#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৩৪
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
“ওর ঠান্ডার সমস্যা আছে বাবা,তুমি একটু কষ্ট করে হলেও আদা আর তুলসি পাতা একসাথে ছেঁচে ওটার রস বের করে মধু মিশিয়ে দিয়ে,ওটা হালকা গরম করে নিও,তারপর ওকে ওটা ভাত খাওয়ার পরই খাইয়ে দিও,দু চামচ করে করে তিন বেলা প্রতিদিন খাইয়ে দিলেই হবে,আর ফ্লাক্সে করে গরম পানি করে রাখিও ভুলেও ঠান্ডা পানির ধারে কাছে যেতে দিবা না ওরে।আর জ্বরের জন্য আমি সাধারণত নাপা এক্সট্রা দিতাম ওরে,বেশি হলে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতাম।কিন্তু খেয়াল রাখবা এন্টিবায়োটিক ঔষধটা যেনো না দেয়,বেশি একটা সমস্যা হলে তখন দিতে বলিও।এটা আবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।”
শরৎ বললো…
“ডক্টরের কাছ থেকে ঔষধ আনিয়ে নিয়েছি আন্টি, ওটা নিয়ে ভাববেন না।আসলে ওর জ্বরটা কমছে না তাই ভাবলাম আপনাকে ফোন করি,আপনিই তো জানবেন ওর ব্যাপারে বেশি তাই।”
শ্রীজার মা আবার বললেন…
“আর ওর হাঁটা চলার সময় ওর সাথে ইকটু থেকো মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে।খুব বেশি দূর্বল হয়ে যার জ্বর হলে ওর।আর বেশি ওঠ-বোস করতে দিও না।জ্বর তিন দিনের বেশি হলে গেলে গোসল করাতে হবে।আর বাকি সময় শরীরটা মুছে দিলেই হবে।বেশি সমস্যা হলে আমাকে ঠিকানা টা দিয়ে দিও আমি কালই চলে আসবো।”
শরৎ বাধঁ সাধলো,বললো…
“না না ওর প্রয়োজন হবে না,কাল তো শুক্রুবার, দরকার পড়লে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেবো। আপনি চিন্তা করবেন না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।আর প্রয়োজন পড়লে আমাকে ফোন করো।আর শোনো একদম বৃষ্টিতে ভিজতে দিবা না ওকে,দিন দিন বড় হচ্ছে আর ফাজিল বাড়ছে।”
“আচ্ছা আন্টি আপনি টেনশন নিবেন না।আজ তাহলে রাখি।”
“আচ্ছা আচ্ছা ভালো থেকো,আসসালামু আলাইকুম।”
__________
“পরীর মুখের মিষ্টি হাঁসি দেখতে চমৎকার এক নিমিষেই কাইড়া নিলো মনটা সে আমার…
নাইরে নাইরে নাইরে আমার বাঁচার উপায় নাই!!
চাইরে চাইরে চাইরে আমি পরীটারে চাইই..!”
নাদিমের গান শেষ হতেই ইমান তাকে বললো…
“কিরে ভাই ইদানিং দেখি,খুব প্রেম প্রেম মুডে আসোস ব্যাপারটা কি?”
নাদিম হাঁসলো খানিকটা লাজুক হাঁসি।ইমানের পিঠে চাপড় দিয়ে বললো…
“ধুর ব্যাটা,ওসব কিছু না।”
ইমানও হাঁসলো শব্দ করে,কিছু একটা গেস করতে পেরে নাদিমকে ফাজলামোর স্বরে বললো…
“লাড়কা হাঁসা তো ফাসা! এবার বল কে সেই পরী যে তোরে ফাসাই দিলো?”
