#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩৭.
বেশ কিছুদিন পরের কথা,
সবেমাত্রই বিকালের টিউশনটা সেরে বাসার উদ্দেশ্যে ধীরগতিতে পা চালাচ্ছে চাঁদ।আপনমনে আশপাশের পরিবেশ দেখতে দেখতে হাটছে সে।ঢাকা ভার্সিটির রাস্তাগুলো তার খুব পছন্দের।বিশেষ করে যানযটহীন রাস্তার একটু পর পরই কৃষ্ণচূড়ার ছায়াতল বেশ প্রশান্তি অনুভব করায় তাকে।চোখ তার জুড়িয়ে যায় প্রকৃতির এই শান্ত রূপে।রাস্তাগুলো গাছপালার ছড়াছড়ির দরুনই এতোটা শান্ত এতোটা নির্মল অনুভূত হয়।রোদের প্রকোপও কম থাকে এখানটায়।বেশ কিছুক্ষণ ধরেই অন্যসব দিনের থেকে কিছুটা অন্যরকম লাগছিলো চাঁদের।তবে বেশি একটা তোয়াক্কা না করে সে তার মতো করে হেটে যাচ্ছিলো।কিন্তু নিজের পাশে আকস্মিক কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে ভুত দেখার মতো চমকে তাকাতেই শুনতে পায় এক পুরুষালি চমৎকার কন্ঠস্বর,
“হেই নীলাম্বরী!”
কপাল কুচকে বুকের মাঝ বরাবর বাম হাত রেখে নাকমুখ ফুলিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,
“আপনি!”
মুচকি হেসে ছেলেটা বলে,
“যাক চিনেছো তাহলে”
“আপনি আমায় ফলো করছিলেন এতক্ষণ যাবৎ?”
“ফলো কোথায় করলাম নীলাম্বরী?আমিতো জাস্ট পর্যবেক্ষণ করছিলাম তুমি মেধাবীর পাশাপাশি কতটা পরিশ্রমীও”
“পর্যবেক্ষণ করা শেষ?এবার আসতে পারেন”
বলেই পা বাড়াতে নিলে চাঁদের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে ছেলেটা বলে,
“এই এই নীলাম্বরী?কোথায় যাচ্ছো?নিশ্চয়ই বাসায়?চলো পৌঁছে দেই”
থমথমে কন্ঠে চাঁদ জবাব দেয়,
“কোনো প্রয়োজন নেই।আর না আমি আপনার থেকে কোনোপ্রকার হেল্প চেয়েছি।দেখি সরুন”
বলেই পাশ কেটে যেতে নিলে আবার ঐ পাশ আটকে দাড়াতেই চাঁদ বিরক্ত হয়ে বলে,
“দেখুন মি.!”
ঠোট প্রসারিত করে ছেলেটা মুচকি হেসে বলে,
“আহিন।আহিন মোহাম্মদ শেখ”
বিরক্তিকর ভাবভঙ্গি নিয়েই চাঁদ বলে,
“যাই হোক!আপনি রীতিমতো আমাকে ডিস্টার্ব করছেন।কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?”
“না ম্যা’ম,একদমই না!আমিতো শুধু আপনাকে বিরক্ত করছি।ই!ভটি!জিং তো আর করছিনা তাইনা?যে আপনি গিয়ে আমার নামে কে!স করে দেবেন আর পুলিশ এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাবে।তাছাড়া নিলেও দু’মিনিটের মাঝেই আবার বেরিয়ে আসবো।অথবা বলতে পারো পুলিশ তোমার কে!সটাই নেবে না”
বলেই একদফা হাসে আহিন।আহিনের কথায় চরম বিরক্ত হয়ে চাঁদ বলে,
“হতেই পারে আপনার বাবা ঢাকাশহরের মেয়র।তার মানে এই নয় আপনি যারতার সাথে মিসবিহেভ করে বেড়াবেন।আমি কিন্তু যেই সেই মেয়ে নই মি.আহিন।তাই আমার সাথে ভুল করেও উল্টাপাল্টা কিছুর চিন্তাও করবেন না”
বুকের বা পাশে হাত রেখে আহিন বলে,
“হায়!তোমার এই ঝাঁসিকিরানি রূপেইতো ম!রে যাই নীলাম্বরী!আর তোমার মুখে আহিন শুনে কি যে ভালো লাগছে,উফ!কী আর বলবো”
ভ্রু কুচকে চশমা চোখে ভালো করে এঁটে নিয়ে চাঁদ বলে,
“আপনিতো যথেষ্ট অভদ্র!”
নিজের ভাবভঙ্গি ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খানিকটা গাম্ভীর্যপূর্ণ কথাই আহিন বলে,
“আমি একজন পলিটিশিয়ানের ছেলে নীলাম্বরী।সেইসাথে নিজেও একজন পলিটিশিয়ানই।আর একজন পলিটিশিয়ান বড়জোর ইগোয়েস্টিক হতে পারে অভদ্র নয়”
অতঃপর চাঁদের দিকে খানিকটা হেলে আবারও বলে,
“তবে তোমার জন্য একটু নাহয় অভদ্র হলামই!”
বলেই পেছনে চেপে মৃদু হাসে।আহিনের এরূপ কান্ডে গা রিরি করে উঠে চাঁদের।সে প্রচন্ড মেজাজ খারাপ করে বলে,
“আপনি কেবলই অভদ্র নন।অভদ্রতামিতে পিএইচডি করেছেন নিশ্চয়ই!নাহলে এমন উদ্ভট ধরণের ব্যবহার একজন মার্জিত পলিটিশিয়ান মোটেও করতে পারেনা”
“ঐ যে বললাম না?তোমার জন্য সব হতে রাজি নীলাম্বরী।সব!কেবল তোমার জন্য এবং তোমার কাছেই।অন্যসবার কাছে আহিন শেখ,আহিন মোহাম্মদ শেখ ইজ নট অনলি আ পোলাইট এন্ড জেন্টাল গায় বাট অলসো আ রেসপন্সিবেল পলিটিশিয়ান”
কিছুটা দূরে চেপে নিজের ডান হাত তার আর আহিনের মাঝে রেখে আহিনের দিকে তাক করে চাঁদ বলে,
“এবং এই তার নমুনা?”
এ কথা শুনেই আহিনও কিছুটা দূরে চেপে যায়।তা দেখে চাঁদ বলে,
“আমার দেরি হচ্ছে মি.আহিন।পথ ছেড়ে দাড়ান”
“শিওর নীলাম্বরী”
বলেই চাঁদের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায় আহিন।অতঃপর চাঁদ স্বস্তির শ্বাস ফেলে আগে বাড়ে।কিন্তু তার পাশে দিয়ে আহিনকে হাটতে দেখে পা জোড়া থামিয়ে তার দিকে ঘুরে বলে,
“সমস্যা কী আপনার?এভাবে আটকে রেখে বিরক্ত করছেন কেনো?”
আশ্চর্য হয়ে আহিন বলে,
“তোমায় আটকে রেখেছি নাকি আমি?না পথ ধরে দাঁড়িয়ে আছি?”
“আপনি আমায় ফলো করছেন”
“আমিতো তোমার পিছু আসছিনা।পাশে হাটছি”
“কেনো হাটবেন?”
“আমার ইচ্ছা।রাস্তাটাতো তোমার নয়”
“রাস্তাটা আপনারও নয়।আর না আমি আপনার কোনোপ্রকারের বোন হই যে এভাবে আপনি আমার গা ঘে!ষে হাটার চেষ্টা করবেন!”
বেশ থমথমেভাবে আহিন বলে,
“তোমার আর আমার মাঝে যথেষ্ট দূরত্ব আছে নীলাম্বরী।না হলেও দু’হাত জায়গা ফাকা আছে।আর কী বললে?বোন?বোন কেনো হতে যাবে তুমি আমার?তুমিতো হবে আমার…. ”
চাঁদের ঝাঝালো স্বরে থামতে বাধ্য হয় আহিন,
“থামুন!অনেক্ক্ষণ ধরে আপনার ননস্টপ উদ্ভট কথাবার্তা শুনেই যাচ্ছি।এবার কিন্তু আমার ধৈর্য সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে মি.আহিন”
বুকে হাত রেখে চোখজোড়া বন্ধ করে আহিন বলে,
“হায়!এভাবে ডেকোনা।ডেকোনা গো আমার নীলাম্বরী!আমি দিশে….”
