#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩১.
“সেদিন,সেদিন যদি চ!ড়টা তাকে না দিতাম আমাদের জীবনটা সত্যিই খুব সুন্দর হতো প্রণয়!”
প্রণয়ের বুকের কাছে থেকেই তার দিকে এক ধ্যানে চেয়ে মনে মনে কথাটা আওড়ায় চাঁদ।অতঃপর বুক চি!ড়ে বেরিয়ে আসে লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস।চাঁদকে কোলে রেখেই সকলের সামনে উপস্থিত হয় প্রণয়।দু’জনকে এভাবে দেখামাত্রই রামিম ফট করে কয়েকটা ছবি তুলে বলে,
“রাব নে বানাদি জোড়ি ইয়ার!” [বিধাতা এই জোড়াটা বানিয়ে দিয়েছেন বন্ধু!]
রামিমের কন্ঠ পেয়ে ধ্যান ভাঙে চাঁদের।অতঃপর লজ্জা ঢাকতে প্রণয়ের বুকে মুখ লুকায় সে।তৎক্ষনাৎ তার কানে ভেসে আসে প্রণয়ের তীব্র গতির হৃদস্পন্দন।তবে কি আজও প্রণয়ের হৃদয় চাঁদের জন্য স্পন্দিত হয়?তবে কেনোই বা প্রণয় তাকে খু!নী ভাবে?আর অরণের ঠিক কী হয়েছে?অরণ আছেই বা কোথায়?কোথায় লুকিয়ে রেখেছে প্রণয় তাকে?এসব ভাবতে ভাবতেই খানিকটা কেশে প্রণয়কে আস্তেসুরে বলে,
“নামান”
চাঁদের দিকে আঁড়চোখে চেয়ে প্রণয় বলে,
“হাটতে পারবেন আপনি?”
“না পারলে কি এ স্থানেই ঠাই দেবেন?”
এবার আর প্রতিত্তোর করেনা প্রণয়।প্রসঙ্গ এড়িয়ে রায়হানকে জিজ্ঞেস করে,
“নিমৃতাকে পেয়েছিস তোরা?”
রায়হান জবাব দেয়,
“হ্যা পেয়েছি।খুজতে খুজতে হয়রান হয়ে গেছি ভাই!গিয়ে দেখি ফোনে কথা বলছে”
মিরও তখন বিরক্তির সুরে বলে,
“তাও আবার একটা গাছের ডালের উপর বসে।এই ঘসেটির বোন পেত্নিও ফেইল করে দিয়েছে ভাই।আমিতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম,যেভাবে হাসছিলো!”
চাঁদ অবাক হয়ে কপাল কুচকে বলে,
“তখনো কথা বলছিলো?তাও আবার গাছের ডালে বসে?”
মির জবাব দেয়,
“জ্বি ঘসেটি বেগম”
শিফা জিজ্ঞেস করে,
“কিন্তু এতো উঁচুতে উঠলো কি করে?”
মির জবাবে বলে,
“অতো উঁচু ছিলোনা।একটু আঙুলে ভর দিলেই উঠা যায়”
চাঁদ সন্দেহমিশ্রিত কন্ঠে বলে,
“হাসছিলোও?”
রায়হান উত্তর দেয়,
“হ্যা।কিন্তু এখন মেইবি কাদছে”
প্রণয় জিজ্ঞেস করে,
“কাদছে কেনো?”
তন্ময় প্রণয়কে বলে,
“আরেএ ভাই অমৃতা আপু বকছে তাই”
রামিম প্রণয়ের সামনে এসে বলে,
“দেখ মামা তোর আর মামির ছবি।তোর রুমে এটা টানাস।দারুন লাগবে দেখতে”
প্রণয় কিছু বলেনা।কেবল বাকা চোখে রামিমের পানে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে।তা দেখে রামিম হালকা হেসে প্রণয়ের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়।রামিম সরতেই চৈত্র প্রণয়ের সামনে এসে বলে,
“আমাদের চূড়ায় উঠাটা কি ঠিক হবে প্রণয়?”
প্রণয় শান্তভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে,
“হবে না কেনো ভাইয়া?
“আচ্ছা আমি বরং চাঁদের সাথে বসছি।আপনারা সবাই দেখে আসুন”
হঠাৎ রুবা বললো,
“সে কি?ভাবিই তো কত শখ করলো যাওয়ার জন্য।ভাবি না…”
রুবাকে থামিয়ে দিয়ে প্রণয় বললো,
“কাউকে বসতে হবেনা।সকলে একসাথেই উঠবো”
চৈত্র প্রণয়কে বলে,
“চাঁদকে একা রেখে?”
প্রণয় চৈত্রকে নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলে,
“একা কোথায় ভাইয়া?”
মির খানিকটা উচ্চস্বরেই প্রশ্ন করে,
“চাঁদকে কোলে নিয়েই চূড়ায় উঠবি তুই?”
চৈত্র প্রণয়কে ইতস্তত করে বলছে,
“আসলে প্রণয়…চূড়াটা ভীষণ উঁচু।অতো উপরে একা উঠতে গেলেই হাপিয়ে পড়তে হয়।আর আপনি…”
প্রণয় গম্ভীরভাব বজায় রেখে চাঁদকে ভালোভাবে বুকে চেপে সামনের দিকে পা চালাতে চালাতে বললো,
“আপনার বোনের মতো দু-একজনকে আমি একাই উঠাতে পারবো।সেখানে শুধু তাকে নিয়ে চূড়ায় চড়া আহামরি কোনো বিষয়ই না।মাথা না ঘামানোর অনুরোধ রইলো”
ফাকা রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে ফায়ান।দৃষ্টি তার ফোনের দিকে।কপাল খানিকটা কুচকানো।সূর্যের প্রকোপ তাপে শরীর ঘেমে একাকার,ছাইরঙা শার্টটাও ভিজে চুপচুপ।ঠিক তখনই কারো হ্যাচকা টানে রাস্তার কিনারে আসতে বাধ্য হয় সে।বিব্রতবোধ করে যেই না সে পানে তাকায় অমনি ইপ্সির ঝাঁঝালো কন্ঠে চুপসে যেতে হয় তাকে,
“ম!রার শখ জেগেছে তোর?হাইওয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে কাকে নিয়ে ভাবছিলি মজনু জানি কোথাকার?”
ফায়ান চোখ ছোট ছোট করে ইপ্সির দিকে চেয়ে মোবাইল দেখিয়ে বলে,
“কাউকে নিয়ে ভাবছিলাম না বোকাপ্রাণী!আপনাকেই কল দিচ্ছিলাম।আপনিতো মহা ব্যস্ত মানুষ।ডাক্তার হয়ে আড্ডা শাড্ডা একদমই ভুলে গেছেন।কলেজ লাইফের বন্ধুদের কি আপনার মনে পড়ে?”
ইপ্সি ফায়ানের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে সেদিকে নজর বুলিয়ে বলে,
“মাত্র চারবার দিয়েছিস।আরও তিনবার দেওয়া উচিত ছিলো।আর আমি কাউকেই ভুলিনি।সংসার জীবন আর প্রফেশনাল লাইফ দু’টোকে সামলাতে বড্ড হিমশিম খেতে হয়।তুই বুঝবি নাকি?একেতো ছেলে তার উপর বিয়ে করিস নি।বুঝবি ক্যাম্নে?”
“তোর লেকচার শেষ?এবার চল যাওয়া যাক”
ফায়ানের চোখ বরাবর তর্জনী নিয়ে তাকে শাসিয়ে ইপ্সি বলে,
“যাবোতো অবশ্যই।তার আগে বল এভাবে হাইওয়েতে দাড়িয়েছিস কোন আক্কেলে?যদি গাড়ি টাড়ি এসে পড়তো?উপরে উ!ঠিয়ে দিতো তখন?”
এক গাল হেসে ফায়ান বলে,
“দিলে দিতো।ম!রে যেতাম।ফায়ান শেষ,কাহিনী-কিচ্ছা খতম!”
ফায়ানের বাহুতে মে!রে ইপ্সি বলে,
“এহ আইছে কাহিনী-কিচ্ছা খতম।বাজে বকা কখনো যাবেনা তোর না?”
“না রে ইন্দুর যাবেনা।তাছাড়া ধানমন্ডিতে এতো এক্সিডে!ন্ট হয় নাকি?রাস্তা ফাকা থাকে দেখিস না?এজন্যইতো আমি দাড়িয়েছিলাম”
“হ তোমারে বলে আসবেনা সবকিছু?যে ‘ফায়ান আমি আসছি তুমি তৈরি থেকো নিজেকে বাঁচাতে’।বোকাপ্রাণী আমি না।বোকাপ্রাণী হচ্ছিস তুই”
“আচ্ছা হয়েছে আমার মা!এবার চল”
বলেই ইপ্সির হাত টেনে হাটা ধরে ফায়ান।হাটতে হাটতেই বলে,
“তা তোর ম্যারিড লাইফ কেমন যায়?”
“যাচ্ছেতো বেশ!তুই কবে বিয়ে করছিস?”
আকাশপানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফায়ান বলে,
“আল্লাহ যবে রেখেছেন তবেই”
“এবার অন্তত আন্টিকে মেয়ে দেখার পার্মিশন টা দিতেই পারিস।জবতো করছিসই।তাছাড়া তুইতো নিউরোলোজিস্ট।মাসিক ইনকামও বেশ!বউকে খাইয়ে পড়িয়ে ভালোই রাখতে পারবি”
“তোরাতো জানিস আমি এসব ডিসক্রিমিনেশনে বিশ্বাসী নই।আমার বউ যে হবে তাকে অবশ্যই ইন্ডিপেন্ডেন্ট হতে হবে।”
“তুইতো বিসিএস দিবি মামা।বিসিএস ক্যাডাররা কি করে জানিস না?”
কপাল কুচকে ইপ্সির পানে চেয়ে হাটতে হাটতে ফায়ান বলে,
“আমি ওসব ভুড়িওয়ালা টাক কাকু নই আর আমার বউও কোনো নাইন-টেনে পড়ুয়া বাচ্চামেয়ে হবেনা।বাজে না বকে কাজের কথায় আয়”
“তাও।ট্রাইতো…”
ইপ্সির কথা সম্পূর্ণ করার আগেই ফায়ান হুট করে বলে,
“চাঁদ ঢাকা আছে”
“আচ্ছা তো বল….”
বলেই টনক নড়ে ইপ্সির।অতঃপর হাটা থামিয়ে ফায়ানকে জিজ্ঞেস করে,
“কী?কে ঢাকা আছে?”
“চাঁদ”
“কোন চাঁদ?আমাদের?আমাদের চাঁদ ঢাকা আছে?ওকে পেয়েছিস তুই?”
“আমি পাইনি।মিরা আপুর মুখে শুনলাম”
কপাল কুচকে ইপ্সি বলে,
“মিরা আপু?মিরা আপু কী করে চাঁদের ব্যাপারে জানে?যেখানে আমরা ওর বন্ধু-বান্ধব হয়েই জানিনা?”
“ও জানালে আমরা অবশ্যই জানতাম ইপ্সি।ও জানায়নি তাই জানিনা সিম্পল”
“কিন্তু ওরতো কোনো খোঁজ খবর ছিলোনা।হঠাৎ একদিন গায়েব হলো।আর দেখলাম না।খোঁজও পেলাম না।কোনো যোগাযোগ মাধ্যমেও তো পেলাম না!”
“ও যদি যোগাযোগ রাখতে চাইতো তাহলে অবশ্যই পেতাম”
“কথা না পেচিয়ে ডিরেক্ট বলতো মিরা আপু জানলো কী করে?ওকে পেলোই বা কোথায়?”
“জানবে নাই বা কেনো?তাদের প্রাণের বন্ধুর বউ।জানবেই তো নাকি?”
ইপ্সির চোখ চড়কগাছ!চোখদু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।সে সেই অবস্থায় থেকেই বললো,
“কী!বউ?চাঁদ?কার বউ?কিসব বলিস!”
নিজেকে সামলে লম্বা শ্বাস নিয়ে ফায়ান বললো,
“প্রণয় ভাইয়ার বউ”
মাথা ঘুরানোর মতো ভঙ্গি করে ফায়ানের উপর পড়ে যেতে গিয়ে ইপ্সি বলে,
“আমাকে ধর প্লিজ!আমি বোধহয় পাগ*ল হয়ে যাবো।সবকিছু কেমন ঘুরাচ্ছে।মনে হচ্ছে দুনিয়া উ!লটে গেলো”
“কিছুই উল্টায়নি।যা শুনেছিস ঠিকটাই শুনেছিস।প্রণয় ভাইয়া বিয়ে করছে শুনিস নি?বলেছিলাম না আমি?চাঁদকেই বিয়ে করেছে।চাঁদ সম্ভবত চট্টগ্রাম ছিলো এতোবছর”
“চট্টগ্রাম?”
“হ্যা।চট্টগ্রামের টেকনাফে”
“কী!এতোদূরে!ও হঠাৎ এতোদূর গেলোই বা কেন বুঝলাম না”
“মজার বিষয় কী জানিস?মিরা আপু চাঁদকে দো*ষারোপ করছে”
“কী জন্য?”
“অরণ ভাইয়ার কন্ডিশনের জন্য”
“অরণ ভাইয়া?উনার কন্ডিশনের সাথে চাঁদের কী সম্পর্ক?ভালো কথা ভাইয়ার অবস্থা এখন কেমন?তুইতো তার ট্রিটমেন্ট করছিস”
“কোনো উন্নতি পাচ্ছিনা।মনে হচ্ছে দিনকে দিন অবনতিই হচ্ছে।অথচ আমি আমার বেস্ট দিচ্ছি প্রতিনিয়ত।ভাইয়ার হাত-পা শরীর প্রায় সবকিছুই নড়াচড়ার কথা।সে জায়গায় কিছুই হচ্ছেনা।”
“নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে।তুই ভালোভাবে ট্রাই করিস।নাহলেতো বিদেশ নিতে হবে মনে হয়”
“হ্যা নেবে।আমিও ভাবছি মাস কয়েকের মাঝে ভাইয়ার কন্ডিশন ঠিক না হলে আমিই তাকে এব্রোড নিয়ে যাবো।ওখানে থেকে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করবো”
“হ্যা করিস।দোয়া করি ভাইয়া যেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।কিন্তু চাঁদকে দোষারোপের বিষয়টা বুঝলাম না মামা?”
“আমিও বুঝিনি।সম্ভবত সেদিন কিছু একটা হয়েছিলো যার জন্য ভাইয়ার এ দশা আর চাঁদ পলাতক”
“তুই বলতে চাচ্ছিস চাঁদ ঠিক এজন্যই পালিয়েছে?”
ফায়ান মাথা ডায়ে-বায়ে ঘুরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“না।সেটা বোঝাচ্ছিনা।তবে যেকোনো কিছুই হতে পারে।আমরাতো বিষয়টা জানিনা।”
“কিন্তু চাঁদ কেনোই বা এমন করবে?কি কারণ থাকতে পারে?”
ফায়ান কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে আবার বলে,
“ইফাদের বাসা এসে গেছে,চল”
“হ্যা,চল।ওদেরকে আচ্ছামতো করে ধোলাই দেবো”
দুপুরের খাবার সেরে হাতমুখ ধুয়ে ইহাদুল ইসলামের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে তার দোকানের দিকে রওনা হচ্ছে প্রণয়।যাওয়ার আগে সবাইকে বলে গেছে রেডি হয়ে থাকতে,সে এসেই বের হয়ে যাবে সকলকে নিয়ে।সেজন্যই এতো তোড়জোড় চলছে।সবাই সবকিছু গোছাচ্ছে।চাঁদের রুমে এসে চাঁদের মা তাকে ডেকে পাঠান ড্রয়িংরুমে আসার জন্য।চাঁদ সবকিছু গুছিয়ে ব্যাগের চেইন আটকে পা বাড়ায় মায়ের সাথে কথা বলার জন্য।ডাইনীং এর চেয়ারে বসে আছেন তিনি।চাঁদও আস্তেকরে বসে মায়ের পাশে।অতঃপর বলে,
“হ্যা আম্মু বলো,কী বলবে?”
মেয়ের পানে শীতল চাহনী নিক্ষেপ করে জাহানারা বেগম বলেন,
“তুই কি সত্যিই ও বাড়ি যেতে চাস?”
মায়ের কথায় কিঞ্চিৎ অবাক হয় চাঁদ।অবাক হওয়ার রেশ ধরে রেখেই বলে,
“না যাওয়ার মতো কারণতো দেখছিনা আম্মু।তাছাড়া ওটা আমার শ্বশুরবাড়ি এবং ওটাই মৃ*ত্যুর আগ পর্যন্ত শেষ ঠিকানা”
“তুইতো বিয়েটা প্রথমে মানিস নি।এখন এমন করছিস যে?”
“তুমি কি চাচ্ছো আমি বিয়েটা না মানি?ডি*ভোর্সি ট্যাগ লাগিয়ে বসে থাকি?”
মেয়ের কথায় আঁ!তকে উঠে জাহানারা বেগম বলেন,
“ছি মা!আমি ওসব কস্মিনকালেও ভাবিনা।তুই বিয়ে করেছিস স্বামী-সংসারে সুখে আছিস এতেই আমার শান্তি।কিন্তু মা তো তাইনা?মায়ের মন তো কতকিছুই বলে।আরও কয়েকটা দিন থেকে যেতে পারতি না?”
“আমি আবার আসবোতো আম্মু।সবেতো বিয়ের পরের রিচুয়াল করলাম।আবার আসবোনা?শ্বশুরবাড়ি আটদিন থেকে আবার এখানে আসবো।আমাদের এখানকার নিয়ম না এটা?তাছাড়া তোমাদের যদি মন না টিকে তোমরাও ঢাকা এসে পড়ও আম্মু।নাহলে নানুবাড়ি চলে যাও।ঢাকা থেকে ওটা সামনে।তাড়াতাড়ি যেতে আসতে পারবো।এখানে আসতে যেতেই তো অর্ধেকদিন লেগে যায় প্রায়”
“তুই তাহলে সত্যিই ঢাকা যাচ্ছিস?”
