আবার প্রেম হোক পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0
673

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৪৫.
“আপনি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি প্রণয়,হৃদয় আপনাকে দিলাম”

বাক্যটুকু লিখে তার নিচেই ডান পাশে আজকের তারিখটা দিয়ে ডায়েরীটা সন্তপর্ণে বন্ধ করলো চাঁদ।অতঃপর মুচকি হেসে ডায়েরীটা আলমারিতে রেখে পেছনে ঘুরতেই ভাইকে মোবাইল চালাতে চালাতে কাধের ব্যাগ টেবিলে রাখতে দেখে খানিকটা উস্কাতে বললো,

“সারাদিন প্রেমালাপ করেও মন ভরেনা নাকি?”

ব্যাগ টেবিলে রেখে বোনের কাছে এসে তার কান মলে দিয়ে চৈত্র বলে,

“সারাদিন প্রেমটা কি গিয়ে তুই করিয়ে দিয়ে আসিস?”

“ভাবির কাছে বিচার দেবো কিন্তু!ছাড় বলছি”

আরেকটু জোরে কান চে!পে ধরে চৈত্র বলে,

“তোর ভাবিকে আমি ভয় পাই নাকি?”

“তাই না?বলবো এ কথা ভাবিকে?”

“হ্যা বল।তোর ভাবি আমার কিছুই করবেনা।উলটো সে আমায় ভয় পায়”

“তোকে না।তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় ভাই”

চাঁদের কান ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে দু’হাত বিছানায় উল্টোভাবে দিয়ে ফ্যানে নজরাবন্দী করে চৈত্র বলে,

“এ ভয়ে আমি নিজেই ধুকে ধুকে ম!রি”

ভাইয়ের পাশে বসে তার কাধে হাত রেখে চাঁদ বলে,

“এভাবে বলেনা ভাই।ভাবি তোকে ভালোবাসে বলেই এতোটা ভয় পায়”

সোজা হয়ে বোনের দিকে চেয়ে চৈত্র বলে,

“তাই বলে এতোটা ভয়?আমার ভালোবাসায় কি ওর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই?”

“তুই ভুল বুঝছিস ভাই”

“কী করে যে ওর ভয় আমি কাটাবো বুঝছি ই না”

“আমায় একদিন ভাবির সাথে দেখা করিয়ে দে”

“ও এসবে রাজি হবেনা”

“বলবি কেনো?হঠাৎ তাকে চমকে দেবো”

“যদি রাগ করে?”

“করবেনা।আমি আছিনা?”

চাঁদের নাক টেনে দিয়ে চৈত্র বলে,

“হ্যা আমার পাকা বুড়ি”

নাক কুচকে বাচ্চাদের মতো হেসে দিয়ে চাঁদ বলে,

“হ্যা তোদের চাঁদবুড়ি!দি গ্রেটেস্ট চন্দ্রম…চাঁ…চাঁ…চাঁদ”

কপাল কুচকে চৈত্র বলে,

“কী বলছিলি তুই?”

থতমত খেয়ে চাঁদ বলে,

“ক…কই?কিছুনাতো।আচ্ছা তুই ফ্রেশ হ আমি তোর জন্য শরবত করে আনি”

“ঠিক আছে”

বাইরে থেকে এসে হলরুমে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো প্রণয়।এমতাবস্থায়ই সেখানে হাজির হন তার মা পুষ্পিতা জামান।ছেলের পাশে বসে ছেলেকে বলেন,

“তুমিতো একবছর বাদেই ফাইনাল ইয়ার দিবে।ভাইবোনদের একটু আকটু হেল্পতো পড়াশুনায় করতেই পারো”

মায়ের পানে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আবারও ফোনে মনোযোগ স্থির করে প্রণয়।তা দেখে পুষ্পিতা জামান নারাজ হয়ে বলেন,

“আমি কিছু বলছি প্রণয়”

“শুনেছি মা।কিন্তু কার কথা বলছো তুমি?যাদের কথাই বলছো বেশিরভাগই তো মানবিক বিভাগের আর যারা বিজ্ঞানের আছে ওরা দূরে থাকে এবং সকলের ই কিন্তু টিউটর আছে।আমি ওদের আর কীই বা করিয়ে দেবো?”

“ডাক্তার কেনো হচ্ছো তবে?”

ফোন লক করে মায়ের দিকে ঘুরে প্রণয় বলে,

“তুমি বুঝতে পারছোনা মা।আমিতো বায়োলজি আর ক্যামিস্ট্রি নিয়ে স্টাডি করছি।মেডিকেলে এগুলো বাদে তেমন কিছুই থাকেনা আর।আর এই দুইটা সাবজেক্ট নাইন টেনে যথেষ্ট ইজি।ওরা নিজেরাই পারবে।আমি আর কী বুঝাবো?”

“তন্ময়কেতো একটু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করতে পারো নাকি?”

“ও তো ছোট বাচ্চা না যে আমি যা বলবো ও তাই করবে।কলেজে উঠে গেছে,বুঝ হওয়ার যথেষ্ট উপযুক্ত।এখন ওকে আমি কিভাবেই বা আগ্রহী করবো?যদি না নিজে থেকে আগ্রহী হয়?”

বিরক্ত হয়ে পুষ্পিতা জামান বলেন,

“তোমাদের দুই ভাইয়ের আমি কিছুই বুঝিনা!”

মায়ের দু’গাল টে!নে দিয়ে প্রণয় বলে,

“অতো বুঝতে হবেনা মা।আমি রুমে গেলাম”

“পড়তে বসবে?”

“আমার রুটিনতো তুমি জানোই”

“কফি পাঠাবো নাকি শরবত?”

“কফিই দিও।মাথাটা ধরছে”

“ঠিক আছে।তুমি যাও আমি আসছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মিনিট বিশেক পড়ার পরই মাথা ব্যাথাটা বাড়ে প্রণয়ের।তবুও সে পড়তে চাচ্ছে।বেশি একটা সময় নেই,বছরের শেষের দিকেই ফাইনাল প্রফ দিতে হবে।এতোদিন তেমন কিছুই পড়েনি।খুবই হালকাভাবে সবকিছু দেখে গেছে।তাই তোরজোর করেই পড়তে হবে।কিন্তু মস্তিষ্কটা তার মনের বিপরীতে চলছে।মাথার যন্ত্রণা দ্বিগুণ করে দিচ্ছে নিমিষেই।কফি অর্ধেক খেয়ে রেখে দিয়েছে সে।এতোক্ষণে ঠান্ডাও হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই।আর গরম করে খাওয়ার মতো ইচ্ছা প্রণয়ের মনে জাগছেনা।ডান হাত দিয়ে কপালের দুই পাশ চেপে ধরে বইয়ের দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে।এমতাবস্থায় হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠায় চোখ বন্ধ রেখেই কোথাও দৃষ্টিপাত না করে ফোন কানে লাগিয়ে কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় শুনতে পায়,

“শুনলাম কোনো এক চাঁদের প্রেমে নাকি প্রণয় মাতোয়ারা?”

অরিনের কটাক্ষপূর্ণ বাক্য শুনে মাথা ব্যাথাটা যেনো বেগতিক বাড়লো প্রণয়ের।চোয়াল শক্ত করতেই কপালের রগ ফুলে উঠলো।ফর্সা মুখটা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।কোনো জবাব দেয়ার পূর্বে আবারও সে শুনতে পায়,

“আপনার চাঁদ কি আমার চাইতেও বেশি সুন্দর?”

নিজের রাগ সংবরণ করে বেশ ঠান্ডাস্বরেই প্রণয় বললো,

“নিজের সাথে তুলনা দিয়ে আমার চাঁদকে অপমান করার অধিকারতো আমি তোমায় দিইনি”

অতঃপর আবারও বলে,

“যেহেতু অরণের কাছে শুনেছোই,সবটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।প্রণয়কে পাওয়ার দুঃসাহসিকতা কেবল চাঁদেতেই বিদ্যমান।ফারদার আমায় কল দিয়ে ডিস্টার্ব করার পূর্বে এ কথাটা স্মরণ করবে”

অরিনের হৃদয় চূ!র্ণবিচূ!র্ণ করে দিয়ে কলটা কেটে দিয়ে ব্লকলিস্টে ফেলে দেয় প্রণয়।শান্তশিষ্ট প্রণয়ের মেজাজ তুঙ্গে চড়ে গেছে।নিজেকে শান্ত করা প্রয়োজন,তবে কোনোক্রমেই সে কিছু করতে পারছেনা।মাথা ব্যাথাটা যেনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।তৎক্ষনাৎ বইটা বইয়ের তাকে সন্তপর্ণে রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরুতে বেরুতে অরণকে কল দেয় সে।অতঃপর দুই-তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে,

“তোর জন্য কী এখন শান্তিমতো পড়াও যাবেনা নাকি?”