বাক্যটুকু সম্পূর্ণ করার পূর্বেই আহিনের ফোন বেজে উঠে।বেশ বিরক্তবোধ করে আহিন এতে।তবুও দাতে দাত চেপে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতে নেয় সে।অতঃপর রিসিভ করে ওপাশের কথা শুনে সে কেবল বলে,
“ঠিক আছে”
চাঁদকে সেভাবেই স্থির থেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহিন মুচকি হেসে ভ্রু উচিয়ে বলে,
“আমার অপেক্ষা করছিলে নাকি নীলাম্বরী?সুযোগ পেয়েও যাওনি যে?”
চাঁদ বোকা বনে গিয়ে বলে,
“হোয়াট!”
আহিন খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,
“জাস্ট কিডিং নীলাম্বরী।তবে তোমার সুবিধাই হলো।আমার মিটিং পড়ে গেছে আর্জেন্ট।তাই যেতে হচ্ছে।আরেকদিন তোমায় সময় দেবো কেমন?আজ যাচ্ছি।তবে পরবর্তীতে তোমায় সঙ্গ আমি অবশ্যই দেবো।আর হ্যা সাবধানে যেয়ো।রিকশা করে দেবো?”
“আমার নিজের হাত,পা এবং গলা আছে”
খানিকটা চেচিয়ে কথাটা বলেই দ্রুত পা চালায় চাঁদ।চাঁদের এরূপ কথা আর হাটার গতি দেখে ফিক করে হেসে দেয় আহিন।চুলে হাত বুলিয়ে খানিকটা চুল এলোমেলো করে দিয়ে নিজেই নিজেকে বলে,
“শেষে কিনা তুই এক চাশমিশ পড়াকু মেয়ের প্রেমে পড়লি আহিন?”
অনেক্ক্ষণ যাবৎ প্রণয়ের ফোন বেজে চলেছে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে বেশ কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে ফিরে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকেছে সে।মাত্রই শাওয়ার শেষ করে থ্রি কোয়ার্টার পরে খালি গায়ে গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে বেরিয়ে এসেছে।চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ফোনের কাছে এসে দেখে অরণের হোয়াটসঅ্যাপে চারটা মিসড কল।তা দেখে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই আবারও ভিডিও কল আসে অরণের।অতঃপর কল রিসিভ করে ঠিকঠাকভাবে নিজের দিকে ফোন রাখতেই ফোনের ওপাশে অরিনকে দেখে কপাল কুচকে সাথে দাতে দাত লাগিয়ে কল কেটে দিয়ে নাক ফুলিয়ে অডিও কল দেয় অরণকে।অতঃপর রিসিভ করে অরণের বোন অরিন এবং শুনতে পায় প্রত্যেকবারের ন্যায় সেই একই ঝাঝালো আর ক!র্কশ কন্ঠস্বর,
“তোমার সাহস দেখে আমি দিন দিন অবাক হচ্ছি অরিন!আজ কিন্তু অতিরিক্তই করে ফেলেছো।তুমি কি চাচ্ছো আমার আর তোমার ভাইয়ের সম্পর্কটা নষ্ট হোক?নষ্ট করতে চাচ্ছো আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্ব?”
মলিন কন্ঠে অরিন আস্তেসুরে বলে,
“আমি এমনটা কেনো চাইবো প্রণয়?”
খানিকটা উচ্চস্বরেই প্রণয় বলে,
“কী প্রণয় হ্যা?কী প্রণয়?ন্যূনতম ম্যানার নেই?বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানোনা?আমি তোমার বড় ভাইয়ের বন্ধু জেনেও কোন সাহসে তুমি আমার নাম ধরে ডাকো?”
“সবার সাথে গম্ভীরভাবে শান্তসুরে কথা বলেন আমার সাথে কেনো এতোটা নির্দ!য় প্রণয়?”
“দেখো মেয়ে বারবার নাম ধরে ডেকে মাথায় র*ক্ত উঠিয়ে দিচ্ছো তুমি।ঠিক এজন্যই,এজন্যই আমি তোমাদের বাসায় কম যাই।যেদিন থেকে তোমার এসব পাগলামি শুরু হয়েছে সেদিন থেকে শান্তিমতো শ্বাস নিতে পারছিনা আমি অরিন!এবার থামো!খবরদার যদি এরপর আমায় বিরক্ত করতে দেখেছি তো।দূরে থাকবে আমার থেকে।এতেই তোমার মঙ্গল”
“আপনার কাছে থাকার চেষ্টায় যদি আমার অমঙ্গল হয় তবে অমঙ্গলই শ্রেয় প্রণয়”
অরিনের কথা শুনে মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায় প্রণয়ের।সে তৎক্ষনাৎ কলটা কেটে দেয়।অপরপাশ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরিন ভাবে সেই প্রথমদিনের কথা,যেদিন প্রণয়কে নিয়ে নতুনকিছু অনুভব করেছিলো সে।যেই অনুভূতি আগে কখনো,কারও জন্য অনুভব করেনি।এই একটা ছেলে তার সবটা জুড়ে বসবাস করে।এই একটা ছেলেকেই তার কিশোরী মন বেছে নিয়েছে।সে চায় আজন্ম এই একজনকেই তার মন চাইতে থাকুক।সে তার নাইবা হলো,তবুও তাকে চাইতে চায় সে।তাকে চাইতে গেলেও মনে একধরণের প্রশান্তি ছেয়ে যায় অরিনের।এতো ভালো লাগা কাজ করে কেনো ছেলেটার জন্য?কেনো এতো উন্মাদনা এই ছেলেটাকে নিয়ে?তার মতো আর কত নারী এই ছেলেকে বারবার,হাজারবার চায়?তাদের মধ্য থেকে কেউ কি আছে অসাধারণ?অনন্য?অতুলনীয়?যে কেবলই একজন হয়?যার দ্বিতীয় কোনো জুড়ি নেই?যাকে প্রণয়ও চাইতে পারে?প্রণয়ও কি কাউকে চায়?চায় কি?চাইলেও কেনো চায়?সে কাউকে চাইতে পারেনা।সে আজন্ম এমন নারী-বি!দ্বেষী থাকুক এটাই চায় অরিন।কেনোনা সে জানে প্রণয় তার কখনোই হবেনা।প্রণয় তার নাই বা হোক।সে যেনো অন্য কারোও না হোক এই কামনাই সবসময় করে অরিন।
শুক্রবার,
জুমার দিন।পবিত্র এই দিনে মন এবং মস্তিষ্ক দুটোই শান্ত থাকে,ভালো থাকে।মনকে আরেকটু ভালো করতেই জুমার নামাজ আদায় করেই বাসে উঠে চড়েছে চৈত্র।উদ্দেশ্য তার চোখ জুড়াতে,মন ভালো করতে।বাসে একটা সিটও খালি নেই তাই দাঁড়িয়ে থেকেই ঠোটে হাসির রেখা টেনে চোখ বন্ধ করে বাসের উপরের চাকতিতে হাত রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে চৈত্র।কোনো হেলদুল নেই।নেই কোনো পড়ে যাবার ভয়।ভয় শুধু একটাই,মেয়েটাকে কি শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগবে?সে কি কয়েকটা হার্ট বিট মিস করবে?নাকি অজ্ঞা!ন হয়ে মাটিতেই লুটিয়ে পড়বে?এতো অস্থিরতা কাজ করছে কেনো?সে কি এখনই জ্ঞা!ন হারাবে নাকি?
ঘেমে নেয়ে সাদা পাঞ্জাবিটা চুপচুপ হয়ে লেপ্টে আছে চৈত্রের প্রসস্থ বুক এবং কাধের দিকে।বার বার হাত ঘড়ি দেখছে সে।এতক্ষণে তো মেয়েটার এসে পড়ার কথা।এখনো আসছেনা কেনো?নিশ্চয়ই তার জন্য নিজেকে মিষ্টিভাবে তৈরি করছে?কথাটা ভাবতেই ঘর্মাক্ত মুখশ্রীতেও ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি।হাসিটুকু বজায় রেখেই সে চোখজোড়া বন্ধ করে কল্পনা করে তার কল্পনাবিলাসীকে।কি অপূর্ব লাগছে তাকে!নীল শাড়িতে ঠিক যেনো চৈত্রের রূপা।কিন্তু সেতো হিমু সেজে আসেনি।ইশ!আসা উচিত ছিলোতো!কিন্তু তার তো কোনো হলুদ পাঞ্জাবী ই নেই।আফসোস করতে করতেই তার পাশে এসে কেউ দাড়াতেই ঝট করে চোখ খুলে হাসিমুখ করেই চৈত্র বলে,
“রূপন্তিকা?আমার রূপন্তিকা আসলো বলে?”
