আবার প্রেম হোক পর্ব-৪৩+৪৪

0
690

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৪৩.
কলেজ গেটের সামনে অতিথিদের ভীড়।নবীনেরা তাদের স্বাগতম করছে সানন্দে।কেউ কেউ ফুলের তোড়া দিচ্ছে,কেউবা তাদের উপর করছে ফুলের বর্ষণ।মেয়র অধিরাজ মোহাম্মদ শেখসহ সেখানে উপস্থিত হয়েছে তার ছেলে আহিন মোহাম্মদ শেখও।প্রথমে সে আসতে চায়নি তবে কিছু কারণবশত তাকে আসতে হয়েছে।তার বাবা চাননি ছেলেকে আবার সেই মেয়ের সম্মুখীন হতে দিতে তবুও ছেলে কেনো এসেছে তিনি জানেন না।তাই ছেলের প্রতি বড্ড বিরক্ত তিনি।সেইসাথে সেখানে উপস্থিত আছে আরও কয়েকজন অতিথি।আহিন বর্তমানে ছাত্রলীগের প্রধান নেতা।সে হিসেবে তার দাপটটা একটু বেশিই।সেজন্য সকলেই আহিনকে ভয় পাচ্ছে।ভয় পাওয়ার কারণটাও স্বাভাবিকই।আহিনের বেশভূষা যথেষ্ট ফরমাল।সে সাদা রঙের একটা পাঞ্জাবি-পা’জামা পরিধান করেছে।মুখে লেপ্টে আছে গম্ভীরভাব।গতবারের মতো এবার আর প্রাণোচ্ছলতা তার মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা।বেশ ভয়ে ভয়েই প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী আহিনের দিকে একটি ফুলের তোড়া এগিয়ে দেয়।আহিনও তা গ্রহণ করতে হাত বাড়াতে নিলেই হঠাৎ করেই তার নজরে আসে গেটের পেছন দিকটার বাম পাশে প্রণয় আর চাঁদের দিকে।তারা মাত্রই রিক্সা দিয়ে কলেজের সামনে থেমেছে।প্রণয় ভাড়া মিটাচ্ছে।আর চাঁদ শাড়ির কুচি ধরে নিচে নামতে বড্ড হিমশিম খাচ্ছে।প্রণয় ভাড়া মিটিয়ে সে পানে তাকিয়ে চাঁদের অস্বস্তি দেখে বলে,

“নামতে কি বেশিই সমস্যা হচ্ছে?”

চাঁদ আমতাআমতা করে বলে,

“না তেমন কিছুনা”

প্রণয় চাঁদের কিছুটা কাছে গিয়ে তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে।চাঁদও লজ্জা পেয়ে ফিসফিসিয়েই উত্তর দিয়ে বলে,

“আপনি আমার ব্যাগটা ধরুন।আমি নামছি”

অতঃপর চাঁদের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে চাঁদের সন্নিকটে গিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে শক্ত করে ধরে প্রণয় বলে,

“শক্ত করে ধরবেন।আমি নামাচ্ছি”

বলেই চাঁদকে নামাতে নিলে চাঁদ আতঙ্কিত হয়ে বলে,

“সে কী!আপনি আমায় কিভাবে নামাবেন?তাও এভাবে?আমায় আপনি উঠাতে পারবেন না।চাপুন আমিই নামছি”

“চুপ থাকুন।আপনার মতো চুনোপুঁটিকে যদি না উঠাতে পারি তবে নিজেকে ধিক্কার জানাতে হবে মিস পাটখড়ি”

কপাল কুচকে প্রণয়ের বাহু আর ঘাড় জাপটে ধরে চাঁদ বলে,

“এই কী বললেন?”

প্রণয় চাঁদের দিকে চেয়ে তার কোমড় হালকা করে চাপ দিয়ে নামাতে গেলেই চাঁদ আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে শ্বাস আটকে প্রণয়ের ঘাড়ে আরেকটু জোড়ে চেপে ধরে।যার দরুন প্রণয়ের ঘাড়ে চাঁদের নখ দে!বে যায়।প্রণয় চোখমুখ শক্ত করে চাঁদকে নামিয়ে বলে,

“মির আপনাকে সঠিক উপাধিই দিয়েছে মিস অশীন”

কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“মির ভাইয়া মাঝে দিয়ে কোত্থেকে আসলো?”

“নিজের নখ একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন”

বলেই সামনের দিকে হাটা ধরে প্রণয়।তার সাথে চাঁদও সামনে এগোতে এগোতে নিজের দু’হাতের নখ দেখে আঁতকে উঠে।অতঃপর প্রথমে চেচিয়ে এরপর ধীর স্বরে বলে,

“আল্লাহ!আপনার কি বেশি লেগেছে প্রণয়?আমি না আসলে বুঝতে পারিনি”

“চন্দ্রময়ীর দেয়া আঘাত শরীরে নয় একদম বুকে গিয়ে লেগেছে মিস রেডরোজ”

প্রণয়ের কথায় চাঁদের গালগুলো লজ্জায় জ্বলে উঠে।দৃষ্টি নত হয় তার।সামনের দিকে হাটতে হাটতে দৃষ্টি নিচু রেখেই জিজ্ঞেস করে,

“আচ্ছা অশীন বলতে আপনি ঠিক কী বোঝান প্রণয়?”

চাঁদের দিকে তাকিয়ে প্রণয় বলে,

“নিজের দিকে তাকান এরপর সমুদ্রের কথা চিন্তা করুন।উত্তর পেয়ে যাবেন”

গেটের কাছে এসে অনেক মানুষের ভীড় দেখে প্রণয় চাঁদকে তার সম্মুখে দাড় করিয়ে তার দু’হাত চাঁদের দু’বাহুর পাশে দিয়ে তাকে আগলে ভেতরে প্রবেশ করাতে উদ্যোগী হয়।প্রণয়ের হঠাৎ ছোয়া পেয়ে কেপে কেপে উঠে চাঁদ।তবে আশেপাশে অনেক মানুষ তথা পুরুষ মানুষই বেশি দেখে প্রণয়ের কর্মের অর্থ বুঝতে পেরে মুচকি হেসে প্রণয়ের পানে আড়চোখে তাকায় সে।চাঁদ যে তার পানেই চেয়ে আছে তা বুঝতে পেরে সামনের দিকে এগোতে এগোতেই সকলকে শুনিয়ে খানিকটা জোরেই প্রণয় বলে,