নাদিম মাথা চুলকালো এক হাত দিয়ে ইমানকে সরিয়ে দিয়ে বললো…
“ধুর সর তো।”
ইমান সরে গিয়ে পকেট থেকে ব্যানসন সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা হাতে নিয়ে আবার প্যাকেটটা পকেটে পুরে নিলো।ওরা এখন একটা মাঠে আছে। চারিপাশে কাশফুল একদম নিরব স্থান পাশে একটা ছোট খাটো বিল।যতোদূর চোখ যায় মাঠ আর মাঠ বেশ কিছুটা দূরে বড় বড় বিল্ডিং এর কাজ চলছে।ইমান সোজা হাঁটতে লাগলো সামনে একটা ছোট্ট মদির দোকান, দোকানের একপাশে দড়ি দিয়ে ঝোলানো লাইটার,সেটা থেকে আগুন নিয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুকঁতে এগিয়ে এলো নাদিমের দিকে।আধ-ভাঙ্গা দেয়ালটার ওপর লাফ দিয়ে উঠে বসলো,লাল লাল ইট দেখা যাচ্ছে দেয়ালটাতে,কি জানি কার জমির মাঝে দেয়াল আটা।বেশ কিছুটা দূরে অনেকগুলো ছেলে পেলে ফুটবল খেলছে,ওদের পাশে বসে আছে আকিব। দেখতে আহামরি ফর্সা না হলেও মেয়েদের ভাষায় “জোসসস” মেয়েরা আসতে যেতে ক্রাশ খায় ওর ওপর।সাদিকের ভাষায় এটা কন্যারাশি, কিন্তু আফসোস কাকে বলে জানেন?যে ছেলের ওপর হাজারটা মেয়ে ক্রাশ খায়,বলতে গেলে দিন-রাত ক্রাশ খায়।সে ছেলে ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে বসে আছে,মানা যায়?মেয়েটার নাম তানিয়া।তানিয়া ওর এক্স গার্লফ্রেন্ড বছর তিনেক হবে বিয়ে হয়েছে,কেস নরমাল,ওই সাধারণভাবে রিলেশনগুলো যে কারণে ভাঙে আরকি,কারণ সেটাই। ছেলে ভালো পরিবার ভালো, বয়স তেমন না,পড়াশোনা শেষের দিকে দোষ শুধু চাকরি নেই।তানিয়া মেয়েটাকেও খারাপ বলা যাবে না,বিয়ের আগের দিনও কেঁদেছিলো খুব, এক পর্যায় ঘুমের পিল খেয়ে যা তা অবস্থা,কিন্তু তানিয়ার বাবা কঠিন মনের মানুষ হাসপাতালেই নিজের করা পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিলেন মেয়েকে তাও জোড় করে।ছেলে নাকি আকিবদের চেয়েও বেশ বড়লোক, খুব বেশি বড়লোক বলা চলে।মাঝে একবার তানিয়া আর আকিবের দেখাও হয়েছিলো, আকিবকে দেখে কিছু একটা বলতে চাইছিলো ও কিন্তু আকিব?সে কথা বলেনি।খুব নিখুঁত ভাবে এরিয়ে গিয়েছিলো ব্যাপারটাকে।ইমান নাদিমের কথা বার্তা আকিব শুনেও শুনছে না বললেই চলে।বিলের দিকে ছোট ছোট ইটের টুকরা ছুড়ে ফেলছে আর কিছু একটা ভেবে চলছে আনমনে।আকিবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সাদিকের দিকে তাকালো ইমান। বরাবরের মতো ওর হাতে ফোন দেখলো,বুঝতে পারলো কি করছে মনে মনে সাদিককে একটা নরমাল গালি দিলো ইমান,কিছু গালি ওর কাছে খুব নরমাল। উঠতে বসতেই একেকজনের দিকে ছুড়ে মারে।নিশ্চিত আবার কোনো মেয়েকে পটানোর ট্রাই করছে।