#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আরোশী আর আহির হাসতে হাসতে সোফা থেকে পড়ে যাবে মতো অবস্থা।আরোশী অভ্রের কথাগুলো শুনে হাসছে আর আহির তার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে।
” আপনারা হাসছেন!আমার কষ্টের কাহিনী শুনে আপনাদের কি আমার উপর একটুও মায়া হচ্ছে না।আমার আম,লিচু গুলো কত কষ্টে আছে।ওরে আমার মেসেঞ্জার সংসার।” মিথ্যা কান্না করতে করতে বললো অভ্র।অভ্রের কথা দেখে আরোশী আর আহির আরো এক দফা হেসে ফেলো।কিছুক্ষণ পর আরোশী অনেক কষ্টে নিজে শান্ত করে আর আহিরকেও চুপ করতে বলে।
” এবার বুঝলাম আসল ব্যপার।ভাইয়া মন খারাপ করবেন না।আপনার আম আর লিচুর কিছু হবেনা আর না আপনাকে মাটি খোঁড়ার কাজ করতে হবে।আচ্ছা এখন এটা বলুন ম…না রাইমাকে পেয়েছেন আপনারা?”
” না আপু এখনো পাইনি।ওকে পেলে যে আমি কি করবো।” রেগে বলে অভ্র।
” কি করবেন?পুলিশে দেবেন বুঝি?”
” পুলিশে তো দেবে তার আগে ওকে বেঁধে ওর মুখে মেকাপ করবো,ভুতের মতো।তারপর চুলগুলোতে শাঁক*চুন্নি কাট দেবো।তারপর মুলার জুস খাওয়াবো।”
” আর কিছু?”
” হুম,এরপর রাতে মশলাদার তেলাপোকা সুপ খাওয়াবো।ল্যামন ফ্লেবার ঘাসফড়িং এর বিরিয়ানি খাওয়াবো,সেইসাথে ব্যাঙের চপ আর….”
” হয়েছে ভাইয়া বুঝতে পেরে গিয়েছি।আর কষ্ট পাবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
” কিভাবে কষ্ট না পেয়ে থাকি বলুন আপু।আমার আম আর লিচু গুলো কত কষ্টে আছে।ওরা….”
” বুঝতে পেরেছি আমি।এবার বলুন আপনি কি খাবেন?”
” না গো আপু কিছু খাবোনা।মনের দুঃখে পেট ভরে গিয়েছে।ম…..এইরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি কেন এসেছিলাম!এবার তো আকাশ আমাকে জ্যা*ন্ত ছাড়বেনা।”
অভ্র তাড়াতাড়ি সোফা থেকে উঠে দৌড়ে আকাশের রুমে চলে যায় এর একটা ফাইল নিয়ে বেরিয়ে আসে।
” আপু আজ আসি পরে আবার দেখা হবে।”
” আরে ভাইয়া কিছু খেয়ে যায়।শিলা আপু….”
” না আপু এখন খেতে বসলে আকাশ আমাকে না খেয়ে ফেলে।আহির সাবধানে থেকো।আপু আহিরকে দেখে রাখবেন।”
কতগুলো বলেই অভ্র দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়।
বিছানায় বসে ডিজাইন চেক করছে আকাশ।পাশেই আহির চুপচাপ বসে আছে।
” কি হলো আহির?মন খারাপ?”
” না।”
” তাহলে চুপচাপ কেন?” আকাশ ল্যাপটপটা সাইডে রাখতে রাখতে প্রশ্ন করে।
” কিছুনা।”
আকাশ আহিরকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কি হয়েছে আহির?বাবাইকে বলো।”
” ভালো লাগছেনা।” আকাশের বুকে মাথা রেখে বলে আহির।
” কেন বাবু?কি হয়েছে?”