“ভেতরে গিয়েও চোখ জুড়িয়ে মন ভরে দেখতে পারবেন মিস রেডরোজ”

প্রণয়ের কথা শুনে তৎক্ষনাৎ কান গরম হয়ে আসে চাঁদের।সে দৃষ্টি নত করে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমায় আর দৃষ্টি উঁচু করেনা।সেভাবেই ভেতরে প্রবেশ করে।চাঁদকে ভেতরে নিতে নিতেই প্রথম বর্ষের একজনের হাতের ফুলের তোড়া থেকে একটা লাল গোলাপ উঠিয়ে নেয় প্রণয়।অতঃপর ভীড় থেকে অনেকটা দূরে এসে চাঁদকে দাড় করিয়ে থুতনি উঁচিয়ে বলে,

“আমার সামনে লজ্জা কম পাবেন,নয়তো বেসামাল হলে আপনারই বিপদ চন্দ্রময়ী”

বলেই হিজাবের সাথে ডান কানের উপরের দিকে পিন আর ক্লিপ দিয়ে গোলাপটা লাগাতে লাগাতে বলে,

“ফুলও লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বলবে ‘আমার পাশে থাকা রমনীর রূপে ঝ!লসে যাচ্ছি প্রণয়!সে নিজেইতো আস্ত এক ফুটে উঠা তাজা লালগোলাপ”

দূর থেকে চাঁদ আর প্রণয়ের প্রতিটা কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে আহিন।খানিকটা ব্যথিত নয়নে তাকায় চাঁদের পানে।অতঃপর প্রণয়কে বারবার চাঁদের অতোটা কাছে দেখে চক্ষু জোড়া হিংস্র হয়ে উঠে তার।চোয়াল শক্ত করে মেয়েটার থেকে তোড়াটা নিয়ে সামনের দিকে দ্রুত গতিতে বড়বড় কদম ফেলতে ফেলতে এগিয়ে গিয়ে নিজের রাগকে দমন করতে তোড়াটা মাঠেই ছুড়ে মারে সে।অতঃপর তার জন্য নির্ধারিত করা আসনে গিয়ে বসে।

অন্যদিকে প্রণয় আর চাঁদকে নিয়ে মেতে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাসের চার তৃতীয়াংশ।কেনোনা প্রায় সকলেই তাদের জুটি খুব পছন্দ করে।এমনকি বেস্ট কাপল ইন দ্যা হোল কলেজ বলতে প্রণয় আর চাঁদকেই সকলে গণ্য করে।তাদের মাখোমাখো প্রেম সকলের নিকটই ভারী পছন্দনীয়।দুজনকে একসাথে বড্ড মানায়ও।আজ যেনো অতিরিক্তই ভালোলাগছে দুজনকে একসাথে।অনেকের নজরই তাদের উপর সীমাবদ্ধ।

কিছুক্ষণ বাদে চাঁদ আর প্রণয়ের বন্ধুমহল তাদের সামনে হাজির হয়।চাঁদ ফায়ানকে দেখেই বলে,

“তুমি কি রিহার্সাল করে ফেললে ফায়ান?”

একবার চাঁদের দিকে তো আবার চাঁদ-প্রণয় দুজনের দিকে একসাথেই তাকায় ফায়ান।অতঃপর দৃষ্টি আবারও চাঁদের দিকে দিয়ে বলে,

“না।এখনও করিনি”

“তাহলে….”

চাঁদের কিছু বলার পূর্বেই সেখানে একটা মেয়ে উপস্থিত হয়ে চাঁদকে বলে,

“আসতে না আসতে ছেলে পটিয়েও ফেলেছো?তাও আবার সিনিয়র ভাইয়া?”

চাঁদ কপাল কুচকে বলে,

“এক্সকিউজ মি?”

“একচুয়ালি সরি।তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখলাম তো।তোমার বয়ফ্রেন্ড কিন্তু মারাত্মক হ্যান্ডসাম”

বলেই আড়চোখে প্রণয়ের দিকে তাকায় মেয়েটা।তা দেখে প্রণয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে প্রণয়কে পিছু চাপিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে চাঁদ বলে,

“আমি ডাইনী দেখিনি তবে অন্যের বয়ফ্রেন্ডের গলায় ঝুলে পড়তে চাওয়া মামনি জীবনে অনেক দেখেছি”

চাঁদের কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সকলেই হেসে দেয়।কেউ একটু শব্দ করে,কেউবা মুখ টিপে।

চাঁদের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে কপাল কুচকে মেয়েটা বললো,

“হোয়াট!”

“ইম…..আমি বুঝালাম যে হ্যা যার কথা বলছো সে মারাত্মক মানে!অতিরিক্ত মাত্রায় হ্যান্ডসাম”

“হ্যা তোমার বয়ফ্রেন্ড সত্যিই খুব হ্যান্ডসাম।চোখ দেখো তার।আমিতো ফিদা হয়ে গেলাম!”

মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করে চাঁদ বলে,

“কোন ক্লাসে পড়ো?”

“ফার্স্ট ইয়ার।এই বলোনা,এসেই এতো হ্যান্ডসাম ছেলে কিভাবে পটালে?”

“কি উদ্ভট কথাবার্তা বলছো?”

“আরেএ তোমার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলছি।তাকে কিভাবে পটিয়েছো?এমন হ্যান্ডসাম আরও দু’একটা আছে নাকি কলেজে আরও?”

“ফার্স্ট অফ অল যার কথা বলছো সে আমার বয়ফ্রেন্ড না।সেকেন্ডলি তার মতো এই কলেজেতো দূর পুরো ব্রহ্মাণ্ড খুঁজেও কাউকে পাবে না।সে একজন এবং কেবল একজন ই হয়।আর শোনো মেয়ে,যার দিকে নজর দিচ্ছো তার দিকে এমনিতেই নজর দেওয়ার মতো মেয়েদের অভাব নেই তুমি এসে আবার নতুন করে যোগ হলে।যাই হোক নজর সামলে।অন্যথায় চোখ গ!লে বিগলিত হয়ে পড়ে যাবে।তাকেতো দূর নিজেকেই আর দেখার সুযোগ পাবেনা”

চাঁদের কথা শুনে ফায়ান বাদে সেখানে উপস্থিত সকলেই মিটিমিটি হাসলো।প্রণয় কেবল শান্ত দৃষ্টি দিলো চাঁদেতে।তার চোখজোড়া হেসে উঠলো নিমিষেই।প্রশান্তি বয়ে গেলো অন্তরজুড়ে।কেনো এমনটা হলো জানা নেই তার।ভাবনায় ছ্যাদ ঘটলো মেয়েটার পিছু আসা একটা ছেলের উৎফুল্লতায়।সে এসেই মেয়েটাকে বলছে,

“থ্যাংক্স দোস্ত।ম্যানি ম্যানি থ্যাংক্স।হেই মিস নীল শাড়ি তোমার সত্যিই বয়ফ্রেন্ড নেই?”

