#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৭২: ১ম ভাগ||
১১৯.
মৈত্রী বাড়িতে আজ অনেক বছর পর লোকের সমাগম হয়েছে। ছ’জন মিলে এলাকায় যতো পরিত্যক্ত বাড়ি ছিল, সেগুলো নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করিয়ে মালিকদের আবার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে। আর মালিকের অবর্তমানে তাদের সন্তানদের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে, নিজেদের পৈতৃক বাড়িগুলো আবার পুনঃনির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। যদিও তাদের সেখানে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। তারা শুধু মৈত্রী ম্যানশনকে তাদের কোম্পানির কাজে ব্যবহার করবে। সেখানেই তাদের প্রধান অফিসটা থাকবে। কিন্তু তাদের ঠিকানা তো এখন টুইংকেল হাউজ। যদিও তারা বন্ধু, তবুও ছ’জনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মৃত্যু পর্যন্ত তারা একসাথে এই বাড়িতেই থাকবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই টুইংকেল হাউজ উপরে আরো দু’তলা বাড়ানোর জন্য কথাবার্তা চলছে। কারণ ইমনের পরিবার বড় হচ্ছে। কিছুদিন পর উপমা আর তূর্যের পরিবার বড় হবে। ইভান বিয়ে করতে পারে। তাই তারা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করছে। উপমার বাবা-মাকেও টুইংকেল হাউজে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের যেহেতু বয়স হয়েছে, এদিকে আদিল আর উপমা ছাড়া তাদের কেউই ছিল না। আর এখন তো আদিলও নেই। তাই তূর্য তাদের নিয়ে এসেছে।
এদিকে সুলতান মুন্সী আর রহমতুল্লাহর একই মাসে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ফাঁসি হয়ে গেলো। সালেহ আলী আর সুরাইয়া সেই সূত্রেই দেশে এসেছেন। সুরাইয়া নিজের ভাসুরের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত। সালেহ আলীও ছ’জনের কারো সাথেই চোখ মেলাতে পারছেন না। কিন্তু অরুণিকা সব মান ভেঙে সুরাইয়াকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। সুরাইয়া অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
“বাবুন সোনা, আমি তোমার জন্য কতো দোয়া করেছি, জানো? আল্লাহ, আমার বাবুনটার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। দেখেছো, আল্লাহ ন্যায় বিচার করেছে।”
তারপর তিনি অরুণিকার থুতনি ধরে বললেন,
“বাবুনের তো দেখছি রাজপুত্রের সাথে বিয়ে হয়েছে।”
আহনাফ কথাটি শুনে হালকা হাসলো। কেন যেন তারা ছ’জনের কেউই সালেহ আলী আর সুরাইয়ার দিকে এগিয়ে আসার সাহস পেলো না। সালেহ আলী আর সুরাইয়াই তো কলকাতার মতো অচেনা শহরে তাদের ছ’জনকে পথ দেখিয়েছিল, তাদের অবর্তমানে অরুণিকার দেখাশুনা করেছিল। তবুও যতো যাই হোক, এরা রহমতুল্লাহর আত্মীয়।
এদিকে কয়েক সপ্তাহ পর আহনাফ আর অরুণিকার বিয়ের আনুষ্ঠানিক আয়োজন শুরু হয়ে গেলো। টুইংকেল হাউজ এক সপ্তাহ আগেই সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। মরিচ বাতি, ঝাড়বাতি, দামি দামি সব বাতি লাগিয়ে পুরো এলাকা সাজিয়ে ফেলেছে আরাফ, তূর্য আর ইভান। শুধু ফুলের সাজসজ্জাগুলো বিয়ের আগের দিন করবে।
এদিকে আহনাফ সকালে অরুণিকার রুমের সামনে এসে দরজায় ঠোঁকা দেওয়ার আগেই অরুণিকা দরজা খুলে দিলো। যার ফলে আহনাফের হাতটা অরুণিকার নাকের সাথে ধাক্কা খেলো। অরুণিকা নাকে হাত দিয়ে আহনাফকে জোরে ধাক্কা দিয়ে অভিমানী সুরে বলল,
“তুমি সবসময় আমাকে মারো!”
আহনাফ দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“এই তুমি আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলে কেন? তুমি কি ভুলে যাচ্ছো, আমি তোমার বর। রেস্পেক্ট করো আমাকে।”
অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে রুমে ঢুকে বলল,
“রেস্পেক্ট করতে আমার বয়েই গেছে। আগে বলো, কেন এসেছো?”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বলল, “তোমার লাল শাড়ি আছে?”
অরুণিকা কোণা চোখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি শাড়ি পরবে?”
কথাটি বলেই আহনাফের উত্তরের অপেক্ষা না করে অরুণিকা হাসতে লাগলো৷ আহনাফ রাগী দৃষ্টিতে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে থাকায় সে আলমারী খুলে বলল,
“হ্যাঁ, আক্দের শাড়িটাই আছে। আর কোনো লাল শাড়ি নেই।”
আহনাফ কিছু না বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো। বিকেলে একটা প্যাকেট নিয়ে আহনাফ অরুণিকার ঘরে এসে বলল,
“কাল সকালেই এই শাড়ি পরে তৈরি হয়ে থাকবে।”
অরুণিকা প্যাকেট খুলে দেখলো, লাল রঙের শাড়ি। সে মুচকি হেসে ধন্যবাদ দেওয়ার আগেই আহনাফ বেরিয়ে গেলো। আর আহনাফকে আবার হনহনিয়ে চলে যেতে দেখে সে আহনাফের যাওয়ার পানে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো।
পরেরদিন ঠিক আটটায় অরুণিকা শাড়ি পরে তৈরী হয়ে নিচে নামলো। তাকে দেখেই আহনাফ ভুবন ভোলানো হাসি দিলো। অরুণিকা নিজেও জানে না, সেই হাসির মাঝে কি ছিল। সে শুধু অবাক হয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহনাফ বাইক স্টার্ট দিতেই অরুণিকা আহনাফকে ধরে বসলো। আর বলল,
“আজকে কি কোনো প্রোগ্রাম আছে?”
আহনাফ কোনো উত্তর দিলো না। সে চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে। অনেকক্ষণ তারা চুপ করেই আছে। অরুণিকা আহনাফের পিঠে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। আজকাল আহনাফের সবকিছুই তার ভালো লাগে। কেন ভালো লাগে সে নিজেও জানে না। এই মুহূর্তে আহনাফের গায়ে আতরের গন্ধটাই তাকে মোহিত করে তুলছে। সে চোখ বন্ধ করে সেটাই অনুভব করছে। অনেকক্ষণ পর আহনাফ বাইক থামালো। অরুণিকা চোখ খুলে আশেপাশে তাকালো। রাস্তাঘাট সে তেমন একটা চেনে না। তাই আহনাফের হাত ধরে সে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে, অরুণিকা সেদিকেই যাচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর আহনাফ বলল,
“চোখ বন্ধ করো। একটা সারপ্রাইজ আছে।”
অরুণিকা চোখ বড় বড় করে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল, “সত্যিই!”
“চোখগুলো ফুলিয়ে ফেলতে বলি নি। বন্ধ করতে বলেছি।”
অরুণিকা ঠোঁট ফুলিয়ে মিনমিনিয়ে বলল, “এটিটিউড!”
আহনাফ এবার তার রুমাল দিয়েই অরুণিকার চোখ বেঁধে দিতে দিতে বলল,
“চোরামি করলে সারাজীবন আফসোস করতে হবে। তাই ফাঁক দিয়েও দেখার চেষ্টা করবে না কিন্তু। চোখটা বন্ধই রাখবে।”
অরুণিকা এক গাল হেসে চোখ বন্ধ করলো। সে আহনাফের হাত ধরে এক পা এক পা হাঁটছে, আর সিঁড়ি বেয়ে নামছে। কিছু পথ আহনাফের কোলে চড়েই সে পার করেছে। অরুণিকা এবার বিরক্ত হয়ে বলল,
“মাটির ভেতরে চলে যাচ্ছো নাকি? এতো সিঁড়ি কেন সামনে?”
আহনাফ তাকে নামিয়ে দিয়ে তার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল, “কিছু শুনতে পাচ্ছো?”
