অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-৩২+৩৩

0
575

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৩২
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

আকাশ আজ মেঘলা।অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে্।
সন্ধ্যা নেমে আসছে।বৃষ্টির ঝম-ঝম শব্দ আর শীতল বাতাস মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ।তবে বৃষ্টিতে ভেজাটা একটুও পছন্দের নয় শরৎয়ের।অপছন্দের এই বিষয়টাই বারে বার তার সামনে চলে আসে।যেটা সত্যিই খুব বিরক্তিকর।ছাঁদের দিকে হেঁটে যাচ্ছে শরৎ হাতে একটা ছাতা।বৃষ্টির কারণেই ছাতা নেয়া,যেনো এই বৃষ্টির পানিতে শরীর ভিজে না যায়।ছাঁদের গেইটটা ভিড়িয়ে ছাঁদে প্রবেশ করলো শরৎ।তখনই দেখলো একটা মেয়ে ছাঁদের ঠিক মাঝ বরাবর দাড়িয়ে মহা বিরক্তিকর একটা কাজ করছে, বৃষ্টিতে ভিজচ্ছে।ওর কাছে কি করে এই বৃষ্টি-বিলাশটা প্রিয় হয় তা বুঝে উঠতে পারে না শরৎ।মেয়েটার সব-সময় তার বিপরীত জিনিসগুলোই বেশি ভালো লাগে,এই এক বৃষ্টি আরেক তার বোন অনু।অনুকে এখন সত্যিই বিরক্তিকর লাগে শরৎ এর,কারণ হয়তোবা শ্রীজা নিজেই।অযথা সময় ব্যায় না করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো শরৎ।শ্রীজার সামনে দাড়িয়ে ছাতাটা ওর মাথার ওপর ধরলো।পরেই ওর মনে পড়লো এই মেয়ে তো আগেই ভিজে গিয়েছে ওর মাথার ওপর এবার ছাতা ধরলে সে নিজেই ভিজে যাবে।এই ভেবে শরৎ ছাতাটা সরিয়ে নিলো।

_____

সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে ভেজার মতো দুঃসাহসীকতা দেখানোর পরও আজ যখন শরৎ ভাই কিছু বললেন না,তখন সুযোগটা লুফে নিলাম আমি।বাড়িতে থাকলে মা এখন পুরো বাড়ি মাথায় তুলতেন,দু একটা দিয়েও দিতেন বোধয়।আমার এখনো মনে আছে তখন আমি সবে কলেজে পড়ি,দি একটা ছোট খাটো ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে সেদিকেই ছিলো আমার কলেজ,ফেরার সময় পথে দি আর আমি এক সঙ্গে ফিরছিলাম,হুট করে আকাশ-বাতাসের রঙ-চঙ বদলে দিয়ে ঝড় এলো।তুমুল বাতসে উড়ে যাচ্ছিলো যেনো সব,তবুও মনে ভয় ছিলো না আমাদের দুজনের, কতোটা বৃষ্টি পাগল হলে ঝড়ের মাঝেও বেশ আনন্দে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরা যায়,তাও আবার আধ-ঘন্টা লেট করে,সে আধ-ঘন্টা সময়টাও বৃষ্টিতে ভেজায় কাটিয়ে দিয়েছিলাম আমরা।রাতের বেলায় দির আর আমার গা-কাঁপিয়ে জ্বর এলো,যে সে জ্বর নয়,দির জ্বরটা কোনমতে ৩-৪ এক দিনের মাঝে সেরে গেলেও,আমার জ্বর-মহাশয় ছিলেন নাছোড়বান্দা। প্রায় এক সপ্তাহে্রও বেশি সময় আমার ভেতর স্থায়ী ছিলেন উনি,তবে স্থির ছিলেন না ভেতরকার সব লন্ড-ভন্ড করে দিয়ে গিয়েছিলেন।চোখ-মুখ ডেবে গিয়েছিলো একেবারে।মা-বাবার পরম আদর-যন্ত আর সচেতনতায় খুব কম সময়ের মাঝেই আবার আগের শ্রীজায় ফিরে গিয়েছিলাম।সেই সময়ের পর থেকে খুব কড়া করে মানা ছিলো আমার-আর দির বৃষ্টিতে ভেজা খুব কড়া ভাবেই নিষেধ ছিলো।তবুও সেই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে কতো লুকিয়ে-চুড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি।ঠিকই জ্বর-মহাশয় এসে ধরা খাইয়ে দিয়েছেন,আর শাস্তি স্বরুপ কপালে জুটেছে নিরামিষ তরকারি মানে সবজি, যা আমার একদম অপছন্দ,এসব খায় কি করে মানুষ? তাও আবার গুণে গুণে তিন-দিন। বাবার দেয়া শাস্তি ছিলো এটা,শুধু-মাত্র আমার জন্য বরাদ্দকৃত শাস্তি।দিনগুলো কতো সুন্দর ছিলো কতো ঝলমলে রঙিন ছিলো।ছোট থেকে এই যে বড় হচ্ছি সব কেমন আনন্দহীন হয়ে যাচ্ছে,একদম বেরঙ।

