#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
রুদ্রের বাড়িতে এসেছে আকাশ আর আরোশী।তাদের এখানে আসার মূল কারণ হচ্ছে রুদ্রকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া।হ্যাঁ আরোশী আকাশের প্রস্তাবে রাজি আছে।আকাশ ভেবেছিলো আরোশী রাজি হবে না কিন্তু সে রাজি হওয়াতে আকাশের মনের মধ্যে থেকে একটা বড় পাথর নেমে গেলো।
” বাহ্ আজ আপনারা আমার বাড়িতে।আশা করিনি যে আপনারাও কখনো আসবেন।” নাস্তার ট্রে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো রুদ্র।
” আরে মিস্টার রুদ্র এসবের কি দরকার ছিলো।” আকাশ বললো।
” এই প্রথম আপনারা আমার বাড়িতে এসেছেন একটু অতিথি আপ্যায়ন না করলে কি হয়।আমি বানিয়েছি বলে এটা ভাববেন না খেতে খারাপ হবে,আমি কিন্তু বেশ ভালো চা বানাতে পারি।” একটু রসিকতার সুরে বললো রুদ্র। ” তো আজ হঠাৎ কি মনে করে আমার বাড়িতে আসা হলো?”
আরোশী নিজের ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে টেবিলে রাখলো।কার্ডটা দেখে রুদ্র মুচকি হেসে সেটা তুলে নিলো।
” তাহলে আপনারা বিয়েটা করেই নিচ্ছেন।” প্রতিবারের মতো এবারো হেসেই জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।
” হুম।সামনের শুক্রবারেই।”
” নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন।”
” ধন্যবাদ।তাহলে আজ আমরা আসছি,বিয়েতে আসবেন কিন্তু।”
” অবশ্যই।”
আকাশ আর আরোশী উঠে চলে যেতে লাগলো।রুদ্র তাদের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসেছে।সোফায় বসে বিয়ের কার্ডটা দেখছে রুদ্র।কোথাও কি তার একটা খারাপ লাগা কাজ করছে?হ্যাঁ রুদ্রের একটু হলেও খারাপ লাগছে তার কারণ হলো আরোশী।আরোশীর সাথে রুদ্রের খুব বেশি কথা বা দেখা না হলেও যতবার দেখা হয়েছে তাতেই সে আরোশীর ব্যবহার দেখে একটু হলেও তার প্রতি আর্কষণ অনুভব করেছে।হয়তো সেই আর্কষণের জন্যই তার খারাপ লাগছে।
রুদ্রের বাড়ি থেকে বের হয়ে আকাশ গাড়ি নিয়ে সোজা শপিং মলে এসেছে।
” এখানে কেন?”
” বিয়ের জন্য যা কেনার কিনে নাও।বের যখন হয়েছি তখন একেবারেই সব কাজ শেষ করে যাওয়া বেটার আর সময়ও তো বেশি নেই।তুমি যাও আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।”
আরোশী গাড়ি থেকে বের হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আকাশের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
” কি হলো তুমি এখনো যাওনি।”
” আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।চলুন।”
আকাশ আরোশীকে নিয়ে প্রথমে একটা শাড়ির দোকানে গেলো।আকাশ দোকানদারকে দামী কিছু দেখাতে বললে আরোশী বারণ করে দিলো।তার মতে এতো টাকা খরচ করার দরকার নেই।এতো দাম দিয়ে কিনলে সেটা শুধু একদিনই পড়া হবে,শুধু শুধু সেটা আলমারিতে থেকে নষ্ট হবে।আরোশীর কথা শুনে আকাশও আর কিছু বললো না।সে আরোশীকে তার পছন্দ মতো কেনার সুযোগ করে দিলো।যেহেতু সেই পড়বে তাই সে যেটাতে কমফোর্টেবল সেটাই কিনুক।আরোশী মাঝারি দামে সুন্দর দেখতে তিনটে শাড়ি নিলো।এরপর তারা ছোট বাচ্চাদের দোকানে গিয়ে আহিরের জন্যও কিছু কিনলো।সর্বশেষ বের হওয়ার আগে আকাশ দুটো পাঞ্জাবি নিলো।
” কিছু খাবে?”
