#আনমনে_সন্ধ্যায়
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২২
রিমি বাসা থেকে বের হয়েই স্বাভাবিক। এই যে কিছুক্ষণ আগে ঘৃণা আর আগুন নিয়ে পুরো এক গুষ্টিকে শাসিয়ে এলো, সেরকম কোন প্রতিক্রিয়া তার মধ্যে দেখা গেলো না। সে অতি অতি স্বাভাবিক ভাবে পেট চেপে ক্লান্ত ভাবে বললো, ” কিছু খাওয়াতে নিয়ে চলুন প্লিজ, তা না হলে মরে যাবো। এখন আমি সত্যিই মরে যাবো। ”
সাব্বির হাসলো! অচেনা শহর, অচেনা রাস্তায় সোডিয়ামের আলোতে হাঁটতে তার ভালো লাগছে। চারিদিকে কুয়াশার চাদরে ঘেরা। মানুষজন খুব একটা নেই। কিছুক্ষণ পর পর টুংটাং করে রিকশা নিজ গন্তব্যে দৌড়ে যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। এই যে এলোমেলো অন্য রকম মেয়েটা। এটা এই স্বপ্নের রাজ্যের রাজ কন্যা। যে হাত ধরে তাকে স্বপ্নের রাজ্যে নিয়ে এসেছে।
রিমি বিরক্তি মুখে বললো, — কথা বলছেন না কেন বলুন তো! ঝিম মেরে আছেন। ঠান্ডায় জমে গেছেন নাকি?
— না! তোমার মতো ভয়ংকর লাভা সাথে নিয়ে ঘুরছি। জমে যাওয়ার চান্স আছে নাকি ?
— তাহলে?
— তাহলে আবার কি? তোমার শহর, উচিত তো তোমার নিয়ে যাওয়া।
— নিতে তো পারি, তবে মনে হয় না আপনার পছন্দ হবে।
— কেন?
— হাইফাই মানুষ আপনি। যেখানে সেখানে নেওয়া যায় নাকি? তাছাড়া আমার কাছে তেমন টাকাও নেই। টিকিট কাটতেই বলতে গেলে শেষ। সে ভাবে পস্তুতি নিয়ে তো বের হই নি।
— আমি না আসলে কি করতে?
— ম্যানেজ করতাম। মোবাইলের যুগে এটা আর এমন কি? তাছাড়া এটা আমার শহর। এখানে আমার যাওয়ার জায়গার অভাব নেই। শুধু আপনি আছেন বলেই গিট্টু লেগে আছে।
— এভাবে হুট করে কোথাও চলে যাওয়া ভালো কথা না। সেটা নিজের শহর হোক আর অন্যের।
— না হলে হোক। আমিতো ভালোর দায় নিয়ে বসে নেই। বরং আমার দায় নিয়ে বসে আছে খারাপ। যা যা খারাপ, দৃষ্টিকটু সবই সে আমাকে দিয়ে করাবে।
— আচ্ছা?
— হুম।
— এ পর্যন্ত কি কি খারাপ করিয়েছে শুনি?
— ছোট থেকে বলবো না ডাইরেক্ট বড়টা বলবো?
— মাঝামাঝি ধরনের বলো বড়টা মনে হয় আমি জানি।
রিমি সাব্বিরের দিকে তাকালো! তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। সেই হাসি নিয়েই বললো,
— আপনি জানেন না। কিছুই জানেন না।
— না জানলে নেই!
— না জানলে নেই মানে কি! আপনার আগ্রহ নেই?
— না।
— না থাক! আমি কিন্তু আপনাকে বলবো। সব, সব, সব। এভরিথিং! ডিটেলস বাই ডিটেলস।
সাব্বির আবারো হাসলো! হেসে রিমির দিকে তাকালো, রিমির চোখে মুখে দুষ্টু হাসি। সে সেই হাসির দিকে তাঁকিয়েই বললো, — ডিটেলস বাই ডিটেলস বলার দরকার কি? বরং করে দেখিয়ে দাও। শোনার চেয়ে প্র্যাকটিক্যাল করলে আমার মনে হয় আমি ভালো বুঝবো।
রিমি থমকে দাঁড়ালো! দাঁড়িয়ে কটমট করে তাকালো। সাব্বিরও দাঁড়ালো! তবে সে নির্বিকার! নির্বিকার ভাবেই বললো, —- তোমার কি ধারণা ডিটেলস বাই ডিটেলস বললেই আমি পিছু হাঁটবো?
