অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-১৭

0
688

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

হাতে চোট লাগার কারণে চামচ দিয়ে খাবার খাচ্ছে আরোশী।আকাশ এটা খেয়াল করে প্রশ্ন করলো,

” কি হয়েছে আরোশী?কোন সমস্যা?”

” কোথায় স্যার?কিছু তো হয়নি।”

” না তুমি চামচ দিয়ে খাবার খাচ্ছো তাই জিজ্ঞেস করলাম।এতোদিন তোমাকে দেখছি এর আগে তো তোমাকে চামচ দিয়ে খেতে দেখিনি তাই জিজ্ঞেস করলাম।হাতে কি কিছু হয়েছে?”

” ওই আসলে রিকশার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম।” হাতের দিকে তাকিয়ে বললো আরোশী।

” কিভাবে হলো!একটু সাবধানে হাঁটতে পারোনা।এরকম অসাবধানতার সাথে চলাফেরা করলে কি হয়।ভাগ্য ভালো রিকশার সাথে ধাক্কা লেগেছে।রিক্সা না হয়ে অন্যকিছু হলে তখন কি হতো একবারো ভেবে দেখেছো।” চিন্তিত সুরে বললো আকাশ।

” কিছু হয়নি আমার।আমি একদম ঠিক আছি,আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।এগুলো আমার কাছে নতুন নয়।ছোট থেকেই কত পড়েছি,এসবে আমার এখন খুব একটা কষ্ট লাগেনা।আপনি আর আহির খেয়ে নিন,আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে।”

প্লেটটা ধুয়ে রেখে আরোশী রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।

” একি স্যার।আপনি এই সময়।”

” এই নাও।তোমার রুমে তো ফার্স্ট এড বক্স নেই আর একটা ব্যান্ডেজ বেশিক্ষণ ব্যবহার করা ঠিক নয়।তাই মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ চেইঞ্জ করে নাও।”

আরোশী আকাশের হাত থেকে বক্সটা নিয়ে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।
____________________________________________

আহিরকে প্রাইভেটে দিয়ে আরোশী পাশেই একটা শপিং মলে এসেছে।কিছুদিন আগে আকাশ তাকে তার মাইনে দিয়েছে।আরোশী চিন্তা করেছে যেহেতু তার এখন খুব একটা খরচ নেই তাই সে তার মাইনের টাকা থেকে আহিরের জন্য কিছু কিনে তাকে উপহার হিসেবে দেবে।যার জন্যই আরোশীর এখানে আসা।

আরোশী প্রথমে একটা পুতুলের দোকানে এলো।খুঁজে দেখার পর আরোশীর একটা পুতুল পছন্দ করলো যার মাথাটা লাভ সেইপের।আরোশী কাউন্টারে গিয়ে বললো পুতুলটা যেন প্যাক করে রাখে সে সেকেন্ড ফ্লোর থেকে আসছে।

সেইম দোকানের সেকেন্ড ফ্লোরে গিয়ে আরোশী আহিরের জন্য একটা প্যান্ট আর একটা টি-শার্ট কিনে নিলো।

” এই নিন।এগুলো এবং ওই পুতুলটা প্যাক করে দিন।”

” সরি মেডাম,পুতুলটা এখন সোল্ড আউট।”

” সোল্ড আউট মানে?আমি একটু আগেই তো পুতুলটা কাউন্টারে দিয়ে গেলাম।আমি তো যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলাম ওটা প্যাক করে রাখতে আমি সব একসাথে বিল পে করবো।আর পুতুল কোথায় সোল্ড আউট,ওই যে আমি দেখতে পাচ্ছি আপনার পেছনেই তো আছে।”

” সরি মেম,পুতুলটা আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।উনি আমাদের অলরেডি পে করে দিয়েছেন।”

” পে করেছে বলেই হলো নাকি।আমি আগে বলেছি তার মানে পুতুলটা আমার।আপনি কি করে সেটা অন্য আরেকজনকে বিক্রি করতে পারেন?”

