অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-০৯

0
761

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

রুমে এসে আরোশী একটা কথায় চিন্তা করছে যে আকাশ তখন কার সাথে কথা বলছিলো?আর এতো রেগেই বা কেন ছিলো?আর সেইসাথে তার মাথা আরো একটা প্রশ্ন ঘুরছে যে এতোদিন হয়ে গেলো সে এই বাড়িতে আসাযাওয়া করছে কই এখনো পর্যন্ত তো সে আহিরের মাকে দেখতে পেলোনা আর না আকাশ বা আহির এই সম্পর্কে কোন কথা বলে।উল্টো আহিরকে জিজ্ঞেস করলে সে কোন উওর দিতে পারেনা আর আকাশ কথাটাকে এড়িয়ে যায়।কেন যেন আরোশীর কিছু একটা ঠিক লাগছেনা কিন্তু সেটা কি সেটাই সে বুঝে উঠতে পারছেনা।এসবই চিন্তা করছিলো আরোশী তখনই দরজায় নক করার শব্দ শুনতে পেলো।

” এই সময় আবার কে আসতে পারে?”

আরোশী দরজা খুলে দেখলো আকাশ দাঁড়িয়ে আছে বাইরে।আরোশীকে দেখে আকাশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে হাসলো।

” কিছু বলবেন স্যার?”

” ওই আসলে…..”

” কোন সমস্যা স্যার?”

” আসলে আহির ঘুমাচ্ছে না।অনেকক্ষণ ধরে আমি তাকে ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু সে কিছুতেই ঘুমাচ্ছে না।বারবার আপনার কথা বলে চলেছে তাই কোন উপায় না পেয়ে আপনার কাছে এলাম।”

” কি বলছেন আপনি স্যার?আমাকে আগে বলবেন না।আপনি চিন্তা করবেন না আমি যাচ্ছি ওর কাছে।”

আরোশী আহিরের রুমে এসে দেখে সে বিছানায় বসে আছে।

” আহির তুমি ঘুমাচ্ছোনা কেন?”

” ফেরি আন্টি তুমি এসেছো।”

” তুমি ঘুমাচ্ছোনা তাই আসতে হলো।এবার তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো তো দেখি।এসো শুয়ে পড়ো আমি তোমার মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

আহির শুয়ে পড়লে আরোশী তার মাথার কাছে বসে তার মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।একসময় আহির ঘুমিয়ে পড়ে তবে আহিরকে ঘুম পড়াতে পড়াতে আরোশীও ঘুমিয়ে পড়ে।আধাঘন্টা পর আকাশ রুমে এসে দেখে আরোশীও ঘুমিয়ে পড়েছে।আকাশ আর আরোশীকে না ডেকে ড্রইংরুমে থাকা সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

প্রায় রাত তিনটা নাগাদ আরোশীর ঘুম ভেঙে যায়।সে নিজেকে আহিরের রুমে দেখে বেশ অবাক হলো।আশেপাশে তাকিয়ে যখন সে আকাশকে দেখলে পেলোনা তখন আরোশী ওড়নাটা ঠিক করে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে আসে।আকাশকে সোফায় শুয়ে থাকতে দেখে আরোশীর নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে।সে আকাশের পাশে গিয়ে তাকে নিচু স্বরে ডাকতে থাকে।

” স্যার?স্যার?”

কিন্তু অনেকবার ডাকার পরেও যখন আকাশের কোন সাড়াশব্দ আরোশী শুনতে পেলোনা তখন আরোশী তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকলো।এবার আকাশ চোখ খুললো।

” কোন সমস্যা আরোশী?” ঘুম ঘুম চোখ জিজ্ঞেস করলো আকাশ।

” স্যার আপনি রুমে গিয়ে আহিরের সাথে ঘুমিয়ে পড়ুন।একা থাকলে আবার আহির ভয় পাবে।”

আরোশীর কথা শুনে আকাশ আর কোন কথা বাড়ালোনা।চুপচাপ বালিশটা নিয়ে রুমে গিয়ে আহিরের পাশে শুয়ে পড়লো।আরোশীও আর কোন কথা না বলে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।

পরেরদিন সকালবেলা,

আজও কাজ থাকাই আকাশ তাড়াতাড়ি অফিস চলে গিয়েছে।আরোশী আহিরকে স্কুলের জন্য তৈরি করিয়ে দিয়ে নিজে তৈরি হচ্ছে কারণ আহির বায়না করেছে সে নাকি আজ আরোশীর সাথে স্কুলে যাবে তাই আরোশীও আর মানা করেনি আহিরকে।

ক্লাসে আহিরকে ঢুকিয়ে দিয়ে যেই পেছন ফিরে আরোশী চলে যাবে তখন একজন মহিলা তার সামনে এসে দাঁড়ালো।

” আপনি ওই আহির নামের বাচ্চাটাকে চেনেন?”

” জ্বি চিনি কিন্তু কেন?আহির কি কিছু করেছে?”

” আপনিই কি তাহলে ওর মা?”

” আরে না না আমি ওর মা নয়।আমি ওকে দেখাশোনা করে থাকি।”

” ও আচ্ছা তাই বলুন।তা আপনি কি করে এই বাচ্চার দেখাশোনা করেন?আপনি কি করে যে এই বাচ্চাকে দেখাশোনা করেন আমি সেটাই ভাবছি।”

” কেন?কি হয়েছে?”