রিমি মুখ বাঁকালো! তবে কিছু বললো না। আবার হাঁটতে শুরু করলো। সাব্বির ও এগুলো তবে তার দৃষ্টি এখনো রিমির দিকে । অবশ্য মুখ দেখা যাচ্ছে না। রিমি একটু তার সামনে। তবুও সে জানে। এই যে হেঁয়ালিপূর্ণ মেয়েটা। সে তার হেঁয়ালিপূর্ণ কথার ভাজে ভাজে দুঃখ লুকিয়ে রাখে। এই যে দেখাচ্ছে কেমন সে নির্বিকার। কোন দুঃখ নেই, কষ্টের ছোঁয়া নেই। যেন ঘুরতে এসেছিলো। ঘুরাঘুরি শেষ আবার ফিরে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে।
মানুষ তার সব ইমোশন সহজে লুকোতে পারলেও চোখেরটা পারে না। এই মেয়েটা জানে। জানে বলেই একটু আগে আগে হাঁটছে। দুঃখ যার চির সঙ্গী সে তো দুঃখকে আগলে রাখতে জানবেই। সাব্বির মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফেলে বললো,
— তুমি ঠিক আছো?
রিমি ভ্রু কুঁচকে বললো।
— অবশ্যই! কেন? খারাপ থাকার মতো কি হয়েছে?
সাব্বির উত্তর দিলো না। রিমি হাসলো! মেয়েটা হাসে না বললেই চলে। তবে এমন এমন সময় হাসে। যখন হাসি বেমানান। এই বেমানান হাসির অর্থ সাব্বির বুঝতে পারে না। একবার মনে হয় মেয়েটা খোলা একটা বই। যা অনায়াসেই পড়ে ফেলা যায়। আবার একেক সময় মনে হয়। কোন রহস্য! যেই রহস্যের কোন শেষ নেই। সে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো। তাকিয়ে বললো,– মা যেমন মা ই হয়, বাবাও তেমন বাবাই হয় রিমি। হাজার কিছু হোক, হাজার কিছু করুক। যখন সে সামনে বাবা হয়ে দাঁড়ায় সন্তানের হ্নদয় একটু হলেও কেঁপে উঠবে। সেটা যে ই হোক।
রিমি তাকালো না! এবার হাসলোও না। সে সামনে স্বাভাবিক ভাবেই হাঁটতে হাঁটতে বললো, — আমার জন্ম আর আমার মায়ের মৃত্যু একই সময়। চেকাবের জন্য যাচ্ছিলো, রাস্তা পার হবে। প্রাইভেট কারের ধাক্কা। মা উড়ে উপুর হয়ে পড়লো। অতিরিক্ত চাপে বাচ্চা বেড়িয়ে আসলো। আমার মা শেষ নিশ্বাস ছাঁড়লো আর আমি পৃথিবীতে প্রথম নিশ্বাস গ্রহন করলাম।
দু- দুটো কারণ ছিলো। অন্তত একটার জন্য হলেও সে একবারের জন্য আসতে পারতো। ভালোবাসা না থাক, অনন্ত মানুষ্যত্বের খাতিরে তো পারতো।
না সে আসে নি। না আমার মায়ের জানাজায়, না আমায় আগলে নিতে। আমার মায়ের দোষ কি ছিলো জানেন? সে ভালোবেসেছে! আপনি বললেন না। সবার ভালোবাসার ধরন এক। অন্ধ! আমার মাও ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তিনি সমাজ মানেনি, সম্পর্ক মানেনি, এমনকি নিজের রক্তের বোন তার কথাও ভাবেনি। শুধু একটা মানুষকে পাওয়ার চেষ্টা করেছে। তার সব কিছুর বিনিময়ে। এটাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় ভুল। আর এই ভুলের মাশুল হলাম আমি।
এই মাশুলকে বাবা নামক ব্যক্তি দুনিয়াই আনতে চাইনি। জন্মের পরে একবার চেহেরাও দেখতে আসেনি । আগলে নেওয়াতো অনেক দূরের কথা। মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠিয়েছে। তবুও নিজের ইচ্ছায় না। সবার চাপে পড়ে। সেই টাকা আমি নিই কি করে বলুন তো?
