অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-১৪

0
698

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” আরোশী কি হয়েছে তোমার?ঠিক আছো তো তুমি?”

” ফেরি আন্টি কি হয়েছে তোমার?” চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো আহির।আরোশী মাথা নাড়িয়ে তাদের কিছু হয়নি বললো।কারণ সে তো আর বলতে পারবে না সে কি শুনেছে।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরষ্কার দেওয়ার পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।আহির পুরুষ্কার হিসেবে মোটামুটি বড় সাইজের একটা রঙ বক্স পেয়েছে।পুরুষ্কার পেয়ে তো আহির বেজায় খুশি।

” হ্যালো মিষ্টার আকাশ।”

আকাশ পেছন ফিরে দেখে আহিরের ক্লাস টিচার মিস লিমা দাঁড়িয়ে আছেন।

” হ্যালো মিস লিমা।কেমন আছেন আপনি?”

” আমি বেশ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?”

” আমিও ভালো আছি।”

” বেশ অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম।আহির তো এবার ড্রইং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে আর সে বেশ ভালোই করেছে।আপনি এভাবেই ওকে সার্পোট করতে থাকুন।আশা করি সে বাকি বাচ্চাদের মতো নরমাল বিহেভ করবে।”

” হুম টিচার আমি এখন আহিরকে যথাসাধ্য সময় দেওয়ার চেষ্টা করছি।তবে আহিরের এই প্রাপ্তির পেছনে আর নয় বরং আরোশীর অবদান বেশিই।সেই আহিরকে উৎসাহিত করেছে এবং তাকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করছে।”

” বাহ্ তাহলে তো খুবই ভালো।তো মিস আরোশী কোথায়?”

” এইতো আরোশী।আরোশী,উনি হচ্ছে মিস লিমা।আহিরের ক্লাস টিচার।”

” হ্যালো টিচার।”

” আহিরের মধ্যে আমি অনেক পরিবর্তন লক্ষ করছি বেশ কিছুদিন ধরে।আগে সে সবসময় চুপচাপ বসে থাকতো,কোন কিছুতেই সে ছিলোনা।সবসময় একা থাকতো।কিন্তু এখন সে কিছু জিজ্ঞেস করলে মোটামুটি ভালোই উওর দিতে পারে,এখন সে অন্য বাচ্চাদের সাথেও মিশছে আস্তে আস্তে।মিস্টার আকাশের কথা অনুযায়ী আপনিই ওকে সাহায্য করছেন নরমাল বিহেভ করার জন্য।আশা করি আহির ভবিষ্যতে আরো বিভিন্ন কিছুতে অংশগ্রহণ করবে।”

” আমি চেষ্টা করবো যেন ও সবকিছুতে অংশগ্রহণ করে।”

টিচার আকাশের সাথে আরো দু’একটা কথা বলে চলে যান।

অনুষ্ঠান শেষে আরোশী ভেবেছিলো তারা বাড়ি যাবে এখন কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে আকাশ একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি থামালো।

” স্যার রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি দাঁড় করালেন যে?”

” আজ যেহেতু আমি সারাদিন আহিরের সাথে থাকবো চিন্তা করেছি তাই ভাবলাম আজ বাইরেই দুপুরের খাওয়াদাওয়াটা করি।”

” তাহলে আপনি আহিরকে নিয়ে ভিতরে যান,আমি রিকশা নিয়ে চলে যাবো।”

” না না এটা তো হচ্ছে না।তুমিও যাবে আমাদের সাথে।”

” কিন্তু স্যার আমি আপনাদের পারসোনাল টাইমের মধ্যে কি করবো?”

