“আ না ম”- ২৩
-Azyah সূচনা
ঠকঠক বুট জুতোর আওয়াজে একজোড়া চোখ চট করে খুলে যায়।মাথাটা ভারভার লাগছে।চোখ জ্বলছে অনবরত।কঠিন হৃদয়ের মনুষ্য দুর্বল।বিছানা থেকে ভার দেহ তুলে উঠতেই দেখা মিললো পুরুষ অবছায়ার।হাসলো আনাম।
ভারী গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, -“কেমন আছো?কতদিন দেখি না তোমায়?”
পুরুষটি হাসলো।মেডিসিন ঠিকঠাক কাজ করছে।প্রতিবার এই মেডিসিন এর প্রভাব দেখতে চলে আসে। নিশ্চিত হতে আসে।ভুলে সবকিছু এই নির্বোধ!পরশু তাদের দেখা হয়েছে।
-“আমাকে শেষ কবে দেখেছিলে আনাম?”
আনাম ভাবতে সময় নিলো।মনে করার চেষ্টা করছে।মাথা চুলকিয়ে জবাব দেয়,
– “মনে পড়ছে না”
-“আহা!ভুলে গেলে দেখি।গত সপ্তাহে দেখা হয়েছে আমাদের।”
-“কিছুই মনে থাকে না আমার।”
-“কোনো সমস্যা নেই।আমি আছি না তোমাকে সাহায্য করতে।আচ্ছা আজ ল্যাবে যাবে?”
উত্তেজিত হয়ে উঠে আনাম।মাথা জোরেজোরে দুলিয়ে বলে,
– “নাহ!আমি যাবো না ওখানে।বিশ্রী গন্ধ!ওই গন্ধ আমার সহ্য হয়না।ভেতরে সব গুলিয়ে আসে।”
অবাক হয় লোকটি। বিশ্রী গন্ধটা মনে আছে তার তাহলে।আকষ্মিক অস্থির হয়ে উঠছে আনাম। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে বারেবারে। হঠাৎ ঘামতে শুরু করলো।জেদ প্রবল বেগে মাথায় চাপতে শুরু করলে বিছানা থেকে পা ফেলে সব এলোমেলো করতে শুরু করলো।সবটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পুরুষটি।কোনো প্রতিক্রিয়া দিলো না।যেনো বেশ মজা পাচ্ছে।ভালো লাগছে এই পাগলামো দেখে। আনামকে হাতের পুতুল বানিয়ে নিজের কার্য সিদ্ধি লাভ করে পৈচাশিক শান্তি অনুভব করছে যেনো।আনামের ভয়ানক রক্তচক্ষু তার দিকে পড়লেই প্রতিক্রিয়া বদলায়।শক্ত হাতে ধরে থামায় তাকে।
বলে,
-“শান্ত হও!তোমার জেদ শুধু অপরাধীদের জন্য।এই জেদ জমিয়ে রাখো।জিততে হবে তোমায়।”
আনাম এর চোখ যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।গরম নিঃশ্বাস ফেলে জানতে চাইলো,
-“কে অপরাধী?”
-“তুমি জানো না?যারা অপরাধ করে তারা অপরাধী।”
-“কিসের অপরাধ?”
ফিরতি প্রশ্ন আসে আনামের দিক থেকে।তবে পুরুষটি কোনো জবাব দিলো না।পকেট থেকে ইনজেকশন বের আনামের হাতে পুশ করে দেয়।ধীরেধীরে শান্ত হতে লাগলো সে। ভ্যাবলার মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন।তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে চাইলে তাকে ধরে পূনরায় বিছানায় শুইয়ে দেয় লোকটি।
-“মোহরা তুমি আমার।আমি চাইলে তুমি শক্তিশালী আমি চাইলে দুর্বল।”
___
রবিন আর ফাহাদ একসাথে বসে।এই ব্যুরোতে একমাত্র ফাহাদ এর সাথেই তার জমে।রবিন এর শান্ত স্বভাব আর ফাহাদ তার এই স্বভাবটা বুঝে।খবর নিতে বের হলো স্মাগলারদের।শহরের প্রত্যেকটি থানায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।বিশেষ করে সমুদ্র বন্দরে। নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানালো।ইতিমধ্যে হাজির ফাহাদ পুরোনো পাপীদের হিসেব নিয়ে।ধরা পড়েছে এমন স্মাগলারদের ডিটেইল।
ফাহাদ রবিনের সামনে দশ পৃষ্ঠার একটি ফাইল রেখে বললো,
-“যারা অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত সবার লিস্ট স্যার।এরা এখন জেলে আছে।আমরা গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি।ওদের গ্যাং বড় হয়।একজন জেলে থাকলে আরেকজন সামলায়।”
রবিন বলল,- “আমাদের আশেপাশের থানায় আমরা গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।ঢাকাতে আমার টিম জিজ্ঞাসাবাদ করবে।বাকি শহরগুলোর থানায় জানিয়ে দাও।”
-“ওকে স্যার!”
রবিন ফাহাদের দিকে চেয়ে জানতে চায়,
-“এস. আই শাবাব কোথায়?চট্টগ্রাম ফেরেনি?”
-“স্যার হাসপাতালে যাবেন বলেছিলেন। জাহিনের ডক্টর এর সাথে মিটিং আছে।”
-“ওকে”
হাসপাতালে ডক্টর এরশাদ এর ক্যাবিনে রীতিমত ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। শাবাব,মির্জার এবং ডাক্তারের মধ্যে।উপায় চাইছে শাবাব তবে নিজের কথায় অনড় ডক্টর এরশাদ।তার ভাষ্যমতে কিছুতেই জাহিনকে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।তাকে অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না।
তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে শাবাব বলে উঠে,
-“ডক্টর এরশাদ?আপনার কি মনে হয় জাহিনকে আমরা চাপ প্রয়োগ করবো?আমরা ভুলিয়ে ফুঁসলিয়ে তার থেকে কিছু ইনফরমেশন নিতে চাই।সেদিন যেমনটা করলাম ঠিক তেমন।”
ডক্টর এরশাদ বললেন,
-“আপনারা বারবার জেরা করবেন।এটা ওটা জানতে চাইবেন এটা ওর মস্তিষ্কে প্রেশার পড়বে।”
শাবাব তুচ্ছ হাঁসলো।তীক্ষ্ম চোখে চেয়ে ডক্টর এরশাদকে বলে উঠলো,
-“কিছুটা পড়ালেখাতো আমরাও করেছি।অটিজম জনিত সমস্যায় যারা ভুগছে তাদের সাথে কথা বলা যায় না?তাদের প্রশ্ন করা যায়না?তারা স্কুল,কলেজে পড়ছে।তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষভাবেই তাকে হ্যান্ডেল করবো আমরাও।দরকার পড়লে এক্সপার্ট আনবো।”
-“ওর যে সমস্যাগুলো অনেকটা ক্রিটিকাল।ওর জন্য কখনো সেই বিশেষ পরিবেশ তৈরি করা হয়নি কখনো।আমাকে মাঝেমধ্যে দেখায়।আবার মাসখানেক গায়েব থাকে।টাকার কারণে আসতে চায় না।”
-“আপনি একজন ডাক্তার চাইলেই বিনামূল্যে একজনের সাহায্য করতে পারেন।কেনো করলেন না? অভাব অনটনে ভুগছেন? দেখেতো মনে হয়না।” সরাসরি প্রশ্ন ছুড়লো শাবাব।
কিছুটা লজ্জিত বোধ করলো ডক্টর এরশাদ।চোখ নামিয়ে রেখেছে।কিছু বলার ভাষা পেলো না।তাকে নত জানু হয়ে বসে থাকতে দেখে মির্জা প্রশ্ন করে,
-“আপনি এত না না করছেন কেনো?আমি আছি তাকে কুলভাবে হ্যান্ডেল করার জন্য।বারবার না করার পিছনে অন্য কোনো কারণ নেইতো?”