গুণে গুণে তিনটা গার্লফ্রেন্ড আছে বর্তমানে সাদিকের তিনটার মধ্যে একটা টাকার ওপড় থাকে সারাদিন, আরেকটাকে নিব্বি বললেই চলে ক্লাস সিক্সের পিচ্চি মেয়ে যার সবগুলো দুধের দাঁতও পড়েনি বললেই চলে সেই মেয়ে অনার্স কমপ্লিট করা একটা ছেলের সাথে প্রেম করে!রীতিমতো নাকে দড়ি দিয়ে ঘোড়ায়ও।আরেকজন আছে নাম সানিয়া বেশ সাধারণ ধাঁচের মেয়ে প্রথম রিলেশন সানিয়ার সাথেই ছিলো সাদিকের। এখনো আছে, প্রায় ৪ বছর যাবৎ।সানিয়া সাদিকের কর্ম-কান্ডের কথা জানেনা হয়তো,তাই তো এভাবে বিশ্বাস করছে ছেলেটাকে।সানিয়ার বাবা সাধারণ ব্যাবসায়ী মার্কেটে কাপড়ের একটা দোকান আছে, ভাড়া করা।দুজন কর্মচারী বরাদ্দ।বেতন ৫-৬ হাজারের ওপর।ইমানের জানামতে সানিয়ার একটা ভাই আর একটা বোন আছে বোনটা ক্লাস ওয়ানে পড়ে,আর ভাইটা এবার নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে।বাবার চাপ কমাতে টিউনশন করায় সানিয়া,বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে।মাস শেষে ভালোই বেতন হয় সব মিলিয়ে কিন্তু যা হয় সব পড়াশোনার খরচ,ঘরের খরচেই চলে যায়।সাদিকের সাথে পরিচয় টিউনশনির মাধম্যেই,সাদিকের ছোট বোন সাফাকে পড়াতো সানিয়া।সেখান থেকেই পরিচয়।প্রোপোজালটা সাদিকই দিয়েছিলো,রিজেক্ট করার পরও বারে বার কিছুটা বেহায়ার মতোই সানিয়াকে প্রোপোজাল পাঠাতো,নানান ভাবে ইমপ্রেশ করতে চাইতো,হেল্পটা বন্ধু মহল থেকেই যেতো
বেশি। নাদিম,আকিব,ইমানই হেল্প করতো ওকে।অনেক কষ্টে রাজি করায় সানিয়াকে,তবে সানিয়ার শর্ত ছিলো বিয়ে,সাদিকও বলেছিলো চাকরিটা জাস্ট এক দিকে পাবে আরেক দিকে বিয়ে করে ঘরে তুলবে সানিয়াকে।সাদিক চাকরি করে আজ এক বছরেরও বেশি। বিষয়টা নিশ্চই সানিয়ার অজানা নয়,তবুও কতো কি করে সাদিক ঝুলিয়ে রেখেছে বিষয়টাকে।ছেলেটা আসলে কি চায়?তা কেউই বুঝতে পারছে না।বন্ধু মহলের প্রতিটা সদস্য সাদিকের ওপর চরম ক্ষিপ্ত। ওদের মতে সানিয়াকে বেশ বাজে ভাবে ঠকাচ্ছে সাদিক।হাজার বোঝানোর পরও সে অবুঝ, আসলে যারা বুঝেও অবুঝের মতো থাকে তাদের বোঝানো যায় না।ইমান দৃষ্টি সরিয়ে একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর নাদিমের দিকে তাকিয়ে বললো…
“কিরে ব্যাটা নাম বলবি?”
“ধুর শালা, তখন থেকে কী নাম নিয়ে পড়ে আছিস বাদ দে তো।ভালো লাগতেসে না।”
ইমান নাদিমকে অভিমানের স্বরে,বললো…
“আর ভালো লাগবে ক্যান?আমি তোর কে?কেউ না,যা দিলাম বাদ।সব বাদ দিলাম।যাইগা আর ডাকবি না তুই।আমাগোর মাঝে কোনো সম্পর্ক নাই সব বাদ।”
দেয়াল থেকে এক লাফে নেমে,চলে যেতে লাগলো ইমান।
নাদিম ভ্রু কুঁচকে ইমানের দিকে তাকালো,বললো…
“ওই হারামী ওয়েট… খারা তুই!”
ইমান দাড়িয়ে পড়লো বললো…
“কইসি না সব বাদ,কোনো ওয়েট ফয়েট নাই।আমি তোর লগে নাই।গেলাম..”