কথাটা বলেই সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে দেখে মুখটা মলিন করে নিলো সে।অতঃপর লম্বা শ্বাস টেনে বললো,
“আজও শাড়ি পরোনি তুমি?”
মেয়েটা মাথা নিচু করে বলে,
“শাড়িতে আমায় ভালো লাগেনা চৈত্র।পরেছিলাম।ভালো লাগছিলোনা তাই খুলে ফেলেছি”
মেয়েটাকে নিজের কাছে টেনে চৈত্র বলে,
“এতো দূরে দূরে থাকার জন্যতো এতোদূর জার্নি করে আসিনি রূপন্তিকা”
“এভাবে ডেকোনা চৈত্র।আমার ভয় হয়।ভয় হয়,যদি তুমি হারিয়ে যাও?এতো ভালোবাসা আমায় সইবেতো চৈত্র?”
“আসো কোথাও বসি।তুমিতো সব প্রশ্নের উত্তরই জানো রূপ।তবুও আরও একবার নাহয় বললাম ই।আসো”
বলেই রূপার হাত ধরে সামনে এগোতে এগোতে চৈত্র বলে,
“তুমি আমার থাকো না থাকো,আমি আজন্ম তোমায় ভালোবাসবো রূপন্তিকা”
হাটা থামিয়ে চৈত্রের পানে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রূপা বলে,
“এভাবে বলওনা প্লিজ!আমি তোমারই থাকবো,তোমারই থাকবো।আমার জায়গা কেউ নিতে পারবেনা তো চৈত্র?”
রূপার দিকে খানিকটা ঝুকে তার ডান হাত নিজের বুকের বা পাশে রাখিয়ে চৈত্র বলে,
“কিছু অনুভব করতে পারছো?পারলে অবশ্যই বুঝেছো চৈত্রের হৃদস্পন্দনে রূপন্তিকার বসবাস।কেবলই চৈত্রের রূপের।এই হৃদয়ে অন্য কেউ বসবাস করতে পারবেনা,কখনোই না।তার আগেই চৈত্রের হৃদয় ঝ!লসে যাক,বিগলিত হয়ে যাক!”
এ কথা শুনতেই বুক থেকে হাত সরিয়ে পা উচু করে হাত দ্বারা চৈত্রের ঠোট চেপে ধরে রূপা বলে,
“যে হৃদয়ে এতো প্রেম সে হৃদয় আজন্ম প্রেমময়ী হয়ে থাকুক।প্রেমময়ী হৃদয়টা এই চৈত্র নামক পুরুষটাকে সর্বদা প্রেমিক পুরুষ বানিয়ে রাখুক!”
বলেই রাস্তার এক পাশে বসার জায়গা দেখে চৈত্রকে টেনে নিয়ে সেখানে বসিয়ে চৈত্রের বড় বড় চুলগুলো এক হাতে ধরে সরিয়ে অপর হাতে নিজ ওড়না দ্বারা চৈত্রের কপাল মুছে দিতে দিতে কপাল কুচকে রূপা বলে,
“কে বলে এতো কষ্ট করে এতোদূর আসতে?শুধু শুধু ঘেমে নেয়ে একাকার!”
চৈত্র অপলক রূপার পানে চেয়ে বলে,
“শুধু শুধু কোথায় রূপন্তিকা?এই যে রূপন্তিকার ভালোবাসার পরশ পেয়ে গেলাম।এইতো আমার কষ্ট সার্থক হলো বলে!”
চৈত্রের কথা শুনে চোখ গরম করে তার পানে তাকিয়ে বাহুতে কি!ল বসিয়ে রূপা বলে,
“সবসময় শুধু প্রেম আর প্রেম না?এতো প্রেম রাখো কোথায় তুমি?”
রূপার কথা শুনে রূপার হাত টেনে বুকের কাছে এনে চৈত্র বলে,
“এই যে এই বুকের ভেতরে যেই ছোট্ট হৃদয়টা আছেনা?সেইখানে রাখি রূপন্তিকা”
চৈত্রের বুক থেলে হাত সরিয়ে ব্যাগ থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি বের করে চৈত্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে রূপা বলে,
“প্রেমালাপ শেষ?এবার নিন পানি খান।নিশ্চয়ই এতো প্রেমময়ী বাক্য বলে গলা শুকিয়ে গেছে?”
খানিকটা হেসে বোতল হাতে নিয়ে রূপার নাকের ডগায় তর্জনী ছুইয়ে চৈত্র বলে,
“ঠিক এজন্যই তোমায় আমি বউ বলি রূপ।আমার বউ।চৈত্রের একমাত্র বউ।রূপন্তিকা বউ”
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩৮.
“ঐ বদ!মা!ইশ লোকটা আমায় বড্ড জ্বালাচ্ছে মিরজাফর ভাইয়া!”
সকাল সকাল কলেজে প্রবেশ করেই সরাসরি তৃতীয় বর্ষের ক্লাসে ঢুকে প্রণয়ের বন্ধুমহলের সামনে একটা বেঞ্চে বসতে বসতে কথাখানা বলে চাঁদ।চাঁদের কথা শুনে মির ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
“কোন ব!দমা!ইশের কথা বলছো ঘসেটি?”
চোখের চশমা খুলে তা হাইবেঞ্চে রেখে,ওড়নার একপাশ দিয়ে পুরো মুখের ঘাম মুছতে মুছতে চাঁদ বলে,
“কার আবার তোমাদেরতো সেদিনও বললাম লোকটা আমায় রীতিমতো ফলো করছে।শুধু কি ফলো?তিন মাস ধরে জাস্ট বিরক্ত করে ফেলেছে।কোনো কিছু বললে গায়েও মাখেনা সে।থার্ডক্লাস লোক একটা”
মিরা কোকের বোতলে হা করে দুই-তিন ঢোক গিলে চাঁদের দিকে তা এগিয়ে দিয়ে বলে,
“নাও আগে মাথা ঠান্ডা করো।এটার একটা বিহিত আমরা অবশ্যই করবো।তুমি টেনশন নিওনা”
রবিন পাশে থেকে বলে উঠলো,
“আমার কী মনে হচ্ছে,আহিন মেইবি তোমাকে ভালোবাসে চাঁদ”
এক চুমুকেই পুরো বোতল শেষ করে বিরক্তি নিয়ে রবিনের পানে তাকিয়ে চাঁদ বলে,
“কী বললে তুমি?ভালোবাসে?সিরিয়াসলি ভাইয়া?ঐ লোকটা আমায় ভালোবাসে?ভালোবাসলে এমন ছ্যা!চড়ামো কে করে বলবে?আর এতো নামধামপূর্ণ মেয়রের ছেলেকে এসব মানায়?নিশ্চয়ই আমার থেকে সেদিনের প্র!তিশোধের জন্যে পিছে পড়েছে আর ভেবেছে তার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে চাঁদ ফেসে যাবে।হাউ সিলি!”
রিহা এক ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তার মানে তুমি মানছো আহিন সুন্দর?”
চাঁদের সোজাসাপটা জবাব,
“হ্যা অবশ্যই।সুন্দরকে তো আর কুৎসিত বলা যায়না তাইনা?”
কথাটা প্রণয়ের কর্ণকুহর হতেই দৃষ্টি সরু হয়ে আসে তার।বাকা চোখে তাকায় সে চাঁদের পানে।অতঃপর মিরের বাক্যটি শ্রবণ হতেই দৃষ্টি ঘুরায় সে,
“যেহেতু তোমার কাছে সুন্দর লেগেছেই তাহলে প্রেম করতে সমস্যা কোথায় ঘসেটি?”
“তুমি আসলেই একটা মিরজাফর”
“এখন আবার কী করলাম?”
“তোমাদের কাছে এসেছি সমাধান নিতে আর তোমরা আমায় বলছো প্রেম করতে?”