এসব ভাবছি আর বৃষ্টিতে ভিজচ্ছি আপন মনে।একটা সময় ছাঁদের দরজার খোলার আওয়াজ পেয়ে সেদিক ফিরে দেখলাম,খুব বেশি ভুল না হলে মানুষটা শরৎ ভাই।হাতে একটা ছাতা হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন অনেক্ষণ যাবৎ। হাঁসি পেলো আমার,লোকটার সামনে হাসঁতে চাইলাম না,তাই অন্য দিকে ফিরে শব্দহীন ভাবে ফিক করে হেঁসে উঠলাম।বুঝতে পারলেন না শরৎ ভাই,এতো দূর থেকে কি হাঁসির শব্দ শোনা যায় নাকি?
ওনাকে দেখে হাঁসি পাবার কারণটা হচ্ছে ওনার চাহনী,এভাবে হাতে ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে থাকা,দেখতে কেমন মদন কুমার মদন কুমার লাগছে।বেচারা বৃষ্টিতে ভিজতে না চেয়েও বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে।কিছুক্ষন কাঁটার পর সামনে এগিয়ে এলেন শরৎ ভাই,একবার আমার মাথার ওপর ছাতা ধরছেন একবার সরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে নিচ্ছেন।ওনার এসব কান্ড দেখে আবারও হাসঁলাম এবার শব্দ করে হেঁসে উঠলাম।
বললাম…

“মদন কুমারের মতো লাগছে আপনাকে।”

ভ্রু কুচঁকে তাকালেন শরৎ ভাই।স্বাভাবিক ভাবে জিঙ্গেস করলেন…

“কিসব বলছিস?মাথা খারাপ হয়েছে তোর?”

আমার কেনো যেনো ঘুম পাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজে ঘুম!কথাটা অদ্ভুত তবে আমার কাছে কেনো যেনো অদ্ভুত লাগছে না।আমি শরৎ ভাইয়ের হাত থেকে ছাতাটা ফেলে দিলাম।কপট রাগ দেখিয়ে বললাম…

“হাতে ছাতা নিয়ে রেখেছেন কেনো?এতো কাছে।”

আঙ্গুল দিয়ে ছাদের এক কোণায় পড়ে থাকা ছাতার দিকে দেখিয়ে, ধমকের স্বরে শরৎ ভাইকে বললাম…

“ও কি আপনার বউ?ও আপনার পাশে কেনো থাকবে?আমি কি মরে গেছি?এখন আমার সতিন লাগবে না,লজ্জা করে না ঘরে আমার মতো একটা বাধ্য বড় রেখে আরেক জড় পদার্থকে বউয়ের আসনে বসিয়ে দিচ্ছেন।ছিহ্ আমি ভাবতে পারিনি,হবু ব্যারিস্টার মশাই এই কাজ করলে,আর লোকে কি করবে?এই আপনার আইন?ছিহ্”