রিমি একটু থামলো! তার গলা ধরে এসেছে। সে সাথে সাথেই নিজেকে সামলালো। পরের জন্য সে কাঁদবে না। কখনো না।
সে সামলে আবার বললো, —তিনি আমার কাছে কিছুই না। কিছুই না মানে কিছুই না। বাবা, সেটাতো অনেক বড় একটা স্থান। সেখানে তার মতো মানুষের জায়গা নেই। আর না আছে আমার মনে তার জন্য কোন অনুভূতি । এতোটুকুও না। আর যেখানে কোন অনুভূতিই নেই, সেখানে কেঁপে উঠার কোন মানে হয় না।
সাব্বির কিছু বললো না। সে শুধু চুপচাপ শুনলো। রিমির অতীত, আত্মীয় – স্বজন কোন কিছু নিয়েই তার কোন মাথা ব্যথা নেই। ইচ্ছে হলে বলবে, না হলে নেই। সে শুধু এই মেয়েটার পাশে থাকতে চায়।
রিমি দাঁড়ালো! দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবেই পিছু ফিরলো! তার চোখ মুখও স্বাভাবিক! এক সাগর দুঃখ, চোখে নেমে আসা জল চেপেচুপে ভেতরে দমানোর ক্ষেত্রে এই মেয়ের তুলনা নেই।
সাব্বির আবারো হেসে ফেললো ! রিমি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এ রকম নির্বিকার ভাবতো নেবে সে। এই সুন্দরা নিচ্ছে কেন? তার হজম হলো না। অথচো এর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে প্রশ্নের রেলগাড়ি শুরু হয়ে যেতো। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বললো — কি হলো?
সাব্বির ও তাকিয়ে তার মতোই উত্তর দিলো — কি হবে?
— কিছু বলছেন না কেন ?
— কি বলবো?
— সত্যিই আপনার কিছু বলার নেই?
— না।
— তিনি কেন আমাকে মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও আগলে নেয়নি। জানতে চান না?
— না।
— আমার মা কি এমন করেছিলো জানতে আপনার কৌতুহল হচ্ছে না?
— না।
রিমি নিরাশ কন্ঠে বললো, — কেন? কেন আগ্রহ হচ্ছে না। কেন সবার মতো ঝুড়ি ঝুড়ি প্রশ্ন করছেন না?
— কারণ আমার সব কৌতুহল শুধু একজনের মধ্যেই। তার বর্তমান আর ভবিষ্যতের মধ্যে। অতীত আমার কাছে ইম্পোর্ট্যান্ট না। যারা বোকা তারা অতীত নিয়ে পড়ে থাকে। আমি না। তবে হ্যাঁ! সে যদি বলতে চায় আমি অবশ্যই শুনবো। মন দিয়ে শুনবো। আমি হতে চাই তার কাছে একটা ম্যাজিকাল বক্সের মতো। যেখানে সে নির্দ্বিধায় সব জমা রাখবে। আর রাখতেই তার মনের সব ক্লান্তি, গ্লানি, দুঃখ ভ্যানিস হয়ে যাবে।
রিমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো! তারপর চোখ ফিরিয়ে বড় একটা শ্বাস ফেললো! ফেলে ক্লান্ত ভাবে বললো, —- আমি আর হাঁটতে পারবো না। আপনার কাছেও টাকা নেই নাকি। রিকশা ডাকছেন না কেন? নাকি রংপুর থেকে ঢাকা হেঁটে হেঁটে ফেরার প্ল্যান আপনার?
সাব্বির হাসলো ! হেসে হাত উঁচু করে রিকশা ডাকলো। এই মেয়েকে বুঝা সত্যিই মুশকিল। কি সুন্দর অভিনয় করে। এই যে স্বভাবিক থাকার অভিনয়। কথা ঘোরানোর অভিনয়। চেপে চুপে চোখের পানি নিমেষেই ভ্যানিস করার অভিনয়। জীবন বুঝি একটা মানুষকে এভাবেই অভিনেত্রী বানায়। অথচো যতো দোষ মানুষের। কেউ বোঝে না, কেউ জেনেও জানে না। সবাই ভাগ্যের তৈরি রঙ্গমঞ্চে কাঠের তৈরি পতুল।
নিসা ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে কিচেন রুমে আসলো। কালকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত নাচানাচি, ফালাফালি। তাই এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। শুধু যে কেউ তা না , সূর্য ও উঠেনি। ঘন কুয়াশা চারিদিকে। তার নিজেরও উঠার কোন ইচ্ছা ছিলো না। তবুও উঠতে হলো। বিয়ে হলে মেয়েদের যে কতো যন্ত্রনা, একমাত্র মেয়েরাই জানে। আরাম, আয়েশ, শখ, আহ্লাদ সব কিছুর জলাঞ্জলি। হুহ্!
এই যে কালকে এতো এতো নাচানাচি, ফালাফালি।সে কি কোন আনন্দ করতে পেরেছে? পারবে টা কি করে ? তার শুশুর বাড়ির সবাই এসে হাজির। আরে বাবা আমরা মেয়ের পক্ষের লোক। দওয়াত তো দেবোই। তাই বলে গুষ্ঠি শুদ্ধ চলে আসতে হবে?
