অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-২২

0
646

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” এই শোন।তোমার নাম কি জেনো?”

” আরোশী।”

” ও হ্যাঁ।তাহলে তুমিই ওই ছেলের দেখাশোনা করো।”

ইলার কথা বলার ধরণ যদিও আরোশীর ভালো লাগেনি তাও সে চুপচাপ তা হজম করছে।

” জ্বি।”

” ও আচ্ছা তার মানে তো তুমি বলতে গেলে এই বাড়িতে কাজ করো।আচ্ছা যাও আমার জন্য কড়া করে এক কাপ কফি করে নিয়ে এসো তো।কাজ করে শরীর পুরো ব্যথা করছে।আর শোন চিনি কম দেবে।”

আরোশী কিছু না বলে চুপচাপ আবারো রান্নাঘরে চলে এলো।কারণ যতই হোক ইলা এই বাড়ির অতিথি আর সে এখানে কাজ করতে এসেছে তাই শুধু শুধু ঝামেলা না করাই ভালো।

ইলা সোফা বসে মোবাইল দেখছিলো তখন তার মনে হলো কেউ তাকে দেখছে।ইলা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দেখলো আহির কিরকম করে যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” এই ছেলে এভাবে কি দেখছিস?”

” তুমি আমার ফেরি আন্টিকে পঁচা কথা বলছে কেন?” রাগ নিয়ে বললো আহির।

” বাবা,এই বয়সে এতো তেজ।এই আমি তোর ফেরি আন্টি কি পঁচা কথা বলেছি?”

” তুমি কেন আমার ফেরি আন্টির সাথে ওভাবে কথা বললে?কেন তুমি আমার ফেরি আন্টি কাজ করতে বললে?তোমার খেতে ইচ্ছে করলে তুমি বানিয়ে আনবে আমার ফেরি আন্টিকে কেন বললে?” কোমড়ে হাত দিয়ে বললো আহির।

” ওকে বলবো না তো কাকে বলবো?ওকে কি মাইনে এমনি এমনি দিয়ে দেবে নাকি?মাসে মাসে যে টাকা নিয়ে যায় তো কাজ করবে না।”

ইলার কথার পুরোটা আহিরের বোধগম্য হলো না তবুও সে তার কথা অনড়।

” তুমি কেন আমার ফেরি আন্টিকে পঁচা কথা বললে?তুমি পঁচা,পঁচা আন্টি তুমি।”

” চুপ কর অসভ্য ছেলে।”

” আহির কি হয়েছে?এভাবে কথা বলছো কেন?”

আকাশকে দেখে আহির দৌড়ে তার কাছে চলে গেলো।

” বাবাই দেখো না এই পঁচা আন্টিটা আমাকে বকেছে আর ফেরি আন্টিকেও পঁচা কথা বলেছে।”

” ইলা তোমাকে কি বলেছে আহির?”

আহির কিছু বলবে তার আগেই ইলা তাকে থামিয়ে দিলো।

” ও কিছু না আকাশ।ছোট বাচ্চা,কি না কি বুঝে।তুমি এসব চিন্তা করোনা।আমরা তো মজা করছিলাম।আহির সোনা তুমি এসো,আন্টির কাছে এসো।তোমাকে আমি কার্টুন দেখাবো।” খুবই মিষ্টি করে বললো ইলা কিন্তু আহির আকাশের পাশে থেকে একপাও নড়লো না।আকাশ যখন দেখলো আহির যাচ্ছে না তখন সে আহিরকে কোলে নিয়ে ইলার পাশে বসিয়ে দিলো।আহির মুখ গম্ভীর করে সোফায় বসে রইলো।

এরই মধ্যে আরোশী কফি নিয়ে এলো।যদিও বা আরোশী কফি বানাইনি,এটা বানিয়েছে শিলা।ইলা কফিতে চুমুক দিতেই তার মুখে বিরক্তির চাপ দেখা গেলো।কারণ কফিতে চিনি দেওয়া আছে।সে বিরক্তি নিয়ে আরোশী দিকে তাকিয়ে চুপচাপ কফিটা খেয়ে নিলো।কারণ আকাশ আছে,এখন কিছু বললে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

