অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-০৬

0
846

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

রান্নাঘরে শিলার সাথে আহিরের জন্য বিকেলের খাবার বানাচ্ছিলো আরোশী।খাবার বানানো শেষ হলে আরোশী আহিরকে ডাকবে তার আগেই আহির হাতে কিছু একটা নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে আছে।

” আহির আস্তে,পড়ে যাবে তো।আর তোমার হাতে ওটা কি?”

” ফেরি আন্টি এটা আমি আলমারিতে পেয়েছি।এখানে না অনেক ছবি আছে।তাই আমি তোমাকে দেখানোর জন্য নিয়ে এলাম।চলোনা আমরা এটা দেখি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি সোফায় গিয়ে বসো আমি আসছি।”

আহির ভালো ছেলের মতো সোফায় গিয়ে বসে পড়ে।আরোশী প্লেটে করে খাবার নিয়ে আহিরের পাশে বসলে আহির এ্যালবামটা খুলে দেখতে শুরু করে।আরোশীও দেখছে আহিরের সাথে।এখানে আরোশী আকাশ বাদে কাউকেই চিনতে পারছেনা।ফটোগুলো কিছু খুবই পুরোনো আবার কিছু ফটো চার-পাঁচ বছর আগের।আরোশী মনোযোগ দিয়ে সব ছবিগুলো দেখছে।এখানে সব ফাংশন এর ফটো।কিন্তু আরোশীর একটা বিষয় খেয়াল করেছে এখানে আহিরের কোন ফটো নেই।না ছোটবেলার না কিছু বছর আগের আর না আকাশের বিয়ের কোন ফটো আছে কিন্তু আরোশী আপাতত এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে আহিরের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

আকাশ এসেছে কিছুক্ষণ আগে।অন্যদিন হলে আকাশ আসতেই আরোশী চলে যায় কিন্তু আজ সে গেলো না।তার আকাশের সাথে জরুরি কথা আছে।

” আরে মিস আরোশী,আজ এখনো আছেন যে?অন্যসময় তো চলে যায়।আমি তো ভেবেছিলাম আপনি চলে গিয়েছেন।”

” চলে যেতাম তবে আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো তাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” শান্তস্বরে উওর দেয় আরোশী।

” হুম বলুন কি বলবেন।আহির কি কিছু করেছে?”

” না আহির কিছু করেনি তবে আমি আহিরকে নিয়েই কথা বলবো।”

” কি কথা?”

” প্রথমেই আমি দুঃখিত আপনার সাথে ফোনে ওভাবে কথা বলার কারণে।আমার ব্যবহারের জন্য আমি লজ্জিত কিন্তু সত্যি বলতে এটাই সত্য।এখন আমি আবারো বলছি কিছু কথা।আপনি সত্যিই আহিরকে পর্যাপ্ত সময় দেন না।আমি এসেছি বেশি হলে দুই সপ্তাহ হবে।আপনি একবার ভেবে দেখুন সে কাল অতো রাতে আমাকে ফোন করেছিলো একটু কথা বলার জন্য।এর কারণ কি জানেন?আমি এই কয়েকদিন ওকে যথেষ্ট সময় দিয়েছি,তার সাথে থেকেছি।তা না হলে আপনিই ভাবুন ও কিন্তু এতোকিছু বোঝেনা শুধু আমার সঙ্গতার কারণে আমার সাথে ফ্রী।আমি প্রথম দিনই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম আহির শান্ত আর কম কথা বলা বাচ্চাদের মধ্যে পড়ে,সে একা থাকতে পছন্দ করে।আপনিও হয়তো ভেবেছিলেন ও যেহেতু একা থাকতে পছন্দ করে ওকে একা ছড়ে দেওয়ায় ভালো।হ্যাঁ ওকে একা থাকতে দেবেন কিন্তু তাই বলে সবসময় নয়।একসময় এটা অভ্যাস হয়ে যাবে,তখন তো নিজের কষ্ট,আবদার কাউকে মন খুলে বলতে পারবেনা।একসময় ও আপনাদের থেকেও দূরে সরে যাবে।বুঝতে পারছেন তো স্যার আমি কি বোঝাতে চাইছি?”

