#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_২৩
ঘন্টা দেড়েক বাদে নিচ থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম আমি। দোতলার করিডরে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম নিচে ঠিক কি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে৷ তখনই দেখলাম আদ্র মাইশার হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে এনে ওর হাত ছেড়ে দেয়। মাইশা মাথা নিচু করে কাঁদছিলো। দেখলাম তিন্নি দৌড়ে নিচে যাচ্ছে। আমিও দ্রুত নিচে নেমে গেলাম। আদ্র রাগে থরথর করে কাঁপছে৷ পাপা মাইশার সামনে গিয়ে সজোরে ওর গালে চ/ড় বসিয়ে দেয়। পাপা আবার চ/ড় মারতে গেলেই আমি মাইশাকে আড়াল করে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। পাপা হাত উঠিয়েও আবার নামিয়ে নিলো। মামনি এসে মাইশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে উনি নিজেও চ/ড় বসিয়ে রা/গা/রা/গি করতে লাগলেন। তিন্নি মামনিকে সরিয়ে নিলেন। আমি মাইশাকে বুকে আগলে রেখেছি। আদ্র মাইশার হাত ধরে টানতেই আমি মাইশার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
–“প্লিজ এখন কিছু বলবেন না। বাচ্চা মেয়ে ভু/ল করে ফেলেছে।”
–“রুহি সরো সামনে থেকে।”
–“নাহ, আপনি শান্ত হোন আগে।”
–“রুহি সরতে বলছি আমি।”
–“ন্ নাহ___”
কথাটা কোনমতে উচ্চারণ করতেই আদ্র আমার হাত ধরে টেনে অন্যপাশে সরিয়ে দিলেন। মাইশা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। অনবরত কাঁদছে মেয়েটা। আদ্র মাইশার সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললেন,
–“কি সমস্যা তোর? কোন স্বাধীনতাটা দেইনি তোকে আমরা? দুনিয়াতে আর কোনো ছেলে খুঁজে পাসনি? ওই ইরানের সাথেই পালাতে হলো তোর? এত স্বাধীনতা দিয়ে তাহলে আমরাই ভুল করেছি। নিজের মর্জি মতো চলতে দিয়েছি বলে যা ইচ্ছে করে বেরাবি? জানিস তোর জন্য সকাল থেকে কি কি ফেইস করতে হয়েছে আমাদের? এত্ত এত্ত ফোন কলস, ম্যাসেজ এসেছে তোর জন্য আমাদের কাছে৷ বাড়ির সকলের মান সম্মানটা ঠিক কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছিস ভেবেছিস একবারো? আমাদের এতগুলো মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাসের কোনো মূল্য দিয়েছিস তুই?”
বেশ ধমকে ধমকেই কথাগুলো বলছে আদ্র। মাইশা ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদে উঠছে বারবার। আমি আদ্রকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললাম,
–“এভাবে রা/গা/রা/গি করবেন না। ও ভয় পেয়ে আছে। ছোট ও, ভালো ভাবে বুঝিয়েও তো বলতে পারেন।”
–“ছোট ও? কাল অব্দি আমরাও সেটাই ভেবেছি, ছোট বলেই কোনো কিছুতে কখনো বারন করিনি। ও কি করেছে? কি করেছে ও? আমাদের সবার মান সম্মান ধূলোর সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।”
–“ভু/ল করে___”
–“শাট আপ রুহি, এটাও তোমার কাছে ভু/ল মনে হয়? ও বাচ্চা না রুহি। কলেজে পড়ুয়া মেয়ে। আজ যদি একটা ফোন ভেঙে ফেলতো বা একটা ল্যাপটপ ভেঙে ফেলতো তবুও মানা যেতো বাচ্চা মানুষ একটা ভু/ল করে ফেলেছে। কিন্তু না ও তো তা করেনি। একটা ছেলের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে আমাদের পরিবারের কথাটা ও একবারো ভাবেনি। আমাদের এতগুলো বছরের ভালোবাসা আদর স্নেহের কথা ওর মাথায় আসেনি। আমরা তো ওকে সেই ভালোবাসাটা দিতে পারিনি যেটা ওই ইরান দিয়েছে ওকে। তাই তো আমাদের কারো কথা ও ভাবেনি।”
মাইশা দূর্বল শরীরে আদ্র’র সামনে এসে দাঁড়িয়ে কাতর কন্ঠে বললো,
–“আমি যেমন তোমাদের ভালোবাসি তেমনি ইরানকেও খুব ভালোবাসি ভাইয়া__”
–“ভাইয়া ডাকবি না আমায়। আমার বোন একজনই আর সে তিন্নি। ইরানের হাত ধরে এ বাড়ির বাইরে পা রাখার সাথে সাথেই তুই আমার কাছে মৃত।”
–“তাহলে নিয়ে এলে কেন? ইরানের সাথে কেন থাকতে দিলে না আমায়? ভালোবাসি আমরা দুজন দুজনকে। আমাদের ভালোবাসাটা কেন মেনে নিচ্ছো না? কেন ওর থেকে আমাকে আলাদা করতে চাইছো ভাইয়া?”
