনের সেই মানুষটা বোধহয় ঈশার বাবার সেদিন পা ধরার বাকি রেখেছিলো।ঈশানের বিরুদ্ধে এই অপবাধ মিথ্যে একদিন না একদিন সত্যতা প্রমাণ হবে।তবে তার আগে জল এতদূর না গড়ালেও হয়।বুকে পাথর রেখে ঈশানের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হলেন মুজাহিদ হাসান মেয়ের ভাগ্য যদি খারাপ থাকে তবে কোন মতেই তিনি খন্ডাতে পারবেন না।
” আমার মেয়েকে আজ নিয়ে এসো।”
“অবশ্যই।রাতে তাকে নিয়ে যাব।”
ঈশানের হাস্যজ্বল মুখ দেখে কিঞ্চিৎ হাসলেন মুজাহিদ হাসান।
” ওহ ফাদার ইন ল আপনার হাসিটা ভীষণ সুন্দর।”
ঈশানের কথায় বিব্রতবোধ করলেন তিনি কপট রাগ দেখাতে ঈশান করে বসলো আরেক কান্ড।ঈশানের কাছে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে একটি সাদা গোলাপের ছোট্ট তোড়া বের করে মুজাহিদ হাসানের সম্মুখে হাটু মুড়ে বসে বলে,
” উইল ইউ বি মাই ফাদার ইন লো?”
ঈশানের কথায় সবাই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।আশেপাশে মানুষের কৌতূহল বাড়লো সবাই তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে।মুজাহিদ হাসান দাঁতে চেপে বলেন,
” ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে?”
” মোটেও না।আপনার মেয়েকে বিয়ের জন্য এভাবে প্রপোজ করিনি অথচ দেখুন আপনার কি কপাল আপনাকে প্রপোজ করছি।প্লিজ আমাকে গ্রহণ করুন আপনার কি চাই বলুন?নাতি নাকি নাতনি?কয়টা লাগবে?”
” নিলর্জ্জ ছেলে দাঁড়াও বলছি।”
” আগে ফুল নিন।”
মুজাহিদ হাসান ফুল গ্রহণ করলেন।আতঙ্কে তার চাহনিটা পালটে গেছে।আশেপাশে সবাই হাসছে ঠোঁট চেপে তবে এ তাচ্ছিল্যর হাসি নয় পুলকিত**চমকে যাওয়ার হাসি।
৮৬.
ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বউ নিয়ে যেন জামাই এলো শ্বশুরবাড়ি।ঈশানের হাবভাবে এখন তাই মনে হচ্ছে।হাতে ব্যাগপত্র চোখে কালো চশমা ঠোঁটের কোনে লেপ্টে থাকা হাসি।মেয়েকে পেয়ে কান্নায় বুক ভাসালেন সুলতানা।তার কান্নার শেষ নেই। হাসিন ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে কড়া দৃষ্টিতে ইচ্ছে করছে গলাটা চেপে মে রে ফেলতে।কিন্তু এখন কিচ্ছু করা যাবে না।এই ছেলের সাথে তর্ক করাও বারণ বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুজাহিদ হাসান।মামার নির্দেশ অমান্য করার সাহস হাসিনের নেই তবুও মনের জেদ মেটাতে বলে,
” এত নাটক করার কি দরকার ছিল?ঈশা তোমার কাছে বলে দিলেই হতো।আমাদের আর পাগলা ষাঁড়ের মতো ছুটতে হতো না।ড্রামা কিং কোথাকার।”
” আর তোমরা ফুল ফ্যামিলি ড্রামাবাজ হা হা হা।”
ঈশান কাট কাট জবাব দিয়ে হাসতে থাকলো।হাসিনকে হারিয়ে ভেতরের সত্তাটা তার পিঠ চাপড়ে বাহবা দিচ্ছে।
” আহ হাসিন।”
গলা তুলে বললেন মুজাহিদ হাসান।ঈশানকে বসতে ইশারা করলে ছেলেটা বিনা বাক্যে বসে যায়।সুলতানা মেয়েকে নিয়ে ভেতরের কক্ষে যেতে নিলে ঈশান গলা ছেড়ে বলে,
” শুনছেন মাদার ইন ল যেভাবে সহি সালামতে বউ দিয়ে গেছি সেই ভাবে আবার নিতে আসবো।সুসম্মানে আমার জিনিস আমায় ফেরত দিয়ে দিয়েন।”
” মেয়েকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেব তবুও তোমার কাছে দেব না।”
” সুলতানা চুপ থাকতে বলেছিলাম।”
মুজাহিদ হাসানের ধমকে চুপসে গেলো সুলতানা।স্বামীর ঝারি খেয়ে ঈশানের দিকে তাকালেন দাঁত কিড়মিড়িয়ে।
” সুলতানা ঈশানের জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করো।”
” পারবো না।এক্ষুনি যেতে বলো আপদ্’টাকে।”
মায়ের রাগ দেখে ঢোক গিললো ঈশা।ঈশান কি ভাবছে?অদ্ভুত এই ছেলেটা হাসছে কেন?সামনের ঝকঝকে চকচকে দাঁত দেখিয়ে ছেলেটা নিলর্জ্জের মতো হাসছে এত অপমানের পরেও!
” শ্বাশুড়ি আমার যেমন তেমন শ্বশুর আমার মনের মতন।আমরা গতকাল আসছি ফাইনাল কথা সারতে হবে।আর কোন চালাকি কাজে দেবে না আপনাদের। তাই ভালোই ভালোই ঝামেলা মিটিয়ে নিন।”
.
ঈশান চলে গেলো।অনেকদিন পর নিজের ঘরে ফিরে শান্তির শ্বাস ছাড়লো ঈশা।সুলতানা হন্তদন্ত পায়ে প্রবেশ করলো তার রুমে।মেয়েটাকে টেনে বসালেন বিছানার এক কোনে।
” সত্যি করে বলো বদমাইশটা তোমার সাথে কিছু করেনি তো?”
” কী করবে?”
” নাটক করো না তোমাকে যা বোঝাতে চাইছি… ”
” মা প্লিজ এবার চুপ যাও।এসব অযথা কথা মাথায় কেন আনছো?”
” তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”
” বলো।”
” অয়নকে তোমার কেমন লাগে?তোমার মামা আবদার করলো তোমাদের দুই হাত এবার এক করে দিতে।বিয়েটা…”
গর্জে উঠলো ঈশা।হাতের মুঠোয় থাকা গ্লাসটি ছুড়লো মেঝেতে।কাঁচের গ্লাসের দরুনে মুহূর্তে টুকরো টুকরো হয়ে গেল সেটি।ভাঙাচুরার শব্দে দ্রুত পায়ে মেয়ের কক্ষে এলেন মুজাহিদ হাসান ঈশাকে রেগে যেতে দেখে বলেন,
” কি হয়েছে মা?”
” বাবা দেখো মায়ের মাথায় কিসব ভূত ঢুকেছে মা এসব কি বলছে?অয়ন ভাইকে আমি বিয়ে করবো ভাবলে কি করে তোমরা।অয়ন ভাইয়ের প্রক্তন স্ত্রীর কথা মনে নেই?”