” হুম।”

” আমি বুঝতে পারি আপনিও নিরুপায় তবে চেষ্টা করলেই সব সম্ভব।আর ম্যাডাম মানে আপনার স্ত্রী কোথায়?ওনাকে এসেছি পর্যন্ত একবারো দেখলাম না?উনি কি অফিস থেকে রাত করে বাড়ি ফিরেন নাকি বাইরে কোথাও গিয়েছে?আপনি না হয় কাজের কারণে দূরে থাকেন কিন্তু উনি তো মা।উনার কি উচিত নয় বাচ্চাকে সময় দেওয়া?কাজ রাত জেগেও করা যায় কিন্তু বাচ্চা থেকে একবার দূরত্ব বাড়লে সেটা সহজে কমানো যায় না।আপনি প্লিজ ম্যাডামের সাথে আমার একটু কথা বলিয়ে দিন,আমি যেহেতু এখন আহিরের দেখাশোনা করছি আমার ওর সব বিষয়ে দেখা আমার দায়িত্ব।আপনি ম্যাডামের নম্বরটা আমাকে দিন।”

” আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছে,আমি ওকে যথাসম্ভব সময় দেওয়ার চেষ্টা করবো আর হ্যাঁ ওর সম্পর্কে যা বলার সব আমাকে বলবেন।অন্যকাউকে বলার দরকার নেই।অনেক রাত হয়েছে আমার মনে হয় আপনার এখন বাড়ি যাওয়া উচিত।আপনি বরং আমার গাড়ি নিয়ে যায়,রাত হয়েছে রাস্তার অবস্থা ভালো নয় আজকাল।তাই আপনি আমার গাড়ি করে যান,এটাই আপনার জন্য সেইফ।” খুবই শান্তভাবে বলে আকাশ।আরোশীও আর দ্বিমত করেনা।আকাশের ড্রাইভার আরোশীকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আবারো ফিরে আসে।এদিকে আকাশ আরোশীর কথাগুলো ভাবছে।তার কি করা উচিতে সেটাই সে চিন্তা করছে।

পরেরদিন সকালে,

আরোশী জুতো খুলে ভিতরে এসে দেখে আকাশ সোফায় বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।আকাশ এখনো বাড়িতে আছে দেখে আরোশী কিছুটা অবাক হলো।ফোনে কথা বলা শেষ হলে আকাশ আরোশীকে বসতে বললো।

” আপনি এখনো বাড়িতে?অফিস যাবেন না স্যার?অফিস না গেলে আমি তাহলে চলে যায়?”

” না না আমি অফিস যাবো।আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

” আমার জন্য!জরুরি কিছু বলবেন স্যার?”

” হুম।কালকে আপনার বলা কথাগুলো অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম আর এরপর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমি জানিনা কথাটা শোনার পর আপনি কি রিয়েকশন করবেন বা আমাকে কিরকম ভাববেন আমি জানিনা।তবে আপনার কথাগুলো চিন্তা করার পর আমার এই কথাটাই সর্বপ্রথম মাথায় এসেছে।”

” কি কথা স্যার?”

আকাশ এবার একটু নড়েচড়ে বসলো।

” মিস আরোশী আমি আপনার ব্যপারে খোঁজখবর নিয়েছি।আপনার আপন বলতে কেউ নেই,বর্তমানে আপনি একা একটা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন।যেহেতু আপনি একাই থাকেন আর প্রতিদিনই আমার বাড়ি আসছেন তো আমি চাইছিলাম আপনি যেন একেবারে আমার বাড়িতে শিফট হয়ে যান।”