চাঁদ কপাল কুচকে তাকাতেই পাশের মেয়েটা বলে,

“নারে দোস্ত নেই কিন্তু…”

মেয়েটার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই ছেলেটা বললো,

“যাক ভালোই হলো।কিন্তু এই ছেলেটা কে মিস?আচ্ছা তোমার নাম কী?”

“আমার নাম দিয়ে আপনি কী করবেন?”

খানিকটা হেসে ছেলেটা বলে,

“তেমন কিছুই না।একটু পটানোর চেষ্টা করতাম আরকি”

চাঁদের কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের বাহু ধরে তাকে বাম পাশে সরিয়ে নিজে সামনে এসে ছেলেটাকে প্রণয় বলে,

“যাকে পটাতে এসেছো প্রথমত সে হলো তোমার সিনিয়র।আর তার পেছনে দশজন ঘুরলেও সে মত্ত কেবল একজনেতে”

বলেই চাঁদের হাত ধরে বলে,

“চলুন চাঁদ”

অতঃপর পেছনে ঘুরে তার বন্ধুবান্ধবদের উদ্দেশ্যে বলে,

“তোরাও আয়”

ছেলেটা প্রণয় আর চাঁদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আহাম্মক হয়ে বললো,

“সিনিয়র?”

তখনই অবনী ছেলেটাকে বললো,

“হ্যা সিনিয়র।তোমরা দুজন যাকে ফার্স্ট ইয়ার ভেবে এতো কিছু বললে সে সেকেন্ড ইয়ারের অর্থাৎ তোমাদের সিনিয়র।আর যার সাথে গেলো সে ফোর্থ ইয়ার তথা ফাইনাল ইয়ারের।এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো দুজনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি তারা পছন্দ করেনা।গট ইট?নাকি র‍্যা!গ খেতে চাও?তাও আবার ক্যাপ্টেনদের হাতে?”

মেয়েটা অবাক হয়ে বললো,

“ক্যাপ্টেন?”

এবার মিরা বললো,

“হ্যা ক্যাপ্টেন।ওরা দুজন দুই ইয়ারের ফার্স্ট ক্যাপ্টেন”

রবিন বললো,

“এবং এখানে উপস্থিত আমরা কয়েকজনও ক্যাপ্টেনই”

রিহা নখে ফু দিতে দিতে বললো,

“যদিও এই চার বছরে আমরা কখনোই কাউকে র‍্যা!গ দেইনি তবে ওদের দুজনের মাঝে কেউ আসলে শুধু র‍্যাগ না র‍্যাগের বড়টা দিতেও পিছুপা হবোনা”

এমন এমন ভয়ার্ত বাক্য শুনে ছেলেমেয়ে দুজনেই ঢোক গিলে সেখান থেকে দ্রুতগতিতে চলে আসে।তা দেখে সকলেই সমস্বরে হেসে দেয়।মির অরণকে বলছে,

“জানিস অরণ?আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমাদের প্রণয়!আমাদের প্রণয় যে কিনা মেয়ে এলার্জেটিক ছিলো সে কোনো মেয়ের প্রেমে মগ্ন”

“প্রথম প্রথম আমিও বুঝতে পারিনি।কিন্তু শুরু থেকেই একটা আন্দাজ করেছিলাম এদের মাঝে কিছু একটা হবেই।নাহয় প্রণয় কেনো অপরিচিত এক মেয়েকে কিস করে বসবে?”

অরণের কথা শুনে মিরাও বলে,

“সেদিন কিন্তু আমরা বুঝতে পেরেছিলাম চাঁদের মধ্যে অবশ্যই কিছু একটা তো আছে যা প্রণয়কে টেনেছিলো।যার দরুন প্রণয় এতোবছর যা করেনি সেদিন তা করলো”

ইপ্সিও বললো,

“হ্যা আপু একটা জিনিস কী জানো?চাঁদও এরপর থেকে কেমন যেনো বিহেভ করতো।মানে ভাইয়ার থেকে পালাই পালাই।কত মাসতো আশেপাশেও যায়নি”

অরণ তখন গম্ভীরভাবে বললো,

“সেটা প্রণয়ের দোষেই হয়েছিলো।ওকে আমি বলেছিলামও কিন্তু ওর সেই পুরোনো স্বভাব!মেয়েদের কাছে যাবেনা।তার নাকি অস্বস্তি হয়”

অবনী হাসি হাসি মুখ করে বলে,

“যাই বলো না কেন দুজনকে একসাথে ভারী মানায়।আমিতো অনেক খুশি”

ইফাদ বললো,

“খুশি তুই একা না এখানে সবাই ই”

ইফাদের কথা শুনে পূর্ণতা বললো,

“সবাই খুশি হবে বিষয়টা ভাবা ভুল ইফাদ।কারণ ওরা এখনও কনফেজড করেনি দ্যাট দে লাভ ইচ আদার”

ফায়ান গম্ভীরভাবে বললো,

“হ্যা কনফেজড করেনি কিন্তু তাতে কী?আমরাতো জানি এমনকি দুজনও জানে তারা একে অপরকে ভালোবাসে শুধু স্বীকারটুকু করছেনা এইতো।আচ্ছা তোমরা থাকো আমি রিহার্সালে গেলাম”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিহার্সাল রুমে বসে গিটারের টুংটাং শব্দ তুলছিলো প্রণয়।রুমে এসে প্রণয়কে এমতাবস্থায় দেখে ফায়ান বলে,

“ভাইয়া আপনি?আপনারও কি পার্ফম্যান্স আছে?শুনলাম না যে?”