এদের পেছনে দৌড়াতেই দৌড়াতেই তার সব মজা, আনন্দ শেষ। আবার এই দিকে নুহাশের বাবার আবার পেট ঢিলা। ঊনিশ থেকে বিশ হলেই শুরু। কালকে কেক টেক, বিরিয়ানি, কাবাব আরো দুনিয়ার আইটেম ছিলো। কতোগুলো খেয়েছে কে জানে? বাকি রাত বেচারার গিয়েছে বাথরুমে দৌড়াতে দৌড়াতে।
আহারে! শ্বশুরবাড়ি ই বেচারার জন্য কুফা। এমন কোন বার নেই হাসি খুশি বিদায় নিতে পেরেছে । একটা না একটা গিট্ট লেগেই যায়। বাবা , মায়ের সাথে চলেই যেতে চেয়েছিলো। সে ই রাখলো জোর করে। এখন দেখো! বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কাত চিত হওয়ারও শক্তি নেই। বেহুশের মতো পড়ে আছে।
তাইতো এতো আরামের ঘুম ছেড়ে উঠে আসতে হলো। হাজার হলেও প্রাণের প্রিয় স্বামী। ফেলে রাখা যায় নাকি?
সে চাল ধুয়ে পানিসহ চুলায় বসালো। জাউভাত করবে। কিছুতো পেটে রাখতে হবে নাকি? বাথরুমে দৌড়ানোর জন্যও তো খানিকটা শক্তির প্রয়োজন। তখনি কলিং বেল বাজলো। সে বিরক্ত হলো। এতো সকালে আবার কে ?
সে চুলার আঁচ একটু কমিয়ে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই বড়োসড়ো একটা ঝটকা খেলো। ঝটকা খেয়ে তার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।
তার ভাই আর এই মেয়ে একসাথে কেন? এ না ম্যাসেজ পাঠালো। হঠাৎ নাকি কি কাজ পড়েছে। জন্মদিনে থাকতে পারবে না। তার পরেই মোবাইল বন্ধ। আর এই মেয়ে! এর তো ঠিক ঠিকানাই নেই। শরৎতের মেঘের মতো কখনো এখানে, কখনো ওখানে। তো আজ তার ভাইয়ের সাথে কি?
তার মাথা ঘুরতে লাগলো। দু- জনেই অবস্থা’ই এলোমেলো। চোখ, মুখ লাল, ফোলা। আল্লাহ! রাত ভরে এই দু – জন এক সাথে ছিলো নাকি? কোথায় ছিলো? করেছে টা কি ? তার মুখ আপনা আপনিই কাতল মাছের মতো হা হয়ে গেলো।
সাব্বির বিরক্ত হলো! বিরক্ত মুখে বললো, — এভাবে দরজার সামনে হা করে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি স্টুপিড, সর।
নিসা দাঁতে দাঁত চাপলো। চেপে বললো, — তুই আর এই মেয়ে সারা রাত এক সাথে ছিলি?
রিমি ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো! কোথাকার পানি এই মেয়ে কোন দিকে ঢালছে ? সে অতো ধরতে পারলো না। পারবেই বা কিভাবে। জার্নি, ক্লান্তিতে মাথা পুরো জ্যাম। অবশ্য সে ঘুমিয়েছে। সাব্বিরের টা বলতে পারছে না । ঘুমালে তার দিন দুনিয়ায় হুশ থাকে না।
সাব্বির নিসাকে ঢেলে ভিতরে ঢুকলো। ঢুকতে ঢুকতে বললো, — এই মেয়ে, এই মেয়ে, কি ধরনের সম্বোধন? ওর নাম নেই।
— নাম আছে কি নেই তা আমি জানতে চাই না। শুধু এইটুকু বল, এই মেয়ে আর তুই সারারাত একসাথে ছিলি কি না?
— হ্যাঁ ! সাব্বির বললো নির্বিকার ভাবে। বলে উপরে চলে গেলো। এখন তার ফ্রেশ হওয়া একান্ত জুরুরী। তা না হলে সে মরে যাবে।
আর এদিকে নিসা ঝটকার উপরে ঝটকা খেলো। খেয়ে ধপ করে ফ্লোরেই বসে পড়লো। রিমি একটু এগিয়ে এলো। সে এখনো বুঝতে পারছে না আসলে সমস্যা টা কোথায়। সেও কি সাব্বিরের মতো চলে যাবে। নাকি একে গিয়ে ধরবে?
