“আ না ম”- ২১
-Azyah সূচনা
খুলনা থেকে তথ্য এসেছে। জারার ভাইয়ের নাম জাহিন। জারার মায়ের কাছ থেকে ডাক্তার এর নাম,ঠিকানা নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। যার কাছে এক সময় চিকিৎসারত ছিলো জাহিন।ছোটোবেলা থেকেই অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করা হয়।সঠিকভাবে মানসিক বিকাশ না হওয়ায় সে বাকি বিশেষ শিশুদের মতনই অদ্ভুত আচরণে লিপ্ত ছিলো।একা একা কথা বলার স্বভাব ছিলো প্রখর।সামাজিক মেলামেশায় অনেকটা পিছিয়ে।তবে অতিরিক্ত জেদ পরিলক্ষিত ছিলো তার মধ্যে।আর এই জেদ সামলাতে পারতো তার একমাত্র বোন জারা।মায়ের সাথেও তার সম্পর্ক অতটা অটুট নয় যতটা জারার সাথে ছিলো। জারার মৃত্যুর ব্যাপারটাও সে এখনও মেনে নেয়নি।তার মতে তার বোন এখনো বেঁচে আছে।সে দেখতে পায় তাকে।কথা বলে তার ছবির সাথে অথবা একা একা। জারার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেলে হাত পো ছড়াছড়ি করে কাঁদে।
আজ শাবাবকে ক্লান্ত দেখালো। দুহাত মুঠ করে কপালে ঠেকিয়ে বসে আছে।মুখ নিচু করেই বলে উঠলো,
-“মানুষের কত সমস্যা!কত সমস্যা মানুষের!”
মির্জা বললো,
-“মানসিক রোগগুলো অতি মাত্রায় ভয়ঙ্কর হয় শাবাব।কিছু জিনগত আবার কিছু পুরোনো আঘাত।”
মৃদু উত্তেজিত স্বরে শাবাব বলে উঠে,
-“এই ছেলেটা যদি কোনোভাবে খুনের সাথে জড়িত থাকে?কি হবে তখন?”
-“এরূপ অপরাধের একটাই শাস্তি শাবাব সেটা তুমিও ভালো করে জানো।”
-“আমাদের আজকাল কেউ ভরসা করেনা তাই না?কেউ আমাদের সাহায্যই নিতে চায় না।এতটা অকেজো আমাদের সিস্টেম?নিজেরাই বিচার করতে আইন হাতে তুলছে।আর নতুন নতুন অপরাধ ঘটাচ্ছে।”
-“একটা মানুষের জন্য পুরো গ্রামের বদনাম।আর মানুষের মনে এই সাহসটা জোগাতে হবে আমরা তাদের বন্ধু।দায়িত্ব নিয়ে আমরাও কাজ করি।”
দিশেহারা শাবাব এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।আর বলে,
– “একা কিছুই হবেনা মির্জা!সবাইকে এলার্ট থাকতে হবে। কার মনে কি চলে কেউ জানে না।অপরাধের মোটিভ আমরা জানবো না অপরাধ ঘটার পূর্বে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু বিচার? ন্যায় বিচারতো এনে দেওয়ার ক্ষমতা আছে।তারপরও!”
-“লং টাইম প্রোসেস এটা”
-“আমার খুব ক্লান্ত লাগছে!খুব বেশি! ব্যাঙের মতন এদিক ওদিক লাফিয়ে যাচ্ছি।যেনো কেউ পেছন থেকে খিঁচে ধরে।যেখানেই হাত বাড়াচ্ছি ছাই হয়ে যাচ্ছে!”
আনাম চালাকি করতে বারণ করেছিলো।অথচ চালাকিটা শাবাব করবে।অবশ্যই করবে।তার আস্তানা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে।ধরে নিলো সেখানে অপরাধ ঘটলে সে আসবে।অথবা টার্গেট করবে। ফাহাদ আর সাইফার পরিবর্তে অন্য দুজন নারী এবং পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে এই নাটক সাজাবে। কয়জনকে চোখে চোখে রেখেছে সে?কতজনকে রাখতে পারবে?শাবাব আর রবিনের মিলিত সিদ্ধান্ত হয়।এই অভিনয়টা হবে খুলনাতেও। জারার ভাই জাহিনের সামনে।বড় একটা টিম রেডি করতে লাগলো।জঙ্গল আর তার আশপাশের এরিয়াতে হিডেন ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।সাধারণ মানুষের বেশে খুব সাবধানে ফেলতে হবে প্রতিটা কদম।আগামীকাল রাতে তাদের কাজ শুরু করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্ল্যানের মেইন দুজন পুলিশের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো সাথেসাথে।
এত এত ঝামেলায় রামশার কথা ভুলতে বসেছে সকলে।তবে শাবাব মানুষ তার পেছনেও রেখেছে।যেদিন জানতে পারে রামশা কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেছে?সন্দেহ আরো প্রখর হয়।
ফোন বাজে মির্জার।স্ক্রিনে নাম্বার দেখে অবাক হয়।লিয়ানা কল করছে।রিসিভ করে বললো,
-“হ্যালো লিয়ানা”
-“হ্যালো।”
-“হঠাৎ কল করলেন এনি প্রবলেম?”