গিটারে সুর তুলতে তুলতেই প্রণয় বলে,

“শোনোনি।এখন শুনে নাও”

প্রণয়ের কাছে এসে ফায়ান বলে,

“সলো নাকি ডুয়েট?”

“সম্ভবত ডুয়েট”

একটা চেয়ারে বসতে বসতে ফায়ান বলে,

“বাহ।কার সাথে?”

কিছুক্ষণের জন্য গিটারে আঙুল চালানো থামিয়ে ফায়ানের দিকে চেয়ে প্রণয় বলে,

“চাঁদের সাথে”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রণয়ের পানে এক ধ্যানে চেয়ে দুই ভ্রু উচিয়ে অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় ফায়ান বলে,

“চাঁদ?”

“হ্যা চাঁদ”

“কিন্তু ও তো আমায় বলেনি আপনার সাথেও যে আছে”

“সে বলেনি আমি বলছি”

“ওহ কোন গানে?”

“সেটা নাহয় একবারেই শুনে নিও?”

“চাঁদ কোথায় ভাইয়া?”

“বাকিদের সাথে বসে আছে।তোমার সাথে কথা বলতেই আমার এখানে আসা”

“আমার সাথে?”

“হ্যা”

“জ্বি বলুন ভাইয়া”

“চাঁদের সাথে তোমার…”

প্রণয়ের কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই ফায়ান বলে,

“আমি হয়তো বুঝতে পেরেছি।আমি সরে যাবো সমস্যা নেই”

ফায়ানের কথা শুনে তার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে আবার গিটারের তারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রণয় বলে,

“খুব ভালোবাসো চাঁদকে তাইনা?”

“বাসেন তো আপনিও”

ফায়ানের কথা শুনে আরেকবার তার পানে চেয়ে প্রণয় বললো,

“আর সেটা তোমায় কে বললো?”

“এক প্রেমিক আরেক প্রেমিকের চোখের ভাষা বুঝবেনা তা কি হয়?”

“তবুও রাখার চেষ্টা করবেনা?”

“যার হৃদয়জুড়ে অন্যের বসবাস তাকে কী করে রাখা যায় ভাইয়া?”

“চেষ্টাটুকুও করবেনা?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফায়ান বলে,

“একবারে হারিয়ে ফেলার থেকে কিছু অনুভূতি অন্তরালে রেখে দেওয়া ভালোনা?”

“যদি তোমায় ভালোবেসেই থাকে?”

“সেতো তার শুদ্ধ পুরুষের”

“কখনোতো বলেনি।প্রকাশও করেনি”

প্রণয়ের কথা শুনে মৃদু হেসে ফায়ান বলে,

“নিজ চোখজোড়ায় তার প্রতি যা দেখতে পাই ঠিক একই জিনিস তার চোখজোড়ায় আপনার জন্য দেখতে পাই আমি।তবুও বলবেন ভালোবাসেনা আপনায়?”

“কীভাবে পারো নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিতে?”

“ভালোবাসা বিসর্জন কখন দিলাম?যদিও আপনারা কেউ স্বীকার করেন না তবুও তো আপনি ভালোবাসেন চাঁদকে?হয়তো সেও বাসে।তাই নিজেকে আড়াল করে নিয়েছি ঠিকই তবে আমি তাকে ভালোবাসি,বাসবো আমরণ।এতে কিন্তু আপনি আমায় বাঁধা দিতে পারেন না,পারবেনও না ভাইয়া।”

“চাঁদ কি জানেনা?”

“কখনো বুঝতে দেইনি”

“যদি বুঝে থাকে?”

“বোঝেনি,কখনো বুঝবেওনা।আর আপনি এতোটাও বোকা নন যে নিজে গিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মা!রবেন”

কথাটা বলে হালকা হাসে ফায়ান।তা দেখে প্রণয়ও খানিকটা ঠোট বাকিয়ে বলে,

“কুড়াল মা!রলেও তা পায়ে পড়বেনা।চন্দ্রময়ীতো এমন নয়”

“ব্যাস এ বিশ্বাসটুকু রাখবেন”

“নিজের চোখের সামনে নিজ ভালোবাসাকে অন্যের পাশে দেখা খুব যন্ত্রণার তাইনা আরফিদ?”

“এ যন্ত্রণা বোঝানো বড়ো দায়”

“তাহলে কি আমার হেল্পটা করবে ভাববো?”

“শতভাগ নিশ্চিত থাকুন”

“তোমার মতো প্রেমিক পুরুষ দ্বিতীয়টা দেখিনি আরফিদ”

“আপনার মতোও আর কেউ নেই।আপনার চন্দ্রম…”

“ও নামে কেবল আমি এবং আমি ডাকি”

প্রণয়ের কথা শুনে হেসে দিয়ে ফায়ান বলে,

“আচ্ছা আচ্ছা।তো আপনার চাঁদই কিন্তু সে কথা বলেছে যে আপনি একজন এবং কেবল একজনই হন।তাইতো তার প্রেমিক পুরুষ হবার সৌভাগ্যটাও কেবল আপনার কপালেই জুটলো”

“এখনওতো হলাম না”

“মন আদান-প্রদান শেষ।চোখে চোখে ভালোবাসা শেষ।এখনও বলছেন হলেন না?”

“সে যে ভালোবাসে বলেনি তো”

“বলেননি তো আপনিও”

“আচ্ছা চলো উঠা যাক”

“আপনি কিভাবে বুঝেছেন আমি জানিনা তবে আমি চাইনা আমার অনুভূতিগুলো তার সামনে কখনো জাহির হোক”

আড়চোখে ফায়ানের পানে চেয়ে প্রণয় বলে,

“একটু আগে তুমিই বললে আমি অতোটা বোকা নই।অতএব নিজেও নিশ্চিন্তে থাকো এবং আমাকেও থাকতে দিও”

“অবশ্যই”

ঘন্টা দুয়েক পরের কথা,
হন্তদন্ত হয়ে ফায়ানকে খুঁজতে খুঁজতে খানিকটা ঘেমে গেছে চাঁদ।পুরো কলেজ খুঁজে,ফোনে কয়েকবার কল দিয়েও তাকে না পেয়ে ইফাদ,অবনীদের কাছে এসে বলে,

“ফায়ানকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা রে।কোথায় গেলো ছেলেটা?”

ইপ্সি বলে,

“ও তো বাচ্চা ছেলে না যে হারিয়ে যাবে।এসে পড়বে টেনশন করছিস কেনো?”