“মেজাজ দেখাবিনা বলে দিচ্ছি।এমনেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।এক্ষুনি টিএসসি আয়।আই নিড টু টক টু ইউ রাইট নাও”

“কী হয়েছে?”

“তুই জানিস তোর বাসায় আমি যাই না।আশা করছি এতোদিনে তুই এও বুঝেছিস কেনো যাইনা”

গম্ভীরভাবে অরণ বলে,

“আসছি।বের হ তুই”
.
.
.
.
.
.
.
.
আধাঘন্টার মধ্যেই দুই বন্ধু টিএসসি চত্বরে এসে হাজির হয়।দুজনের টাইমিং ও একই।দুইপাশে দুই বন্ধু একে অপরকে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করলে দুজনই উদ্যানের সামনে এসে দাড়ায়।অতঃপর অরণই শুরু করে,

“হঠাৎ কী হয়েছে?”

“মাথা ধরেছে আমার।চল চা খাবো”

কপাল কুচকে অরণ বলে,

“কিন্তু তুইতো চা খাস না”

“তেতুলের টা খাবো আয়”

প্রণয়ের সাথে আসার জন্য পা বাড়িয়ে চশমা চোখে ভালোভাবে ঠেলে দিয়ে অরণ বলে,

“মাথা ব্যাথার জন্য?”

“হিম।তুই কোনটা খাবি?”

চায়ের টং-য়ের সামনে থেমে অরণ বলে,

“চা খাওয়ার ইচ্ছা আপাতত নেই।তুই খা”

“খেতে তো তোকে হবেই”

অরণকে কথাটা বলেই দোকানিকে উদ্দেশ্য করে প্রণয় বলে,

“এই মামা দুইটা তেতুলের চা দাওতো”

চায়ের অর্ডার করেই অরণের হাত ধরে নিজেও পা ঝুলিয়ে পাকায় বসে তাকেও বসায়।অরণ মহাবিরক্ত হয়ে বলে,

“জোর করে এখন তোর সাথে আমার তেতুল গিলতে হবে?”

“দেখ অরণ তোর বোন এমনেই মেজাজ খারাপ করে রেখেছে।তুই বাকিটা বিগড়াস না”

কথাটা শুনেই থমথমেভাবে অরণ জিজ্ঞেস করে,

“আবার কী করেছে?”

অরণের দিকে ঘুরে তার মুখোমুখি হয়ে প্রণয় বলে,

“যেহেতু চাঁদের ব্যাপারে বলেছিসই,এটা কেনো বলিস নি যে তোর বোনের সাথে আমার কিছুই সম্ভব না।এই জ্ঞানটা কেনো দিস না তাকে?”

প্রণয়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে অরণ শুধায়,

“কখনো কি তুই আমায় বলেছিস অরিন তোকে বিরক্ত করে?একবারও বলেছিস?”

অরণের কথা শুনে দৃষ্টি নত করে প্রণয়।অতঃপর তার মুখ দিয়ে কোনো বুলিই আর ফুটে না।তা দেখে অরণ স্মিত হেসে বলে,

“আমি জানি কেনো বলিস নি।তবে তোর আর আমার বন্ধুত্ব কিন্তু এতোটা ঠুনকো নয় প্রণয়।যে একটা মেয়ের জন্য তা ভেঙে যাবে হোক সেটা আমার নিজের বোনই।নে চা এসেছে,আমি অরিনকে বোঝাবো”

চায়ে কয়েক চুমুক দিয়ে প্রণয় বলে,

“চাঁদের বাসার সামনে যাবো মামা”

প্রণয়ের কথা শুনে ভড়কে গিয়ে চোখ খানিকটা বড় বড় করে অরণ মুখের কাছ থেকে চায়ের কাপ সরিয়ে বলে,

“কী বললি তুই?”

“যা শুনেছিস তাই বলেছি”

“আর ইউ শিওর?এখন আমাকে এই দিনও দেখতে হবে যে রাত বিরাতে প্রণয় কোনো মেয়ের বাসার নিচে উঁকিঝুঁকি দেবে?”

“রাত কোথায় সবেইতো সন্ধ্যা নামলো”

“তার মানে তুই যাবিই?”

“হ্যা দোস্ত”

“তোর জন্য মানুষের তাও আবার মেয়ে মানুষের বাসার নিচে তাকিঝুঁকি করে গনধো!লাই খাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।তোর ধো!লাই তোকেই মোবারক মামা”

চায়ের বিল মেটাতে মেটাতেই কথাটা বলে অরণ।প্রণয় অরণের সামনে এসে অনুনয়-বিনয় করে বলে,

“জিগারের বন্ধু আমার এমন করিস ক্যান?চল না”

“দেখ মেজাজ খারাপ করিস নাতো।জীবনে যা করিস নি আমিও করিনি সেসব করতে বলছিস তুই?”

“জীবনেতো মানুষ সবকিছুই কখনো না কখনো প্রথমবারই করে।কী বলো মামা ঠিক কিনা?”

কথাটা চা-ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করেই বলে প্রণয়।প্রণয়ের কথা শুনে লোকটা বলে,

“হ মামা আর তা যদি হয় প্রেম নিয়া তইলেতো কোনো কতাই নাই”

অরণ পাকায় বসতে বসতে দোকানিকে জিজ্ঞেস করে,

“প্রেম করেছো নাকি কয়েকটা?”

“কয়েকটা না।একটাই করছিলাম।যারে করছি হেরেই বিয়া করছি মামা।এহন একটা চাইর বছরের পোলাও আছে”

“এই কম বয়সেই?তোমার বড়জোর ত্রিশ-বত্রিশ হবেনা?”

আরেকজনের জন্য চা বানাতে বানাতে দোকানি বললো,

“হ।কী আর করতাম?গ্রামের পোলা রাইত বিরাইতে হের মতোন ই গিয়া সুমনের মায়রে দেখতে যাইতাম গাছে উইঠা”

কপাল কুচকে অরণ বলে,

“কী!”

“হ হের লেগাই কইতাছি তোমরাও যাও।এমন দিন আর ফিরা আইবোনা।মন যহন মামির লেগা মামার টানতাছেই তোমগো যাওন দরকার।তুমি না গেলেও তুমি কিন্তু অবশ্যই যাইও মামা”

শেষের কথাটা প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে দোকানি।প্রণয় সে কথা শুনে অরণকে কনুই মে!রে বলে,

“দেখলি?দেখলিতো?”

“এমন অস্থির হয়ে গেছিস কেন?পরশু কলেজে আসলে দেখতে পারবিনা নাকি?”

“কালতো শুক্রবার।পুরো একদিন দেখতে পাবোনা।চল না?”

“তো একদিনে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে শুনি?”

“তাকে দেখার বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে অরণ!”

বিরবির করতে করতে প্রণয়কে উঠাতে উঠাতে অরণ বলে,

“দিনকে দিন প্রেমিক পুরুষদের পেছনে ফেলে মহা প্রেমিক হয়ে যাচ্ছিস তুই।তোর সামনে মজনুও ফেইল”

অরণের কথা শুনে হুহা করে হেসে দিয়ে প্রণয় বলে,

“প্রেমহীন দুনিয়া পানসে লাগে অরণ!প্রেমে এতো মধু কী আর বলবো তোকে!”

ঠেস মে!রে প্রণয়ের বাহু টেনে অরণ বলে,

“হয়েছে আমায় প্রেম নিয়ে লেকচার দিবিনা।তোর লেকচার শুনতে আসিনি।আর হ্যা একদম পাঁচ মিনিটের বেশি থাকবোনা বলে দিলাম”

“আগে যেয়ে তো নেই!চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে যে!”

“এই শা*লা!দিনেও না দেখলি?এমন পাগল হইছিস ক্যান?”

পকেটে এক হাত গুজে অপরহাতে অরণের বাহু ধরে তাকে টানতে টানতে প্রণয় বলে,

“ও তুই বুঝবিনা।চলতো”

দুই বন্ধুর কান্ড দেখে দোকানি হেসে দেয় তাদের অগোচরে।মনে পড়ে যায় তার প্রেমের মুহূর্তগুলো।হৃদয় জুড়িয়ে যায় তার।আপনমনে চা বানানোয় মনোনিবেশ করে সে।

মিনিট দশেক হলো চাঁদের বাসার নিচে এসেছে তারা।অরণ হাত দিয়ে বারবার পায়ের কাছে থা!পড়াতে থা!পড়াতে মেজাজ খারাপ করে বলছে,

“দেখ প্রণয়,নিজের ভালো চাস তো চল আমার সাথে।তোর জন্য শরীরে যাও রক্ত বেঁচে ছিলো সব এই মশা গিলে নিচ্ছে।তুই যাবি নাকি আমিই যাবো বল?”