-“কিছু বলার ছিলো!আর কিছু জানার ছিলো”
তেরছা চাহনি শাবাবের।লিয়ানার নাম মির্জার মুখে শুনে কান খাড়া হয়েছে।মনেমনে ভাবছে এক পাগল কম ছিলো? জারার ভাই নামক আরেকজন এসে হাজির।কেনো কল করেছে সেটাই জানতে চাওয়া শাবাবের মন।
লিয়ানা মির্জার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, -“অফিসার শাবাবকে ফোনটা দিন”
মির্জা কিছু না বলেই ফোন এগিয়ে দিলো। শাবাব অবাক হয়।পরপর ফোনটি নিয়ে কানে চাপলো।অন্যপাশ থেকে লিয়ানা বললো,
-“আমার এলবামটা নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে পারি অফিসার শাবাব?”
কোনো জবাব দিলো না শাবাব। যার মুখ সারাক্ষণ ধারালো অস্ত্রের মতন চলে সেই মুখ এখন নীরবতা বেছে নিয়েছে।কোনো উত্তর না পেয়ে লিয়ানা বলে উঠলো,
-“যবে থেকে জুড়েছেন আমার সাথে তবে থেকে আমাকে নিয়ে আপনার যত সমস্যা!কেনো অফিসার?আমি আপনাদের মতন নয়।আমি স্বাভাবিক নই।তাই বলে আমাকে অপদস্ত করবেন পদে পদে?এই কারণেই ছুটি নিয়েছি মানুষ এর কাছ থেকে!আমাকে আমার শেষ স্মৃতিটুকু রাখতে দিলেন না? অকৃতজ্ঞ আপনারা! নিষ্ঠুর!যান্ত্রিক জীবনে চলতে চলতে নিজেকে হারাচ্ছেন!এরচেয়ে আমি সুখে আছি।আপনাদের এই সুখ সহ্য হচ্ছিলো না!কারণ আপনারা প্রতিটা স্বাভাবিক মানুষ অসুখী”
নাকের পাটা ফুলে ফেঁপে উঠলে শাবাবের।বললো,
-“বেশি কথা বলছে…..”
শাবাবের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই লিয়ানা বলে উঠলো,
-“মনুষ্য যখন মনুষ্যকেই দূরে ঠেলে দেয়।তখন এই নিসর্গ হয় তার সঙ্গী”
শাবাব চোয়াল শক্ত করে বললো, -“আর কিছু বলবেন?”
লিয়ানা তার অভ্যন্তরীণ জেদ দমিয়ে নিলো।শান্ত করলো মস্তিষ্ক।বললো,
-“আমার এলবামটা ফিরিয়ে দিবেন।”
শাবাব জেনেছে এই বিষয়ে এক্সপার্ট এর কাছ থেকে।হিমশীতল পরিবেশ তৈরি এবং নানান প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই কার্মিকা গাছ উৎপাদন সম্ভব।ঠিক তেমন প্রক্রিয়া যেমনটা জাফরান উৎপাদনের ক্ষেত্রে অবলম্বন করতে হয়।তবে বিষাক্ত হওয়ার কারণে অনুমতি নেই। অনুমতিবিহীন স্মাগলার ছাড়া আর কেউ এই বীজ দেশে আনতে পারবে না।তারাই জানে এসব বেআইনি কাজ।আর করেও। লিয়ানার পক্ষে কি সম্ভব এই বীজ সংগ্রহ?
ছাদটা শাবাবের পছন্দের জায়গা।খুব পছন্দ করে এই একাকী নীরবে দাঁড়িয়ে যান্ত্রিক শহরকে চোখে ধারণ করতে।একবার ফের এসেছে কাজের চোঁখে ফাঁকি দিয়ে।রেলিংয়ে হাত রেখে দাঁড়ালো আনমনা ভঙ্গিতে।রাস্তা থেকে গাড়ীর তীব্র হর্নের আওয়াজ।কোনোটাই যেনো গায়ে এসে লাগছে না তার।বাতাসের গতিবেগ কখনো তীব্র আবার কখনো ধিমা।গরম শরীরে এসে ঝাপটে পড়লেই শীতলতা নামে শিরদাঁড়ায়। চোঁখে ভাসতে শুরু করেছে অতীত। অভাব ছিল না, প্রেমজনিত কোনো ঘটনা ছিলো না।তবে ভালোবাসার সম্পর্কের প্রতি তীব্র ঘৃনা জন্মেছে সেদিন থেকে যেদিন আপন বোনকে দেখেছে ধুঁকে ধুঁকে মরতে। প্রতিনিয়ত কাউকে ভালোবাসার মাশুল দিয়ে আসতে।কি সহ্য করেনি তার বোন?সাথে তার পরিবার? হাসপাতালে রাত কাটিয়েছে এই প্রার্থনায় যেনো তার বোনটা বেঁচে ফিরে। মির্জাকে দেখেছে শুরু থেকেই।এক সমুদ্র ভালোবাসা দেওয়ার পরও সে নিঃস্ব ছিলো এক বিরান পথে। একগুঁয়ে জীবনে চলার পথে হোঁচট খেয়েছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে।জীবনটা ছিলো যান্ত্রিক।সম্পূর্ণ যান্ত্রিক।খেলার বয়সে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে হতো।আদিম যুগের চিন্তাধারার মধ্যে চলেছে জীবন।ছিলো অন্যের সাথে শুধুই প্রতিযোগিতা।কে কার চেয়ে উপরে উঠতে পারে।মনের কথা প্রকাশের সুযোগটা পায়নি।বাবা মাকে কাছে পায়নি কখনো।তবে তারা হয়তো ধীরেধীরে উপলদ্ধি করেছেন।সময়ের সাথে তাল মেলানো শুরু করেছেন।তবে খুব দেরিতে।ততদিনে কঠোর হয়ে উঠেছিলো শাবাবের স্তম্ভ।বাবা মায়ের উদ্দেশ্য ভুল ছিলো না শাবাব জানে।তবে বেশি ভালো চাইতে গিয়ে রোবটে পরিণত হতে হয়েছে শাবাবকে।বোনকে সামলে দিয়ে নিজের এক ভিন্ন পথ বেছে নেয়।এতদিন যা করতে পারেনি সবটাই পূর্ণতা দিচ্ছে।জীবন কারো ইশারায় নয় নিজের ইচ্ছে মোতাবেক চালনা করছে।মনের মধ্যে ‘নিজস্ব ইচ্ছা’ যা এতদিন ধামাচাপা পড়ে ছিলো।টেনে হিঁচড়ে বের করে চলছে সে।বেশ স্বাধীনভাবেই।
ফোনের অপরপাশে সাইফার উদ্বেগপূর্ণ গলার আওয়াজে শাবাব প্রশ্ন করলো,
-“কি হয়েছে?”
নিজের জীবন নিজে হিসেব নিকেশ করতে করতেই যান্ত্রিক সেলফোন বিরক্তিকরভাবে বেজে উঠে।সবসময়ের মতন মুখ কুঁচকে ফোন রিসিভ করতেই সাইফার অস্থির গলার স্বর ভাবতে বাধ্য করলো। নিশ্চয়ই এমন কিছু হয়েছে যেটা তাদের জন্য কল্যাণকর নয়।
প্রশ্নের জবাবে সাইফা বলে,
-“স্যার মেইল হ্যাকড আমার পিসির।আর পুরো সিস্টেম হ্যাক করার চেষ্টা হচ্ছে।সাথে একটা মেসেজ এসেছে।”
-“কি মেসেজ?”
-“সেখানে লিখা ট্রেইলার দিলাম।যতই নাটক সাজানো হোক আমি তেইশ সেপ্টেম্বর এর আগে হাজার রকমের চেষ্টা বৃথা”
মুখে ইচ্ছেমত নোংরা গালি আসছে।সাথে সাথে জ্ঞাত হলো এটাও পূর্বপরিকল্পিত।ফোন হাতে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে কয়েক দফা গালি দিয়েও বসলো শাবাব।তাদের সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ করার খেলায় মেতেছে খুনি। কাঁচের দরজায় জোরালো ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করলো।সকলেই উপস্থিত সেখানে। সাইফা থরথর কাপছে। কম্পিউটার এর সামনে বসে অনবরত ঘেমে চলেছে।অনেক সিক্রেট কোড আছে এখানে অনেক ইনফরমেশন।কেস সম্পর্কিত অথবা কেস ব্যতীত। বিকৃত মস্তিষ্কের আনাম এর কাছে সব তথ্য চলে গেলে অনেকটা বিপদে পড়তে হবে তাদের।
রবিন বলল, -“খুব কাছের কেউ আছে যে আমাদের সকল খবরাখবর জানে আর অপরাধীকে তথ্য দিচ্ছে।নাহয় সব কিভাবে জেনে যায় সে?”
সাইফার চোখে ‘এরোর’ শব্দটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর একটি শব্দ বলে মনে হলো।তাকে প্যানিক করতে দেখে শাবাব বলে উঠলো,
-“রিলাক্স সাইফা।প্যানিক করলে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হবে।”
পাশের ক্যাবিনেট থেকে পানির গ্লাস এনে তাকে এগিয়ে দিয়ে শাবাব আবার বলে উঠে,
-“পানিটা খাও।টেক এ ডিপ ব্রেথ।….তারপর ভাবো কি করবে”
এক ঢোকে পুরো পানির গ্লাস শেষ করলো সাইফা।একে একে সবাইকে চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছে সে।সবদিকে ঘেরাও করে ধরেছে যেনো। সাইফা বললো,
-“স্যার একটু দেখবেন আপনার ল্যাপটপে যে একসেস দেওয়া সেটাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা।”
-“লেট মি চেক!”
