#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৭৮.
আজ দুই রাত পুরো একদিন পর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে চাঁদ।মুখ তার মলিন,শুকনো।ভেতরে কোনো অনুভূতিরা সাড়া দেয়না।ঠোটজোড়াও নড়েনা,দৃষ্টি তার স্থির হয় দূর রাস্তার পানে।হেলদুলহীন এক মানবীরূপে কেবলই যে যেভাবে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে নিচ্ছে সেভাবেই সে হেটে চলেছে।আকস্মিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হকচকিয়ে উঠে চাঁদ।অতঃপর করুন চাহনী তাদের পানে নিক্ষেপ করতেই হরেক রকমের প্রশ্ন কানে আসে তার।একজন মহিলা সাংবাদিকের প্রশ্ন,
“তো মিস চাঁদ?নাকি বলবো মিসেস চাঁদ রুহায়ের প্রণয়?আপনাদের যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো তারপর বিয়ে তা লুকিয়েছেন কেনো?”
আরেকজনের প্রশ্ন,
“আপনারা দু’জনই কিন্তু মেডিকেল এডমিশন টেস্টের প্রথম হওয়া দুই অসাধারণ ব্যক্তি।বিয়ে যখন করেছেনই জানান নি কেনো?”
“কেনোই বা আপনার স্বামী সার্জন রুহায়ের প্রণয় আপনার নামে মামলা করলো?এখন নাকি শোনা যাচ্ছে সবটাই মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং?”
“গাড়ি নাকি আগে থেকেই ব্রেকফেইল ছিলো?”
“তবে কে করলো এটা?কেনোই করলো?আপনাদের মাঝে কীসের ঝগড়া?আপনাদের নিয়ে নানান ধরণের গুঞ্জনই কানে আসে তবে সত্যি কোনটা মিসেস চাঁদ?”
“আপনাদের মধ্যকার সম্পর্ক কি ভালো নয়?”
“আপনিই বা কেনো হঠাৎ ঢাকা মেডিকেল থেকে টিসি নিয়ে চলে গেলেন?সকলের স্বপ্ন থাকে ঢামেক।আপনারও নিশ্চয়ই ছিলো?”
“তবে কি ধরে নেবো আপনাদের মাঝের সমস্যার কারণেই আপনি ঢাকা ছেড়েছিলেন?”
এরকম বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নে চাঁদের মস্তিষ্কে চাপ পড়ে এবং সে দুই হাতে তার কান চেপে ধরে ভাইকে বলে,
“ভাই আমায় এখান থেকে প্লিজ নিয়ে চল।দূরে কোথাও নিয়ে চল”
হঠাৎ করেই চৈত্রের হৃদয় ছলাৎ করে উঠে।মনে পড়ে সে রাতের কথা।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বোনের হাত ধরে কোনোমতে সকলের সাহায্যের সহিত বোনকে নিয়ে একটা ট্যাক্সিতে উঠে সে।একে একে উঠে সকলেই।অতঃপর গাড়ি ছুটে চলে তার আপন গতিতে পেছনে হাজারো প্রশ্নকে উপেক্ষায় ফেলে রেখে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
উশ্মি চাঁদ আর প্রণয়ের ডিভো!র্স পেপার নিয়ে হাজির হয় চৌধুরী বাড়িতে।এসে বেশ তেজী গলায় ‘প্রণয় ভাইয়া,প্রণয় ভাইয়া’ বলে ডাকার পরেও যখন প্রণয়কে দেখতে পায়না তখনই সে ছুটে চলে উজানের রুমের দিকে।অতঃপর উজানকে বেশ অন্যমনস্ক হয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাইয়ের পেছনে গিয়ে তার কাধে হাত রাখতেই ঈষৎ কাপে উজান।কেপে উঠতেই পিছু ঘুরে উশ্মিকে দেখে আকস্মিক নিচু হয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরে ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।উজানের আচানক করা কান্ডে বেশ অবাক হয় উশ্মি।তবে কিছু বলেনা।সেভাবেই ভাইকে জড়িয়ে বলে,
“কী হয়েছে ভাই আমার?মন খারাপ তোর?”