অরুণিকা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলল,
“পাখির আওয়াজ, আর পানির আওয়াজ।”
আহনাফ পেছন থেকে অরুণিকার চোখটা খুলে দিয়ে বলল,
“এবার চোখ খুলে দেখো।”
অরুণিকা চোখ খুলে সামনে ঝর্ণা দেখে এক সিঁড়ি নামতে গিয়েই পিছলে পড়ার আগেই আহনাফ তার হাত ধরে ফেললো, আর বলল,
“বানরের মতো লাফাচ্ছো কেন? জায়গাটা পিচ্ছিল, দেখছো না?”
অরুণিকা আহনাফের হাত ধরে ঝর্ণার কাছে এলো। অরুণিকা কিছুক্ষণ ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ তার হাত ধরে এক পা এক পা সামনে এগুতে লাগলো। এরপর একদম ঝর্ণার পাশে থাকা পাথরের উপর অরুণিকাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আহনাফ বলল,
“আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে চাই, অরু।”
আহনাফ একটা রিং এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি কি এবার অতীত ভুলে নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে একটা নতুন জীবন শুরু করতে চাও?”
অরুণিকা হাত এগিয়ে দিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। আহনাফ তার হাতে রিংটা পরিয়ে দিয়ে পাথরের উপর উঠে দাঁড়ালো। ঝর্ণার পানি পাথরের সাথে আঘাত পেয়ে তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। আর সেই পানির ফোঁটা আহনাফের মুখের একপাশে বিন্দু বিন্দু কণার মতো জমে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। অরুণিকা হুট করে তার গালে হাত রেখে সেই পানির কণাগুলো স্পর্শ করে বলল,
“তুমি আমার ওই কথাটা মনে রেখেছো?”
আহনাফ মুচকি হেসে বলল,
“তোমার সবকিছুই আমার মনে থাকে।”
অরুণিকা মাথা নিচু করে মলিন মুখে বলল,
“ওদিন যা বলেছি, তাও?”
আহনাফ অরুণিকার মলিন মুখটা দেখে হালকা হেসে বলল,
“শুধু ঝাঁঝালো কথাগুলো ভুলে যাই।”
অরুণিকা মুচকি হেসে আহনাফকে বলল,
“আমি কি এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরবো?”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমি তো তোমারই মানুষ। অনুমতি কেন নিচ্ছো?”
অরুণিকা আহনাফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এবারও সে খুব শান্তি পাচ্ছে। আহনাফের বুকে এতো শান্তি কেন সে বুঝে উঠতে পারে না। তাহলে কি সে আহনাফকে ভালোবেসে ফেলেছে? কারণ সে শুনেছে, একমাত্র প্রিয়জনের বুকেই খুব শান্তি পাওয়া যায়। আহনাফ হয়তো ধীরে ধীরে তার খুব প্রিয়জন হয়ে উঠেছে। আর এই প্রিয়জন সব প্রিয়জন থেকে আলাদা।
১২০.
আজ আহনাফ আর অরুণিকার বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে মাস্টারমশাই, মিতুবালা আর শ্রীজাও কলকাতা থেকে এসেছেন। তারা এখনো শতাব্দীকে দেখেন নি। তারা বার-বার এদিকে ওদিক তাকিয়ে তাদের মেয়েকে খুঁজছেন। এদিকে উপমা শতাব্দীকে লেহেঙ্গা পরিয়ে দিয়ে তাহমিদকে রুমে আসতে বলল। তাহমিদ অরুণিকার ঘরে এসে শতাব্দীর হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরালো। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“আমি এই লেহেঙ্গাটা তোমার জন্য পছন্দ করেছি। কলকাতায় কোনো অনুষ্ঠান হলেই তুমি লেহেঙ্গা পরতে। তারপর আমার সামনে এসে এই পোজ ওই পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেই শতাব্দী মেয়েটা কতো চঞ্চল ছিল, তাই না?”
শতাব্দী মলিন হাসলো। তার ইচ্ছে করছে হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠে আগের মতোই তাহমিদের সামনে এসে দাঁড়াতে। কিন্তু সে পারছে না। অনেক চেষ্টা করেও সে পারছে না। শতাব্দীর চোখে পানি দেখে তাহমিদ তার চোখের পানি মুছে দিলো, তারপর তার চুলে খোঁপা করে সেই খোঁপায় কাঠ গোলাপের মালা বেঁধে দিলো। এরপর তাহমিদ নিজ হাতে শতাব্দীকে সাজিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আজ তোমার ছোট সখী, এই ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে চলে যাবে। তাই আমি তোমার জন্য আলাদা মেয়ে রেখেছি। এখন থেকে সে সবসময় তোমার পাশে থাকবে। আর আমি আমার রুমটা এই পাশে নিয়ে এসেছি। এখন তোমার পাশের ঘরে আমি আছি। মাঝখানে শুধু একটা দেয়াল মাত্র।”
শতাব্দী হাসলো। এরপর তাহমিদ তাকে নিয়ে নিচে নামলো। শতাব্দীর বাবা-মা আর বোন তাকে দেখে এগিয়ে এলেন। মেয়েকে দেখে আনন্দে তাদের চোখে জল চলে এলো। মাস্টারমশাই তাহমিদের সামনে হাতজোড় করে বললেন,
“তোমরা আমার মেয়েটাকে এতো ভালো রেখেছো যে গত চার বছরেও আমরা ওকে এতো ভালো রাখতে পারি নি।”
তাহমিদ মাস্টারমশাইয়ের হাত ধরে বলল,
“আমি আমার দায়িত্ব থেকে পিছপা হই না। শতাব্দী আমার দায়িত্ব। আমি আমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করে যাবো।”
এদিকে মাস্টারমশাই মেয়ের কাছে যেতেই মুরশিদ জুবাইয়ের ভাগ্নের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“এবার তুমিও নিজের বিয়েটা সেড়ে নাও। তুমি যদি বলো, আমি আর তোমার মামী মিলে তোমার জন্য মেয়ে দেখবো।”
তাহমিদ মুচকি হেসে বললো,
“আমি তো এখনো বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা করি নি। আমি এভাবেই ভালো আছি।”
“কিভাবে ভালো আছো?”
“আমি শতাব্দীর সাথে ভালো আছি। আমার পাঁচটা বন্ধু, একটা মাত্র অরুণিকা, আর শতাব্দী, এটাই আমার সংসার।”
মুরশিদ জুবাইয়ের ভ্রূ কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“এটা কি বলছো তুমি, তাহমিদ? তুমি ভালোভাবেই জানো, শতাব্দী কখনো সুস্থ হবে না। ওর রোগটা ভালো হওয়ার মতো নয়।”
“আমি ওর সাথে এভাবেই ভালো আছি, মামা। ও সুস্থ হবে, কি হবে না, আমি সেই আশায় নেই। ও আমার সাথে আছে, এটাই অনেক।”
“শতাব্দীর যদি কিছু হয়ে যায়?”
“আমি এতোদূর ভাবি নি, মামা। আমি এখন আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চাই না। অনেক বেশি ভেবে ফেলেছিলাম। তাই আজ শতাব্দীর এই পরিণতি। ওর এই অবস্থার জন্য আমিও কোনো না কোনো অংশে দায়ী।”
“তাই বলে বিয়ে না করে তুমি একা কিভাবে থাকবে? তোমার বংশ!”
তাহমিদ হেসে বলল,
“মামা, অরুণিকাই আমার বংশ। আমার সবকিছু ওর নামে।”
“যাই বলো, আহনাফ তোমার আপন ভাই নয়। এতো বিশ্বাস করে কি তুমি ঠিক করছো?”
তাহমিদ মুচকি হেসে বলল,
“আমাদের ছ’জনের সম্পর্ক আত্মার। আর এই সম্পর্কে আমি অন্ধবিশ্বাস রাখতে পারি। কারণ এই সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু অরুণিকাতেই সমাপ্ত।”
অনেক দিন পর আবার পথ চলতে গিয়েই সানায়া আর ইভানের দেখা হয়ে গেলো। সানায়া ইভানকে দেখেই হালকা হেসে কুশল বিনিময় করলো। ইভানও ঠোঁটে হাসি রেখেই সানায়ার সাথে কথা বললো। কথার মাঝখানে ইভান বলল,
“চলো, আমরা কোথাও বসি।”
সানায়া কথাটা শুনে ইভানকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল,
“অন্যদিন। আজ আমার কাজ আছে।”
“আচ্ছা। ঠিক আছে।”
সানায়া হালকা হেসে সামনে এগুতেই ইভান সানায়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার ভাইয়ার বাচ্চার কি অবস্থা?”
