#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৬৩.
“তোমার দৃষ্টির আরক্তিম লজ্জাই বলে দিচ্ছে বিরাট প্রেমে পড়েছো তুমি”
চাঁদের কথায় আরেকদফা লজ্জায় লালরাঙা হয় শিফা।সে ঠোট কামড়ে বলে,
“ইম…..না ভাবি এ….এমন কিছুই না”
“হয়েছে আর বলতে হবেনা।তোমার সময় আমিও পার করে এসেছি।এই দৃষ্টিজোড়া যে কাউকে ভীষণভাবে চায় তা তো দেখেই নিলাম।রিদির জনও আসছে।কিন্তু রুবা?রুবার কেউ নেই নাকি?”
রুবা বেশ ভাব নিয়ে বলে,
“আরেএ না ভাবি।ওসব প্রেমে ট্রেমে আমি পড়িনি।পড়বোও না কখনো।আমার দ্বারা এসব কখনোই সম্ভব না”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চাঁদ বলে,
“বলেছিলাম এসব আমিও।তবে প্রেমে পড়েছিলাম,ভয়ংকরভাবেই পড়েছিলাম”
“প্রণয় ভাইয়ার?”
রিদির কথায় প্রসঙ্গ পালটে চাঁদ বলে,
“মির ভাইয়াদের বলে দিয়েছি।আসছে তারা,সাথে আমার কয়েকটা ফ্রেন্ডকেও বলেছি।কারো কি সমস্যা হবে?”
রুবা বলে,
“একদমই না ভাবি।তুমি এখন রেস্ট নাও।আমরা সব করে নেবো,যাও”
বালিশে হেলান দিয়ে বিছানায় বসে আছে চাঁদ।ভাবছে কিছু জিনিসের গরমিল।মনে মনে বলছে,
“পাঁচটা বছর হলো অরণের জ্ঞান ফিরছেনা বিষয়টা কি তারা এখনও খতিয়ে দেখছেনা?এমন তো হওয়ার কথা না।তাকেতো আমি তেমন গুরুতরভাবে আ!ঘা!তও করিনি।তাহলে?কেউ কি চাইছেনা সে ফিরে আসুক?জ্ঞান তার ফিরুক?অরণ কি কিছু জেনেছিলো?কিন্তু কী?আবার সেসবকিছু ঘাটিয়ে দেখা টা কি আমার ঠিক হবে?ফের একই দশা হলে?যেহেতু ফিরেছি সবকিছু ঠিক করে দিয়ে তবেই যাবো।বহুকিছু যে করা লাগবে।কারো জীবনে প্রেম আনা লাগবে,তো কারো ভুল ভাঙাতে হবে।আর অরণকে ফেরাতে হবে।এত সহজেতো আমার ফিরে যাওয়া যাবেনা।শুরুটা কাকে দিয়ে করবো?”
ভাবতে ভাবতেই ফায়ানকে কল করে চাঁদ।কয়েক সেকেন্ড বাদে রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
“হ্যা বলো”
“তোমরা আসছোতো নাকি?”
“অরণ ভাইয়াকে একা রেখে কিভাবে আসবো বুঝতে পারছিনা”
“তোমার সাথে দেখা করাটা আমার জরুরী ফায়ান।তুমি মিরাপুকে ওখানে রেখে আসো”
“আপুতো থাকেই।তবে কিছু দরকার পড়লে”
“আজকের দিনটা ম্যানেজ করো প্লিজ”
“ঠিক আছে দেখছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা ছয়টা সাত মিনিট,
স্টেজে রাখা চেয়ার দু’টোর একটাতে বসে আছে রামিম।তার পাশেই বসা উশ্মির মামাতো ভাই আলফি।দুজনে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে আবার মাঝেমাঝেই উচ্চস্বরে হেসেও উঠছে।কমিউনিটি সেন্টারের একপাশের চেয়ারে একা একাই বসে আছে রায়হান।দৃষ্টি তার রামিমের পানে।আলফির সাথে তাকে এতটা প্রাণবন্ত দেখে কোথাও একটা সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভূত হচ্ছে তার।হঠাৎ ই পাশে এসে চাঁদ বসতেই তার পানে তাকিয়ে হাতে থাকা ফোনের লক খুলে মোবাইলে মগ্ন হয় সে।তা দেখে সামান্য হেসে চাঁদ বলে,
“আর ব্যস্ততা দেখিয়ে কী হবে ভাইয়া?জীবনে খুইয়েছেন তো বহুকিছুই।এবার নাহয় খোয়ানোর বদলে পাওয়া শুরু করুন”
মোবাইলে হাত চালানো বন্ধ করে চাঁদের পানে চেয়ে রায়হান বলে,
“কীভাবে পাবো চাঁদ?”