” মানে!” এবার আরোশীও একটু নড়েচড়ে বসলো।

” মানেটা হলো আমি চাইছি আপনি যেন আমার বাড়িতেই থাকুন।যেহেতু আপনি একা আপনারা সমস্যা হওয়ার কথা নয় আর আপনি এখানে থাকলে প্রতিদিন আপনাকে জার্নিও করতে হচ্ছে না আর আহিরও কোন সঙ্গী পেলো।সেইসাথে আপনি একা একটা মেয়ে।ফ্ল্যাটে একা থাকা আমার মতে আপনার জন্য সেইফ নয়।সবদিক দিয়ে ভেবে আমি আপনার সামনে এই প্রস্তাবটা রাখলাম।আপনি না চাইলে আমি আপনাকে জোড় করবোনা।আমি শুধু আমার মতামতটা জানালাম।এখন সিদ্ধান্ত আপনার উপর।”

“আমাকে একটু সময় দিন,আমি ভেবে বলছি।”

” ওকে।তাহলে আমি এখন আমি,আহিরের খেয়াল রাখবেন।”

আকাশ নিজের ব্যাগ নিয়ে চলে যায়,আরোশী থম মেরে এখনো সোফায় বসে রয়েছে।তার মাথায় আকাশের বলা কথাগুলোই ঘুরছে।

আজও আরোশী আকাশের জন্য অপেক্ষা করছে।আকাশ এলে আরোশী আকাশের সামনে গিয়েছে বসলো।

” সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ?”

” হুম।”

” তো বলুন আপনি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিস আরোশী।”

” আমি এখানে থাকবো স্যার।”

” বাহ্ তাতো খুবই ভালো।ধন্যবাদ আমার কথা রাখার জন্য।”

” তাহলে আমি আজ উঠি,কাল আবার আসবো।”

” আপনি যেহেতু এখন থেকে এখানেই থাকবেন তো আজ রাতটাও থেকে যান।”

” কিন্তু আমার জিনিসপত্র?”

” ওসব কাল সকালে নিয়ে আসবেন।শিলা….ওনাকে গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দাও।”

শিলা আরোশীকে গেস্টরুমটা দেখিয়ে দেয়।ভেতরে ঢুকে আরোশী চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।মাঝারি সাইজের একটা রুম আর রুমের সাথে ছোট একটা বারান্দা।রুমটা খারাপ লাগলোনা আরোশী।আরোশী এখানে অনেক কিছু ভেবে থাকতে রাজি হয়েছে।আরোশীর এখানে থাকাতে যেমন আহির সেইফ থাকবে তেমনি আরোশীও সেইফ থাকবে।তারউপর স্বল্প বেতনে আরোশীর সবকিছু ম্যানেজ করতে একটু কষ্টসাধ্য।তাই দু’দিকের কথা চিন্তা করে আরোশী থাকার জন্য রাজি হয়ে যায়।মুখ হাত ধুয়ে আরোশী বাইরে বেরিয়ে আসে।ডাইনিং টেবিলে আহির আর আকাশ আগে থেকেই বসে ছিলো।আহির আরোশীকে দেখে দৌড়ে তার কাছে চলে যায়।

” ফেরি আন্টি তুমি আজ থেকে আমাদের সাথে থাকবে?”

” হুম বাবু।”

” ইয়ে…..ফেরি আন্টিও আমাদের সাথে থাকবে।” খুশিতে লাফাতে লাফাতে বললো আহির।আহিরের খুশি দেখে আরোশী আর আকাশ দুজনেই হাসে।আহির আরোশীকে টেনে এনে নিজের পাশের চেয়ারটাতে বসালো।

” ফেরি আন্টি তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে?”

আহিরের কথা শুনে আকাশের ভ্রু-কুচকে যায়।আরোশী কিছুটা ভয় পেয়ে যায় এই ভেবে যে আকাশ যদি মনে করে আরোশী আহিরকে তাদের থেকে সরিয়ে নিচ্ছে তাহলে।আরোশী ভয়ে ভয়ে আকাশের দিকে তাকালো।আকাশ তখন আরোশীর দিতেই তাকিয়ে ছিলো।

চলবে……