হঠাৎ প্রণয়ের অপ্রত্যাশিত গম্ভীর কন্ঠস্বর পেয়ে তার পানে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ,
“আহিন হয়তো আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে নাহয় ওর মতো ছেলে কখনো কারো জন্য ডেসপারেট হতে পারেনা।অন্তত আমার জানামতে কখনোই না।তবে আপনি যদি অন্য কাউকে ভালোবাসেন হতে পারে সে আপনার ত্রিসীমানায়ও আর আসবেনা”
মিরা প্রণয়কে বলে,
“কিন্তু চাঁদের তো কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই”
রবিনও তৎক্ষনাৎ বলে,
“মনে তো হচ্ছেনা এই মেয়েকে দিয়ে প্রেম হবে।নাহয় আহিনের মতো ছেলেকে যে রিজেক্ট করতে পারে সে আর কারো সাথেই প্রেম করতে পারেনা”
প্রণয় মিরার পানে দৃষ্টি দেয় এরপর কিছুক্ষণ রবিনের পানে তা স্থির করে।অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,
“আমি ভালোবাসা বলেছি”
কথাখানা বলে খানিকটা থেমে আকাশপানে দৃষ্টিজ্ঞাপন করে আবার বলে,
“আর ভালোবাসলেই যে প্রেম বা সম্পর্ক করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।আমরা যাকে-তাকে যখন-তখন ভালোবাসতে পারি।ভালোবাসা অনাকাঙ্ক্ষিত,অপ্রত্যাশিত”
প্রণয়ের কথার মাঝে কিছু একটা ছিলো।যা বারবার চাঁদকে আকর্ষণ করছিলো।তার দিকে টানছিলো।কোনোক্রমেই চাঁদ তার দিক থেকে দৃষ্টি সরাতে সক্ষম হলোনা।কেনো এমনটা হলো জানা নেই চাঁদের।এই একজন লোকের কাছে আসলে চাঁদের সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে যায়।এক ভুলভুলাইয়ায় ফেসে যায় সে।
এক ভ্রু উচিয়ে রবিন বলে,
“তুই কবে থেকে প্রেম-ভালোবাসা এসবে জ্ঞান দেওয়া শুরু করলি?জীবনে ভালোবেসেছিস নাকি কাউকে?”
শেষের কথাটা তাচ্ছিল্য করেই বললো রবিন।রবিনের কথা শুনে অরণ প্রণয়ের কাধে চাপড় মে!রে বললো,
“এতক্ষণ যাবৎ কিছুই বলিনি।তবে আমিও একমত প্রণয়।যে যা পারেনা সেই বিষয় নিয়ে অন্যকে উপদেশ দেওয়া মোটেও উচিত নয়”
রিহা বলে,
“তোরা কিসব শুরু করলি ভাই!বেচারি হেল্প চাইতে আসলো আর তোরা নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু করেছিস”
প্রণয় বেঞ্চ থেকে উঠতে উঠতে বললো,
“আমার কথাটা ভেবে দেখবেন মিস চাঁদ”
অতঃপর ক্লাসরুম থেকে বেরুতে বেরুতে তার বন্ধুমহলকে উদ্দেশ্য করে খানিকটা উচ্চস্বরেই বললো,
“কাউকে ভালোবাসিনি মানে এই নয় কখনোই কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা বা বাসিনি”
প্রণয়ের শেষ কথাটা বাকিসবার মাথার উপর দিয়ে গেলেও অরণ ঠিক বুঝতে সক্ষম হলো বন্ধুর কথার মর্ম।আর আরেকজনের হৃদয় চি*ড়ে প্রবেশ করলো এক অতি সাধারণ,সরল বাক্যখানা যা ল!ণ্ডভ!ণ্ড করে দিলো হৃদয়ের প্রতিটা প্রকোষ্ঠ।
রাত তখন একটা ছুইছুই।ঘুম নেই প্রণয়ের চোখে।বইয়ের পাতা এপাশ ওপাশ করছে।মনোযোগ নেই সেখানেও।দৃষ্টি তার টেবিলে সুসজ্জিত করে রাখা বইয়ের তাকের বইগুলোর মাঝে।কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই বইয়ের পাশে রাখা ফোনটা হাতে নেয় সে।অতঃপর ঢুকে তার হাইড করে রাখা গুগল ড্রাইভে।সেখানে গিয়ে সার্চলিস্টে কিছু একটা টাইপ করে একটা ফোল্ডারে ঢুকে সে।কিছুক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে সে পানে।অতঃপর চোখজোড়া বন্ধ করে চোয়াল শক্ত করে টেবিলে ঘু!ষি দিয়ে আবারও ফোনটা হাতে নেয়।নিয়ে দোনোমোনো করতে করতে প্রায় মিনিট বিশেক পার করে সে।কোনোকিছু ভেবে না পেয়ে বই বন্ধ করে মোবাইল হাতে নিয়ে হাটাধরে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে।সেখানে উপস্থিত হয়ে ঝটপট এক কাপ কফি করে আবারও ছুট লাগায় নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।অতঃপর রুমে এসেই দরজা আটকে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।দাঁড়িয়ে থেকে অল্প অল্প করে কফিতে চুমুক দেয় সে।বেশকিছুক্ষণ ধরে কফির মগ ঠোটের সাথে চেপে ধরে বারান্দার বিপরীত পাশে যতদূর চোখ যায় দৃষ্টি স্থির করে সেথায় তাকিয়ে থাকে প্রণয়।দৃষ্টি সেখানে নিবদ্ধ করে অনেক্ক্ষণ ধরে কিছু একটা ভেবে অবশেষে কফির মগ বারান্দার গ্রিলের পাশে রেখে ফোন হাতে নিয়ে কন্টাক্টলিস্টে গিয়ে ডায়াল করে অতি পরিচিত তবুও অচেনা এক নম্বরে।তিন-চারবার রিং হয়ে ওপাশ থেকে ভেসে আসে এক পুরুষালি কন্ঠস্বর,
“দাম্ভিকতা তবে চু!রমার হলো বলে?”
প্রণয়ের শান্ত জবাব,
“দাম্ভিকতা ছিলোই বা কবে যে চু!রমার হবে?”
“তো তুই বলছিস তুই দাম্ভিক নস?”
“আমি কী বা কী নই এসবকিছু বলতে অবশ্যই তোকে কল দিইনি”
“তাতো আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।এবং এয়ো বুঝতে পারছি যা বলবি তা তোর জন্য অতি মূল্যবান কিছু”
প্রণয় খানিক হেসে বলে,
“ততোটাও মূল্যবান নয় যতটা তুই ভাবছিস”
“আমি বেশ অবাকই হচ্ছি তুই পড়াশুনা বাদ দিয়ে আমায় কল দিয়েছিস।যার সাথে আর কখনোই যোগাযোগ করার প্রয়োজনবোধ তোর ছিলোনা”
“মানুষ হয়ে জন্মেছি প্রয়োজনবোধ তো থাকবেই।তাছাড়া নিত্যদিন যা করি বিশেষ দিন তা করিনা।আবার বিশেষ দিন যা করি নিত্যদিন তা করিনা”
“এতো রাতে তুই এসব পেচাল পাড়তে কল দিয়েছিস?”
“তারপর বল তোর কী অবস্থা চলে?আমার কথা অমান্য করে পলিটিক্সে কেমন খাতিরযত্ন পাচ্ছিস?”
“আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি বাবার ক্ষমতার জেরে পলিটিক্স জয়েন করিনি।পলিটিক্সের প্রতি ঝোঁক সেই ক্লাস সেভেন থেকে ছিলো এবং এই কথা তুইও জানতিস প্রণয়”
তাচ্ছিল্যের সুরে প্রণয় বললো,
“সবই জানি রে আহিন,সবই জানি।তবে তুই কিন্তু জানিস না যে তুইও তোর বাবার পথেই পা দিয়েছিস এবং তার মতো করেই…”
আহিন গম্ভীরভাবে বলে,
“বাবার বিরুদ্ধে কোনো কথা শুনবোনা প্রণয়”
“তাহলে নিজের বিরুদ্ধে শোন”
“মানে?”
“একটা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করা ই!ভটি!জিং এর মধ্যে পড়ে তা কি তুই জানিস না?”
প্রণয়ের আকস্মিক করা প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয় আহিন।তবে বেশিক্ষণ অবাক হওয়ার রেশ থাকেনা।দ্রুতই তা কেটে যায়।অতঃপর খানিকটা হেসে সে বলে,
“নীলাম্বরী তাহলে তোর কাছে বিচার দিয়েই ফেলেছে?আমিও তো বলি এতোমাস হলো অথচ ব্যাপারটা তোর কান অব্দি গেলোনা কেনো?”