বলেই হাটঁতে লাগলো।নাদিম কিছুটা দৌড়ানোর মতো করেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ইমানের শার্টের কলার ধরে দাড়িয়ে পড়লো।হাফাতে হাফাতে বলে উঠলো…
“আবেএ তোরে দাড়াইতে বলসি না।”
ইমান মুখ ফিরিয়ে নিলো।নাদিম ইমানের কাঁধে হাত রেখে বললো…
“একটা জিনিস খেয়াল করসোস?”
ইমান প্রশ্ন করলো…
“কি জিনিস?”
নাদিম বললো…
“তুই সাদিকের নিব্বি গার্লফ্রেন্ড কারিয়ার মতো ন্যাকামি শুরু করসোস।ওই যে সেকেন্ডে সেকেন্ডে ব্রেকআপ,কিছু হইলেই নাক ফু্লানি।পুরাই মিল্লা যাইতাসে বস,ব্যাপার কি বলতো?”
বলেই হু হা করে হেঁসে উঠলো নাদিম।ইমান বেশ বুঝলো নাদিম মজা নিচ্ছে, আসলেই মজা নিচ্ছে কি সাহস, ইমানের সাথে মজা নেয়।কিন্তু নাদিমের কথায় লজিক আছে।মিথ্যে কিছু বলেনি সে।এসব ভাবা বাদ দিয়ে বললো…
“এবার বল মেয়েটা কে?”
নাদিম লুকোতে চাইলো না।বললো…
“নাম শ্রীজা।”
ইমান অবাক হলো বললো…
“ওয়াট?শ্রীজা?আর ইউ শিওর?”
“আরে শিওর হবার কি আছে?”
“তুই জানিস এ মেয়ে..!”
ইমান কথাটা শেষ করবার আগেই নাদিম আর ইমানের কানে ভেসে এলো সাদিকের চিৎকার…
#চলবে_
#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৩৫
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
“ব্রেকআপ মানে?মুখে বললেই ব্রেকআপ হয়ে যাবে?মানে চার বছরের রিলেশন আমাদের,চার বছর মানে বোঝো?১৪৬০ দিন, তুমি ব্রেকআপ করবা আর আমার কোনো মতামত নিবা না?শুরুটা কি একপাক্ষিক ছিলো যে শেষটা এক পাক্ষিক হবে?”
সানিয়া তাচ্ছিল্যের হাঁসি হেঁসে সাদিক কে জবাব দিলো…
“চার বছর মানে খুব লম্বা একটা সময়,আমি জানি।তোমার কি কষ্ট হচ্ছে সাদিক?কিন্তু কেনো?চার বছর ধরে ভালোবাসার নামে টাইম পাস করেছো,সেই টাইম পাসের জন্য মায়া হচ্ছে,না কষ্ট হচ্ছে?”
সাদিক ঘাবড়ে গেলো।মাঠের চার পাশ দিয়ে হু হু করে বাতাস বয়ে চলছে কিন্তু তাও তার ভেতরে ভেতরে অস্বস্থি লাগতে লাগলো,ইকটু ইকটু গরম লাগছে আবার শীতল অনুভূতী হচ্ছে।আসলে সাদিকের সাথে ঠিক কি হচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।সাদিক নিজেকে সামিলে নিয়ে জোড় গলায় বলে উঠলো…
“দেখো সানিয়া উল্টা পাল্টা বলবা না,আমার ফিলিংসকে তোমার টাইম পাস মনে হয়?সিরিয়াসলি?”
সানিয়ার হাঁসি পেলো,হাঁসি চেঁপে রাখলো না ও হেঁসে দিয়ে সাদিককে বললো…
“আচ্ছা সাদিক চোরের মার বড় গলা কথাটা শুনেছো কখনো?”
সাদিক বুঝতে পারলো সানিয়া কথাটা তাকে মিন করে বলেছে,সাদিকের ভয় হতে লাগলো সানিয়া কিছু জেনে গেলো না তো।সাদিককে নিরবতা পালন করতে দেখে সানিয়া নিজেই প্রশ্ন করলো…
“আচ্ছা সাদিক কারিয়া কে?”