সানায়া হেসে বলল,
“রাহির একটা ছেলে হয়েছে। ওরা এখন আমাদের বাসায়ই আছে।”
“আর তুমি!”
সানায়া ভ্রূ কুঁচকে বলল, “আমি কি?”
ইভান ইতস্তত ফেলে বলেই ফেললো,
“আগের কথাগুলো কি ভুলে যাওয়া সম্ভব না?”
সানায়া মলিন হেসে বলল,
“আমি তো অনেক আগেই সব ভুলে গেছি।”
ইভান এবার হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তাহলে আমরা কি আবার বন্ধু হতে পারি?”
সানায়া ইভানের হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইভান সানায়ার ইতস্তত ভাব দেখে বলল,
“এবার আর কোনো মিথ্যেমিথ্যি চলবে না।”
সানায়া মুচকি হাসলো। সে আর অপেক্ষা করালো না। ইভানের হাত ধরে বলল,
“আমি তো এই বন্ধুত্বটা ফেলতে পারি না।”
ইভানও মুচকি হাসলো। ইভানের কাছে এই মেয়েটা সব মেয়েদের চেয়ে আলাদা। তাই তো মেয়েটার কাছেই সে ফিরে আসতে বাধ্য হলো। সে জানে না, সে সানায়াকে ভালোবাসে কিনা। কিন্তু যখন তার কাছে থাকতো, তখন সে ভালোই থাকতো। তখন একবারও তার মনে হয় নি, এই সব প্রতিশোধের কারণেই করছে। তাই হয়তো এই কয়েক মাসে সে অনেক অনুতপ্ত ছিল। সাহিলের মৃত্যুতে এই অনুতাপ যেন আরো বেড়ে গেছে।
এদিকে শাহেদ মির্জা সাহিলের একমাত্র শেষ চিহ্ন সায়িম মির্জার নামে তার পুরো সম্পত্তির অর্ধেক অংশ লিখে দিয়েছেন। বাকী অর্ধেক অংশ সানায়ার নামে করেছেন। সানায়া এখন মির্জা গ্রুপের নতুন এম.ডি। ব্যবসা নিয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাই তাকে সবকিছু শেখানো হচ্ছে। সাহিল নিজেও চাইতো, তার অবর্তমানে সানায়ায় যাতে সব দায়িত্ব নেয়। এদিকে সাবার সাথে শাহেদ মির্জার পছন্দ করার ছেলের বিয়ে হয়ে যায়। তারা আগের মতোই নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে। শুধু সাহিলের স্থানটিই এখন শূণ্য রয়ে গেছে।
এদিকে বিয়ের পর দিন থেকে প্রতিদিনই রাতে অরুণিকাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় আহনাফ, আর তাদের সঙ্গ দেয় আহনাফের শখের বাইক। তাদের বিয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেছে। এই দুই সপ্তাহ অরুণিকার চরম প্রশান্তির সাথে কেটেছে। বিয়ে নামক সম্পর্কটা যে এতো সুন্দর হয়, তা আহনাফকে বিয়ে না করলে সে কখনোই বুঝতো না। আজও প্রতিদিনের মতোই সে আহনাফের সাথে বের হয়েছে। কিন্তু আজ বাইক থামলো একটা নদীর পাড়ে। অরুণিকা বাইক থেকে নেমে আহনাফের হাত ধরে বলল, “এখানে এতো অন্ধকার?”
আহনাফ বলল, “কেন তুমি ভয় পাচ্ছো?”
অরুণিকা মুচকি হাসলো। সে কিছু বললো না। শুধু আহনাফের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে রেখে বুঝিয়ে দিলো, এই মানুষটা পাশে থাকলে তার কোনো ভয় নেই। অনেকক্ষণ তারা নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে ছিল। আহনাফ হঠাৎ তার কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“তুমি আমার পাশে থাকলে সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়? আমি কতো বছর এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম জানো?”
অরুণিকা দম আটকে রেখেছে। ইদানিং আহনাফ তাকে স্পর্শ করলেই তার অদ্ভুত অনুভূতি হয়। তখন অনিচ্ছায় সে তার শ্বাস আটকে রাখে। মনে হয় শ্বাস ছাড়লেই আহনাফ তার অস্থিরতা বুঝে ফেলবে। আহনাফ অরুণিকার কোনো শব্দ না পেয়ে তার কাঁধ থেকে মাথা তুলে বলল,
“চুপ করে আছো কেন?”
অরুণিকা শ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলল,
“তুমি কি আমাকে কথা বলতে দিচ্ছো?”
আহনাফ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
“আমি কি তোমার মুখে সেলাই করে দিয়েছি?”
অরুণিকা হুট করে বলে ফেললো,
“আহনাফ, তুমি আমাকে স্পর্শ করলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”
অরুণিকা কথাটি বলে খেয়াল করলো আহনাফ অনেকক্ষণ ধরেই চুপ করে আছে। অন্ধকারে তার মুখ বোঝা যাচ্ছে না, তাই সে আহনাফের প্রতিক্রিয়া দেখতে পারছে না। শুধু আহনাফের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেলো। এই দীর্ঘশ্বাসটাই অরুণিকার মনে প্রশ্ন সৃষ্টি করলো। আহনাফ কি তার কথায় কষ্ট পেয়েছে? এভাবে বলাটা কি সুন্দর হয়েছে? হয়তো ও সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথাটা বলতে পারে নি। অরুণিকা তো সেই স্পর্শকে বিরক্তি বোঝাতে চায় নি, ভালো লাগা থেকেই দম বন্ধ হয়ে আসা বুঝিয়েছে। আহনাফ কি তাহলে উল্টোটা বুঝেছে?
আহনাফ অরুণিকার কাছ থেকে একটু দূরত্ব রেখে বসলো, আর বলল,
“সরি, আমি একটু বেশিই আগাচ্ছি। আচ্ছা, চলো। বাসায় ফেরা যাক।”
আহনাফ হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো। অরুণিকা আহনাফকে উঠতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আহনাফ তার বাইকের দিকে পা বাড়াতেই অরুণিকা চোখ বন্ধ করে জোর গলায় বলে উঠল,
“আমি হয়তো তোমাকে ভালোবাসি, আহনাফ।”
আহনাফ থমকে দাঁড়ালো। অরুণিকা আবছায়ার মধ্যে আহনাফকে কয়েক হাত দূরে দেখে দৌঁড়ে তার কাছে এসে তার হাত ধরে বলল,
“আমাকে ওখানে ফেলে এসেছো কেন?”
আহনাফ বলল,
“একটু আগে কি বলেছিলে?”
“ওখানে ফেলে এসেছো কেন, সেটাই জিজ্ঞেস করেছি। কানে শুনতে পাও নি নাকি?”
আহনাফ হালকা হাসলো। সে বাইকে উঠতেই অরুণিকা বাইকে উঠে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি এর আগে কি বলেছি তুমি শুনে ফেলেছো, তাই না?”
আহনাফ অরুণিকার কথায় শব্দ করে হাসলো। অরুণিকা নিজের বোকা বোকা কথায় নিজেই লজ্জা পেলো। আহনাফ এবার বাইক স্টার্ট দিলো। অরুণিকা বুঝতে পারছে না, আহনাফ কিছু বলছে না কেন। সে বারবার চাইছে আহনাফ নিজ থেকে বলুক, সে অরুণিকাকে ভালোবাসে। তারপর অরুণিকাও বলবে। আগে আগে বলে তার ছ্যাকা খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। হঠাৎ আহনাফ তার বাইক থামালো। অরুণিকা চমকে উঠে বলল,
“রাস্তার মাঝখানে কেন থেমেছো? তোমার শখের বাইক কি অক্কা পেয়েছে?”