“টেনশন করবোনা বলছিস?দশ মিনিট বাদেই আমাদের পার্ফম্যান্স।আর ও গায়েব হয়ে আছে।আর তুই বলছিস আমি টেনশন করবোনা?”

অবনী বলে,

“দাড়া ইফাদকে বলছি।হয়তো ও জানে”

“ইফাদকেও জিজ্ঞেস করেছি।ও ও জানেনা”

“তাহলে এবার?”

তখনই ইপ্সি বলে,

“কল দিয়ে দেখ”

“ধরলেতো হয়েছিলোই।বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে”

মিরা পাশে থেকেই ওদের কথোপকথন শুনে বলে,

“দাড়াও আমি কল দিয়ে দেখছি”

“হ্যা আপু দেখো একটু।কি যে করবো বুঝতে পারছিনা”

মিরার কলও ফায়ান ধরেনা।বেশ কয়েকবার কল দিয়ে মিরা হতাশ হয়ে বলে,

“ধরছেনাতো”

ইপ্সি বলে,

“কোনো বিপদ হলোনাতো?”

রবিন বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,

“আমি করে দেখছি যদি ধরে।নাহয় খুঁজতে বের হবো নে।তুমি চিন্তা করোনা চাঁদ”

রবিনের দ্বিতীয়বারের কল রিসিভ হতেই রবিন চেচিয়ে বলে,

“ধরেছে ধরেছে!”

অতঃপর ফায়ানকে বলে,

“কী ব্যাপার ফায়ান কোথায় তুমি?তোমাদের পার্ফম্যান্স এর তো বেশি সময় নেই কোথায় গায়েব হয়েছো?”

“ভাইয়া আসলে আমার হাত কে!টে গেছিলো।আমি ফার্মেসীতে এসেছি”

“কী!”

রবিনের চেচানো শুনে চাঁদ বলে,

“কী হয়েছে ভাইয়া?আমাকে দাও”

রবিনের থেকে ফোন নিয়ে তা কানে লাগিয়ে চাঁদ বলে,

“কোথায় তুমি ফায়ান?”

“আমি ফার্মেসীতে চাঁদ”

“কী?কিন্তু কেনো?”

“আমার হাত কে!টে গেছে।ড্রেসিং করাতে এসেছিলাম”

“হাত কিভাবে কা!টলো?বেশি লেগেছে কি?তুমি অতোদূর কেনো গিয়েছো?এখানেইতো ফার্স্ট এইডের ব্যবস্থা আছে”

“একটু বেশিই লেগেছে চাঁদ।আমি এখনই আসতে পারবোনা।এক্সট্রিমলি সরি”

হতাশ হয়ে চাঁদ বলে,

“কী করবো তাহলে?”

“পোস্ট পন্ড করার কথাও বলতে পারছিনা।কারণ আমি এখন এই হাত নিয়ে পিয়ানো বাজাতে পারবোনা।তুমি তাহলে ওদের বলে দাও পার্ফম্যান্স করছিনা আমরা”

মনমরা হয়ে চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই তার আর ফায়ানের নাম স্টেজে এনাউন্সড করে দেয়া হয়।তাই হতাশ হয়ে সে ফায়ানকে বলে,

“রাখছি”

বলেই স্টেজে যেতে নিলে রবিন জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে?”

“হাত নাকি খুব বাজেভাবেই কে!টেছে।পোস্ট পন্ডও করা যাবেনা।তাই নাম বাতিল করতে যাচ্ছি”

বলেই স্টেজের দিকে এগোয় চাঁদ।চাঁদের স্টেজে পৌঁছালেই নরমাল বাতিগুলো নিভে গিয়ে হালকা নীলরঙা বাতি জ্বলে উঠে সেইসাথে হালকা হালকা সাদাও মিশ্রিত আছে।নীল-সাদায় স্টেজ সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠতেই চাঁদ হতাশ হয়ে মাইক নিয়ে কিছু বলার পূর্বেই ভেসে আসে একটা মিষ্টি সুন্দর চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণীয় কন্ঠস্বর,

♪♪♪…ঐ তোর মায়াবী চোখ,
লা লা লালা লা লা লা,
লা লা লালা লা লা,
আচল হয়ে যাবো… ♪♪♪

অতঃপর গিটার বাজাতে বাজাতে স্টেজে উঠতে আরম্ভ করে প্রণয়।সকলেই হইহই শুরু করলে চাঁদের ধ্যান ভাঙে প্রণয়ের উপর থেকে।সে ইশারায় প্রণয়কে কিছু জিজ্ঞেস করলে প্রণয় কেবল চোখ দ্বারা আস্বস্ত করে তাকে।তা দেখে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চাঁদও এগিয়ে আসে প্রণয়ের দিকে।তারপর দুজনে শুরু করে এক সুন্দর ইশারার কথোপকথন।গিটারে আঙুল বুলিয়ে চাঁদের পাশ ঘেষে দাড়ালে চাঁদ খানিকটা লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে নেয়।ঠিক তখনই প্রণয় গিটারের তারে আঙুল চালাতে চালাতেই চাঁদের দিকে বাকা চোখে চেয়ে কাধে হালকা ধাক্কা দিয়ে আবারও শুরু করে,

♪♪♪…ঐ তোর মায়াবী চোখ,
কাজল হয়ে যাবো।
আর উড়লে হাওয়ায় তোর,
আচল হয়ে যাবো।
আমার হয়ে যা তুই,
আমি তোর হয়ে যাবো…♪♪♪

শেষের দু’লাইন চাঁদের আঁখিতে দৃষ্টি স্থির করেই সুর তুলে প্রণয়।চাঁদ প্রণয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে খানিকটা লজ্জামিশ্রিত দৃষ্টিতে প্রণয়ের পানে চেয়ে শুরু করে,

♪♪♪…একবার ডেকে যা তুই,
বারবার চলে যাবো…♪♪♪

অতঃপর প্রণয়ের বুকে তর্জনী দিয়ে হালকা ঠেলে দিয়ে প্রণয়ের বিড়ালাক্ষী জোড়ায় লজ্জারাঙা মুখশ্রীসহ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে শুধায়,

♪♪♪…তোর দুষ্টুমিতে আজ,
আমি ইচ্ছে মেশাবো।
আমার হয়ে যায় তুই,
আমি তোর হয়ে যাবো…♪♪♪