রাতে,

প্রতিদিনের মতো শিলা টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে রাখছে আর আরোশী তাকে টুকটাক সাহায্য করছে।টেবিলে একা আকাশ বসে আছে।খাবার সব পরিবেশন করা হলে আরোশী উপরে যায় আহিরকে নিয়ে আসতে।আহিরকে নিচে নামিয়ে এনে যেই তাকে চেয়ারে বসতে দেবে তখনই ইলা সেটাতে বসে পড়লো।ইলার কর্মকান্ডে সবাই তার দিকে তাকিয়ে রইলো।সবার এভাবে তাকানো দেখে ইলা হেসে জিজ্ঞেস করলো,

” এভাবে কি দেখছো?আমি কি কোন এলিয়েন নাকি?”

আহির গম্ভীর মুখ করে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে কারণ সে আকাশের পাশে বসেছে।

” ইলা তুমি উঠে অন্যকোন চেয়ারে বসো।”

” কিন্তু কেন আকু বেপি?এটা বসলে কি সমস্যা?”

” এটাতে আহির বসে।”

” তো কি হয়েছে?আজ না হয় সে অন্যকোন চেয়ারে বসবে।”

” স্যার উনি বসুক ওখানে,আহির বরং আজ অন্যকোন চেয়ারে বসবে।চেয়ারই তো,একদিন অন্যকোনটাতে বসলে কি হবে,তাই না আহির?চলো আজ তুমি আমার চেয়ারে বসবে।”

আরোশীর কথা আহির কোন উওর দিলোনা,সে এখনো গম্ভীর ভাবে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে।ইলার এই চেয়ারে বসাটা যে আহির সহ্য করতে পারছেনা তা আকাশ বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।তাই সে আরোশীর কথা গুরুত্ব না দিয়ে বললো,

” ইলা এখানে আরো অনেক চেয়ার খালি আছে,তুমি অন্যকোনটাতে গিয়ে বসো।এটাতে আহির বসবে।”

” ইলা উঠে চলে এসো।” উপর থেকে নামতে নামতে বললেন মিসেস সামিরা।ইলা রেগে অন্য একটা চেয়ারে গিয়ে বসলে।মিসেস সামিরা ইলার পাশে থাকা চেয়ারটাতে বসলো।ইলা রাগে ফেটে যাচ্ছে,মিসেস সামিরা তার হাত ধরে চোখের ইশারায় তাকে শান্ত হতে বললেন।ইলা উঠে যেতেই আহিরের মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো।সে দৌড়ে সে আকাশের পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়লো।

” আমি চলে এসেছি।”

আকাশের বাম পাশে থাকা চেয়ারটাতে ধপ করে বসে বললো অভ্র।এতোক্ষণ উপরেই ছিলো অভ্র।অফিসের সব কাজ গুছিয়ে সে নিচে নেমেছে।

” কি হলো?সবার মুখ এরকম কেন?কলা থুরি ইলা তোমার আবার কি হয়েছে?আচ্ছা যাই হবে হোক শিলা আপু তাড়াতাড়ি খাবার দাও তো,আমার খুব জোর খিদে পেয়েছে।”

সবাই নিজের মতো করে খাবার খাচ্ছে।শিলা যার যেটা প্রয়োজন এগিয়ে দিচ্ছে,আরোশী আহিরের পাশে দাঁড়িয়ে তার যেটা দরকার তা দিচ্ছে।