দ্রুত চোখ তুলে চায় ডক্টর এরশাদ।চোখ মুখে মৃদু রাগের ছাপ দেখা গেলো।সন্দেহ করা হচ্ছে তাকে।ভালোভাবেই বুঝেছে।কপট রাগ দেখিয়ে জবাব দিল,
-“আমাকে সন্দেহ করছেন?আশ্চর্য্য!…..আপনারা খুঁজে নিন এমন কাউকে যে ওকে হ্যান্ডেল করতে পারবে। বা আপনারাই করেন যা করার।আপনাদের সন্দেহের তালিকায় থাকার কোনো ইচ্ছে নেই।কিন্তু পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হলে আমি দায়ী থাকছি না।”
শাবাব দুদিকে মাথা দুলিয়ে পূনরায় হাসে।বলে,
-“থ্যাংক ইউ ডক্টর।আসি”
রবিন আর বাকিদের আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম।বাকি শুধু মির্জা আর শাবাব।হোটেল রুমে ল্যাপটপে একটি মেইল আসলেই খুলে দেখলো।জাহিনের বার্থ সার্টিফিকেট।এটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ না।স্বাভাবিকভাবেই ডিটেইলসে চোখ বোলাতে থাকলো।চোখ আটকে গেলো প্রথমেই।জাহিন এর নামের পাশের পদবীটা দেখে রীতিমত আশ্চর্য্য শাবাব।মুখের ভঙ্গি বিচিত্র। জাহিন খ্রীষ্ট ধর্মের? জারার এন. আই. ডি,বার্থ সার্টিফিকেট কোনোটাই শো করতে পারেনি।না তার পরিবার না বিশ্ববিদ্যালয়। শাবাবের অবাক হওয়াটা স্বাভাবিক।
অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, -“জাহিন ডিসুজা?”
মির্জার কান অব্দি এই শব্দ জোড়া পৌঁছালে সে ফিরে তাকায় দ্বিগুণ অবাক হয়ে।প্রশ্ন করলো,
-“কি বললে শাবাব?”
শাবাব জবাব দিলো না।চোখ বুলায় নিচে।মায়ের নামের স্থানে।সেখানে ‘শ্যামলী ডিসুজা’ ও বাবার নামের স্থানে ‘মানভ ডিসুজা’।ডিসুজা নামের সাথে বিশেষ এক পরিচিতি আছে বলে মনে হচ্ছে।ইতিমধ্যে মির্জা এসে হাজির।পেছন থেকে ঘাড় নামিয়ে লেখাগুলো দেখে নিলো। শাবাব নিজের স্মরণ শক্তিতে চাপ প্রয়োগ করছে। কোথাও না কোথাও এই নাম শুনেছে।
মির্জা বললো, -“রামশা ডিসুজা”
মির্জার কথায় শাবাবের মস্তিষ্ক জ্বলে উঠে। ডিসুজাতো রামশার পদবী।কোনোভাবে কি একে ওপরের সাথে কানেকশন আছে এর?
শাবাব বললো, -“আমি আগে থেকেই এই মেয়েটাকে সন্দেহ করছিলাম!”
-“শিউর হতে হবে শাবাব।আর এস. আই রবিন?”
-“গুলি মারো এস. আই রবিনের প্রেমকে।যদি রামশা জড়িত থাকে ওকে এক চুল ছাড় দেওয়া হবে না।এস. আই রবিন শোক সহ্য করতে না পারলে তাদের জেলের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করবো আমি।”
-“কিন্তু নাম শুনেতো মুসলিম ধর্মের মনে হয়েছিলো?”
শাবাব ফোন বের করে।তার ব্যক্তিগত ইনফরমার মোশাররফকে কল করলো।তাকেই রামশার উপর নজর রাখার কাজ দিয়েছিল শাবাব।ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকে আদেশ প্রদান করলো কিছু। কড়া তার গলার আওয়াজ।শুনে বোঝা যাচ্ছে ভীষণ রেগে আছে।
কল কেটে মির্জার কাছে ফিরে এসে বললো,
-“আমরা ফিরছি না চট্টগ্রাম। জারার মায়ের কাছে চলো। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।”
খুলনা যেনো ছাড়ছে না তাদের।গতিবেগ কোথায় নিয়ে হাজির করবে সেটাও জানে না।মাথাটা ভারভার মনে হয় আজকাল।একটা কেস এর পিছনে এত সময় ব্যয় করতে হয়নি কখনো। এতদিনে হাল ছাড়া হয়নি। ছাড়ার সুযোগ হয়নি।একের পর এক খুন কেসটা কখনো ক্লোজ হতেই দেয়নি।
শাবাব আর মির্জা আবারো হাজির জারাদের বাড়িতে। শ্যামলী তাদের দেখে অবাক হন।বলেন,
-“আপনারা আবার?”
-“কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিলো”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলেন শ্যামলী ডিসুজা।পরপর তিনবার জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।ক্লান্ত সুরে বললেন,
-“কেনো পুরোনো স্মৃতি খুঁড়ছেন?আমার মেয়েটাতো নেই।আপনাদের তদন্তের ফলে সেকি ফিরে আসবে?”
শাবাব জবাব দিলো, -“আপনার মেয়ে ফিরে আসবে না।কিন্তু এটাতো জানেন আপনার মেয়ের অপরাধীর শাস্তি হয়েছে।”
-“জানি।এখন আবার কি চাই?”
-“আপনার মেয়ে যে এত সমস্যায় আছে সেটা কেউ জানতো?আপনারা জানতেন?”
আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেন শ্যামলী।চোখে জল টলমল করতে লাগলো মুহুর্তেই।আর্তনাদ করার সুরে বললেন,
-“কাউকে জানায়নি।সব নিজে একা একা সহ্য করেছে আমার মেয়েটা।জানালে হয়তো আজ আমাদের সাথে থাকতো।”
শাবাব ফের প্রশ্ন করে,- “আপনার স্বামী?”