“একটা কথা বলি ভাইয়া।এই যে আমরা,মাঝেমাঝেই কতকিছু পাইনা।কেনো পাইনা জানেন?আল্লাহ চান না তাই।তিনি যদি চাইতেন আমরা তা পেয়েই যেতাম।যেহেতু তিনি তা আমাদের দেন নি,তার মানে সেই জিনিস টা আমাদের জন্য ছিলোনা।আবার যা পেয়েও আমরা হারিয়ে ফেলি অথবা আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে যায়।তা কেনো যায়?কারণ আল্লাহ চান না সেটা আমাদের নিকট থাকুক।তা আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়।আর এজন্যই তা আমাদের নয়।তার জন্য আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করা উচিত।এসব কেনো বলছি সেটাই ভাবছেন না?বলছি সেটাও।উশ্মি হয়তো আপনার জন্য কল্যাণকর ছিলোনা যার দরুন আপনার হতে দূরে সরে গেছে।আবার হয়তো রামিম ভাইয়ার জন্য কল্যাণকর বলেই তারা আজ একসাথে।তেমনিভাবে আপনার জন্যও কেউ হয়তো কল্যাণকর আছে যাকে পাওয়া আপনার এখনো বাকি।জীবনের সমস্ত কল্পনা জল্পনা,আকাঙ্খা-স্বপ্ন সবটাই হয়তো তার সাথেই পূরণ করা বাকি আপনার।যা পেলেন না তার জন্য আফসোস না করে,জীবনে আরও একবার সমস্তকিছু পাওয়ার ইচ্ছাকে তীব্র করুন ভাইয়া”
“আর সেটা কীভাবে করবো?”
“জীবনকে আগের ন্যায় উপভোগ করা শুরু করুন।যখন উশ্মির প্রতি ছিলোনা কোনো অনুভূতি।শুধুই মামাতো বোন হিসেবে দেখেছেন।তখনকার জীবনে ফিরে যান।মাঝেকার নয়-দশ বছর ভুলে না যেতে পারলেও মুছে ফেলার একটু একটু চেষ্টা করুন”
“আগের মতো সবটা হবে আদোতে?”
“চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?”
“কিন্তু কীভাবে?”
“রামিম ভাইয়ার সাথে স্বাভাবিক হন আগে।ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে”
“আর উশ্মির সাথে?”
“এখনো উশ্মিকে ভালোবাসেন আপনি?”
“না”
“এত সহজে বলে দিলেন?”
“হ্যা বললাম”
“কীভাবে বললেন?”
“যার মনে অন্য কেউ,যে অন্য কারোর।তাকে কেনোই বা ভালোবাসবো আমি?তাকে পাওয়া আমার পক্ষে তো সম্ভব না।আমি পেতেও চাইনা।এমন কাউকে কখনোই চাইনা যে আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলো”
“ব্যস এইটুকুই!এইটুকুই মনে রাখবেন।উশ্মি কেবলই আপনার বোন আর রামিম ভাইয়া বন্ধু তথা বেস্ট ফ্রেন্ড।সে হিসেবে উশ্মি বেস্ট ফ্রেন্ডের বউ।এইটুকু মনে রাখলেই হবে।আর জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিন।জীবনে আরেকবার প্রেম আসতে দিন।আমি চাই আপনার আবার প্রেম হোক,আরেকবার প্রেম হোক।এবং কঠিন ভাবেই হোক!যাকে ছাড়া আপনার এক মুহুর্ত চলবেনা।যাকে না পেলে আপনি দুনিয়া ল!ন্ডভ!ন্ড করে দেবেন।যাকে আপনার যেভাবেই হোক পেতেই হবে।তার ক্ষেত্রে কোনোকিছুই কম্প্রোমাইজ করা যাবেনা।তাকে আপনার লাগবে মানে লাগবেই!জীবনে আপনার এমনই প্রেম আসুক”
“আবার কারো প্রেমে পড়া সম্ভব কি?”
“ভুল মানুষে প্রেম নিবেদন করে প্রেমকে ভুল গণ্য করার মতো ভুল আর করবেন না।প্রেম সুন্দর,সত্যিই সুন্দর।যদি জীবনে প্রেম নিয়ে আসে সত্যিকারের প্রেমমানবী”
“সেই প্রেমমানবীকে আদোতে পাবো?”