“কোনো সন্দেহ আম্মু?”
“না রে মা।একটু চিন্তা হচ্ছে এই আরকি।তুই ওখানে সাবধানে থাকিস।কিছু হলে তোর ভাইকে জানাবি।আর দেখি সম্ভব হলে আবার ঢাকা ট্রান্সফার হয়ে যাবো”
“আচ্ছা আম্মু।তুমি একদম টেনশন নিওনা আমাকে নিয়ে।ওখানের সবাই খুব ভালো”
“টেনশন কি নিতে হয় রে মা?আপনাআপনি চলে আসে।আচ্ছা সেসব কথা রাখ।তুই এই পা নিয়ে তো ঠিকমতো হাটতেই পারছিস না যাবি কী করে?”
“এই যে হালকা হালকা ভাবে পা রাখছি এভাবেই যাবো।তাছাড়া আমি কি হেটে যাচ্ছি?”
বলেই খানিকটা হাসে চাঁদ।মেয়েকে হাসতে দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে জাহানারা বেগম বলেন,
“এভাবেই হাসিখুশি থাকিস মা।আম্মুর দোয়া সবসময় তোর সাথে আছে।কিচ্ছু হবেনা আমার মেয়ের।আর শোন তোর খালা আর আমি পিঠা থেকে শুরু করে সবকিছুই বানিয়ে গুছিয়ে রেখেছি।বেয়াইনকে গিয়েই এগুলো খুলে দিবি।ফ্রিজে রেখেছি।ঠান্ডা আছে।নাহয় নষ্ট হয়ে যাবে যেতে যেতে।গিয়ে সাথে সাথেই দিবি বুঝেছিস?”
“আচ্ছা আচ্ছা আম্মু দেবো”
“আর বেয়াই,বেয়াইনকে তোর আব্বুর আর আমার পক্ষ থেকে সালাম দিবি।উনাদের আসতে বলবি পরেরবার”
“ঠিক আছে আম্মু বলবো”
“চল তোকে রুমে এগিয়ে দিয়ে আসি”
“আমি যেতে পারবোতো আম্মু”
চোখ রাঙিয়ে মেয়েকে বলেন,
“বেশি পাকামো করিস না”
মায়ের শাসন দেখে বুক ভার হয়ে আসে চাঁদের।আর বুঝি এভাবে শাসনে থাকা হবেনা?মেয়েদের কেনো বিয়ে করে পরের বাড়ি যেতে হয়?এ নিয়মটা না হলেই কি নয়?পরক্ষণেই নিজের উদ্ভট চিন্তাভাবনায় হেসে উঠে চাঁদ।হেসে মা’কে একটু উস্কাতে বলে,
“তাহলে একটু কোলেই নিয়ে নাওনা আম্মু।সেই ছোট থাকতে নিতে।সেই যে থ্রি-ফোরে লাস্ট উঠলাম আর নিলেই না!”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে মেয়ের পানে তাকিয়ে কিছু বলার পূর্বেই রুবার ঠাট্টামুলক বাক্য কর্ণপাত হয় জাহানারা বেগমের,
“কেন গো ভাবি?কাল সারারাত পুরো চূড়া জুড়ে আমার ভাইয়ের কোলে চড়ে শান্তি মেলেনি?এখন মাওই মা’কে জ্বালানো হচ্ছে না?”
ননদ-ভাবির খুনসুটির মাঝে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগে জাহানারা বেগমের তাই তিনি রুবাকে বলেন,
“তোমার ভাবিকে একটু রুমে নিয়ে যাওতো মা।আমি একটু পরে আসছি”
“ঠিক আছে আন্টি”
বলেই চাঁদের কাছে এসে চাঁদকে ধরে রুমের দিকে এগোয় রুবা।চাঁদ রুবাকে ফিসফিসিয়ে বলছে,
“কোথায় কী বলতে হয় এখন কি তোমাকে সেটা আমি বলে বলে দেবো রুবা?”
রুবা মিটমিটিয়ে হেসে বলে,
“লজ্জা পেয়েছো নাকি ভাব্জ?কই কালতো ভাইয়ের কোলে দিব্বি চড়ে বেরিয়েছো!”
রুবার গাল টে!নে চাঁদ বলে,
“অনেক পেকে গেছো দেখছি।দাড়াও তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে”
“না না ভাবি!কি যে বলোনা!সবেতো ভার্সিটি উঠবো।এখনই বিয়ে কিসের?”
“তোমার এডমিশন কবে?”
“এইতো আছে আর মাস দুয়েকের মতো”
“আর তুমি ঘুরে বেরাচ্ছো?”
“ঘুরলাম আর কই ভাবি।প্রণয় ভাইয়ার বিয়ে বলে কথা না এসেতো একদম পারলাম না।আর চট্টগ্রামের সৌন্দর্য দেখতে তার হানিমুনেও চলে এলাম।কিন্তু হানিমুনতো হলো বলে মনে হয়না”
বলেই মুখ টিপে হাসে রুবা।তা দেখে রুবার কপালে খানিকটা গুতো মে!রে চাঁদ বলে,
“আমি তোমার কত বড় আইডিয়া আছে তোমার?”
“না গো ভাবি।কত বড় শুনি?”
“আমি টুয়েন্টি ফোর প্লাস।প্রায় টুয়েন্টি ফাইভই ধরতে পারো”
“মাত্র?আর আমি আঠারো প্লাস।ভার্সিটি উঠতে উঠতে নাইনটিন প্লাস হয়ে যাবো”
“তা পাকনি বুড়ি,প্রিপারেশন কেমন তোমার?আর রিদি,শিফাও তো সেম ক্লাস না?”
“হ্যা ভাবি।আমাদের সবারই এডমিশন।প্রিপারেশন আলহামদুলিল্লাহ ভালোই”
কথা বলতে বলতে রুমে চলে আসে দু’জনে।চাঁদকে বিছানায় বসিয়ে আবারও ব্যাগ গুছাতে লেগে পড়ে রুবা।বিছানায় বসে চাঁদ সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তা তোমাদের তো সামনেই এডমিশন।কি হতে চাও ত্রিনয়নারা?”
শিফা চাঁদকে জিজ্ঞেস করে,
“আমাদের বলছো ভাবি?”
চাঁদ জবাব দেয়,
“ত্রিনয়না বলতেতো তোমাদেরকেই বুঝিয়েছি।আর এডমিশন টেস্টওতো শুধু তোমরাই দেবে?নাকি আরও কেউ আছে?”
রিদি চাঁদকে দ্রুত গতিতে বলে,
“না না ভাবি।আমরাই।ইম…আমারতো খুব শখ তোমাদের মতো ডাক্তার হবো”
চাঁদ ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“কেনো কেনো…এ শখ কেনো?”
রিদির আগে রুবা জবাবে বললো,
“যাতে করে একটা ডাক্তার জামাই পায়।বুঝলে ভাবি?”
রুবার কথা শুনে ভেতরে উপস্থিত সকলেই হেসে দিলো।রিহা ঠাট্টা করে বললো,
“তাই নাকি রিদু?আমাদের রিদুমনির ডাক্তার পছন্দ?”
রিদি লজ্জা পেয়ে ব্যাগের চেইন লাগিয়ে কাপড় হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।তা দেখে আরেকদফা সকলে হাসলো।অতঃপর চাঁদ শিফাকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার কি শখ শিফা?রিদির মতোই ডাক্তার?”
“আরেএ না ধুর!ডাক্তার হয় কে?আমারতো র*ক্ত দেখলেই মাথা ঘুরে যায়!”
রিহা জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে কি উশ্মির মতো অ্যাডভোকেট হবে নাকি?”
শিফার পক্ষ থেকে এবারও নেগেটিভ জবাব আসে,
“ওদের মাথায় শুধু প্যাচ আর প্যাচই থাকে আপু।আমি আবার খুব সরল মনের মানুষ এতো প্যাচ নিয়ে চলতে পারবোনা”
উশ্মি কপাল কুচকে বলে,
“তাহলে তুই হবি টা কী?পাশের বাসার আন্টি?”
উশ্মির কথায় এবারও সবাই হেসে দেয়।চাঁদ উশ্মিকে বলে,
“পাশের বাসার আন্টি পরোক্ষ-প্রতোক্ষভাবে একদিন আমরা সবাই হবো উশ্মি।এতে নতুনত্ব কিছু নেই”
শিফা চাঁদের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
“একদম সঠিক জবাব দিয়েছো ভাবি”
রিহা জিজ্ঞেস করে,
“তা তুমি হতে চাও টা কী শিফু?”
শিফা ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
“যেতেহু সাইন্স থেকে পড়েছি যেকোনো কিছুই হওয়া যায়।তবে ভাবছি আমি জার্নালিস্ট হবো”
“আর তুমি রুবা?”