শাবাব বৈদ্যুতিক গতিতে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।তার মেইল কানেক্ট করা।সব ফাইল এখানেও সিংক হয়।ব্যুরোর পিসি এর সাথে। ঝটপট করে দেখলো প্রথম কিছু ফাইল ভ্যানিশ। সাইফা পাশে এসে দাঁড়ালে শাবাব বলে উঠে,
-“আমার একসেস এখনও রিমুভ করা হয়নি।”
সাইফা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় ল্যাপটপ। কম্পিত হাত চালিয়ে সব ফাইল পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে নিলো। ডাউনলোড হতে যতটা সময় নিচ্ছে ভয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে থাকে সাইফার। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে বারবার চেষ্টা করছে নিজেকে শান্ত করার।ফাইলগুলো আলাদাভাবে ডাউনলোড না হওয়া পর্যন্ত কিছুতেই সস্তি পাবেনা। পনেরো মিনিট সময় নিয়ে ডাউনলোড সম্পন্ন হলো।কিবোর্ডে আঙ্গুল চালিয়ে শাবাবের মেইল সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।সাথে ফাইলগুলো ডিলেট করে ধপ করে মাথা নামায় সাইফা।
শাবাব জানতে চায়, -“কি হলো?”
-“যতটুক পেরেছি ডিলেট করে দিয়েছি স্যার।জানি না কতটুকু ইনফরমেশন নিতে পেরেছে।সম্ভবত প্রথম দুটো ফাইল।যেখানে সাজাপ্রাপ্ত দুজন আসামীর ডিটেইলস ছিলো।ভাগ্যক্রমে আপনার মেইল লগ ইন ছিলো।আপনি এই মেইলটা আর রাখবেন না। ডিষ্ট্রয় করে দিন।”
ফুঁসতে থাকা শাবাব বললো, -“এর আগে সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট এ কল করো।ওদের এই মেইল আর কোথায় লগ ইন হয়েছে জানো। আইপি এড্রেস চাই আমার!আর ঘরের ভেতরে কোন কালসাপ আছে?ধরা পড়লে জানে মেরে ফেলবো।কথাটা সবার কানে দিলাম।”
“আমাদের মধ্যে কেই বা করবে?কেনোই করবে?” -রবিন প্রশ্ন করলো।
শাবাব চারিদিকে নজর ফেরায়।উকি দেয় একদম কোণায় কিচেনের দিকে।সাইফার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
“জামিল কোথায়?”
__
যামিনীর নগরীর বিসদৃশ রূপ।অপরিচিত পথে অলস আলোর ঝর্না।এক,দুই অথবা হাজারের অধিক গল্প লুকিয়ে রেখেছে এই শহর।প্রত্যেক নকশার পিছনে আছে একটি অজানা অধ্যায়।গাড়ির ধোঁয়ায় মিশে থাকা আলোর ছবি মিথ্যা আশার প্রতিফলন ঘটায়।এই মাত্র কি কোনো রশ্মির দেখা মিললো?নাকি শুধুই বিভ্রম।যা অপেক্ষা করছে শুধুমাত্র আস্তিত্বের দিকে।প্রধান রাস্তা,আলো,ভবন, লাইট পোস্ট,জ্যামে আটকে থাকা গাড়ীর হর্ন সবটা মিলেমিশে একাকার।শহুরেপনা রাতের ছবি তৈরি করছে।আকাশের দিকে চাইলে দেখা মেলে না এই এই হইচই।কালচে অম্বর শব্দহীন;নির্বাক।রহস্য এটে নিশ্চুপ।অদৃশ্য লোচনে আবদ্ধ করছে ঘটে চলা সবটা। স্থির শশাঙ্ক।তারাদের রোশনি একটি মরুবিদ্যুৎ সার্কিটের মত জড়িয়ে।
বদ্ধ কামরায় কোনো পুরুষালি স্বর ভাসলো,
-“তুমি উত্তম,তুমি অনবদ্য।কোনো ভুল নেই তোমার।দেখো পুরো সমাজ তোমার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছি আমি।কোনো পুলিশ তোমাকে পাকড়াও করার ক্ষমতা রাখছে না।তুমি সব পারো। এতোএতো খুন!এগুলো তোমার অপরাধ নয় আনাম!তুমি অপরাধীকে শাস্তি দিচ্ছ।এই সমাজের অপরাধ নিঃশেষ করছো তুমি!গর্ব করো নিজেকে নিয়ে।তুমি সবার মাঝে অন্যতম।”
কেমন যেনো এক সম্মোহনী গলার স্বর। শিরদাঁড়া শিরশির করছে।মনে হলো এই বাক্যসমূহের অতল সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে।
আনাম জবাব দিলো,
-“সত্যি?”
“হ্যাঁ আনাম! সত্যিই বলছি।তোমার মতন মাস্টারমাইন্ড হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ হয়।তাদের মধ্যে তুমি একজন।কখনো কোনো কাজে পিছু হটবে না।আমি তোমার সাথে আছি।”
-“আমি তোমার সব কথা শুনি”
-“ভবিষ্যতে শুনবেতো?”
-“অবশ্যই শুনবো!অবশ্যই!”