বার কয়েক এপাশ ওপাশ ঘুরে প্রণয় বলে,

“আমি জানি তুই যাবিনা”

“ভালো হচ্ছেনা কিন্তু প্রণয়।সময় আমারও আসবে”

“কবে আসবে?তুইতো কিছু কাউকে বলিসই না”

তেতে উঠে অরণ বলে,

“তুই বলিস?বলেছিস কিছু চাঁদকে?নিজে বলিস না যখন অন্যকেও উপদেশ দিবিনা”

“চাঁদের বারান্দা কোনটারে মামা?এতো বারান্দা কেন এখানে?কয় তলায় ই বা থাকে?”

বিরক্ত হয়ে অরণ বলে,

“আমিতো সব জান্তা সামশের!সবকিছুর খবর রাখি।তোর বিয়ে উপলক্ষে বার কয়েক এসে চাঁদের বাড়ি ঘুরে গেছি তাইনা?”

“চেতছিস কেনো এমন?”

“তো চেতবো না?আমার পা ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আর তুই বলছিস চেতবোনা?এই তোর না মাথা ব্যাথা?এখন মাথা ব্যাথা কই গেছে?”

“মনের ব্যাথার কাছে এই মাথা ব্যাথা কিছুই না মামা”

অতিষ্ট হয়ে কপালে হাত রেখেই রাস্তায় বসে পড়ে অরণ।তা দেখে প্রণয় বলে,

“থালা এনে দেবো?”

“হ্যা দে।তোর শশুরবাড়ি ঢুকে দুই দু’টো থালা নিয়ে আয়।একটা নিয়ে আমি বসবো,আরেকটা দিয়ে তোকে বসাবো।এরপর তোর বউ বারান্দা দিয়ে চেয়ে চেয়ে আমাদের ভিক্ষা করার স্টাইল দেখবে”

“শাট আপ অরণ।ডাক্তার হওয়ার বয়সে ভিক্ষুক হতে বলছিস?”

“পরীক্ষা চাঙে তুলে প্রেমিক হতে পারিস আর ডাক্তারের বদলে ভিক্ষুক হতে পারবিনা?”

“ভিক্ষুক হলে মেয়ে বিয়ে দেবে নাকি তার বাবা?”

“এই তুই চাঁদকে কল দেতো।কল দিয়ে বল কোন সাইডে ওর বাসা।এক্ষুনি কর।আমি আর বসতে পারছিনা।মেজাজ খারাপ হলে কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাবো প্রণয়”

“কল দিলে বুঝে যাবেনা তার বাসার নিচে আমি?তখন আমার রেপুটেশন কোথায় থাকবে?”

“এখন কোথায় আছে?সবতো গিলে ফেলেছিস একদম।কখনো ভাবিও নি একটা মেয়ের জন্য আমার ফ্রেন্ড তাও আবার তুই!তুই এতোটা ডেসপারেট হবি।যা বলছি কর।কিছুই ভাববেনা।তুই করবি নাকি আমি করবো?”

“করছিতো ভাই”

বলেই মিনিট দুয়েক ভেবে ডায়াল করে চাঁদের নম্বরে।একবার বেজে কেটে গিয়ে পরেরবারের বেলা রিসিভ হতেই প্রণয় কিছু বলতে নিলেই অরণ ফোন কেড়ে নিয়ে বলে,

“কোথায় আছো চাঁদ?”

“বাসায়ই আছি।আর এটাতো প্রণয়ের নম্বর?”

“হ্যা প্রণয়েরই।আমি আর প্রণয় একসাথেই আছি”

“হঠাৎ এমন সময়ে?”

“তোমাকে কিছুক্ষণ আগেই এই যে কসমেটিকস বিক্রি করেনা?এখানে দেখলাম।কেনাকাটা করে তিনতলায় ঢুকে গেলে।লিফটে দেখলাম একটা ছেলের সাথে কথাও বলছো”

বিস্ময় নিয়ে চাঁদ বলে,

“কী!কিন্তু আমিতো কলেজ থেকে এসে আর নামিই নি”

“আরেএ কী বলো।তোমাকেই দেখেছি।আমরা এই রোড ক্রস করছিলাম তখনই দেখলাম।কসমেটিকস সাইডের যে বারান্দাটা ওখানে তোমায় দেখলাম ফোনে আলাপও করছো।ফোন রেখে রুমে গেলে আর কল দিলাম।নিচে থাকতে ডাকতে চেয়েছিলাম পরে ভাবলাম লোকে কী না কী ভাবে”

“কিন্তু আমি সত্যিই নামিনি আর আমার বারান্দাতো ঐ সাইডে না।ফুচকার দোকানগুলোর পাশের দিকে।আর আপনি ভুল কাউকেই দেখেছেন।আমি নিচে নামিনি আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলা তাও লিফটে অসম্ভব!নিশ্চয়ই অন্য কাউকে দেখেছেন”

“হয়তো।তিনতলায় এসে নেমে গেলে দেখলাম”

“হ্যা ভুলই দেখেছেন।আমি তিনতলায় না এগারোতলায় থাকি”

“ওহ আচ্ছা!তাইতো বলি তুমি আমাদের দেখেও কথা বললে না কেনো”

“কিন্তু তিনতলায় আমার মতো দেখতে কেউ থাকে এটা জানতাম নাতো”

“কি জানি রাখছি তবে”

ইতস্ততবোধ করে চাঁদ বলে,

“ইম…প্রণয় পাশে নেই?”

“আছেতো।কথা বলবে?”

“না থাক।পড়ছিলাম রাখি”

“ঠিক আছে পড়ো”

অরণ কল কেটে দিতেই প্রণয় আক্রো!শে ফেটে পড়ে বলে,

“কথা বলে রেখে দিলি?আমি কথা বলবো।দে মোবাইল দে”

বলেই মোবাইল ছিনিয়ে নিতেই অরণ বলে,

“বাঃরে! ভালোমানুষির দেখি আজকাল দাম নেই।কই থ্যাংক্স বলবি যে তোর গোলাপের ঠিকানা জেনে দিলাম তা না করে মেজাজ দেখাচ্ছিস?”

“জেনেছিস?কোন দিকে রে?কোন সাইডে বারান্দাটা?”

“বলবোনা।এমন দুর্ব্যবহারের পর একদমই বলবোনা”

“বল না এমন করিস কেন?”

প্রণয়ের অসহায় দৃষ্টি দেখে মুখ টিপে হেসে উপরে উপরে গম্ভীরভাব রেখে অরণ বলে,

“ঐ পাশটায় ফুচকা বসেনা?সেই পাশে বারান্দা আর থাকে হলো এগারোতলায়”

কথাটা শুনে গুনে গুনে এগারোতলা দেখে প্রণয় ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত করে বলে,

“কী!”

“হ্যা।এবার চল যাওয়া যাক”

“চন্দ্রকে না দেখেতো এক পা ও নড়বোনা আমি”

“এই শা*লা।অতো উপরে দেখবি কী করে তুই?”

“চল”

বলেই অরণের বাহু টেনে ফুচকার দোকানের সামনে এসে এগারোতলায় তাকাতে তাকাতে ঘাড় ব্যাথা হয়ে যায় তার,সাথে অরণেরও।ঝটপট ঘাড় নামিয়ে অরণ বলে,

“অতো উপরে তাকাতে পারবোনা ভাই।চলতো”

“ওয়েইট”

বলেই আশেপাশে চোখ বুলায় প্রণয়।অতঃপর কিছু একটা খুজে পেয়েছে এমনভাবে চেচিয়ে বলে,

“পেয়েছি মামা!ঐ দেখ”

প্রণয়ের তর্জনীনির্দেশ খেয়াল করে সেপাশে তাকিয়ে অরণ অবাক হয়ে বলে,

“এখন কি তুই চুরি করে মানুষের বাসার ছাদেও উঠবি?”

মাথা ঝাকায় প্রণয়।তা দেখে আকাশপানে মুখ করে অরণ বলে,

“হে আল্লাহ!আর কী কী দেখাবে তুমি আমায়?”

অরণের বাহু টানতে টানতে চাঁদের বাসার পাশের বাসায় চুপিচুপি উঠে পড়ে প্রণয়।সাথে আছে অরণও।সে কিছু বলতে গেলেই প্রণয় ইশারায় চুপ করায় তাকে।বাড়িটা আটতলার।নয়তলায় ছাদ।প্রণয় ছাদে এসে কল দেয় চাঁদকে।ফোন হাতেই ছিলো বিধায় রিসিভ করে চাঁদ বলে,

“হ্যালো?”

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আকুতিভরা কন্ঠে প্রণয় শুধায়,

“একটু বারান্দায় আসবেন চাঁদ?”

অবাক হয়ে চাঁদ বলে,

“আপনারা কি যাননি?”

“না”

“কিন্তু অতো নিচ থেকে দেখা যাবেনাতো”

“আসুননা প্লিজ!”