আহনাফ অরুণিকার হাত ধরে তাকে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করালো। তারপর হেলমেট খুলে, অরুণিকার হেলমেটটি খুলে নিলো। এরপর অরুণিকাকে তার সামনে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“বাইক না, আমার কষ্টগুলো অক্কা পেয়েছে।”
তারপর অরুণিকার হাত ধরে তাকে নিজের আরো কাছে টেনে এনে বলল,
“আমি যখন প্রথম তোমাকে বাইকে করে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় ঘুরতাম, তুমি তখন ঠিক এই জায়গায় বসে আমার বুকের সাথে লেপ্টে থাকতে। আমি এরও অনেক আগে থেকে তোমাকে আমার এই খালি বুকটাই জায়গা দিয়ে ফেলেছিলাম। আমি সেই সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট্ট অরুণিকার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম, আর আমার চোখ সেদিনই তোমাকে মনে বসিয়ে ফেলেছিল। সেই ছয় মাসের ছোট্ট অরুণিকার ছোট ছোট আঙ্গুল ধরে ভেবেছিলাম, এই মেয়েটা বড় হয়ে আমার বউ হবে? কি অদ্ভুত, তাই না? আমি সেই আট বছরের অরুণিকার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, যখন সে দূর্গা বিসর্জনের দিন হারিয়ে যাওয়ার পর আমার কাছে ছুটে এসে, আমার গলা জড়িয়ে ধরে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে, আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, আমি সেই মেয়েটাকেই সেইদিন আমার অনেক প্রিয় জায়গাটা দিয়ে ফেলেছিলাম। তোমাকে আমি ঠিক কখন থেকে ভালোবাসতে শুরু করেছি, আমি জানি না। কিন্তু তুমি আমার খুব শখের মানুষ ছিলে, অরু, যাকে আমি এই হাতে কোলে নিয়েছি, এই হাতেই খাইয়ে দিয়েছি, এই হাতেই বড় করেছি, আর এখন এই হাতটাই তার জন্য এগিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, অরু। ভালোবাসা কি সেটা জানার পর থেকেই তোমাকে ভালোবাসি।”
অরুণিকা শক্ত করে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি, আহনাফ। হয়তো আমার ভালোবাসতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি ভালো তো এখন বেসেই ফেলেছি।”
আহনাফ অরুণিকার কপালে তার ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলল,
“আজকের এই নিস্তব্ধ পথ আর এই অন্ধকার রাত, আমার নতুন জীবনের সাক্ষী। আজ থেকে আমি আমার অরুকে আমার মতো করে পাবো।”
চলবে—
#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৭২: ২য় ভাগ||
#অন্তিম_পর্ব
১২১.
এক বছর পর। গিটারে সুর তুলে উৎসুক দর্শকের ভীড়ে গান গাইছে সবার প্রিয় গায়ক, রিকি দা স্টার। দর্শকদের হাতে রিকির ছবিযুক্ত পোস্টার। সবাই রিকির নাম ধরে সমস্বরে চিৎকার করছে। রিকি নিজের এলবামের অনেকগুলো গান গাইলো। উপমা আজও তার ভক্ত বেশে কনসার্টে এসেছে। তূর্যের এই নিয়ে চার বার বাংলাদেশে কনসার্ট হয়েছে। আর উপমা প্রতিবারই টিকেট কেটে কনসার্ট দেখতে চলে আসে। উপমা নিজেকে আবার রিকির পুরোনী ভক্ত হিসেবে ফিরে পেয়েছে। সে তূর্যের স্ত্রী কম, রিকির ভক্তই একটু বেশি। আর এখন তূর্য আহমেদ রিকি নামেই সর্বাধিক পরিচিত। সে মৈত্রী গ্রুপের সব দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে এসেছে। ব্যবসার প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই। তার আগ্রহ শুধু সঙ্গীত প্রাঙ্গণে। একটু পর রিকি আরেকটা গান গাওয়া শুরু করলো।
“একটু যদি তাকাও তুমি, মেঘগুলো হয় সোনা
আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছো না?
একই আকাশ মাথার ওপর, এক কেন ভাবছো না?
আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছো না?
আসবে বলে ওই যে দেখ মেঘেরা দাঁড়িয়ে,
আকাশটাকে দেখি চলো মেঘটাকে তাড়িয়ে
মেঘের মতো হাঁটবো দু’জন, হাত কেন রাখছো না
আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছো না?
.
চলো দু’জন স্বপ্ন দেখি এক অনুভব নিয়ে
যা কিছু আজ মনের মতো, আনবো যে ছিনিয়ে
আমার মতো কেন তুমি মন খুলে রাখছো না?
আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছো না?”
এই গানটা গাওয়া শেষ হতেই সবাই রিকির নাম ধরে তাকে উৎসাহ দিতে লাগলো। কারণ অনেকদিন পর রিকি তার এলবামের বাইরে অন্য শিল্পীর গান গেয়েছে। এদিকে তূর্য গানটি গাওয়ার পর দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা উপমার দিকে তাকালো। তূর্য হেসে বলল,
“এই গানটা আমার খুব স্পেশাল ভক্তের জন্য, যে আমার কন্ঠে এই গান শুনে অনেক শান্তি পায়। এই গানটা আমার খুব প্রিয় গান। আমি যখন কলকাতায় প্রথম অডিশন দিতে যাই, এই গানটা গেয়েই আমি বাদ পড়েছিলাম। যখন প্রথম আমার সুরটা কারো চোখে পড়েছিল, তখনও আমি এই গানটাই সুর দিয়েছিলাম। আবার এই গানটাই আমি প্রথম ইউটিউবে আপলোড করে আপনাদের প্রিয় রিকি দা স্টার হয়েছি।”
তূর্য কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তার কন্ঠে গানটি ধরলো,
“কারণে-অকারণে, নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত জোছনা নিলাম।
নিয়মে-অনিয়মে, দহনে বা ধারণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো, বাঁ পাশেই ছিলাম।
চোখে জল নোনা কি? নিয়ে গেল জোনাকি,
কেন আমি পথে একা দাঁড়িয়ে?
আলোদের পিয়নে.. সোডিয়াম নিয়নে যেন
সবই কোথায় হারিয়ে……
আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি, তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই…
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে, তোমায় চেয়েছি পুরোটাই।
আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি… তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই,
এমন সাধের পৃথিবীতে তোমায় চেয়েছি পুরোটাই, পুরোটাই…”
তূর্য গান গাইতে গাইতেই মঞ্চ থেকে নেমে উপমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তারপর উপমাকে টেনে মঞ্চে উঠিয়ে তার হাত ধরেই গাইতে লাগলো,
“জলেতে-আগুনে, বর্ষা বা ফাগুনে
তোমার নামেই যত মেঘেদের গান
জাগরণে, মিছিলে কোথায় যে কী ছিলে
আমায় নিখোঁজ ভাবো নিয়ে আভিমান
চোখে জল নোনা কি? নিয়ে গেলো জোনাকি,
কেন আমি পথে একা দাঁড়িয়ে?
