#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১৪
ক্যান্টিনে আনমনে বসে আছে সীমা!ক্যান্টিনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ইভা আর আয়ুশী ওকে দেখে ওর কাছে গেলো।পিছন থেকে হুট করে বলে উঠলো , “ভাও।”
সীমা কোনো প্রকার রেসপন্স করলো না। ওরা দুজন অবাক হলো। সীমার পাশে দুজন বসলো।
“কি হয়েছে তোর?”(আয়ুশী)
সীমা আয়ুশীকে ঝাপটে ধরে কেঁদে উঠলো।এতে ইভা আর আয়ুশী বেশ ভরকে গেলো,সেই সাথে অবাক!
“শিম!কি হয়েছে?”(আয়ুশী)
“সিমু,কাঁদছিস কেনো?”(ইভা)
সীমা হেচকি তুলে যাচ্ছে।কথা বলছে না কোনো!ওরা আর কি করবে ভেবে পেলো না।বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর সীমা শান্ত হলো।চোখ মুছে হাসি মুখে বললো,”তোর মত আমার লাইফটাও রসাতলে গেলো রে আয়ু!”
আয়ুশীর বুক কেঁপে উঠলো!ওর বাবার কি কিছু হলো নাকি?
“শিম,আঙ্কেলের..”
আর কিছু বলার আগেই সীমা বলে উঠলো,”না,এতটাও রসাতলে যায় নি আবার!”
“তাহলে বলছিস না কেনো?কি হয়েছে?”(ইভা)
ফ্ল্যাশব্যাক…..
“বাবা!”,বলেই বাবার রুমে গেলো সীমা!নিজের রুমে শুয়ে ছিলেন তিনি!বাবার কাছে গিয়ে বসেই বলে উঠলো,”বাবা,কি হয়েছে তোমার?”
“তুই কেনো এলি রে মা!”
“মা বললো,তুমি নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছো!”
“মিথ্যে রে মা!তুই যা এখান থেকে।তোর জীবন বরবাদ করে দিবে ও!যা চলে যা…”
“কিন্তু কেনো?”
তখনই সীমার সৎ মা এলো।কিছু না বলেই সীমাকে টেনে নিয়ে গেল।বাইরে থেকে দরজা তালা মেরে দিলো।ভিতর থেকে সীমার বাবা চিল্লিয়ে বলছে,”এমনটা করো না ওর সাথে… রূপা”
“এসব কি করছেন আপনি?”
রূপা বাঁকা হেসে বললো,”আরে আজ তোর বিয়ে ,রেডি হতে হবে তো?”
“বিয়ে?”
“হুঁ বিয়ে, তোর জন্য ভালো সম্মন্ধো পেয়েছি !”
“তার মানে বাবার কিছু হয় নি?”
“তোর বাবার আবার কি হবে ? চল চল,দেরি হয়ে যাচ্ছে!”
“কিসের বিয়ে?আমি করবো না কোনো বিয়ে!”
“দেখ সীমা ,একদম অবাধ্য হইবি না,এর ফল কিন্তু ভালো হবে না!”
“যা পারো করো,আমি বিয়ে করবো না!”
“বেশ ,এরপর তোর বাবার লগে যা হইবো তার দায় তোর!”
“মানে?”
“রাতুল!”
বলেই নিজের ভাই কে ডাকলো। হাতে মোটা একটা বাঁশ দিলো তার!
“ওরে ধরে রাখ,আমি একটু ওর বাপ রে টাইট করে আসি!”
“মা,এসব কি বলছো?”
“ভালোই ভালোই রাজি হয়ে যা!”
সীমা মলিন গলায় বললো,”তুমি এমন কেন হলে মা?আগে তো এমন ছিলে না!”
“নাটক কম কর,রাজি হয়ে যা!”
“আমি করবো না!”
“তাইলে দেখ তোর বাপের কি করি!”
“মাগো,উনি তো তোমার স্বামী!তুমি উনার গায়ে হাত তুলবে!”
“এহহ,আসছে স্বামী!তুই রাজি হবি নাকি আমি তোর বাপরে কিছু করমু?”