শরৎ ভাই কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।বোধয় বিরক্ত হচ্ছেন,তাতে আমার কি?আমার কিছু না একদম না।ঘরে বউকে রেখে এসব বাঁদরামো হচ্ছে।এতোক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেও উনি চুপ রইলেন না আর,আমার হাত ধরলেন শক্ত করে।আরেক হাত দিয়ে ছাতাটাকে নিয়ে এলেন।বিরক্তি ভরা চাহনী নিয়ে বললেন…

“তুই যাবি?”

আমি হাসঁলাম শরৎ ভাইয়ের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম…

“জানেন শরৎ ভাই।আমার একটা গান মনে পড়ছে,এই সময়ের সাথে একদমমম মানান সই,ওইযে শাবনূর আর সালমান শাহে্র গান। ”

আমি ওড়না দিয়ে শাড়ি পড়ার মতো করে পড়ে নিয়ে বেসুর-সুর মিলিয়ে গাইতে লাগলাম…

বৃষ্টিরে বৃষ্টি আয়না জোরে
ফিরে যাবোনা আজকে ঘরে
বৃষ্টিরে বৃষ্টি থেমে যারে
ভিজা শাড়িতে লজ্জা করে !
বুকের ভেতরে পরে টিপ টিপ
টিপ-টিপ-টিপ বৃষ্টি পরে টিপ টিপ !

লজ্জাবতী পাতার মতো
ছুঁইলে কেন গুটিয়ে যাও
তুমি কেনো পাগল এত
যখন তখন জ্বালাও আমায়
এখন যেতে দাও দাওনা বিদায়
এই মন তোমাকে ছাড়তে না চায় !
বুকের ভেতরে পরে টিপ টিপ
টিপ-টিপ-টিপ বৃষ্টি পরে টিপ টিপ !

কাছে এসো আরো কাছে
তুমি আরো আপন হয়ে
সময় হলে আসবো কাছে
এখন তুমি দূরেতে রও
গাছে ফুটেছে বাসর ফুল
এমন নিলাজ হয়ে করো না ভুল !
বুকের ভেতরে পরে টিপ টিপ
টিপ-টিপ-টিপ বৃষ্টি পরে টিপ টিপ।।

(🧟‍♀️কেমন হয়েচে পিও বোনেরা?🧟‍♀️)

শরৎ ভাই আমার দিকে তাকালেন,আমার কাছে এলেন কপালে হাত রাখলেন।
ভেবেছিলাম এবার বোধয় নিরামিষ বেটা আমিষ হবে তবে আমার ধারণা ভুল।লোকটা হাত নামিয়ে দূরে স্বরে গেলেন।
বিরবির করে বললেন…

“যানতাম এটাই হবে,জ্বরের ঘোরে আবোল-তাবোল বকছে।”

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম…

“বিরবির করে বলে কি লাভ হলো?সব শুনেই ফেললাম,হিহিহি।”

শরৎ আরকিছু না ভেবেই শ্রীজাকে পাজ-কোলা করে নিয়ে হাঁটতে লাগলো।
ও জানে একে ভালো করে বললে এ জনমে শুনবে না।শ্রীজাও তার শরৎভাইকে মহানন্দে গান শোনাতে লাগলো…

“বৃষ্টিরে বৃষ্টি আয়না জোরে ফিরে যাবোনা,
আজকে ঘরে।
কিন্তু শরৎ ভাই তো যাবেই যাথে আমাকেও নিয়ে যাবেরে।
জোরে এসে আর লাভ কি হলোরে?”
শরৎভাই হাঁটা বন্ধ করে দেনারেএএ,
ভেজা থ্রি-পিসে আমার লজ্জা করে নারে!”