প্রণয়ের আকুতিভরা নিবেদনকে ফেলে দিতে পারলোনা চাঁদ।সে ফোন কানে রেখেই বললো,

“আসছি”

অতঃপর ওড়না নিয়ে ঘোমটা দিতে দিতে বারান্দায় এসে দাড়ালো।গ্রিল খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে কোথাও প্রণয় বা অরণকে দেখতে না পেয়ে বললো,

“আপনাদেরতো দেখছিনা প্রণয়”

“এই যে এ পাশটায় তাকান।আপনার একদম বরাবর বাড়ির ছাদটায়”

প্রণয়ের কথানুযায়ী সে পানেই তাকায় চাঁদ।অতঃপর দৃষ্টিমিলন ঘটতেই আঁখি জোড়া আটকায় বিধ্বস্ত প্রণয়ের দিকে।মলিন হয়ে আছে মুখটা।চুলগুলো খানিকটা এলোমেলো।শার্টও কুচকানো,হাতাও গুটানো নয় ঠিকভাবে।বেশ অগোছালো লাগছে তাকে।পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে পড়ছে।কমলাটে আভা প্রণয়ের সারা মুখশ্রীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার কিরণ।এ যেনো অভূতপূর্ব এক মুহূর্ত!মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য!অগোছালো প্রণয়ের বিড়ালাক্ষী জোড়ায় প্রেমসাগরের ফোয়ারা দেখতে পেলো চাঁদ।হৃদয়ে উষ্ণতা অনুভব করলো।গাল দুটো তার জ্বলে উঠলো লজ্জায়।দৃষ্টি একে অপরেতে থমকালো দুজনার।কিছুক্ষণ,অনেক্ক্ষণ তারপর?তারপর প্রণয় হকচকিয়ে বললো,

“ভেতরে যান।এক্ষুনি ভেতরে যান চন্দ্র।এ বেশে আর কখনো বাইরে আসবেন না।প্রণয়ের দৃষ্টি ব্যতীত আর কারো নজরে এ বেশে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি হোক লালগোলাপ!”

চাঁদ নিজের দিকে খেয়াল করে দ্রুতগতিতে রুমের দিকে পা বাড়িয়ে ফোন কানে রেখেই বললো,

“নিষেধাজ্ঞা গৃহীত হলো গোধুলী মানব!”

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৪৬.
সময় গড়াতেও সময়ের সময় লাগেনা কেনো?ভালোবাসার সুন্দর মুহুর্তগুলো এতো জলদি চলে যায় কেনো?কেনো এতো স্বল্প তার পরিসর?এইতো সেদিনই চাঁদ ফার্স্ট প্রফ দিলো।আবারও বছর গড়িয়ে মাস চারেক বাদে সেকেন্ড প্রফ চলে এসেছে।সেইসাথে মাসখানেক পরই প্রণয়েরও ফাইনাল প্রফ।অতঃপর ইন্টার্নির ঝামেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে সে।আর কাছ থেকে দেখা হবেনা সেই বিড়ালাক্ষী মানবকে।তার বিড়ালাক্ষী জোড়ায় আর ডুবে থাকা যাবেনা।তার প্রেমময়ী বাক্য শোনার জন্য ব্যাকুল হৃদয় মাত্রাতিরিক্ত ব্যাকুল হয়ে থাকবে সারাক্ষণ।লোকটা আর এসে ক্ষণে ক্ষণেই তাকে তারই বরাদ্দকৃত নামে যখন-তখন ডেকে উঠবেনা।মন বড় তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকবে প্রেমিক পুরুষটার জন্য।একবার, কেবল একবার!তার গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনার জন্য ব্যাকুল হবে হৃদয়।ব্যাকুল হবে সে নিজেও।কেনো এতো স্বল্প হলো প্রেমময়ী মুহুর্তগুলো?এসব ভাবতে ভাবতেই ফাইনাল ইয়ারের বিদায়ানুষ্ঠানের তদারকি করছিলো চাঁদ।চাঁদকে অন্যমনস্ক দেখে ফায়ান তার পাশে বসে বলে,

“মন খারাপ চাঁদ?”

হঠাৎ ফায়ানের কন্ঠস্বর শুনে ভড়কে গিয়ে চাঁদ বলে,

“হা?হ্যা?কিছু বললে?”

“বললাম মন খারাপ কিনা তোমার?”

“হ্যা কিছুটা”

“প্রণয় ভাইয়ার জন্য?”

এ কথা শুনে চুপ করে থাকে চাঁদ।অতঃপর ফায়ানই আবার বলে,

“মন খারাপ করছো কেনো?ভাইয়াতো এই কলেজেই থাকবে।হয়তো কলেজ প্রাঙ্গনে আর তেমন আসবেনা তবে হাসপাতালেতো আসবে ঠিকই।তখন গিয়ে দেখা করতে পারবেতো।আর এমনিতেও চাইলে দেখা করতে পারবে।সমস্যা কোথায়?”

“না সমস্যা তেমন কিছুইনা।হঠাৎ করেই খারাপ লাগা কাজ করছে।মনে হচ্ছে আমি কী যেনো হারিয়ে ফেলবো।খুব বাজে আভাস”

“ওসব ভেবো না তো।যা পাচ্ছো তাতে সন্তুষ্ট থাকো।ভবিষ্যৎ ভেবে লাভ কী?তাছাড়া তুমি কিন্তু এখনও প্রণয় ভাইয়াকে জানাওনি তুমি যে তাকে ভালোবাসো”

খানিকটা লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে টুকরি থেকে ফুল বাছাই করতে করতে চাঁদ বলে,

“জানাইনি বলে যে সে বা কেউই বুঝেনা বিষয়টাতো এমন না”

“স্বীকার না করলে প্রেম গৃহীত হবে?”

ফায়ানের পানে চেয়ে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“হয় না?”

চাঁদের মাথায় হালকাভাবে আঙুলের টোকা দিয়ে ফায়ান বলে,

“বোকা মেয়ে।ভালোবাসাতো ভালোবাসাই,বলো আর নাইবা বলো।যাকে বাসো সে বুঝলেই হলো”

“আচ্ছা ফায়ান তুমি কাউকে ভালোবাসোনা?মানে এখনও বাসোনি?প্রেম-ট্রেম নিয়ে কিছু ভাবোনি নাকি?”

চাঁদের আকস্মিক প্রশ্নে ফায়ান থমকায়।দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে আসে তার।নিজেকে সামলে বলে,

“এখনও ভাবিনি।তবে জীবনে প্রেম এলে তোমায়ই সবার আগে জানাবো।যদিও তুমি আমায় জানাওনি তবুও”

চাঁদ হালকা হেসে বলে,

“আমিতো কাউকেই কিছু জানাই নি।এমনকি নিজেও দ্বিধান্বিত ছিলাম।তোমায় আর কীই বলতাম”

“সেসব থাক।আমি একটা জিনিস বুঝলাম না,ফোর্থ ইয়ার থাকতে আমাদের ঘাড়েই কেনো দায়িত্ব টা পড়লো?বিদায় তো যারা ফোর্থ ইয়ারে থাকে তারা বিষয়টা দেখে তাইনা?লাস্ট ইয়ারও তো ফাইনাল ইয়ারের বিদায় প্রণয় ভাইয়েরা দিলো”

তখনই সেখানে অবনী এসে বললো,

“সবকিছুই আমাদের প্রণয় দুলাভাইয়ের প্রেমজাদু বুঝলি?”

চাঁদ আর ফায়ান একসাথে বললো,

“মানে?”

“মানে হলো গিয়ে ভাইয়া যেহেতু অলওয়েজ টপ করেছে টানা চার বছর,সে দরুনই ভাইয়ার চাওয়াতেই থার্ড ইয়ারের উপর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে।মানে আমাদের!আর সেটা কেনো জানিস না?তার প্রেয়শী যে থার্ড ইয়ারের ক্যাপ্টেন!সে ভালো করেই জানতো চাঁদের কথা শুনলে কলেজ কর্তৃপক্ষ কখনোই না করবেনা সেই দরুনই ভাইয়া চালাকি করে কাজটা করেছে”

চাঁদ কপাল কুচকে বলে,

“তুই এতোকিছু জানিস কী করে?”

ইপ্সি আর ইফাদও একসাথে ওদের সামনে আসতে আসতে বলে,

“শুধু অবু ই না।আমরাও জানি”

ফায়ান ভ্রু কুচকে বলে,

“কিন্তু কেমনে?”

ইফাদ জবাব দেয়,

“একটু আগেই ভাইয়াদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসলাম।সেখানেই এই প্রসঙ্গে কথা হলো।সবাই প্রণয় ভাইয়ার বেশ মজাও উড়ালো”

চাঁদ উৎসুক হয়ে বললো,

“প্রণয় কিছু বলেনি?”

অবনী সুর টেনে বললো,

“ওহোওও!প্রণয় কিছু বলেনি?তোমার প্রণয় কি অতো কথা বলে নাকি খালা?”

বিরক্তি নিয়ে চাঁদ বলে,

“মস্করা করিস নাতো।এই ইফাদ বলোনা”

ইফাদ খানিকটা কেশে গলা পরিষ্কার করে বলে,

“তেমন কিছুই বলেনি।শুধু বলেছে….”