” সরি মেম।আসলে আমি জানতাম না এটা আপনি বুক করে গিয়েছেন।তাই আমি ওনার কাছে এটা বিক্রি করে দিয়েছি।”

” আমি কিছু শুনতে চায় না।এই নিন টাকা,পুতুলটা আমাকে দিন।ওনাকে অন্যকোন পুতুল নিতে বলুন।” টাকাটা টেবিলের উপরের বললো আরোশী।

” এক্সকিউজ মি,আমার পুতুলটা দিন।”

কাউন্টারে থাকা মেয়েটা একবার আরোশীর দিকে তাকিয়ে পুতুলটা প্যাক করে যেই লোকটা হাতে দেবে তার আগেই আরোশী মেয়েটার হাত থেকে প্যাকেটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় মারলো।যাওয়ার সময় সে চিৎকার করে বললো,

” পুতুলের টাকা কিন্তু টেবিলে আছে।”

আরোশীর হঠাৎ আচমকিক এই ঘটনায় কাউন্টারে থাকা মেয়েটা এবং লোকটা দু’জনেই অবাক হয়ে গেলো।

” সরি স্যার।আমি আসলে বুঝতে পারিনি উনি এরকমটা করবেন।আই এম রিয়েলি স্যরি।আপনি প্লিজ রাগ করবেন না।আপনি আমাদের একদিন সময় দিন আমরা সেইম পুতুল আপনাকে কালকের মধ্যেই এনে দেবো।”

” ঠিক আছে।” দরজার দিকে তাকিয়ে উপর দিলো লোকটা।
___________________________________________

বেল বাজানোর শব্দ শুনে নিজের কাপড়গুলো গুছিয়ে রেখে বেড়িয়ে এলো আরোশী।কিন্তু রুম থেকে বেরিয়ে কয়েক পা এগোতেই সে থমকে গেলো,তার মনের মধ্যে হুট করেই ভয় দানা বাঁধতে শুরু করলো।সে এখান থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কয়েকজন লোক বসে আছেন কিন্তু ভয়ের কারণ হচ্ছে লোকগুলো পুলিশের ড্রেস পড়ে আছে মানে তারা পুলিশের লোক।

” পুলিশ কেন এসেছে?ওই লোকটা কি পুতুল ছিনিয়ে নেওয়ার কারণে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করেছে?কিন্তু আমি তো সামান্য একটা পুতুলই তো ছিনিয়ে এনেছিলাম আর আমি তো টাকাও দিয়ে এসেছি।তাহলে?”

এরই মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকতার চোখ পড়লো আরোশীর উপর।তিনি আকাশকে কিছু একটা বলছেন,আকাশ পেছন ফিরে আরোশীকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,

” আরোশী এদিকে এসো।”

আকাশের কথা শুনে আরোশীর বুক কেঁপে উঠলো।তার হাত-পা ভয়ে কাঁপা শুরু করে দিয়েছে।সে ভয়ে ভয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে দাঁড়ালো।

” স্যার উনি হচ্ছেন আরোশী।আমার ছেলে আহিরের দেখাশোনা করে।”

” ও আই সি।তো মিস্টার আকাশ যেটার জন্য এসেছিলাম সেটা রেডি তো?”

” জ্বি স্যার।প্রমাণ সব আমার কাছে আছে।”

” কোন প্রমাণের কথা বলছে ওরা?আবার এটা নয়তো ওই দোকানের সিসিটিভি ফুটোজ নিয়ে এনারা কথা বলছেন।তাহলে কি আমাকে এই সামান্য কারণে পুলিশ নিয়ে যাবে?” মনে মনে বললো আরোশী।

” এই নিন স্যার এই পেইন ড্রাইভে সব প্রমাণ আছে।আপনি ওকে ধরেছেন তো?”