-“এবার তাকাও আমার চোখের দিকে।পৃথিবীর সব ভুলে যাও।মনে করো তুমিই সেরা!ইউ আর মার্ভালেস”
মাতালের মতন এদিক ওদিক মাথা দুলে চলেছে।তেজী গলায় বিপরীত বার্তা আসে।নিজের উপর অহংকারবোধ জন্মায়।সামনে থাকা পুরুষের চোখের মধ্যে হিপনোটাইজ হয়ে যাচ্ছে ধীরেধীরে।
-“আমি অদম্য!”
-“হ্যাঁ!আমি তোমার সাথে আছি।তোমাকে নিজ হাতে গড়বো।এবার এই ঔষধটা খাও।রাতে ভালো ঘুম“আ না ম”- ২২
-Azyah সূচনা
-“জাহিন?কেমন আছো?”
শাবাবের প্রশ্নে বোকার মতন মুখ তুলে চায় জাহিন। এতক্ষন লিপ্ত ছিলো অদ্ভুত এক খেলায়। হাতে নাইলন এর সুতো পেঁচাচ্ছে আবার খুলে ফেলছে। সুতো নিয়ে বিভিন্ন নকশা বুনছে হাতে।উনিশ বছরের এক ছেলে।দেহের গঠন শক্তপোক্ত।তার অদ্ভুত কর্মকাণ্ড ব্যতীত তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে যে স্বাভাবিক নয়।
শাবাবের দিকে চেয়ে ফিক করে হেঁসে উঠলো। অদ্ভুত হাঁসি। সুতো পেঁচানো হাত তড়াক করে শাবাবের মুখ সম্মুখে এনে বললো,
-“দেখো মাকড়সার জাল”
শাবাব হালকা হেঁসে বললো, -“খুব সুন্দর।”
হঠাৎ করে জাহিন কপাল কুঁচকে নেয়।বলে, -“নাহ! জাল সুন্দর না!তুমি কে? হ্যাঁ?”
-“আমি?আমি শাবাব।বন্ধুত্ব করবে আমার সাথে?”
বলে হাত এগিয়ে দেয় জাহিনের দিকে।এখনও চেহারা থেকে বিরক্তি কাটলো না।মুখ কুচকেই বসে আছে।মির্জা ঝুঁকলো শাবাবের দিকে।কানেকানে ফিসফিস করে বললো,
-“এমন গম্ভীর গলায় হাত বাড়ালে স্বাভাবিক মানুষও বন্ধুত্ব করবে না”
চোখ কটমট করে চাইলো শাবাব মির্জার দিকে।প্রথম থেকেই তার গলার স্বর এমন।কথা বলার ভঙ্গিও।হুট করে কিভাবে পরিবর্তন করবে? মির্জাকে তোয়াক্কা না করে শাবাব মুখে লম্বা হাসি টানে।নিজের ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে।
আবার বললো, -“করবে বন্ধুত্ব জাহিন?”
-“নাহ!”
হাসিটা উধাও। অধৈর্য্য সে।অল্পতে বিরক্ত হওয়া তার স্বভাব।এখানে সুস্থ কোনো মানুষ থাকলে ঘাড় মটকে দেওয়ার মতন ইচ্ছা পোষণ করতো।তবে করলো না।আবারো ঠোঁটে মিথ্যে হাঁসি টানে।ভাবলো কি করে তাকে আয়ত্তে আনা যায়।মাঝেমধ্যে পথ ভ্রষ্ট হয় সাইফা।কাজের ফাঁকে ফাঁকে পা পিছলে যায়। মতিভ্রম হয়।যেমনটা এখন।সবসময় তাচ্ছিল্যের হাঁসি হাঁসতে দেখা শাবাবের মুখে এত লম্বা চওড়া হাঁসি দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি।সে নিজেও জানে এই হাঁসির পেছনের ধৃষ্টতা। তারপরও মন জুড়িয়ে গেলো অজান্তে।মনে মনে ভাবতে লাগলো এভাবে হাঁসলেইতো ভালো দেখায়!অযথা ব্যাঙের ছাতার মতন মুখ করে রাখে কেনো কে জানে?আসলেই ছেলেরা বোঝে না আসলে তাদের কিসে মানায়।
শাবাব গলার স্বর নরম করে বললো, -“আচ্ছা জাহিন?বলোতো তোমার পছন্দের খাবার কি?”
-“আমার পছন্দের খাবার?আমার জারা আপু আছে না?আপু আমাকে কেক বানিয়ে খাওয়ায়।আমার কেক পছন্দ” বেশ উৎসাহ নিয়েই উত্তর দেয় এবারে জাহিন।
-“তোমার জন্য কেক আনাই?খাবে?”
আবারো মতিগতি বদলে গেলো।রেগে বললো, -“তোমার কেক খাবো না!”
ডানে চেয়ে শূন্যে চেয়ে একাকী জাহিন বলতে লাগলো,
-“আপু!আজ কেক বানিয়ে দাও।এই লোক আমাকে কেক খাওয়াতে চায়।তুমি না আমাকে বলেছো অপরিচিত কেউ কিছু দিলে খেতে না?”