আলোদের পিয়নে.. সোডিয়াম নিয়নে যেন
সবই কোথায় হারিয়ে
আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি, তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি, তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে তোমায় চেয়েছি পুরোটাই, পুরোটাই…”
গান শেষ হওয়ার পর তূর্য হাঁটু গেড়ে বসে উপমার হাতটা ধরে বলল,
“মাই ডিয়ার ওয়াইফ, আই এম ইন লাভ উইথ ইউ।”
উপমার চোখে অশ্রু টলমল করছে। উপমা এবার তূর্যের হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো। তূর্য উপমার হাতে তার ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে দর্শকের দিকে তাকিয়ে তার ভালোবাসার গল্পটা শুনালো। দার্জিলিংয়ে তাদের প্রথম দেখা, ভিনদেশে উপমার চিরপরিচিত সেই দেশীয় স্বর, তারপর তাদের ছাদে বসে রাত জেগে কথা বলা, উপমার সাথে বাংলাদেশে এসে দেখা করা, এরপর বিয়ে। শুধু আংশিক বিচ্ছেদের গল্পটা তূর্য আর উল্লেখ করলো না। কারণ সে তাদের সেই বিচ্ছেদের অংশটা ভুলে যেতে চায়। সেই অংশটা তূর্যের জীবনের খুব ভয়ংকর একটা অংশ ছিল।
এদিকে রিয়াজুর রহমান উপমা আর তূর্যকে একসাথে দেখে মনে মনে খুশি হলেন৷ তিনিও আজ তূর্যের কনসার্টে এসেছেন, আর তার সাথে এসেছেন নিয়াজ হোসেন। নিয়াজ হোসেন এর আগে কখনো কোনো কনসার্টে যান নি। রিয়াজুর রহমানই অনেকটা জোর করে আজ তাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। এদিকে তাদের মঞ্চ থেকে নামতে দেখে রিয়াজুর রহমান এগিয়ে এসে বললেন,
“তোমাদের একসাথে দেখে খুব ভালো লাগছে। আর উপমা, তোমাকে অনেক বেশি ধন্যবাদ। তুমি কিছু সময়ের জন্য আমার জীবনে এসে, আমার সব হতাশা দূর করে দিয়েছো। আমি এবার নিজেকে পরিবর্তন করবো।”
নিয়াজ হোসেন রিয়াজুর রহমানের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ। এবার আল্লাহ আমার বন্ধুর উপর হেদায়েত করেছে।”
রিয়াজুর রহমান হাসলেন। তূর্য আর উপমাও হাসলো। রিয়াজুর রহমান উপমার হাসি দেখেই নির্বাক হয়ে গেলেন। সেকেন্ডের মধ্যেই চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনে পা বাড়ালেন। তিনি এরপর আর পেছনে ফিরে তাকালেন না। তাকালে হয়তো বাস্তবতা আর সমাজের কাছে তার বুড়ো বয়সী অনুভূতিটা পরিহাসের হয়ে যেতো।
ছাদে উঠে মাওশিয়াত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ছোট ছোট সোনালি রঙের মরিচ বাতি দিয়ে পুরো ছাদটি সাজিয়ে ফেলেছে ইমন। ছাদের মাঝখানে ছোট্ট একটা তাবুও টাঙিয়েছে। তাবুর মাঝখানে একটা কার্ডে লেখা ‘ম্যাও-ইমুর ছোট্ট ঘর।’ কার্ডের লেখাটি দেখেই মাওশিয়াত মুচকি হাসলো। ছাদের আশেপাশে ফুল ছিটিয়ে দেওয়ার সময় মাওশিয়াতকে দেখে ইমন থমকে গেলো। ধবধবে সাদা শাড়ি পরে তার সামনে তার একত্রিশ বছর বয়সী স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আজ তাকে দেখতে সেই ষোলো বছর বয়সী প্রেমিকা মনে হচ্ছে। ইমন পাশ ফিরে সায়ন্তনীকে বলল,
“দেখেছো, আমার ম্যাওকে কতো সুন্দর লাগছে।”
মাওশিয়াত ইমনের কাছে এসে সায়ন্তনীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আর দেখ, আমার ইমুকে কেমন লাগছে! বউকে তো সাজিয়ে ফেলেছে, কিন্তু নিজের একি হাল!”
মাওশিয়াত ইমনের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
“তুমি এখনো নিজেকে গুছিয়ে রাখতে শিখো নি।”
“এমন একটা ম্যাও থাকলে, গুছিয়ে রাখতে কার ভালো লাগে, বলো? তুমি এসে যখন আমার চুলগুলো ঠিক করে দাও, আমার তখন ভীষণ ভালো লাগে।”
ইমন মাওশিয়াতকে নিজের কাছে টেনে এনে তার কোমড় জড়িয়ে ধরতেই মাওশিয়াত বলল,
“কি করছো? সায়ন্তনী দেখছে তো।”
ইমন সায়ন্তনীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“ও কিছু বুঝবে?”
সায়ন্তনী চোখ পিটপিট করে বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাওশিয়াত ওয়াকার থেকে সায়ন্তনীকে কোলে নিয়ে বলল,
“আমার মেয়েটা অনেক বুদ্ধিমতী, একদম তার মায়ের মতো। তাই তো সব বুঝে ফেলেছে। তাই না, মা?”
ইমন ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“হ্যাঁ, আমি তো বোকা। সব বুদ্ধি তো তোমার মায়ের মাথায়।”
“ইয়েস, মিস্টার ইমন মাহবুব। জীবনে কি ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছো?”
ইমন আর কিছু না বলে ছাদের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। মাওশিয়াত ইমনের পিছু পিছু গিয়ে তার পিঠে মাথা রেখে বলল,
“তোমার দেখছি ইদানিং আমার চেয়েও বেশি রাগ বাড়ছে। দুষ্টুমিও করা যায় না। গাল ফুলিয়ে ফেলো।”
ইমন ছাদের রেলিঙে হেলান দিয়ে বলল,
“আমি জীবনে ফার্স্ট হই নি। কিন্তু ভেবে দেখো, সেই ব্যাকবেঞ্চার আজ বাংলাদেশের টপ বিজনেস কোম্পানি মৈত্রী গ্রুপের বি ইউনিটের এম.ডি, আর সেই ফার্স্ট গার্ল আজ সেই ব্যাকবেঞ্চার ছেলেকে রান্না করে খাওয়াচ্ছে, সেই ব্যাকবেঞ্চার ছেলের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ইন্টারেস্টিং। ভেরি ইন্টারেস্টিং।”
মাওশিয়াত ইমনের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। ইমন চুল ঠিক করতে করতে বলল,
“এজন্যই বলে ব্যাকবেঞ্চারদের কখনো অবহেলা করতে নেই। একসময় তারাই দেশ শাসন করবে।”
মাওশিয়াত সায়ন্তনীকে ইমনের কোলে দিয়ে বলল,
“তোমার বাচ্চাকে তুমিই সামলাও। আর তাবুতে বসে তোমরা বাবা-মেয়ে মশা মারো। আমি গেলাম।”
ইমন মাওশিয়াতের হাত ধরে তাকে কাছে টেনে এনে তার গালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বলল,
“সরি বউ। আর বলবো না।”
মাওশিয়াত একটু ভাব নিয়ে বলল,
“আর দিনশেষে সেই ব্যাকবেঞ্চাররা সেই ফার্স্ট গার্লদের কাছে নত হতে বাধ্য।”
ইমন মুচকি হেসে বলল,
“কারণ ব্যাকবেঞ্চারদের মন অনেক বড় হয়।”
ইমন সায়ন্তনী আর মাওশিয়াতকে নিয়ে তাবুতে ঢুকলো। সায়ন্তনীকে মাঝখানে শুইয়ে দিয়ে তারা দু’জন দুপাশে শুয়ে পড়লো। সারারাত তারা একে অপরের হাত ধরে গল্প করলো। দিনশেষে এটাই তাদের তৃপ্তিময় মুহূর্ত।
১২২.
সানায়া আর ইভান পাশাপাশি বসে আছে। আর তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচজন বডিগার্ড। সানায়া গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান চামচ দিয়ে প্লেটের খাবারগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছে। সানায়ার কর্মকান্ড দেখে তার হাসি পাচ্ছে, তবুও সে হাসতে পারছে না। সানায়া ভ্রূ কুঁচকে তার বডিগার্ডদের উদ্দেশ্য করে বলল,
“আরেকটু জোরে হাত চালাও। এতো আস্তে পাখা করছো কেন?”
ইভান পেছন ফিরে বডিগার্ডগুলোকে বলল,
“আপনারা এখন যান।”
সানায়া বলল,
“না। এই বদমাশ লোকগুলো এতো বছর আমাকে জ্বালিয়েছে। এখন আমিও এদের ইচ্ছেমতো জ্বালাবো।”
ইভান চোখের ইশারায় সানায়ার বডিগার্ডগুলোকে চলে যেতে বললো। ওরা একনজর সানায়ার দিকে তাকালো। বেচারা বডিগার্ডগুলো পড়েছে মহা মুশকিলে। তারা এবার মাথা নিচু করেই পাখা চালাতে লাগলো। পাঁচজনকে মার্কেট থেকে পাঁচটা পাখা কিনে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে সানায়া। এবার সে যেখানেই যাবে এদের হাত চালাতেই হবে। হোক সেখানে মাথার উপর ফ্যান, বা এসি। ইভান সানায়াকে বলল,
“এদের তুমি কখন মুক্তি দেবে, বলো?”