সীমা নুয়ে গেলো।আর কিছু বলল না।রূপা সীমার সম্মতি বুঝতে তার বাকি নেই!লাল বেনারসি পড়ে বসে আছে সীমা!তখন তারেক(রূপার ছেলে)এলো।
“বুবু, তুই পালায় যা”
সীমা নিরুত্তর
“বুবু, আম্মা তোর লেইগা ওই রতন চাচার লগে বিয়া ঠিক করছে।রতন চাচায় আম্মার কাছে অনেক টেকা পাইবো, আম্মায় দিতে পারে নাই, তাই চাচায় তোরে চাইছে। আম্মাও রাজি হয়ে গেছে। তুই পালায় যা। নাইলে রতন চাচা তার প্রথম বউয়ের মতো তোরেও মা’ই’রা লাইবো।”
সীমা নিরবে চোখের পানি ফেললো। তার বলার কিছু নেই। বাবার বিষয়ে ও প্রাণ দিতেও রাজি। ওর জন্যই আজ এই অবস্থা সবার, না ও মায়ের আবদার করতো আর না এসব দেখতে হতো। পান চিবুতে চিবুতে রূপা রুমে আসলো।
“বাহ, মাইয়া ! তোরে তো ভালো লাগতাছে।”(রূপা )
” আম্মা,বুবুরে চাচার লগে বিয়া দিও না।” (তারেক)
“আরে ব’ল’দ ! তোর বুবু রাজরাণী হয়ে থাকবো।”
” আম্মা চাচা তো বুইড়া! আমার বুবুরে মেলা মারবো।”
” এহ ,দরদ! হন তোর বইনের ভাগ্যে এই যে জুটতেছে হেটাই অনেক নাইলে যেই রূপ, কেও নিতো ও না।”
তারেক হাজার বললেও শুনলো না। অবশেষে বিয়ের মুহুর্ত ঘনিয়ে এলো। কিন্তু সেই মুহুর্তে সীমার মামা এলো। সাথে সীমার বাবা হুইলচেয়ারে ।
বাবাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে গেলো সীমা। রূপা সীমার আপন মামার থেকে সবটা গোপন রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু এন্ড টাইমে তারেকনঅনেক কষ্টে মামাকে সব জানিয়েছিল। খবর পাওয়া মাত্রই রওনা হলে মাত্র এখানে পৌছালো সে। তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়ার পর্যায় শেষে সীমার মামা সীমা আর ওর বাবাকে নিয়ে গেলেন । রূপা বাঁধা দিতে গিয়েও দিতে পারলো না।
সব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে রইলো আয়ুশী আর ইভা। সীমা হেসে বললো, “সরি রে… তোর বিপদের সময় ছিলাম না আমি।”
আয়ুশী সীমাকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটা ভীষণ ভালো।
“হোস্টেল আসবি ?” (ইভা)
“মামার কড়া নির্দেশ, এখন আমার সব দায়িত্ব সে নিবে। আমি যেনো আর পাকনামি না করি। টিউশনিও ছেড়ে দেই।”
” তো রসাতলে কীভাবে গেলি ?”
সীমা মলিন হেসে বললো, ” এখন অন্যের বোঝা হলাম। সেই সাথে যেই মেয়েরএকবার বিয়ে ভাঙে তাকে আর কেও নিতে চায় না। ভালো চোখে দেখে না।তার উপর গায়ের রঙ তো আছেই।”
আয়ুশী ওর হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,”আমরা আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব!রং যেমনই হোক।পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে এমন কেউ আছে যে তোর রূপ নয়,তোকে ভালোবাসবে!আর তুই তো কালো নস!তুই শ্যামবতী!সেই সাথে মায়াবিনী! যার হবি তার মায়াবতী!”