“প্রেমমানবী প্রেম নিয়ে আপনার দুয়ারে হাজির হলে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েন,নয়তোবা দুয়ার হতেই কেউ ছিনিয়ে নিলে ফের চিত্ত ভগ্ন হবে আপনার”
এতটুকু বলেই চাঁদ মৃদু হেসে সেখান থেকে সরে আসার আগ মুহুর্তে বলে,
“প্রেমমানবীকে সাইডে রেখে বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে বহু বছরের বুকের যন্ত্রণার উপশম করান ভাইয়া”
অতঃপর আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে আসে মিরের কাছে।সেখানে রিহাসহ রবিনও উপস্থিত।বহুবছর পর রবিনকে দেখার পর চোখ সামান্য সিক্ত হয়ে উঠলেও তা সামলে রবিনকে উদ্দেশ্য করে চাঁদ বলে,
“কেমন আছো ভাইয়া?”
চাঁদের কন্ঠে সামান্য কেপে উঠে তার পানে তাকিয়ে রবিন চোখদুটো অসহায়ের ন্যায় ছোট করে বলে,
“ভালো আর রাখলেই কবে?”
“কাউকে ভালো রাখা না রাখা সবটাই আল্লাহর ইচ্ছা ভাইয়া”
“সেদিন এমন টা না করলে কি তুমি পারতে না?”
“সেদিন তো তোমার বন্ধুও তার নোংরা কথাগুলো না বললে পারতো।তাহলেতো এতকিছু খোয়াতে হতোনা আমায়,না তোমাদের”
তেজী গলায় রবিন বলে,
“কী খুইয়েছো জীবনে?উলটো চোরের মতো পালিয়ে গিয়েছো”
“অথচ তোমরা জানার চেষ্টাটুকু করোনি সেদিন অরণের অবস্থা তেমন হয়েছিলো কী করে।কেবল এক জিনিসেই আটকে আছো চাঁদ অরণের মাথায় নাকি বা!রী দিয়েছে।ব্যস এইটুকুতেই তুমিসহ তোমরা সকলে থমকে গিয়েছো।অরণের শরীরের প্রতিটা ক্ষ*তও কি তোমাদের জানান দেয়নি বন্ধুর করুন অবস্থা কেনো হলো?মেনেই নিয়েছো সবটা আমি করেছি।কেনোই বা করবো?কী হবে এসব করে?”
রিহা দুজনকে থামাতে গেলে রবিন বাধা দিয়ে বলে,
“চুপ থাক তুই”
অতঃপর চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমরাতো জানার চেষ্টা করিনি।তুমিই বলে দাওনা কী হয়েছিলো সেদিন?তুমি কেনো অরণের সাথে অমন করে পালিয়ে গেলে?”
“পুরোনো জিনিসে পড়ে না থেকে নতুন জিনিস নিয়ে ভাবো।আমি মির ভাইয়া আর রিহাপুর সাথে এই ব্যাপারেই আলোচনা করতে এসেছি”
“মানে?”
রিহার কথার জবাবে চাঁদ বলে,
“আপু আমায় বিশ্বাস করো,আমি ইচ্ছা করে সেদিন অরণের সাথে অমন করিনি।করাটা জরুরী ছিলো বলেই করেছিলাম।তবে সেই মাথায় আ!ঘা!ত ব্যতীত তার শরীরের একটা ক্ষ*তও আমার দ্বারা হয়নি আপু বিশ্বাস করো।আরেকটা কথা,আমি সেদিন অরণকে ততটা জোরেও আঘা!ত করিনি যার দরুন তাকে এত বছর কোমায় থাকা লাগবে।আর আমিতো আ!ঘা!ত করেছিলাম কপালে।তা কপাল থেকে মস্তিষ্কে কী করে গেছে আমার সত্যিই জানা নেই।মস্তিষ্কে না লাগলে কেউই কোমায় যায়না।হয় কেউ মস্তিষ্কে আ!ঘা!ত করেছিলো নাহয় কেউ ইচ্ছে করে অরণের অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে।তাই বলবো অরণকে সাবধানে রাখো।বিশ্বস্ত মানুষই সর্বোচ্চ ধো*কা দেয় ভাইয়া।আর তুমি ভাইয়া, তুমি মিরাপুকে সাবধান করে দিও”
শেষের উক্তিটুকু মিরকে উদ্দেশ্য করেই করে চাঁদ।তখনই রবিন বলে,
“কিন্তু সেদিন তোমার পালানোর মুহুর্তে প্রণয়সহ আমরা সকলেই উপস্থিত ছিলাম।স্পষ্ট তোমায় লাঠি ফেলে দৌড়ে পালাতে দেখেছি।সেখানে তুমি ব্যতীত আর কেউই ছিলোনা”
“শুধু লাঠি ফেলতে দেখেছো?আ!ঘা!ত করতেও দেখোনি?তবে কোন ভিত্তিতে আমায় এত বড় বড় অপ!বাদ তোমরা দাও বলবে একবার?আর তোমাদের বন্ধুতো আরও একধাপ এগিয়ে।তাকে বলে দেবে আমার থেকে যেনো দূরে থাকে।আমি তার চেহারাটুকু পর্যন্ত দেখতে চাইনা”
এ পর্যায়ে এসে মির তার মুখ খুলে,
“যদি তুমি সেদিন এমন করোই নি তবে কে করেছিলো সবটা?”