” না।সকালে খেয়েছি তো বেশি সময় হয়নি।”
” আচ্ছা তাহলে চলো,বাসায় যাওয়া যাক।”
আকাশ গাড়িটা রাস্তার ওপারে পার্ক করেছিলো।তারা যখন রাস্তা পার হবে তখন হুট করেই একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে তাদের সামনে দিয়ে চলে গেলো।আরোশী ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতেই আকাশের বুকে গিয়ে ঠেকলো।আকাশ দু’হাতে তাকে ধরলো।
” আরোশী তুমি ঠিক আছো?”
” হুম।” একটা শুকনো ঢোক গিলে উওর দিলো আরোশী।
” আজকাল কার গাড়ি চালকেরাও না।এরা পাবলিক রাস্তাটাকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে গাড়ি চালায়।চালানোর সময় আশেপাশে দেখে না।”
আকাশ আরোশীর হাত ধরে রাস্তা পার হলো।গাড়ি বসে আরোশীকে পানি খেতে দিলো আকাশ।
” এখন ঠিক আছো?”
” হুম।”
” ভয় পেয়েছিলে বুঝি?”
” হুম একটু।”
আকাশ আর কিছু বললো না।শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আরোশী বাসায় এসে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে তারপর আহিরকে তার জামাগুলো পড়িয়ে দেখলো ঠিক আছে কিনা।আহির নতুন জামা দেখে লাফালাফি না করলেও তার হাবভাব দেখে আরোশী ঠিকই বুঝতে পেরেছে সে খুশি।আরোশী হেসে একটা শাড়ির প্যাকেট নিজের কাছে রেখে আরোশী বাকিদুটো নিয়ে রুম থেকে বের হলো।
ইলার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আরোশী হাত কচলাচ্ছে।ইলার সাথে তার খুব বেশি কথা হয়নি।আসলে ইলাই কথা বলতে চায়নি আর আরোশীও তাতে খুশিই ছিলো।কারণ ইলা যখনই কথা বলতো সবসময় তাকে অপমান করার মতো কথাই বলতো।যার কারণে আরোশীও তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে।
” আসবো।”
” এসো।”
আরোশী দরজা ঠেলে ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলো।
” কেন এসেছো?” মিহি গলায় জিজ্ঞেস করলো ইলা।আরোশী অবাক হলো না খুব একটা কারণ তার মনে হচ্ছে ইলার সাথে করা কাজটার জন্য এই তো স্বাভাবিক।আরোশী একটা প্যাকেট ইলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” এখানে একটা শাড়ি আছে।বিয়ের দিন আপনি পড়ার জন্য এনেছি।এটা নিলে আমার ভালো লাগবে।”
ইলা হেসে আরোশী থেকে শাড়িটা নিলো।
” তুমি আসলেই অনেক ভালো।আকাশ ভুল কাউকে পছন্দ করেনি।আসলে কি বলো তো আমিই না একটু বেশিই আশা করে ফেলেছিলাম।দেখো আমার ভাগ্যটাই খারাপ।সব থেকেও যেটা চেয়েছি সেটা পেলাম না কিন্তু তোমার কাছে কিছু নেই তাও তুমি সেটা পেয়ে গেলে।যাক কি আর করার।”
ইলার কথা শুনে আরোশীর মন খারাপ হয়ে গেলো।সে মাথানিচু করে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো।
” আচ্ছা আমি কি বিয়েতে রাজি হয়ে ইলার সাথে অন্যায় করলাম নাতো?আমি ভুল করছি নাতো?” মনে মনে ভাবলো আরোশী।
আরোশী বেরিয়ে যেতেই ইলা দরজা বন্ধ করে দিলো।