সীমা ভেংচি কেটে বললো,”ভাগ ভাগ,আমি ইমপোর্টেড মানুষ!উফফ বাবা কি গরম! কেউ এসি ছাড়ো তো!”(ঢং করে বললো)
তাই দেখে আয়ুশী আর ইভা হাসলো!সাথে সীমাও।
“হ্যালো, লেডিস।”
বলেই গা এলিয়ে ওদের টেবিলে বসলো ফাহিন… আয়ুশী উত্তেজিত হয়ে বললো, “আরে ডাক্তার?”
“ইয়েস মিস রোগী”
“আপনি এখানে?”
” এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম মিস রোগী আর তার বান্ধবীদের দেখে যাই”
“এবার জমিয়ে আড্ডা হয়ে যায় ?” (ইভা)
“তোমাদের ক্লাস নেই?”
“ক্লাস তো আছে,কিন্তু করার মুড নেই!”(সীমা)
“বেশ তাইলে চলো ,এখানে তো আর আড্ডা দেয়া যায় না!”
তিনজন সম্মতি দিয়ে ক্যান্টিন থেকে বের হতেই আয়ানের সামনে পড়লো।এদিকে আয়ান আয়ুশীকে ক্লাসে না দেখে ভাবলো কোথাও মন খারাপ করে বসে আছে।তাই ক্লাস শেষেই খুঁজতে বের হলো। ফাহিনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুই এখানে?”
“একচুয়ালি! এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম!ভাবলাম দেখা করে যাই!”
“ওহ!তোমরা কোথায় যাচ্ছ?”
“কোথাও না স্যার,ক্লাসে!”(ইভা)
“কিসের ক্লাস!আমরা এখন একটু ঘুরতে যাচ্ছি!”(ফাহিন)
“টিচারের সামনে এসব বলছিস?”(আয়ান)
“আরে ভাই!”,বলেই আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।
কানে কানে বললো,”আঙ্কেল আমাকে আয়ুশীর মাইন্ড রিফ্রেশ করার দায়িত্ব দিয়েছে,আর তুই তো জানিস আমি কতটা দায়িত্ববান!তাই কাজ ফেলে চলে এলাম।এখন আর কিছু বলিস না!ওর এমনিও এখন পড়ায় মন বসবে না!সো প্লিজ!”
আয়ান হাত মুঠি করে দাড়িয়ে রইলো।ওরা যেতে নিলেই আয়ান বলে উঠলো,”আমিও যাবো!”
“তোর ক্লাস নেই আর?”
“করার ইচ্ছে নেই!চল..”
বলেই হাঁটতে লাগলো।ওরাও কিছু না বলে হাঁটতে লাগলো।ভার্সিটির কাছে একটু দূরেই রেস্টুরেন্টে গেলো ওরা!
“তো মিস রোগী ,কি খাবেন?”
আয়ুশী হেসে বললো,”যেইটা ডাক্তার পরামর্শ দিবে!”
“বেশ তাহলে সবজি অর্ডার করি?শশা বা গাজর?”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে বললো,”রেস্টুরেন্টে কেউ এসব খায়?”
“আমি ডাক্তার মানুষ! হেলথ এর প্রতি খেয়াল রেখেই সব সাজেস্ট করি!”
“আপনাদের ডাক্তার আর রোগীর তর্ক শেষ হলে খাবার অর্ডার করি?আমাদের নার্সদের খুদা লাগছে!”(সীমা)
চারজন হেসে উঠলো ,শুধু আয়ান বাদে!চোখ মুখ খিচে মোবাইল চালাচ্ছে ও।আসলে চালাচ্ছে না,রাগ ঝাড়ছে!মূলত ফাহিনের এত কেয়ার,খুনসুটি তাও আয়ুশীর সাথে ওর পছন্দ হচ্ছে না। ও জানে না ওর সমস্যা কোথায়!জানেনা কেন এখানে এসেছে।শুধু জানে এখন রাগ ঝাড়তে ফোন দেখবে ও!
#চলবে
#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১৫
“আমাদের এবার যাওয়া উচিত!”, আয়ুশীকে উদ্দেশ্য করে বলল আয়ান!
“কিন্তু আমরা তো কেবল এখানে আসলাম!”(ফাহিন)
“আমার ভালো লাগছে না!তাই চলে যাবো!”