-“সেই লোকটা আমায় ছেড়ে চলে গেলো।আমার বড় ছেলেকে সাথে নিয়ে কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।পুরুষ মানুষগুলো এমন কেনো হয়?পাষণ্ড!”
-“ওয়েট ওয়েট!আপনার স্বামী তাহলে মৃত না?আপনার ছেলে আছে আরেকজন!”
-“আমাদের জন্য সে মৃত।আমার মেয়ে রাগে কোনোদিন তার পদবী ব্যবহার করেনি।আমাকে,আমার মেয়েকে আর আমার এই ছোট ছেলেটাকে অসহায় ফেলে চলে গেছে।”
-“আপনার ছেলের ব্যাপারে বলুন?আপনি কখনো খোঁজ নিতে চান নি?তারা কোথায়?”
-“অনেক চেষ্টা করেছি আমার জোভানকে ফিরে পাওয়ার।লোকটা আমার ছেলেকে নিয়ে উধাও হয়ে গেলো!আমার দুই দুইটা সন্তান!”
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন শ্যামলী। শাবাব একহাতে চুল খামচে ধরে।এবার যে তার ধৈর্য্যের বাঁধও ভেঙে যাওয়ার পর্যায়ে।একটার পর একটা চরিত্রের আগমন।একে অপরের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। জারার মা’কে শান্তনা দিয়ে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে।
__
-“আমাকে কি ভুলে যাচ্ছেন নাকি মিস্টার রোজারিও?”
ব্যুরো থেকে হোটেলে ফিরেছে সবে।আজকাল এই হোটেলকেই নিজের ঘর মনে হয়।যদিও মির্জা ফিরে আসলে তার বাড়িতে শিফট হবে।সেই গোছগাছ শুরুর সেই ফোন এলো প্রেয়সীর।
মাথার সব বোঝা একদিকে ঝেড়ে ফেলে রবিন।বিছানায় কাৎ হয়ে শীতল গলায় বললো,
-“কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনে করি।কিন্তু কল দেওয়ার সুযোগটা হয়না।”
-“হুম হুম বেশ বুঝেছি। আট দশটা মেসেজ দেওয়ার পর একটা রিপ্লাই আসে।”
-“তোমার জন্য আমার কাছে একটা শব্দই আছে আপাদত সেটা হচ্ছে ‘সরি’।”
রামশা কথা বলছে আর হাত চালাচ্ছে।তার অমনোযোগী ভাবটা ধরে ফেললো রবিন।তার সরির বিপরীতে কোনো উত্তর আসেনি তাই রবিন আবার জিজ্ঞাসা করে,
-“কি করছো?”
-“প্যাকিং!” চট করে উত্তর দিলো রামশা।
রবিন কপাল কুঁচকে নেয়।তার মুখে প্যাকিং শব্দটা ভেবেছিল আগামী এক দেড় মাস শুনবে না।রবিনকে চমকে দিয়ে কয়েকদিনের মাঝেই পূনরায় প্যাকিং? নির্ঘাত আবারো কোথায় ভবঘুরের মতন ঘুরে বেড়ানোর চিন্তা!
জোরালো গলায় রবিন বললো,
-“আবার! তোমার বাবা এবার সত্যিই তোমায় বিয়ে দিয়ে দিবে রামশা।পড়ে দেবদাসী হয়ে ঘুরবে আমার জন্য।”
রামশা দুষ্টু হেঁসে বললো,
-“প্রজেক্টের কাজে যাচ্ছি।বাবা দেশের বাহিরে গিয়েছেন একমাসের জন্য। তোমারও আমার জন্য সময় নেই।কাজ করবো সাথেসাথে ঘুরবোও…উফ আমার ভাবতেই ভালো লাগছে।”
একরাশ নৈরাশ্য নিয়ে রবিন জানতে চায়, -“কোথায় যাচ্ছো?”
-“টেকনাফ। জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর আরো সাতজন স্টুডেন্ট যাচ্ছে।তিনজন শিক্ষক।সো নো টেনশন।…..আমি ভাবছি লিয়ানার সাথেও আসার পথে দেখা করে আসবো।”
চলবে…
“আ না ম”- ২৪
-Azyah সূচনা
স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় একাকী আকাশের দিকে মুখ করে লিয়ানা।অনেকদিন পর চোখ ভেঙে ঝর্না বইছে। ভাবছে নিজের জীবনটা নিয়ে।শুরু থেকে শুরু করছে সবটা। এমনতো ছিলো না সে।তাহলে?অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে একটি বাক্য এলো,
“মানুষের মাঝে মন,আর মানুষই মানুষের মন বোঝে না”
শেওলা পড়া চোখের এক কোণে এখনও শিশিরবিন্দু জমাট বেঁধে। নাকের পাশ বেয়ে গড়িয়ে পড়বে পড়বে ভাব। উঠানামা করা নিঃশ্বাসের গতি।চোখের সামনের তার সামনে অদৃশ্য চিত্র। পাড়ি জমায় কল্পনার রাজ্যে।তার এই কল্পনার রাজ্যটা অসুখজনক।হৃদপিণ্ড দগ্ধ হয়ে কালো আবরণে ঢেকে।মায়ের মুখটা চোখে ভাসতেই রুহ কেঁপে উঠলো।দেখছে সে চোখের কাছে স্পষ্ট। ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে তার মা তারই সামনে।পরপর দেখা মিললো বাবার তার প্রতি রুষ্ট চেহারাটাও। সমগ্র কল্পনা জুড়ে তার বাড়ি;তার আপনজনের মেলা।বাস্তবে অবস্থান করে কল্পনায় হাত বাড়ালো। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো।হাত এগোতেই তারা কেমন যেনো দূরে দূরে সরে যাচ্ছে।অস্পষ্ট স্বরে ডাকলো তাদের। সাড়া পেল না।সম্পূর্ণ হ্যালুসিনেশনের ঘোর কেটে গেলো এক ধাক্কায়।ফোন বাজতেই ঘাবড়ে উঠে লিয়ানা।চোখ বড়বড় করে নিজেকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো।
অপরিচিত একটি নাম্বার।রিসিভ করলো কাঁপতে থাকা হাতে।যেনো শরীরে কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই।বললো,
-“হ্যালো”
-“এলবামটা ফেরত নিবেন না শেওলা?”