এবার ইফাদ,অবনী আর ইপ্সি বেশ অভিনয় করে একসাথেই বলে,

“জীবনতো একটাই,চন্দ্রময়ীও একটা।এই এক জীবনে লালগোলাপকে সম্পূর্ণ ফোটাতে প্রণয় যাচ্ছেতাই করবে”

ওদের কথায় চাঁদ তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি নত করে।গাল দুটো জ্বলে যায় তার‌!কান গরম হয়ে আসে।দৃষ্টি তুলতে অক্ষম হয় যেনো।বারবার চশমা ঠেলে দিতে দিতে ফুলের টুকরি নিয়ে অন্যদিকে চলে আসে।অতঃপর চোখজোড়া বুজে ঘনঘন শ্বাস নেয়।আঁখি জোড়া বন্ধ করতেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠে তার বিড়ালাক্ষী মানবের বিড়ালাক্ষী জোড়ার নজরকাঁড়া সেই অভূতপূর্ব হাসি!হৃদয়ে প্রশান্তি ছেয়ে গেলো চাঁদের।উত্তপ্ত হৃদয় নিমিষেই শীতল হলো।

রজনীবেলা,
বইয়ের পাতা সশব্দে উল্টাচ্ছে চাঁদ।সামনেই সেকেন্ড প্রফেশনাল এক্সাম।অথচ এই প্রফের জন্য কেবল পেয়েছে একবছর।তন্মধ্যে প্রায় ছ’মাসই চলে গেছে।রয়ে গেছে মাস তিনেক।চার মাসের মাথায়ই পরীক্ষা।অতএব খেয়ে না খেয়ে পড়তে হবে।রাত বাজে একটা পঞ্চান্ন।ড্রয়িং রুমে টেবিল লাইট জ্বালিয়েই দিব্বি পড়ছে সে।নেই কোনো ভয়ডর।অনায়াসে কলম নাড়াতে নাড়াতে পড়ছে।মনে মনেও না আবার বেশি জোরেও না।তবুও দেয়ালে বারী খেয়ে বেশ কানে লাগছে একেকটা শব্দ।খানিকটা ভূতুরে পরিবেশ হলেও চাঁদের মাঝে কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছেনা।সে নিজের মতো করে পড়ছে আবার পাশেই একটা খাতায় কি যেনো লিখছে।সঙ্গে আছে বিভিন্ন রঙিন কলমও।হঠাৎ করেই পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বুকে থুতু দিয়ে পাশে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বুকে হাত রেখে বিস্ময়ের সাথে বলে,

“ভাই তুই!”

বোনকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে চৈত্র বলে,

“ভয় পেয়েছিস?”

লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,

“হ্যা তো পাবোনা?এমন সময় এভাবে হঠাৎ কেউ আসে?কোনো হাকডাক নেই কিছু নেই”

চাঁদের টেবিলের পাশের বিছানায় আধশোয়া হয়ে হাই তুলে চৈত্র বলে,

“আজ ভাবলাম এখানেই শুই”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“কেনো?”

“কত রাত অব্দি পড়ার ধান্দা আপনার শুনি?”

চৈত্রের প্রশ্নে থতমত খেয়ে আমতাআমতা করে চাঁদ বলে,

“এইতো আর মানে আছে কয়েকটা পেজ।শেষ হয়ে গেলেই শুয়ে পড়বো ভাই।তুই গিয়ে ঘুমা”

“পেজগুলো নিশ্চয়ই পনেরো-বিশ পেজের?”

“ইম…মানে…আসলে হয়েছে কী ভাই!কলেজে ফাইনাল ইয়ারের বিদায়।তো সবকিছুর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে আমাদের উপর।বলতে পারিস তদারকি সব আমারই করতে হচ্ছে।পড়ার তেমন একটা সময় পাচ্ছিনা।টিউশন,চাকরী,কলেজ সবকিছু মিলিয়ে এই রাত বাদে আর সময়ই হচ্ছে না।এইতো এই মাস পরেই সেকেন্ড প্রফের রুটিন দেবে।তো বুঝছিসই তো!”

“হ্যা বুঝছি”

বলেই বিছানা থেকে উঠে চাঁদের টেবিলের দিকে উঁকি দিতে দিতে চৈত্র বলে,

“দেখিতো কী বই পড়িস?কখনোতো দেখলাম না মেডিকেলে কী কী বিষয় থাকে।দেখি কী লিখা?ইম…..ফর…ফরেন্সিক মেডিসিন?”

“হ্যা”

“এটা কী বায়োলজি নিয়ে নাকি?”

“না।এগুলোতো নিজেরাই একেকটা বিষয়”

“মেডিকেলে না বলে শুধু বায়োলজি?যারা মেডিকেলে পড়ে ওরাতো ছেলেপেলেদের বায়োলজির টিউশনই বেশি করায়।তুইওতো”

“হ্যা বায়োলজি নিয়েই।কিন্তু বায়োলজি আর কেমিস্ট্রি বিভাগেরই সবগুলো বই থাকে।বিভিন্ন সেকটর আরকি।যেমন বায়োলজিতো দুইটা।ওসব থাকে ইন্টারে।আর তার মধ্যে আমাদের এমবিবিএস এ পড়তে হয় প্রাণীবিদ্যার বিভিন্ন বিষয়।তার মধ্য থেকেও আবার বিভিন্ন সেকটর আছে।ওগুলো পড়া লাগে।তাছাড়া কেমিস্ট্রির বিভিন্ন ভাগ পড়া লাগে,মেডিসিন নিয়ে স্টাডি করার জন্য।যে কোন রোগের কোন ঔষধ অথবা বলতে পারিস কী মেডিসিন দিয়ে কী হয়।প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কী কী করা যাবে।এমন আরও অনেককিছু।থার্ড ইয়ারে আছে কমিউনিটি মেডিসিন,ফরেন্সিক মেডিসিন ইত্যাদি বিষয়াদী।তার মধ্যে এখন আমি পড়ছি হলো ফরেন্সিক মেডিসিন।এই বিষয়টারও বিভিন্ন বই আছে।যেমন….. ”

বোনকে থামিয়ে দিয়ে চৈত্র বলে,

“হইছে বোইন থাম!এতো কিছু জানতে চাইনি!বাবারে বাবা!মাথা আমার আউলায় গেলো।দাড়া ঠান্ডা হয়ে নেই”

ভাইয়ের কথা শুনে মুচকি হেসে আবারও পড়ায় মনোনিবেশ করে চাঁদ।মিনিট দুয়েক বাদে আবারও চৈত্র বলে,

“মনেতো হচ্ছেনা তিন-চারটার আগে উঠবি।যা রুমে যা।আজ আমি এখানেই শুবো।কোনো বাড়তি কথা শুনতে চাচ্ছি না।গো এন্ড ডু ইওর স্টাডি অ্যান্ড দেন স্লিপ পিসফুলি,ওকে?”

চেয়ার থেকে বই আর মোবাইল নিয়ে উঠতে উঠতে চাঁদ বলে,

“জো হুকুম মেরে ভাই!”

বলেই ভাইকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

“ঘুমিয়ে যাস কিন্তু!গেম টেম খেলিস না আবার।সকালে উঠতে হবে কিন্তু”

“হ্যা হ্যা ঠিক আছে আমার মা!যা তুই”

চাঁদকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়ে বিছানায় আয়েশ করে শোয় চৈত্র।চাঁদ ভাইয়ের রুমে এসে টেবিলে বসে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে আবারও পড়তে বসে।

ঘন্টাখানেক বাদে হাই তুলে ঝিমাতে ঝিমাতে বইয়ের পাতা উল্টায় চাঁদ।মাঝে মাঝে কী যেনো দাগাচ্ছে আবার লিখছেও খাতায়।এমন করতে করতে প্রায় মিনিট দশেক পর চোখের চশমা খুলে চোখ কচলিয়ে হাই তুলে বইয়ের মাঝে কলম রেখে বইটা বন্ধ করে কী যেনো ভাবে।অতঃপর মোবাইল নিয়ে দেখে ঘড়িতে তিনটা বেজে দশ মিনিট হয়েছে।সকাল আটটায় আবার ক্লাসও আছে, যেতে হবে ভেবে বই খুলে সেই পেজটা ভাজ করে কলমের মুখ লাগিয়ে বই,কলম সবকিছু নিয়ে ড্রয়িং রুমে নিজ টেবিলের সামনে গিয়ে ব্যাগে ভরে রাখে।অতঃপর ভাইয়ের দিকে তাকাতেই নজরে আসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে হাতে মোবাইল নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে সে।মোবাইল থেকে আলোও আসছে।তা দেখে খানিক হেসে মনে মনে বলে,

“স্বভাব আর গেলোনা!”