“তো যা,আয়ুশীকে আমি পৌঁছে দিবো!”
“লাগবে না,আমরা তো একই বাড়িতে যাবো!তো যাওয়া যাক আয়ুশী?”
“আপনারা গেলে আমরা আর থেকে কি করবো?”(ইভা)
“চলো যাওয়া যাক!”
সবাই বেরিয়ে এলো।সীমা আর ইভা রিকশায় উঠে গেলো!
“চল!”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুই কই যাস?”
“কেন বাড়িতে!”
“তোর কাজ নাই?”
“না আজ ছুটি!”
“কিসের ছুটি?”
“আরে তুই বুঝবি না চল!”
“আমাদের সাথে কই যাস?”
“আরে ভাই,আমার বাড়ি তো তোর কয়েক বাড়ির আগেই!”
আয়ান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো।
“আচ্ছা মিস রোগী!তোমার শখ কি?”
“আলাদা করে কোনো শখের প্রয়োজন আমার হয় না,আমার যখন যেটা করতে ভালো লাগে সেটাই আমার শখ হয়ে যায়!”
“ওহো,তো মিস রোগী!আচ্ছা,এবার বলো বিয়ে কবে করবে?”
আয়ুশী মলিন হেসে বললো,”এই অনাথ মেয়েকে কেউ সঙ্গী করবে?”
“এভাবে বলছো কেনো?”
“যা সত্য!”
“আরে,এসব ভাবতে নাই!আর কেউ না করলেও আমি আছি তো!”
“কিসের জন্য?”
“তোমাকে বিয়ে করার জন্য!”
“ফাহিন ভাইয়া!”
ফাহিন বুঝলো আয়ুশী রেগে গেছে।
“তোমার জন্য একটা গান বানিয়েছি!শুনবে?”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে তাকালো!
“আয়ুশী চলেছে একা পথে,সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?হার মেনেছে দিনের আলো!রাগলে তোমায় লাগে আরও ভালো!”
আয়ুশী হেসে দিলো। ফাহিনও ওর হাসি দেখে হাসলো।মেয়েটাকে হাসলে ভীষণ সুন্দর লাগে।মন ম’রা একদম ভালো লাগে না ওকে!ওদিকে আয়ান রাগের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে।
“নেও আমার বাড়ি এসে গেছে!সাবধানে যাইস তোরা!”
“তুই না বললেও যাবো!”(আয়ান)
বলেই হাঁটতে লাগলো।আয়ুশী ফাহিনকে টাটা দিয়ে আয়ানের পিছু ছুটলো। আয়ান হাঁটছে নাকি দৌড়াচ্ছে ঠিক উপলব্ধি করতে পারছে না আয়ুশী।
“স্যার দাড়ান!”
আয়ান দাড়ালো না ,বরং হাঁটার গতি বাড়ালো!
“ও স্যার!”
আয়ান দাড়ালো।
“কি হয়েছে?”
“আপনি এমন দৌড়াচ্ছেন কেনো?”
আয়ান বুকে হাত গুঁজে বললো,”আমি কখন দৌড়ালাম?”
“যেভাবে হাঁটছেন,তাতে তো তাই মনে হচ্ছে!”
“কেনো এতক্ষণ যে ফাহিনের সাথে দৌড়ে দৌড়ে হাঁটছিলে!তখন?”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে বললো,”দৌড়ালাম কখন?”
“আমি দৌড়ালাম কখন?”
আয়ুশী অবুঝের মতো দাড়িয়ে রইলো। আয়ান হেঁটে চলে গেলো। আয়ান যাচ্ছে বুঝতে পেরে ছুটলো ও।
“আরে ও স্যার!”
হুট করেই ইটে পা বেঁজে পড়ে গেলো ও।মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।আয়ান পিছে ফিরতেই দেখলো আয়ুশী রাস্তায় পড়ে আছে।
আয়ান ওর কাছে গেলো।কোমরে হাত রেখে বলল,”আমায় একটা কথা বলবে?”