“সে আমার কাছে বিচার দেয়নি”
“তাহলে তুই জানিস কী করে এ ব্যাপারে?”
“যেখান থেকেই জেনেছি সেটা তোর জানার বিষয় নয় আহিন।তোর যা জানা উচিত তাই তোকে জানানোর জন্য কল দিয়েছি”
“ওয়েইট আ মিনিট!”
কথাখানা বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আহিন।হাসতে হাসতেই বলে,
“তাহলে দি রুহায়ের প্রণয়!উড বি দি ডক্টর রুহায়ের প্রণয় সামান্য একটা মেয়ের জন্য তার দাম্ভিকতা জলাঞ্জলি দিলো?”
“সে সামান্য নয়।সে সাধারণ,অতি সাধারণের মাঝেও অসাধারণ একজন”
আরেকবার হেসে আহিন বলে,
“প্রেমে তবে পড়লি বলে?তাও আবার আহিনের পছন্দ করা মেয়ের প্রেমে?”
“কিসে পড়েছি কিসে পড়িনি তা তো তোর জানার বিষয় না।তোর জানার বিষয় হলো তার থেকে তুই দূরে থাকবি।আর তুই নিশ্চয়ই ভুলে যাচ্ছিস তুই যাকে দু’দিন ধরে পছন্দ করিস তার সাথে দেখাসাক্ষাৎ আমার সেই প্রথমদিন থেকে আজ অব্দি এবং বহু বছরধরে এ সাক্ষাৎ অব্যাহত থাকবে”
“তাই নাকি?তাহলে তুইও শুনে রাখ তোদের সাক্ষাৎ কেবল সাক্ষাৎ ই রয়ে যাবে।এর বেশি কিছুতে গড়াতে পারবেনা।আহিন মোহাম্মদ শেখ তা হতে দিবেনা।ঐ নীলাম্বরীতে চোখ পড়েছে মানে সে আমার এবং কেবলই আমার হবে।আর দূরে থাকার কোনো প্রশ্নই আসেনা।এখন আরও বেশি বেশি কাছে থাকবো”
“তোকে কাছে ঘেষতে দিলে না তুই কাছে থাকবি।না সে দেবে আর না…।তাই বলছি চন্দ্রের থেকে দূরে থাকবি।সে খুবই বিরক্ত এসবে”
“বিরক্তি থেকেই তো ভালোবাসা হয়।আমার সাথেও হবে।দেখে নিস তোকে ভালোবাসার আগেই নীলাম্বরী আমার হবে”
“হবেনা।সে তোর কখনোই হবেনা।এ কথা আমি তোকে কাগজে কলমে লিখে দিতে পারি”
“তাই নাকি?তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি?লুক্কায়িত প্রেমিকা?”
“সবাইকে নিজের মতো ভাবা উচিত নয়।অন্তত রুহায়ের প্রণয়কেতো একদমই নয়।প্রেমিকা না হোক।একজন নারী তো।কারো মেয়ে,কারো বোন হয়।কারো স্ত্রী হবে,মা হবে।আর মা জাতিকে সম্মান বৈ কিছু করা যায়না।তুই সেখানে তাকে প্রতিনিয়ত অসম্মান করছিস।আবারও বলছি দূরে থাকবি চন্দ্রের থেকে।সে তোকে মোটেও পছন্দ করেনা,করবেওনা”
“এতোটা শক্তপোক্তভাবে কি করে বলছিস তুই?”
“কারণ সে তোকে ভালোবাসেনা”
“ভালো তো তোকেও বাসেনা”
“আমিতো বলিও নি যে বাসে বা বাসবে”
“তাহলে লাভ কি আমায় আটকে দিয়ে?চেষ্টা করছি করতে থাকবো।তুইতো তাও করিস না”
“তার কোনো প্রয়োজন নেই”
“তবে তুই ভালোই বাসিস নি”
“আমি কখন বললাম তাকে আমি ভালোবাসি?”
“তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝছি না প্রণয়”
“বোঝা লাগবেনা।তাকে বিরক্ত করা বন্ধ কর।মেয়েটা বড্ড বিরক্তিবোধ করে এসবে”
“তোকে বলেছে?”
“তার বিরক্তিভাব দেখেও বুঝিস না তুই?তোতে ইন্টারেস্টেড হলে এতোদিনে অবশ্যই হয়ে যেতো”
“যেই আহিন শেখ কতশত মেয়েদের রিজেক্ট করে তাতে ইন্টারেস্টেড হবেনা?লাইক সিরিয়াসলি প্রণয়?”
“সে কতশত মেয়ে না।সে একজন এবং কেবল একজনই হয়”
“চাঁদকে আমি আমার করবোই।তুই শুধু দেখ কিভাবে করি!”
“তোকে আমি নিষেধ করেছি এবং আবারও করছি আহিন।দূরে না থাকতে পারলে কাছে যাওয়ার মতো ব্যবস্থাও তুই করতে পারবিনা।অ্যান্ড আই মিন ইট”
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩৯.
দিনটা তখন বৈশাখ মাসের পহেলা দিন।বেশ রমরমা পরিবেশে পরিপূর্ণ রমনার বটমূলসহ এর আশপাশ।সেখানকার কোথাও কোথাও বসেছে নিমকি-মুড়ালি,চিড়ামুড়ি,মোয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার।তো আবার বিভিন্ন দোকান নিয়ে বসেছে দোকানীরা।এই যেমন কেউ কেউ ছোট বাচ্চাদের খেলনা,কেউবা ফুচকা-চটপটি,ঝালমুড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার নিয়ে।আবার কেউবা পান্তা-ইলিশের আয়োজন করেছে বিপুলভাবে।অবশ্য করবে নাই বা কেনো?এই একটা জিনিসই তো পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান আয়োজন।মাছে-ভাতেই তো বাঙালি।আর ইলিশ মাছ যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ তা ছাড়া কি আর বাংলা মাস শুরু করা চলে?এছাড়াও পুরো মাঠজুড়ে বিচরণ করছে লাল-সাদা পোশাকে আবৃত কপোত-কপোতী অথবা পুরুষ-রমনী,সেইসাথে আছে ছোট ছোট বাচ্চারাও।কেউ কেউ বাবা,মায়ের হাত ধরে হাটছে কেউবা এসেছে ভাইবোনদের সাথে,আবার কাউকে দেখা যাচ্ছে বাবার কাধে চড়ে আসতে।কি অপরূপ!মনোমুগ্ধকর সেই দৃশ্য!পরাণ জুড়িয়ে যায় যেনো!বাবা-মা আর সন্তানের সম্পর্ক তো এমনই!দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।বাবার আঙুল ধরেইতো সন্তানের পথচলা।বাবাই তো শেখায় সঠিক পথে সঠিকভাবে চলা।সেই বাবাই আবার সন্তানের কষ্টে সন্তানকে স্বস্তি দেয়ার উদ্যোগে কাধে তুলে নেয় সকল সমস্যা থেকে তাকে দূরে রাখতে।তাই নয় কি?এরপর আশেপাশে দেখা দেখা যাচ্ছে নাগরদোলার সমাহার।প্রায় অনেকগুলোই নাগরদোলা দেখা যাচ্ছে সেথায়,সেইসাথে প্রচন্ড ভীড়ও।আছে দোলনা,নৌকা,পাল্লাসহ বাচ্চাদের আরও বিভিন্ন ধরণের উঠে-চড়ে খেলার মতো সরঞ্জামাদি।কেউ কেউ আবার বসেছে রঙ নিয়ে।সেই রঙ দিয়ে গালে আল্পনা করে দিচ্ছে বাচ্চা-বড়সহ সকলকেই।আবার কেউবা হাতে মেহেদীর মতো আল্পনা আঁকায় ব্যস্ত।কেউবা হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে।অনেকে বিভিন্ন ধরণের খাবার কিনছে,আড্ডা দিচ্ছে,খাচ্ছে।আবার কেউকেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত।সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতেই এসবকিছু ভিডিও কলে দেখাচ্ছিলো উশ্মিকে রায়হান।উশ্মির মাঝে নেই কোনো উৎফুল্লতার রেশ।রায়হানই আপনমনে এটা ওটা বলছে তাকে।যখন পাশে এসে রামিম দাড়ালো ঠিক তখনই বন্ধুর সাথে কোলাকুলি করে তাকে বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে উশ্মিকে বললো,
“তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রুবা,শিফা আর রিদিকেও রেডি করিয়ে দিস।তন্ময় আর উজানকে বলবি তোদের সবাইকে নিয়ে আমার কলেজে হাজির থাকতে।আর হ্যা তুই কিন্তু শাড়ি পরেই আসবি।আমি লাল-সাদা মিক্সড পাঞ্জাবি পরেছি দেখছিস?তুইও লাল আর সাদাই পরবি।একদম বউ বউ ভাব নিয়ে আসবি।রায়হানের বউ।বুঝেছিস?”