উজান জবাব দেয়না।বেশ কিছুক্ষণ বোনকে জড়িয়ে রেখে নাক টেনে ডান হাত দ্বারা চোখ মুছে নিজেকে বেশ স্বাভাবিক উপস্থিত করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে।কিয়ৎক্ষণ বাদে উশ্মিকে ছেড়ে বেশ সহজ-সরল হাসি দিয়ে সে বলে,
“আরেহ আমার কথা বাদ দে।চাঁদ ভাবি ঠিক আছে তো?ভালোয় ভালোয় ভাবিকে ভাবির বাসায় পৌঁছেছিস?পথে কোনো ঝামেলা হয়নিতো?”
“ভাবি ঠিক আছে।তুই বল তোর হঠাৎ কী হয়েছে?”
উজান অন্যদিকে চেয়ে বলে,
“হ্যা?আমার আবার কী হবে?আ’ম ফাইন।অলরাইট”
ভাইয়ের দৃষ্টি খেয়াল করে ভাইয়ের হাত ধরে তাকে তার বিছানায় বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসে তার থুতনি ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে উশ্মি বলে,
“বিয়ে হয়ে গেছে বলে পর হয়ে গেছি তা কিন্তু নয় উজানভাটা।বল কী হয়েছে?কী নিয়ে দুঃখ পেয়েছিস?”
উশ্মির প্রশ্নেও উজান কিছু বলেনা।চুপ হয়ে থাকে বলে ফের উশ্মি বলে,
“ক’দিন বাদে পড়াশুনা শেষ হবে মানে এই নয় তুই খুব বড় হয়ে গেছিস বা আমার বড় তুই।এবার বল কী হয়েছে?কী নিয়ে ডিপ্রেসড তুই?বোন তার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো”
“তুইতো চাঁদ ভাবিকেই ছাড়াতে পারলিনা।আমায় কী সমাধান দিবি?তুই না ব্যারিস্টারি করেছিস?ইংল্যান্ড থেকে পড়ে লাভটা কী হলো তোর?”
ভাইয়ের প্রশ্নে কপাল কুচকে উশ্মি বলে,
“কোনো কিছু করার আগেইতো শুনি বাচ্চার মা-বাবা নাকি নিজের ভুল স্বীকার করে চাঁদকে ছাড়িয়েছেন।আর বাচ্চার মা নাকি নিজেও অ্যাডভোকেট সো আমি আর কীই বা করবো?”
“হ্যা তুই আর কীই বা করবি?আর তোর কি মনে হয় চাঁদ ভাবিকে এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছে ওরা?”
“মানে?”
“অতো মানে টানে বোঝাতে পারবোনা।এখানে কেনো এসেছিস তা বল”
“তার আগে আমায় বল তোর কী হয়েছে?”
“ভালো লাগছেনা কিন্তু আপু।মেজাজ বিগড়াস না”
“কী হয়েছে?”
এবার বেশ উচ্চস্বরে উজান বলে,
“আরেএ সব মেয়েই ছলনাময়ী।একচুয়ালি ছেলেরাও।কোনো রিলেশনই টিকেনা।প্রেম ট্রেমই আসলে করা উচিত না”
কপাল বেশ কুঞ্চিত করে উশ্মি বলে,
“হয়েছে কী?এসব বলছিস কেনো?”
“কিছুই হয়নি।নিজের কাজ সেড়ে যাতো বোন!”
“মেয়েদের ছলনাময়ী বললি কেনো তুই?কে তোর সাথে ছলনা করেছে?”
“ছলনা করেনি কিন্তু করতে কতক্ষণ?আফটার অল আমার নিজের বোনই তো…..”
বলতে গিয়েও থেমে যায় উজান।আর উশ্মি বিস্ফোরিত নয়নে ভাইয়ের পানে চেয়ে বলে,
“তুই?”
“কী আমি?মিথ্যা তো বলিনি।আর ঐদিকে প্রণয় ভাই?কী না করলো।এবং কেনো করলো?আমার ভাইতো এমন নয়।আমি মানছি ভাই যা যা করেছে ঠিক করেনি।কিন্তু ভাবিরও কি এতে দোষ নেই?শুধু শুধুতো কেউ কারো পিছে লাগেনা তাইনা?অথবা বলতে পারিস তালি একহাতে কোনোদিনই বাজেনা।হয় দু’জনে সমান দোষী নয়তো কারো বেশি দোষ কারো বা কম।আমরা শুধু প্রণয় ভাইয়ের সাইড টাই দেখছি।চাঁদভাবি কী করেছে কী করেনি তা কিন্তু জানিনা।আর চাচ্চু কি করলো?ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিলো?আই মিন হোয়াই?আমি মানছি ভাই ভুল করেছে বাট করেছে টা কেনো এটাতো ভাইকে কেউ জিজ্ঞেস করলোনা।ভাবিই বা কেনো কাউকে কিছু বলেনা?ভাবির কি উচিত না ভাইয়ের সাথে সব ক্লিয়ার করা?”