শেষের দু’লাইন নিজের বুকে হাত রেখে প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি স্থির করে তাকে ইশারায় ইশারায় বলে চাঁদ।চাঁদের চোখে দৃষ্টি তখনও স্থির রেখে প্রণয় গেয়ে উঠে,

♪♪♪…ঐ তোর মায়াবী চোখ,
কাজল হয়ে যাবো…♪♪♪

অতঃপর চাঁদের থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে তার আচলের কোন ধরে শুধায়,

♪♪♪…আর উড়লে হাওয়ায় তোর,
আচল হয়ে যাবো…♪♪♪

চাঁদের আচলের কোন ধরতেই চাঁদ ঘুরে এসে প্রণয়ের বুকের ডানপাশে মিশে গিয়ে লজ্জা ঢাকায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।লজ্জায় আরক্তিম হওয়া চাঁদের পানে এক ধ্যানে চেয়ে প্রণয় ঠান্ডাস্বরে শুধায়,

♪♪♪…মনে মনে ছেয়ে আছে,
আষাঢ়ের ঘোর।
মনে মনে ছেয়ে আছে,
আষাঢ়ের ঘোর।
নেমে আয় না তুই,
ঘুমোলে শহর।
নেমে আয় না তুই,
ঘুমোলে শহর…♪♪♪

প্রণয়ের বুক থেকে মুখ উঠিয়ে প্রণয়ের আরেকপাশে গিয়ে তার পানে চেয়ে চাঁদ সুর তোলে,

♪♪♪…আকাশ হয়ে যা তুই,
সাগর হয়ে যাবো।
আজ ঢেউ হয়ে যা তুই,
পাথর হয়ে যাবো…♪♪♪

অতঃপর প্রণয়ের সম্মুখে পিঠ করে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে তার পানে ঘাড় ঘুরিয়ে আড়চোখে চেয়ে শুধায়,

♪♪♪…আমার হয়ে যা তুই,
আমি তোর হয়ে যাবো…♪♪♪

শেষের লাইন বলতে গিয়ে লজ্জায় আর প্রণয়ের সেই বিড়ালাক্ষী জোড়ায় তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখজোড়া নামিয়ে নেয় চাঁদ।

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৪৪.
“আমি ফলো করলে অস্বস্তি আর প্রণয়ের ছোয়ায় এতো স্বস্তি,কেনো নীলাম্বরী?”

“কারণ আমি তাকে ভালোবাসি মি.আহিন”

চাঁদের বলা এক বাক্য আহিনের বুকে ধারালো ছু!রির ন্যায় বিধলো যেনো।চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে সে বললো,

“এই তবে কারণ আমায় রিজেক্ট করার?”

“আপনাকে কখনো মেনেই নিতে পারিনি রিজেক্ট করা পরের কথা আহিন”

“এবং তার কারণটা নিশ্চয়ই প্রণয়?”

“তার প্রতি অনুভূতিতো সেই প্রথমদিন থেকেই ছিলো।একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে আজ তা অপরিমিত”

“খুব ভালোবাসো প্রণয়কে?”

“আমি শুধু জানি এ হৃদয়জুড়ে কেবল ঐ শুদ্ধ পুরুষটাই বিরাজমান”

“প্রণয়ের মাঝে এমন কী আছে যা আমার মাঝে নেই?”

“অন্যের মাঝে যা আছে প্রণয়ের মাঝেও তাই আছে।তবে প্রণয়ের মাঝে যা আছে অন্যদের মাঝে তা নেই”

“এতো ভালোবাসা কবে থেকে?”

“সেদিন থেকেই যেদিন প্রথম ঐ বিড়ালাক্ষী মানবের দর্শন পাই”

মৃদু হেসে আহিন বলে,

“প্রণয়ের প্রতি তোমার প্রেমময়ী বাক্যগুলো আমার হৃদয় ক্ষ!তবি!ক্ষ!ত করে দিচ্ছে নীলাম্বরী”

“আপনার হৃদয় ভে!ঙেচুরে দিতেই আজ আপনার সম্মুখীন হয়েছি আমি”

“আমিতো জানতামই তুমি প্রণয়কে ভালোবাসো তবুও নিজ মুখে তার প্রতি ভালোবাসাটুকু প্রকাশ করে আমার হৃদয়টা না ভাঙলেই কি হতোনা নীলাম্বরী?”

“আমি শুধু প্রণয়ের লালগোলাপ,তার চন্দ্রময়ী এবং তারই রেডরোজ।আমায় চাঁদ বলে ডাকলেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করবো আহিন”

“অবশ্যই চাঁদ।মিস মুহাইমা বিনতে চাঁদ”

“তাহলে কি আমি বুঝে নেবো যে আপনি আমার প্রতি আপনার অনুভূতিগুলো মে!রে দেবেন?”

“অনুভূতিতো মা!রা যায়না।তাকে কেবল আড়াল করা যায় নীলা….ইম…চাঁদ।আচ্ছা ভালো থেকো আর…”

বলেই বড় করে শ্বাস নিয়ে আবারও বলে,

“প্রণয়ের সাথে যেহেতু প্রেমটা তোমার হয়েছে ই।এই প্রেম আমরণ জীবিত থাকুক”

“মরণের পরেও তার সাথে আমার প্রেম হোক!”

মাস চারেক পর আজ চাঁদের ফার্স্ট প্রফের রেজাল্ট দেবে।এই নিয়ে তার ভয়ের যেনো অন্ত নেই।এতো ভীরের মাঝে সে সামনে যেতে পারছেনা অথবা বলা যায় সে যেতে চাচ্ছেনা।চোখজোড়া বন্ধ করে মনে মনে দোআ পড়ছে।ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছে।যেকোনো মুহূর্তে যেনো হৃদপিন্ডটা ছলাৎ করে বেরিয়ে আসবে।গলা শুকিয়ে আসতে চাচ্ছে যেনো।কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।ঠিক তখনই তার পাশে প্রণয় এসে দাঁড়ায়।চোখ বন্ধ রেখেই চাঁদ উপলব্ধি করলো প্রণয়ের শরীরের ঘ্রাণ তথা তার উপস্থিতি।প্রণয় চাঁদের ডান হাতটা নিজের বাম হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে তার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ ঘুরিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

“এতো অস্থিরতা কেনো চন্দ্র?নিজের প্রতি আশাবাদী নন আপনি?”