উশ্মি ওপাশ থেকে বলে,
“হ্যা আনবো।তোমার পাশে ওটা কে?”
“আমার জানের জিগার রামিম।আবার কে হবে আমার পাশে হা?ওকে ছাড়া আর কাউকে কখনো দেখেছিস নাকি?”
বলেই হাসতে হাসতে রামিমের দিকে ফোন ঘোরায় রায়হান।রামিমের দিকে ফোন ঘোরাতেই রামিম বিরক্তি নিয়ে বলে,
“এখানে এসেও তোর প্রেম করতে হবে?মানে সিরিয়াসলি রায়হান?তোর আর কোনো কাজ নেই নাকি?প্রণয়রা কোথায়?”
রামিমের কথা শুনে উশ্মি বলে,
“আমি রাখছি রায়হান”
উশ্মি কল কেটে দিতেই রায়হান রামিমকে বলে,
“মেয়েটাকে দেখতে পারিস না কেনো তুই?সবসময় এমন কটাক্ষ করিস কেনো?”
“বেশি ওকালতি করবি তো আমি এক্ষুনি চলে যাবো আর রিদি-শিফাকে নিয়েই ফিরে যাবো বলে রাখলাম”
“ঠিক আছে ঠিক আছে হু!মকি কেনো দিচ্ছিস?চল।প্রণয়রা আশেপাশেই কোথাও আছে কল দিচ্ছি ওদের”
অতঃপর দুই বন্ধু হাটতে হাটতে একটা গোলা আইসক্রিমের গাড়ির কাছে এসেই দেখতে পায় গোগ্রাসে সকলে মিলে গোলা খাচ্ছে।শুধুমাত্র প্রণয় একপাশে বসে বিরক্তিবোধ করে বলছে,
“তোদের নিশ্চিত মেয়ে হওয়া উচিত ছিলো।নামেমাত্র ছেলে তোরা”
মির বরফ চিবাতে চিবাতে বলে,
“ফাও কথা বলবিনা প্রণয়।মেয়ে আমাদের না লোকজন তোকে দেখলে বলবে।না জীবনে করেছিস একটা প্রেম না কাছে ঘেষতে দিস কোনো মেয়েকে।এমনকি নিজের বোনদের সাথেও কথা বলিসনা।লোকে তো তোকে ে*গ ভাবে ে*গ”
মেজাজ খারাপ করে প্রণয় মিরের সামনে এসে আকস্মিক গোলার কাপটা মিরের মুখের দিকে চেপে ধরতেই পুরো মুখে আইসক্রিমে মাখোমাখো হয়ে যায়।সেইসাথে সাদা পাঞ্জাবিটাও রঙে মেখে যায় মিরের।বেশ রাগ দেখিয়ে মির চোখ গরম করে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“শা!লা!”
তখনই রামিম সামনে এসে হাসতে হাসতে বলে,
“ওরতো কোনো বোন নেই শা!লা পেলে কোথায় মির?”
মির রামিমের পানে তাকিয়ে বলে,
“ওর নেই তো কী হয়েছে?তোমারতো আছে?তোমার বোনকে বিয়ে করে তোমাদের তিন ভাইকেই শা!লা বানিয়ে নিবো সমস্যা কোনো?”
রামিম হাসতে হাসতে বলে,
“একদমই না!কিন্তু আমার বোনতো মাত্র ফোরে পরে।দশ বছরের শিশু সে।আর তুমি বিশ বছরের দামড়া ছেলে!বুড়ো লোকের কাছে বোন বিয়ে দেবো নাকি?”
ভেংচি কেটে মিরা বলে,
“আমার ভাই মোটেও বুড়ো নয়।যথেষ্ট হ্যান্ডসাম সে।তোমার বোনই আমার ভাইয়ের পিছু ঘুরবে মিলিয়ে নিও”
রামিমের বদলে রায়হান জবাব দেয়,
“তাই নাকি?দশ বছরের বুড়োর কাছে আমাদের বোন ধরা দেবেনা তুমিও দেখে নিও”
বিরক্ত হয়ে পূর্ণতা বলে,
“কি মেয়েদের মতো তোমরা ছেলেরা ঝগড়া শুরু করে দিলে ইয়ার?”
তখনই শোনা যায় প্রণয়ের খোচাপূর্ণ বাক্য,
“দুইটা গিলে আত্তী পুরে নি?আরেকটা গোগ্রাসে গিলছিস?”
কপাল কুচকে পূর্ণতা বলে,
“নিজে নিয়ে খেতে পারিস না?আমার দিকে নজর দিবিনা।যদি পেট ব্যাথা করেছে তো বুঝিস তুই”
পূর্ণতার কথা শুনে রিহা বললো,
“যে হারে ফুচকা-চটপটি ঠুসেছিস পেট ব্যাথা কেনো?তোরতো ডায়রিয়া ছুটবে খালা”
নাক-মুখ ফুলিয়ে পূর্ণতা বলে,
“যদি আমার কিছু হয়েছে না?তো তোদের দু’জনকে আ!স্ত রাখবোনা বলে দিলাম”
রবিন আইসক্রিম খেতে খেতে বলে,
“আর ওরা তোর ভয়ে জমে যাচ্ছে।দেখ দেখ পা থরথর করে কাপছে”
রবিনের কথা শুনে হেসে দেয় সকলেই।তবে হাসেনা প্রণয়।বিরক্তিবোধ করে সে বলে,
“অনেক্ক্ষণ ধরে এই গরমে তোদের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।এখন চল।আর দাড়াতে পারবোনা।আর তোরা?তোরাও কি মেয়ে হয়ে গেছিস?”
শেষের কথাটা রামিম আর রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে প্রণয়।তা শুনে রামিম অবাক হয়ে বললো,
“কী করেছি আমরা?”
“তোরা আরও আগে আসলে এই গরমে পু!ড়তে হতোনা অন্তত আমায়”
রায়হানের কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় বলে,
“নো মোর ওয়ার্ডস।অরণ যা তিনটা রিক্সা নে আমি এদের নিয়ে আসছি”
মিরা জিজ্ঞেস করে,
“তিনটা কেনো?আমরাতো নয়জন”
“এজন্যই তিনটা।তিনজন তিনজন বসবো”
পূর্ণতা বিস্ময় নিয়ে বলে,
“এই গরমে?তাও আবার শাড়ি পরে সিরিয়াসলি?শাড়ি পরে উপরে বসবো কি করে আজব!”
প্রণয় গম্ভীর হয়ে বলে,
“সরি ওভাবে ভাবিনি”
মির ভেজা রুমাল দিয়ে মুখ আর পাঞ্জাবী মুছতে মুছতে পূর্ণতাকে বলে,
“আমি মিরাকে নিয়ে একটা দিয়ে আসছি।তুই আর রিহু একসাথে আয়”
এ কথা শুনে রবিন বলে,
“তুই মিরুর সাথে গেলে আমি কার সাথে যাবো?”
“কার সাথে যাবি মানে?প্রণয়তো বললোই তিনজন করে আসতে।হয় রায়হানদের সাথে আয় নয়তো অরণদের।আমরা আমরাইতো”
“তা ঠিক আছে।শা*লিগুলিকে কে যে বলেছিলো শাড়ি পরতে ঢং যত!”