খেতে খেতে হঠাৎ অভ্র অনুভব করলো তার পায়ে সুরসুরি লাগছে।পোকা মনে করে অভ্র পা ঝাড়া দিয়ে আবারো খেতে মনোযোগ দিলো কিন্তু আবারো সে পায়ে সুরসুরি অনুভব করলো।অভ্র এবার নিচে উঁকি দিয়ে যা দেখলো তাতে তার বিষম খাওয়া উপক্রম।ইলা তার পা দিয়ে অভ্রের পায়ে সুরসুরি দিচ্ছে।অভ্র মাথা উঁচু করে দেখলো ইলা প্লেটের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।এবার অভ্রও উল্টো ইলার পায়ে খোঁচা দিতে লাগলো।এই খোঁচাখুঁচির মধ্যে হুট করে আকাশ চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

” অভ্র এতো পা নাড়াচ্ছিস কেন?ছোট বাচ্চা নাকি তুই?শান্ত হয়ে বস।”

আকাশের কথা শুনে অভ্র ইলা দুজনেই দ্রুত পা সরিয়ে নিলো।অভ্র ইলার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো কিন্তু ইলা মুখ বেঁকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

আহির বাদে সবার খাওয়া শেষ।মিসেস সামিরা কারে সাথে কোন কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গিয়েছেন।অভ্র ইলার পাশে এসে নিচু স্বরে বললো,

” তোমার পা গুলো কিন্তু খুবই নরম,একদম বাটারের মতো।”

অভ্রের কথা শুনে ইলা তারদিকে রেগে থাকালো।ইলা যখন দেখলো আকাশ এদিকেই আসছে সে দৌড়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো।

” যা বাবা এটা কি হলো?নিজেই আমাকে খোঁচা দিলো আর এখন নিজেই রাগ দেখাচ্ছে।”

” আকু বেপি চলো না আমরা সিনেমা দেখি ল্যাপটপে।”

” না ইলা এখন তা সম্ভব নয়।আমার অনেক কাজ আছে আর তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হবে,কাল অফিস আছে।তুমিও রেস্ট নাও,অনেক ধকল গিয়েছে।গুড নাইট।” এরপর অভ্রের দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো, ” তুই আজ থাকবি এখানে?”

” না,আজ থাকবো না।মা বাড়িতে একা।আমি এখুনি চলে যাবো।”

” তাহলে সাবধানে যাস আর কাল সময় মতো চলে আসিস।” উপরে যেতে যেতে আকাশ আরোশীকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” আরোশী আহিরকে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিও কাল কিন্তু ওকে স্কুলে যেতে হবে।”
____________________________________________

অফিসে বসে ফাইল চেক করছে আকাশ।এরই মধ্যে তার সেক্রেটারি নাইরা দরজা নক না করেই ভেতরে ঢুকে পড়লো।

” স্যার?”

” হুম।”

” মিস্টার রুদ্র আপনার সাথে দেখা করতে এসেছেন।”

” মিস্টার রুদ্র?হঠাৎ এই সময়?”

” জানিনা আমি।”

” আচ্ছা ওনাকে ভিতরে পাঠিয়ে দাও।”

” হ্যালো মিস্টার আকাশ।”

” হ্যালো মিস্টার রুদ্র।কেমন আছেন?”

” আমি ভালো আছি।আপনি?”

” জ্বি আমিও ভালো আছি।তো আজ হঠাৎ কি মনে করে আমার অফিসে এলেন?”

” আসলে প্রেজেক্ট নিয়ে কিছু কথা বলার ছিলো।”

” ও আচ্ছা।”

” তো বাড়ির সবাই কেমন আছে?আহির সুস্থ আছে তো এখন?”

” হুম,আহিরের পা এখন পুরোটাই ঠিক আছে।”

” খুব ভালো লাগলো শুনে।আরোশী কেমন আছে?অনেকদিন ওনার সাথে দেখা হয়নি।”

রুদ্রের হুট করে আরোশীর কথা জিজ্ঞেস করাটা আকাশের ঠিক খুব একটা পছন্দ হলোনা,তাও সে সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে হেসে জবাব দিলো,

” হুম সেও ঠিক আছে।আচ্ছা চলুন তাহলে কাজের কথায় আছি।”

চলবে…..