প্রণয়ের ফিসফিসানো কান অব্দি পৌঁছাতেই চোখজোড়া খুলে তার পানে তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টি দিয়ে চাঁদ বলে,

“অবশ্যই আশাবাদী।এমনকি আমি জানি অবশ্যই ভালো কিছুই হবে তবে এখানে সবাই ই বেস্ট।কার রেজাল্ট কখন কী হয় বলাতো যায়না।আর আমার থেকে সবাই যেনো একটু বেশিই এক্সপেক্ট করছে।তারা আমায় এক্সেপশনাল ভাবছে”

“এক্সেপশনালকে এক্সেপশনাল ভাবাটাইতো স্বাভাবিক মিস রেডরোজ”

“আপনি বুঝতে পারছেন না প্রণয়।সবাই ভেবে বসে আছে আমি আবারও ফার্স্ট হবো কিন্তু আমিতো দেখেছি আমার ফ্রেন্ডদের,আমার ক্লাসমেটদের ডেডিকেশন।তাই আমি যথেষ্ট নার্ভাস।আপনি হয়তো এই অনুভূতি দিয়ে পরিচিত নন”

“পরিচিত কিনা জানিনা।কখনো এমন কিছু উপলব্ধি করিনি।আমার কাছে পড়াশোনার গুরুত্ব আছে তবে ততটা নয় যতটা তা আপনার কাছে প্রাধান্য পায়।আমার কাছে পড়াশোনাটা এভারেজ লেভেলের।একচুয়ালি আমার কাছে সবকিছুই এভারেজ লাগে”

“কিন্তু প্রণয়ের প্রণয় আমার কাছে কখনো এভারেজ লাগেনি মি.বিড়াল”

“কারণ তার প্রতি কোনোকিছুই হিসাব করা যায়না,সে সর্বদাই অতুলনীয়”

তাদের কথোপকথনের মাঝে ইপ্সি আর অবনী এসে হাপাতে লাগলো।অতঃপর অবনী বলা শুরু করলো,

“তোর রেজাল্ট মাত্রই দেখে আসলাম চাঁদ”

ইপ্সি ঘনঘন শ্বাস নিয়ে বললো,

“সবার কাছেই তোর রেজাল্ট ছড়িয়ে গেছে”

তখনই ইফাদও এসে বললো,

“শুধু তুমিই জানোনা”

চাঁদ ভীত কন্ঠে বলে,

“কিসব বলছো!রেজাল্ট কি খুব খারাপ হলো?কিন্তু আমিতো ভালো এক্সাম….”

মির তাদের নিকট আসতে আসতে বলে,

“হ্যা ঘসেটি উরফে বিড়ালিনী।খুবই বাজে হয়েছে।এতোটা বাজে যে তোমার মতো আর কারোর ই রেজাল্ট এমন হয়নি”

অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ বলে,

“কিন্তু ভাইয়া আমিতো…”

তখনই অরণও হাজির হয়ে প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এবারতো মেয়েটার হাত ছেড়ে দে।রেজাল্ট দেখে আসুক”

প্রণয় হকচকিয়ে চাঁদের হাত ছেড়ে দিয়ে খানিকটা কেশে বলে,

“ওদের কথা বিশ্বাস না করে নিজে গিয়ে দেখে আসুন।একেকটা ফনা তোলা সাপ”

রবিন খোচা মেরে সামনে আসতে আসতে বললো,

“এখনতো আমরা সাপসহ বিচ্ছু,ডাইনোসর আরও কত কী হবো!কিরে কী বলিস রিহু?”

রিহা রবিনকে খোচা দিয়ে বললো,

“বুঝলি মিরু?এক পাগল আরেক পাগলকে বলছে তোর মাথার তার ছেড়া”

মিরা হাসতে হাসতে বলে,

“তা যা বলেছিস!চোরে চোরে একদম মাসতুতে ভাই”

প্রণয় গম্ভীরভাবে বলে,

“রবিনের সাথে আমাকে গুলাবিনা”

মির তৎক্ষনাৎ বলে,

“ওহ হ্যা তাইতো!রবিনতো প্রকাশ্যেই জল খায়।কিন্তু তুমিতো খাও ডুবে ডুবে মামা”

প্রণয় বিরক্ত হয়ে বলে,

“চলুনতো চাঁদ আপনার রেজাল্ট দেখে আসি”

তখনই একটা মেয়ে এসে বলে,

“রেজাল্ট দেখা লাগবেনা।আমিই বলছি।পুরো কলেজই এখন চাঁদের রেজাল্ট জানে।শোনো তুমি পেয়েছো…. ”

চাঁদ তৎক্ষনাৎ দুই কান দু’হাতে চেপে ধরে খানিকটা চেচিয়েই বলে,

“না না ইলা!প্লিজ কিছু বলবেনা।আমার রেজাল্ট শুধু আমিই দেখতে চাই।কারো থেকে জানতে চাইনা।প্লিজ বলবেনা”

বলেই হনহনিয়ে সামনের দিকে এগোয়।এগিয়ে সকলকে সাইড করে নোটিশ বোর্ডে নিজের নাম খুজতে লাগে।অতঃপর পেয়েও যায়।রেজাল্ট দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে চাঁদের।সে চোখজোড়া বন্ধ করে ঢোক গিলে সেখান থেকে সরে এসে সর্বপ্রথম তার ভাইয়ের নম্বরে ডায়াল করে।তার ভাই চৈত্র ফোন রিসিভ করেই বলে,

“আমি জানি এবারেও আমার ছোটি টপ করেছে।অ্যাম আয় রাইট?”

ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চাঁদ আটকে আটকে বলে,

“হা…হ্যা ভাই।তোর ছোটি তোদের সবার বিশ্বাস বহাল রাখতে পেরেছে‌!”

“আলহামদুলিল্লাহ!হ্যা ভাই অবশ্যই মিষ্টি খাওয়াবো”

“কাকে বলছিস?”

“আরেএ আমার এক কলিগ।পাশেই বসে আছে।একজন না বলতে পারিস অনেকেই।সবাই তো জানে আমার বোন টপার অফ বিডি”

“আচ্ছা ভাই তুই কাজ কর আমি আম্মু আব্বুকে কল দিচ্ছি”

“তোর দিতে হবেনা।আম্মু আব্বুকে আমি কনফারেন্সে রেখেছিলাম।তারা শুনছে সবই”

“কী?আব্বু আম্মু?এই আব্বু?তুমি শুনেছো?আম্মু তুমিও?”