রুবা চুল আচড়াতে আচড়াতে বলে,
“আমার ছোট বেলা থেকে শখ ঢিচকাও ঢিচকাও গু!লি করার।সো ইয়েস আমি অবশ্যই পুলিশ অফিসার হবো।তাও যেনো তেনো নয়।একজন বড় মাপের ই।সবাই আমায় ম্যা’ম ম্যা’ম বলে ডাকবে”
রুবার কথা শুনে চাঁদ বলে,
“বাবাহ!একই পরিবারে এতোকিছু!ডাক্তার,অ্যাডভোকেট,জার্নালিস্ট আবার পুলিশও!আর কিছু বাকি আছে নাকি?”
রিহা হেসে বলে,
“দাড়াও চিন্তা করে দেখি”
ঠিক তখনই রিদি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বলে,
“কী চিন্তা করবে আপু?”
রিদিকে দেখে চাঁদ বলে,
“তোমার এক্সামটাইতো তাহলে সবার আগে রিদু।আর এক মাস আছে।প্রিপারেশন কেমন?ডিএমসি কনফার্ম?”
রিদি তোয়ালে দড়িতে মেলে দিতে দিতে বলে,
“ডিএমসি না হলেও পাবলিক মেডিকেল একটা হয়েই যাবে এটা আমি শিওর”
“যেহেতু তুমি মেডি অ্যাসপিরান্ট।ডিএমসি তোমার প্রাণ হওয়ার কথা রিদি”
চাঁদের কথার প্রেক্ষিতে জবাব আসে রুবার,
“তোমার মতো সবারতো আর ডিএমসি জান-প্রাণ হয়না ভাবি।আর সবাইতো তুমিও হয়না।তুমিতো একটাই।একটাই চাঁদ ভাবি আমাদের।তোমার রেকর্ড স্টিল কেউ ভাঙতে পারেনি।এই পাঁচবছরেও পারেনি আর কখনো পারবেওনা।আকাশে যেমন চাঁদ একটাই।জমিনেও চাঁদ কেবল একটাই”
চাঁদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ওসব এখন কেবলই স্মৃতি।তাছাড়া তুমি সাইন্স থেকে ল নিয়ে পড়লে অসুবিধা হবেনা?”
রুবা কপাল কুচকে বললো,
“সাইন্স থেকে কেনো হবো?বললাম না ছোটবেলার স্বপ্ন?আমি নাইন থেকেই হিউম্যানিটিজ নিয়ে পড়েছি ভাবি”
রুবার কথা শুনে উশ্মি বলে,
“হ্যা তুইতো টপার।সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকিস”
রুবা উশ্মির পানে চেয়ে বলে,
“আমি মোটেও সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকিনা।”
“যখনই তোকে দেখি বই নিয়েই দেখেছি আমি”
“তুমি কি আমার বাড়ি গিয়ে বসে থাকো নাকি সবসময়?তাছাড়া এতোবছরতো বাইরেই ছিলে দেখবে কী করে?ছোটবেলার কথা এখন বলছো শুধু শুধু”
রুবার কথা শুনে শিফা বলে,
“ছোটবেলার কথা কেন হবে?জানো ভাবি আমাদের রুবা অলওয়েজ গোল্ডেন প্রাপ্ত ছাত্রী”
চাঁদ হেসে বলে,
“বাহ!বেশতো।তুমি তাহলে কনফার্ম পুলিশ হয়েই গেলে নন্স”
রুবা চাঁদের পানে চেয়ে বলে,
“তবে তোমার মতো একদমই হতে পারবোনা।তুমিতো এসএসসি,এইচএসসিতে এ+ ছাড়াই টপার অফ বিডি হয়েছো।তাও আবার যেনো তেনো টপার না।অবিশ্বাস্যনীয় রেজাল্টধারী টপার!যেটা আমি কখনোই হতে পারবোনা”
প্রসঙ্গ এড়িয়ে চাঁদ বলে,
“আজ আমরা বাড়িতে গিয়ে বার্বিকিউ পার্টি করবো কেমন?”
শিফা মুখ লটকিয়ে বলে,
“তাতো সম্ভব না ভাবি”
“কেনো?”
রিদি জবাব দেয়,
“আমি,শিফু আর ভাইয়া এখান থেকেই আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যাবো,তারপর শিফু শিফুর বাসায় আর আমরা আমাদের।আর রুবা-রায়হান ভাই তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে”
রিহাও বললো,
“আমাদের বাসা যদিও ঢাকাতেই।আমি আর মিরও যার যার মতো চলে যাবো চাঁদ”
চাঁদ হতাশ হয়ে ম্লানমুখে বললো,
“সবাই একসাথেই চলে যাবে?বড্ড মিস করবো তোমাদের।একা হয়ে যাবো ওখানে একদম”
উশ্মি বলে,
“একা হবে কেন ভাবি?আমি আছি না?”
“তুমিতো বেশিরভাগই কোট-কাচারীতে থাকবে”
“যতক্ষণই থাকি কম্পানি দেবো।আর প্রণয় ভাইয়াতো আছেই,তোমার হাজবেন্ড।”
বলেই খানিকটা থেমে আবার বলে,
“তোমরা থাকো আমি একটু আসছি”
উশ্মি চলে যেতেই রুবা বলে,
“বার্বিকিউ পার্টিটা মিস করে ফেললাম কিন্তু ভাবি”
“সমস্যা নেই।আবার যখন সবাই একত্রিত হবো তখন করবো কেমন?”
ইহাদুল ইসলামের সাথে এক খোলা মাঠের কোনো এক বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে আছে প্রণয়।ইহাদুল ইসলামই শুরুতে প্রশ্ন করেন,
“তা হঠাৎ দোকান থেকে এখানে ডাকলে যে বাবা?”
“দরকার ছিলো আব্বু”
“হ্যা তাতো বুঝেছিই।তা বলো বাবা কী দরকার?”
প্রণয় শান্ত ভঙ্গিতে বেশ ঠান্ডাসুরেই বলে,
“আসলে আব্বু আমি চাচ্ছিলাম চাঁদের যতটুকু ইন্টার্নি করা বাকি আছে সেটা সে ঢাকা থেকেই করুক।আর এরপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন টাও সেখান থেকেই করুক”
“কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?ও’তো চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে পড়ছে”
“কিন্তু সেতো ডিএমসির প্রাক্তন স্টুডেন্ট”
“এতোবছর পর কি তারা আবার নেবে?”
“কেনো নেবেনা আব্বু?চাঁদের এডমিশনে যেই স্কোর ছিলো।অমন স্কোর আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি।চাঁদকে খুবই পছন্দ করে সকলে।সবাই চাইতো চাঁদ যেনো ঢাকা মেডিকেলের বেস্ট সার্জন হয়।সবাইতো জানতো হার্ট নিয়ে চাঁদের কত উৎফুল্লতার কথা।সেবছর চাঁদের ব্যাচের যেই ছেলেটা সেকেন্ড হয়েছিলো সে এখন নিউরোলোজিস্ট।এতোদিন চাঁদ ওখানে থাকলে সেও কার্ডিওলোজিস্ট হয়ে যেতো।ইভেন স্কলারশিপে বাইরেও যেতে পারতো।সেই এবিলিটি তার মধ্যে ছিলো।আর আমি চাচ্ছি সে যেনো তার স্বপ্নটাকে আরেকবার ছুয়ে দেখুক।চোখ জুড়িয়ে অন্তরে ধারণ করুক।সেখান থেকেই স্বপ্নজয় করুক।আমি সেখানেরই কার্ডিওলোজিস্ট আব্বু।আমি বিষয়টা দেখে নেবো।শুধু আপনার অনুমতির দরকার”
সবকিছু শুনে ইহাদুল ইসলাম বলেন,
“চৈত্র আর চাঁদকে একবার…”
“আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি।তার কোনো আপত্তি নেই।এখন শুধু আপনার পার্মিশনটুকুই বাকি।আর চাঁদকে এ ব্যাপারে জানাবোনা।ভাইয়া আর আমি এটা সারপ্রাইজ হিসেবে রাখতে চাই আব্বু”
ইহাদুল ইসলাম বিস্তার হেসে বলেন,
“মেয়ের জন্য আমি অযোগ্য কাউকে বাছিনি।সেরাটাই পেয়েছে আমার মেয়ে।তোমার মাঝেই আমার মেয়ে তার সর্বসুখ খুঁজে পাবে বাবা,সে বিশ্বাস আমার আছে।তুমি যেটা ভালো মনে করো সেভাবেই করো।আমার অনুমতি আর দোয়া সবসময় তোমাদের সাথে আছে”
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩২.
“বিয়ে করবে আমায়?”
উশ্মির আকস্মিক প্রশ্নে হতবিহ্বল হয় রামিম।উশ্মির পানে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আর ইউ ওকে উশি?”
“আ’ম প্রিটি ওকে”
“হঠাৎ এসব বলছো যে?”