“কি কথা?”
“সারাদিন উ’ষ্টা খাওয়া ছাড়া তোমার কোনো কাজ নেই?”
“আমি কি ইচ্ছে করে খাই নাকি?”
“অবশ্যই!কখনো কলার ছিলকায়, তো কখনো পাথরে!”
আয়ুশী ভেংচি কাটলো!উঠার চেষ্টা করলেও উঠতে পারলো না। আয়ান হাত বাড়িয়ে দিল।আয়ুশী হাত ধরে উঠে দাড়ালো।পা একটু ছিলে গেছে!
“যেতে পারবে?”
“পারবো!”
বলেই হাঁটতে লাগলো,একটু অসুবিধা হলেও কিছু বললো না! আয়ান বুঝতে পেরে ওর হাত নিয়ে নিজের বাহুতে পেঁচিয়ে ধরলো।
“ভর দিয়ে হাঁটো!”
আয়ুশী এক পলক তাকালো ওর দিকে। পর পরই চোখ ফিরিয়ে নিলো।মায়ায় ডুবলে চলবে না!এসব দায়িত্ব।অনাথ মেয়ের প্রতি দায়িত্ব,মানবিকতা!ভাবতেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ও।আয়ানের নজর তা এড়ালো না।।
________________
বারান্দায় রেলং ঘেঁষে বসে আছে ইহরা!ফোন স্ক্রলিং করছে ও।তখনই আয়ান আয়ুশীকে নিয়ে আসলো!
“ইহরা!”
ডাক শুনে ইহরা রুমে আসলো।
“ওকে এভাবে ধরে আনছো কেন আয়ান?”
“পায়ে চোট পেয়েছে!একটু মেডিসিন লাগিয়ে দিও!”
বলেই বেরিয়ে গেলো আয়ান!আয়ুশী যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। ইহরা ওর সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো,”আমার হবু বরের দিকে নজর দেয়া কিন্তু আমি মোটেই সহ্য করবো না!”
কথাটা মজার ছলে বললেও আয়ুশীর মনে ভীষণ দাগ কাটলো।আসলেই তো,ওর হবু বর ও কেনো নজর দিচ্ছে?
_________________________________
“হ্যালো বাবা!”
“হুমম বল !”
“ওর কি খবর?”
“এখনও ঠিকঠাক,তোর কথা মতোই সবটা করেছি!”
“বেশ,আর কয়েকদিন!আমি আসছি..”
“জলদি আয়!”
বলেই কথোপকথন শেষ হলো বাবা ছেলের।ছেলেটি কল কেঁটে নিজেকে নিজেই বললো,”আর কয়েকদিন ,আমি আসছি!একদম কষ্ট পেতে দিবো না তোমায় ,একটুও না!”
__________________________________
“এসব কি জুনাইদ?”
“কোন সব?”
“ফোন দিলে ফোন তুলছো না,ইভেন কাজ থেকে আসার পর সময় ও দিচ্ছো না!”
“আমি বিজি ইভা!”
তখনই জুনাইদ এর ফোনের স্ক্রিনে লাভলী নামটা জ্বল জ্বল করে উঠলো! যা ইভার চোখ এড়ালো না!টেবিলের উপর থেকে নিজেই ওর ফোন রিসিভ করলো। জুনাইদ বাধা দেয়ার আগেই ওপাশ থেকে মেয়েটি বলে উঠলো ,”জুনু বেবি,কোথায় তুমি?”
চোখ পানিতে ভরে এলো।
“ইভা,লেট মি এক্সপ্লেইন ইউ!”
হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল ইভা!
“আমাকে আগে বললেই পারতেন!আমি এতটাও স্বার্থপর নই যে সব জানলে আপনাকে জোর করে রাখবো!”