” না আমি কোন কথা শুনছিনা।তোমাকে যেতেই হবে।”

আকাশের জোড়াজুড়িতে আরোশী না পেরে তাদের সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো।দৌড়ঝাঁপ করার কারণে ক্লান্তিতে আহির অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।আরোশী আহিরকে ঘুম থেকে তুললো।ঘুম ঘুম চোখে আহির গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।আকাশ আহিরকে কোলে তুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।

” স্যার আপনি খাবার অর্ডার করুন,আমি আহিরকে মুখ ধুয়ে আনছি।ঘুম ঘুম ভাব থাকলে সে কিছুই খেতে পারবেনা।”

আরোশী আহিরকে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর এসে তারা দেখলো খাবার অলরেডি চলে এসেছে।আরোশী আহিরকে খাইয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আহির নাকি এখন নিজ হাতেই খাবে তাই আরোশীও আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর খাবার মাঝেই আহির বলে উঠলো,

” বাবাই,ফেরি আন্টি ওনারা কি করছেন?”

আহিরের ইশারার দিকে আরোশী তাকিয়েই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।

” সবজায়গায় এদের এতো প্রেম কেন বুঝিনা।আঙ্কেল জ্ঞান কিছু নেই।এরা হয়তো ভুলে যায় তারা পাবলিক প্লেসে আছে নাকি নিজের বাড়িতে।” বিরবির করে বললো আরোশী।

” ও কিছু না আহির তুমি তোমার খাবারটা খাও।”

” হ্যাঁ আহির বাবু তুমি তাড়াতাড়ি খাবারটা খাও,নয়তো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।”

” ওই আঙ্কেলটা আন্টিকে খাইয়ে দিচ্ছে কেন?বাবাই তুমি কেন ফেরি আন্টিকে খাইয়ে দিচ্ছো না?”

আহিরের কথা শুনে আকাশ বিষম খেলো।সে তাড়াতাড়ি পানির খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।আকাশ বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে আরোশীর দিকে তাকালো।আহিরের কথা আর আকাশের তাকানো দেখে আরোশী অস্বস্তিকে পড়ে গেলো।

” আব….আহির আসলে ওই আন্টিটা অসুস্থ তো তাই ওনাকে খাইয়ে দিচ্ছে।তুমি ওদিকে দেখোনা,তুমি তোমার খাবারটা খাও।”

আরোশী আরো কিছু কথা বলে আহিরকে কোনভাবে বোঝাতে সক্ষম হলো।আরোশী একপলক আকাশের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো।
____________________________________________

কলিংবেলের শব্দ শুনে আরোশী দরজা খুলতে গেলো।

” আরে অভ্র ভাইয়া যে।আজ এতোদিন পর।তা কি মনে করে এলেন?”

” আমি কি এই বাসায় আসতে পারিনা আপু?” বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বললো অভ্র।অভ্রের কথা শুনে আরোশী তাড়াতাড়ি বললো,

” আরে ভাইয়া আমি সেরকম করে বলিনি।এটা তো আপনার বন্ধুর বাসা,আপনি যখন হচ্ছে আসতে পারেন।আমি বোঝাতে চেয়েছি যে আপনি তো সহজে এখানে আসেন না,আজ এলেন তাই বললাম।”

” আসলে আমার বাসায় কেউ নেই।মা গিয়েছে আমার দূর সম্পর্কের এক খালার বাসায় বেড়াতে।তো বাড়িতে তো আমি এখন একা,ভালো লাগছিলোনা।আমি যখনই বাসায় একা থাকি আমি এই বাসায় চলে আসি।আকাশ আর আহিরের সাথে আমার সময়টা খু্ব ভালো করে কেটে যায়।”

” আরে কথায় মাঝে তো আপনাকে ভেতরে আসতে বলতেই ভুলে গেলাম।ভেতরে আসুন ভাইয়া।”

অভ্র ভেতরে এসে সোফায় বসলো।আরোশী রান্নাঘর থেকে অভ্রের জন্য শরবত বানিয়ে নিয়ে এলো।শরবতের গ্লাসটা নিতে নিতে অভ্র বললো,