অবশ্য মন সায় দিলো না। এ হচ্ছে ফায়ারবক্স। ছুঁতে গেলেই ব্লাস্ট হওয়ার চান্স আছে।
না, বাবা না। থাক দরকার নেই। তার বাপের বাড়ি। সেখানে সে ফ্লোরে বসুক, খাটে বসুক, দরকার পড়লে একেকজনের কোলে উঠে পরুক। তার কি?
সেইও সাইড কেটে আস্তে করে উপরে চলে এলো। তার হাতে আছে সময় মাত্র দু- ঘন্টা। দশটার মধ্যে আবার থানায় থাকতে হবে। হাড্ডি গুড্ডি একটু সোজা করে নেওয়া যাক।
চলবে……
#আনমনে_সন্ধ্যায়
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২৩
রিমি ঝট করে উঠে বসলো! হয়েছে টা কি? সে তো এলার্ম টেলাম সেট করে মাএই গা এলিয়ে দিয়েছিলো। ঘুমও আসবে আসবে ভাব। তখনি তার দরজার উপরে ঝড়- তুফান শুরু হয়েছে। তাও আর যেন তেন কেউ না। সয়ং রিনা খান। ব্যাপর টা কি?
রিমি বিরক্ত হলো! পরের বাড়িতে থাকার এই ঝামেলা। শান্তি নেই। সে বিরক্ত মুখেই দরজা খুলতে গেলো। আর খুলতেই ঠাস করে তার গালে থাপ্পড় পড়লো।
রিমি প্রথমে হকচকিয়ে গেলো! সাথে সাথেই নিজেকে সামনে নিলো। বিনা দোষে থাপ্পড় টাপ্পড় তার জন্য নতুন না। বরং অনেক দিন পরেই পড়লো। সে ভাবলেশহীন ভাবে ই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। থাপ্পড়ে চুল মুখের সামনে এসেছিলো। সেগুলো হাত দিয়ে কানের পিঠে গুজলো।
আয়েশা দাঁতে দাঁত চেপে বললো, — নিসা এসব কি বলছে?
— সে কি বলছে তা আমি কিভাবে জানবো?
আয়েশা আঙ্গুল তুললো! শাসিয়ে বললো,
— একদম হেঁয়ালি না রিমি? ছোট বেলা থেকে যা মন চায় করেছিস। কিন্তু আমার এখানে না।
রিমি মুখ বাঁকিয়ে হাসলো! তারপর সোজা আয়েশার চোখে চোখ রেখে বললো, — করলে কি করবেন? বাসা থেকে বের করে দেবেন। দিন! আর কি পারেন আপনারা? এইটুকুরইতো বড়াই আপনাদের। নিজের বাড়ির নিজের ঘরের।
আয়েশা রাগ মাথায় উঠে গেলো। এতো বেয়াদব এই মেয়ে। এর মা তার এক জীবন নষ্ট করেছে। এই মেয়ে এসেছে তার আরেক জীবন নষ্ট করতে । সে হিতাহিত জ্ঞান হারালো। ঝাঁপিয়ে পড়লো রিমির উপর। একের পর এক এলোপাথাড়ি থাপ্পড় মারতে লাগলো।
রিমি কোন শব্দ করলো না। নড়লোও না! রেজাউল দৌড়ে এসে আয়েশাকে জাপটে ধরলো। যে মানুষ আজ পর্যন্ত স্ত্রী উপর উঁচু গলায় একটা কথাও বলেনি। সে আজ ধমকে উঠলো। চেঁচিয়ে বললো, — পাগল হয়েছো?
আয়েশা কাঁপতে কাঁপতে রেজাউলের দিকে তাকালো। রেজাউল রাগ নিয়ে বললো, — এক মুখের কথা শুনে কাউকে শাস্তি দেওয়া কি ঠিক আয়েশা? রিমি যদি দোষী হয়, এখানে সাব্বির ও দোষী। তাকে জিজ্ঞেস করেছো? কাজটা তুমি ঠিক করোনি। একদম না। আমি তোমার কাছে এটা আশা করি নি।
আয়েশা কিছু বললো না। তার চোখে পানি। সে সে’ই পানি নিয়েই একবার রিমির দিকে তাকালো। তারপর হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো।
রেজাউল গিয়ে রিমিকে ধরলো। রিমির মাথা ঘুরছে। সে কোন রকম খাটে বসলো। সাব্বির এসবের কিছুই জানে না । হাসি দৌড়ে গেলো।
সবাই বসেছে আয়েশার রুমে! বাসায় মেয়ের জামাই আছে, আশিক আছে। তাদের কানে গেলে কি ভাববে? মুহুয়া মুখে আঁচল চেপে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। মান সম্মান আর কিছু রইলো না।
তবে নিসা এসব ভাবেলে তো। সে রাগে ফুঁসছে। চিৎকার করে আয়েশাকে এটা সেটা বলছে। কেন সে রিমির মতো মেয়েকে তাদের বাড়িতে জায়গা দিলো। মা নেই, বাবার খবর নেই। দিন রাত বাইরে বাইরে ঘোরা। তার ভাইকে তো আর নতুন চেনা না। কোন খারাপ রেকোর্ড আছে? এই মেয়েই কিছু করেছে। তা না হলে তার এমন রাজপুত্রের মতো ভাই ওমন কালির জালে ফাসবে কেন?