–“কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিবো তারপরও ইরানের সাথে মানবো না তোকে।”
–“আমি থাকবো না এখানে। চ্ চলে যাবো ইরানের কাছে। তোমরা কেউ আটকাতে আসবে না আমায়৷ কেউ না।”
মামনি এসে মাইশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কাঠকাঠ কন্ঠে বলে,
–“লজ্জা করছে না বড় ভাইয়ের মুখে মুখে কথা বলতে? এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে আমরা?”
–“আম্মু ভাইয়ার ভালোবাসা তোমরা মানতে পারলে আমার ভালোবাসা কেন মানবে না? ভাইয়া ভাবীকে ভালোবাসে কথাটা যেদিন তোমাদের বলেছিলো সেদিন থেকেই টানা তিন বছর ভাবীর ফ্যামিলির পিছে পড়ে ছিলে উনাদের রাজি করানোর জন্য। শুধুমাত্র ভাইয়া ভাবীকে ভালোবাসে বলে ভাইয়ার জীবনে ভাবীকে এনে দেওয়ার জন্য সব করেছো তোমরা। তাহলে আজ আমার ভালোবাসা কেন মানছো না আম্মু? আমার ভালোবাসা থেকে আমাকে আলাদা কেন করতে চাইছো তোমরা?”
পাপা এবার ধমকের স্বরে বললেন,
–“মাইশা ভুলে যেওনা এখানে আমরা সবাই তোমার বড়। মা ভাইয়ের মুখে মুখে কথা বলছো কেন? তোমাকে দেখে অবাকের পর অবাক হচ্ছি আমি। আগে তো এরকম বেয়াদবি করতে না।”
–“আমি বেয়াদবি করছি না আব্বু। আমি শুধু বলতে চাইছি ভাইয়ার ভালোবাসা মানলে আমার ভালোবাসা কেন মানতে পারছো না তোমরা?”
–“তোমার ভাইয়া তোমার মতো আমাদের মান সম্মান ডুবায়নি। রুহিকে নিয়ে পালিয়ে আসেনি। রুহিকে ভালোবাসার কথা রুহিকে জানানোর আগে আমাদের জানিয়েছে। রুহিকে নিজের করে পাওয়ার আগে তিন বছর ওর পরিবার পিছু ঘুরে তাদের রাজি করিয়েছে তাদের মন জয় করেছে তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে রুহিকে বিয়ে করে এই বাড়িতে এনেছে। ভুলে যেওনা সেটা। তুমি সেরকম কিছু করোনি উল্টো ইরানের হাত ধরে পালিয়ে গেছো কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে।”
–“ভাইয়া মানতো না। ভাইয়া ইরানকে পছন্দ করেনা বলেই আমি বলার সাহস করতে পারিনি।”
–“তোমার ভাইয়াকে আমরা দেখে নিতাম। আদ্র যেমন আমাদের ছেলে তুমিও তেমনি আমাদেরই মেয়ে। ওর ভালোবাসা মেনে নিলে তোমারটা কেন মেনে নিতাম না? পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার আমাদের অন্তত বলতে পারতে ইরানকে ভালোবাসো তুমি। তারপর যদি আদ্র না মানতো ওকে আমরা মানিয়ে নিতাম। তুমি সেটা না করে বাড়ি ছেড়েছো৷ সোসাইটিতে আমাদের যে একটা সম্মান আছে সেটা নষ্ট করেছো তুমি।”
পাপার এমন কঠিন কঠিন কথায় মাইশা শব্দ করে কেঁদে দিলো। আদ্র তখন সোফায় বসে দুহাতে মাথার চুল খামছে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। উনার কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না আমি। পাপার সামনে গিয়ে অনুরোধের কন্ঠে বললাম,
–“পাপা একটা কথা বলবো?”