সানায়া পেছন ফিরে তাকালো আর বলল,
“এতোদিন এরা আমাকে একটুও শান্তি দেই নি।”
“এরা তো নিজেদের কাজ করেছে।”
“এদের জন্য কেউ আমার আশেপাশেও আসতো না। আমার সাথে কথাও বলতো না।”
“আচ্ছা, এখন তো এদের মাফ করে দাও।”
সানায়া ইভানের কথায় ব্যাগ থেকে টাকা বের করে সবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“যাও এবারের মতো বেঁচে গেছো। এই টাকা দিয়ে তোমরা খাওয়া-দাওয়া করে সোজা বাসায় ফিরে যাবে। তোমাদের গাড়ি যদি আমার পিছু পিছু আসে, এবার সত্যি বলছি, একটা পালকি কিনে, তোমাদের ঘাড়ে চড়ে বসবো।”
বডিগার্ডগুলো মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলল,
“জ্বি আচ্ছা, ম্যাডাম।”
এদের জ্বি আচ্ছা মানে এরা সানায়ার পিছু কখনোই ছাড়বে না। হয়তো এবার আরেকটু দূরত্ব রেখে সানায়াকে পাহারা দেবে। কিন্তু যতোদিন দায়িত্ব থাকবে, ততোদিন এই দায়িত্ব তারা পালন করেই যাবে। বডিগার্ডগুলো চলে যাওয়ার পর ইভান সানায়ার দিকে চেয়ার ঘুরিয়ে বসলো। সানায়াও গালে হাত দিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাদের দু’জনের বন্ধুত্ব এখন বেশ দৃঢ় হয়েছে। কিন্তু প্রেমটা এখনো ধোঁয়াশার মতোই। বাইরের লোকেরা তাদের দেখলে নির্ঘাত প্রেমিক-প্রেমিকা বলবে। কিন্তু শুধু ইভান আর সানায়া জানে, এটা প্রেম নয়। শুধু একে অপরের প্রতি তীব্র মায়া। সানায়া যদিও এখনো ইভানকে ভালোবাসে, কিন্তু সে নিজের ভালোবাসা এখন আর প্রকাশ করে না। ইভান যেহেতু বন্ধুত্ব চায়, তাহলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বই থাকুক। ইভান এবার গলা ঝেড়ে বলল,
“একটা কথা বলার ছিল।”
সানায়া গালে হাত দিয়ে মাথাটা এক পাশে হেলিয়ে রেখে বলল,
“তোমার কথাগুলো শুনতেই তো সব কাজ ফেলে চলে এসেছি।”
ইভান বলল,
“সানায়া, আমি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ইভানের কথাটি শুনে সানায়া অবাক হয়ে গেলো। ইভান আবার বলল,
“সবাই চাইছে আমিও বউ নিয়ে আসি।”
সানায়া চুপ করে রইলো। ইভান সানায়াকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে বলল,
“বিয়ের পর আমাদের বন্ধুত্ব আগের মতো থাকবে কিনা আমি জানি না।”
সানায়া মলিন মুখে বললো,
“আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি তোমার নতুন জীবনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবো না। তো মেয়ে কি পছন্দ হয়েছে?”
“হ্যাঁ, মেয়ে আমার ভালোই লেগেছে। আমার ভালো লেগেছে, তাই সবার কোনো আপত্তি নেই। অরুণিকার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।”
“আচ্ছা, বিয়ে কখন করছো?”
“এখনো কথাবার্তা হয় নি। ভাবছি আগে মেয়েটার সাথে কথা বলবো। সে রাজি হলে কিছুদিন মেয়েটাকে ভালোভাবে জানবো। ভালো একটা সময় কাটাবো, তারপর বিয়ে করবো।”
সানায়া মলিন হাসলো। সে ইভানের দিকে কোল্ড ড্রিংক্স এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তাহলে কি আজ আমাদের লাস্ট লাঞ্চ?”
ইভান হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো। সানায়া ভ্রূ কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। ইভান এবার হাঁটু গেড়ে বসে সানায়ার দিকে একটা রিং এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা কি আরেকটু আগানো যাবে? তুমি কি অফিশিয়ালি আমার গার্লফ্রেন্ড হবে?”
সানায়া চমকে উঠলো। সে কোনো উত্তর না দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ইভান উঠে দাঁড়ানোর আগেই সানায়া ইভানের মাথার দুই পাশে হাত রেখে, তার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে বলল,
“আমি তো তোমার অপেক্ষায় বসে ছিলাম, ইভান। তুমি তো ভালোভাবেই জানো আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি।”
ইভান সানায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সানায়ার হাতে রিংটা পরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি অনেক সময় নিয়ে তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। বিয়ের ব্যাপারেও একটু সময় নিতে চাচ্ছি। যদিও বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকেই তোমাকে এই কথা জানানো। কারণ আমি এতোদিন পর বুঝেছি, আমার তোমার মতোই একটা মেয়ে প্রয়োজন। যে আমাকে খুব ভালোবাসবে, আবার মন খারাপ হলে আমার মনটাও তার বোকা বোকা কথা দিয়ে ঠিক করে দেবে। আগে বক বক করা মেয়ে আমার ভালো লাগতো না, কিন্তু ইদানীং আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন কেউ কথাবার্তা না বললেই আমার কেমন অস্বস্তি লাগে।”
এবার ইভান সানায়ার হাতটা ধরলো। আর বলল,
“এই হাত আমি আর ছাড়ছি না।”
সানায়া হাসলো। এই হাসিটাই বলে দিচ্ছে তার মনে আজ কতো আনন্দ। হঠাৎ শব্দ হতেই সানায়া ইভানের কাছাকাছি আসতে গিয়েই থেমে গেলো। দু’জনে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো সানায়ার বডিগার্ডগুলো দাঁড়িয়ে আছে। তারা সানায়াকে দেখে সোজা হয়ে রোবাটের মতো দাঁড়িয়ে হাত তালি দিতে লাগলো। ইভান তাদের দেখে মুখ চেপে হাসছে। সানায়া দাঁতে দাঁত চেপে উঁচু গলায় বলল,
“তোমরা এখনো যাও নি? যাও এখান থেকে।”
তারা পাঁচজনই তাড়াতাড়ি সরে গেলো। সানায়া মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইভান তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোমার বদমাশ লোকগুলো এতো সহজে তোমার পিছু ছাড়বে না।”
সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এসে শতাব্দীর পায়ে আছড়ে পড়ছে। শতাব্দী সেই শীতল স্পর্শে চোখ বন্ধ করলো। পাশ ফিরে দেখলো তাহমিদ তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শতাব্দী মুচকি হাসলো। সে ধীর কন্ঠে বলল,
“মিষ্টি মশাই, তুমি ক্যান্ডিফ্লসের মতো এতো নরম কেন, বলো তো? স্পর্শ করলেই হারিয়ে যাও। যেমন আমার স্পর্শে এখন গভীর সমুদ্রে হারিয়ে গেছো।”
তাহমিদ একটু পর প্রশান্তির হাসি হেসে শতাব্দীর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“শতাব্দী, কেমন লাগছে এখানে?”