“লন্ডন থেকে ফিরলেইতো আমাদের বিয়ে করার কথা তাইনা?দু’পরিবারেরই সম্মতি আছে।তাছাড়া তুমি আংকেলের ব্যবসা ধরেছো,অফিসে জব করছো সমস্যা কোথায়?”
“তুমি সিরিয়াসলি বলছো উশ্মি?”
উশ্মি শান্তস্বরে বলে,
“আমি অবশ্যই এসব নিয়ে কোনো মজা করবোনা রামিম”
“তাহলে আব্বু-আম্মুকে কবে যেতে বলছো?”
“আমি দুই/তিন মাসের মধ্যেই তোমার বউ হতে চাচ্ছি”
“তুমিতো অলরেডি আমার বউই মিসেস রামিম আদনান”
উশ্মি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
“হয়েছে নিব্বাপনা করতে হবেনা।তাছাড়া ধামড়া ছেলেকে এসবে মানায়ও না”
উশ্মির গাল টে!নে রামিম বলে,
“তোমার কাছে কিসের দামড়া হ্যা?তোমাকে দেখলেই আমার বউ বউ ফিলিংস আসে।খালি আদ…”
গাল থেকে হাত সরিয়ে উশ্মি বলে,
“হয়েছে ওটা বিয়ের পরে”
অতঃপর রামিমের দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তার চোখে চোখ রেখে উশ্মি আবারও বললো,
“তুমি আমার নেওয়া বেস্ট ডিসিশন ছিলে রামিম”
উশ্মির হাত শক্ত করে ধরে রামিম বলে,
“আর আমার বেস্ট ডিসিশন ছিলো তোমাকে সুযোগ দেওয়া।অতঃপর বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে পড়া”
উশ্মি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমার জন্য তোমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হলো শুধু শুধু”
রামিম আলতো হেসে বললো,
“কিছুই নষ্ট হয়নি।যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে,প্রাণ খোলা হাসি বন্ধ হয়েছে,দূরত্ব বেড়েছে অনেকখানি।তবে মনের মিল আজও আমাদের বিদ্যমান।ভীষণ ভালোবাসে ও আমায়”
“রায়হান কি কখনোই বুঝবেনা আমি কেবলই ওর আবেগ ছিলাম?”
রামিম উশ্মির হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ভুল বললে উশ্মি।তুমি কখনোই ওর আবেগ ছিলেনা।আর না বর্তমানে আছো।তুমি সর্বদাই ওর ভালোবাসা ছিলে।প্রথম প্রেম আর ভালোবাসাটা শুধু তুমিই।বেস্টফ্রেন্ডতো তাই ওর আগাগোড়া সবটাই জানি আমি”
“বেস্টফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করছো লজ্জা লাগছেনা?”
“তুমি রায়হানের প্রাক্তন আর রামিমের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ,এ কথাটা মাথায় রাখবে।তাছাড়া বন্ধুর ভালোবাসাকে কখনো ছিনিয়ে নিতে চাইনি।আমিতো তোমায় ভালোও বাসতাম না।তুমিই ঘুরঘুর করতে শুধু।মনে নেই বাচ্চামেয়ে?”
উশ্মি মাথা নিচু করে ফেললো সাথে সাথে।চোখজোড়া বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“আমি যতটুকু বুঝেছি হয়তো তখন রায়হান যথেষ্ট ম্যাচিওর ই ছিলো।তবে ও কেবলই আমার মায়ায় জড়িয়েছিলো।তুমিতো ওর বন্ধু ওর দিকটাই দেখবে,বুঝবে।বলছিনা যে আমার টা বুঝোনা বা বুঝবেনা।শুধু বলছি রায়হানের চোখে আমি কেবলই মায়া দেখেছি নিজের জন্য।হ্যা হয়তো ও ভাবে সাথে তুমিও ভাবো যে ও আমায় ভালোবাসে।কিন্তু একটা মেয়ের ষষ্ঠ-ইন্দ্রীয় কখনো ভুল বলতে পারেনা।মেয়েরা দূর থেকেই বুঝে যায় কোন পুরুষটা কিভাবে কোন নজরে দেখছে।আর রায়হানের চোখেমুখে আমি কেবল আমার জন্য মুগ্ধতা দেখেছি।সৌন্দর্যের মুগ্ধতা।ওর কেবলই আমায় ভালোলাগতো।হয়তো এখনো লাগে।আর একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসলে সর্বপ্রথম তাকে সম্মান করবে।যেটা রায়হান কখনো আমায় করেনি।করলে আমার নামে এতোকিছু বলতে পারতোনা।ইভেন এখনো প্রতিনিয়ত সুযোগ বুঝেই আমায় অ!পমান করে।কাল যখন ভাবির পায়ে কিল বিধলো?দেখেছিলে কিভাবে রাগটা ঝেড়েছিলো?”
“দেখেছি”
“হিম।ভালোবাসলে কেউ কাউকে এভাবে বলতে পারেনা রামিম।তাছাড়া ও সবসময় চাইতো আমায় বেঁধে রাখতে।আমার সীমা কেবল ওর গন্ডিতেই রাখতে।ওর গন্ডি পেরিয়ে যেনো আর কোথাও না যাই।কোনো ছেলে বন্ধু থাকতে পারবেনা।পোশাক আশাক এমন পরতে পারবোনা,অমন পরতে পারবোনা।এটা করতে হবে ওটা করতে হবে।এই করা যাবেনা সেই করা যাবেনা।কেনো?ও কি আমার গার্জিয়ান?সবকিছুইতো মেনে নিয়েছিলাম তবে সম্মানটা কেনো করতে পারলোনা?”
“আচ্ছা বাদ দাও না”
“বন্ধুকে নিয়ে উচিত টা বলছি বলে তোমার লাগছে তাই না?”
“না এমনটা না”
“এমনটাই রামিম।তবে তোমায় শুনতে হবে।তুমি শুধু রায়হানের সাইড টাই জানো।আমার সাইড টা জানোনা।তাই বন্ধুর ভুলগুলো তোমার চোখে পড়েনা”
“কি শুরু করলে উশি?”
“চুপচাপ শোনো।ভুলে যেওনা আমি একজন ব্যারিস্টার।যুক্তি দিয়ে তুমি আমার সাথে পারবেনা।তাই যা বলছি শোনো”
“শুনছি ম্যাডাম”
“এই যে তুমি।তোমায় বিয়ে করতেও আমার দ্বিধা নাই ক্যান জানো?”
“কেন?”
“কারণ তুমি আমায় প্রকৃত অর্থে ভালোবাসো।তোমার মতো পুরুষ আমি আজ অব্দি দেখিনি”
রামিম হালকা হেসে বলে,
“তাই নাকি?আমার মধ্যে কোনো বিশেষত্ব নেইতো”
“তুমি আগাগোড়া মানুষটাই বিশেষত্বে ভরপুর আমার উডবি।”
“আজ দেখি ভালোই প্রেম প্রেম পাচ্ছে হা?”
“কথা ঘুরিও না।”
“কথা আমি ঘুরাচ্ছি?এখন কিছু বললেই বলবে বন্ধুর ওকালতি করছি।তাই আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না”
“বন্ধুর হয়ে একটু ওকালতি করোই না।দেখি কতটুকু যুক্তি দিতে পারি।কতটুকুই বা পারদর্শী হলাম যুক্তিবিদ্যায়”
“তুমি কি ঝ!গড়া করতে চাচ্ছো উশি?”
“মোটেই না।তবে আমি যা বলেছি এর একাংশও মিথ্যে না রামিম”
“হ্যা মানছি মিথ্যে না।কিন্তু ও সেসব কেন করতো?কারণ ও তোমায় নিয়ে ইনসিকিউর ছিলো।তুমি ভয়*ঙ্কর সুন্দর দেখতে।ইনসিকিউরড হওয়াটা স্বাভাবিক না?সে দরুনই ওসব করেছে।যদি তোমায় হারিয়ে ফেলে?”
“আর তুমি করোনা?যদি তুমি হারিয়ে ফেলো?”
এবার আর কথা বলেনা রামিম।চুপ থাকে সে।রামিমকে চুপ দেখে উশ্মি হেসে বলে,
“কী?আর কোনো যুক্তি নেই তাইনা?তবে আমার কাছে আছে।শোনো।তুমি আমায় নিয়ে ভয় করোনা।কারণ তুমি জানো আমি অন্যের হবোনা।হতে গেলেও বিবেকে বাধবে যে ‘এতো ভালোবাসার পরেও ছেলেটাকে ছেড়ে চলে যাবো?’ অতঃপর আর যাওয়া হবেনা।তোমার হয়েই থেকে যাবো।তুমি বিশ্বাস করো,যে আমার সে কেবলই আমার থাকবে।আর যে আমার না কখনোই আমার হবেনা।তুমি কখনো আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করোনি।আমায় যথেষ্ট সম্মান করেছো।এই যে এতোগুলো বছর বাইরে ছিলাম।ওয়েস্টার্ন কালচারে নিজেকে গড়েছি।তবুও তুমি আমায় বাঁধা দাওনি।এজন্য দাওনি যে এতে আমি তোমার প্রতি ইন্টারেস্টেড হবো।বরং এজন্য দিয়েছো যাতে করে আমি আমার চাওয়া পাওয়া,আশা গুলো পূর্ণ করতে পারি।ভালোলাগা গুলোকে মে!রে না ফেলি।অথচ রায়হান?রায়হান কী করেছে?আমি কেবল মাস ছয়েক দেরি করেছি বলে কী কী অপ!বাদ লাগিয়ে দিয়েছে।আমি নাকি ওখানে কিসব করে বেড়াই।ও কি দেখেছে গিয়ে?তাছাড়া ও আমার ফুপাতো ভাই।তাও আবার বড় ভাই।এসব কি ওকে মানায়?তুমিতো আমার বয়ফ্রেন্ড তুমিতো এসব নিয়ে সন্দেহ করোনা।কারণ তুমি জানো আমি এমন কিছুই করবোনা।বিশ্বাস করো তুমি আমায়।আশা রাখছি যত্নও করবে ভবিষ্যতে।বেশি একটা সময়তো তোমার সাথে কাটাতে পারিনি।বাকিটা জীবন এভাবেই তোমার ভালোবাসায় কাটাতে চাই।আগলে রাখবেনা?”