” আজ তো তুমি বেঁচে গেলে আরোশী কিন্তু এরপর আর বাঁচার কোন চান্স নেই,আমি দেবোনা।তুমি কি ভেবেছিলে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি?কষ্ট মাই ফুট।ওকে বিয়ে করলেও দু’দিন পর ঠিকই ছেড়ে দিতাম,আমার উদ্দেশ্য তো অন্যকিছু।আর আমি আমার জিনিস ঠিক হাসিল করে নিতে জানি।”
প্যাকেট থেকে শাড়িটা বের করে মাটিতে ছুড়ে মারলো ইলা।
” দু’টাকার দামের এই শাড়ি আমাকে দিয়েছে পড়ার জন্য।” ইলা শাড়িটাতে পায়ে পিষে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” এই শাড়ির মতো আমি তোমাদেরও পিষে ফেলবো,একদম গুঁড়িয়ে দেবো।”
আরোশী আরেকটা শাড়ির প্যাকেটটা নিয়ে মিসেস সামিরার রুমের সামনে এসে নক করলো।
” কে?” গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
” আমি আরোশী।”
” তুমি এখানে কি করছো?যাও এখান থেকে।”
কিন্তু আরোশী গেলো না।সে দরজাটা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো।
” তোমাকে না বলেছি চলে যেতে তাও কেন এসেছো?”
” এই শাড়িটা আমি আপনার জন্য এনেছিলাম যদি নিতে তাহলে আমার ভালো লাগতো আর স্যারও খুশি হবেন।”
” আমি তোমার দেওয়া কোন জিনিস নেবো না।নিয়ে যাও এটা।তুমি কি ভেবেছো এসব শাড়ি দিয়ে তুমি আমার মন জয় করে নেবে?ভুলেও এটা ভেবো না।আমি এতো সহজে গলে যাওয়ার মানুষ নয়।তুমি কি ভেবেছো আমি বুঝি না তোমার মতলব কি।সব টাকা আর আকাশের নাম দেখে করছো তা কি আমি বুঝি না বুঝেছো।ওই ছেলে তো আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট করলো এখন তুমিও করবে।বুঝবে বুঝবে যেদিন এই মেয়ে আর ওই ছেলে ওকে পেছন থেকে ছুড়ি মারবে সেদিন বুঝবে মা ঠিকই বলেছিলো।”
আরোশী মিসেস সামিরার কথার কোন উওর না দিয়ে শাড়িটা টেবিলে রেখে বেরিয়ে গেলো।
বিকেলবেলা অভ্র এসেছে বাড়িতে,আকাশই তাকে ফোন করে আসতে বলেছে।
আরোশী হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে নিচে নেমে এসে দেখলো আকাশ আর অভ্র কি যেন কথা বলছে কিন্তু আরোশীকে দেখে তারা চুপ হয়ে গেলো।
” এই নিন ভাইয়া এটা আপনার জন্য।”
” কি এটা?”
” আমি জানিনা,স্যার এনেছে।”
প্যাকেটটা নিতে নিতে অভ্র বলবো, ” বাহ্ কিছুদিন পরে বিয়ে আর এখনো স্যার,গুড।”
” শোন অভ্র বিয়ের দিন তুই কিন্তু এটা পড়ে আসবি।”
” একদম চিন্তা করবি না।আমার বস কম বন্ধুর বিয়ে আর আমি তার কথা রাখবো না তা হয় নাকি।সো নো চিন্তা।আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসছি।”
” একি ভাইয়া এখুনি চলে যাবেন?মাত্রই তো এলেন।”
” আমার কিছু কাজ আছে আপু।আর সামনে আপনাদের বিয়ে আমারও তো কত দায়িত্ব আছে নাকি।আকাশ আমি তাহলে আসছি।”
” আচ্ছা সাবধানে যাস আর কি বলেছি মনে রাখিস।”
” হুম চিন্তা করিস না।”
অভ্র চলে যেতে নিলেও কি মনে করে যেন পেছন ফিরে তাকালো।ইলা দাঁড়িয়ে আছে উপরে।অভ্র ইলার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে চলে গেলো।
চলবে…..