–“তুমি কোনো কথা বলবে না রুহি, ঘরে যাও।”
পেছন ফিরে আদ্র’র দিকে তাকালাম। উনি তখনো মাথা নিচু করেই আছেন। বুঝলাম ওভাবেই কথাটা বলেছেন। আমি উনার কথায় পাত্তা দিলাম না। পাপার হাত ধরে বললাম,
–“আপনি প্লিজ ওদের ভালোবাসাটা মেনে নিন৷ মাইশুকে দেখুন কত কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা। ওকে এভাবে দেখতে কি ভালো লাগছে আপনাদের বলুন? ওর কষ্টে কি কষ্ট হচ্ছে না আপনাদের?”
–“ও কি কাজটা ঠিক করেছে মা? ও পালানোর আগে একবারো কাউকে জানায়নি। আমাদের জানানোর পরও যদি আমরা না মানতাম তখন নাহয় পালিয়ে গেলে মানা যেতো কিন্তু এখন?”
–মানুষ মাত্রই তো ভু/ল পাপা। আমরাও তো কত ভু/ল করি৷ এটাকেও একটা ভু/ল ভেবে ক্ষমা করে দিননা ওকে প্লিজ। ইরান ভাইয়া আর ওকে মেনে নিন___”
আদ্র ততক্ষণে এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে উনার দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর রাগী স্বরে বলে,
–“একবার বলেছি না এ বিষয়ে কোনো কথা বলবে না তুমি।”
–“আপনি বোঝার চেষ্টা___”
আদ্র’র চোখ রাঙানিতে আর কিছু বলতে পারলাম না। মাথা নিচু করে নিলাম। মামনি এসে বললো,
–“দেখ বাবা, যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। এবার ওর সুখের কথাটা ভেবে না হয়___”
–“আম্মু প্লিজ। এ বিষয়ে কারো কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। মাইশাকে নিয়ে ঘরে যাও।”
আদ্র’র এমন কঠোর কঠোর কথা শুনে মাইশা হেঁচকি তুলে কাঁদছে। আচমকাই আদ্র’র পা জড়িয়ে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো ও। ওর এমন কাজে আদ্র সহ আমরা সকলেই বেশ ভড়কে যাই। মাইশা আদ্র’র পা জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
–“ভাইয়া প্লিজ এতটা নিষ্ঠু হইয়ো না তুমি। তুমি না আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট সহ্য করতে পারো না? তাহলে আজ আমার এত চোখের পানি কিভাবে সহ্য করছো তুমি? প্লিজ এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিও না। শুধুমাত্র তুমি চাইলেই ইরান আমার হয়ে যাবে। আমার ভালোবাসাকে সারাজীবনের জন্য আমি নিজের করে পেয়ে যাবো। প্লিজ ভাইয়া ওকে আমার থেকে কেড়ে নিও না। খুব ভালোবাসি ইরানকে আমি।”
–“পা ছাড়।”
–“ছাড়বো না আমি। যতক্ষণ না তুমি আমাদের মেনে নিচ্ছো ততক্ষণ আমি এখানে এভাবেই তোমার পা জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো।”
–“মাইশা পা ছাড় বলছি।”
–“নাহ।”
আদ্র এবার হাত দিয়ে মাইশাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো। তারপর তিন্নি আর মামনিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“মাইশাকে ঘরে নিয়ে যাও। ও যাতে বাড়ির বাইরে বের হতে না পারে আর।”
পাপা এগিয়ে এসে বললেন,
–“আদ্র মেয়েটা এভাবে কাঁদছে__”
–“যা বলার বলে দিয়েছি আমি, আর এটাই আমার শেষ কথা।”
পাপা আর কিছু বললেন না। জানেন উনার ছেলে কতটা রাগী আর একগুঁয়ে। আদ্র নিজে না চাইলে কেউ-ই উনাকে ইরান আর মাইশার সম্পর্কে রাজি করাতে পারবে না। তাই পাপা হাল ছেড়ে দিলেন। আমি আদ্র’র সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
–“আচ্ছা ইরান ভাইয়ার সাথে আপনার এত কিসের শত্রুতা? উনাকে কেন মাইশার সাথে মানতে পারছেন না আপনি?”