” আপু আপনি একদম ঠিক জিনিসটা এনেছেন।আমার এখন এটাই দরকার ছিলো।কি গরমটাই না পরেছে এখন,এতটুকু পথ হেঁটে পুরো গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে।”

” আপনাকে দেখেই তা বুঝতে পেরেছিলাম।তাই তো এটা নিয়ে এলাম।হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে বানিয়েছে শিলা আপু,আপনার ভালো লাগবে খেতে।”

আরোশীর কাছ থেকে গ্লাসটা নিয়ে কিছুটা শরবত খেয়ে অভ্র প্রশ্ন করলো,

” আকাশ আর আহির কোথায়?কাউকেই দেখছিনা।বাড়িতে নেই নাকি?”

” না আছে তো সবাই।স্যার আর আহির রুমেই আছে।আপনি বসুন আমি ডেকে আনছি।”

আরোশী রুমে ঢুকে দেখলো আহির ঘুমিয়ে আছে।আরোশী গিয়ে তার গায়ে কাঁথা দিয়ে দিলো।আশেপাশে তাকিয়ে আকাশকে কোথাও দেখতে পেলোনা আরোশী।ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে যখন দেখলো দরজা খুলছেনা তখন বুঝলো আকাশ ওয়াশরুমে।আরোশী কিছু না বলে চলে আসবে তখন আকাশের ফোনটা বেজে উঠলো।আরোশী ধরবে কি ধরবে না চিন্তা করতে করতেই ফোন কেটে গেলো।আরোশী যখন বের হওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনই আবারো ফোনটা বেজে উঠলো।এবার আরোশী দরজায় নক করে আহিরকে ডাকলো।

” স্যার আপনার ফোন বাজছে।”

” থাক।আমি এসে দেখবো।” ভেতরে থেকে উওর দিলো আকাশ।আরোশীও আর কিছু বললোনা।সে চলে যেতে চেও গেলোনা কারণ ফোনটা বিরতিহীন ভাবে বেজে চলেছে।ফোনের শব্দ শুনে আহির জেগে যাবে,এদিকে আকাশও বের হচ্ছে তাই উপায় না পেয়ে আরোশীই ফোনটা রিসিভ করলো।রিসিভ করে আরোশী কিছু বলবে কিন্তু অপরপাশের কথা শুনে সে থমকে গেলো।

” আরে অভ্র যে,অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম।কেমন আছো তুমি?আর তোমার মা কেমন আছেন?”

” সবাই ভালো আছে আপু।তুমি কেমন আছো?খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক ভাবে করো তো?”

” তা আর বলতে।তুমি তো জানোই স্যার কত ভালো।উনি থাকতে তোমার মনে হয় আমার কোন সমস্যা হবে।তো তুমি এই সময় এখানে যে?কোন সমস্যা?”

” সমস্যা মানে,বিরাট সমস্যা।আমার প্রাণের আম্মাজান মানে তোমার খালা আমার কোন দূর সম্পর্কের এক খালার বাসায় গিয়ে বেড়াতে।”

” তো তুমি গেলে না যে?”

” আরে আমি কি যেতে চাইনি ভেবেছো?আমি চেয়েছিলাম তো যেতে,মাকে কত করে বলেছি ‘ আম্মাজান তুমি আমাকে একা এই ভুত প্রসাদে ফেলে কি করে যেতে পারো?তোমার কি আমার জন্য,তোমার এই নাদান,অবুঝ শিশুর জন্য কি তোমার একটুও দয়া হয়না।”

” খালা এরপর কি বললো?” উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো শিলা।

” বললো ‘ না হয়না,তোর মতো দমরা ছেলের জন্য আবার কিসের দয়া মায়া?যা চুপচাপ বসে থাক,আমাকে ডির্স্টাব করিস না।”

” কিন্তু খালা কেন আপনাকে নিয়ে গেলোনা?”

এরপর অভ্র যা বললো তা শুনে শিলা হাসবে না কান্না করবে সেটাই বুঝতে উঠতে পারছেনা।

চলবে…..