ভাবতে ভাবতেই ভাইয়ের কাছে গিয়ে প্রথমে মোবাইল নিয়ে লক করে বালিশের পাশে রাখে।অতঃপর কান থেকে ইয়ারফোন খুলে সেটাও পাশে রেখে হাত পা সবকিছু ঠিক করে দিয়ে বালিশ সোজা করে বালিশে ঠিকভাবে মাথা রাখিয়ে কাথা গায়ে দিইয়ে মৃদু হেসে চলে আসে রুমে।

রুমে এসেই দেখে মোবাইলে হালকাভাবে কাপছে এবং স্ক্রিনে আলোও ছড়াচ্ছে।টেবিল ল্যাম্পটা অফ করে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে বিছানায় এসে বালিশ ঠিক করে শুতে শুতে কাথা গায়ে নিয়ে মোবাইল হাতে নিতেই দেখে মিনিট দুয়েক আগেই মেসেঞ্জারে প্রণয়ের মেসেজ,

“ঘুমিয়ে পড়েছেন চাঁদ?”

মেসেজ দেখামাত্রই মুচকি হেসে চাঁদ রিপ্লাই করে,

“ঘুমানোর প্রস্তুতিই নিচ্ছিলাম”

কয়েক সেকেন্ড বাদে রিপ্লাই আসে,

“শুয়ে পড়েছেন?”

“হ্যা।আপনি?”

“আমি এইতো বারান্দায় বসে আছি”

“সে কী!ঘুমান নি?আই মিন শোন নি?”

“ঘুম আসছিলোনা।আর আমিতো প্রতিদিন এমন তিন/চারটায় ই ঘুমাই”

“হ্যা তাতো ঘুমান।কিন্তু ক’দিন বাদেইতো ফাইনাল প্রফ”

“হ্যা”

“পড়াশুনা কতদূর?”

“আমার পড়া নিয়ে চিন্তা করা লাগবেনা মেয়ে!নিজেরটা ভাবুন।আপনারও তো এক্সাম”

“হ্যা আমিতো পড়েই আসলাম মাত্র।ঘুম পাচ্ছিলো তাই শুয়ে পড়েছি।বাকিটা কাল দেখবো”

“ডিস্টার্ব করলাম নাতো?”

“না না তেমন কিছুই না।আমার শুয়ে কিছুক্ষণ মোবাইল টেপার অভ্যাস আছে।জানেনই তো”

“আপনার কন্ঠ শোনার বড্ড নেশা জেগেছে চন্দ্র!কল দেই?”

হঠাৎ প্রণয়ের এরূপ প্রেমবাক্যে একটু বেশিই লজ্জা পায় চাঁদ।গালদুটো ভারী হয়ে আসে তার।ঢোক গিলে লম্বা শ্বাস নিয়ে কিবোর্ডে টাইপ করে বার্তা পাঠায়,

“হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েন”

বলতে দেরি।দিতে দেরি নেই।অডিও কল দিয়েছে প্রণয়।আকস্মিক প্রণয়ের ফোনকলে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় চাঁদ।কেনো পায় জানা নেই।অতঃপর স্ক্রিনে প্রণয়ের এক হাস্যোজ্জ্বল ছবিসহ তার নাম ভেসে উঠে ‘মি.বিড়াল’।যা দেখে আনমনেই হাসে চাঁদ।রিসিভ করে কানে লাগিয়ে বিরাট লম্বা এক শ্বাস নেয়!যার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পায় প্রণয়।কী ভারী সেই নিশ্বাস!তার নিজেরও তো একই অবস্থা।অতঃপর দু’জন নিজেদেরকে সামলে নিয়ে একসাথেই বলে,

“হ্যালো?”

খানিকটা থেমে চাঁদই শুরু করে,

“জ্বি?”

প্রণয় নিম্নকন্ঠে শুধায়,

“শুয়ে পড়েছেন?”

“হ্যা তখনই।কিন্তু আপনি এতো রাতে বাইরে কেনো বসে আছেন?”

“এই যে চন্দ্রের সাথে আলাপন চলছে,চন্দ্রিমার দর্শনের সঙ্গে।কিন্তু সবচাইতে সুন্দর বিষয় কী জানেন?”

“কী?”

“জমিনের চন্দ্রের সামনে ঐ আসমানের চন্দ্রিমার তুলনাই হয়না।আমার চন্দ্রময়ী অভূতপূর্ব,অতুলনীয়।অভাবনীয়!”

খানিকটা লজ্জা পেয়ে চুপ মেরে যায় চাঁদ।তা বুঝতে পেরে প্রণয় বলে,

“সে যখন লজ্জায় লালরাঙা হয়,প্রণয় হয় তখন সবচাইতে বেহায়া,নির্লজ্জ পুরুষ!”

এ কথায় আরও বেশি লজ্জা পায় চাঁদ।গালদুটো তার ভারী হয়ে আসে।কানের থেকে ফোন খানিকটা সরিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নেয় সে।যার শব্দ প্রণয়ের কর্ণকুহর হওয়া থেকে মোটেও পেছায় না।খানিকটা ঠোট বাকিয়ে আকাশপানে চেয়ে প্রণয়ও লম্বা শ্বাস নিয়ে শুধায়,

“চন্দ্র?চন্দ্রময়ী?”

প্রণয়ের আকুলতায় ভরপুর ডাকে সাড়া না দিয়ে কখনোই থাকতে পারেনা চাঁদ।আজও তার ব্যতিক্রম হলোনা।নিজেকে সামলে ফোন আবারও কানে লাগিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে ভারী গলায় বলে,

“জি…জ্বি?”

“আপনাকে না নিষেধ করেছি আমার সামনে লজ্জা পেতে?”

অতঃপর সেও ভারী শ্বাস ফেলে বলে,

“আপনার লজ্জামিশ্রিত উত্তপ্ত শ্বাসে নিজের ভারসাম্য হারাই,চিত্ত ঝ!লসে যায় আমার!নিষিদ্ধ কিছু চেয়ে বসতে বাধ্য হয় হৃদয়!”

প্রণয়ের এরূপ কথা শুনে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে চাঁদ।হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার।গালদুটো অতিরিক্ত মাত্রায় ভার হয়ে জ্ব!লে যায়।ফলস্বরূপ গালের ভেতর দিকে টান পড়ায় খানিকটা ব্যথার সৃষ্টি হয় চাঁদের।সেসব কিছুকে উপেক্ষা করে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে ভারী কন্ঠে মৃদু কেপে বলে,

“কিন…..কিন্তু…আমি…আমিতো আপনার সামনে নেই?”

“কে বলেছে সামনে নেই?এইতো আঁখি বরাবরইতো বসে আছেন আপনি।স্নিগ্ধ,কোমলতায় ভরপুর আমার লালগোলাপ।মন যখন চায়,আপনাকে দেখতে পায়”

নিজের মাঝে আর থাকেনা চাঁদ।সে হারায় প্রণয়ের প্রেমসাগরে।ডুবে যায় সেথায়।লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করতেই প্রথমদিন যখন তার সামনে এসে পকেটে হাত গুজে মাঠে গিটার ঠেকিয়ে তার পানে দৃষ্টিনিবদ্ধ করেছিলো প্রণয়,ঠিক সেই মুহুর্তটা দৃশ্যপটে ভেসে উঠে চাঁদের।চলে কিছুক্ষণ নীরবতার রেশ।শহরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঘুমে তলিয়ে গেছে।দু’একটা বাড়িতে ঝাপসা আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে বোধহয়!কিন্তু এই নীরব,নিস্তব্ধ পরিস্থিতিতে কেবল শোনা যাচ্ছে দু’পাশ থেকে ভেসে আসা দু’ মানব-মানবীর নিশ্বাসের ধ্বনি।নীরবতা কাটিয়ে হঠাৎ ই প্রণয়ের আবদার,

“পরশু খোলা চুলে আপনার প্রেমসাগরে ভাসাবেন মিস রেডরোজ?”

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৪৭.
সকাল সাতটা,
ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে চাঁদ।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রেডি হয়ে সাতটা বিশের দিকে বের হয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।প্রণয়ের যেহেতু বিদায় হয়ে যাচ্ছে ছেলেটাকে আর বিরক্ত করতে মন সায় দেয় না চাঁদের।প্রণয়ের সাথে কলেজে যেতে যেতে অভ্যাস বিগড়ে গেছে তার।এখন আর একা যেতে ইচ্ছে করেনা।বাড়ির বাইরে এসে জনমানবশূন্য রাস্তা দেখে একটু ইতস্ততবোধ করে সে।অজানাই এক আশংকা হানা দেয় মনে।ঢোক গিলে দোআ-দরুদ পড়ে রিক্সা খোঁজের জন্য হাইওয়ের দিকে হাটা দেয়।পথেই সে ভাবে অবনীকে একবার কল দেবে কিনা?অতঃপর অবনীকে কল দেওয়া মাত্রই সে রিসিভ করে বলে,

“হ্যা বল”

“দোস্ত তুই কি বেরিয়েছিস?”

“হ্যা হাইওয়ের দিকেই আসছি।আজ জলদি যাওয়ার কথা না?”