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৩৩
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“কাপড়-চোপড় চেন্জ করে আয়,যা।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে বেশ রাগ লাগলো আমার বললাম…

“বলেছিনা আমার ভেজা থ্রি-পিসে লজ্জা করে না,তাহলে চেন্জ করবো কেনো?”

“এরপর আবার বৃষ্টিতে ভিজলে তোর ঠেং ভেঙ্গে বাড়িতে বসিয়ে রাখবো বেয়াদব,জ্বর বাধিঁয়ে বসেছে এখন সর্দিকে নিমন্ত্রণ করা বাকি।যা দ্রুত ওয়াশ রুমে ঢোক আর চেন্জ করে আয়।”

শরৎ ভাইয়ের ধমক শুনে ভয় লাগলো কিছুটা।তাই কথা না বাড়িয়ে কাপড় চেন্জ করে এসে ধপ করে বিছানায় চিৎ-পটাং হয়ে শুয়ে পড়লাম এতো ক্লান্ত লাগছে।

শ্রীজা ফিরতেই ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো শরৎ এর।এ কিসব পড়েছে মেয়েটা,পাগল হলো নাকি?
শরৎ বললো…

“আমার কাপড় পরেছিস কেনো?তোর কি জামা-কাপড় নেই?না তুই ভিখারী?”

“কেনো আপনি দেখননি স্টার জলসা জি বাংলা সিরিয়ালগুলোতে যে নাইকা নায়কের জামা কাপড় পড়ে।আর নায়ক বেসামাল হয়ে অংকুশের মতো গান ধরে…

“বেসামাল হয়েছি আজ বেসামাল…
“তুই তাকালিইইই এমন করেএএএএ…”

“হাউ রোমান্টিক শরৎ ভাই,এরপর হিরোইনের হাত ধরে নাঁচতে থাকে।আমার আরেকটা গানের কথা মনে আছে সেইই রোমান্টিকক…

“বাতাসে গুনগুন এসেছে ফাগুন,
বুঝিনি তোমার শুধু ছোঁয়ায়
এত যে আগুন.
এলোমোলো হয়ে যায় মন
কেন আজ বুঝি না,
দাবানল যেন ছড়ানো পার
করে সীমানা.
স্বপনের মত হানা দেয় এ
মনের কামনা,
নিজেকেই দেখে লাগে
আজ অচেনা অচেনা….

মরণ দেখি আমার ওগো তোমার
ঐ চোখে,
পাগল দাও না করে এই রাতে
আমাকে.
“ভালবাসা আজ বন্য কোনো
কথা শোনেনা,
নিশ্বাসে যেন ছাতকের বুক
ভাঙ্গা বাসনা.
স্বপনের মত হানা দেয় এ
মনের কামনা,
নিজেকেই দেখে লাগে আজ
অচেনা অচেনা….

তৃষ্ণা এত তৃষ্ণা প্রেমে হয়নি
যে আগে,,
উতল করো আমায় আজ
বন্য সোহাগে..
“এ কোথায় ভেসে চলেছি নিজে
আজ জানিনা,,
চাওয়া পাওয়া যেন কিছুতেই আজ
আর মেটেনা..
স্বপনের মত হানা দেয় এ
মনের কামনা,,
নিজেকেই দেখে লাগে আজ
অচেনা অচেনা….

“তোকে কি এখন একটা গিটার এনে দেবো?জ্বর তো আনিসনি সাথে করে বেসুর গলার গানও নিয়ে এসেছিস।”

“এভাবে বলতে পারলেন?”