সাদিক চমকে গেলো।যা ভেবেছিলো তাই কারিয়া নয়তোবা রিয়া দুজনের একজনকে নিয়ে সন্দেহ্ হচ্ছিলো ওর মনে।এখন তো তাই সঠিক হলো।সাদিক অনেক কষ্টে দু শব্দের একটা বাক্য বললো,যদিও তা প্রশ্ন…
“কারিয়া কে?”
সানিয়া হাসঁলো।মজা করে বললো…
“তোমার প্রাণ পাখি,যাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না।যাকে তোমার এই হৃদয় বিলিয়ে দিয়েছো সেই তো কারিয়া,এক সাথে আর কজন কে একটা হৃদয় বিলিয়ে দেবো সাদিক?এবার তো ইউনিক কিছু করো!কলিজা,ফুসফুস,চোখ,নাক,জিহ্বা,দাঁতও কাউকে বিলিয়ে দাও।”
“তুমি কি বলছো এসব?”
“এখনো বুঝতে পারছো না?প্রমাণ চাই নাকি?ওইযে কারিয়া স্কুলের পাশের রেস্টুরেন্টে হাত ধরে আবেগী স্টাইলে তোলা ছবিটা কিন্তু আমার কাছে আছে।কারিয়ার মা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি আমি।ওনারা তো সাভার ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন এবার তোমার কি হবে?এক সাথে এতোগুলো ছ্যাঁকা নিতে পারবে তো?”
“মানে কারিয়াকে তুমি কি করে..?”
“কি করে চিনি তাই তো?তোমার বোধয় মনে নেই,সাফার টিচার ছিলাম আমি,সেখান থেকেই আমাদের পরিচয়, কারিয়ারও টিচার আমি ক্লাস 2 থেকে পড়িয়ে আসছি ওকে।”
“কিন্তু পিক কোথায় পেলো আর জানলো কি করে?”
“কারিয়ার বড় ভাই আছে সাদিক।বড় ভাই মানে বোঝো?বাবার পর দ্বিতীয় রক্ষক।তুমিও তো সাফার বড় ভাই সাদিক এমন ফাজলামো কি করে করো ছোট ছোট মেয়ে গুলোর সাথে?ওরা না হয় আবেগের বশে…. কিন্তু তুমি?তোমার তো ম্যাচিউরিটি আছে সাদিক,সেটাকে কাজে লাগাচ্ছো না কেনো?”
সাদিক কিছু বলতে পারলো না,কিছু বলার মতো পরিস্থিতি তার নেই।সানিয়া আবার বললো…
“আচ্ছা যাই হোক,তোমার বোধয় মনে হচ্ছে অনেক জ্ঞান দিয়ে ফেলেছি তোমায়,তাই আর জ্ঞান দিচ্ছি না।কারিয়া বা আমার দুজনের সাথে যোগাযোগ করে কোনো লাভ নেই,কারিয়ার মা বাবা চলে যাচ্ছেন অলরেডি,ফোনের সিম কার্ড নম্বর সব বদলে যাবে।সাথে আমারও বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করে নিবো।ভেবেছিলাম তুমি হয়তোবা বাকিদের চেয়ে আলাদা কিন্তু নাহ্ তুমিও টাইম পাস আর মজা নেয়ার জন্যই এসব করছো।সে যাই হোক শুধু নিজের ভালো থাকাটা দেখো না,তাহলে আর ভালো থাকবে না,অন্যকে ভালো রাখতে শেখো তাহলে দেখবে সব বদলে গেছে কোনো হাহাকার জীবনে থাকবে না,কোনো কষ্ট থাকবে না অন্যের ভালোবাসায় অন্যের ভালো থাকায় ভালো থাকবে তুমি যদি তা অনুভব করতে চাও,আর না চাইলে তো শত লোকেও তোমায় ভালো রাখতে পারবে না।আর কিছু বলতে চাইছি না আবার বলতেও পারো বলার মতো কিছুই রাখোনি তুমি শুধু নিজের দিকটা দেখো না অন্যের ভালো থাকা ভালো লাগা খারাপ লাগাটাও দেখবে।তাহলে বুঝতে পারবে তোমাদের মতো স্বার্থপরদের জন্য কেউ ভালো নেই।পৃথিবী নরক হয়ে গেছে,চারপাশে মানুষের হাহাকারে,আক্ষেপে অপেক্ষায় আর অবেলার ভালোবাসাদের কারণে আমিও বোধয় অবেলায় এসেছিলাম,তাই এই অবেলায় চলে যাচ্ছি।ভালো থেকো বলবো না কিন্তু হ্যা ভালো থাকার আর ভালোর রাখার চেষ্টা করতে ভুলো না।”