–“ইরান মাস কয়েক আগেও তোমাকে ভালোবেসেছে রুহি। তোমাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো ও। সেখানে এত তাড়াতাড়ি আবার কি করে আমারই বোনকে ভালোবাসতে পারে ও? এখানে কি ওর কোনো মতলব নেই? এমনও তো হতে পারে তোমার জন্যই ও মাইশাকে টোপ বানিয়েছে? এমনও তো হতে পারে তোমাকে পাওয়ার জন্য মাইশাকে ব্যবহার করছে ও? আর তোমাকে দেখলে একটু হলেও ওর মন গলে যাবে। তোমাকে নিজের করে পেতে চাইবে। তখন? তখন কি হবে? আমার বোনটা তখন আরো বেশি কষ্ট পাবে। ওর এখনকার কষ্টটা সহ্য করতে পারলেও তখনকার ওই কষ্টটা সহ্য করতে পারবো না আমি।”
–“এমনটা তো না-ও হতে পারে। আপনি নেগেটিভটাই কেন ভাবছেন?”
–“তুমি এই বিষয়ে আর একটা কথাও বলবে না৷ চলো ঘরে চলো।”
কথাগুলো বলেই আদ্র আমার হাত টেনে ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলেন। কয়েক সিড়ি উঠে থেমে গেলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বললেন,
–“এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে মাইশাকে নিয়ে ঘরে যাও। আর হ্যাঁ নজরে নজরে রাখবে। এরপর যাতে ওই ইরানের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ না করতে পারে ও।”
কথাগুলো বলেই আদ্র আমাকে টানতে টানতে রুমে এনে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
চলবে~
#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_২৪
–“কিছু কথা বলি? দয়া করে একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।”
আমার কথার প্রত্যুত্তরে আদ্র কিছু বললো না। উনাকে নিশ্চুপ ভাবে সোফায় বসে থাকতে দেখে আমি নিজেই বলতে শুরু করলাম,
–“মাইশা যে ইরান ভাইয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসে এটা বুঝতে নিশ্চয়ই কোনো অসুবিধে হয়নি আপনার? একটা মানুষ আর একটা মানুষকে ঠিক কতটা ভালোবাসলে তার জন্য নিজের ভাইয়ের পা ধরে বসে থাকতে পারে কোনো আইডিয়া আছে আপনার? মাইশা ইরান ভাইয়াকে ঠিক কতটা ভালোবাসে কতটা চায় সেটা একটু আগে ওর করা কাজকর্মেই বেশ বোঝা গেছে। ও ইরানকে মেনে নেওয়ার জন্য আপনার পায়ে অব্দি ধরেছে তবুও আপনার পাথর মন গলেনি। আর কি কি করলে ইরানকে মেনে নিবেন বলুন তো? ঠিক কিভাবে বোঝালে আপনি বুঝবেন ইরান ভাইয়াও মাইশাকে ভালোবাসে। ওরা দুজন একসাথে থাকতে চায়। নিচে মাইশা কতটা সময় আপনার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করলো একবারো ফিরে তাকিয়েছেন ওর দিকে? তাকাননি। এত না বলেন ওর কষ্ট হলে আপনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়? তাহলে সেই আপনি কি করে নিজের বোনকে এতটা কষ্ট দিতে পারছেন? কেন নিজের বোনের ভালোবাসাটা মেনে নিতে পারছেন না আপনি? কিভাবে পারছেন মেয়েটাকে এভাবে কাঁদাতে? একটুও কষ্ট হচ্ছে না আপনার? বিন্দু পরিমান বুক কাঁপছে না ওর এই কষ্টে?”