” মেয়েটা গরিব ঘরের ছিল।তাদের কোন চাহিদা পূরণ করতে পারেনি।তাছাড়া মেয়েটা বেশি স্বাধীনতা চেয়েছিল।”
মায়ের কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো ঈশা।
” চাহিদা মানে কি বুঝাতে চাইছো?চাহিদা মানে কি তুমি বুঝতে পারছো না?তাদের লোভ হয়েছে আমাকে একবার যদি ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে পারে তবে আমার বাবার সব কিছু তো ওদেরি হবে।”
” একদম আমার ভাইয়ের নামে উলটা পালটা কথা বলবে না।আমার ভাইকে নিয়ে কথার বলার যোগ্যতা তোমার চৌদ্দগুষ্টির নেই।”
” আমার বাবার বংশের মানুষের সাথে কার তুলো না করো তুমি?একেই বোধহয় বলে ময়নার সাথে কাকের তুলনা।”
” তোর এত গলা বেড়েছে?ছিলি তো আরেক ছেলের কাছে এতদিন, এসব জানলে কোন ভালো ঘরে তোকে বউ করবে?আমার ভাইয়ের ছেলে তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এতে তোর সাত জনমের ভাগ্য।”
” যে ছেলের কাছে ছিলাম সেই ছেলেকেই বিয়ে করবো।দিন দুনিয়ায় রটে যাক,হাজার ঘটনা ঘটে যাক তবুও তার কাছেই ফিরবো।”
ভয়ে থরথর কাঁপছে রাজীব গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারংবার।ছেলেটার সম্মুখে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে ঈশান।তার পাশে হৃদয়।ঈশানকে যতটা না সে ভয় পায় তার থেকেও বেশি ভয় পায় হৃদয়কে।হৃদয়ের কোন গতিবিধি নেই সে বেসামাল।চোখের পলকে চাকু গলায় বেঁধে দিতে তার কয়েক সেকেন্ডের কাজ শুধুমাত্র মনিবের একটি মাত্র নির্দেশ তারপর তার খেল দেখানো শুরু।চুপচাপ থাকা ঈশান এবার মুখ খুললো কিছুটা রাগ নিয়ে বলে,
” আমার মন চাইছে তোর কলিজাটা একটু দেখি।তোর এত বড় সাহস ঠিক কবে হলো!”
” ভ..ভুল হয়ে গেছে ভাই আমাকে দয়া করুন।”
” এটাকে ভুল বলে না।এটাকে বলে ইচ্ছাকৃত ভুল।তুই ভুল করেছিস জেনে শুনে তোর আবার কিসের মাফ?”
” ভাই..”
ঈশান দাঁতের সাহায্যে ঠোঁট কামড়ালো।তার ছটফটে ভাব দেখে হৃদয় কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে।
” ভাই কোন সমস্যা?”
” তোর ভাবিকে কথা দিয়েছি হাত আর চালাবো না এখন দেখ মারতেও পারছি না।হাত কেমন কেমন করছে মনে হচ্ছে সে অনেক ক্ষুদার্ত।”
” তাহলে আমি মা রি?”
” মা র বি?আচ্ছা মার কষে একটা চড় দিবি।”
হৃদয় সত্যি সত্যি চড় লাগালো।কানের ভেতর ভো ভো করে উঠলো রাজীবের।মুখ ফুটে কিছু বলার আগে অন্য গালে কষে পড়লো আরেকটি চড়।
” আমার সাথে বেইমানি কেন করেছিস রাজীব?”
” ভাই…”
” আমি তোর ভাই না।তোকে শাসন করেছি, দেখভাল করেছি নিজের খুব আপন ভাবতাম আর তুই আমার পিঠে ছুরি দিয়েছিস মানতে বড্ড কষ্ট হয়।”
” দিহান আর মীরাকে আমি সহ্য করতে পারি না ভাই।ওদের একসাথে দেখলে আমার সব এলোমেলো লাগে।আপনাকে আর ঈশা ভাবী একসাথে দেখলে মনে হয় আমাকে নিসঙ্গ করে আপনারা সুখে আছেন আর তাই তো আমি আপনার শ্বশুরের সাথে যোগাযোগ করি।”
” কিন্তু আমার বাবার সাথে তোর যোগাযোগ হলো কি করে?”
“আপনার আর রাসেলে ভাইয়ের কথপোকথন একদিন আড়াল থেকে শুনেছিলাম।আপনার বিয়েতে আপনার বাবা সম্মতি দেননি এটা জানতে পেরে খোঁজ লাগাই নাম্বার জোগাড় করে ফোন করি।উনি আমার সাথে ডিল করেন যদি আমি আপনাদের বিয়ে ভেঙ্গে দি তাহলে আমাকে মোটা অংকের টাকা দেবেন।”
” সম্পর্ক তুচ্ছ হয়ে গেল টাকার নেশায়?”
” মাফ করবেন ভাই।আমি লজ্জিত।”
” তুই মীরার প্রতি ঝুঁকেছিস হিংসাত্মক হয়ে এর কারণ মীরা দিহান সুখী ঠিক এই কারণে।তুই এসব ছাড় তুই অপরাধী তবুও তোকে একটি সুযোগ দিচ্ছি।দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দিব।তুই তোর মতো লাইফ সাজিয়ে নিবি কিন্তু তার আগে তোর একটা দায়িত্ব আছে।”
” কি দায়িত্ব ভাই?”
” আমার বাবার সাথে যত কল রেকর্ড মেসেজ সব ঈশার বাবাকে দিবি।সব মানে সব কোন কিছুই আড়াল হবে না।”
” জি জি আপনার কথা মত হবে ভাই।তবে একটা কথা বলি?”
” বল।”
” আপনার বাবা আপনার ফুফুর কথায় প্রভাবিত।উনি যাই বলেন তিনি তাই করেন।”
৮৭.
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সময় এসে দুয়ারে কড়া নাড়লো আজ ঈশার বিয়ে।সম্পূর্ণ ঘরোয়া ভাবে স্বল্প অতিথি নিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।ঘরের ভেতর সাজাতে কার্পণ্য করেনি হাসিন যেভাবে পেরেছে সে সাজিয়েছে লাইটিং ফুল কোন কিছুর কমতি নেই।স্বল্প আয়োজনে এখন বিয়েটা হলেও পরবর্তীতে তাদের বেশ জমকালো অনুষ্ঠান করা হবে এমনটাই কথা হয়েছে দুই পরিবারের।রুমার অনুরোধ ছিল ঈশাকে আজ পার্লারে সাজানো হবে যেহেতু বিয়ের আয়োজন রাতে তাই সন্ধ্যার আগেই পার্লারে চলে যায় ঈশা।তার সাথে ছিল অনু।বর পক্ষ এলো রাত আটটায়।আটটা পেরিয়ে ঘড়ির কাটা ছুঁয়ে গেলো দশটা।সবার মাঝে চিন্তার আভাস পাওয়া গেল।ঈশা বাড়িতে ফোন রেখে গেছে অপরদিকে অনু ফোন নিলেও মেয়েটা ফোন তুলছে না।ঈশাকে নিয়ে অনু মেয়েটা কোন পার্লারে গেল সঠিক নাম মনে নেই সুলতানার একে তো তিনি এই বিয়েতে খুশি নন যার কারণে তার মাথা সর্বদা গরম থাকে অপরদিকে ব্যস্ততার মাঝে মেয়ে কি বলে বাসা থেকে বেরিয়েছে তিনি বেমালুম ভুলে বসে আছেন।অনুকে বেশ কিছুক্ষণ পর ফোনে পাওয়া গেলো।ফোনটা ধরতে ঈশান তাকে ধমকে বলে,
” ফোন ধরতে এত সময় লাগে?”
” আরে বকছেন কেন?আজকের দিনেও..”
” অল্পের জন্য তো মেরেই ফেলতে।শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।এমন বেখেয়ালির জন্য তোমার কপালে শনি আছে মনে রেখো।ফোন যদি সময় মতো না ব্যবহার করতে পারো তবে ফেলে দাও পুকুরে।ঈশা কোথায়?”
ঈশানের ধমকে মেজাজটা খারাপ হলো অনুর।হাতে থাকা কাঁচা ফুলগুলো দুমড়েমুচড়ে ধরে বলে,
” পালিয়েছে আপনার বউ।শুনছেন পালিয়েছে।”
” ক..কি!”