শরৎ চুপ করে রইলো বেশ বিরক্ত লাগছে ওর,মেয়েটা গান গেয়ে গেয়ে মাথা খেয়ে দিচ্ছে।কোন জন্মে গাইকা ছিলো কে জানে?
শরৎ শ্রীজার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।নিম্নস্বরে বললো…

“আমি তোর জন্য সুপ বানিয়ে আনতে যাচ্ছি এসে যেনো দেখি ড্রেস চেন্জ করা শেষ।”

বলেই চলে গেলো শরৎ।বিছানার ওপর চুপ-চাপ শুয়ে আছে শ্রীজা খুব ঠান্ডা লাগছে ওর এই ঠান্ডার মাঝে কেনো যে শরৎ ভাই ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে গেলো তাই বুঝতে পারছে না ও,এখন তো আরো বেশি শীত করছে ওর।গায়ে একটা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইলো ও।কেটে গেলো আধ ঘন্টারও বেশি সময়।শরৎ ফিরে এলো হাতে একটা ট্রে ছোট্ট একটা প্রিজে কিছু আপেল আর পেয়ারা কেঁটে রাখা,আরেকটা সুপের কাঁপে গরম গরম থাই সুপ।খাটের পাশের টেবিলটাতে ট্রেটা রেখে ঔষধের বক্স বের করলো শরৎ,ঔষধ দেখা-দেখি করতে করতে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো…

“সুপটা ঠান্ডা হয়ে,যাচ্ছে খেয়ে নে্।”

শ্রীজা নাক মুখ কুঁচকে ফেললো।চোখ জোড়া বন্ধ করে নাক টিপে ধরে বললো…

“উমম আমি ওটা খাবো না,দেখতে কেমন বাজে।আর আমি জানি ওটা তিতো হবে।আমার খেতে মনচাইছে না।”

শরৎ গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো…

“জ্বর হলে সব খাবারই দেখতে বাজে লাগে,খেতে স্বাদহীন লাগে।তাও খেতে হবে তা না হলে অসুস্থতা বাড়বে।”

শ্রীজা কিছু বললো না।

শরৎ পানির গ্লাসটা একদিকে রেখে,বাটিটা হাতে নিয়ে চামচে কিছুটা সুপ নিয়ে নিলো।ওটা নেড়ে চেড়ে কিছুটা ঠান্ডা করে শ্রীজার মুখের দিকে বাড়িয়ে দিলো।শ্রীজা কথা বাড়ালো না খেতে মন না চাইলেও জোড় করে খেলো তবে পুরোটা না অর্ধেক বাটি সুপ খেলো।শরৎ কিছুটা জোড় করেই দু টুকরো দু টুকরো করে চার টুকরো আপেল আর পেয়ারা খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো শ্রীজাকে।ঠান্ডার ঔষধের ত্যাজটা ইকটু বেশি থাকায় ঘুমিয়ে পড়লো শ্রীজা।বেশ রাত হয়েছে এগারোটা ছুঁই ছুঁই,তবুও বৃষ্টি থামার নাম নেই হালকা বাজ টাজও পড়ছে তবে তা এদিক থেকে অনেকটা দূরে।তাই তেমন শব্দ শোনা যাচ্ছে না।বেলকণি বরাবর একটা কালো রঙয়ের চেয়ারের ওপড় বসে আছে শরৎ হাতে তার ফোনটা,চেনা একটা নম্বরে ফোন করলো সে স্কিনে লিখা ‘ফুপি’।