কন্ঠস্বরটি চিনতে ভুল করলো না।সাথে এই অদ্ভুত নামের ডাক।ইচ্ছে হলো না লিয়ানার তর্ক করতে।নরম গলায় উত্তর দিলো,
-“নিবো”
টেবিলে পা তুলে বসে আছে শাবাব।দেওয়ার সম্পূর্ণ সোফায়। আয়েশী ভঙ্গিতে বললো,
-“তাহলেতো আমার একটা কাজ করতে হয়”
-“আমার ঋণে ডুবছেন অফিসার শাবাব।”
-“শোধবোধ করে দিবো কেমন?আমি কারো ঋণ রাখি না।”
আরো দুইফোটা অশ্রু ঝরলো লিয়ানার চোখ বেয়ে।কাতর গলায় বলে উঠলো,
-“আমাকে ঘৃণা করেন ঠিক আছে।কিন্ত আমার এলবামটা ফিরিয়ে দিন।আমার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই ওই ছবিটা ছাড়া।”
শাবাব খানিকটা নড়েচড়ে উঠলো।কণ্ঠের কাতরতা যান্ত্রিক বস্তুটি বেয়ে শাবাবের কর্ণ অব্দি এসে বারি খাচ্ছে।ভাবতে বাধ্য করছে মস্তিষ্ক।কিছু মিলি সেকেন্ডের নীরবতা শেষ করে শাবাব জানতে চাইলো,
-“ছবিটা কি আপনার পরিবারের?”
-“হ্যাঁ…আমার বাবা,মা।আমার আপু” দ্রুত গলায় উত্তর দিলো লিয়ানা।
-“তাহলে মুখে কালি দিয়ে ঢেকে ফেলেছেন কেনো?”
লিয়ানা খানিক হাঁসে।উত্তর দেয়,
-“আমাকে বদ্ধ পাগল মনে হয় আপনাদের তাইনা? কিন্তু আমি পুরোপুরি পাগল না।আমার প্রবল অনুভূতি আছে।আমি তাদের মুখ দেখলে দুর্বল হয়ে যাই জানেন।আমার ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে হয়।আমি তাদের অনেক ভালোবাসি”
বাচ্চাদের মতন সুর লিয়ানার। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কথা বলছে। জড়বস্তুর ন্যায় হৃদয়ের অধিকারী শাবাবের মধ্যে বোধহয় খারাপ লাগা অনুভূত হলো।তবে তার এই খারাপ লাগাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা প্রখর।একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে সব ঝেড়ে মুছে ফেললো।
শাবাব প্রশ্ন করলো, -“তারা কোথায় এখন?”
-“আছেন তারা।নিজেদের দুনিয়ায় হয়তো মশগুল।আমি যেমন আমার কল্পনার দুনিয়ায় মগ্ন?তারাও আছেন।সুখেই আছেন।আমি দূরে সরে এসেছি।খুব দূরে।তারা আমাকে ভালোবাসে না।পছন্দ করেনা।”
-“কেনো?”
কথা বলার মানুষের অভাব।আজ মনটা খুলে বলছিলো সবটা।ঠিক তখনই নিজের লাগাম টানে।অন্যহাতে চোখ মুছে ছিলো। দৃঢ় করে ভাবমূর্তি।
-“আপনার কি কাজটা আমার করতে হবে অফিসার শাবাব?”
আবারো দুজনের মধ্যে আক্রোশের পথটা উন্মুক্ত হয়ে যায়।যেনো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী। শাবাব নিজের ভাবভঙ্গিতে ফিরে এসে বলে,
-“রামশা আপনার কাছে আসছে।তাকে ফুঁসলিয়ে নিজের কাছে রাখবেন।আপনি একজন এক্স অফিসার।বুঝতেই পারছেন কেনো বলছি।ওর থেকে ইনফরমেশন বের করতে আপনার সাহায্য।ওর বাপ,দাদার বংশের হিস্ট্রিও আমি চাই। বুজেছেন অফিসার শেওলা?”
-“বিনিময়ে আমি কি পাবো?”
-“যা চাইবেন…..”
___
জামিল নিখোঁজ।সিসিটিভি ফুটেজে দেখা মিলেছে তার সন্দেহজনক কিছু কর্মকাণ্ড।ব্যুরোর বাহিরে আলাদা ঘরে তার অবস্থান ছিল।ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে।কিন্তু কোড না জানায় লক খুলতে পারেনি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েও ট্রাই করে কোনো লাভ হয়নি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে শুধু অফিসাররাই দরজা খুলতে পারবে।তার কিছুক্ষন পর দেখা গেলো।ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে।
রবিন বলল, -“ঘরের শত্রু বিভীষণ!”
ফাহাদ ছয় ঘণ্টা পর ব্যুরোতে ফিরেছে।এসেই বলে উঠলো,
-“স্যার!”
-“বলো ফাহাদ?”
-“আমি কিছু ইনফরমার থেকে জেনেছি একজন আছে।যে এসব বিষাক্ত গাছ এনেছিল। ইনফরমার যখন তার কাছে এই গাছের খোঁজ নিতে যায় সে বলে ওই লোক নাকি সুইডেন থেকে এই কার্মিকা গাছ এনেছিল অবৈধভাবে।এক পিস তার কাছে বিক্রি করে।পড়ে ঠিক একদিনের ব্যবধানে তাকে দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে আবার গাছ ফেরত নিয়ে যায়।”
-“ওর ব্যবস্থা করেছো?আর লোকটার নাম বলেছে?”
ফাহাদ একটি কাগজ এগিয়ে দিল।রবিন হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে প্রশ্ন করে,
-“এটা কি?”
-“স্যার এখানে লোকের ডিটেইল দেওয়া।দেখতে উচা লম্বা।মুখ ঢাকা ছিলো।যেমনটা আনাম এর।পুরুষালি গলার স্বর ছিলো।সে তার নাম ওই স্মাগলারকে বলেনি।শুধু একটা কোড বলেছিলো।১১৪১১৩”
-“১১৪১১৩?”
রবিন মস্তিষ্কের ঘোড়া দৌড়ায়।কাগজ কলম হাতে নিয়ে বারবার সংখ্যাগুলো লিখতে থাকে।কখনো আলাদা করে।কখনো জোড়ায় জোড়ায়।অনেক সময় মস্তিষ্ক ক্ষয় করে হঠাৎ মনে পড়লো আনামের নাম।ইংরেজি বর্ণমালার দিকে চেয়ে আরো কিছু সময় ভাবে।
পরপর ফাহাদ এর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
-“এ মানে হচ্ছে ১। এন ইংরেজি এলফাবেট এর ১৪তম সংখ্যা।আবারো এ আসে।অর্থাৎ ১।আর এম হচ্ছে তেরোতম সংখ্যা।১১৪১১৩ এর অর্থ হচ্ছে আনাম।”
ফাহাদ আবারো নিরাশ হয়ে বললো, -“তাহলে আমাদের লাভটা কোথায়?আনাম নামটা আমরা জানি”
-“দ্বিতীয়বার শিউর হলাম আনাম একজন পুরুষ”
-“জামিল পালিয়েছে স্যার।এখন কি করবো?”
-“ওর গ্রামে খোঁজ লাগাও।আর তোমার ইনফরমার যে খবর দিয়েছে সেটা আসলেই ঠিকতো?”
-“১০০% শিউর।সে কথার ছলে সবকিছু রেকর্ড করেছে।আমি ওই অবৈধ কারবার করা লোকের ব্যবস্থাও করে এসেছি।”
-“ভেরি গুড!”