আমার এত এত কথা শুনে আদ্র শান্ত চোখে চাইলো আমার দিকে। উনাকে এতকিছু শুনিয়েও যেন আমার মন শান্ত হলো না। তাই আবার বলতে লাগলাম,
–“কি অপরাধ করেছে ওরা? একে অপরকে ভালোবেসেছে এটাই ওদের অপরাধ? নাকি ইরান ভাইয়া মাইশার আগে আমায় ভালোবেসেছিলো এটা উনার অপরাধ? আপনার কি মনে হয় মানুষ কি প্রথম ভালোবাসা ভুলে দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে জানে না? ইরান ভাইয়া তো আমি অবিবাহিত জেনে আমায় ভালোবেসেছিলো৷ আমি বিবাহিত জানার পর একবারও আমার মুখোমুখি হয়েছিলো উনি? হোননি তো। আরেহ উনি তো মুখ ফুটে কখনো আমায় ভালোবাসি বলেওনি৷ শুধু আপির বিয়ের সময় আপনাকে আর আমাকে আপির ফুপ্পি এক ঘরে একান্ত অবস্থায় দেখে ফেলেছিলো। আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলো তখনই উনি আমাকে বিয়ে করার কথাটা বলেছিলেন। এরপর তো আর কিছু বলেনি। আমার সামনেও পড়েনি তেমনভাবে৷ না কোনোকালে উনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো। তাহলে সেদিনকার সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আজও কেন পড়ে আছেন আপনি? ইরান ভাইয়া হয়তো সত্যিই ভালোবাসে মাইশাকে। ভালো না বাসলে অন্তত একটা মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে তুলতো না। প্লিজ এমন করবেন না আপনি। নিজের বোনের সুখের কথাটা অন্তত একটু ভাবুন। মেনে নিন ওদের ভালোবাসা।”
আদ্র তখনো নিরব শ্রোতার মতো আমার কথা শুধু শুনেই যাচ্ছে। এদিকে উনাকে এত এত কথা বলার পরও উনি কোনোরকম রেসপন্স না করায় বেশ রাগ হলো আমার। ক্ষানিকটা রাগ নিয়ে তেজী কন্ঠেই বললাম,
–“সত্যি বলতে আমার এখন কি মনে হচ্ছে জানেন? আপনি ভালোবাসার মানেই জানেন না। ভালোবাসা কি সেটা বোঝেন না আপনি৷”
এতক্ষণের আদ্র’র শান্ত চাহনি হঠাৎ করেই জলে ভরে গেলো৷ আদ্র অত্যান্ত করুন কন্ঠে বললো,
–“আমি ভালোবাসতে জানি না রুহি? ভালোবাসার মানে বুঝি না?”
–“না বোঝেন না।”
–“ভালোবাসতে না জানলে না বুঝলে তোমায় নিজের করে নিলাম কেন? তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমার ফ্যামিলির পেছনে টানা তিনটে বছর কেন পড়ে ছিলাম আমি রুহি?”
–“সেটা তো নিজের স্বার্থে। নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার স্বার্থে। কিন্তু আপনি যে নিজের ভালোবাসাটাই শুধু বুঝেছেন আদ্র। আজ নিজের বোনের ভালোবাসাটা যে বুঝতে চাইছেন না আপনি। আমাকে না পেলে আপনার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হতো? আমাকে ছাড়া আপনি থাকতে পারতেন না বলেই টানা তিন বছর আমার ফ্যামিলর পেছনে পড়ে ছিলেন শুধু আমাকে পাওয়ার জন্য। অথচ আমি আপনাকে চিনতাম না জানতাম না ভালোও বাসতাম না৷ অথচ দেখুন ইরান ভাইয়া আর মাইশা একে অপরকে চিনে জানে ভালোও বাসে। তাহলে ওদের কতটা কষ্ট হচ্ছে এই সম্পর্ক মেনে না নেওয়াতে ভাবুন তো একবার। নিজের ভালোবাসাটা বুঝলে নিজের বোনের ভালোবাসাটা আজ কেন বুঝতে চাইছেন না আপনি?”
–“ভালোবাসা বুঝি আমি, বুঝি। বুঝি বলেই মাইশার জন্য ভয় হয় আমার। ইরান যদি ভালোবেসে না থাকে ওকে? তোমাকে পাওয়ার জন্য যদি এইসব ফন্দি আঁটে তখন? তখন আমার বোনটা একেবারে শেষ হয়ে যাবে রুহি। শেষ হয়ে যাবে।”
–“আপনি এখনো ওই একটা কথাতেই আটকে আছেন? এতক্ষণ যাবত কি বললাম আপনাকে আমি? আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।”
কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হতেই আদ্র আমার হাত চেপে ধরে বললো,
–“কোথায় যাচ্ছো?”