এশার নামাজ শেষে খাওয়া দাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বৃষ্টি পড়ছে তাই খাবারগুলো ইকটু গরম করে নিয়ে টেবিলে গোছাতে লাগলেন শ্রীজার মা।শ্রীজার বাবা খাটে বসে বসে দুই মেয়ের ছবি ফোনে জুম করে করে দেখছেন আজ কালকার স্মার্ট ফোন চালানোতে খুব বেশি পাঁকা নন তিনি তবে যতোটুকু যানেন তাও কম কিসের?খাটের এক কোণায় বড্ড অবহেলায় পড়ে আছে তার স্ত্রীর ফোনটা,ফোনের নতুনত্ব দেখেই বোঝা যাচ্ছে বহুদিন যাবৎ ফোন কেউ সেরকম ভাবে ঘাটেন না।আজ কালকার ছেলে পেলেদের ফোনের প্রতি এতো আকর্ষণ দেখে অবাক হন শ্রীজার মা,এতো কি আছে এই সামান্য যন্ত্রটাতে?যা মানুষদের দিন রাত এতো টানে।কই সে তো এমন আকর্ষনীয় কিছু খুঁজে পেলেন না।হুট করেই নিস্তব্ধতায় ঘেরা ঘরটা আওয়াজে মুখোরিত হয়ে উঠলো।ফোনের কাঁপাকাঁপি দেখে বোঝা গেলো কেউ ফোন করেছে,শ্রীজার বাবা বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিলেন চশমা ভেদ করে দেখতে পেলেন ফোনের স্কিনে গোটা গোটা করে বাংলা অক্ষরে লিখা ‘শরৎ’ নামটা পড়েই নিঃশব্দে হাঁসলেন, ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলেন,ভদ্র এল যুবকের শ্রদ্ধা নিয়ে তাকে সালাম জানানোর এক নম্র বাক্য….

“আসসালামু আলাইকুম।”

আবারও হাঁসলেন শ্রীজার বাবা।উত্তর দিলেন…

“ওয়ালাইকুম আসসালাম শরৎ,কেমন আছো?”

শরৎ বললো…

“আমি ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন।ফুপি কেমন আছে?”

“হ্যা হ্যা আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আমরা দুজনে বেশ ভালো আছি।সব কিছু ঠিকঠাক চলছে তো?এতো দিন পর ফুপি-ফুপার কথা মনে পড়লো হঠাৎ?”

“সব ঠিক ঠাক চলছে আলহামদুলিল্লাহ।ফুপিকে দেয়া যাবে?আছেন উনি?”

“হ্যা হ্যা আছে আছে,”

শ্রীজার বাবা ডাকলেন…

“অনুর মা এই অনুর মা, শরৎ ফোন করেছে, তোমাকে খুঁজচ্ছে।এদিকে এসো তো।”

শ্রীজার মা হাত মুখ কোনো রকমে মুছে তড়িঘড়ি করে এলেন ঘরে।হাঁসি মুখে ফোনটা হাতে নিয়ে কানের পাশে ধরে আনন্দের সহিত বললেন…

“আসসালামু আলাইকুম বাবা,কেমন আছিস এতোদিন পর মনে পড়লো ফুপির কথা?”

শরৎ হাসঁলো।বললো…

“ওয়ালাইকুম আসসালাম,আমার তো তাও মনে পড়েছে তোমার তো তাও মনে পড়ে না ফুপি।”

“শোনো ছেলের কথা,তোদের মনে পড়ে না আমার?এটা কি করে বললি?মা কখনো সন্তানদের ভুলতে পারে?শ্রীজা নেই অনু নেই ঘরটা পুরো ফাঁকা,আগে যাও তুই দু দিন বাদে বাদে আসতি, এখন তো তাও আসার উপায় নেই,আমি বুড়ো মানুষ আর এভাবে কতো সময় পাড় করি বল?শ্রীজাটাও আমার ওপর রাগ করে আছে,তাই ভয়ে ফোন দেই না বিশেষ কারণ ছাড়া।কখন না কখন আবার যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়!”

“ওর আবার রাগ,আচ্ছা শোনো ফুপি,একটা কথা বলার ছিলো।”

“বল…”

“আজ তোমার মেয়ে সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে ভিজেছে,প্রায় ঘন্টা খানিকের বেশি তো হবেই।সাথে সাথেই জ্বর এলো জ্বরের ঘোরে কিসব আবোল তাবোল বকছে।ঔষধও খাওয়ালাম তাও জ্বর কমছে না,আর না ঠান্ডা কমছে।কি করবো এখন?”

শ্রীজার মা কিছুটা রাগলেন শ্রীজার ওপড়,এরপর চিন্তিত স্বরে শরৎকে শতর্ক করে বললে….

#চলবে_