__
জাহিনের সামনে উপস্থিত দুজন পুলিশ কর্মকর্তা ভিন্ন রূপে।তার সাথে বন্ধুত্ব করার বাহানায় তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।পার্কের এক কোণে যেখানে জনমানবের আনাগোনা কম।হাত ভর্তি চকোলেট চিপস।এদিক ওদিকের কথায় মন ভোলানোর চেষ্টা করলো তাকে।ঠিক তখনই শাবাবের চোখের ইশারায় পুলিশ কর্মকর্তাগণ নিজের কাজে লেগে পড়ে।পুরুষটি জাহিনের চোখের সামনে নারীকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করছে।অতিরিক্ত কিছুই না। জাহিনের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য।তারপরও তার নজর পড়লো না।সে মনোযোগী চিপস খেতে।
কানে ইয়ার বাডস। শাবাব আলগোছে আদেশ করলো সামনে থাকা দুজনকে,
-“একটু এগিয়ে আসুন আপনারা।”
অফিসার দুজন এগিয়ে আসে।জাহিন এর নজর পরে তাদের দিকে।পরপর আবার চোখ নামিয়ে নেয়।তারা তাদের মতন অভিনয় করতে শুরু করলে পূর্ণ মনোযোগ পায় তাদের।জাহিন কিছুক্ষন চেয়ে রইলো তাদের দিকে।দেখলো সবটা। শাবাব আর মির্জা তার দিকে মনোনিবেশ করে।চোখের পলকটা অব্দি খেয়াল রাখছে।নিঃশ্বাস গুনছে।তবে কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।একটা মেয়েকে বাঁচাতে হবে।তার সাথে যা হচ্ছে ভুল হচ্ছে।এমন কোনো লক্ষণ তার মধ্যে পরিলক্ষিত নেই।কিছুক্ষন বাদেই হাত তালি দিয়ে উঠে।অবাক হয়ে চায় শাবাব আর মির্জা।
জাহিন শাবাবের হাত ঝাঁকিয়ে বললো, -“দেখো ওরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে।মারামারি করছে।আমিও করবো”
শাবাব হাত দিয়ে ইশারা করে তাদের থেমে যেতে।পরপর জাহিন আবার বললো,
-“আমি ওদের সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলবো!”
শাবাব তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো, -“এখন না।পরে”
আচমকা রেগে যায় জাহিন।হাত খামচে ধরে শাবাবের।নখ দাবিয়েছে শরীরের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে। শাবাব ব্যথা অনুভব করলে হাত সরিয়ে নেয়।জাহিন তেজী গলায় বললো,
-“আমি বলেছি না খেলবো!তুমি আমার বন্ধু হয়ে আমাকে কেনো না করছো হ্যাঁ?”
শাবাব শান্ত গলায় উত্তর দেয়,
-“ওরা ভালো না জাহিন।ওরা পঁচা।ওদের দেখে তোমার রাগ হচ্ছে না?”
-“নাহ ওরা ভালো।ওরা থেমে গেলো কেনো?ওদের বলো আমাকে খেলায় নিতে!”
শাবাব আবারো কথা ঘুরায়।বলে,
-“এখন সন্ধ্যা নামছে।তুমি আইস্ক্রিম খাবে জাহিন?”
লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে রাগটা দমে যায়।আইস্ক্রিম এর কথা শুনে স্বাভাবিক হয়ে উঠলো জাহিন।উঠে দাঁড়ায়।দুহাতে শাবাব আর মির্জাকে টানতে টানতে বললো,
-“চলো!আইস্ক্রিম খাবো।”
হাতের দিকে চোখ বুলাচ্ছে শাবাব।ধারালো নখ ছেলেটির।রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলেছে। জাহিনকে বাড়িতে দিয়ে হাঁটতে লাগলো হোটেলের উদ্দেশ্যে।রাতেই বের হবে।মুখ থেকে কোনো একটা শব্দ উচ্চারণ না করেই।মির্জা কয়েক দফা তার লটকে থাকা মুখে চোখ বুলায়।এখন শাবাবের সাথে কথা বলা অহেতুক।জানে সে তাকে।চেনে অনেকটা।তার নীরবতা কখনো তার অস্থির চিত্ত আবার কখনো ভয়ঙ্কর রাগের লক্ষণ।আবার কখনো কখনো এই নিস্তব্ধতায় ছক আঁকে সে।
মির্জাকে ড্রাইভ করতে দিয়ে সিটে গা এলিয়ে বসে আছে শাবাব। ঘন্টাখানেক অতিবাহিত হওয়ার পরও চুপচাপ। মুখমণ্ডল জুড়ে কালো ছায়া।এতটা মনমরা তাকে কখনো দেখেনি।অনেকটা সময় চুপ থেকে এবারে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নেয় মির্জা।
বলে, -“ক্লান্ত হয়ে পড়ছো?”
-“দেহে এনার্জি এখনও আছে।” রাশভারী গলাটা আরো গভীর শোনালো আজ।
মির্জা সামান্য হাসে।এই রুঢ় মানুষটার সাথেই তার অনেকদিনের উঠা- বসা।মানুষের কাছে বলে বেড়ায় মির্জা। শাবাবকে সে ভালোভাবেই চেনে।কিন্তু আদৌ কি চেনে?অত্যন্ত চাপা স্বভাবের।নাকের ডগায় মেজাজ নিয়ে ঘুরে।বিপরীত স্বভাবের এক মানুষের সাথে কি সুন্দর করেই এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক চালিয়ে নিচ্ছে মির্জা।
-“এই কেসটা সলভ হলে তুমি লম্বা একটা ব্রেক নিও কেমন?”
-“সম্ভব না।”
-“কেনো?”
-“আনাম যত বড় অপরাধী হোক না কেনো?আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে আমরা কতটা ব্যর্থ।”
চুপ বনে যায় মির্জা। ফোনে চেক করে দেখলো আইপি এড্রেস পেয়ে গেছে সাইফা।চট্টগ্রামের। সাইফা আরো মেসেজ দিয়ে জানায় রবিনকে সাথে নিয়ে সেখানে যাচ্ছে তারা।একহাতে স্ট্যারিং ধরে অন্যহাতে ঝটপট মেসেজ পড়ে।মুখ ঘুরিয়ে শাবাবকে বলতে গিয়েও থেমে গেলো।চোখ বুঝেছে গাড়ীর সিটে মাথা রেখে। তৎক্ষনাৎ পিছু হটলো মির্জা।ভাবলো এখন তার মাথায় অনেক চাপ।চট্টগ্রাম ফিরেই জানতে পারবে না হয়।এখন একটু রেস্ট নেক।তিনরাত নির্ঘুম কাটিয়েছে বেচারা।
চোখ বুজেই শাবাব ক্লান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,
-“শান্তি কোথায় মেলে মির্জা?যেখানে সত্য মিথ্যের কোনো নিয়ম থাকবে না?”