বলেই ফোন রেখে চলে এলো।জুনাইদ অনেকবার ডাকলেও শুনেনি ও।শহরে আসার পর থেকেই জুনাইদ ওকে সময় দেয় নি।আজ সময় নিয়ে দেখা করলো,আর সব সত্য উৎঘটন হলো।চোখের পানি মুছে নিলো ও।এই কয়দিনে মানুষটাকে যথেষ্ট ভালোবেসেছিলো ও।কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে আর কি করার!রিকশায় উঠে চলে গেলো।জুনাইদ আসতে আসতে রিকশা ওর নাগালের বাইরে চলে গেলো।রাগে দুঃখে নিজে ফোনটাকে ওখানেই আছার মা’র’লো ও!
__________________________________
“সীমা !”
“জি মামা?”
“পড়ছো তুমি?”
“জি,কিছু বলবে?”
“শুক্রবারে তুমি ফ্রী আছো?”
“জি হ্যাঁ!”
“ওই আসলে নাহিম আসবে!ওকে আনতে এয়ারপোর্ট যেতাম আরকি!আসলে একা একা গিয়ে কি করবো!”
“আচ্ছা যাবো!”
মাতব্বর উরফে সীমার মামা যেতে নিলেই সীমা বলে উঠে,”মামা!”
“বল মা!”
“আমার খরচ টা আমি বহন করি?”
মাতব্বর সীমার মাথায় হাত রেখে বলল,”তুই আমার বোনের রেখে যাওয়া আমানত!তোর খরচ তেমন কিছুই না!মামার ভালোবাসাকে কোনো দায়িত্বের চোখে দেখিস না!”
সীমা হাসলো!আর কিছু বলল না।মামা চলে গেলো।সীমা আয়ুশীকে ফোন দিলো।আয়ুশী তখন আনমনে চাঁদ দেখছিল!
“আয়ু!”
“হুঁ,বল!”
“তুই বলেছিলি তোর টিউশনি লাগবে!”
“হুঁ!”
“আমার টিউশনি গুলো করবি?”
“তাহলে তুই কি করবি?”
“মামা টিউশনি করতেও দিবে না!তাই আরকি!”
“আচ্ছা,অ্যাড্রেস আর নাম্বার দিস!”
“ওকে!”
ফোন রেখে চোখ বুঁজে রইলো। এ বাড়িতে থাকলেও ও এত দায়হীন চলতে পারে না।নিজের খরচ কিছুটা হলেও ম্যানেজ করা দরকার!যদিও এখনও নাহার আর বেলালকে ম্যানেজ করেনি!তাও বুঝাতে হবে।ওরা দয়া ভেবে না দিলেও নিজের আত্মসম্মান বলতে তো কিছু আছে।জানেনা আগামীতে কি হবে!ভালো লাগছে না বিধায় ইহরার রুমে গেলো। ইহরাকে রুমে না পেয়ে বারান্দায় গেলো।
“ইহরাপু?”
আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ও।আয়ুশী গিয়ে পাশে দাড়ালো!
“আপু?”
“জানো আয়ুশী?যাদের কেউ নেই ,তাদের থেকে অসহায় আর কেউ হয় না!হাজার হাজার মানুষ ভালোবাসলেও পৃথিবীতে বাবা মায়ের অভাব কখনোই পূরণ হয় না!”
আয়ুশী হাসলো।আসলেও চিরন্তন সত্য।
“হটাৎ এসব বলছো যে?”
“কয়েকদিন পর আয়ানের সাথে আমার এনগেজমেন্ট।মামনি বাবাই এর ম্যারেজ সিরিমনি!ওই দিনই পাবলিকাল্লি এনাউন্স হবে আমার আর আয়ানের বিয়ে!”
আয়ুশী বুক মোচড় দিয়ে উঠলো।কি বলবে ভেবে পেলো না।তাও নিজেকে সামলে বললো,”বাহ ভালো খবর তো!”
“উহু!”
“তুমি খুশি না আপু?”
এতক্ষণে ইহরার হুশ এলো!
“আরে না,খুশি হব না কেনো?আসলে আব্বু আম্মু কে মিস করছিলাম আরকি!”,বলেই রুমে গেলো!
আয়ুশী আর ঘাটলো না।আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,”তুই ও আমার মত একা তাই না রে চাঁদ?”
#চলবে