এই ভয়টাতে ছিল ঈশান।সুলতানার কর্মকান্ড তার মোটেও সুবিধার লাগে না।ঈশান দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো।তার মাথায় ঝিম ধরেছে।রাসেল ঈশানের হাত ধরতে ছেলেটা উঠে দাঁড়লো।পাঞ্জাবির পকেটে ফোন পুরে দৌড়তে দৌড়তে বলে,
” পালিয়েছে আবার পালিয়েছে।এই মেয়ের প্রতি আবেগ দেখাই লাভ নাই।আমার আবেগ বিবেক সব দৌড়ের উপর রাখে।”
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৬ক]
____________________
লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললেন ঈশার বাবা।মেয়ের এমন বেয়াদবিতে তিনি সত্যি লজ্জিত আজ তো এমন করার কথা ছিল না তবে কি সুলতানা কিছু করেছে?চোখ রাঙিয়ে সুলতানার দিকে তাকালেন মুজাহিদ হাসান।স্বামীর এমন চাহনিতে বড্ড ঘাবড়ে গেলেন তিনি।স্বামীর কাছে এগিয়ে এসে বলে,
” আ..আমি কিছু জানি না।সত্যি বলছি আমি কিচ্ছু জানি না।”
” ঈশা পালিয়ে কেন যাবে?সব ঠিক ঠাক ছিল তুমি কি বলেছিলে ওঁকে?”
” আমি কিছু বলিনি।অনুকে একবার ফোন করো না।”
” দিয়েছিলাম ধরছে না।”
আত্নীয় স্বজনদের মাঝে পড়ে গেল শোরগোল।অবশ্য ঈশানের পরিবারে তেমন কেউ ছিল না কাছের পরিবার বলতে নাজিমের পরিবার এবং রুমার পরিবার।ঈশাদের পরিবারেও ছিল কাছের সেই আত্মীয় সজন।হাসিন পড়লো দুশ্চিন্তায় বাবুর্চিদের দিকটা তাকে সামতে হচ্ছে বিধায় এই মুহূর্তে ঈশাকে খুঁজতে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।ঈশান আর রাসেল তো গেছে বাকিটা তারা সামলাবে মেয়ে পক্ষ বিয়ে দিতে এত উতলা হয়নি যতটা ছেলে পক্ষ হয়েছে এবার তাদের বউ তারা খুঁজে নিক।মনে মনে কথাটি বলে পৈশাচিক হাসলো হাসিন।
.
প্রচন্ড গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করছে ঈশান এক্সিডেন্টের ভয়ে রাসেল বার বার তাকে বারণ করছে গাড়ি আস্তে চালাতে।ঈশানের সেদিকে ধ্যান জ্ঞান নেই মনে মনে ঈশাকে হাজার রকম বকা ঝকা করতে ব্যস্ত।তারা দশ মিনিটে পৌছে গেছে উক্ত পার্লারে।অনু বলছিলো তারা এই পার্লারেই সাজতে এসেছে।যেহেতু এটা লেডিস পার্লার সেহেতু ঈশানকে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করতে দেখে পার্লারে থাকা কর্মচারীরা বাঁধা প্রদান করলো।কিন্তু এই ছেলে তো জন্মের ঘাড় ত্যাড়া সবাইকে চোখ রাঙিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলো ঈশাকে।ঈশানকে দেখে ভয়ে আড়াল হলো অনু।সে তো মজা করে কথাটা বলেছে আর ঈশান সত্যি সত্যি ভেবে নিলো ঈশা পালিয়েছে!হায় আল্লাহ আজ যে অনুর কি হবে।
ঈশার সাজ শেষ এখন সে শুধু একবার দেখে নেবে সবটা।এতক্ষণ তাদের দেরি হওয়ার মূল কারণ ফুল।
খোঁপায় ফুল দিতে কাঁচা ফুল আনতে বেমালুম ভুলে গেছে ঈশা এবং অনু দুজনে।ফুল ছাড়া সাজটা অপরিপূর্ণ লাগছে ঈশার কাছে তাই তো মুখটা ভার হয়ে গেল তার।মেয়েটার মন খারাপ বুঝতে পেরে ফুল আনবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় অনু।ঈশার বিয়ে উপলক্ষ্যে সে নিজেও শাড়ি পরেছে।কিন্তু শাড়ি পরে হাটতে বেচারির হিমশিম খাওয়ার অবস্থা।তার মাঝে মার্কেটে গিয়ে ফুল দোকান খুঁজে ফুল এনেছে সে।সব মিলিয়ে বড্ড হিমশিমে পড়েছিল অনু বেচারি।অনেকবার উষ্টা খেয়ে পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নিয়েছে।তার মাঝে ঈশান যখন তাকে রাগ দেখালো নিজের মুখটা আর সংযত করতে পারেনি অনু।ঈশানকে উলটো চিন্তায় ফেলে নিজে শান্তিতে পার্লারে ফিরলো।
” ঈশা!”
ঈশান যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।দ্রুত এগিয়ে এলো ঈশার কাছে।মেয়েটার হাত টেনে নিজের বুকে ঠেকিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলে,
” দেখো তুমি।অনুভব করছো?আমি কতটা চিন্তায় ছিলাম।”
” আ..আমি..ক..”
” এই কথা বের হচ্ছে না কেন মুখে?”
” ঈশান আপনি এখানে কেন?এমন অস্থির কেন আপনি?”
” তুমি পালিয়েছো কেন সেটা বলো।”
” আমি পালাইনি।আমি পালালে এখানে কি করতাম?”
হ্যাঁ তাই তো!ঈশানের সৎবিৎ ফিরলো আশেপাশে পরখ করে দেখলো মেয়েরা তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সে।রাসেল এগিয়ে এসে ঈশানের হাত টেনে বলে,
” ঈশান অনু মজা করেছে দেখিলি তো?বিশ্বাস করিসনি আমার কথা।এবার হলো তো বিশ্বাস?”
” অনু বলেছে আমি পালিয়েছি?”
ঈশা চমকে গেলো আশেপাশে তাকিয়ে মেয়েটা দেখতে পেলো পর্দার আড়ালে।ঈশা গলা তুলে বলে,
” এই অনু এদিকে আয়।”
অবশেষে ধরা পড়লো অনু।পর্দার সাথে লেপ্টে নেতিবাচক মাথা নেড়ে বলে।
” না আসবো না।”
ঈশান এগিয়ে গেলো তবে অনুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর আগে অনুকে আড়াল করে দাঁড়ালো রাসেল।
” দোস্ত ওরে কিচ্ছু বলিসনা।মজা করছিল কিন্তু তুই সিরিয়াস হয়ে গন্ডোগোল.. ”
” চুপ কর।সর তুই সামনে থেকে আমার জানতে হবে এত বড় মিথ্যা কথা বলার সাহস তাকে কে দিয়েছে।ঈশান শাহরিয়ারের সাথে ফাজলামো!”
” আপনি আমার দুলাভাই হন আর আমি আপনার শালি।ধরে নিন শালির পক্ষ থেকে এটা একটু প্রাঙ্ক ছিল।”
” এটা একটু?এই তোমার কাছে এটা একটু লাগে?”
ঈশা এগিয়ে এলো হাত টেনে সরিয়ে আনলো ঈশানকে।
” আপনি চলে যান আমরা আসছি।”
“তোমায় না নিয়ে আমি যাব না।”
” লোকে কি বলবে?প্লিজ ঈশান নিজেকে হাসির পাত্র বানাবেন না চলে যান আপনি।”
” ঠিক আছে আমি নিচে অপেক্ষা করছি।তোমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে তবে আমি যাব।”
ঈশান গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল।রাসেল যাওয়ার আগে অনুকে চোখ রাঙিয়ে ইশারা করে বলে,
” তোমায় দেখছি পরে।”
” ঠিক আছে দেখিও এত সেজেছি তো তোমার জন্যেই।তুমি দেখবে আর আমার রূপের আগুনে ঝলসে যাবে।”
” তুমি একটা ফাজিল মেয়ে।”
ঈশানে পিছু পিছু রাসেল বেরিয়ে গেল।কপট রাগের মাঝেও তার ঠোঁটে লেগে ছিল হাসি।এই মেয়ে এমন কেন?