-“নিজ শান্তি নিজে খুঁজে নিতে হয়।তুমি চেষ্টাইতো করো না।”
-“ভাবনায় আসে যে, কি নিয়ে এসেছি?কি অর্জন করেছি?আর…কি নিয়ে যাবো?”
চলবে…
“আ না ম”- ২৫
-Azyah সূচনা
শাবাবের জানানোর একদিন এর মধ্যে রামশা হাজির।সাথে আছে তার কিছু বন্ধু। টিচাররা কাজ শেষ করেই চলে গেছেন আলাদাভাবে।লিয়ানাকে বাগানে দেখে ভাবলো সারপ্রাইজ দিবে।বন্ধুদের ইশারা করে।চুপ থাকতে।ধীরে পা বাড়িয়ে দেয় লিয়ানার দিকে।বসে আছে হাঁটু গেড়ে।ফর্সা হাত গাছে বুলিয়ে আদর করছে বোধহয়।বিড়বিড় করছে। অবাক হয়নি রামশা।এটা তার স্বভাব। নিসর্গের সঙ্গী সে।সুখ-দুখ ভাগ করছে হয়তো। রামশা সামান্য ঝুঁকে লিয়ানার গায়ে হাত রাখতে চাইলেই ঘুরে তাকায় সে।মিষ্টি হাঁসি ছুঁড়ে দেয় তার পানে।
শীতল গলায় জানতে চায়, -“কেমন আছো?”
আশ্চর্যান্বিত ভঙ্গিতে রামশা প্রশ্ন করলো, -“তুমি কিভাবে বুঝলে?”
দুহাত ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো লিয়ানা। হাঁসিটা বজায় আছে এখনো।বললো,
-“অনুভব করলাম”
-“তুমি আসলেই একটা রহস্য মানবী”
বলে জড়িয়ে ধরলো লিয়ানাকে।কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি লিয়ানা।জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা প্রকাশ করায় তার কিছু আসে যায়না।মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে রইলো। রামশা পিছু ঘুরে চেয়ে বন্ধুদের দেখিয়ে আবার বলে,
-“ওরা আমার বন্ধু।আমরা টেকনাফ এসেছিলাম প্রজেক্টের কাজে।ভাবলাম যাওয়ার পথে দেখা করে যাই।”
-“ভালো করেছো।এসো ভেতরে”
বন্ধুদের ব্যাপক উৎসাহ লিয়ানা এবং তার আশ্রম নিয়ে।পুরোনো ভিন্টেজ একটা ভাইব পাচ্ছে বলে জানায় তারা।তাছাড়াও কনসেপ্ট বেশ পছন্দ হয়েছে।আশ্রমে ঘুরে ঘুরে দেখলো।বাচ্চা আর বৃদ্ধদের ছাড়া নতুনকিছুর দেখা মেলে।বিড়াল দৌড়াদৌড়ি করছে এদিক ওদিক।বাচ্চারা তাদের সাথে খেলায় মগ্ন।বাহিরে দুটো কুকুরও দেখে এসেছে।
খাবার ঘরে বসে রামশা প্রশ্ন করলো,
-“কুকুর বিড়ালগুলো কবে আনলে?”
লিয়ানা চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“রেসকিউ করেছি।কয়েকজন আঘাতপ্রাপ্ত ছিলো।”
-“ওহহো!এখন কি ওরা ঠিক আছে?”
-“হ্যাঁ।”
রামশার বন্ধুদের মধ্যে একজন বললো,
-“আপনার কথা রামশা আমাদের বলেছে।আপনি নাকি খুব ইউনিক একজন মানুষ।সে বললো আমাদের প্রজেক্ট শেষ হলে আপনার সাথে দেখা করবো।তাই চলে এলাম।কিছু মনে করেননিতো?”
লিয়ানা স্বল্প হেঁসে জবাব দেয়,
-“অজান্তেই রামশার সাথে আমার নাম না জানা সম্পর্ক জুড়ে গেছে।কিছু মনে করার প্রশ্নই উঠে না।আপনারা সকলে আমার অতিথি।”
এদের মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল আরমান বলে উঠলো,
-“ইয়ে! মানে….আপনি কি প্রেম ট্রেম করেন নাকি?”
রামশা চোখ বড় করে চায় আরমান এর দিকে। পিঠে চাপড় দিয়ে বসলো সাথেসাথে।তার এইরকম ফালতু কথার জন্য।
লিয়ানার ওষ্ঠের হাঁসি আরো প্রসারিত হয়।সময়ের ব্যবধানে হাঁসি থামিয়ে বললো,
-“আমি একা নই।আমার সাথে একজন আছে সে আমাকে সত্যিই ভালোবাসে।কারণ আমি চাই সে আমাকে ভালোবাসুক।তাই সে আমাকে ভালোবাসে।”
সকলে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো।কি বললো এই মেয়ে?সেটা মস্তিষ্কে ধারণ করতে একটু সময় লাগছে।কেমন ধাঁধানো কথাবার্তা!
আরমান দমে নেই।আবার প্রশ্ন করলো, -“কে সে?”
লিয়ানা জবাব দিলো, -“আমার কল্পনার এক চরিত্র।তার এই পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব নেই।মানুষ বলে পৃথিবীতে প্রত্যেকটি সম্পর্কের একটি করে নাম আছে।বাবা,মা,ভাই,বোন আর একজন প্রিয় মানুষের।আমি মানুষ অথচ মানুষ থেকে দূরে থাকি।তাই কল্পনায় নিজের মতন করে তাকে তৈরি করেছি।”
সকলে গভীর মনোনিবেশ করলো।লিয়ানার কথার ঘোরে পড়ছে।কেউ গালে হাত ঠেকিয়ে।কেউ টেবিলে।সকলের মধ্যে কেন্দ্রবিন্দু লিয়ানার শেওলা রঙের মনিযুগল।
মুচকি হেসে আরমান জানতে চায়, -“কেমন দেখতে সে?”
-“মন ক্যানভাসে এঁকে রেখেছি তাদের দেহের ছবি।শুধু মুখটা দেখা মেলে না।তার স্বভাব চঞ্চল,হাসিখুশি।আমাকে হাসায়। খুনসুটি করে আমার সাথে।কখনো হাতে হাত রেখে সাহস দেয়।”
রামশা প্রশ্ন করলো, -“তুমি কি এমন কাউকে ভালোবাসতে?”
লিয়ানা নিজের ভ্রমের জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো।কিছুক্ষন রামশার দিকে নিষ্পলক চেয়ে রয়ে বললো,
-“আমি কাউকে ভালোবাসতাম?…কি জানি! তবে ভালোবাসার একটা অনুভূতি জাগে অন্তরে মধ্যেমধ্যে।তখন কল্পনার পুরুষটাকে ডেকে নেই। মান অভিমান করে মাঝেমধ্যে।”
-“কেনো?”