চাঁদ আমতাআমতা করে বলে,

“একসাথে যাই?”

খানিকটা ঠাট্টা করেই অবনী বলে,

“ক্যান?দুলাভাই বুঝি নিতে আসেনাই?”

লজ্জা পেয়ে ঢোক গিলে চাঁদ বলে,

“না তেমন কিছুইনা।প্রণয়েরতো বিদায় হয়ে যাবে এরপরতো একা একাই আসা লাগবে তাছাড়া আজ একটু ভয় ভয়ই লাগছে।হঠাৎ করেই প্রায় আড়াই বছর পর এভাবে একা আসছি একটু এমন হওয়া স্বাভাবিক না?”

“আমাদের ঝাঁসিকিরানি ভয়ও পায় নাকি?”

ইতস্তত করে চাঁদ বলে,

“ভয় না মানে…”

অতঃপর ঝাঝ দেখিয়ে আবারও বলে,

“এখন তুই কি আসবি?থাক আমিই আসছি”

“ঢং করা লাগবেনা।হাইওয়েতে এসে দাড়া।আমরা আগে যেখানে দাড়াতাম ঐখানটায়।সেখান থেকেই রিক্সা নেবো”

“ইপ্সি আসছে?”

“না।ওর শরীর টা ভালো না।আজ ক্লাসে আসবেনা বললো।একবারে কাল অনুষ্ঠানে আসবে কিনা!”

“ঠিক আছে আসছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কলেজে এসেই সকলকে চলে যেতে দেখে খানিকটা অবাকই হয় চাঁদ আর অবনী।একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে ইশারায় জিজ্ঞেস করে ‘কী হয়েছে?’ দু’জনই বুঝায় তাদের জানা নেই।অতঃপর নিজেদের ক্লাসের দিকে এগিয়ে অবনী একজনকে জিজ্ঞেস করে,

“কী ব্যাপার তোমরা সবাই চলে যাচ্ছো কেনো?ক্লাস করবেনা?”

ছেলেটা অবনীর কথা শুনে হাটা থামিয়ে তার পানে চেয়ে বলে,

“আজ ক্লাস হবেনা।শুধু যারা দায়িত্বে আছে তারাই থাকবে।এজন্যই সবাই যাচ্ছে”

চাঁদ ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে,

“কিন্তু সাইফ আমিতো প্রায় সব ইয়ারের ছেলেপেলেদেরই চলে দেখে দেখছি?”

সাইফ ছেলেটা জবাব দেয়,

“হ্যা কারণ আজ কারোরই ক্লাস হবেনা।ঘোষণাটা নাকি কালই দিতো।কিছু কারণবশত দেয়া হয়নি।তাই আজ জানিয়ে দিয়েছে।সেজন্যই সবাই যাচ্ছে।থাকবে শুধু তোমরা কয়জন যারা কালকের ফাংশনের দায়িত্বে আছো।পুরো কলেজ খালি করার এটাই কারণ,যাতে সবকিছু আজকে সুন্দরভাবে করতে পারো”

“আচ্ছা আচ্ছা!”

চাঁদের পরপরই অবনী জিজ্ঞেস করে,

“আমাদের ফ্রেন্ডরা কোথায়?ক্যাপ্টেন দলের সবাই?”

“ওরা ক্লাসেই আছে।দু’একজন হয়তো এখনও আসেনি”

“আচ্ছা”

বলেই দ্রুত পা চালিয়ে নিজেদের ক্লাসে প্রবেশ করে তারা।এসেই অবনী হাবিবের কাধে হাত রেখে বলে,

“কিরে আমরা এ কয়জন পারবোতো?”

বুকে থুতু দিয়ে হাবিব বলে,

“শ!য়তান মহিলা!হঠাৎ কেউ অ্যাম্নে ধরে?”

অবনী কুটিল হেসে বলে,

“ভয় পাইছিস নাকি?ফায়ান কোথায়?”

ইফাদ উত্তর দেয়,

“ফায়ান আর ইলা ছাড়া বাকিরা সবাই আসছে”

চাঁদ হাই তুলতে তুলতে বলে,

“আজকে যে ক্লাস হবেনা এটা কাল বললেই হতো।একটু ঘুমাতাম আর এই বইগুলোও আনা লাগতোনা ধ্যাত!”

বলেই লো বেঞ্চে কাধের ব্যাগ রেখে হাই বেঞ্চে গিয়ে দু’হাটুর উপর দু’হাত রেখে বিরক্তি নিয়ে বসে সে।তাকে ঠেলেঠুলে তাদের ক্লাসমেট মেরিনও তার পাশে বসতে বসতে বলে,

“হ্যা!হুদাই ব্যাগ ভরে এত্তগুলা বই আনলাম!ভাল্লাগেনা শা*লার পড়াশুনা আর!কীভাবে যে ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত যাবো মগজেই আসেনা চু*ল!এই চাঁদ এই?প্রণয় ভাই টানা চার ইয়ার টপ ক্যাম্নে করছে রে?”

মেরিনের প্রশ্নে হতবুদ্ধি হয়ে চাঁদ কপাল কুচকে বলে,

“এই কথা আমারে জিগাস ক্যান?”

ঠে!স মেরে তাদের আরেক ক্লাসমেট আবদুল্লাহ বলে,

“তোমারে জিগাইবোনা তো কারে জিগাইবো হ্যা?”

ইফাদও তাল মেলায়,

“সেটাইতো!আফটার অল তুমিই তো প্রণয় ভাইয়ের….ইহিম…ইহিম….”

বলতেই সকলে মুচকি মুচকি হাসে।তখনই দরজার কাছ থেকে ভেসে আসে ইলার কন্ঠস্বর,

“বোকা মেরিন্না রে!তোর নাম মেরিন না হয়ে মোরোন হওয়া উচিত ছিলো!যে নিজেই টানা তিন বছর ক্যাপ্টেন হয়েছে এবং আগামী দুইবছরও হবে।আর যে কিনা নিজেই টপার অফ হোল বিডি হয়ে আসছে তাকে তুই জিগাইতেছিস টপ ক্যাম্নে করে?মোরোন জানি কোথাকার রে!”

বলতে বলতেই মেরিনের ডান পাশের লো বেঞ্চে এসে বসে ইলা।অতঃপর সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে বলে,

“ফায়ান কই?আর পুরা কলেজ এমন ভাগতেছে ক্যান?”

হাবিবও তাকে ঠে!স মেরে বলে,

“তোমার বিয়া লাগছে তাই সবাই আয়োজন করতে যাচ্ছে।বুঝোনাই ব্যাপারটা?”

ইলা বিরক্ত হয়ে বলে,

“ম!গজের হালুয়া বানাস নাতো।বল না কী হয়েছে?এই চাঁদ তুইতো বল”

চশমা চোখে ভালোভাবে এঁটে নিয়ে এক হাত হাটুতে রেখেই হাই তুলে অপরহাত গালে চেপে চাঁদ বলে,

“আমি নিজেই এসে দেখি চলে যাচ্ছে।তো হাবিবরা বললো আজ নাকি ক্লাস হবেনা।আমরা যাতে সব আয়োজন কমপ্লিট করতে পারি তাই”

কপাল কুচকে বিস্ময় নিয়ে ইলা বলে,

“কিন্তু আমরা এই সাত-আটজন করবোটা কী ভাই?ফায়ান কই ওকে দেখছিনা কেন?”

ইফাদ বলে,

“তোরা ভুলে গেছিস সবকিছু কেনার দায়িত্ব ওকে দিয়েছিস?”

মনে পড়ার ভঙ্গিতে আবদুল্লাহ বলে,

“খাইছে রে!আমারে কাল যেতে বলছিলো।না জানি ক্লাসে আইসা কোন বো‌!ম ফাটায় শা*লায়”

“বোম ক্লাসে না তোর মাথায় ফা!টাবো শা*লা!”

বলেই আকস্মিক পিছন দিয়ে এসে আবদুল্লাহর মাথায় হাতে থাকা সমস্ত ব্যাগ দিয়ে বারী মা!রে ফায়ান।মাথায় হাত রেখে মাথা ডলতে ডলতে আবদুল্লাহ ফায়ানের পানে ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে বলে,

“শা*লার শা!লা”

অবনী ফুসে উঠে বলে,

“এই আমার বন্ধুকে শা*লা বলিস কেন?তোর বোন বিয়ে দিবি নাকি?”

মেরিন সুর টেনে বলে,

“তোমার জ্বলে কেন অবু সোনা?”

চাঁদ প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে,

“অ্যাই তোরা থামতো!এমনেই ঘুম হয়নাই।হয় কাজে লেগে পড় নয়তো এইযে গেলাম বাসায়”

বলেই লো বেঞ্চ থেকে নিজের ব্যাগ নিতে গেলে হাবিব তার ব্যাগ টেনে নিয়ে বলে,

“ক্যান গো খালা?প্রণয় ভাই বুঝি ঘুমাতে দেয়না?”