তখনি তার গালে থাপ্পড় পড়লো! সব সময় একটা পড়লেও আজ পড়লো পরপর কয়েকটা। নিসা উলটে খাটে পড়লো। বাকি সবাই হতম্ভব। মুহুয়া এতোক্ষণ আঁচল চেপে কাঁদছিলো। সেই কান্নাও তার থেমে গেলো। এখন সে হাতে আঁচল নিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। হচ্ছে কি তার বাড়িতে?
ওবাদুল দীর্ঘশ্বাস ফেললো! এই প্রথম তার মনে হলো, সাব্বির সঠিক কাজ করেছে। যেটা তার করার ছিলো সেটা সাব্বির করলো। বাড়ির বড় মেয়ে, আদরে আদরে সত্যিই বেয়াদব বানিয়ে ফেলেছে। তা না হলে মায়ের সমান চাচির সাথে এরকম বেয়াদবির মানে কি ? সে তার ছোট ভাইয়ের দিকে তাকালো। এই ভাইটা তার বউয়ের জন্য কতো পাগল সে জানে। আজ শুধু বাড়ির মেয়ে বলে চুপ করে আছে।
নাদু নিসাকে গিয়ে ধরলো! রাগ নিয়ে চেঁচিয়ে বললো, — তুই কোন সাহসে ওর গায়ে হাত তুললি? কোন সাহসে?
সাব্বির সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তার মুখ শান্ত! অতিরিক্ত রেগে গেলে সে শান্ত,গম্ভীর হয়ে যায়। চিৎকার চেঁচামেচি সে করে না। কথা বলবে বরফের মতো শীতল ভাবে। যা সামনের জন চাইলেও এড়াতে পারে না।
সাব্বির সে কথার উত্তর দিলো না। আয়েশার দিকে তাকালো। শান্ত ভাবে বললো, —- তোমার কাছে এটা আশা করি নি চাচি। আমার মা বোকা, যে যা বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু তুমি? কেউ একজন এসে বললো আর তুমি বিশ্বাস করে ফেললে?
আয়েশা কিছু বললো না! তার চোখে টলমলে পানি। সে সেই পানি নিয়েই নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। লাল হয়ে আছে। কখনো এগিয়ে আদর না করুক। সে জানে, উপর আল্লাহ জানে। রিমি তার কি?
সাব্বির আবার বললো, — আমাকে চেনো না তুমি? যার সাথে অন্যায়টা করে এলে তাকে চেনো না? অথচো আমি ভাবতাম তুমি সব কিছু চিন্তা ভাবনা করে তারপরে করো।
তারপর নিসার দিকে তাকালো!