সবাই একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। কার সাথে কথা বলছে ও?যেখানে মুখ ঘুরিয়ে আছে সেখানে কারো উপস্থিতি নেই। দীর্ঘশ্বাস টেনে শাবাব আবার তাকে বললো,
-“হ্যাঁ তোমার আপুইতো বানিয়ে দিবে কেক।”
-“তুমি আমার আপুকে দেখছো?”
-“হ্যাঁ জাহিন।দেখছি।এইতো এখানে দাঁড়িয়ে আছে।সে কি বলছে জানো?”
আবারো বোকার মতোন মুখ বানিয়ে প্রশ্ন করলো,”কি বলছে আপু?আমি কেনো শুনছি না?আমিতো আপুর সব কথা শুনি।”
ঠান্ডা মাথায় শাবাব জাহিনের উদ্দেশ্যে বলে, “জানো আমি কে?তোমার জারা আপুর বন্ধু।সে আমাকে বলেছিলো তুমি নাকি ওর লক্ষী ভাই।সে আমাকে একটা টপ সিক্রেট বলেছে।তুমি শুনবে?”
-“হুম!শুনবো।তাড়াতাড়ি বলো আমার রাগ লাগছে।তোমরা আমার সাথে এত কথা বলছো কেনো?”
পাশে থাকা ডক্টর ইশারা করলেন।ওকে বেশি চাপ না দিতে। শাবাব হাত দেখিয়ে তাকে থামিয়ে দেয়।আশ্বাস দেয় ইশারায়।
শাবাব আবার বললো, -“তোমার আপু বলেছে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে।আমি তোমার খুব ভালো বন্ধু হব কেমন?তুমি আমাকে তোমার সব কথা।গল্প করবে কেমন?”
-“আপু সত্যিই এটা বলেছে?”
-“হ্যাঁ”
-“ওকে তুমি আমার বন্ধু!”
কিছুটা স্বস্তি পায় শাবাব।মনেমনে যা ভেবে এসেছিল এখন সেই প্রশ্ন করার পালা।একটা নোটপ্যাড নেয় শাবাব।সাথে একটা লাল মার্কার পেন।
জাহিনের উদ্দেশ্যে বললো, -“এসো আমরা একটা গেম খেলি”
গেম এর কথা শুনে জাহিন চঞ্চল হয়ে উঠে।খাবলে ধরে খাতা আর মার্কার পেন।বলে,
-“কি গেম খেলবো?আসো আসো।আমিও খেলবো।”
-“ওকে জাহিন।আমি একটা শব্দ লিখি।তুমিও সেটা লিখবে কেমন?”
জাহিন মাথা উপর নিচ দুলিয়ে সম্মতি প্রদান করলো। শাবাব তার হাত থেকে আলতো করে খাতা আর পেন নিজে লিখলো ‘লুজার’।পরপর জাহিন এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
-“দেখোতো কি লিখেছি আমি?”
জাহিন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে চায়। তোতলানোর সুরে বলে,
-“ল.. লু. জার।তুমি লুজার!” বলে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে জাহিন।
-“ভেরি গুড জাহিন।এবার তুমি লেখো”
কলম ধরেছে উল্টো হাতে।গোলগোল চোখে চেয়ে আছে শাবাব।বাম হাতের বিষয়টা মাথায় আসতেই মস্তিষ্ক সজাগ হয়।একে একে সকলের চোখেই সবটা পরিষ্কার। শাবাব ঠোঁট কামড়ে দেখছে সবটাই। জাহিনের লেখা শেষ হলে পূর্বের সেই গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
-“আরো কয়েকবার লিখো জাহিন!”
__
-“আপনিও কি তাই ভাবছেন যা আমরা ভাবছি?”
সাইফার প্রশ্নে ফিরে চাইলো শাবাব।রবিনের দিকে ঘুরে পকেটে হাত গুজে।লম্বাটে মুখটায় সবটাই অস্পষ্ট। ঘোলাটে সব তার চিন্তাধারা।
শাবাব বললো, -“ভাবার কি আছে?২০% ক্লিয়ার।আসলেই সে মানসিক রোগী নাকি নাটক করছে সেটা প্রমাণ করতে হবে”
-“হাতের লেখা মিলিয়েছি স্যার।মিললো না যে।”
-“সে যদি আসলেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয় তাহলে তার লেখার হাত কাঁপবেই। পদে পদে পরিবর্তন হবে।আর যদি সে অভিনয় করে থাকে তাহলে ইচ্ছেকৃত হাতের লেখা পরিবর্তন করেছে।তবে একজায়গায় নিজে চেয়েও পার পেলো না সেটা হচ্ছে তার বাম হাতে লেখা।সব দিক দিয়ে আমাদের প্ল্যান ভেস্তে গেলো।এত সুন্দর করে সাজিয়েছিলাম নতুন অফিসার এনে।”
শাবাব সাইফার মধ্যে যোগ হয়ে বললো রবিন। শাবাব বললো,
-“এখনও পুরোপুরি ভেস্তে যায়নি।যে ছেলে লুজার লেখা পড়তে পেরেছে,লুজার অর্থ বুঝেছে আমি আশা করি সে আরো অনেককিছুই বুঝে।তার চোখের সামনে ওই দৃশ্যটাই তুলে ধরতে হবে।যদি ও ট্রিগার হয়ে আক্রমণ করে তাহলেতো হলোই”
রবিন জবাব দিলো, -“ডাক্তার এলাও করবে?যদি হিতের বিপরীত হয়?”