–“মাইশার কাছে।”
আদ্র তৎক্ষনাৎ আমার হাত ছেড়ে দিলেন। তারপর বললেন,
–“তাড়াতাড়ি রুমে আসবে। ক্লান্ত লাগছে বড্ড ঘুমাবো আমি।”
–“ঘুমিয়ে পড়ুন, আমি আজ মাইশার সাথেই থাকছি।”
কথাটা বলে আবারো পা বাড়াতেই আদ্র খপ করে হাত ধরলেন। তারপর মিহি কন্ঠে বললেন,
–“বিয়ের পর একদিনও তোমাকে ছাড়া থেকেছি আমি? তোমাকে ছাড়া ঘুম হয় না আমার, সেটা জানো না তুমি?”
আমি আদ্র’র থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মৃদু হেসে বললাম,
–“ঘুমিয়ে পড়ুন।”
কথাটা বলে একপ্রকার দৌড়েই বের হয়ে গেলাম রুম থেকে। যেতে যেতে অবশ্য রুম থেকে ভাংচুরের শব্দও পেয়েছি। তবুও পেছন ফিরে তাকায়নি। উনাকে নিজের মতো একা ছেড়ে এসেছি। এবার নিশ্চয়ই সবকিছু নিয়ে ভাববেন উনি।
মাইশার ঘরে আসতেই দেখলাম মেয়েটা তখনো কাঁদছে। মামনি আর তিন্নি ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ও কিছুতেই খাচ্ছে না। আমি তিন্নিকে সরতে বলে মাইশার পাশ ঘেঁষে বসলাম। একহাতে ওকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম,
–“চিন্তা করো না, ইরান ভাইয়া তোমারই হবে৷ সবটা বুঝে নেওয়ার জন্য একটু সময় দাও তোমার ভাইয়াকে। উনি নিশ্চয়ই মেনে নিবে তোমাদের ভালোবাসাটা।”
মাইশা নিশ্চুপ। নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা। অনেক বোঝানোর পর মামনি ওকে খাওয়াতে সফল হলো। মাইশাকে খাওয়ানো শেষ করেই মামনি চলে গেছে। মাইশা আর তিন্নি দুজনেই শুয়ে পড়েছে। আমি মাইশার মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। এখন আর এ ঘরে মন টিকছে না। আদ্রকে মুখে যতই বলি আজ ও ঘরে যাবো না। কিন্তু সত্যি তো এটাই উনাকে ছাড়া আমিও থাকতে পারি না। উনার মতো করে আমারও ঘুম আসবেই না। তাই আমাদের ঘরে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম। তখনই খট করে দরজা খোলার শব্দে মাথা তুলে তাকালাম সেদিকে। দেখলাম আদ্র দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আমাকে দাঁড়াতে দেখেই উনি দ্রুত আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি কিছু বলার চেষ্টা করতেই উনি এক টানে আমায় কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। আমি কিছু না বলে চুপ চাপ উনার গলা জড়িয়ে ধরে শান্ত চোখে উনাকেই দেখছি। উনি একেবারে বিছানায় বসিয়ে দিলেন আমাকে। সারা রুমে একবার চোখ বুলালাম। দেখলাম ফুলদানি আর সেন্টার টেবিলটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য উঠতে গেলেই উনি ধমকের সুরে বললেন,
–“চুপচাপ বসে থাকো। কাল সকালে সার্ভেন্ট এসে পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে।”
বাধ্য মেয়ের মতো উনার কথা মেনে নিলাম। উনি আমার গালে হাত রেখে নরম স্বরে বললেন,
–“জানো তো রাগ উঠলে নিজেকে সামলাতে পারি না। যাচ্ছেতাই কান্ড ঘটিয়ে ফেলি। তাই বলে সেসময়ে তুমিও আমাকে ছেড়ে যাবে?”
–“আমি আপনাকে ছেড়ে যায়নি। আপনাকে ছেড়ে যেতে পারি না আমি। শুধুমাত্র কিছু সময়ের জন্য আপনাকে একা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। একান্তে মাইশা আর ইরান ভাইয়াকে নিয়ে ভাবার জন্য সেসময় আপনাকে একা ফেলে চলে গেছিলাম রুম থেকে।”
আদ্র কিছু বললো না। শুধু শান্ত ভাবে চেয়ে রইলো আমার দিকে৷ আমি আবারো আদ্র’র হাতে হাত রেখে বললাম,
–“কি ভাবলেন ওদের নিয়ে?”