৮৮.
বাড়ি ফিরে সবার বকার মুখে পড়লো অনু।বেচারি স্বপ্নেও ভাবেনি এমন কিছু হবে।সে শুধু মজা করেছে আর ঈশান সেটা ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানিয়েছে তাহলে দোষ কার?তার?মোটেও না দোষ ঈশানের হ্যাঁ হ্যাঁ ঈশানের।মনে মনে হাজার খানেক গালি দিল ঈশানকে।আজ ঈশার মামার বাড়ির কেউ এলো না বিয়েতে তাদের নিয়ে যেন কারো মাথা ব্যথাও নেই।শ্রেয়া রান্না ঘরে সবার জন্য শরবত মিষ্টি প্লেটে সাজাচ্ছিলো।বিয়ে পড়ানো শেষে সবাই তো মিষ্টি মুখ করবে।রান্না ঘরে একা শ্রেয়াকে পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগালো অনু।
” শ্রেয়াপু মনটা ভীষণ খারাপ।”
” কেন?সবার বকা খেয়ে? ”
” মোটেও না।ঈশার বিয়ের গেট ধরতে পারিনি বলে।কত স্বপ্ন দেখেছি এই দিনের আহারে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।”
” ঈশার বিয়ের গেট ধরা হলো না বলে মন খারাপ করে লাভ নেই পরবর্তীতে তো জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠান হবে তখন সুযোগটা মিস হবে না।”
” কিন্তু আজ?আজ বাদ যাবে কেন?”
” তুমি কি বলতে চাইছো?”
” ঈশান ভাইয়ার জন্য একটা স্পেশাল শরবত বানাও।স্পেশাল মানে বুঝতে পেরেছো?”
শ্রেয়া চোখে হাসলো।সে বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছে অনু কি চাইছে।
.
ঈশান নাজিম রাসেল রেদোয়ান তারা চারজন একটি কক্ষে ছিল।তাদের সাথে ছিল হাসিন।ছেলেটা একবার এদিকটা সামলে নিচ্ছে তো আবার ওদিকটা সামলাচ্ছে।একটু পর বিয়ে পড়ানো শুরু হবে।শ্রেয়া শরবতের ট্রেই নিয়ে প্রবেশ করলো কক্ষে।সবার হাতে শরবত দেওয়া শেষে বাকি রইলো মাত্র একটি গ্লাস।সেই গ্লাস বাড়িয়ে দেওয়া হলো ঈশানের হাতে।ঈশান গ্লাসটা হাতে নিতে অনুর দিকে একবার তাকালো।মেয়েটা কেমন চাতক পাখির মতো ছটফট ছটফট করছে।কিন্তু কেন?ঈশানের মনে সন্দেহের দানা বাঁধলো এই শরবতে কি ঘাপলা আছে।
” আমি শরবত খাব না।এটা বরং নিয়ে যান শ্রেয়া ভাবি।”
” এই খাবেন না মানে কি দুলাভাই?সবাই খেল আপনি কেন খাবেন না?”
অনুর কথায় ঠোঁট বাঁকালো ঈশান।অনিহা দেখিয়ে বলে,
” সরি শালি এটা নিয়ে যাও।”
” না নিব না।এনেছি যখন খেতে আপনাকে হবে।কি গো শ্রেয়া আপু বলো না।”
অনুর কথায় তাল মেলালো শ্রেয়া।রেদোয়ান নাজিম সবাই জোরাজোরি করলো ঈশানলে শরবতটা খেতে কিন্তু ঈশান এই শরবত মুখেও তুললো না।অনু এবার কিছুটা রেগে গেল।ঈশানের দিকে তাকিয়ে ঝাঝালো কণ্ঠে বলে,
” এই আপনি এমন কেন?আমরা মেয়ে দিব না।যদি ভালোয় ভালোয় বউ নিয়ে যেতে চান এক্ষুনি শরবতটা খাবেন।”
” হুমকি দিচ্ছো?বউ তোমরা দিবে কি আমি নিজেই নিয়ে যাব বউয়ের সাথে শালি তো ফ্রি আছেই তারপর দুজনকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হবো।এত করে যখন বলছো শরবতটা তবে খাওয়াই যায়।”
অনু খুশিতে গদগদ হয়ে গেল।ঈশানকে শায়েস্তা করার সুযোগ পেয়েছে সে।কিন্তু তার ভাবনাকে মিথ্যে করে দিল ঈশান।শরবতের গ্লাসটা রাসেলের দিকে এগিয়ে বলে,
“ধর এটা শেষ কর।শরবত টরবত তো আমি খাই না তুই জানিস।আমার হয়ে তুই খা।”
অনু বারণ করার আগে রাসেল শরবতটা মুখে তুললো।গ্লাসটা অর্ধেক শেষ হতে থমকে গেল সে।কেমন আঁশটে গন্ধ!অনু দ্রুত রাসেলের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে বলে,
” তুমি ঠিক আছো?এক্ষুনি গিয়ে বুমি করো।ছি ছি ছি শরবতটা কাঁচা মাছ ধোয়া পানি দিয়ে তৈরি।”
রেদোয়ান আর নাজিম অবাক হয়ে গেল।ঈশান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো এবং অনুর দিকে চোখে পাকিয়ে বলে,
” আমার সাথে চালাকি করতে এসো না শালিকা।দেখলে তো কেমন দিলাম।”
রাসেল তাজ্জব বনে দাঁড়িয়ে আছে।তার গলার ভেতর কেমন কেমন করছে।জিহ্বায় কড়া মিষ্টির স্বাদ অথচ নাকে আসছে আঁশটে গন্ধ।সব মিলিয়ে বড্ড নাজেহাল অবস্থায় পড়লো সে।অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
” ফ্লেভার খারাপ না।গন্ধটা বাজে।”
.
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তার আপন গতিতে।আর দেরি করা ঠিক হবে না।বসার ঘরে নিয়ে আসা হলো ঈশাকে।মেয়েটার পরনে লাল বেনারসি শাড়ি।হাত ভরতি লাল চুড়ি।খোপায় গুজে দেওয়া হয়েছে লাল গোলাপ।কপালে সাদৃশ্যমান টিকলিটা তার সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।লাল দোপাট্টা দিয়ে রুমা ঢেকে দিয়েছে ঈশার মুখ।ঈশার মুখোমুখি বসেছে ঈশান তাদের মাঝে ফুলের একটি পর্দা।এসব আয়োজন রুমা নিজের হাতে করেছে তার পাশাপাশি সাহায্য করেছে শ্রেয়া।বিয়ে পড়ানো শুরু হলো এবং চোখের পলকে শেষও হয়ে গেল।ঈশা কবুল বলতে এক মিনিটো দেরি করলো না তার এই কান্ডে অনু মনে মনে গালি দিলো।ঈশাকে দেওয়া হলো নিলর্জ্জের উপাধি।
” গা ধি কোথাকার এত তাড়াতাড়ি কেউ কবুল বলে?শিখিয়ে দিলাম কি আর তুই করলি কি।বলেছিলাম দশ মিনিটেও কবুল বলবি না।তোর দেরিতে ঈশান ভাইয়ের কি রিয়েকশন হয় দেখতে চাই।ওমা এ তো দেখি বিয়ে পা গ ল।দুই সেকেন্ডে কবুল বলে দিল!”