— আমাকে তোর ছোট বাচ্চা মনে হয়? কেউ এসে হাত নাড়াবে আর তার ইশারায় আমি নাচতে থাকবো। যদি আমি নাচি, তাহলে তোর বোঝা উচিত ছিলো। আমি নিজ ইচ্ছায়, নিজে চাইছি বলেই নাচচ্ছি। আর এর পর থেকে মুখ সামলে। এটা চাচির বাড়ি! সে কাকে রাখবে, না রাখবে সেটা নিশ্চয়ই তোর কাছে জিজ্ঞেস করে রাখবে না। এক্ষুণি চাচির পা ধরে মাফ চাইবি। আর রিমিকে গিয়ে স্যরি বলবি। তা না হলে আমি ভুলে যাবো তুই আমার বোন।
নিসা ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো। এই রাস্তার মেয়ের জন্য তাকে এতো বড় কথা? সে তার বাবা মায়ের দিকে তাকালো।
মুহুয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে রইলো। ওবাইদুলও কিছু বললো না। একদম ঠিক আছে। অসভ্যের হাড্ডি এই মেয়ে। এরা যদি কিছু অন্যায় করেই থাকে। বোন তুই, সামাল দেয়। কিভাবে ভালো হবে সেটা কর। তা না! জামাই জন বাড়িতে, একজন মেহমান বাড়িতে। অনন্ত বাপ, ভাইয়ের সম্মানের কথাতো একটু ভাবতো এই মেয়ে।
তবে নাদু বসলো না। সে ফেঁপে উঠে বললো, — এই কথা তুই বলার কে? সবাই মরে গেছে। তুই বললেইতো ভুলে যাবে না। এটা যেমন তোর বাড়ি এটা নিসারও বাড়ি। ঐ রাস্তার মেয়ের জন্য তুই তোর বোনকে যদি ভুলতে চাস তো ভুলে যা। সেও ভুলে যাবে তুই ওর কে? নিসার ঠেকা পড়েছে ওই মেয়েকে গিয়ে স্যরি বলতে । কোথার কোন রাস্তার ফালতু মেয়ে।
সাব্বির বড় একটা শ্বাস ফেললো! না! কোন আফসোস বা দুঃখ থেকে না। নিজের রাগ ভেতরে দমানোর ব্যর্থ চেষ্টার জন্য।
সে যেমন বেয়াদবি পছন্দ করে না, তেমনি নিজে কখনো বেয়াদবি করেও না। তাই মামার হাজার দোষ থাকাও সত্বেও সে কখনো কিছু বলেনি । মামা তার বয়সে বড়। তাছাড়া তাকে কিছু বললে মা কষ্ট পাবে। তবে আজ বললো, — সে যদি রাস্তার মেয়ে হয় তুমি কি? তারও বাবা, মা নেই, তোমারও নেই। তুমি এই বাড়িতে যে ভাবে আছো, সেও আছে। তবুও এক হিসেবে দেখতে গেলে সে বয়সে তোমার ছোট হলেও, এক দিক দিয়ে এগিয়ে। সে নিজের উর্পাজন খায়। আর তুমি বোনের জামাইয়ের ঘাড়ে বসে বসে। তো রাস্তার আসলে হলো কে ?
নাদু স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে এরকম আশা করে নি। সাব্বির কখনো বড়দের মুখের উপরে কথা বলে না। তবে আজ কি হলো? সে কোন কথা বলার শক্তি পেলো না। সে ও তার বোনের দিকে তাকালো।
মুহুয়া এবারো চুপ! থমথমে মুখে বসে রইলো। মেয়ে, ভাইয়ের তার খবর নেই। তার ছেলে তাকে বলেছে বোকা। এই দুঃখেই তার বুক ফেটে যাচ্ছে। সত্যিই কি সে বোকা?
সাব্বির আবার আয়েশার দিকে তাকালো! আগের মতোই শান্ত ভাবে বললো — রিমির কাজ ছিলো রংপুরে। আমি শুধু তার সাথে গিয়েছিলাম। এবং নিজের ইচ্ছায়। এটা যদি দোষ হয়। তাহলে তো আমিও দোষী। শাস্তিটা তাকে একা দেওয়া কি ঠিক হলো চাচি?
আয়েশা এবার সাব্বিরের দিকে চোখ তুলে তাকালো! তাকাতেই ঝরঝরে পানি গড়িয়ে পড়লো।
সাব্বির চোখ ফিরিয়ে নিলো! নিয়ে বললো, — ওকে যেহেতু দিয়েছো তাই আশা করি আমারটুকুও আমাকে দেবে । আর যদি না দিতে পারো তাহলে তার শাস্তির পরিণাম যা হবে তার ভরপাইও তোমাকেই করতে হবে। অধিকার নিয়ে শাস্তি দিয়েছো, আশা করি সেই অধিকার নিয়ে ভরপাই টাও তুমিই করবে।
বলেই সাব্বির আর দাঁড়ালো না। চলে এলো। দোতলায় উঠে একবার রিমির রুমের দরজার দিকে তাকালো। তাকিয়ে নিঃশব্দে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। ভাগ্যিস মনের ঝড়ে বাহিরে কোন তান্ডব হয় না। তা না হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতো, অনেক অনেক আগেই যেতো।
সাব্বির যেতেই আয়েশা করুণমুখে রেজাউলের দিকে তাকালো। তার এক জীবনের ভুল আর এক সাগর কষ্ঠের মধ্যে সুখের পালতোলা নৌকা হয়ে এসেছে এই মানুষটা। তাই আজ করা ভুল আর কষ্টের জন্যও তার দিকেই সে তাকালো। এই মানুষটাই তো তার সব কিছু রাখার জায়গা, সব ভরসার জায়গা।
তবে এই প্রথম রেজাউল আয়েশার দিকে তাকালো না। সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আশিক রিমির মুখের দিকে তাকালো! থাপ্পড়ের দাগ বসে গেছে। শ্যামলা গায়ের রং! তাও স্পর্ট । তবুও এই মেয়ের বিকার নেই। হা করে পরে পরে কম্বলমুড়ে ঘুমাচ্ছে। ঘুমানের আগে তাকে দেখে শুধু বলেছে। ঠিক দশটায় আমাকে ডেকে তুলবে। ঝড়, তুফান যাই হোক, ব্যস ডেকে তুলবে।
আশিক ঘড়ি দেখলো! প্রায় দশটা বেজে গেছে। তার ডাকতে ইচ্ছা করলো না। সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো! সকালের ঘটনা সবই তার কানে এসেছে। না আসারও কারণ নেই। ঝড় হলে ঝড়ের তান্ডব একই জায়গায় স্থির থাকে না। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বেই।
তখনি এলাম বাজলো! রিমি ফট করে উঠে বসলো! এলোমেলো চুল, মুখে দাগ নিয়ে তাকে আরো ভয়ংকর লাগলো। সে সেই ভয়ংকর মুখ নিয়ে ঝিমুতে ঝিমুতে বললো, — এভাবে ঝিম মেরে বসে আছো কেন?