আদ্র বালিশ ঠিক করে শুতে শুতে বললো,
–“কাল বলবো। এখন আমার ঘুমানোটা বড্ড বেশি প্রয়োজন, তাই ঘুমাবো এখন আমি।”
কথাটা বলে আমাকে আর কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটানে উনার বুকে নিয়ে নিলেন। তারপর আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই বললেন,
–“ঘুমিয়ে পড়ো।”
–
দেড়টা নাগাদ বাজে৷ ইরান ভাইয়ার পুরো পরিবার এসেছে আজ আমাদের বাসায়। খাবার টেবিলে বসে সবাই আদ্র’র জন্য অপেক্ষা করছে। মাইশা আর ইরান ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্যই আদ্র আজ ডেকেছে উনাদের৷ অবশেষে আদ্র রাজি হোন ওদের সম্পর্কে। তাই ইরান আজ স্ব পরিবারে আমাদের বাসায় উপস্থিত হয়েছেন। আদ্র কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হতে উপরে গেছেন৷ ওর জন্য সবাই খাবার নিয়ে বসে আছে। আর মিনিট দশেক গড়াতেই আদ্র এসে বসলেন টেবিলে। উনি এসে বসতেই বড়রা সবাই খেতে শুরু করেন।
সকল কথাবার্তা বলা শেষে ঠিক করা হয় আজই ঘরোয়া ভাবে ওদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে৷ বিকেলের দিকে হলুদ এবং রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে। তারমানে হাতে একদিনেরও সময় নেই। যা করার এক্ষুনি করতে হবে। সেই মোতাবেক আদ্র নিজেই ডেকোরেশনের লোকদের ফোন করে সব বুঝিয়ে দিলো। তারা তৎক্ষনাৎ এসেই ডেকোরেশনের কাজে লেগে পড়লো। আর এদিকে আমি তিন্নি মাইশা আদ্র ইরান ভাইয়া পাঁচজনে বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। এখন বাজে আড়াইটা। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল পাঁচটা নাগাদ। অর্থাৎ শপিং করার জন্য আমাদের হাতে আর মাত্র আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় আছে। আদ্র আমাদের এমন একটা দোকানে নিয়ে এলো যেখানে বিয়ে থেকে শুরু করে এ টু যেড সব রকমের জিনিস পাওয়া যায় তাও আবার ব্রান্ডের৷ আমরা প্রথমেই মাইশা আর ইরান ভাইয়ার জন্য হলুদের শাড়ি পাঞ্জাবী এবং বিয়ের জন্য শেরওয়ানি এবং ব্রাইডাল লেহেঙ্গা কিনে নিলাম। মাইশার লেহেঙ্গাটা ইমারজেন্সি বানাতে দেওয়া হয়েছে। উনারা বলেছেন আটটা নাগাদ লেহেঙ্গা পৌঁছে যাবে। ওদের দুজনের কেনাকাটা শেষে আদ্র আমাদের মেয়েদের জন্য শাড়ি ও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবী কিনে নিলো৷ কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিন্নির থেকে এক মেকআপ আর্টিস্টের নাম্বার নিয়ে তাকে বাড়িতে ডেকে নিলো।
ছাদের এককোনে দাঁড়িয়ে স্টেজে বসে থাকা দুই ভাই-বোনের কান্না দেখছি ঠোঁটে একরাশ হাসি নিয়ে। মাইশা আদ্রকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছে। আজকে কষ্টের কান্না নয় সুখের কান্না কাঁদছে দুজনেই। দূর থেকে দুই ভাইবোনের এমন দৃশ্য দেখে আমার চোখের কোনেও পানি জমলো। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। ফারাবী ভাইয়া হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে নিলাম। ফারাবী ভাইয়া আমার মাথা গাট্টা মেরে বললো,
–“কিরে কাঁদছিস কেন?”
আমি স্টেজে বসে থাকা আদ্র আর মাইশাকে দেখিয়ে বললাম,
–“ভাই-বোনের ভালোবাসা কত সুন্দর তাই না?”
–“হ্যাঁ, পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর সম্পর্ক হচ্ছে ভাই-বোনের।”
ফারাবী ভাইয়ার কথায় এবার বড্ড উদাসীন হয়ে গেলাম আমি। এক দৃষ্টিতে আদ্র আর মাইশার দিকে তাকিয়ে থেকেই উদাস কন্ঠে বললাম,
–“আচ্ছা আমার কোনো ভাই বা বোন নেই কেন? জানো মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয় এটা ভেবে৷ আজ আমার ভাই-বোন থাকলেও নিশ্চয়ই আমায় সব কষ্ট থেকে আগলে রাখতো? অনায়াসে আমার সব আবদার পূরন করতো? কেন আমার ভাই বোন নেই, বলো না?”
কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। মাথায় কেউ আলতো করে চ/ড় মারাতে পেছন ফিরে দেখলাম আমার পুরো কাজিন মহল হাজির। রুপ ভাইয়া আমাকে ধমকের স্বরে বলে,
–“কি বলতে চাচ্ছিস তুই? আমরা তোর ভাই বোন না?”
–“নাহ ভাইয়া তেমন কিছু ভেবে___”
–“তাহলে আজ এই কথাগুলো কেন বলছিস রুহি?”
আপিও বড্ড মন খারাপ নিয়ে কথাগুলো বললো। আমি মুচকি হেসে বললাম,
–“আসলে আপি এমনি জাস্ট বলেছি। তাই বলে এই ভেবো না তোমরা আমার কেউ না। তোমরা সকলেই আমার খুব প্রিয়, খুব কাছের।”
রুপ ভাইয়া এবার এগিয়ে এসে আমার গালে হাত রেখে বললো,
–“রুহি সত্যি করে বল তো, সব ঠিক আছে? কিছু হয়েছে তোর?”
আমি রুপ ভাইয়ার হাতে হাত রেখে বললাম,
–“কিচ্ছু হয়নি, আমি একদম ঠিক আছি ভাইয়া।”
–“তাহলে বললি কেন? তোর ভাই বোন থাকলে তোকে সব কষ্ট থেকে আগলে রাখতো, তোর সব আবদার পূরন করতো? সত্যি করে বল তো রুহি, আমরা কি তোকে সবকিছু থেকে আগলে রাখতে পারছি না? তোর আবদার মেটাতে পারছি না? আমাদের অজান্তেই কি কোনো কষ্টে আছিস তুই? আমাদের থেকে কি কিছু লুকোচ্ছিস তুই?”
ফারাবী ভাইয়ার কথায় বড্ড আবেগী হয়ে গেলাম। চোখে আবার অশ্রুকণা এসে ভীর জমালো। ফারাবী ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেললাম। সত্যিই আমার কাজিন ভাগ্য বেশ ভালো। খুব লাকি আমি এদের মতো ভাই বোন পেয়ে৷
–
হলুদ পর্ব নাচ/গান শেষ হয়েছে মিনিট পনেরো হবে। এখন রাত আটটা নাগাদ বাজে। কিছুক্ষণ আগেই টেইলার্সের লোক এসে মাইশার বিয়ের লেহেঙ্গাটা দিয়ে গেছেন। মাইশাকে কনের সাজে সাজানো হচ্ছে এখন। আমিও হলুদের জন্য পড়া শাড়িটা চেঞ্জ করার জন্য রুমে এসেছি। দেখলাম বিছানায় একটা প্যাকেট রাখা৷ ওটা তুলে হাতে নিতেই দরজা লাগানোর শব্দে পেছন ফিরে তাকালাম। আদ্র এসেছে। পরনে ব্ল্যাক শার্ট-প্যান্ট, ব্ল্যাক কোর্ট। ব্ল্যাক শু, সানগ্লাস ওয়াচ সব ব্ল্যাক। চোখ ফেরানো দায় উনার থেকে। তবুও বহু কষ্টে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। আদ্র এগিয়ে এসে প্যাকেট থেকে শাড়িটা বের করে আমার হাতে দিয়ে বললেন,
–“আজকে এটা পড়বে তুমি।”
–“কখন কিনলেন শাড়িটা? আমি তো আপনাকে কোনোকিছু কিনতে দেখলাম না।”
–“তোমরা যখন শপিংমল থেকে বেরিয়ে এলে আমায় রেখে তখন কিনেছিলাম।”
উনার কথায় আমি শাড়িটা উল্টেপাল্টে দেখলাম। কালো রঙের জর্জেট শাড়ি। দেখতে অসম্ভব রকম সুন্দর। শাড়ি জুড়ে ছোট্ট ছোট্ট সিলভার কালার স্টোন বসানো। সাথে সিলভার কালারের স্লিভলেস ব্লাউজ। শাড়ি হাতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম চেঞ্জ করতে।
চলবে~