” হুম আমরা কালকেই ওই মেয়েকে ধরে ফেলেছি।কোর্টে কেইস ফাইল করার আগে প্রমাণ দরকার,তার জন্যই আপনার কাছে আসা।”

” প্রমাণ তো আমি আপনাকে দিয়ে দিলাম।আশা করি আপনি ওর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।”

” আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”

পুলিশের লোক দুজন চলে গেলো।তারা চলে যাওয়ার এক মিনিট পরেই অভ্র হুরমুর করে বাড়িতে ঢুকে এলো।

” কি বলছেন ওনারা?ওকে পেয়েছে?”

” হুম কালকেই ধরেছে ওকে।তুই তখন ভেতরে কেন এলি না?তুই ওনাদের সাথে কথা বললে আরো ভালো হতো।”

” না বাবা তার দরকার নেই।এমনিতেই আমার মানসম্মান অর্ধেক শেষ,আমি এখন বাকিটাও খোয়াতে চাইনা।”

” আচ্ছা তোর ইচ্ছে।তুই বস,আমি রেডি হয়ে আসছি।একসাথে অফিসে যাবো।”

আকাশ চলে যাওয়ার পর আরোশী অভ্রের কাছে এলো কারন সে বুঝতে পারছেনা বাসায় পুলিশ কেন এসেছিলো।

” ভাইয়া পুলিশ কেন এসেছিলো আপনি জানেন?আর উনারা কোন প্রমাণের কথা বলছিলো?”

অভ্র আরোশীর দিকে একবার তাকিয়ে তারপর সোফায় আরাম করে বসলো।

” আপু আপনার মনে আছে কিছুদিন আগে আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আকাশের কোন গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা।তারপর সেই ফোন কল।মনে আছে?”

” হুম।”

” আচ্ছা আপনার মনে আছে আমাদের সাথে আপনার প্রথম দেখা কিভাবে হয়েছে?”

” মনে থাকবেনা আবার।”

” সেদিন যে মেয়েটাকে মানে আপনাকে রাইমা মনে করে আকাশ তুলে নিয়ে গিয়েছিলো কালকে পুলিশ রাইমাকে এরেস্ট করেছে।”

” কি বলছেন!কিন্তু কেন?”

” কারণ সে মোটেও ভালো না।সে ফেসবুকে ছেলের সাথে প্রেমের নাটক করে তাদের সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়।ওকে ধরার জন্যই আকাশ এতোদিন ওর সাথে মিথ্যা প্রেমের নাটক করছিলো।ওইদিন ফোনে ওটা রাইমাই ছিলো।আকাশ এতোদিন ওর আশেপাশে থেকে প্রমাণ জোগাড় করছিলো।”

অভ্রের কথা শুনে আরোশীর মুখ হা হয়ে গেলো।সে ভাবতেও পারেনি আকাশ এতো চালাক বের হবে।সে এতোদিন ভাবতো আকাশ শান্তশিষ্ট,নরম মনের মানুষ কিন্তু আজকের ঘটনাতে সে প্রমাণ পেয়ে গিয়েছে আকাশ আসলে যেরকম দেখায় সে আসলে সেরকম নয়।

পরেরদিন,

শিলা আজকে পুরো বাড়িটা পরিষ্কার করবে।আরোশীর যেহেতু তেমন একটা কাজ নেই তাই সেও শিলাকে সাহায্য করছে।শিলা নিচের রুম গুলো পরিষ্কার করছে আর আরোশী প্রথমে আহিরের রুমটাই পরিষ্কার করা করছে।পরিষ্কার করতে করতে হঠাৎ করেই বিছানার নিচ থেকে আরোশী একটা ডাইরি পেলো।হালকা হালকা ধুলো জমেছে ডাইরির উপর,তার মানে এটা এখানে পড়েছে বেশিদিন হয়নি।আরোশী ডাইরিটা উল্টেপাল্টে লেখাগুলো দেখে বুঝতে পারলো এগুলো আকাশের লেখা।আরোশী ভালো করে কিছু দেখবে কিন্তু তার আগেই ধম করে একটা শব্দ হলো।শব্দ শুনে আরোশীর হাত থেকে হুট করেই ডাইরিটা পড়ে গেলো।

চলবে……