#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” হ্যালো বেবি,কেমন আছো তুমি?”
” কেন ফোন দিয়েছো?তোমাকে না বলেছি আমাকে ফোন দেবে না।দরকার হলে আমিই তোমাকে ফোন দেবো।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ সেটা আমার মনে আছে কিন্তু আমার এখন তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই তোমাকে ফোন দিলাম।”
” তা না হয় ঠিক আছে কিন্তু এভাবে হুটহাট ফোন দেবে না।কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।”
” আরে কিছু হবে না।আমাকে কেউ ধরতেও পারবে না।”
” তাও সাবধানের মার নেই।যদি কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পেয়ে যায় তাহলে সব প্ল্যান শেষ।”
” আরে কিছু হবে না।তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো।আচ্ছা সেসব বাদ দাও কেমন আছো সেটা বলো।”
” আমি ভালো তো আছি।যদি প্ল্যান মতো সব কাজ হয় তাহলে আরো ভালো থাকবো।”
” তুমি একদম চিন্তা করো না।সব প্ল্যান মতোই হবে।”
” তোমাকে যে কাজটা করতে বলেছি ওটা ঠিকঠাক করছো তো?”
” আমি তো চেষ্টা করছি কিন্তু….. ”
” কিন্তু কি?কেউ সন্দেহ করেনি তো?”
” আরে না না সন্দেহ করেনি কিন্তু ওই বাচ্চাটা বারবার আমার কাজের মাঝখানে চলে আসছে।আমি যখনি ওর কাছে কাছে থাকতে চায় বাচ্চাটা কোন না কোনভাবে তাতে বাঁধা দেয়।”
” যদি বেশি গরবর করে তাহলে ওকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দাও।যেভাবেই হোক কাজ কিন্তু হতেই হবে।”
” তুমি একদম চিন্তা করোনা বেবি সব একদম আমাদের প্ল্যান মতোই হবে।কিন্তু বেবি আমাদের এই প্ল্যানটা যদি কোনভাবে কাজ না করে?”
” সেটার চিন্তাও তুমি করোনা প্ল্যান বি তো আছেই।”
” ইলা।”
হুট করে মিসেস সামিরার কন্ঠ শুনে ইলা ঘাবড়ে যায়।
” এইরে সব শুনে ফেললো না তো?না না এটা হতে পারে না।আমাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে।”
ইলা ফোনটা কেটে নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসিমুখে মিসেস সামিরার দিকে তাকালো।
” আরে আন্টি তুমি।বসো বসো।”
” কার সাথে কথা বলছিলে?”
” ওই আসলে আমার একটা ফ্রেন্ডের সাথে।আসলে অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলাম তো।তাই ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলো।”
” ও আচ্ছা।”
” আরে আন্টি দাঁড়িয়ে আছো কেন,বসো বসো।”
মিসেস সামিরাকে বিছানায় বসিয়ে ইলা তার পাশে বসলো।
” আন্টি তুমি আমাকে কি বলেছিলে মনে আছে তো?তুমি যেটা বলেছিলে সেটা হবে তো?”
” তুমি চিন্তা কারো না ইলা,আমি যখন বলেছি তখন আমি কথার খেলাপ করবো না।”
” কিন্তু আন্টি হবে তো?ও যদি আবার বেঁকে বসে?”
” তুমি চিন্তা করো না ইলা।সব ঠিকঠাক হবে।তুমি শুধু তোমার কাজে মনোযোগ দাও।বাকিগুলো আমি দেখে নেবো।”
” ও…আন্টি থাংক ইউ সো মাচ।তুমি কত ভালো,আমাকে কত ভালোবাসো।” মিসেস সামিরাকে জরিয়ে ধরে বললো ইলা।মিসেস সামিরা ইলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।মিসেস সামিরা যেতেই ইলা হেসে নিজেই নিজেকে বললো,
” আন্টি তুমি না খু্বই বোকা।কত সহজে আমাকে বিশ্বাস করে নিলে।কিন্তু তুমি তো আর জানো না আমি নিজের বিপদকে নিজেই ঘরে তুলে এনেছে।হাহাহা…..”