চাঁদের বাবা জবাব দেন,

“হ্যা আম্মু শুনেছি।এবং আব্বুর কলিগরাও শুনেছে।এবারও মনে হচ্ছে মিষ্টি কিনতে কিনতেই আমার পকেট ফাকা হবে”

শেষের কথাটা রসিকতা করেই বলেন চাঁদের বাবা ইহাদুল ইসলাম।

চাঁদের মাও হেসে বলেন,

“আর আমার ফ্রিজ ভর্তি হবে মিষ্টির বক্স দিয়ে”

চাঁদ খুশিতে আপ্লুত হয়ে হয়ে বলে,

“তোমরা সবাই খুশিতো?”

“আলবাত সোনা মা”

চৈত্র বলে,

“আচ্ছা তাহলে রাখছি।তুই গিয়ে তোর ফ্রেন্ডদের সাথে সেলিব্রেট কর।আর ওদের রেজাল্ট কেমন হলো জানাস”

“সবারই ভালো হবে আমার বিশ্বাস”

মাস দুয়েক পরের কথা,বছরের শেষের দিক।মাসটা তখন নভেম্বরের শেষের কোঠায়।প্রণয়দের বাড়িতে আত্মীয়দের আনাগোনার ধুম পড়েছে যেনো।বেশিরভাগই প্রণয়ের কাজিনরা।সকলেই শীতের ছুটি কাটাতে প্রণয়দের বাড়িতে আড্ডা জমিয়েছে।এই একটা জায়গা ই তাদের সকলের মিলনস্থল।মজার বিষয় হচ্ছে আগে প্রণয় তাদের সাথে আড্ডায় যোগদান না করলেও এবার সকল কিছুর আয়োজন সেই করেছে।এতে করে সকলে হতবাক হলেও প্রশ্ন করার সাহস মনে জাগেনি।তবে প্রণয়ের বোনেরা ভীষণ খুশি।যে তাদের ভাই অবশেষে তাদের আপন ভাবতে পারলো বলে।সকলে মিলে ঠিক করেছে তারা তাদের পুরোনো গ্রামের বাড়িটায় যাবে শীতের প্রকোপ উদযাপন করতে।প্রণয়ের সাথে থাকবে তার বন্ধুমহলের সকলেই।যদিও চাঁদসহ তার বন্ধুবান্ধবদেরও প্রণয় বলেছিলো কিন্তু তারা আসবেনা।তাদেরও নাকি গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছা।চাঁদও তার খালামনির বাড়ি যাবে বলে জানিয়েছে।তাই আর প্রণয় কাউকেই জোর করেনি।নিজ বন্ধুমহল আর কাজিনদের নিয়েই রওয়ানা হয়েছে।প্রণয়সহ তার বন্ধুবান্ধব এক গাড়িতে আর অপরগাড়িতে রায়হান তার ভাইবোনদের নিয়ে আসছে।যদিও সেখানে রামিম উপস্থিত তবে দুজনের মাঝে কোনোপ্রকার কথোপকথনই হয়নি।অথবা বলা যায় তারা নিজে থেকেই কথা বলেনি।বিষয়টা আর কেউ লক্ষ্য না করলেও তাদের তিনবোন ঠিকই করেছে।সবচাইতে বেশি আফসোস করেছে শিফা।কেনোনা সে জানে দুজনের বন্ধুত্বের ফাটলের কারণ।তবুও উশ্মিকে সে ভীষণ ভালোবাসে।তাইতো রায়হানকে সেই ছোট থেকেই ভালো লাগলেও কাউকেই বলেনি কখনো।এই যে আজ সে সতেরো বছরের কিশোরী তবুওতো রায়হানের প্রতি অনুভূতিগুলো কমে না গিয়ে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।আগে কেউ না জানলেও বর্তমানে তার দুই বান্ধবী তথা বোনেরা ঠিকই জানে তার মনের সুপ্তাবস্থার কথা।রুবা শিফার দৃষ্টি অনুসরণ করে রায়হান আর রামিমের দিকে দেখতে পেয়ে তার হাত চেপে বললো,

“কিরে কী ভাবছিস?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিফা বললো,

“তেমন কিছুই ভাবছি না রে”

“ওসব ভাবলে কিছুই ঠিক হবার নয় রে”

“ভাবিনাতো।রিদুর মন খারাপ কেন?”

শিফার কথা শুনে রিদির পানে চেয়ে রুবা ফিসফিসিয়ে রিদি আর শিফাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,

“হবে নাই বা কেন?তার প্রাণপ্রিয় যে এই গাড়িতে নেই।অপর গাড়ি করে তার হৃদয়ে ব্যথা দিয়ে চলে গেলো”

রুবার কথা শুনে কনুই দিয়ে তাকে গুতো দিয়ে রিদি বলে,

“বেশি পাকামো করিস না।যেদিন তোর প্রাণটাও কাউকে প্রিয় বানাবে না?সেদিন বুঝবি চিকনিচামেলি”

“ঐ চুপ থাক ভোবলদাস”

শিফা কপাল কুচকে বলে,

“ঝগড়া করিস নাতো।এই রিদু তুই কি সত্যিই মির ভাইয়ার উপরে ক্রাশ খেয়েছিস?মানে সত্যি?তোর থেকে কিন্তু ভাইয়া অনেক বড়”

বাকা চোখে চেয়ে রিদি বলে,

“মাত্র দশ বছরেরই তো বড় ক’দিন বাদেই আমার ষোল হয়ে যাবে সো বলতে পারিস সাড়ে নয় বছরের বড়।আর আগেকার যুগেতো পনেরো-বিষ বছরের বড় ছেলেদেরও বিয়ে করতো।ফ্যামিলি থেকে দিতো আরকি”

রুবা ঠেস মে!রে বলে,

“আর তোর মনে হয় মির ভাইয়া তোকে বিয়ে করতে বসে আছে?তোর জন্য ওয়েইট করবে?তার গার্লফ্রেন্ড নেই ভেবেছিস?”

“গার্লফ্রেন্ড থাকুক।বউতো আর না!মিরের বউতো শুধু এই রিদি ই হবে।দেখে নিস”

To be continued….