বিয়ের শেষে রুমা বললো দোপাট্টা সরিয়ে ঈশার মুখ দেখতে।আশেপাশে তাকিয়ে ঘাবড়ে গেল ঈশান সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে তাদের দেখছে।আশেপাশে মুরব্বিদের অভাব নেই।ঈশান ফুলের পর্দা সরিয়ে ঈশার ঘোমটা তুললো এবং ঠোঁট ছোঁয়ালো ঈশার কপালে।আশেপাশে শ্রেয়া রুমা অনু সহ ঈশার অনন্য কাজিনরা ঈশানের কান্ডে হৈ চৈ শুরু করলো।ঈশানকে লজ্জায় ফেলতে অনু জোরে জোরে বলে,
” ঘোমটা তুলে মুখ দেখতে বলেছে চুমু খেতে তো বলেনি।”
আশেপাশে সবার হাসির রোল পড়লো।চোখে নোনা জল অথচ ফিক করে ঈশা নিজেও হেসে ফেললো।ঈশান পড়লো ভারী লজ্জায় ছেলেটাকে অপদস্ত করতে পেরে অনু ভীষণ খুশি।
বিয়ে শেষে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন শেষ হতে প্রায় সাড়ে বারোটা বাজলো।এখন মেয়ে বিদায়ের পালা ঈশান অপেক্ষায় ছিলো কখন তার প্রিয় মানু্ষকে নিজের ঘরে তুলবে।আজ কোন বাঁধা নেই নিজের অধিকারের দলিল তৈরি করেছে সে।মনে মনে যখন আনন্দের ঢোল বাজলো ঈশানের মনে তখন রেদোয়ানের একটি বাক্য উলটে পালটে দিল তার সব ভাবনা।
” শালা মিয়া চলো চলো আর দেরি করা ঠিক হবে না।বিয়ে তো শেষ এবার তুমি তোমার রাস্তায় আর বউ বউয়ের রাস্তায়।”
” বউ বউয়ের রাস্তায় মানে কি?ঈশা যাবে না?”
” না আজ তো ঈশা যাবে না।”
” মজা করছো আমার সঙ্গে?”
” মজা করবো কেন আমি?তুমি জানি না আজ বিয়েটা হবে কিন্তু ঈশাকে ওই বাড়িতে নেওয়া হবে না।ঈশাকে নেওয়া হবে অনুষ্ঠান করার পর।”
” এই কথা কে বলেছে তোমায়?”
” যখন বিয়ের ফাইনাল কথা হয়েছিল তখন এটাই সিদ্ধান্ত হয়।আমি তো ছিলাম সেদিন।”
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো ঈশানের।এই নিয়ম সে কিছুতেই মানবে না।বিয়ে করেছে বউ নিয়ে যাবে ব্যস এর মাঝে আবার কিসব শর্ত জুড়েছে এরা।বউ না নিয়ে তো ঈশান এই বাড়ি ছাড়বে না কোন দিন না।ঈশাকে আজ নেওয়া হবে না এই কথা সবাই জানতো কিন্তু ঈশান আর রাসেল তারা কেউ জানতো না অবশ্য তাদের জানানো হয়নি।এর কারণ মাহমুদা আগে থেকেই বারণ করেছিল সবাইকে।ঈশা সত্যিটা জেনেও ঈশানের কাছ থেকে আড়াল করেছে।তার ভাবনা ছিল ঈশান বিয়ে করে ক্ষান্ত হবে এরপর সত্যিটা জানলেও আপত্তি করবে না।কিন্তু তাদের পরিকল্পনা সফল হলো না মাহমুদাকে আড়ালে নিয়ে কিছুক্ষণ রাগ ঝারলো ঈশান।রাগে সব তছনছ করতে ইচ্ছে করছে।মাহমুদাকে দিলো তার দুটি শর্ত, প্রথমত ঈশাকে আজ ও বাড়িতে না নিলে সে নিজেও যাবে না।এখানেই থাকবে।দ্বিতীয়ত বউ যদি তারা না নেয় সে একাই নেবে।এত বড় সত্যি আড়াল করে কি ভেবেছিলো পার পাবে তারা?
ঈশানের মা পড়লেন মুশকিলে ছেলে রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে।কখন আবার ভাঙাচুরা শুরু করে কে জানে।মুজাহিদ হাসান ঈশানকে বুঝাতে চাইলো কিন্তু সে কারো কথা পরোয়া করলো না।রাসেল তো এটা ভেবে অবাক হচ্ছে এত কাহিনি ঘটার পরেও এরা এই বিষয়টা আড়াল করলো কোন সাহসে।ঈশার আত্নীয় সজনরা সম্মতি ছিল ঈশাকে বিদায় দেওয়ায়।ঈশার ফুফু এক কথার মানুষ তিনি মুজাহিদ হাসানকে বলেন, তাদের বউ নেওয়ার অধিকার আছে তোমরা এবার মেয়ে বিদায় দাও।একে একে সবাই সম্মতি জানালো একমাত্র ঈশার মা জানালেন না।তিনি জেদ ধরে বসে আছেন মেয়ে আজ বিদায় দেবেন না।হঠাৎ যাওয়ার কথায় ঈশা নিজেও ঘাবড়ে গেল মা মেয়ের কান্না যেন থামছে না।সকল নিয়ম কানুন শেষে কনে বিদায়ের পর্ব এলো।এতক্ষণ হাসি আনন্দের মাঝে চোখের পলকে কেঁদে ফেললো অনু।ঈশার গলা জড়িয়ে শব্দ করে কাঁদছে মেয়েটা।আজকের পর তারা আলাদা হয়ে গেল আর অপেক্ষা হবে না আগের মতো কখন ভার্সিটি যাবে।রাত জেগে একসাথে থাকা হবে না।হুট হাট ঈশার কাছে যেয়ে আবদার করা হবে না তোর সাথে আজ ঘুমাবো।
হাসিন এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো মনটা তার ভীষণ খারাপ।একমাত্র ঈশাকে নিজের বোনের স্থানে রেখেছে।তার কাছে ঈশার স্থান বরাবরি স্পেশাল।হাসিনকে বুকে মাথা রেখে দেদারসে কাঁদলো ঈশা। হাসিন এক হাতে নিজের চোখ মুছে অন্য হাতে ঈশার চোখ মুছলো।
” পাগলি কাঁদে না।আবার আসবি তো।”
” ভাইয়া..”