প্রণয় রবিনকে বলে,
“মিরের সাথে যা।চারটা রিক্সা ঠিক করবি।একটায় তিনজন বাকিগুলোয় দু’জন করে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের মাঠপ্রাঙ্গনের এক পাশে প্রণয়রা সবাই চেয়ারে বসে আড্ডা দেওয়ায় ব্যস্ত।তখনই রামিমের ফোনে কল আসে উজানের।রামিম রিসিভ করতেই উজানের কন্ঠস্বর শুনতে পায় সে,
“হ্যালো রামিম ভাই আমরাতো এসেছি।আপু রায়হান ভাইকে কতগুলো কল দিলো সে তো ধরছেনা”
রামিম উজানকে বলে,
“তোরা গেটেই দাড়া আমি আসছি”
রামিমের কথা শুনে সকলেই তার পানে তাকায়।তাকাতেই রামিম বলে,
“ওরা এসে গেছে।উশ্মি নাকি তোকে অনেক গুলো কল দিয়েছে ধরছিস না”
উশ্মির কথা শুনেই ঝট করে মোবাইল পকেট থেকে বের করে রায়হান বলে,
“শিট!সাইলেন্ট ছিলো দেখিই নি।আচ্ছা তোরা বস আমি ওদের নিয়ে আসি”
রিহা মুখ ভেংচিয়ে বলে,
“লায়লা কা মাজনু”
রায়হান যেতে যেতে বলে,
“ইটস উশ্মি কা রায়হান।এই রামিম চল”
বিরক্ত হয়ে রামিম বলে,
“এখন আমারও যেতে হবে?”
রবিন হাসতে হাসতে রামিমকে বলে,
“হ্যা যাও।রায়হান একা আনতে না পারলে ভাবিকে দু’জন কোলে করে নিয়ে আসবে”
রায়হান কিছু বলার আগেই শুনতে পায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“কথা বলার আগে দশবার ভেবে চিন্তে কথা বলবি রবিন।ভুলে যাবিনা উশ্মি আমার ছোটবোন মানে তোরও বোন”
“আমিতো মজা করে বললাম”
“মজা হোক আর যাই হোক এমন বি!শ্রী কথা যেনো আর না শুনি”
রবিন থমথমে ভাবে বলে,
“আমি বুঝতে পারিনি প্রণয়,সরি।সরি রায়হান,রামিম”
রায়হানও থমথমে ভাবে বলে,
“ইটস ওকে।চল রামিম”
তখনই শোনা যায় পূর্ণতার কন্ঠস্বর,
“তোকেতো কখনো বোনদের সাথে কথা বলতে দেখিনি।সবসময় দূরে দূরেই থেকেছিস”
রায়হান চলে যেতে গিয়েও পা জোড়া থামায়,প্রণয়ের উত্তর শোনার প্রত্যাশায়।এবং শুনতে পায়ও,
“কথা বলিনা বা দূরে থাকি মানে এই নয় যে ওরা আমার বোন নয় বা আমি ওদের ভাই নই অথবা ওদের প্রতি আমার কোনো দায়িত্ববোধ নেই,কেউ অসম্মান করলে আমার গায়ে লাগবেনা বা আমি প্রতিবাদ করবোনা”
রবিন অনুতপ্ত হয়ে আবারও বলে,
“দোস্ত আমি ইচ্ছা করে বা কোনো খারাপ মনোভাব নিয়ে কথাটা বলিনি”
প্রণয়ের শান্ত জবাব,
“আমি জানি রবিন।আমার বন্ধুদের সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত আমি।তোর এক্সপ্লেইনেশনের প্রয়োজন নেই”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কলেজ গেটের ভেতর দিয়ে চারপাশটা দেখতে দেখতে প্রবেশ করছে উশ্মি।দূর থেকে একজোড়া চোখ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকে দেখতে ব্যস্ত।উশ্মি ভেতরে ঢুকে একপাশে ভাইবোনদের দাড় করিয়ে উজানকে বলছে,
“শোন।ওদের সবার মধ্যে তুই ই বড়।ওদের খেয়াল রাখবি।ছাড়বিনা একা কোথাও।বিশেষ করে রিদুকে।রিদুকে তোর সাথেই রাখবি।ও সবার ছোট।আর শিফু,রুবা সোনা তোমরাও ভাইয়াদের রেখে কোথাও যাবেনা ঠিক আছে?আর আমার পুচকু রিদু সোনা তুমি শিফু আর রুবা আপুর সাথে থেকো ঠিক আছে?”
রিদি ছোট থেকেই চাপা স্বভাবের।তাই সে শুধু মুচকি হেসে বললো,
“থাকবো আপু।আর শিফু,রুবাকে আপু বলবেনা।এক বছরের বড়তে কিছু হয়না।ওরা আমার বেস্টিজ”
মুচকি হেসে রিদির গালে হাত বুলিয়ে উশ্মি বলে,
“ঠিক আছে সোনা।এখানেই থেকো কেমন?”
শিফা আমতা আমতা করে বলে,
“তু…তুমি কি রায়হান ভাইয়ের কাছে যাবে আপু?”
“হ্যা ঐখানটায় ই যাবো।তোরা থাক”
“আমিও তোমার সাথে যাই?”
“তুই যেয়ে কী করবি?আমি দেখা করেই আবার তোদের নিতে আসবো কেমন?আমরা রমনাও যাবো ঠিক আছে?”
শিফা মুখ গোমড়া করে বললো,
“হিম ঠিক আছে”
রায়হান এদিকটায় আসতে আসতেই বললো,
“কী ব্যাপার উশ্মি?তুই আমার বোনদের মন খারাপ করাচ্ছিস কেনো?সবাইকে নিয়েই ভেতরে আয়।প্রণয়রা ওখানেই বসেছে।সবাই একসাথে বসি”
“বাচ্চারা ওখানে যেয়ে কী করবে?”
উশ্মির কথা শুনে মেজাজ খারাপ করে রামিম বলে,
“যে দায়িত্ব নিতে পারেনা তার দায়িত্ব নেয়া উচিতও নয়।এই উজান ওদের নিয়ে ভেতরে আয়তো”
বলেই সকলকে নিয়ে ভেতরে চলে যায় রামিম।আর রায়হান উশ্মির বাহু চেপে বলে,
“তোকে বলেছিলাম না?লাল-সাদা পরবি?তবে পুরো বিধবা সেজে কেনো এসেছিস?আমি ম*রে গেছি?”
রায়হানের ঠোটে হাত রেখে উশ্মি বলে,
“ছি!এসব বলওনা”
“তবে পরেছিস কেনো?লাল ব্লাউজ কোথায় তোর?লালের ছিটে ফোটাও দেখছিনা।সবকিছু সাদা পরে এসেছিস কারণ কী?”
আমতাআমতা করে উশ্মি বলে,
“আ…আসলে ব্লাউজটা বগলের দিক দিয়ে ছিড়ে গেছে তাই”
“চুড়ি টুড়িও লাল পরতে পারিস নি?”
“এমন করছো কেনো?তাড়াহুড়োয় এসেছি খেয়াল নেই।চলোতো এখন”
বলেই রায়হানকে টেনে ভেতরে নিয়ে যায় উশ্মি।
প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরের কথা,
অস্থির হয়ে উশ্মি সবার কাছে এসে বলে,
“শিফুকে কোথাও পাচ্ছিনা প্রণয় ভাইয়া”
এ কথা শুনে কপাল কুচকে আসে প্রণয়ের।চিন্তায় পড়ে যায় সেখানকার সকলেই।প্রণয় শান্তভাবে রায়হানকে বলে,
“দায়িত্ব যখন নিতে পারিস না দাওয়াত কেনো দিয়েছিস সকলকে?আর তুই?সেফলি রাখতেই যখন পারবিনা অতোদূর থেকে এনেছিসই কেনো মেয়েগুলোকে?”
শেষের বাক্যটা রামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে প্রণয়।মাথা নিচু হয়ে আসে দু’জনেরই।তা দেখে প্রণয় বলে,
“দশ মিনিটের মধ্যে শিফাকে আমি আমার সামনে দেখতে চাই রায়হান।আর রবিন যা রুবা,রিদি কে নিয়ে আয়।তন্ময়,উজানকে দিয়ে এক্ষুনি পাঠাবো সবাইকে”
প্রণয়ের কথা শুনে তখনই রবিন পা বাড়ায়।রায়হানও অস্থির হয়ে শিফাকে খুঁজতে শুরু করে,মিরও যায় তার সাথে।রামিমও এগোয়।রামিমের পিছু নেয় উশ্মিও।কিছুদূর গিয়ে রামিমের হাত টেনে একপাশে এনে উশ্মি বলে,
“কোনো কথা বলবেনা।তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে”
কপাল কুচকে রামিম বলে,
“তোমাকে একবার বলেছি না আমার থেকে দূরে থাকবে?”