“কখনো কেউ এমনভাবে বলেনি উশি।আমি আমার সবটা দিয়েই তোমায় ভালোবাসবো,আগলে নেবো কথা দিলাম”
উশ্মি হেসে বললো,
“বলবে কী করে?আমার হ্যান্ডসাম বয়ফ্রেন্ডটাতো কাউকে পাত্তাই দেয়নি।সেতো তার বিদেশী গার্লফ্রেন্ডের প্রতি লয়াল ছিলো।কী করেই বা গার্লফ্রেন্ডকে ধো*কা দিতো?”
কপাল কুচকে রামিম বলে,
“এতো কিছু তুমি জানো কী করে?”
“আমার গোয়েন্দার অভাব আছে নাকি এখানে?”
বিস্ময় নিয়ে রামিম বলে,
“রিদু ওরা?”
“খবরদার!আমার ননদদের যদি কিছু বলেছোতো”
“ইশ জামাই নিয়ে কোনো খবর নাই আসছে ননদওয়ালী”
“জামাই নিয়েও সব হবে জান।তবে একটা কথা”
“হ্যা বলো”
“রায়হান যেহেতু আমার কাজিন।তার উপর প্রাক্তনও।অন্যসব ভাইদের যেভাবে দেখা হয়।স্বাভাবিকভাবেই ওকে সেভাবে দেখা হবেনা।বা বলতে পারো ওভাবে দেখতে পারবোও না।তবে এটা সত্যি আমি ওকে আর ভালোবাসিনা।হয়তো কখনো বাসিই নি!বাসলে দ্বিতীয়বার তোমার প্রেমে পড়তে পারতাম না।তবে প্রথম প্রেমটাতো ওই ছিলো।প্রথম ভালোলাগার অনুভূতিটা তাকে দিয়েই হলো।অবশ্যই অন্যসব ভাইদের মতো তাকে লাগবেনা।কিন্তু বর্তমানে তাকে আমি শুধু আমার এক বড় ভাই হিসেবেই সম্মান করি।তাছাড়া কিছুইনা।আশা করছি তুমি বুঝবে”
“অবশ্যই বুঝি।যাকে দিয়ে সুন্দর আর নতুন অনুভূতির পরিচয় মেলে তাকে ভোলা যায় কি?যায়না।আমিও চাইনা তুমি রায়হানের প্রতি সেই ভালোলাগাটুকু মন থেকে মুছে ফেলো বা মোছার চেষ্টা করো।কিছু অনুভূতি মনের অন্তরালে লুক্কায়িতই শ্রেয়।তবে আমি জানি আমার জায়গাটা কতটুকু এবং কিরূপ।এই যে তোমার মনে নিজের জন্য বিশাল আর সুন্দর একটা জায়গা তৈরি করতে পেরেছি এইতো বেশ!কি পারিনি?”
এক বুক শ্বাস নিয়ে চোখে চোখ রেখে উশ্মি বলে,
“পেরেছো।এবং এমনভাবেই পেরেছো যেই জায়গা কখনো কেউ বা কোনোকিছু ভাঙতে পারবেনা”
“একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”
“পার্মিশন নিচ্ছো দেখি?”
হালকা হেসে রামিম বলে,
“বিয়েটা কি হুজুগের বশে করছো?”
“হুজুগের বশে কেনো হবে?আমি তোমায় ভালোবাসি।ভীষণভাবে বাসি।প্রথম প্রেম যেই হোক।তুমি আমার শেষ এবং সর্বশেষ ভালোবাসা এবং তোমাকে পেতে,সারাটা জীবন তোমার সাথে কাটাতেই বিয়েটা করতে চাওয়া”
বলেই রামিমকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে উশ্মি।রামিমও উশ্মির পিঠে এক হাত আর চুলে আরেক হাত রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আমিও তোমায় ভালোবাসি আমার উশ্মিতা।আমার পরিণিতা,আমার প্রিয়তা”
বলেই উশ্মির চুলে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।
রায়হান সবেই বাইরে এসেছিলো ফোনে কথা বলতে।এমতাবস্থায় উশ্মি আর রামিমকে এভাবে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার।কল কেটে হনহনিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আবার।কিছুতেই রাগ সংবরণ হচ্ছেনা।রুমে এসে বিছানায় বসে হাটুতে এক হাত রেখে কপালে আঙুল বুলাচ্ছে আর ভাবছে সেদিনের কথা,যেদিন ভালোবাসার দু’টো মানুষকে হারানোর মতো তীব্র যন্ত্রণার সূচনা ঘটেছিলো।মস্তিষ্ক তার অতীতে বিচরিত হতে চাচ্ছে ভীষণভাবে।তৎক্ষণাৎ বছর নয়েক আগের কোনো এক স্মৃতি ভেসে উঠলো স্মৃতির পাতায়,
দিনটা বৈশাখ মাসের পহেলা দিন।ভীষণ রমরমা আয়োজন হচ্ছে পহেলা বৈশাখ নিয়ে।বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের মাঠপ্রাঙ্গন যেনো মেতে উঠেছে সেই আনন্দকে দ্বিগুন করতে।রায়হান আর রামিম একই কলেজে পড়বে বলে রউফে ফার্স্ট চয়েজ দিয়েছিলো।দু’জন জানের জিগার কিনা!রামিমের ইচ্ছা ছিলো নুরে দেবে কিন্তু রায়হানের আবার গোল্ডেন আসেনি তাই দুই বন্ধু রউফেই দিয়েছে।এবং ভরসা ছিলো হয়ে যাবে তথা হয়েছেই!দুজনের বন্ধুত্বটা হয়েছিলো প্রণয়ের দ্বারাই।রায়হান,রামিম একে অপরের নামমাত্র কাজিন।দুজনের মাঝে র*ক্তের তেমন সম্পর্কও নেই।রায়হান হলো প্রণয়ের ফুপাতো ভাই আর রামিম মামাতো।সে সুবাদে রায়হান-রামিমের কোনো সম্পর্ক নেই।তবুও দুজনের বন্ধুত্ব প্রগাঢ়!অটুট!তবে সেদিনের পর বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে শুরু হলো যেনো।পুরোপুরি ভাঙেনি তবে শুরুতো সেদিনই হলো!
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩৩.