মিসেস সামিরা যখন ইলার রুমে থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যাবেন তখন তিনি দেখলেন আরোশী সিঁড়ি দিয়ে নামছে।
” এই শোন।”
পেছন ফিরে মিসেস সামিরাকে দেখে আরোশী একটু ঘাবড়ে যায়।কারণ এসেছে পর্যন্ত মিসেস সামিরাকে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে দেখেনি।কেমন যেন সবসময় চুপচাপ গম্ভীর হয়ে থাকেন।
” কি হলো শুনতে পাচ্ছো না নাকি?”
” জ্বি,জ্বি বলুন।”
” আমার জন্য একটা চা করে রুমে নিয়ে এসো।”
” আচ্ছা।”
” আর শোন চা কিন্তু তুমিই নিয়ে আসবে।”
মাথা নাড়িয়ে আরোশী দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গিয়ে শিলাকে বললো চা বানিয়ে দিতে।কারণ এই বাড়িতে আহিরের কাজ ছাড়া বাকি কোন কাজ আরোশী খুব একটা করেনা।চা বানানো শেষ হলে আরোশী সেটা নিয়ে উপরে এলো।
” ম্যাডাম আসবো?”
” হুম এসো।”
” আপনার চা।”
মিসেস সামিরা চা টা হাতে নিলে আরোশী চলে যেতে পা বাড়ালো কিন্তু মিসেস সামিরা তাকে থামিয়ে দিয়ে রাগী স্বরে বললেন,
” আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?”
” না।”
” তাহলে চলে যাচ্ছো কেন?আমি যেহেতু তোমাকে আসতে বলেছি নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।তাই নয় কি?”
” আপনি কি কিছু বলবেন ম্যাডাম?”
” এখানে কাজ করো কতদিন হবে?মানে ওই বাচ্চার দেখাশোনা করো কতদিন ধরে?”
” ২/৩ মাস হবে।”
” হুম।তো এতোদিন বাচ্চাটার সাথে থেকে কি বুঝতে পারলে?মানে বাচ্চাটা কি ধরণের?”
মিসেস সামিরার এই ধরণের প্রশ্ন শুনে আরোশী কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো।
” উনি এই অদ্ভুত ধরনের প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছেন?আমার থেকে তো ওনার আরো ভালো করে জানা দরকার আহির কেমন,তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?” মনে মনে নিজে প্রশ্ন করলো আরোশী।
” কি হলো উওর দাও।”
” আব….আহির খুব ভালো ছেলে ম্যাডাম।শান্তশিষ্ট,ভদ্র।সবাইকে যথেষ্ট সম্মান করে সে।”
” দেখবো এই নম্র,ভদ্র কত দিন থাকে।একদিন ঠিক পিঠে ছুড়ি মারবে।সেদিন যদি আমার ছেলেটার শিক্ষা হয়।বলেছিলাম ওকে ওর মায়ের কাছেই পাঠিয়ে দে কিন্তু না আমার ছেলে তো মহান,সে তো আবার দয়ার সাগর।যত্তসব।নিজের ভালো পাগলও বোঝে কিন্তু আমার ছেলে….।” বিরবির করে বললেন মিসেস সামিরা।
” ম্যাডাম কিছু বললেন?”
” না,কিছু না।যাও তুমি এখন।”
আরোশী মিসেস সামিরার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।তার কাছে মিসেস সামিরার ব্যবহার কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকছে।
___________________________________________
দরজা খুলে রুদ্রকে দেখে চমকে যায় আরোশী।নিজেকে শান্ত করে সে হাসিমুখে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনি!হঠাৎ এই এখানে?”
” বাইরে দাঁড় করিয়ে সব জিজ্ঞেস করবে নাকি ভেতরেও আসতে দেবে?”