” বাবাই তুমি আমার সাথে খেলোনা কেন?আমার বাসায় ভালো লাগেনা।তুমি সবসময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকো কেন?আচ্ছা আমি যদি তোমার কাজগুলো করে দি তাহলে কি তুমি আমার সাথে খেলবে?আমার একা একা বাসায় ভালো লাগেনা।”
আহিরে কথা শুনে আকাশের মুড অফ হয়ে যায়।আহির যে ভালো নেই সেটা আকাশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।সে যে একাকিত্বে ভুগছে সেটা ভাবতেই আকাশের বুক কেঁপে উঠে।আকাশ আহিরকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে নেয়।তার চোখ পানি জমে গিয়েছে।একটা বাচ্চা কতটা একা ফিল করলে এরকম কথা বলতে পারে সেটা আকাশ জানেনা।তার নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে কিন্তু তারও যে কিছু করার নেই।
” আচ্ছা আহির বলো কি করলে তোমার মন ভালো হবে?”
” আমাকে ফেরি আন্টির সাথে কথা বলিয়ে দেবে বাবাই?”
” ফেরি আন্টি!এটা কে?”
” যে আন্টিকে আমাকে দেখতে আসেন উনি।”
” আরোশী?”
” হুম।দাও বাবাই প্লিজ।আমি শুধু একটু কথা বলবো প্রমিজ।একটু কথা বলেই রেখে দেবো,তোমাকে আর ডিস্টার্ব করবোনা।”
আহিরে কথাগুলো আকাশের মনে ক্ষত সৃষ্টি করছে।সে চুপচাপ আরোশীকে ফোন দিয়ে আহিরকে ধরিয়ে দিলো।আহির খুশি মনে অপেক্ষা করছে কবে আরোশী ফোন ধরবে।কিন্তু ফোন রিং হতে হতে কেটে যায়,এতে আহিরের মন খারাপ হয়ে যায়।সে গোমড়া মুখ করে ফোনটা আকাশকে দিয়ে দেয়।
” কি হয়েছে আহির?কথা বলবে না?”
” ফোন কেটে গিয়েছে।” মন খারাপ করে উত্তর দেয় আহির।আকাশ আবারো আরোশীকে ফোন দিলো এবার আরোশী ফোন রিসিভ করে।আরোশী ফোন রিসিভ করতেই আহিরের মুখে হাসি ফুঁটে উঠে।
” হ্যালো কে…..”
” ফেরি আন্টি আমি।”
” আহির তুমি!এতো রাতে!কিছু কি হয়েছে বাবু?কোন সমস্যা হয়েছে?” চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো আরোশী।
” না ফেরি আন্টি কিছু হয়নি।”
” তাহলে এতো রাতে ফোন দিলে যে?”
” বিরক্ত করেছি?” মন খারাপ করে জিজ্ঞেস করে আহির।
” আরে না না কি বলছো এসব!বিরক্ত করবে কেন?আচ্ছা বলো কেন ফোন করেছো।”
” আমার ভালো লাগছিলোনা,একা লাগছিলো তাই তোমার সাথে কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।”
আহিরের কথা শুনে আরোশীর ভ্রু-কুচকে যায়।
” একা লাগছিলো মানে?স্যার কি বাড়িতে নেই?”
” হুম বাবাই আছে তো কিন্তু বাবাই তো নিজের কাজে ব্যস্ত।”
আরোশীর কেন যেন আহিরের কথাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।বাবা-মা সারাদিন ব্যস্ত থাকে,একটা বাচ্চা কতোটা একা হলে এতো রাতে আরেকজন ফোন করে তার সাথে একটু কথা বলার জন্য এটা ভাবতেই আরোশীর চোখ ভেজে যায়।ছোটবেলায় সেও এরকম মন খারাপ করে থাকতো সবসময়,কারণ তার সে কথা বলার সাথী কেউ ছিলোনা।আরোশী এখন এসব কথা ভাবা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে।
” আচ্ছা সমস্যা নেই আহির।স্যার ব্যস্ত থাকুন,এখন থেকে তোমার একা মনে হলে বা তুমি বোর হলে আমাকে টুক করে একটা ফোন দেবো।”
” সত্যি!” আরোশীর কথা শুনে আহিরের মুখে হাসি ফুটে উঠে।
” হুম সত্যি।এবার বলো খাবার খেয়েছো?”