-“আমিই বলেছি রাগ করতে,অভিমান করতে।সবসময় সুখে থাকলে হবে? একটু কষ্টের দরকার আছে না?সম্পর্কে অভিমানেরও প্রয়োজন আছে”
আরমান মাথা চুলকাচ্ছে।এসব কিছুই শুধু তার নয় সবার মাথার উপর দিয়ে গেলো। হ্যালুসিনেশন এর মাত্রা ব্যাপক। রামশা কিছুটা স্বাভাবিকভাবেই নেয়।তাদের একেক জনের বোকা মুখ দেখে লিয়ানা রামশার দিকে চেয়ে বলল,
-“থেকে যাও দুয়েকদিন।তোমার,আমার সবার ভালো লাগবে।”
শাবাবের কথামতই রামশাকে নিজের কাছে রাখছে।সাথে তার বন্ধুদেরকেও।ছেলে দুজনের জন্য আলাদা ঘর দেওয়া হয়।মেয়েদের জন্য আলাদা ঘর।রাতের আঁধারে বাহিরের দুটো কুকুর উচ্চ আওয়াজে চেঁচিয়ে চলেছে।আওয়াজে স্বস্তিতে ঘুমোতে পারছে না রামশা।পাশে ঘুরেই লিয়ানাকে ফ্যানের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে।পলক ফেলছে না একেবারেই।
কয়েক মিলি সেকেন্ডের নীরবতার পর লিয়ানা আকষ্মিক বলে উঠলো,
-“চোর মুখ দিয়ে কথা বলে না।কিন্তু চোরের মুখ কথা বলে।তাই না রামশা?”
-“কিহ!”
-“কিছুনা।এসো গল্প করি তোমার বোধহয় ঘুম আসছে না।”
রামশার মুখে খানিক অসস্তি ভাবের দেখা মেলে।লিয়ানার কথাটি কেমন জেনো মনে হচ্ছে।জবাব দেয়,
-“তুমি গল্প করবে?”
-“হুম।কয় ভাইবোন তোমরা?”
-“আমি একা।”
-“আর বাবা মা?”
-“হ্যাঁ আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।”
-“কি করেন তারা? মানে তোমার বাবা মা?”
রামশার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে লিয়ানার প্রশ্নগুলো।তাই আর কিছুক্ষণ আগে বলা কথা নিয়ে মাথা ঘামালো না। কাঁথা মুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলতে লাগলো,
-“আমার বাবা বিজনেসম্যান।আর মা হচ্ছেন গৃহিণী।তোমার বাবা মা কি করেন?তারা কোথায় এখন?”
রামশার অজান্তেই তার কাছ থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছিল লিয়ানা।কিন্তু সে যে তাকেই দূর্বল করে ফেলছে তার বাবা মায়ের কথা তুলে।লিয়ানা নিজেকে মজবুত করে।বলে উঠে,
-“আমার বাবা মা নেই।”
রামশা জবাব দিলো, -“আম সরি”
পূর্বের পেশার ন্যায় কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করে লিয়ানা।যেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিলো নিজেকে।খুব সাবধানে রামশার কাছ থেকে তার পরিবারের নাম আর অন্যান্য তথ্য নেওয়ার জন্য আদেশ নয় অনুরোধ করেছে শাবাব।
লিয়ানা বললো,
-“ইটস ওকে।কিন্তু জানো রামশা তোমার নামটা ভারী সুন্দর?কে রেখেছেন?নাকি বাবা মায়ের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে?”
রামশা বলে, -“না আমার নাম বাবা মায়ের কারো সাথেই মিলিয়ে রাখা হয়নি।আমার বাবার রেখেছেন।মাকে নাকি বলেছিলেন তার মেয়ের নাম হবে সবচেয়ে ইউনিক।তাই রামশা রাখা।”
লিয়ানা প্রশ্ন করে, -“খ্রিস্ট ধর্মের নামগুলো সুন্দর হয়। তা তোমার বাবা মায়ের নাম কি?”
-“আমার বাবার নাম মানভ ডিসুজা।আর মায়ের নাম লোপা ডিসুজা”
__
-“কত যতনে রেখেছিলাম তোমাকে।আর তুমিও বিশ্বাসঘাতকতা করলে জামিল!”
মির্জার কথায় রাস্তার এক কোণে থম মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো জামিল।সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর।এসেই মাথায় চাপড় দিয়ে এক কাপ কফি চাওয়া মানুষটা।
মির্জা তার বন্দুকটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে জামিলের দিকে এগিয়ে আসে।মুখোমুখি ভীত জামিলের দিকে চেয়ে ফের প্রশ্ন করলো,
-“বিশ্বাসঘাতকতা কেনো করলে?”
দুরুদুরু বুকে পিছন ফিরে চাইলো জামিল।লুকিয়ে ছিলো চট্টগ্রামেই।গ্রামে ফেরা ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ।সেখানে পালালে আরো আগে খুঁজে নিত অফিসাররা।সাথে তার পরিবারের ঝুঁকি।বুকে ব্যাগ চেপে পিছিয়ে গেলো জামিল।ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।
-“শাবাব স্যারের মাথা হট।তুমি ওর সামনে পড়লে নির্ঘাত বন্দুকের সবটা গুলি তোমার মগজে ট্রান্সফার করে দিতো।ভালোয় ভালোয় জিজ্ঞেস করছি জবাব দাও।নাহয় আমার খারাপ রূপটাও দেখবে।”
-“মাফ…মাফ করে দেন।”
-“মাফ করবো?আসলেই?তুমি যে কাজটা করেছো জানো কতবড় অপরাধ?”
ঠোঁট কামড়ে শক্ত হয়ে দেয়ালের সাথে লেগে আছে জামিল।তথ্য সংগ্রহ করে সে।ধরা পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে পালিয়ে যায়।সে জানে শাবাবের হাতে পড়লে রেহাই নেই তার।মির্জার কাছে কি ক্ষমা চেয়ে নিবে?
মির্জা জামিলের কাঁধে হাত রেখে বলল, -“ব্যুরোতে আমরা ডাকা ব্যতীত তোমার প্রবেশের অনুমতি নেই।তুমি পিন জানো না।তাহলে কিভাবে আসলে?মুখ খুলো।চুপ থাকলে তোমাকে জেলের হাওয়া খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবো।”
-“আমাকে..আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে স্যার।”
-“কে করিয়েছে?”
-“নাম জানি না স্যার।আমাকে বলেছে ব্যুরোর পেছনের জানালায় আর কি যেনো? হ্যাঁ একটা চিপ সেট করতে।শুধু মাত্র একদিনের জন্যও।বিনিময়ে আমাকে টাকা দিয়েছিল।আমি প্রথমে না করলে আমাকে হুমকি দেয়।”
-“কি হুমকি দেয়?”