” কি হয়নি সেটা বলুন।কি অদ্ভুত একটা বাচ্চা।কারো সাথে কথা বলেনা,খেলাধুলার করেনা সবসময় ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকে।তার বাবাকেও শুধু হাতেগোনা কয়েকবার দেখেছি।কিন্তু তার মাকে তো কোনদিনও দেখিনি।প্রতিদিন তো ড্রাইবার দিয়ে যায় দেখলাম।তা ওর মা কোথায়?আপনি তো ওর দেখাশোনা করেন ওর মাকে দেখেছেন?দেখতে কেমন?আদৌ ওর মা আছে তো?আর ওর বাবাই বা কেমন?কোনদিন তো আজ পর্যন্ত কোন স্কুল ফাংশনে আসতে দেখলাম না,এমনকি প্যারেন্টস মিটিংও না।কি অদ্ভুত ফ্যামেলি।আপনি কি করে এই বাচ্চার দেখাশোনা করেন বলুন তো?আমি চলে হলে তো একদিন যেয়ে আর যেতামই না।”

আরোশী একবার জানালা দিয়ে আহিরকে দেখে কোন কথা না বলে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলো।সারা রাস্তা আরোশী মহিলাটার কথা চিন্তা করতে করতে এসেছে।বাড়িতে এসে আরোশী প্রথমে শিলার কাছে আসে।

” শিলা আপু তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।সত্যি করে বলবে তো?”

” কি কথা আরোশী?”

” আহিরের মা কে?আর উনিই বা এখন কোথায়?আমি এসেছি পর্যন্ত তো এই বাড়িতে তুমি ছাড়া আর কোন মেয়েকে দেখতে পেলাম না।বাড়িতে কি আর কেউ থাকেনা।”

” আমি জানিনা আরোশী।আমি এখানে কাজ করছি বেশি হলে একবছর হবে।আমিও তোমার মতো প্রথম প্রথম অবাক হতাম কিন্তু স্যারকে জিজ্ঞেস করার সাহস হয়ে উঠেনি।আমি জানিনা আহিরের মা কে,স্যারের স্ত্রী কে আর না জানি স্যারের পরিবারে কে কে আছেন।”

শিলার উওর শুনে আরোশী হতাশ হয়ে রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে আরোশী চিন্তা করছে কি করে আহিরের মা সম্পর্কে জানা যাবে।হুট করে আরোশীর মাথায় একজনের নাম এলো।আরোশী আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি সেই ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বললো।আরোশীর কেন যেন মনে হচ্ছে এবার সে তার প্রশ্নের উওর পাবে।

সোফায় বসে আছে অভ্র।আরোশী রান্নাঘর থেকে খাবার এসে টেবিলে রেখে অভ্রের মুখোমুখি হয়ে বসলো।

” আপু আমাকে হুট করে আসতে বললেন যে?কোন সমস্যা হয়েছে কি?”

” না ভাইয়া কোন সমান হয়নি।আমি এখানে আসতে বলেছি আসলে আমার কিছু জানার ছিলো।আমার মনে হয়েছিলো আপনিই আমাকে তার উওর দিতে পারবেন।তাই আপনাকে আসতে বললাম।”

” প্রশ্ন?কি ধরনের প্রশ্ন আপু?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করলো অভ্র।

” আহির সম্পর্কে প্রশ্ন।”

” আহির?কেন কি করেছে ও?”

” আহির কিছু করেনি।আপনি আমাকে আগে এটা বলুন এই বাড়ি আমি আর শিলা আপু ছাড়া আর কে কে থাকেন?”

” এটা আবার কোন ধরণের প্রশ্ন আপু?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অভ্র।

” আপনি বলুন না।”

” আপনারা দুজন ছাড়া এখানে আকাশ আর আহির থাকে।”

” কেন?আর কেউ কেন থাকেনা?”

” আর কেউ মানে?আর কেউ কেন থাকবে?অন্যকারো কি থাকার কথা ছিলো নাকি?”

” থাকার কথা নয় কি ভাইয়া?”

” কার থাকার কথা?আর কার না থাকাতে আপনি এতো অবাক হচ্ছেন?”

” আমার মতে আরো অনেকজনের এই বাড়িতে থাকার কথা।তারা নেই এটা দেখিই অবাক হচ্ছি আমি।”

” কার থাকার কথা?আর আপনি এসব কি বলছেন আপু?আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছেনা।”

” আমি আহিরের মায়ের কথা বলছি।আহিরের মা বা স্যারের স্ত্রী কোথায়?আমি এসেছি পর্যন্ত তো একদিনও ওনাকে দেখলাম না।এমনকি আহিরের মাকে ওর স্কুলের কেউ পর্যন্ত দেখেনি।আর স্যারের কি আর কেউ নেই?মানে বাবা,মা,ভাই,বোন?আচ্ছা তাদের কথা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু স্যারের স্ত্রী,উনি কোথায়?”

” আমি জানিনা।” এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললো অভ্র।অভ্রের হাবভাব দেখে আরোশী বুঝতে পেরে গিয়েছে অভ্র সব কিছু জানে।

” আমি জানি ভাইয়া আপনি সবকিছু জানেন।প্লিজ বলুন আমাকে আহিরের মা কোথায়?উনিই বা কোথায়?স্যার আর ওনার মধ্যে কি কোন সমস্যা হয়েছে।দেখুন ভাইয়া আমি এসব জিজ্ঞেস করছি শুধু মাত্র আহিরের জন্য।কারণ আমাকে জানতে তো হবে ওর পরিবার কিরকম।পরিবারের কোন সমস্যা ওর উপর প্রভাব ফেলছে কিনা,তাই ভাইয়া প্লিজ আমাকে বলুন।”

” আমি কিছু জানিনা।আমার কিছু কাজ আছে,আমি আসছি।”

আরোশীকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্র চলে গেলো।আরোশী শতবার ডেকেও তাকে আটকাতে পারলোনা।

চলবে…..