“তুমি পাশে থাকলে আমার সবকিছুই ভালো লাগে, মিষ্টিমশাই।”
তাহমিদ শতাব্দীর হাত ঝাঁকিয়ে বলল,
“হুমম, কিছু তো বুঝাও।”
শতাব্দী তাহমিদের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝালো, ভালো লাগছে। শতাব্দী মনে মনেই বলল,
“অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে, মিষ্টি মশাই। কিন্তু বলতে পারি না। তবে একপ্রকার ভালোই হয়েছে, জানো। কথা বলতে পারলে কি তুমি আমার সব কথা শুনতে? জানো, আমি তোমাকে প্রথমেই কি বলতাম? বলতাম, মিষ্টি মশাই, আমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে আমার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করে দাও। আমাকে নিয়ে একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাও। যেই বাঁধনে শুধু আমি আর আমার মিষ্টি মশাই থাকবে। কিন্তু তুমি আমার এই আবদার কখনোই রাখতে পারতে না। আচ্ছা, আমি না হয় কবুল বলে তোমাকে আমার স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নেবো। জানি, তুমি ওইটাও চাইবে না। তুমি শুধু মনে মনেই আমাকে ভালোবেসে যাবে। মুখে কখনোই বলবে না। এই শতাব্দী মেয়েটা কতোই না অভাগী! তোমার বাড়ির সব মানুষের মনের কথা আমার জানা হয়ে গেছে। কিন্তু তুমি মুখ ফুটে আমার পাশে বসে একবারো বলো নি, ভালোবাসি শতাব্দী। ইমন আর মাওশিয়াতের ঝগড়া হলে দু’জনেই আমাকে বুঝিয়ে যায়। গায়ক সাহেব কতোবার এসে আমাকে বলেছে সে উপমাকে ভালোবাসে। উপমাও একইভাবে সারাদিন গায়ক সাহেব যা যা করবে, আমাকে বলবে। ইভানও আজকাল আমার সাথে কথা বলে। সানায়াকে যে তার পছন্দ ও কথা সে-ই আমাকে প্রথম বলেছিল। আহনাফ তো রোজ ছোট সখীর কথা আমাকে বলবে। আর ছোট সখীও কি কম? সারাদিন তার আহনাফের সাথে যতো মান-অভিমান চলে, আমাকে এসেই জানাবে। আরাফও আমাকে বলেছিল, তার আজকাল কাউকেই ভালো লাগে না। তোমরা নাকি তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছো। আরাফ আমাকে বলেছে, তোমাদের বোঝাতে। মিষ্টি মশাই, তুমিও আমাকে বলো, তোমার মনে কি চলছে। আমি তো তোমার কথা শোনার অপেক্ষায় আছি।”
তাহমিদ হুইলচেয়ারটা টেনে পেছনে আনলো। জোয়ার শুরু হয়েছে। তাই সমুদ্রের পাশ থেকে সে একটু সরে এলো। তারপর বালির উপর বসে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“চন্দ্রিমা, তোমাকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। আগে যদি জানতাম, কোনো জায়গাভেদে তোমার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়, তাহলে তোমাকে অনেক আগেই এখানে নিয়ে আসতাম। জানো, তোমার হাসিটা ভীষণ মিষ্টি! আর তোমার চোখ দু’টি একদম শান্ত! তুমি তো আমাকে পাগল করে ছেড়েছো। শুধু পাগলামোগুলো দেখাতে পারছি না। আচ্ছা, আমাদের ভালোবাসাটা এতো ব্যতিক্রম কেন বলো তো? এক তুমি আমার জন্য ভালোবাসা দমিয়ে রাখতে রাখতে নির্বাক হয়ে গেছো। আরেক আমি, ভালোবাসা প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছি না। আমাদের ভালোবাসটা ভয়ংকর। কিন্তু এই ভয়ংকর অনুভূতিটাই আমাকে অনেক শান্তি দেয়। দেখো, ভালোবেসেও কখনো তোমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতে পারি নি। এখনো একবারো তোমার শান্ত চোখে ঠোঁট ছোঁয়াতে পারি নি। এসব হয়তো আর হবেও না। কারণ আমাদের ভালোবাসা তো আত্মার সাথে আত্মার। এখানে কোনো শারীরিক স্পর্শ নেই। তুমি আমার কাছে চন্দ্রিমা হয়েই থাকবে, যাকে স্পর্শ করা অসম্ভব, যাকে শুধু দেখা যাবে, আর ভালোবাসা যাবে। আর আমিও তোমাকে দেখবো, আর মনে মনেই ভালোবেসে যাবো।”
তাহমিদ শতাব্দীর হুইলচেয়ারের হাতলে মাথাটা রাখলো। শতাব্দীর ইচ্ছে করছিলো, তাহমিদের ঘন চুলে হাত ডুবিয়ে দিতে। কিন্তু পারলো না। তার হাতে সেই শক্তি নেই। কিন্তু তার মনে প্রচন্ড শক্তি আছে। ভালোবাসার শক্তি। তাই সে চোখ বন্ধ করে অনুভব করলো, তাহমিদ তার কাঁধে মাথা রেখেছে। আর সে আলতো হাতে সেই চুলে আঙ্গুল চালাচ্ছে। তাহমিদ শতাব্দীর হাতের স্পর্শ পেয়ে প্রশান্তির শ্বাস নিলো। সেই প্রশান্তিটাই শতাব্দীর মনকে শান্ত করে তুললো।
এদিকে হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রাহি আর আরাফ। সায়িমের স্কিনে সমস্যা হওয়ায় তাকে নিয়ে রাহি আর তার শাশুড়ি আরাফের কাছে এসেছে। আরাফ ভালোভাবে দেখে তাকে ভর্তি করিয়ে দিতে বললো। যদিও সায়িম দুই দিনের মধ্যে অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। সায়িমকে চেকাপ করেই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে আরাফ। আর তার পিছু পিছু রাহিও এসেছে। দু’জনই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রাহি নিরবতা ভেঙে বলল,
“আপনি বিয়ে করছেন না কেন?”
আরাফ ঠোঁটে হালকা হাসি টেনে বলল,
“বিয়ে করা আমার জীবনের লক্ষ্য নয়।”
“তাই বলে করবেন না?”
“আপনাকে কি কেউ বলেছে, আমাকে জোরাজুরি করতে?”
রাহি হেসে বলল, “আপনার অরু বলেছে।”
“মেয়েটা বেশি বড় হয়ে গেছে। দিনদিন আমার উপর পন্ডিত গিরি করছে।”
“যাই হোক, বিয়ে তো করা উচিত। এভাবে একা থাকার কি কোনো বিশেষ কারণ আছে?”
“আপনি কি বিয়ে করবেন?”
রাহি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমি তো বিয়ে করে ফেলেছি। একটা ছেলেও আছে। আমার তো এখন সায়িমই একমাত্র লক্ষ্য।”
আরাফ মুচকি হেসে বলল,
“আমি একজন ভালোবাসতাম। কিন্তু তাকে হারিয়ে ফেলেছি। তাই আমি কাউকে বিয়ে করে আবার হারাতে চাই না। মাঝে-মাঝে একা থাকায় ভালো। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত একাকীত্ব। এই সময়টাই আপনি আপনার হারানো মানুষগুলোকে মনে করতে পারবেন। কেউ চলে আসলে তাদের মনে করার মতো সময় পাবেন না। আর আমি হারানো মানুষগুলোকে মনে করে মানসিক শান্তি পাই। তাই আমি অন্য কাউকে আমার জীবনে চাই না।”
রাহি হাসলো। সে বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকালো। সারাদিনের ব্যস্ততার পর যখন সায়িমকেও ঘুম পাড়ানো হয়ে যায়। তখন সে সাহিলের রেখে যাওয়া স্মৃতি আর প্রতিটি জিনিস হাতড়ে হাতড়ে মানসিক শান্তি খুঁজে পায়। জীবনে সুখী হওয়ার জন্য বিয়ে অত্যাবশ্যক নয়। মাঝে মাঝে একাকীত্বেই শান্তি থাকে। আরাফ বারান্দা থেকে বের হয়ে নিজের চেম্বার রুমে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পর আবার রোগী দেখা শুরু করবে। তার আবেগ নিয়ে ভাবার কোনো সময় নেই। সে নতুন করে পড়াশুনা শুরু করেছে। ইচ্ছে আছে আরো কিছু ডিগ্রি নেবে। এই ইচ্ছা নিয়েই সে বেঁচে আছে। টেবিলের ড্রয়ার খুলে সে একটা ডায়েরী বের করলো। কয়েক পাতা উল্টাতেই সে সায়ন্তনীর হাসিমাখা ছবিটা বের করলো। একদিন বিকেলে সায়ন্তনীর দোকানে অনেক ভীড় জমেছিল। সায়ন্তনী সেদিন অনেক খুশি ছিল। তাই মুখে হাসি নিয়ে কাপে চা ঢালছিল। আর সেই মুহূর্তেই তার হাসিটা অনুমতি ছাড়াই আরাফ ক্যামেরায় ধারণ করে নেয়। তার কাছে সায়ন্তনীর এই একটাই ছবি আছে। আরাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়েরিটা বন্ধ করলো। আর মনে মনে বলল,
“প্রথমে মা, তারপর রুহানি, এরপর পুরো পরিবার, আর শেষে সায়ন্তনী৷ সবাইকে হারাতে হারাতে আমি পাথর হয়ে গেছি। আর কাউকে হারানোর মতো সাহস নেই। যারা আছে এরাই আমার জন্য যথেষ্ট। ইমন আর মাওশিয়াতের বাচ্চাটার নাম সায়ন্তনী রাখা হয়েছে। মেয়েটাকে দেখলে মনে হয়, একদম আমার সায়ন্তনীর মতো হয়েছে। এখন আমার তো দুই দুইটা বাচ্চা আছে। এতোদিন অরুণিকা ছিল, এখন ছোট সায়ন্তনী। আমার পরিবার সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আর আমি এতেই অনেক ভালো আছি। ভালো থাকবোও।”
রাতে অরুণিকা রুমে ঢুকতেই দেখলো আহনাফ পা ধরে বসে আছে। আহনাফ তাকে দেখেই ইশারায় বিছানায় বসতে বলল। অরুণিকা বিছানায় বসার সাথে সাথেই আহনাফ তার পা’টি অরুণিকার কোলে তুলে দিয়ে বলল,
“সারাদিন টো টো করে ঘুরেছো। এবার স্বামীর সেবা করো।”
অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বলল, “মানে?”