” আবার কাঁদে পঁচা মেয়ে।”
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঈশা মুজাহিদ হাসানের সম্মুখে আসতে মুজাহিদ হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তার চোখ ভাসছে কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে চাইছেন না।বুকটা কেমন ভার হয়ে আছে।
” বাবা আমার তাড়িয়ে দিও না।”
” তোমার জন্য এই বাড়ির দরজা সর্বদা খোলা থাকবে মা।যখনি মন খারাপ হবে চলে এসো।”
” বাবা আমি পর হয়ে গেলাম।”
না চাইতেও মুজাহিদ হাসান এবার কেঁদে ফেললেন।তার কান্না দেখে ঈশার কান্নার গতি বাড়লো।আশেপাশে সবাই বাবা মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছে কিন্তু কারো কথাই তাদের কানে যাচ্ছে না।ঈশা তার বাবাকে ছাড়লো না জড়িয়ে রাখলো হাতের দৃঢ় বন্ধনে।মুজাহিদ হাসান ঈশানের হাত টেনে নিলেন সেই হাতে জড়িয়ে দিলেন ঈশার হাত।শেষ বেলায় মেয়ের দায়িত্ব তার স্বামীর হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি।কান্নায় এলোমেলো হয়ে আসছে তার গলার স্বর, তবুও দৃঢ়টা রাখলেন তার কথায়।
” আমার সুখ,হাসি,কান্না,আহ্লাদ,তৃপ্তি,গর্ব সবটা তোমার হাতে তুলে দিলাম।যেদিন আমার সুখ সুখে থাকবে না সেদিন ফুরিয়ে যাবে আমার সব ভালো থাকার কারণ।”
বিদায়ের ঘণ্টা বেজেই গেলো।ঈশানদের গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে নিজের কক্ষের বারান্দা থেকে মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মূর্ছা গেলেন সুলতানা।কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ঢলে পড়লেন হাসিনের মা আতিয়ার কোলে।
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৬ খ]
___________________
গাড়ি চলছে ঈশানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।পুরো গাড়ি স্তব্ধ নিরব।থেকে থেকে ছোট্ট রুদবা একটু আধটু কথা তুলছে তার নিরবতায় আবার নিরবতা নামে সকলের মাঝে।সামনে বসেছে রাসেল তার কোলে রুদবা।পেছনে ঈশান ঈশা এবং রুমা।রুমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে নিশ্চুপ কান্না করছে ঈশা কিছুক্ষণ পর পর ঈশার নাক টানার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।ঈশান পাশে বসে নিরিবিলি পর্যবেক্ষণ করছে মেয়েটাকে।মনে মনে তার জমেছে গাঢ় অভিমান।তার বুকে এসে কাঁদলে কি হতো?তাকে আড়াল করে সে রুমার কাছে কাঁদছে!পুনরায় নিজের অভিমানকে গালি দিল ঈশান সবকিছুতে তার বাড়াবাড়ি।
অবশেষে তাদের যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো বাড়ি এসে পৌছালো তারা।মাহমুদা হাসি মুখে ঈশাকে বরণ করে নিলেন।রাত অনেক হয়েছে আজকের মতো আচার-অনুষ্ঠান এখানে শেষ করা জরুরি।ঈশা চুপচাপ সোফায় বসে ছিল।মাহমুদা রুমা রেদোয়ান আর রুদবাকে নির্দেশ দিলেন তাদের কক্ষে যেতে।এই বাড়িতে ঈশান তাদের জন্য বরাদ্দ একটি কক্ষ রেখেছে।মাঝে মাঝে যখনি আসে এই রুমটাতেই তাদের থাকা হয়।মাহমুদা এগিয়ে এলেন ঈশানের কাছে এবং তাকে নির্দেশ দিলেন,
” ঈশান যাও, তুমি তোমার রুমে যাও।”
মায়ের কথায় ঈশান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।আড় চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে,
” একা যাব?”
” হ্যাঁ একাই যাবে।ঈশাকে তোমার রুমে পাঠানো হবে না।বিয়ে করেছো আমাকে দূর্বল পেয়ে হুমকি দিয়ে। মেয়ে এনেছো আমাকে হুমকি দিয়ে।এবার কি তোমার ঘরে নিয়ে যাবে হুমকি দিয়ে?দাও না দাও যতই হুমকি দাও ঈশাকে আমি তোমার রুমে পাঠাব না।যেদিন ঈশা মানিয়ে নেবে সবকিছু সেদিন সে তোমার রুমে যাবে।রুমা ঈশাকে আমার রুমে রেখে আয়।”
মাহমুদার কড়া আদেশ।ঈশান আর দ্বিতীয়বার কিছু বলার সাহস পেল না।এখন যদি সে কিছু বলে নির্ঘাত তাকে নির্লজ্জের উপাধি পেতে হবে।তাই পরিস্থিতি বুঝে চুপ রইলো সে।ঈশাকে নিয়ে গেলো রুমা তার পিছু পিছু গেলেন মাহমুদা।মাহমুদার নির্দেশে রাসেল যেন আকাশ থেকে পড়েছে ঈশানের থেকেও তার মুখের ভাবসাবের অবস্থা করুণ।রাসেল এগিয়ে এলো এবং ঈশানের পিঠ চাপড়ে বলে
” সরি দোস্ত এমনটা হবে ভাবতে পারিনি।আমাকে ক্ষমা করিস।”
” কেন কি হয়েছে? তুই কি করেছিস?”
” সেটা তুই রুমে গেলেই বুঝবি।”
রাসেল বিষণ্ণ মন নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো।বসার ঘরে একা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো ঈশান।মায়ের কি এমনটা করা খুব বেশি জরুরি ছিল?এই রাত কি বারবার আসবে?বিয়ের প্রথম রাত আর আজকেই কাবাবে হাড্ডি হতে গেলো।ক্লান্ত শরীরটা টেনে নিজের ঘরের দিকে গেলো ঈশান।দরজা খুলে রুমের লাইট জ্বালাতে স্তব্ধ বাক্যহারা সে।পুরো রুমটা সাদা গোলাপ আর লাল গোলাপের সমাহার।বিছানা দেয়াল মেঝে কোন কিছুই বাদ যায়নি।এ যেন কক্ষ নয় পুষ্পোদ্যান!ঈশান বুকের কোণে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলো।এলোমেলো পা ছাড়িয়ে বসলো বিছানায়।লাল সাদা পাপড়ির ভিড়ে বিছানার চাদর চোখে পড়ছে না।মৃদ্যু আলোতে কয়েকটি প্রদীপ জ্বলছে।পুরো রুমটাতে নজর ফেরানো দায় কিন্তু এখন এসব মোটেও ভালো লাগছে না ঈশানের।লাগবে কি করে?ঘর আছে, বর আছে, ফুল আছে তবে ফুলের মতো কোমল বউটা নাই।বুক চিড়ে হতাশার শ্বাস বেরিয়ে এলো তার।দেয়াল ঘড়িতে জানান দিচ্ছে রাত দুইটা বাজতে চলেছে।বিষণ্ণ মন নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো ঈশান রাসেল কি তবে এইজন্য সরি বলেছে?হ্যাঁ এইজন্যই সরি বলেছে।ঈশানের ভাবনায় ছিল রাসেল এমন কিছু করবে কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি করবে ভাবেনি।নিজের রুম ছেড়ে রাসেলের রুমের দিকে পা বাড়ালো সে।রাসেলের রুমের দরজা খোলা ছেলেটা ওয়াশরুমে আছে নিশ্চয়ই গোসল করছে।পুনরায় নিজের রুমে ফিরলো ঈশান।অবশেষে বিয়েটা হলো আজ তার মনের কোনে শান্তি থাকার কথা কিন্তু তার মনে শান্তি নেই।ঈশান সবটা মেনে নিয়েছিল কিন্তু ঝামেলা লাগালো এই রাসেল।কে বলেছে তাকে রুম সাজাতে?এখন তো তার তর সইছে না।হাতের ঘড়িটা খুলে বিছানার কোনে রাখলো ঈশান দ্রুত শুয়ে পড়লো বিছানার এক পাশে।ফুল গুলো যেভাবে আছে সেভাবে পড়ে থাকুক।চোখ বন্ধ করে কিয়ৎক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা চালালো কিন্তু সে ব্যর্থ।ডানে বামে তাকিয়ে অনুভব করছে ফুলগুলো তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।তাদের দাঁত কেলানো হাসিতে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো ঈশানের।ফুলগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার সুরে বলছে,
“বউ ছাড়া তুই এখানে কেন ঘুমাস?