গলা ধরে আসছিলো সাদিকের, সে ধরা গলায় সানিয়াকে অনুরোধ সূচক বাক্যে বলতে লাগলো…
“সা সানিয়াহ্ আমার কথাটা শোনো,আমার ভুল…”
টুট্ – টুট্,
ফোন কলের লাইনটা হঠাৎ আচমা কেঁটে গেলো।সাদিক বলতে পারলো না কিছু,কথাগুলো কেমন গলায় আটকে গেলো।সব কেমন কষ্টেরা গুলিয়ে আসছে,একসাথে এক জোট বেঁধে হানা দিচ্ছে কষ্টেরা গলায়,বুকে, মাথায় আরো কতো কতো যায়গায়,উফ আর ভাবতে পারছে না ও, এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো?কই আগে তো এতো কষ্ট হয়নি।সানিয়া তো সত্যিই বলেছে সে তো জাস্ট সময় কাটানোর জন্য এসব করতো, বাবার অঢেল টাকা পরিবারের সচ্ছলতা আর তার একাকিত্ব সবাই এক হয়েই তো তাকে এতোদূরে টেনে এনেছে।সে কি ভুল করে ফেলেছে না মহাভুল করে ফেলেছে?নাহ্ ভাবার আর সময় নেই দ্রুত ফোন চালিয়ে সানিয়ার নম্বরে ফোন দিলো সে,, আবার সেই বিরক্তির শব্দ…
“আপনি যেই নম্বটিতে ফোন করেছেন তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে,দয়া করে কিছুক্ষন পর আবার চেষ্টা করুন,ধন্যবাদ।”
ভীষণ ভীষন রাগ উঠলো এবার সাদিকের, তার রাগকে পাত্তা না দিয়ে তার মুঠোফোন টি বেজে উঠলো।আশার আলো খুঁজে পেলো সাদিক দ্রুত ফোন ধরে বললো…
“হ্যা হ্যালো সা…”
সাদিক বলতে পারলো না আর তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে একটি মেয়ে বলে উঠলো…
“বাবুউউউ তুমি কখন আসবেএএএ?আমি তো সেই কখন থেকে তোমার বলা রেস্টুরেন্টে বসে ওয়েট করছিইই,উফ কি গরম ঘেমে যাচ্ছি আমি,এসিটাও এ সময় নষ্ট হলো।তুমি দ্রুত এসো জাননন তুমি আসলে আর কোনো গরমই আমাকে গ্রাস করতে পারবে না,আজ কিন্তু আমাদের শপিংয়ে যাবার কথা,তুমি কিন্তু ভুলে যাবে না হু,আর ভুলে গেলে ব্রেকআপ ব্রেকআপ ব্রেকআপ, আড়িই আড়িই আড়িই আর…”
আর সহ্য করতে পারলো না সাদিক এই রিয়াকে নিয়ে পারে না সে,মেয়েটা কি প্রেম করতে আসে না তাকে শপিং মলে কুলির মতো খাটাতে নিয়ে যায় বোঝে না ও,এইতো তিনদিন আগে এতোগুলো শপিং করে দিলো।নিজের হাত খরচার টাকা প্রায় শেষের দিকে, এবার বোধয় বাবার পকেট থেকেও টাকা মারতে হবে এর জন্য,সাদিক রেগে গিয়ে একটা গালি দিলো রিয়াকে আর বললো…
“তোর ব্রেকআপ নিয়া তুই থাক,খালি টাকা টাকা,এতো টাকা লাগলে বুইড়া চান্দি ছিলা টাকাওয়ালা বিসিএস ক্যাডার বিয়া কইরা ফালা,আর হ্যার টাকারেও বিয়া কইরা ফালা,রাখ তোর আড়ি তুই আমি করলাম ব্রেক’আপ।ব্রেআপ যাহ্ এবার বাগ তোর ব্রেকআপ নিয়া।”
রিয়া হতভম্ব, মানতে কিছুটা কষ্ট হলেও নিজেকে মানিয়ে নিলো ও কতো যে মানিয়েছে এভাবে নিজেকে এই নিয়ে ওর ৫ নং ব্রেকআপ হলো আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছে ও এখন এসব কোনো ব্যাপারই না।মুঙ ভ্যাংচি দিয়ে,কোল্ড কফির স্ট্রতে মুখ লাগিয়ে স্টাইল করে একটা সেলফি তুললো তার বর্তমান ৬ নম্বর মুরগী থুড়ি বয়ফ্রেন্ড সাইফুল্লাকে পিকটা দিতে হবে না?আসলে রিয়ার মতে তার মনটা খুব বড় তাই সে কাউকে মানাই করতে পারে না,কাউকে কষ্ট দিলে তো পাপ হয় তাই না!