উশ্মি বেশ রেগে যায় এসব কথায়।সেও উচ্চস্বরে বলে,
“জাস্ট শাট আপ উজান।যা জানিস না তা নিয়ে একদমই কথা বলতে আসবিনা”
“ওহ তুইতো জেনে সব উল্টায় ফেলছিস তাইনা?অবশ্য কার সাথে কীই বা বলছি আমি।যে নিজেই একজনের জন্য আরেকজনকে…..”
“উজান!”
উশ্মির চেচানোতে উজান যেনো আরও ক্ষেপে গেলো।সে বললো,
“কী উজান হ্যা কী উজান?উচিত টা বললেই গায়ে লাগে কেনো সবার?একচুয়ালি সব মেয়েই এক।তারা কেবলই ধো*কা দিতে জানে।নিশ্চয়ই ভাবিও ভাইকে….”
উজানকে মাঝপথে আটকে দিয়ে উশ্মি বলে,
“যা জানিস না তা নিয়ে মোটেও বলবিনা উজান!”
“আমিও তো তাই বলছি যা জানিস না তা নিয়ে বলিস না।আমি জানিনা ভাবির সম্পর্কে তুই কী জানিস বা কী জানিস না।তবে তোর হাতে যে ডি!ভোর্স পেপার সেটা আমি জানি।এবং তোরা সকলে যে তাদের ডি!ভোর্স করাতে চাচ্ছিস তাও জানি।কিন্তু একবারও কি মাথায় আসলোনা আমাদের প্রণয় ভাইয়ার সাইড টাও দেখা উচিত?তার ভাগের সমস্যাটুকুও জানা উচিত?কিন্তু না তা তোরা করবিনা!তোরা ব্যাস একটা জিনিসই জানিস সেটা হচ্ছে মেয়েদের সিমপ্যাথি দেওয়া।কেন রে ভাই ছেলেরা কাদেনা বলে কি তাদের মন নেই?তারা কি ব্যথা পায়না?আমি নিজে প্রণয় ভাইয়াকে রাস্তায় রাস্তায় ভাবির জন্য ঘুরতে দেখেছি।চাচ্চুর কাছে অপমানিত হতে দেখেছি।আর সবচাইতে বড় কথা হলো সে যদি ভাবির ক্ষ*তিই চাইতো তবে নিজে গাড়ির মধ্যে থাকতোনা অথবা ভাবিকে প্রোটেক্ট করতে গিয়ে গাড়ির সকল কাচ নিজের শরীরে বিঁধতে দিতোনা।এখনো লোকটা হয়তো বউকে কীভাবে মানানো যায় সেই চিন্তায়ই তৎপর।কোথায় আছে তাও জানিনা”
“তুই কেবল প্রণয় ভাইয়ার টাই ভাবছিস।ভাবির টা ভাবছিস না”
“কে বলেছে ভাবছিনা?আমিতো জানিনা তাদের মাঝে কী হয়েছে।তবে দুজনেরই উচিত দুজনের পক্ষে বিপক্ষে কথা বলা।একে অপরকে সবটা জানানো।যেহেতু দুজনেই ইগোয়েস্টিক।কেউই কাউকে দেখতে পারেনা,তাদের এ জীবনে সমাধান হবেনা।আর তার জন্য সাফার করতে হচ্ছে আমায়”
“মানে?তোর কী হয়েছে?কেনো তোকে সাফার করতে হচ্ছে?”
“একচুয়ালি ভাইয়ের জন্য না তোর জন্যও।তোর জন্যই হচ্ছে সব।তুই সবকিছুর মূল”
কপাল কুচকে উশ্মি বলে,
“কী হয়েছে বলবিতো?”