সাইফা বললো, -“আমিও তাই ভাবছি।ওকে ঠান্ডা মাথায় সত্য বলতে বাধ্য করতে হবে।”
ফোন বেজে উঠে রবিনের।দুজনকে এক্সকিউজ মি বলে স্থান ত্যাগ করে। শাবাব পূনরায় ঘুরে চেয়েছে। কাঁচের তৈরি দেয়ালের বাহিরে চেয়ে।খুলনায় এসেছে তিন চার ঘণ্টা হবে। সাইফা এখনও নিশ্চুপ। শাবাবের চিন্তিত মুখ এর দিকে চাইলো প্রগাঢ় দৃষ্টিতে। অবাধ্য হৃদয় এস. আই শাবাব নামক মোহে ধীরেধীরে গ্রাস হচ্ছে। শাবাব ব্যস্ত তার চিন্তার রেখা ঢাকতে আর সাইফা ব্যস্ত নিজের অনুভূতি ঢাকতে।কেসের কারণে এদিক ওদিক দৌড়েও শাবাবের মুখ দর্শনে ভুল হয়না।
আকস্মাৎ শাবাব বলে উঠে, -“ভালো লেগেছে আমাকে?”
সাইফা পূর্ব প্রস্তুত হতে শিখেছে আজকাল। মাথা দোলালো দুদিকে হতাশায়।লোকটা কি ইহকাল এমন থাকবে?মানুষ মিষ্টি ভাষা না বলুক সুন্দর করেতো কথা বলতে পারে?
কাটকাট জবাব দিলো সেও, -“জ্বি না স্যার।”
-“নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে।নাহয় কোন মেয়ে কেনো এভাবে একটা পুরুষের দিকে চেয়ে থাকবে?”
লম্বাটে নিঃশ্বাস ফেলে সাইফা বলে উঠলো, -“বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়াবো?এত বড় দুঃসাধ্য আমার?”
সাইফার উত্তরেও অবাক না হয়ে পারেনা।সামান্য ঘাড় ঘুড়িয়ে আড়চোখে দেখে দেয় সাইফাকে। সাইফার নজর বাহিরের দিকে। দুঃসাধ্য সাধন করতে না পারলেও দুঃসাহস আছে বটে।ধীরেধীরে এই সাহস বাড়ছে।একবার বলেছিলো তার এমন অ্যাটিটিউড ইমপ্রেসিভ মনে হয়েছে।মেয়েটা সেই ভাবমূর্তি ধরেই চলছে।
শাবাব নিজের স্বভাবকে আর সাইফার ভাবের মতন পরিবর্তন করতে পারলো না।জবাবে বললো,
-“নিজেকে বামন বলছো সেটা মানলাম।কারণ তুমি বেটে।আমাকে চাঁদ বলে সম্বোধন করলে?তোমার ব্যাপারটা আমার ঠিক সুবিধের মনে হচ্ছে না সাইফা।”
-“আপনি তাহলে সূর্য।সূর্যের মতন তেজী।আশপাশের মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করতে সক্ষম।এবার ঠিক আছে স্যার?”
-“হুম! ইট সুটস মি।….কাজ করো যাও”
সাইফা চলে যাওয়ার জন্য পা এগোয়।কিছুদূর গিয়ে পূনরায় ফিরে এলো। শাবাবের থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“সূর্যের তেজও শেষ বিকেলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে”
___
সাইফা আর ফাহাদ দিয়েছে নতুন তথ্য।তাদের সন্দেহ সঠিক।তার পাশাপাশি ঠিক প্রমাণিত হলো লিয়ানার কথা।প্রত্যেকটা ভিকটিম এর পাস্ট হিস্ট্রি জোগাড় করা হয়েছে।তাদের মধ্যে সাতজন ধর্ষণ মামলার আসামী।কয়েকজন জামিনে বেরিয়ে আসে।আর বাকিরা সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জেল থেকে মুক্তি পায়।তাছাড়া আরো জানা গেছে তাদের মুক্তির পেছনে শক্তিশালী ব্যক্তিদের হাত আছে।বাকি পাঁচ জনের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।তারা সকলেই আলালের ঘরের দুলাল।আর উশৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত। আধুনিকতায় মত্ত জীবনযাপন করতো।
শাবাব রবিনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, -“এ্যারিক স্যার সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের সব ডিটেইলস জানেন?”
রবিন জবাব দিলো, -“এগুলো বাবার রিটায়ার্ড হওয়ার পরের কেস।আর এইসব কেস এর দায়িত্বে আমরা ছিলাম না।”
সাইফা বললো, -“এসব আসামীদের পক্ষে লয়াররা লড়েছেন এবং তারা ওই কেস জিতে যায়।”
-“ভুক্তভোগী মেয়েদের পক্ষ থেকে ডিফেন্ড করেনি কেউ?” শাবাব প্রশ্ন করে।
-“স্যার…কেস হয়েছে যেহেতু অবশ্যই ওই মেয়েদের ফ্যামিলি করেছে।কিন্তু কিছু কেস স্টাডি করে দেখলাম।এক এক করে সবাই পিছু হটে যায়।….এখানেও সন্দেহের একটা বিষয় আছে।হুট করে পিছু হটে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে?”