__________
অফিস থেকে বেশ কিছু দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে শরৎ।যেহুতু শ্রীজা অসুস্থ সেহুতু ওকে এভাবে বাড়িতে একা ফেলে রেখে যাওয়াটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।সকাল নয়টা বেঁজে তেইশ মিনিট।শ্রীজা গায়ে নীল রঙের নকঁশী কাথা মুড়িয়ে ঘুম।এখনো উঠেনি অন্য দিন হলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শরৎয়ের জন্য চা নাস্তা তৈরি করে টিফিন তৈরির কাজে লেগে পড়তো।জ্বরে শ্রীজার হুশ নেই বললেই চলে, একদম কাহিল হয়ে পড়েছে মেয়েটা চোখ-মুখ কেমেন ডেবে গেছে।চোখের নিচটায় কালছিটে দাগ পড়ে গিয়েছে।এসব দেখে শরৎ একটা বিশাল শ্বাস ফেললো,যাতে আছে শুধুই হতাশা।কাঠের টেবিলে কফির মগটা রেখে দিয়ে রান্নাঘর থেকে তৈরি করা স্যান্ডুইচ গুলো নিয়ে এলো সাথে আছো দিটো সেদ্ধ ডিম আর এক গ্লাস দুধ।শ্রীজাকে ডাক দিয়ে কোনো রকমে ওর মুখ হাত ধুইয়ে দিলো।তারপর খুব কষ্টে একটা স্যান্ডুইচ দেড়টা ডিম আর হাফ গ্লাস দুধ খাওয়ালো শ্রীজাকে।কিন্তু বিপত্তি ঘটলো ঔষধ খাইয়ে শ্রীজার মায়ের কথানুযায়ী তার তৈরি জড়িপুঠি টাইপ ঔষধ খাওয়াতে গিয়ে।শ্রীজা কিছুতেই তা খাবে না মানে খাবেই না।বারবার শরৎয়ের বুকে দূর্বল হাত দিয়ে তাকে ঠেলে দেয়ার চেস্টা করছিলো।মাথা ও শীরের প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে ঘুমের ঘোরে বলে উঠেছিলো…
“আমি খাবো না শরৎ,ঔষধ নিয়ে চলে যাও,আ আমার বমি আসে,তোমার শার্টে বমি ক করে দেবো কি কিন্তুহ্।”
বলেই আবার শরৎয়ের বুকে মাথা রেখে হেলে পড়েছিলো শ্রীজা।শ্রীজার কথায় প্রচন্ড অবাক হয় শরৎ,কিছুটা ভালো লাগাও কাজ করে,কেনোনা প্রথম শ্রীজা তাকে শুধু শরৎ বলে ডেকেছে এর আগে শরৎ ভাই শরৎ ভাই করে করে কান ঝালাপালা করে ফেলতো একেবারে।
শ্রীজা ঘুমোতে নিতেই শরৎ হঠাৎ তাকে টেনে নিয়ে এলো, হাত দিয়ে ওর মুখ চেঁপে ধরে…
#চলবে_