হতচ্ছাড়া বের হ এখান থেকে।এই রুমে থাকার তোর কোন অধিকার নেই।”
ঈশান উঠে দাঁড়ালো বেশ কিছুক্ষণ পাইচারি করলো কক্ষ জুড়ে।সময় অনেকটা পেরিয়ে গেল দেয়াল ঘড়িতে জানান দিচ্ছে দুইটা চল্লিশ বাজতে চলেছে।ঈশান সবার কক্ষের আশেপাশে ঘুরে এলো কেউ জেগে নেই সবাই ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে একমাত্র মাহমুদার রুমের দরজা খোলা।তিনি আগেও দরজা বন্ধ করে ঘুমাননি।ঈশান শব্দহীন পায়ে প্রবেশ করলো মাহমুদার কক্ষে টি-টেবিলে তার ওষুধেরর খোসা গুলো পড়ে আছে।প্রতিদিন রাতে মাহমুদার ওষুধের সাথে একটা করে ঘুমের ওষুধ থাকে।আজকেও তার ব্যতিক্রম নয় মাহমুদা নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে মগ্ন।ঈশান দুই একবার হাত নেড়ে ডাকলেন তাকে কিন্তু তার কোন সাড়া শব্দ নেই।মাহমুদার নাকের গোঙানির শব্দে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে ঈশান, মন বলছে এই বুঝি ধরা পড়বে সে।আর আজ যদি ধরা পড়ে এতদিন জমানো মানসম্মান ইগো সবটা ধূলোয় মিশে যাবে।সবাই সারাজীবন এই একটা বিষয়ের ফায়দা তুলবে।
পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় বুঝতে পেরে এবার ঈশার দিকে ঝুকলো সে।মেয়েটা এখনো বিয়ের সাজে।কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তার হুশ নেই।দোপাট্ট পড়ে আছে বিছানার এক কোনে এলোমেলো শাড়িটা ঠিক করে ঝটপট হাতে ঈশাকে পাঁজা কোলে তুললো ঈশান।ঘুমের ঘোরে ঈশা ভেবেছি তার হিপনিক জার্ক হচ্ছে।তাই ঘুমের ঘোরে চোখ মেলে তাকানোর আর ইচ্ছে জাগলো না।
ঈশাকে নিয়ে ঈশান নিজের কক্ষে ফিরলো।ঈশাকে বিছানায় শোয়াতে সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেললো সে।তার চাহনি স্বাভাবিক ছিল না আচমকা ঘুম ভাঙ্গলে যেমন চোখ বড়বড় তাকানো হয় ঠিক তেমনটা ঈশানের দিকে তাকিয়ে রইলো ঈশা।সম্মুখে ঈশানকে দেখতে পাবে ভাবেনি সে মুখ ফুটে কিছু বলার আগে তার মুখ চেপে ধরে ঈশান।
” আল্লার ওয়াস্তে কথা বলো না।প্লিজ চুপ করো আমি তোমায় সবটা বলবো।”
জড় পুতুলের ন্যায় চুপচাপ হয়ে রইলো ঈশা।ঈশান দ্রুত দরজা রুদ্ধ করে বসলো মেয়েটার পাশে।ঈশার চাহনি এখনো আতঙ্কে ঘেরা।
” প্লিজ স্বাভাবিক হও।”
” আমি এখানে!”
” আমি এনেছি।”
ঈশা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে রইলো।ঈশান তার পাশ থেকে একটুও নড়লো না সরলো না তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
” আন্টি কি বলেছে শুনেন নাই?আমাকে এখানে কেন এনেছেন?ইসস কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে!”
” আম্মুর ঘুম এখন ভাঙবে না নিশ্চিত থাকো।বাকিদের আমি ভয় পাই না ওরা জানলেও কি আর হবে?”
” আমি লজ্জায় পড়বো ঈশান।”
” চুপ করবে তুমি?এসব আলোচনা এখন রাখো।”
ঈশান চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে মেয়েটা পড়েছে বেকায়দায়।কি করবে সে?মাহমুদার আদেশে ভীষণ খুশি ছিল কিন্তু ঈশান সব ভেস্তে দিল।কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তার হুশ ছিল না।ঘুমানোর আগে ঈশাকে মাহমুদা বার বার বলেছেন তুমি ফ্রেশ হয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ো আমার ছেলেকে আমি চিনি যে কোন সময় শক্রু পক্ষের মতো এসে আক্রমণ করবে।ঠিক তাই হলো।ঈশার মন চাইছে মাটিতে মাথা আছাড় দিয়ে কাঁদতে।
” এই কি ভাবছো তুমি?”
” হুহ কিছু না।”
” রুমটা পছন্দ হয়েছে?”
সবটা চোখ বুলিয়ে একবার দেখলো ঈশা।এখানে ফুলের অভাব নেই অনন্য সময় হলে খুশিতে লাফিয়ে উঠতো ঈশা কিন্তু এখন ভয়ে আন্তর আত্মা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে।
” এই ফুলের ভিড়ে আমরা দুজন প্রজাপতি।”
” আমি বরং এবার যাই আন্টি….”
” যাওয়ার জন্য এনেছি তোমায়?”
বেশ রাগ নিয়ে বললো ঈশান।ঈশার বাহু টেনে জড়িয়ে আনলো কিছুটা কাছে।
” দেখো এই ফুলগুলো আমায় দেখে হাসছিলো এখন আমাদের রোমান্স দেখে এই ফুলেরা লজ্জা পাবে।এদের লজ্জা পাওয়া উচিত।”
” মানুষ ছেড়ে এবার আপনি ফুলের সাথে ঝগড়া করছেন।”
” মাঝে মাঝে করতে হয়।ফ্রেশ হওনি কেন?মুখে এতক্ষণ মেকাপ রাখা ঠিক নয়।”
ঈশান একে একে ঈশার চুড়ি খুললো গলার হার খুললো।চুলের খোপা খুলতে গিয়ে পড়লো বেকায়দায়।এত এত ক্লিপ তার মাঝে চুল জট ধরে অবস্থা করুন।ফুল গুলো নেতিয়ে পড়েছে।প্রতিটা ফুল খুলে এক পাশে রাখলো ঈশান।ঈশানের হতাশার মুখখানি দেখে ঠোঁট কুচকে হাসলো ঈশা।
” তুমি হাসছো কেন?প্রথম রাতের প্রথম কাজ বউ আনপ্যাক করছি।”
” চুল এলোমেলো করে লাভ নেই রুমা আপু খুলে দিবে আপনি এবার বসুন।”
ঈশান এবার সরে বসলো।ঈশা চলে গেল ফ্রেশ হতে।হাত মুখ ধুয়ে ফিরলো সে ঈশান তার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল তোয়ালে হাতে।ঈশানের আতিশয্য দেখে মনে মনে ভীষণ হাসলো ঈশা।রাগি জেদি ঈশান এখন ঈশার সেবা যত্নে লিপ্ত।
” ঘুমাও তুমি।”
ঈশা প্রত্যুত্ত করলো না।চুপচাপ শুয়ে পড়লো এক কোনে সারা ঘরে ফুলের ঘ্রাণে মাথাটা কেমন ঝিম ধরে গেছে।
৮৯.
রাসেল দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো শব্দহীন পায়ে।তার কক্ষের বাইরে ছিল রেদোয়ান এবং রুমা দুজনের হাস্যজ্বল মুখ দেখে রাসেল বলে,
” বলেছিলাম না ঈশান সত্যি সত্যি ঈশাকে নিয়ে যাবে এবার বিশ্বাস হলো তো?”
” এতক্ষণ যাবৎ ঘুমায়নি কখন আমাদের ধারণা সত্যি হবে।আন্টি যদি জানেন ঈশান সত্যি সত্যি ঈশাকে নিয়ে গেছে তবে তুলকালাম কান্ড ঘটবে।”
রুমার কথায় সহমত জানালো রাসেল।তারা সবাই মিলে ঈশানের কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো।আবার গেল মাহমুদার কক্ষে।মাহমুদার গোঙানির শব্দে তাদের বুঝতে বাকি নেই মাহমুরা টের পায়নি ঈশা যে তার পাশে নেই।রেদোয়ান রুমা আর রাসেলকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলে,
” সকালে উঠে সবাই না জানার ভান করে থাকবে।এমন একটা ভান ধরবে যেন তারা বুঝতে না পারে আমরা সবটা জানি।”
” আমি হাসি আটকাবো কি করে?আমি তো ঈশানের মুখোমুখি হলেই হাসবো।”
রাসেলের কথায় পিঠে চাপড় মা র লো রেদোয়ান।
” খবরদার হাসবে না।হাসলে ঈশান সাহেব লজ্জা পাবেন।তিনি লজ্জায় শহিদ হয়ে যাক তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।কিন্তু ঈশা বেচারির দোষ নেই তাকে জ্বালানো যাবে না কথা ক্লিয়ার?”