ঝলমলে সকাল,মৃদুমন্দ বাতাস।বারান্দায় বসে কফিতে ফুইয়ে ফুইয়ে একটু পর পর চুমুক দিচ্ছে চাঁদ।দৃষ্টি তার দূর নীলিমায়।যদিও অস্পষ্ট তবুও মন্দ লাগছেনা দেখতে।হঠাৎ করেই ইচ্ছে হলো মেঘগুলোকে স্পষ্টভাবে দর্শন করতে।অবলোকন করতে,মেঘের রঙ কি পুরোপুরি সাদা?নাকি আবছা সাদা?অথবা নীলচে সাদা?কোন রঙে নিজেকে সাজিয়েছে আজ শুভ্ররাঙা গগণটি?কফির মগটা কোলের উপর উরুর চাপের সাহায্যে ধরে রেখে ডান হাত দিয়ে পাশেই রাখা চশমাখানা চোখে পরিধান করে চাঁদ।অতঃপর লম্বা শ্বাস নিয়ে তাকায় মেঘগুচ্ছের পানে।কি অপরূপ দৃশ্য!কি স্নিগ্ধতায় মোড়ানো সেই আকাশ!মেঘেদের মাঝেও কি মান অভিমানের রেশ দেখা দিয়েছে?একে অপরের সাথে কথা বলবেনা ভেবেছে?দূরত্ব বাড়াবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে?যদি না নেয় তবে কেনোই বা তারা দু’দিকে বহমান?ঠিক যেমন সে আর তার বিড়ালাক্ষী মানব?প্রতিদিন দেখা হয়,একসাথে থাকা হয় তবুওতো তাদের বিরহের অন্ত নেই!মেঘমালাও বুঝি এমনই?কিন্তু ওকি!কি দেখা যায় সেথায়?চাঁদের দৃষ্টিপটে ভেসে উঠে অরণের হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা।ঐতো!বড় মেঘের ভেলাটা যে ভেসে যাচ্ছে সেটাতেই তো দেখা যাচ্ছে তাকে।কি সুন্দর ছেলেটার হাসি!হাসলে দু’চোখের কোনে ভাজ পড়ে,গজ দাঁতও দেখা যায় খানিকটা।মেঘের ভেলাটা সেখানেই থেমে যাচ্ছেনা কেনো?কেনো উড়ে চলে যাচ্ছে দূর থেকে দূরান্তে?সেই উদার পুরুষের মুখখানা আরেকটু দেখতে পেলে কি খুব মন্দ হতো?দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চাঁদ।চশমা খুলে পাশে রেখে চোখজোড়া বন্ধ করে।করতেই আর অরণের হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা দেখতে পায়না।তার মস্তিষ্ক তাকে স্মরণ করায় কিছু বী!ভ*ৎসকর মুহুর্ত আর মুখশ্রী।শেষে দিয়ে অরণের র*ক্তমাখা চেহারা ভেসে উঠতেই ঘেমে-নেয়ে একাকার হয় চাঁদ।ঢোক গিলে লম্বা লম্বা শ্বাস নেয় সে।অজান্তেই টুপ করে পড়ে যায় চোখের কোন বেয়ে দু’ফোটা অশ্রুবিন্দুও।আবারও কফিতে চুমুক দিতে নিলেই ডাক পড়ে প্রণয়ের,
“একটু ভেতরে আসুনতো চাঁদ”
কফির মগ হাতে নিয়ে চোখে চশমা এঁটে চাঁদের ঘরে প্রবেশ করতেই প্রণয় বলে,
“রেডি হয়ে নিন বেরুবো আমরা”
কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“বেরুবো মানে?কিন্তু কোথায়?”
“নিজের মতো অন্যকে খু*নী ভেবে সন্দেহ না করে চলুন।মে!রে ফেলবোনা অন্তত আপনায়”
বলেই রুম থেকে বেরুতে নিলে চাঁদের কথায় থেমে যায় প্রণয়ের পা জোড়া,
“রেডি হবো ঠিক আছে কিন্তু যাবো টা কোথায়?কোনো বিয়ে?বার্থডে পার্টি নাকি কোথায়?সে হিসেবে রেডি হতে হবেনা?”
পিছু ঘুরে কপাল খানিকটা কুচকে প্রণয় বলে,
“এতো সকালবেলা আমি আপনাকে পার্টিতে নিয়ে যাবো?তাছাড়া ওসব জায়গায় যে আমি কদমও ফেলিনা তাতো আপনি আগে থেকেই জানতেন।নাকি অ*পরাধের সাথে সাথে সেসবও ভুলে গিলে ফেলেছেন?”
চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,
“কিছু বলছিনা বলে ভাববেন না আপনার সব অপ!বাদই আমি হজম করে নেবো।আমি রেডি ই আছি।হিজাব পরেই বেরুচ্ছি পাঁচ মিনিট দাড়ান।”
“আমি নিচেই আছি।তাড়াতাড়ি আসুন”
বলেই হাতে এপ্রোণ আর গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলাতে ঝুলাতে রুম থেকে বের হয় প্রণয়।চাঁদ কেবলই সে পানে তাকিয়ে থাকে।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির মগটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে কাঠের উপর দু’হাতের ভর দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই নিজে বলে,
“জীবনে এতো বিষাদতা কেনো?একটুখানি সুখের দেখা বুঝি কভুই মিলবেনা?নিজেইতো সুখপাখিকে পি*ষে মে!রে ফেলেছি।হায় আমার সুখপাখিরে!তোকে আর নীড়ে ডাকা হলোনারে!উড়ে যা,উড়ে যা তুই তোর সত্যিকারের নীড়ে।ফিরিস না কভু এথায়।বড্ড বিষাদপূর্ণ এ নীড়।সমস্তকিছু গ্রাস করে ফেলে”
সিড়ি ভেঙে নিচে আসতে নিলেই প্রণয়ের নজড়ে আসে সোফায় বসে থাকা ফায়ান।কপালে অজান্তেই ভাঁজ পড়ে তার।হঠাৎ করেই কেমন যেনো হৃদস্পন্দন তীব্র হয়।অশান্তিভাব মনজুড়ে ছেয়ে যায়।এমনটা কেনো?আগেতো এমন হয়নি!চাঁদ আর ফায়ানের দেখা হয়ে যাবে বলে?ফায়ান কি তবে চাঁদের সাথেই দেখা করতে এসেছে?কেনো এসেছে?আসাতো উচিত হয়নি।তারতো অরণের সাথে থাকার কথা ছিলো।চোখমুখ গম্ভীর করে নিচে এসে ফায়ানকে কিছু বলতে নিলেই সোফায় তার পাশে চাঁদের অন্যসব বন্ধু-বান্ধবদের দেখতে পেয়ে স্বস্তি মিললো নাকি অস্বস্তি বাড়লো প্রণয়ের?বোঝা বড় দায়।সে ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে ফায়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“হঠাৎ ড.আরফিদ ফায়ান আমার বাড়িতে?”
প্রণয়কে দেখে সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করলো ফায়ান।প্রণয়ও সালামের উত্তর দিয়ে ততটুকুরই জবাব দিলো যতটুকু ফায়ানের প্রশ্ন ছিলো।অবনীর উচ্চস্বরের বাক্যে আড়চোখে সে পানে তাকিয়ে বিরক্তিবোধ করলো প্রণয়,
“ভাইয়া ফাইনালি আপনি আমাদের জিজু হলেন”
বিরক্তিবোধ প্রকাশ না করে খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে প্রণয় বললো,
“তুমি সে মেয়েটা না যে ইন্টার্নি চলাকালীন পালিয়ে গেলে?ঠিক যেমন তোমার বান্ধবী উধাও হলো?”
প্রণয়ের কথায় অবনী অ*পমানিত বোধ করতেই প্রণয় তাকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো,
“ডোন্ট বি আপসেট।তোমার বান্ধবী থেকে যথেষ্ট ভালো কাজই করেছো তুমি।সারাজীবনের অ*পরাধবোধ থেকে বাঁচতে একটু নাহয় ভুল কাজ করলেই।কিন্তু তোমার বান্ধবী?সেতো এক অ*পরাধ থেকে পালিয়ে গিয়ে আরেক অ*পরাধ করেছে”
অবনী কপাল কুচকে বললো,
“বুঝলাম না ভাইয়া?”
প্রসঙ্গ এড়িয়ে প্রণয় বললো,
“বসো তোমরা।যার প্রহরে সময় পার করছিলে সে এখনি এসে পড়বে।ঐতো এসেছে”
বলেই সিড়ির দিকে ইশারা করে।
সিড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ করেই চাঁদের চোখ গিয়ে আটকায় হলরুমে বসে একে অপরের সাথে আলাপ করতে থাকা তার বন্ধুমহলের দিকে।সে পানে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টি রাখতেই ঘোলাটে হয়ে আসে তার নেত্রদ্বয়।নিজেকে সামলে পা বাড়ায় নিচে নামার উদ্দেশ্যে।খানিকটা এসে অতিরিক্ত অস্পষ্টতার কারণে পা’জামার সাথে পা বেঝে পড়ে যেতে নিলেই প্রণয় দ্রুতগতিতে এসে তার নিকট দাঁড়ায়।দাঁড়িয়ে তার কোমড় জড়িয়ে কোলে তুলে নেয়।আকস্মিক প্রণয়ের এরূপ কান্ডে সেখানে উপস্থিত সকলেই ভ!ড়কে যায়।তন্ময় আর উজানের মুখ রীতিমতো হা হয়ে গেছে।উশ্মি ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিলো,কিন্তু ভাইদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাদের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই নিজেও স্থির হয়ে যায়,পলক থমকাতে বাধ্য হয় তারও।সকলে আরেকদফা ভ!ড়কায় প্রণয়ের শান্তস্বরে,ভ!ড়কায় স্বয়ং চাঁদও।প্রণয়ের এরূপ শীতল কন্ঠে খানিকটা কুঞ্চিত হয়ে আবার স্থির হয় তার ভ্রুযুগোল এবং লোচনদ্বয়,
“নিজেকে সামলান লালগোলাপ।সবাইতো আর আপনার কাটা সহ্য করতে পারবেনা”
চাঁদ কেবল প্রণয়ের পানে চেয়েই রইলো।এই ছেলেটা এমন কেনো?কী চায় সে?কেনো বুঝতে দেয়না নিজেকে?কী দিয়ে গড়া এ মানব?এতো জটিলতায় মোড়ানো কেনো লোকটা?চাঁদের ভাবনার মাঝে ছ্যাঁদ ঘটে প্রণয়ের তাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার আগ মুহুর্তের বাক্য শুনে,
“জাস্ট টেন মিনিটস।দশ মিনিটে যা আলাপ সাড়ার সেড়ে নিন।দশ মিনিটের মাঝে আপনাকে আমি গাড়ির ভেতরে চাই চন্দ্র”
প্রণয় চলে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে জমিনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চাঁদ।সকলের সাথে দৃষ্টি মেলাতে বড্ড সংকোচবোধ হচ্ছে তার।অতঃপর বন্ধুবান্ধবের করা প্রতিটা আকস্মিক প্রশ্ন চাঁদকে দৃষ্টি তুলে তাদের পানে অবাক চাহনী নিক্ষেপ করতে বাধ্য করে।শুরুটা ইফাদই করে,
“দৃষ্টি মেলাতে এতোটাই যখন কষ্ট হবে,দৃষ্টি মেলাতে না পারার মতো কাজটা না করলেই কি হতোনা চাঁদ?”