“দেখ বোন মন মেজাজ সত্যিই খারাপ।তুই যাতো আমার সামনে থেকে,ভাল্লাগছেনা”
“যাবোনা বল”
ঘনঘন শ্বাস নিয়ে উজান বলে,
“গার্লফ্রেন্ড প্যারা দিচ্ছে!প্যারা বুঝিস?বিয়ে করার প্যারা।তার নাকি বিয়ে ঠিক করে ফেলছে।আমি নাকি স্টিল কু!লা!ঙ্গার।তার উপর দিয়ে এতকিছু হচ্ছে।আমার ভালো লাগছেনা বিশ্বাস কর!তোকে,রামিম ভাই,রায়হান ভাই,প্রণয় ভাই,চাঁদ ভাবি আর ইয়ানাকে এখন প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।তোদের একেকজনের কাহিনী আর মজা লাগছেনা আমার।তোরা পেয়েছিস টা কী?কাউকে ভালোভাবে বাঁচতে দিবিনা নাকি?প্রেমের প্রতি তোরা এতটা বিতৃষ্ণা কারো মাঝে কী করে সৃষ্টি করাতে পারিস বুঝিনা আমি!তোদের সকলকে দেখলে যে কারোরই প্রেম করাতো দূর বিয়ের দিকেও যেতে ইচ্ছে করবেনা।চাঁদ ভাবি আর ভাইয়ের বিয়ের কতগুলো মাস হয়েছে।প্রায় একবছর হয়ে যাবে।এতদিন কত মাখো মাখো প্রেম দেখিয়েছে আর এখন?কী করছে এসব?তুইও সবকিছুতে সায় দিচ্ছিস।এমনকি পেপারসও বানিয়ে এনেছিস।এই যাতো তুই!তোকে একটুর জন্যও দেখতে ইচ্ছা করছেনা আমার।প্লিজ গো!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেশ ক্লান্ত ভঙ্গিতে মিরের বাসার সামনে হাজির হয়েছে প্রণয়।অতঃপর ভেতরে গিয়ে কলিংবেল চাপতেই মির নিজে এসেই দরজা খুলে প্রণয়কে দেখে কপাল কুচকে নেয়।কিয়ৎক্ষণ তার পানে তাকিয়ে থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগে সে।ফর্সা মুখে মলিনতার ছাপ।গালভর্তি হালকা হালকা দাড়ি।দুই চোখের নিচেই কালচে দাগ পড়ে গেছে।ঠোট দু’টো শুকিয়ে ফেটে চৌচির!চুলগুলো এলোমেলো ধূলোবালি পড়া।গায়ের শার্টেও ময়লার ছড়াছড়ি।বেশ ক্লান্ত ভঙ্গিতেই প্রণয় বসে পড়ে মিরের বাসার দরজার সামনে।অতঃপর ঘাড় ঝুলে পড়ে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।সেভাবে থেকেই সে বলে,
“দোস্ত!আমায় তোর বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য থাকতে দিবি প্লিজ?বাবা আমায়…..”
প্রণয়ের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই মির বলে,
“সবই জানি আমি।তবে তোর জন্য আমার বাড়িতে কোনো জায়গা নেই।একজন অ!পরাধীর জন্য কারো বাড়িতেই কোনো জায়গা থাকতে পারেনা।সো আমার বাড়িতেও নেই।ইউ মে গো নাও”
বেশ অসহায় ভঙ্গিতে ঘাড় তুলে বন্ধুর পানে তাকাতেই পাশে করুনভাবে মিরের পাশেই মিরাকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে কিছু বলতে নিলে মিরাও বেশ গম্ভীরভাবে বলে,
“সরি বাট আমার কিছুই করার নেই।মিরের উপরে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।ও আমার ভাই।তাছাড়া তোকে আমি কখনোই বলিনি বিনা অপরাধে কাউকে শাস্তি দে।তুই তাই করেছিস।যদি তুই তার করা অপরাধের জন্য শাস্তি দিতি তাও মানা যেতো বাট!আই আম সরি রে!কান্ট ডু এনিথিং ফর ইউ”
মিরার পানে চেয়ে থেকে বেশ হতাশ ভঙ্গিতে প্রণয় বলে,
“অন্তত এক গ্লাস পানিতো খাওয়াবি প্লিজ?”