— তুই সাব্বির কে পছন্দ করিস?
— হ্যাঁ!
— সাব্বির?
— তারটা আমি বলবো কিভাবে?
— সকালে সাব্বিরের কথা আমি সব শুনেছি। পছন্দ না করলে কারো জন্য কেউ এতো বড় স্টেপ নেবে না।
— করলে করুক! তাতে আমার কি?
আশিক অবাক হয়ে বললো, — তোর কিছু না?
রিমি স্বাভাবিক ভাবেই বললো — না।
— তাহলে পছন্দ করিস কেন?
— এমনিই।
এমনিই বলতেই রিমির ওলীদের কথা মনে পড়লো। সেখানের কি খবর? ধুর! তার জীবনে সমস্যা এমনিতেই কি কম। আবার নতুন জনের আমদানি।
সে ফট করে উঠে দাঁড়ালো! তাকে রেডি হতে হবে।
আশিক বিরক্ত হলো! বিরক্ত মাখা গলায় বললো, — তুই ভালো হবি কবে বলতো? বড় হচ্ছিস না? সব কিছু নিয়েই হেঁয়ালি।
— আমি আবার কি করলাম?
— তুই রংপুর গিয়েছিলি কেন? আর গিয়েছিস গিয়েছিস, আমাকে বললেই তো হতো। কোন দুঃখে সাব্বিরের সাথে গিয়েছিস?
রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেললো! এই সুন্দরা যখন তার কথা শুনে চলে আসেনি, তার উচিত ছিলো ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলা দেওয়া। না থাকতো বাঁশ আর না বাজতো এতো বাঁশি।
— তুমি এখন যাও তো। আমার থানায় যেতে হবে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।
— কোন থানায় যাওয়ার দরকার নেই। আমি আজই চলে যাবো। আর তুও আমার সাথে যাচ্ছিস।
রিমি হেসে ফেললো! যেনো এর চেয়ে মজার কথা আর শুনেনি।
— পাগলের মতো হাসছিস কেন?
— আমিতো পাগলই, ভালো ছিলাম কবে?
আশিক হাল ছেড়ে বললো, — ফিরে চল রিমি।
রিমি আবারো হাসলো! হেসে এগিয়ে ঠিক আশিকের সামনে বসলো। বসে বললো, — কোথায়?
— তুই জানিস কোথায়?
— ও তোমাদের বাসায় নাকি? সেখানে বুঝি আমি এর চেয়ে বেশি ভালো ছিলাম? কই তখন তো দেখিনি এতো রিয়াক্ট করতে মামা’জ বয়কে। নাকি মা, দাদির জন্য সাত খুন মাফ।
আশিক দীর্ঘশ্বাস ফেললো! তবে আর কিছুই বললো না। রিমির কথা সত্য। ছোট থেকেই তো বড় হলো চোখের সামনে। অবহেলায়, অনাদরে। এই আর নতুন কি?
রিমি উঠলো! এখন তাকে সত্যিই বেরোতে হবে। সে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো! বারোটা তো ভালোই পনেরোটা বেজে গেছে। সে দেখতে দেখতেই বললো, — রংপুরে পাট এখানেই শেষ! রিমি আর সেখানে পা রাখবে না, কখনো না। তুমি এবার নিশ্চিন্তে আসতে পারো। আর ভুলে যাও রিমি নামের তোমার কোন বোন ছিলো।
চলবে……