“আমার কথাটা একবার শোনো প্লিজ”
“তাড়াতাড়ি বলবে।আর ডিসটেইন্স মেইনটেইন করো।এসব পছন্দ না আমার।বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড আছো সে অনুযায়ী ই থাকবে”
“আমি প্রণয় ভাইয়ের চাচাতো বোন।তুমিও তার মামাতো ভাই।সে হিসেবে আমরা…”
“না তুমি আমার কিছু লাগো আর না আমি তোমার কিছু লাগি।কথাটা মগজে ভালোভাবে ঢুকাও মেয়ে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরও ঘন্টা দেড়েক কলেজের আয়োজন উপভোগ করে সকলে আড্ডা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে সেখান থেকে বিদায় নেয়।প্রণয়দের বিদায় দিয়েই গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রায়হান রামিমকে বলছে,
“দোস্ত ভাবছিলাম একটু উশ্মির সাথে বেরুতাম”
রামিম বলে,
“হ্যা অবশ্যই।আমি আসি তাহলে”
তখনই উশ্মি রামিমের কব্জি ধরে বলে,
“দাড়াও রামিম”
উশ্মির কান্ডে অবাক হয় রায়হান।অবাক হয়ে বলে,
“এসব কেমন ব্যবহার উশ্মি?”
রায়হানের পানে তাকিয়ে উশ্মি বলে,
“আমি তোমার সাথে কোথাও যাবোনা রায়হান”
“যাবিনা মানে?কেনো যাবিনা?”
লম্বা শ্বাস নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে উশ্মি বলে,
“যাবোনা মানে যাবোনা ব্যাস!”
চোয়াল শক্ত করে রায়হান বলে,
“কেনো যাবিনা?আর রামিমের হাত ছাড়”
এবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে তার চোখে চোখ রেখে রামিমের হাত আরও শক্ত করে ধরে উশ্মি বলে,
“হাত ছাড়ার জন্য তো ধরিনি!”
এ কথা শুনে তৎক্ষনাৎ বুক ধরাক করে উঠে রায়হানের।সে খানিকটা ঘেমে যায়।এতক্ষণ গরম না লাগলেও এখন বেশ হাসফাস লাগছে তার।সে বুঝতে না পেরে বলে,
“মা…মানে?”
“মানে হলো আমি তোমার সাথে যাবোনা কোথাও”
“কেনো যাবিনা?”
দৃষ্টি নিচু করে উশ্মি বলে,
“কারণ…কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি না”
এবার পুরোপুরি ঘেমে যায় রায়হান।সাদা পাঞ্জাবীটা বুকের দিক দিয়ে ভিজে গেছে।সে অবাক সুরে উশ্মির দু’বাহু চেপে বলে,
“তু…তুই এসব কী বলছিস উশ্মি?রা…রামিম দেখনা উশ্মি কিসব বলছে”
রামিম নিরুত্তর,নিশ্চুপ।তা দেখে রায়হান বলে,
“দোস্ত উশ্মিকে বল না মজা না করতে।অন্তত এসব নিয়ে।আমার মেজাজ একবার খারাপ হলে ওর জন্য ভালো হবেনা এটা বুঝা ওকে”
রামিমের বদলে উশ্মি জবাব দেয়,
“রামিম কী বোঝাবে রায়হান?কী বোঝাবে সে?আমি তোমায় ভালোবাসি না।তোমায় কেবল ভালো লাগতো আমার।রিলেশনে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে।ভুল করেছি আমি।তুমি একটা ট!ক্সিক পার্সন।তোমাকে ভালোবাসা যায়না রায়হান যায়না!”
দাতে দাত চেপে উশ্মির বাহু আরেকটু জোরে চে!পে ধরে রায়হান অ!গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে উশ্মিকে বলে,
“আই সেইড রামিমের হাত ছাড় উশ্মি।এক্ষুনি ছাড়”
ব্যা!থায় কু*কিয়ে গিয়ে রায়হানের চোখে চোখ রেখে উশ্মি বলে,
“ছাড়বোনা।আর কখনোই ছাড়বোনা।তুমি জানতে চেয়েছিলে না?লাল-সাদা কেনো পরিনি?শোনো তাহলে।কারণ রামিম লাল পরেনি।পুরো সাদা পরে এসেছে।তাই আমিও সাদাই পরেছি।কারণ!আমি…আমি তাকে ভালোবাসি।অনেক আগে থেকেই।কিন্তু সে আমায় পছন্দ করতোনা।তোমার কারণে শুধুমাত্র তোমার কারণে।তুমি আমার জন্য পাগল তাই!তাই সে নিজের টা চিন্তা করেনি কখনো”
এ কথা শুনতেই হাত আলগা হয়ে আসে রায়হানের। ঠোটজোড়ায় কিঞ্চিৎ ফাঁকও দৃশ্যমান হয়।আস্তে আস্তে বন্ধুর পানে তাকায় রায়হান।রায়হানের সাথে দৃষ্টি মিলতেই রামিম তার দৃষ্টি নিচু করতে বাধ্য হয়।রামিমের এরূপ কান্ডে অচেনা ভয় বুকের ভেতর হানা দেয় রায়হানের।হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার।সে কাপা কাপা কন্ঠে বলে,
“আ..আমি এটা বিশ্বাস করিনা।রামিম এটা করতে পারেনা।আমার সাথেতো একদম ই না।ও,ও তোকে ভালোবাসেনা,বাসতে পারেনা উশ্মি।ও তো তোকে দেখতেই পারেনা।তু…তুই কিছু বলছিস না কেনো রামিম?”
“কারণ আমি যা বলেছি সেগুলো সত্যি এবং অক্ষরে অক্ষরে সত্যি তাই তার কাছে বলার মতো কিছুই নেই।তোমার জন্য ভালো হবে আমায় এবং রামিমকে তুমি নিজেদের মতো ছেড়ে দিলে।তোমার জ্বালায় অ!তি!ষ্ট হয়ে গেছি রায়হান!আমি বড়োই বিরক্ত তোমাতে!”
এ কথা শুনে ঝট করে তাকায় রায়হান উশ্মির পানে।প্রেয়সীর দৃষ্টি জোড়ায় আসলেই বিরক্তি দেখছে নিজের জন্য সে।কই এর আগেতো কখনো দেখেনি!হঠাৎ জীবনে ঝড় কেনো আসলো?কেনো লণ্ডভণ্ড করে দিতে চাচ্ছে সবকিছু?কী দোষ তার?কেনো প্রকৃতি এমন নির্ম!ম খেলা খেলতে চাচ্ছে তার সাথে?তবে কী প্রিয় দু’জন হারিয়ে যাবে জীবন থেকে?কেনো যাবে?দু’জনই থেকে যেতে পারেনা?জীবনটা অশান্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে কেনো?
রুবার স্পর্শে বাস্তবে ফেরে রায়হান।ভাইয়ের রুমে এসে ভাইকে ডাকছিলো সে।ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে ভাইয়ের কাছে এসে তার বাহু ঝাকায় সে।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে রায়হান বলে,
“হ্যা বল?”
“কী ভাবছিলে এতক্ষণ ধরে?”
“কিছুই না তুই বল কী হয়েছে?”
“ভাইয়া আমি এই ম্যাথ টা বুঝছিলাম না।কিভাবে করেছে?করিয়ে দাওনা।তুমিতো ম্যাথ নিয়ে পড়ছো”
“আচ্ছা আয় টেবিলে বস।বই খাতা নিয়ে আয়”
এ কথা শুনেই রুবা ছুট লাগায় নিজের রুমের দিকে।অতঃপর একহাতে খাতা আর কলম,অপরহাতে বই নিয়ে হাজির হয়।বোনকে ম্যাথ বুঝাতে বুঝাতে রায়হান কপাল কুচকে বলে,
“এইটে উঠে গেছিস,ক্যাপ্টেনও হয়েছিস এখনো নামতা পারিস না তুই?চৌদ্দ এর নামতা বল।এক্ষুনি বল”
বিরক্ত হয়ে রুবা বলে,
“এতো নামতা মুখস্ত করেছি নাকি?আর এগুলো কোনো কাজে আসে যে মুখস্ত করবো?চৌদ্দ এর নামতা পারিনা।তুমি জানোনা আমি হিউম্যানিটিজ নেবো?পুলিশ হবো আমি হ্যা?পুলিশি কাজে ম্যাথ দিয়ে কী হবে?”
To be continued….