” জি ভাই।আমরা কিচ্ছু জানি না।আমরা তো ঘুমে ছিলাম।আসলেও আমরা কিচ্ছু জানি না জানবো কি করে?কেউ যদি রুমের দরজা আটকে রাখে।”
” ফাজিল ছেলে রুমের দরজা খুলে বাসর করবে তোমার জন্য?”
.
” একটুখানি আদর করি?”
” আমি বাচ্চা নাকি যে আদর করবেন?”
ঈশান পড়েছে বিপত্তিতে।ঈশার অনুমতি ছাড়া সে মেয়েটার গালেও একটি চুমু খাবে না।কিন্তু এই মেয়ে সেচ্চায় ঈশানকে জ্বালাতে বার বার কথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
” তুমি বাচ্চাদের মতো কোমল।”
” বাচ্চা তো আর নই।”
” থাক তুমি বাচ্চা নও।তবে বাচ্চা হবার ব্যবস্থা করে দিব।”
” অসভ্য লোক।”
” তোমার কাছে সভ্য হতে চাই না।একটা চুমু খাই?প্লিজ ফুল গুলো না হয় হাসবে।”
” আপনি বড্ড অবাধ্য ঈশান।”
” এই অবাধ্য ছেলের অবাধ্য বাঁধনেই তো বাঁধা পড়েছো তুমি।এবার বেশি কথা নয় রাত পেরিয়ে যাচ্ছে তোমার হিটলার শ্বাশুড়ি একবার ঘুম ভাঙলে আর তোমায় পাশে না পেলে রণক্ষেত্র তৈরি হবে।”
ঈশা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।আবছা আলোতে ঈশার হাসিটায় থামিয়ে দিলো ঈশানের সব চাওয়া পাওয়া।ঈশানের ঘোর চাহনিতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ঈশা ভেবেছিলো ছেলেটা রাগ করেছে।
” ঈশান কি হয়েছে?”
” পরিস্থিতি কোথায় এসে থমকে গেলো।তুমি আমার শত্রু ছিলে ঈশা তোমার ক্ষতি করার পদে পদে চেষ্টা করেছি।আর এখন দেখো তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও মাথায় রক্ত ওঠে আমার।প্লিজ আগের সব ভুলে যাও আমি এসব ভাবতে চাই না।পূর্বের অন্যয়ের জন্য আমি লজ্জিত,ক্ষমা চাই আমি।এই যে তোমার মুখের হাসি এই হাসি শেষ নিশ্বাস অবধি দেখতে চাই।”
” ঈশান এসব মনে করে লাভ নেই।আমরা তো…
ঈশার কথা থেমে গেলো।সম্মুখে থাকা ব্যক্তির ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ অনুভব করতে শিউরে উঠলো।কয়েক সেকেন্ড নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও কিয়ৎক্ষণ বাদে নিজেকে মানিয়ে নিলো।গভীর আলিঙ্গনে হারিয়ে গেল দুজনে।কয়েক মিনিটে ঈশান ছাড়লো ঈশাকে।মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে অন্ধকার কক্ষে ম্রিয়মাণ আলোতে ঈশানের হাসি হয়তো চোখে পড়েনি ঈশার ঈশান আধশোয়া হয়ে বসলো।বিছনার সাইডে থাকা টি-টেবিলে একটি জুয়েলি বক্স সেটি নিয়ে ঈশার হাতে দিলো ঈশান।মেয়েটা তখনো কাঁপছিলো ঈশান কিছুটা জোর খাটিয়ে টেনে নেয় তাকে।
” এই মেয়ে এত ঘামছো কেন?মনে হচ্ছে তোমার গলায় ছুরি ধরেছি।”
” তার থেকেও ভয়াবহ কাজ করেছেন ঈশান।”
ঈশান তার আলিঙ্গনে রুদ্ধ করলো ঈশাকে।কানের লতিতে শব্দ করে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তোমার হৃদজমিনে প্রথম প্রেমের আন্দোলন শুরু করা পুরুষটি তবে আমি!”
” সন্দেহ আছে?”
” না নেই।”
ঈশান চোখে হাসলো।জুয়েলারি বক্সটা এগিয়ে দিলো ঈশাকে এখানে একটি ডায়মন্ডের নেকলেস আছে।
” এটা তোমার জন্য।আজ তো কিছু উপহার দেওয়ার কথা।”
” আপনি আমার জীবনে এসেছেন এর চেয়ে বড় উপহার আর কি হতে পারে?তবে আমার আরেকটি উপহার চাই ঈশান।”
” শুধু একবার হুকুম করুন যা চাই এনে দেবো।”
” আমার বাবা মা’র সন্তুষ্টি চাই ঈশান।আপনার আচরণে ব্যবহারে তারা যেন কখনো মন ক্ষুণ্ণ না হন।”
” তোমার মা আমাকে এমনিতেও পছন্দ করেন না।সেদিনের পর থেকে খেয়াল করেছি বিয়েতেও তার কোন আন্তরিকতা ছিল না।গতকাল আমার মুখে মিষ্টি কীভাবে দিয়েছে জানো?চামচ ঠেসে দিয়েছে।”
” আম্মু এই বিয়েতে রাজি ছিল না।যাই হোক ধীরে ধীরে সবটা মেনে নেবেন।”
” তাই যেন হয়।”
” এই নেকলেস আপনার কাছে রেখে দিন।”
” এই রুমে তোমায় কবে পাব ঈশা?”
” পেতে হবে না।আন্টির সম্মতিতে যেদিন এই কক্ষে পা রাখবো আমার মনে হয় সেদিন থেকে আপনার অত্যাচারে আমি শেষ হয়ে যাব।”
” আজকেই শেষ করে দিতাম কিন্তু…”
ঈশান কান্নার ভান ধরে ঠোঁট উলটে ফেললো।ঈশা ঝটপট উঠে দাঁড়ালো তার আগে ঈশান তাকে জড়িয়ে ধরে টেনে বিছানায় ফেললো।গলায় মুখ ডুবিয়ে নাক ঘষে অজস্র বার ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।সময় পেরিয়ে গেলো ঈশানের ভালোবাসায় মগ্ন হলো ঈশা।কিন্তু একটা সময় ব্যথায় লাফিয়ে উঠলো মেয়েটা।ঈশানকে ছিটকে সরিয়ে উঠে বসে সে।ঘোরে থাকা ঈশান ঈশার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।মেয়েটা গলায় হাত দিয়ে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
” আপনি এটা কি করলেন ঈশান?এখন আমি সবার সামনে যাব কি করে?সবাই সন্দেহ করবে।”
ঈশান ঈশার গলায় হাত ছোঁয়ালো।আফসোস সুরে বলে,
” এখনি লাল হয়ে গেছে।ইসস ভুল করে ফেলেছি।”
ঈশা গলায় হাত দিয়ে রাগে ফুসছিলো ঈশানের চাহনি কাতর।নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিভ কামড়ে বসে আছে ছেলেটা।হন্তদন্ত পায়ে ছুটে গিয়ে নিচে নামলো ঈশান।কিচেন থেকে বরফ নিয়ে ফিরলো ঈশার কাছে।একখন্ড বরফ তুলে ধীরে ধীরে ঈশার গলায় ছুঁয়ে দিলো।ততক্ষণে ঈশা রাগে জিদে কেঁদে ফেলেছে।ঈশানের এত ব্যস্ততা দেখে নাক ফুলিয়ে বলে,
” সাপ হয়ে কামড়ে এখন ওজা হয়ে ঝাড়তে এসেছে।অসভ্য লোক।”
#চলবে__