প্রণয়ের বলতে দেরি অথচ মিরার কর্মে তৎপর হতে দেরি হলোনা।সে বেশ ক্ষীপ্র গতিতেই ছুটে চললো বন্ধুর জন্য পানি আনতে।অতঃপর প্রণয়ের দিকে তা এগিয়ে দিতেই সেকেন্ড তিনেকের মাঝেই সে তা সম্পন্ন করলো।এবং পানি পান করে উঠতে নিলেই শুনতে পেলো মিরের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“যেভাবে এখানে ঠাই পাস নি,কোথাও পাবিনা আর।তাই নিজের এবং অন্যের সময় অপচয় করে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াস না”
To be continued…..
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৭৯.
মাস দুয়েক পরের কথা,
নিজের কেবিনে বসে কিছু একটা নিয়ে বেশ ধ্যানমগ্ন ছিলো প্রণয়।এমতাবস্থায় তার কেবিনের দরজায় টোকা পড়তেই ধ্যানভগ্ন হয় তার।আর সে শুনতে পায় পরিচিত এক কন্ঠস্বর,
“মে আয় কাম ইন ডক্টর প্রণয়?”
অতি পরিচিত কন্ঠস্বর প্রায় বহুবছর পর বোধহয় শুনলো প্রণয়।তবে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া সে দেখালো না।সেই পুরোনো স্বভাবটা যেনো আবারও জ্বলজ্যান্ত হয়ে উঠেছে।সেই পুরোনো ভাব,পুরোনো গাম্ভীর্যতা।বেশ গম্ভীর কন্ঠে সে বললো,
“কাম”
অনুমতি পেতেই প্রণয়ের কেবিনে হাজির হয় আহিন।চেয়ারে বসে থেকেই আড়চোখে আহিনের পানে তাকায় প্রণয়।অতঃপর তার সামনে এসে দাড়াতেই সে আহিনকে বলে,
“সিট অ্যান্ড সে হাউ ক্যান আয় হেল্প ইউ?” [বসো এবং বলো আমি তোমায় কীভাবে সাহায্য করতে পারি?]
“তুই না,আমি তোকে সাহায্য করতে এসেছি।শুনলাম তুই আর চাঁদ নাকি ম্যারিড?”
লম্বা শ্বাস ফেলে প্রণয় ধীরকন্ঠে বলে,
“পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিনা আহিন।হার্টের কোনো প্রবলেম হলে বল আদারওয়াইজ যা,তোর সাথে আর কোনোপ্রকার তর্ক করতে চাচ্ছিনা”
“তর্কের বিষয় সর্বদাই আমার বাবা ছিলেন।তবে এখন তুই নিজেও জানিস আমি আমার বাবার মতো পলিটিশিয়ান নই।তাছাড়া ওসব বিষয়ে কথা বলতে আমি আসিও নি।আর হার্টের প্রবলেম বললিতো?নিজের হার্টের চিকিৎসা করা আগে।তুই না হার্ট স্পেশালিস্ট?তাহলে নিজেরটার কেনো করতে পারছিস না?যেই মেয়েতে আটকেছিলি তাকে পেয়েও তুই হারালি?অথচ আমি এত চেয়েও তাকে পেলাম না”
চোয়াল শক্ত করেও শান্ত কন্ঠে প্রণয় বলে,
“তুই আমার ওয়াইফের সম্পর্কে বলছিস আহিন”
আহিন মৃদু হেসে বলে,
“হ্যা হ্যা তোর ওয়াইফ।অবশ্যই তোর ওয়াইফ বাট তোর এই অবস্থা কেনো?তোকে চিনতে প্রথমে বেশ অসুবিধা হয়েছে আমার”
“খেজুড়ালাপ করতে এসেছিস তুই?আমার আরও রোগী আছে তাছাড়া হুট করেই কোনো সার্জারী পড়ে গেলেও যাওয়া লাগবে আমার”
“তুই কি ভাবিস কোনো খোঁজ রাখিনি আমি?পুলিশি জিনিসপত্র সবই কানে আসে আমার।আর আমি এটা ভেবেই পাচ্ছিনা তুই কী করে চাঁদের নামে মামলা দিয়েছিলি?”
“তোকে তো বললাম পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না আমি”
“বিয়ে হয়েছে ক’মাস?”
“একবছর এক মাসের মতো”
“অথচ বউয়ের সাথে তা সেলিব্রেট করতে পারলিনা?বউয়ের সাথে চাঁদ কিন্তু প্রেমিকাও ছিলো তোর”
“সমস্যা কী তোর?”