“কে না।সেখানে কারা ছিলো।কারা মানে বোঝো?কারা অর্থাৎ কে কে করেছিলো!সে যাইহোক,একটা কথা স্মরণে রাখবে।আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।একদিন সবটা উদঘাটিত হবে অরণও ঠিক হবে।অরণকে ঠিক হতেই হবে।তোমরা যদি ভেবে থাকো আমার জন্য অরণের এই দশা তবে আমিও বলে দিচ্ছি অরণকে ঠিক করতে আমার জানপ্রাণও যদি চলে যায় আমি তাই করবো।যার জন্য নিজের প্রাণ বেঁচেছে,তার প্রাণ চলে যাক তা আমি কস্মিনকালেও ভাবিনা”
চাঁদ কথাগুলো বলেই হাটা ধরে স্টেজের উদ্দেশ্যে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রায়হান স্টেজের কাছে এসেই বুকে দু’হাত গুজে আলফির পানে তাকাতে তাকাতে বলে,
“দেখি আলফি সরতো”
আলফি বিরক্ত হয়ে বলে,
“দেখছিস না কথা বলছি?”
“দেখছি বলেইতো সরতে বলছি”
“সামনের কোনো চেয়ারে গিয়ে বস।আমার বোনজামাইর সাথে আমার বেশ গুরুত্বপূর্ণ কথা চলছে জ্বালাস না”
আলফির হাত ধরে আচমকাই তাকে টেনে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিজে তাতে বসে পায়ের উপর পা তুলতে তুলতে রায়হান বলে,
“তোর বোনজামাই হলে আমারও কিন্তু বোনজামাই ই হয়।অ্যান্ড অলসো বেস্টফ্রেন্ড।রিমেমবার হা?”
কপাল কুচকে আলফি বলে,
“তো এতবছর বন্ধুত্ব কি ঘাস কাটতে গিয়েছিলো?”
“কোথায় গিয়েছিলো,কী গিয়েছিলো তা তোর জানা লাগবেনা।যদি বসতেই হয়,আয় আমার কোলে বস”
বলেই রায়হান তার হাটুতে উঠানো পা নামিয়ে দেয় ফ্লোরে।তা দেখে কপাল কুচকে নাক ছিটকে আলফি বলে,
“সর শা*লা!”
বলেই প্রস্থান নেয় সে জায়গা।রায়হানের পানে তাকিয়ে থেকেই সমস্তকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলো রামিম।এখনো তার পানেই তাকিয়ে।নিজের দিকে রামিমকে এভাবে তাকাতে দেখে রায়হান তার পাঞ্জাবির কলার ঝাকিয়ে বলে,
“আই নো আয় আম ড্যাম হ্যান্ডসাম বাট আমার দিকে তোর এভাবে তাকানো কিন্তু সাজেনা রামিম।তোর এই দৃষ্টির জন্য আমার বোনই যথেষ্ট।সো স্টে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড ফর মাই সিস্টার,ডোন্ট অ্যাক্ট লাইক আ গেই”
তৎক্ষণাৎ কপাল কুচকে রামিম বলে,
“জাস্ট শাট আপ অ্যান্ড সে সূর্য আজ কোন দিক দিয়ে উঠেছে?”
“তোর চোখ নেই?না থাকলেও সমস্যা নেই তোর হবু বউয়ের চোখে দেখে নিস”
“তোর কী হয়েছে বলবি?”