হাবিবের কথা শুনে মাত্রাতিরিক্ত লজ্জা পায় চাঁদ।দৃষ্টি নত করে এদিক ওদিক চায় লজ্জা কাটানোর জন্য।তা দেখে ইলা বলে,

“যাই বলিস না কেন।আমাদের ঝাঁসিকিরানির সামনে প্রণয় ভাইয়ের কথা বললে তৎক্ষনাৎ যে লজ্জাটা ও পায়,দিল চুরি করে নেয়ার মতো ভাই!আমি মেয়ে হয়েই জ্ঞা!ন হারাচ্ছি।প্রণয় ভাই তো ম!রেই…..”

হঠাৎ করেই চাঁদ চেচিয়ে উঠে বলে,

“একদম চুপ!আজাইরা কথা বলবিনা”

ব্যাস!এই এক কথায় সেখানকার যুবক আর রমনীগণের হাসির আওয়াজে মুখরিত হয় ফাকা ক্লাসরুম।চাঁদ বেশ অস্বস্তিতে পড়ে সে অবস্থায়।সেই অস্বস্তিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে অবনী বলে,

“প্রণয় ভাই যেই প্রেমিক পুরুষ!এখন থাকলে নিশ্চিত চাঁদের লজ্জার প্রশংসা স্বরূপ কোনো উপন্যাস টাইপ বাক্য রচনা করে ফেলতো।তাই না রে চাঁদ?”

অবনীর কথায় চাঁদের মস্তিষ্ক তাকে স্মরণ করায় প্রণয়ের বলা দু’টো বাক্য,

“সে যখন লজ্জায় লালরাঙা হয়,প্রণয় হয় তখন সবচাইতে বেহায়া,নির্লজ্জ পুরুষ!”

“আমার সামনে লজ্জা কম পাবেন,নয়তো বেসামাল হলে আপনারই বিপদ চন্দ্রময়ী”

অতঃপর হঠাৎ করেই কান গরম হয়ে আসে তার।গাল দু’টো জ্বলে উঠে।লজ্জায় দৃষ্টি নত করে সে।তা দেখে মেরিন বলে,

“নিশ্চিত!নিশ্চিত তুই প্রণয় ভাইয়ার কথা ভাবছিস?”

মেরিনের কথায় সকলে চাঁদের পানে তাকায়।তা বুঝতে পেরে লজ্জায় আরও কুকড়ে যায় চাঁদ।

সন্ধ্যা ছ’টা বেজে তেরো মিনিট,
গগণ তখন সবেই আঁধারের দিকে গ্রাসিত হচ্ছিলো।লালচে আভা তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিরাজমান।কেমন একটা রক্তিম ভাব তাতে!ঠিক যেনো কারো হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ।কাজ করতে করতে ক্লান্তিতে মাঠের এক পাশে বসে আকাশবিলাস করছিলো চাঁদ।তখনই তার মুঠোফোনটা বেজে উঠে।অতঃপর তাতে দৃষ্টি দিতেই নজরে আসে ‘মি.বিড়াল’ লিখাটার উপর।আনমনেই হাসে সে।কিছুক্ষণ ফোনটা হাতে নিয়েই চেয়ে থাকে নির্নিমেষ।যখন তা বেজে বেজে কেটে যায়,ঠিক তখনই কন্টাক্টলিস্টে গিয়ে ‘মি.বিড়াল’ লিখাটা এডিট করে ‘প্রণয়’ লিখে সেভ করতেই আবারও কল আসে ‘প্রণয়’ লিখা নম্বরটি থেকে।সেকেন্ড দুয়েক বাদেই চাঁদ তা রিসিভ করে মৃদুস্বরে বলে,

“হ্যালো?”

“ওহ চন্দ্রময়ী!কর্ণদু’টো ধন্য হলো বলে!”

প্রণয়ের কথায় লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নামায় চাঁদ।অতঃপর প্রণয়ের হঠাৎ বলা বাক্যে অবাক হয় সে,

“লজ্জা পাওয়ায় একটুর জন্য বিরতি দিন আর আমায় বলুন কোন দিকটায় আছেন আপনি?আমি কলেজের বাইরেই আছি।আসবো”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“কলেজে কেনো এসেছেন?আপনাদেরতো আর ক্লাস নেই?”

“হ্যা নেই তো?”

“কিন্তু ভেতরেতো আসতে পারবেন না।সাজানো পুরোপুরি হয়নি।আর কালকের আগে দেখতে পারবেন না,বলে দিলাম!”

“ওসব সাজ টাজ দেখার জন্য মরিয়া হইনি।প্রণয়ের হৃদয় ব্যাকুল শুধু তাকে দেখার জন্য”

ঠোট চেপে মুচকি হেসে চাঁদ বলে,

“কিন্তু আজ আর তা হচ্ছেনা মি.ধলা বিলাই!কালই সেই সৌভাগ্য জুটবে বুঝলেন?”

“অসহায়ত্বের মজা নিচ্ছেন?”

“বলতে পারেন তা ই!”

বলেই খানিকটা উচ্চশব্দে হাসে চাঁদ।তা শ্রবণ হতেই প্রণয় বলে,

“হৃদয়ে তুফানের বেগে আলোড়ন চালানোর জন্য তার ঐ এক ঝংকার তোলা হাসিই যথেষ্ট চন্দ্রময়ী!”

লজ্জা পেয়েও নিজেকে সামলে চাঁদ বলে,

“আচ্ছা আমি রাখছি,কাজ আছে।আপনি আপাতত যান।কালকের আগে আপনার সামনে আসছিনা”

“একটু আসুন না চাঁদ?”

“না না।তা হচ্ছেনা”

ধীরস্বরে প্রণয় বলে,

“একটু?”

চাঁদের মন হয়তো গললো বলে?সেও নিম্নকন্ঠে শুধায়,

“কিন্তু অল্প একটুই শুধু ঠিক আছে?”

“হ্যা অল্প একটুই চলবে।আপনি আসুন তাও”

“আসছি”

কল কাটার জন্য উদ্যত হতেই তার সামনের দিকটায় বাগানের দিকে কোনো কিছুর আওয়াজ পেয়ে সেভাবেই উঠে যায় চাঁদ।কিছুটা এগিয়ে এসে এপাশ ওপাশ করে তাকাতেই ফোন থেকে ভেসে আসে প্রণয়ের কন্ঠস্বর,

“কী হলো?আসছেন?”

অতঃপর আবারও ফোন কানে লাগিয়ে দৃষ্টি অন্ধকার বাগান পানে রেখেই চাঁদ বলে,

“আসছি”

বলেই কল কেটে দিয়ে আরেকবার অন্ধকার জায়গাটুকুতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসহিত পর্যবেক্ষণ করে।অতঃপর চশমা তর্জনী দিয়ে ঠেলে দিয়ে মনে মনে ভাবে ‘হঠাৎ ওখানটায় কিসের আওয়াজ হলো?কী পড়লো ওখানে?বিড়াল টিড়াল?নাকি কোনো মানুষ?’

“কিন্তু বিড়াল কি অতো জোরে পড়ে?”

এসবকিছু বিড়বিড় করতে করতেই কলেজ গেটের সামনে আসে চাঁদ।এসেই পকেটে এক হাত গুজে ডান পা বাম পাশে বাকিয়ে নিয়ে বুড়ো আঙুলের উপর ভর দিয়ে প্রণয়কে লোহার গেটের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনের পানে নজরাবন্দী করাবস্থায় দেখে কিছুক্ষণ এক ধ্যানে তার পানে চেয়ে ডান হাত দিয়ে বুকের বা পাশটায় হাত রেখে তারই পানে চেয়ে খানিকটা অস্ফুটস্বরে বলে,

“হায়!”

অতঃপর মনে মনে শুধায়,

“ম!রে গেলাম তো!”

বলেই চোখজোড়া বুজে নেয় চাঁদ।কিছুক্ষণের মাঝেই হঠাৎ করে কারো উপস্থিতি নিজের ডান পাশে টের পেয়ে চোখ খোলার পূর্বেই ঘাড়ে গরম নিশ্বাস সহ কানের কাছে প্রণয়ের ফিসফিসানো শুনতে পায় সে,

“ম!রেতো আমি প্রতিনিয়তই যাই মিস রেডরোজ”

হঠাৎ বলা প্রণয়ের এরূপ কথা শুনে ঝট করে চোখ খুলে তার পানে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকায় চাঁদ।অতঃপর কিছু বলতে উদ্যত হতেই প্রণয় তাকে আটকে দিয়ে বলে,

“কোনো কথা না”

বলেই চাঁদের কাছ থেকে সরে এসে তার হাত ধরে টেনে আগের তুলনায় কিছুটা কাছে এনে দাড় করিয়ে আবারও গিয়ে গেটের সাথে একই ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তার পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,

“তৃষ্ণা মেটাতে দিন”

বলেই পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকে চাঁদপানে।চাঁদের দূরত্ব তার থেকে কেবল দু’হাতের।

To be continued…..