আহনাফ নরম সুরে বলল,
“মানে, তোমার কোমল হাত দু’টি দিয়ে আমার ব্যথায় কাতর হয়ে যাওয়া পা দু’টি জোরে জোরে টিপে দেবে। বুঝেছো?”
অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“হুহ, আমার বয়েই গেছে।”
আহনাফ পা নামিয়ে বলল,
“থাক, ভালো সেলুনে গিয়ে করাবো, যেখানে মেয়েরা পা ম্যাসাজ করার কাজ করে। মেয়েদের হাত….”
অরুণিকা আহনাফকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার পা টেনে ধরে শরীরের সব শক্তি দিয়ে পা টিপে দিতে লাগলো। আহনাফ বালিশে আয়েশ করে শুয়ে বলল,
“দাঁড়িয়ে থাকলে বেশি আরাম লাগতো।”
অরুণিকা দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকাতেই আহনাফ বলল,
“আমার অরুটা যখন পিচ্ছি ছিল, তখন আমি যখনই বলতাম পায়ের উপর হাঁটতে, ও হাঁটতো। বউ হওয়ার পর….”
অরুণিকা এবারও আহনাফকে থামিয়ে দিয়ে তার পায়ের উপর উঠে দাঁড়ালো। আহনাফ মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করলো। অরুণিকা বুঝে না আহনাফ ওর বর নাকি শত্রু। প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় এসে কোথায় তার সাথে গল্প করবে তা না, এসেই অরুণিকাকে হাত-পা ম্যাসাজ করার জন্য বসিয়ে দেবে। অরুণিকা একপাশে বসে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ড্রয়ার থেকে তেলের বোতলটা বের করে আহনাফের পুরো পায়ে তেল ছিটিয়ে দিলো। গেঞ্জি পরা তাই আস্তে করে গেঞ্জিটা উঠিয়ে বুকের উপর, গলার পাশে তেল ঢালতে লাগলো। তেল জিনিসটাই আহনাফের কাছে এলার্জি। সে তরল কিছু অনুভব করে চোখ খুলে দেখলো, তার পুরো গায়ে তেল। সে দাঁতে দাঁত চেপে বিছানা ছেড়ে মেঝেতে পা রাখতেই পিছলে পড়ে আবার বিছানায় বসে পড়লো। অরুণিকা তেলের বোতল নিয়েই রুম থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে নিচে নেমে গেলো। প্রায় এক ঘন্টা ধরে অরুণিকা নিচে বসে আছে। সবাই অরুণিকার হাবভাব দেখে বুঝলো, সে একটা কান্ড বাঁধিয়ে এসেছে। কিন্তু কেউ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। কিছুক্ষণ পর সবার ধারণা ঠিক হলো। আহনাফ ভেজা মাথায় রাগী মুখ নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো। অরুণিকার দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলল,
“রুমে আসো।”
অরুণিকা আরাফের পেছনে নিজেকে আড়াল করে বলল,
“আরাফ আজকের মতো বাঁচাও। নয়তো ও আমাকে মেরে ফেলবে।”
আরাফ আহনাফকে শান্ত করার জন্য সামনে এগুতেই আহনাফ বলল,
“এই ফাজিল মেয়েটা আমার পুরো গায়ে তেল ঢেলে দিয়েছে। এখনো তেলগুলো যাচ্ছে না। আমি এক ঘন্টা ধরে ওর জন্য শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আমি যদি অসুস্থ হই, এই মেয়েকে আমি তেলের ড্রামে ডুবিয়ে রাখবো।”
অরুণিকা উপমার কাছে এসে কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। তূর্য আর তাহমিদ উঠে এসে এবার আহনাফকে শান্ত করতে লাগলো। আহনাফ কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছে না। সে অরুণিকার কাছে এসে তেলের বোতলটা টেনে নিয়ে বলল,
“আমার উপর তেল ঢালা?”
আহনাফ অরুণিকার গায়ে তেল ঢালতে যাবে অরুণিকা তখনই ইভানকে টেনে তার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। ইভান মাথায় হাত দিয়ে ভ্রূ কুঁচকে আহনাফের দিকে তাকালো৷ অরুণিকা আহনাফের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগলো। ইমন পরিস্থিতি সামলানোর জন্য অরুণিকাকে টেনে সরিয়ে দিলো। সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। অরুণিকা একটা কাপড় ভিজিয়ে ইভানের দিকে এগিয়ে দিলো। ইভান চোখ লাল করে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে আছে। অরুণিকা এবার আহনাফের পেছনে নিজেকে আড়াল করে বলল,
“ডিয়ার স্বামী, এই হিটলার ভাই থেকে আমাকে বাঁচাও। নয়তো তুমি বিপত্নীক হয়ে যাবে।”
তারপর আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
“আমি না তোমার, লক্ষী বউ।”
অরুণিকা কথাটি বলেই দাঁত বের করে হাসলো। আহনাফ ইভানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ও বুঝতে পারে নি। বাদ দে। আমিও ভুলে যাচ্ছি।”
আহনাফ এবার অরুণিকার দিকে তাকালো। ইভান অরুণিকার দিকে তাকিয়ে ভ্রূ নাচালো। সবাই হেসে উঠলো। আহনাফ সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হয়েছে? হাসছিস কেন?”
ইভান বলল,
“তোর জন্য আজ অরুণিকাকে মাফ করেছি। নেক্সট টাইম যাতে এমন কিছু না হয়।”
আহনাফ মাথা নাড়লো। সে অরুণিকার হাত ধরে তাকে উপরে নিয়ে গেলো। ইমন, তাহমিদ, আরাফ, তূর্য আর ইভান অরুণিকাকে ”অল দা বেস্ট বলে বিদায় দিলো। অরুণিকা হাত নাড়িয়ে সবাইকে বিদায় দিয়ে রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
রাত ১টা। সবার রুমের বাতি বন্ধ হয়ে গেছে। টুইংকেল হাউজের প্রতিটি রুম এখন অন্ধকার। শুধু গেইটের বাইরে লেখা টুইংকেল হাউজটি উজ্জ্বল তারার মতো জ্বলজ্বল করছে। তার নিচে নতুন একটা নাম খোদাই করে লেখা হয়েছে। সেই নামটি ষোলো বছরের পরিশ্রম, ত্যাগ, ধৈর্য, আনন্দ আর প্রেরণার একমাত্র সাক্ষী। সেই নামটি ছ’জন কিশোরকে অল্প বয়সেই ছ’জন ধৈর্যশীল পুরুষে পরিণত করেছে। সেই নামটি হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া একটা বন্ধনহীন দায়িত্ব থেকে সৃষ্ট একটা অনুভূতি। এটি শুধু কোনো নাম নয়। এটি একটি প্রেরণা। ছ’জনের বেঁচে থাকার প্রেরণা, ‘অরুণিকা।’
#সমাপ্ত