” আরে না না আপনি আসুন।বসুন।আপনি বসুন আমি এখুনি আসছি।”
আরোশী রান্নাঘরে গিয়ে শিলাকে রুদ্রের জন্য খাবার তৈরি করতে বলে তার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।
” এই নিন পানি।”
” ও থাংক ইউ আরোশী।”
” আপনি কি স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছেন?কিন্তু উনি তো বাড়িতে নেই।”
” ও আচ্ছা।সমস্যা নেই,আমি বরং তোমার সাথেই দেখা করে যায়।তো কেমন আছো তুমি?অনেক দিন পর দেখলাম তোমাকে।আমাকে তো ভুলেই গিয়েছো।”
” না মানে……”
” হাহাহা…..আরে আমি তো মজা করছিলাম।আহির কোথায়?”
” স্কুলে গিয়েছে।”
এরই মধ্যে শিলা খাবার নিয়ে এলো রুদ্রের জন্য।
” আরে এতো কিছু করার কোন প্রয়োজন ছিলো না।”
” আপনি স্যারের বাড়িতে এসেছেন।আপনাকে আপ্যায়ন না করলে কি হয়।নিন খেয়ে নিন।”
রুদ্র মুচকি হেসে চায়ের কাপটা তুলে নিলো।এরই মধ্যে ইলা নিচে নেমে এলো।ইলাকে দেখে রুদ্র কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলো,একইভাবে ইলাও রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তাদের এই তাকানোটা আরোশী ঠিকই খেয়াল করেছে।
” কেমন আছো ইলা?শুটিং কেমন হলো?”
” ভালো।”
” দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।”
ইলা রুদ্রের সামনে থাকা সোফায় বসলো।
” কেমন আছো তুমি?কাজ কেমন চলছে?”
” হুম ভালো।”
” শুনলাম আকাশের সাথে নাকি নতুন প্রেজেক্টএ কাজ করছো।”
” হুম ঠিকই শুনেছো।কিছুদিন পর কাজে হাত দেবো।”
” বেশ ভালো।তো মডেল আছে তোমার নাকি আমি কিছু সাহায্য করবো?”
ইলার কথা শুনে রুদ্র বাঁকা হেসে তাকে উওর দিলো,
” আমাকে মডেল খুঁজতে হয় না বরং তারা আমার কাছে আসে।আচ্ছা সেসব বাদ দাও এটা বলো তুমি এখানে কি করছো?”
” কিছু কাজ আছে তাই আছি এখানে।” অদ্ভুতভাবে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে উওর দিলো ইলা।ইলার উওর শুনে রুদ্র একটা হাসি দিয়ে তার থেকে চোখ সরিয়ে আরোশীর দিকে তাকালো।
” আরোশী এই নাও।” একটা প্যাকেট আরোশীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো রুদ্র।
” কি এটা?আর আমাকে কেন দিচ্ছেন?”
” ইচ্ছে হলো তাই দিচ্ছি।এখন বেশি কথা না বলে নাও তো।”
আরোশী ইতস্তত হয়ে প্যাকেটটা নিলো।প্যাকেট খুলে দেখলো তাতে একটা কালো এবং একটা সাদা রঙের জামা এবং ছোট বাচ্চাদের এক সেট কাপড়।
” এগুলো…… ”
” চুপচাপ রেখে দাও।আমি আর এগুলো ফেরত নিচ্ছি না।”
আরোশী হতাশাজনক দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকালো।রুদ্র প্রতিবারের মতো হেসে জিজ্ঞেস করলো,
” পছন্দ হয়েছে?”
” হুম।” মিষ্টি করে হেসে জবাব দিলো আরোশী।এদিকে ইলা তীক্ষ্মদৃষ্টিতে আরোশীর দিকে তাকিয়ে আছে।শুধু ইলা নয় উপর থেকে মিসেস সামিরাও এসব দেখছে।
চলবে……