“বলে বারোটা খুন করেছে। তেরো নাম্বারে আমার নাম উঠবে।আমাকে মাফ করে দিন স্যার।আমি গরীব মানুষ।”
মির্জা তেতে উঠল।জামিলের কলার চেপে বললো, -“টাকার সমস্যা আমাদের বলা যেতো না?তোমাকে বেতন দেওয়া হয় না? আমি ভাবতেও পারছি না জামিল তুমি এই কাজটা করেছো?”
-“স্যার মেরে ফেলতো আমাকে ওই লোক!”
-“পুরুষ ছিলো?নাম?ওর মধ্যে কোনো কিছু দেখেছো?”
-“মনে পড়ছে না স্যার।”
জামিলের বাহু চেপে সোজা করে দাঁড় করায় তাকে।রাগী গলায় বলে উঠলো,
-“যতক্ষণ না মনে পড়ছে ততক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে!”
দৃষ্টি নত করলো জামিল।এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে ভাবতে লাগলো।আর কি দেখেছে?আর কি শুনেছে ওই লোকের মুখে?যা অদ্ভুত! সন্দেহজনক।ধরা যেহেতু পড়েছে এখান থেকে বাঁচার উপায় নেই।ঠোঁট ভিজিয়ে জোর প্রয়োগ করলো মস্তিষ্কে।অনেকটা সময় পর মনে পড়লো লোকটির হাতের কথা। হাতে ট্যাটু ছিলো তার।
মির্জার দিকে চেয়ে বলল, -“ওই লোকটার হাতের পিঠে ট্যাটু ছিলো স্যার।…..আর হ্যাঁ ট্যাটু এর পাশে ইংরেজিতে জে… ভি…আর এন না এম ছিলো বোধহয়।স্যার আমার আর কিছুই মনে নেই। ট্যাটুটার দিকে আমি কেনো যেনো তাকিয়ে ছিলাম।”
মির্জা বুঝতে পারে এই জে, ভি আর এন এর অর্থ। জামিলকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললো,
-“ভুল যেহেতু করেছো শাস্তি পাবে সাময়িক সময়ের জন্য।চলো!”
রবিনকে জরুরি তলব করেছে শাবাব। ফাহাদ আর সাইফাকে নিয়ে বেরিয়েছিলো। আকষ্মিক কল আর থমথমে গলা শুনে মনে হলো সেখানে নিশ্চয়ই জরুরি কিছু কাজ হবে। ভুক্তভোগী মেয়েদের মধ্যে একজনের হদিস মিলেছে।ফাহাদকে বললো,
-“এক কাজ করো।তুমি আর সাইফা ওই মেয়ের বাড়িতে যাও।আমি দেখছি ব্যুরোতে গিয়ে কি হয়েছে”
রবিন গাড়ি নিয়ে ব্যুরোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।ঠিক আধ ঘণ্টার মধ্যে এসে পৌঁছালো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে জামিলকে দেখে ভরকে উঠলো।মাথা নিচু করে শাবাবের সামনে বসে।অপরাধীর ন্যায়।আসলেইতো সে অপরাধী।পায়ের গতি বাড়িয়ে জামিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ার ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে বললো,
-“ধরা পড়েছো অবশেষে!সাহস অনেক দেখিয়েছো।এবার ঠিকঠিক বলো কার কথায় এমন বিশ্বাসঘাতকতা করলে?”
শাবাব গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, -“ছেড়ে দিন ওকে।যা বলার বলে ফেলেছে।”
রবিন চেয়ার টেনে বসে। শাবাব সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন।মুখে গম্ভীরতাতো সচরাচরই দেখা মেলে।আজ একটু বেশিই চোখে পড়ছে।রবিন শাবাবের সামনে বসে প্রশ্ন করলো,
-“বলুন কি জবানবন্দী দিয়েছে ও?”
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে শাবাব।নেতিয়ে থাকা চক্ষুজোড়া তুলে রবিনের দিকে চাইলো।বললো,
-“যা বলেছে সেটা আমাদের অফিসিয়াল ও আপনার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে জড়িত।”
কথার অর্থ বুঝতে অক্ষম রবিন।জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তার।প্রশ্ন করলো,
-“কি বললেন ঠিক বুঝলাম না?”
মির্জা একবার শাবাবের দিকে চেয়ে পরপর রবিনের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে।উত্তরের আশায় বসে আছে সে।মির্জা বললো,
-“ব্যক্তিগতভাবে নিতে পারবেন কিনা জানি না।তবে সুসংবাদ হচ্ছে আমরা খুনি কে এটা জানতে পেরেছি।”
ব্যক্তিগত ব্যাপারটিতে কর্ণপাত করলো না রবিন।উৎসুক গলায় জানতে চাইলো,
-“কি নাম তার?”
আবিরকে ডেকে শাবাব আদেশ প্রদান করে জামিলকে বাহিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।তারপর শাবাব রবিনের দিকে তার ফোন এগিয়ে দেয়।সেখানে কিছু মেসেজ লিখা।নাম্বার সেভ করা নেই।কে পাঠিয়েছে বুঝতে পারলো না রবিন।তবে মেসেজে রামশার বাবা ও মায়ের নাম দেওয়া।আশ্চর্য্য হয়ে চাইলো শাবাবের দিকে। শাবাব ফোন ফেরত নিয়ে বললো,
-“খুনির নাম হচ্ছে জোভান ডিসুজা।”
-“হ্যাঁ?তো রামশার বাবা মা….?”
-“জোভান ডিসুজার বাবার নাম জানেন?”
কি হচ্ছে কিছুই মাথায় খেললো না রবিনের। রামশার নাম কেনো উঠছে এখানে?আর তার বাবা মায়ের নাম?রবিন উত্তর দেয়,
-“নাহ!”
শাবাব ল্যাপটপ ঘুরায়। জাহিনের বার্থ সার্টিফিকেট বের করে লাল কালিতে চিহ্নিত করা স্থান রবিনকে দেখতে বললো।রবিন স্ক্রিনের দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে।জাহিন আর রামশার বাবার নাম কি করে মিলতে পারে?
-“মানে কি এসবের?” রবিন প্রশ্ন ছুঁড়ে।
-“মানে এটা যে জারা, জোভান,জাহিন আর রামশা।এই চারজনের বাবা একজনই।কিন্তু প্রথম তিনজনের মায়ের নাম ভিন্ন আর রামশার মায়ের নাম ভিন্ন। জারার মা বলেছে তার স্বামী তার বড়ো ছেলেকে নিজে অন্যত্র চলে গিয়েছে।বুঝতে পেরেছেন এস. আই রবিন?”
শাবাবের দিকে অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে রবিন বললো,
-“রামশার মা মানভ ডিসুজা এর দ্বিতীয় স্ত্রী”
-“এক্সাক্টলি!”
মির্জা বললো, -“আর জোভান ডিসুজা রামশার বাবার আগের ঘরের সন্তান।”
শাবাব রবিনের বেরঙ মুখের পানে চেয়ে প্রশ্ন করে,
-“হিসেব মিলেছে এস. আই রবিন?”
চলবে…