হঠাৎ করেই রামিমের দু’হাত নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে রায়হান বলে,
“আমাকে কি মাফ করা যায় রে?সব ভুলগুলো কি ভুলে যাওয়া যায়?”
রায়হানের চোখের দিকে চোখ রাখতেই রামিম দেখতে পায় বন্ধুর চোখ সিক্ত,লালচে হয়ে আছে আঁখি জোড়া।তৎক্ষনাৎ রামিম বলে,
“তুই কি সিক রায়হান?শরীর খারাপ লাগছে?এসেছিস কেনো তবে?চল তোকে আমি বাড়ি নিয়ে যাই”
বলেই উঠতে নিলে রায়হান সামান্য হেসে রামিমের হাত চেপে তাকে বসিয়ে বলে,
“হেই স্টপ।করছিস কী?আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ডের এংগেজমেন্ট আর আমি থাকবোনা ভাবিস কী করে?”
রায়হানের কথা শুনতেই রামিম তার চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে রায়হানকেও টেনে তুলে দাঁড়িয়ে আকস্মিকভাবেই জড়িয়ে ধরে।নয় বছর!ঠিক নয় বছর পর একে অপরকে আলিঙ্গন করে চোখজোড়া বুজে নেয় দুজনেই।পিঠে শক্ত করে হাত রেখে দাতে দাত চেপে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে কান্না আটকাবার প্রয়াস।তবে আজ তারা ব্যর্থ।দাত কামড়ে ধরে একফোটা জল কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া থেকে মোটেও আটকাতে পারেনা তারা।জলবিন্দুটুকু গিয়ে পড়ে দুজনেরই ঘাড়ের উপর।অতঃপর সর্বাঙ্গ শিউরে উঠে তাদের।শরীরের প্রতিটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়।হৃদয় শীতল হয়,বুকের ভেতরকার তীব্র শব্দ আস্তেধীরে কমে আসে।ঠিক এমতাবস্থায়ই স্টেজের নিচ হতে কয়েকটা ফটো ক্লিক করতে করতে এক মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“ইয়েএএএ রামিম ভাই আর রায়হান ভাইয়ের প্যাচাপ হয়ে গেছে।দ্যাটস দ্যা বিগেস্ট অ্যাচিভমেন্ট অফ টুডায়।ইভেন মোর দ্যান দ্যা রিং সেরিমনি।ইয়েহেএএইই!”
বলেই নাচতে নাচতে দৌড়াতে লাগে মেয়েটা।হাতে ক্যামেরাসহই চাঁদের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
“এই চাঁদ ভাবি,চাঁদ ভাবি দেখো কী সুন্দর ছবি তুলেছি আমি!আমার এন্ট্রি কত সঠিক দেখেছো?”
দৌড়ে চাঁদকে ধরতে গেলেই চাঁদ বায়ে চেপে গিয়ে বলে,
“আস্তে হুরায়রা আস্তে!নিজেও পড়বে আমায়ও ফালাবে”
চাঁদ সরে যেতেই হুরায়রা নিজেকে সামলাতে না পেরে ফ্লোরে স্লিপ খেয়ে সামনের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়।নিজেকে সামলামো যাচ্ছেনা আর।এই বুঝি হুমড়ি খেয়ে থুতনী তার কা!টলো বলে!
সবেমাত্রই সেন্টারের প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছিলো ফায়ান।আকস্মিক কোনো মেয়েকে তার দিকে ধেয়ে আসতে দেখে চোখ তার থমকে যায়।সে দাঁড়িয়ে পড়ে সেভাবেই।না পারছে পেছাতে,না পারছে এগোতে।মেয়েটাকে না ধরলে মেয়েটাও পড়বে সাথে নিজেও পড়বে ভেবে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে ধরতে গেলেও ব্যর্থ হয় সে।মেয়েটা এসে তার সাথে এমনভাবে ধাক্কা খায় যে তার থুতনীতে মেয়েটার কপাল লেগে ঠোট দাতের সাথে লেগে ঠোটের ভেতর কে!টে যায় তার।সেইসাথে দুজনেই গিয়ে পেছন দিকে ফ্লোরের উপর পড়ে যায়।ঠিক ফায়ানের বুকের উপর উপুড় হয়ে পড়েছে হুরায়রা।দু’হাত তার ফায়ানের পেট জড়িয়ে।যেনো তাকে ছেড়ে দিলেই মেয়েটা পড়ে গিয়ে ম!রে যাবে নয়তো আহত হবে।
To be continued…..