খানিকটা হেসে লম্বা শ্বাস ত্যাগ করে ইপ্সি বলে,
“দীর্ঘশ্বাস ফেলা ব্যাতীত আর কিছুই করতে পারবিনা,এমন পরিস্থিতি তৈরিই বা কেনো করলি চাঁদ?”
অবনী তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
“যার মধ্যে এতোটুকু পরিমাণ অ*পরাধবোধ নেই তাকে তোরা প্রশ্নই বা করছিস কি করে?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে দৃষ্টি নিচু রেখেই চাঁদ বললো,
“তন্ময়,উজান,উশ্মি তোমরা একটু….”
উজান চাঁদের বাক্য সম্পূর্ণ করার আগেই বললো,
“হ্যা ভাবি অবশ্যই।তোমরা আলাপ করো”
বলেই তন্ময়কে সাথে নিয়ে উশ্মিকে ইশারায় যেতে বলে।ওরা যেতেই চাঁদ দৃষ্টি উঁচু করে সকলের পানে তা স্থির করলো।অতঃপর খানিক হেসে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি কিছু বলছোনা যে ফায়ান?”
এতোগুলো বছর পর চাঁদের কন্ঠস্বর শ্রবণ হতেই চোখজোড়া বন্ধ করে ফায়ান।অতঃপর লম্বা শ্বাস নিয়ে সেও খানিক হেসে বলে,
“তুমি আমায় কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে রেখেছো চাঁদ?”
এর প্রতিত্তোর স্বরূপ কোনোকিছুই বলতে পারেনা চাঁদ।চুপ হতে হয় তাকে।তা দেখে ইপ্সি আবারও বলে,
“কী?কারো প্রশ্নেরই কোনো উত্তর নেই তাইনা?”
অবনী ইপ্সির দিকে তাকিয়ে বলে,
“থাকবে কী করে ইপ্সু?কী অজুহাতই বা ও দেবে বল?”
অবনীর কথার এবার জবাব দেয় চাঁদ।বেশ সাবলীল আর সোজাসাপটা সে জবাব,
“অজুহাত থাকলে অবশ্যই দিতাম অবু”
তৎক্ষনাৎ অবনী রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাতে দাত চেপে বলে,
“খবরদার তোর ঐ মুখ দিয়ে যদি আমায় অবু বলেছিস তো!”
চাঁদ ম্লান হেসে বলে,
“কেন রে আমার মুখ কি প!চে গেছে?নাকি তোর নাম আমি নিলে তোর নামে অপবিত্রতা ছেয়ে যাবে?কোনটা?”
চাঁদের কথায় অবাক হয়ে তাকায় অবনী তার পানে,দৃষ্টিতে বিস্ময়,জলে টইটম্বুর সেই নেত্রদ্বয়।অতঃপর দৌড়ে গিয়ে চাঁদকে জড়িয়ে ধরে টুপ করে সেই জলটুকু ফেলে দেয় তার ঘাড়ে।অবনীকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে চাঁদ হেসে দিয়ে বলে,
“কঠোর হতে যখন পারিসই না কেনো চেষ্টা করিস বলতো?”
জবাবটা ফায়ান দেয়,
“তোমার মতো পা*ষাণ তো সবাই না চাঁদ।”
অতঃপর অবনীকে শাসিয়ে বলে,
“আর তুই!এ অবস্থায় এভাবে রেগে যায় কেউ?আর এমনভাবে দৌড়ায়?”
অবনীকে ছেড়ে দিয়ে চাঁদ তার চোখ মুছে দিয়ে বলে,
“এ অবস্থা মানে?”
চাঁদের কথায় অবনী লজ্জায় দৃষ্টি নত করে।ঠোটে ফুটে উঠে মৃদু হাসি।তা দেখে চাঁদ সন্দেহজনক কন্ঠে বলে,
“এই এই!আমাদের চঞ্চল অবু লজ্জাবতী হলো কবে থেকে রে?”
ইপ্সি হেসে চাঁদের পাশে বসে বলে,
“যবে থেকে অবুর লুই!চ্চাটা তার লাভারে পরিণত হয়েছে তবে থেকেই”
ইপ্সির কথা শুনে ইফাদের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে চাঁদ বলে,
“ইফাদ তুমি আর অবু?”
ইফাদ খানিকটা হেসে মাথা চুলকে বলে,
“হ্যা গো আমার শালি সাহেবা।আমি আর অবু রিলেশন করে বিয়ে করেছি”
চাঁদ অবাক হয়ে সবেই চোখদু’টো বড় বড় করেছিলো,ইপ্সির কথা শুনে তার দু’ঠোটে কিঞ্চিৎ ফাঁকও বিদ্যমান হয়,
“তাও আবার ভেগে গিয়ে”
অবনীর কথা শুনে আরেকদফা চমকায় চাঁদ,
“আমি প্রেগন্যান্ট দোস্ত”
চাঁদ এবার বড়সড় করেই মুখ হা করে বুকের বা পাশে হাত রেখে পড়ে যাওয়ার ভঙ্গি করে বলে,
“আর কিছু থাকলে এখনই বলে দে নাহয় আমি হার্ট অ্যা*টাক করে ম!রলাম!”
ইফাদ বলে,
“হ্যা আরেকটা আছে”
বুকে হাত রেখেই চোখ বন্ধ করে চাঁদ কাদো কাদো কন্ঠে বলে,
“প্লিজ জলদি!”
“ইপ্সি ম্যারিড”
এ কথা শুনে চোখের পলক বারকয়েক ফেলে চাঁদ বলে,
“সবাই কতকিছু করে ফেলেছে।নিশ্চয়ই ফায়ানও…. ”
অবনী হেসে দিয়ে বলে,
“ফায়ানের এখন পর্যন্ত একটা গার্লফ্রেন্ডও হয়নি।বিয়েতো পরেরই বিষয়”
ইপ্সি মুখ ভেংচে বলে,
“গার্লফ্রেন্ড বানালে না হবে।প্রণয় ভাইয়ের ডিট্টো হয়েছে।কোনো মেয়েকে পাশে ঘেষতেই দেয়না আমরা ছাড়া!”
ইপ্সির দিকে ফায়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতেই ইপ্সি বলে,
“তোকে আমি মোটেও ভয় পাইনা মজনু জানি কোথাকার।এমনে তাকিয়ে লাভ নাই সর”
“আমার প্রণয় যে একটাই হয় রে ইপ্সু।তার মতো কেউ নেই,কেউ নেই।সে কেবলই একজন।আমার ব্যক্তিগত পুরুষ,আমার শুদ্ধ পুরুষ,আমার বিড়ালাক্ষী মানব”
মনে মনে কথাগুলো বলে ঠোট প্রসারিত করে লম্বা শ্বাস নিয়ে ইফাদের দিকে তাকিয়ে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“আর কোনো শকিং নিউজ বাকি আছে?”
ফায়ান শান্তস্বরে বলে,
“যে নিজেই শকিং নিউজ,ব্রেকিং নিউজ,হ!ট নিউজ দিতে পছন্দ করে।এমনকি যে নিজেই আস্ত একটা শকিং নিউজ সে জিজ্ঞেস করছে আমরা শকিং নিউজ দেবো কিনা?”
অবনী চাঁদকে বলে,
“হ্যা,বল না তুই হঠাৎ চলে গেলি কেনো?ওভাবে কেনো গেলি?সব যোগাযোগ বন্ধ করলি কেনো?কী হয়েছিলো?”
ইপ্সি জিজ্ঞেস করে,
“আর মিরা আপু কেনো অরণ ভাইয়ার জন্য তোকে দো!ষারোপ করে?”
“এমন কিছুই হয়েছে যার জন্য আমায় কাজগুলো করতে হয়েছে।না চাইতেও করতে হয়েছে।কী হয়েছিলো জিজ্ঞেস করবিনা প্লিজ!ম*রে যাবো আমি।আমাকে বাঁচতে দিস প্লিজ!যাকে বাঁচাতে বাঁচাতে নিষ্পাপ ছেলেটা ম!রতে বসেছে তাকে বাঁচতে দিস প্লিজ!”
বলে আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না চাঁদ।কা*টা পা নিয়েই খুড়াতে খুড়াতে বাড়ি থেকে বের হয়।
To be continued….