” হুম।তুমি খেয়েছো ফেরি আন্টি?”
” হুম বাবু আমিও খেয়েছি।”
এরপর আরোশী আর আহির কথা বলতে শুরু করে।আকাশ জানেনা আরোশী কি বলছে কিন্তু আরোশীর কথা শুনে আহির খুব করে হাসছে।আহিরের হাসি দেখে আকাশের মুখেও হাসি ফুটে উঠে।
প্রায় একঘন্টার মতো আহির আরোশীর সাথে কথা বলে কিন্তু তখনো সে ফোনটা রাখেনা।এদিকে আরোশীর ঘুম পাচ্ছে কিন্তু সে তাও আহিরের সাথে কথা বলে যাচ্ছে।এখন ফোন রাখলে আহির মন খারাপ করবে এই ভেবে।
” আহির তুমি না বলেছিলে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দেবে?” একটু গম্ভীর ভাবেই বললো আকাশ।আকাশের কথা শুনে আহির কিছুটা ঘাবড়ে যায়।আহির আরোশীকে নিচু স্বরে বলে,
” ফেরি আন্টি আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।বাবাই মনে হয় রেগে আছে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি এখন ভালো ছেলের মতো ঘুমিয়ে পড়ো,বাবাইকে একদম ডিস্টার্ব করবেনা।”
” আচ্ছা।”
আহির ভয়ে ভয়ে আকাশকে ফোনটা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।আকাশ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আরোশী এখনো লাইনে আছে।আকাশ একবার আহিরের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
” মিস আরোশী।”
” জ্বি স্যার।”
” দুঃখিত,আপনাকে এতো রাতে ফোন করে বিরক্ত করলাম।”
” না না স্যার ঠিক আছে।আহির যখন ইচ্ছে আমাকে ফোন করতে পারে।বাচ্চা মানুষ একটু মানুষের সঙ্গ চাই।একটা কথা বলবো স্যার?”
” হুম বলুন।”
” আমি জানি আপনি ব্যস্ত মানুষ,কাজের প্রেশার অনেক।কিন্তু প্লিজ স্যার কাজের মধ্যে থাকলেও একটু আহিরকে সময় দেবেন।আপনি যেহেতু ওর বাবা তাই খুলেই আপনাকে বলছি।আহিরকে কিন্তু এখন থেকেই একাকিত্ব ঘিরে ধরছে।এটা মোটেও ভালো নয় স্যার।আপনি ওকে যথাসম্ভব সময় দিন,ওকে বোঝার চেষ্টা করুন।ছুটির দিনে ওকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান আর তা না হলেও বাড়িতে বসে ওর সাথে খেলা করুন।ও যদি আপনাকে খেলার জন্য বলে আপনি বেশি না ৪/৫ মিনিট ওর সাথে একটু খেলুন।আর ম্যাডামকেও বলবেন ওকে সময় দিতে।চাকরি করাটা জরুরি তবে বাচ্চাকেও খেয়াল করাটা জরুরি।আমি বেশি বলে ফেললে দুঃখিত স্যার।রাখছি,শুভ রাত্রি।”
আরোশী ফোনটা কেটে দেয়।আকাশ ফোনটা কানের কাছ থেকে সরিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
” আচ্ছা আমি কি আসলেই আহিরকে সময় দিচ্ছিনা?আমি কি ঠিক মতো আহিরের খেয়াল করতে পারছিনা?আমি কি সত্যি আধো ওর বাবা হওয়ার যোগ্য?”
চলবে……..