শাবাব গম্ভীর গলায় বললো, -“এখন আর কি?যাও মেয়েদের ডিটেইলস বের করো।আর ফাহাদকে পাঠাও ওই আলালের ঘরের দুলালদের জন্ম কুষ্টি বের করতে।মেয়েদের পিছু হটে যাওয়ার পেছনে হয়তো বিশেষ কারো হাত আছে।আর নয়তো কিলার এর।”
রবিন বলে উঠলো, -“আজকাল এসব কেসে সম্মানের ভয়ে কেউ এগোয় না।এটাও একটা কারণ হতে পারে।”
সর্বদাই নীরবতায় কিছু ভাবতে থাকে শাবাব।মাঝেমধ্যে সাইফার নজরে পড়ে। নিঃশব্দ থেকে কোনো পরিকল্পনা করে হয়তো।সময়ের ব্যবধানে রবিনের দিকে চাইলো।বললো,
-“এ্যারিক স্যারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।”
রবিন ‘শিওর’ বলে বাবার নাম্বারে ফোন করলো।কয়েকবার রিং হয়ে কেটে যায়। পূর্ণবার ফোন মেলায় রবিন।দ্বিতীয়বারে ফোন রিসিভ হলো। শাবাব রবিনের কাছ থেকে ফোন নিয়ে চলে গেলো কিছুটা দুরত্বে। এক কোণে দাঁড়িয়ে বললো,
-“কেমন আছেন স্যার?”
-“ভালো?…তুমি কেমন আছো?”
-“ভালো আছি স্যার।”
-“কিছু বলবে?”
-“হ্যাঁ।আমি জানতে চাচ্ছিলাম আপনাকে উপর মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।আপনি রিটায়ার্ড হওয়া স্বত্বেও?”
এ্যারিক রোজারিও ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলেন।বলতে লাগলেন,
-“কারণ আমার ছেলে এই কেস এর সাথে জড়িত।আমিও ছিলাম একসময়।তাই আমাকেই তাড়া দিচ্ছে বারবার।”
শাবাব বাঁকা হাসে।বলে,
-“নেক্সট টাইম উপর মহল থেকে কল আসলে আমার সাথে কথা বলতে বলবেন স্যার কাইন্ডলি।আর তাদের এটাও বলবেন চাপ প্রয়োগ করার পূর্বে তারা অন্য অপরাধীদের সাজা দিতে কতটুক সক্ষম হয়েছে সেটাও জানতে চাইবেন।”
-“মানে?” থমথমে গলায় জানতে চায় এ্যারিক রোজারিও।
-“মানে হচ্ছে স্যার এক আসামীকে ছেড়ে নিয়ে অন্য আসামীকে খুঁজে বেড়ালেতো হবেনা।বাকি সব আপনাকে এস. আই রবিন বলবেন।”
মির্জা এসেছে।মন তার ভীষণ ভালো দেখালো।পুরোনো প্রেম নতুনভাবে গুঞ্জন তুলছে তাই হয়তো।তার হাঁসি দেখে গা জ্বলে গেলো শাবাবের।কিছুতেই চায় না সে রুবি নামক আপদটার সাথে আবার জুড়ে যাক। ‘যারযার জীবন, তারতার সিদ্ধান্ত’ এই কথা ভেবে চুপ হয়ে আছে।তার ব্যক্তিগত জীবন।সে তার বুঝমত কাজ করবে। এতে দ্বিতীয় ব্যক্তির কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।
মির্জা হোটেলে ফিরে শাবাবের বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে বসে তাকে বাজিয়ে বললো,
-“একজন আকাশ বাতাসের সাথে কথা বলে, আরেকজন মৃত মানুষের সাথে। চারদিনের দুনিয়ায় দুইদিন এসব দেখেই কেটে যাচ্ছে”
চলবে… হবে।অপেক্ষা করবে না তোমার জন্মদিনের?তেইশ সেপ্টেম্বর এর?”
– “একটু আগে না ইনজেকশন দিলে?”
– “সেটা?সেটা তোমার মাথা ব্যথার জন্য দিয়েছি।”
প্রতিদিনের ঔষধ এটা।সত্যিই ভালো ঘুম হয়।এক ভিন্ন সস্তি পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত বন্ধুর হাত থেকে ঔষধটি নিয়ে খেয়ে ফেললো।হেলেদুলে হাঁটতে লাগলো আনাম।অজানা এক পথে।দিশে জানা নেই।তারপরও হাঁটছে কদম।
অনামকে বিদায় দিয়ে একাকী এক গলার স্বর চারিদিকে বারি খায়,
“নির্বোধ! জন্মদিন তোর জীবনের শেষদিন হবে”
চলবে…