“না কোনো সমস্যাই নেই।আমার সাথে চল তো একটু”
“কোথায় যাবো?এখন আমি কোথাও যেতে পারবোনা,ভালো লাগছেনা”
“যেতে তো তোকে হবেই।স্বেচ্ছায় যাবি নাকি আমি দলবল নিয়ে আসবো?”
“কি!ডন্যাপিং করবি?”
বেশ উচ্চশব্দে হেসে আহিন বলে,
“বলতে পারিস তাই ই!”
“দেখ আহিন আমার ভালো লাগছেনা”
বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলে শুনতে পায় আহিনের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“বিয়ে করছি আমি”
বাক্যটা প্রণয়ের নিউরনে গিয়ে মস্তিষ্ক অব্দি পৌঁছাতে পৌঁছাতেই কপালে খানিক ভাজ পড়লো তার।অতঃপর সে বললো,
“হোয়াট?”
বেশ গম্ভীরভাবেই আহিন বললো,
“হিম”
“আরেকবার বলতো?”
বিরক্ত হয়ে আহিন জবাব দিলো,
“যা শুনেছিস তাই ই।অতো বারবার বলতে পারবোনা”
“তুই না তাকে ভালোবাসতি?”
খানিক হেসে আহিন বলে,
“তো তুই বলতে চাচ্ছিস তোর বউকে স্টিল আমি ভালোবাসি?”
নিজের প্রশ্নে নিজেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে প্রণয়।অতঃপর আমতা আমতা করে বলে,
“ইম…..না মানে সেটা বলিনি।অফ কর্স আমি ওসব বলবোনা।আমি বললাম মানে বুঝিস নি তুই!”
“আমার সাথে চল”
কথাখানা শুনতেই প্রণয় কপাল সামান্য কুঞ্চিত করতেই আহিন ফের প্রণয়কে বলে,
“একদিন গেলে কিছু হবেনা।আর্জেন্ট হলে চলে আসিস।আপাতত চল।আমাদের আগের প্লেসে আড্ডা দেবো”
অতঃপর কোনো বাক্য ব্যয় না করেই প্রণয় আহিনের সাথে হাটা ধরে তারই জানা তবুও যেনো অজানা এক গন্তব্যে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সবেমাত্র এয়ারপোর্টে এসে গাড়ি থেমেছে চাঁদের।সে গাড়ি থেকে নামতেই তার সাথে নামে উশ্মি এবং চৈত্রও।বেশি কেউ আসেনি তবে চৈত্র এখন আর বোনকে একা ছাড়তে ইচ্ছুক নয়।হঠাৎ কোথা থেকে কোন বিপদ এসে হানা দেয়?দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল নেমেছে মাত্রই।ঘড়িতে বাজে হয়তো তিনটার এপাড় ওপাড়।ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই।চাঁদের হৃদস্পন্দন তীব্র হয়েছে।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে।মুখে মৃদু হাসি।অতঃপর দৌড়ে ভীড়ের মাঝেই হারিয়ে যেতে চাইলে চৈত্র বোনের হাত ধরে বাঁধা প্রদান করে বলে,
“এখানেই আসবে।ওখানে গেলে হারিয়ে যাবি,থাক এখানেই”
“কিন্তু ভাই?”
“জাস্ট পাঁচ মিনিট দে।ভীড় কমলেই দেখবি তোর কাছেই আসবে”
বেশ উৎসুক হয়ে লজ্জামিশ্রিত কন্ঠেই চাঁদ বললো,
“আর তো সহ্য হচ্ছেনা ভাই।কতগুলো বছর পর দেখবো!”
চাঁদের কথা শুনে চৈত্রসহ উশ্মিও হোহো করে হেসে দেয়।চাঁদ এতে করে বেশ অপমানিতবোধ করলো।তবে কিছু বললোনা।এক ধ্যানেই তাকিয়ে থাকলো সে পানে।পাঁচ মিনিট,ছ’ মিনিট?ঠিক সাত মিনিট পর দুই হাতে লাগেজ আর কাধে একটা ব্যাগ নিয়ে লম্বাটে ফর্সা এক ছেলে হুড়মুড়িয়ে চাঁদের দিকে দৌড়ে আসে তৎক্ষণাৎ ই।চৈত্র সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদের থেকে দূরে সরে গিয়ে মোবাইলে ভিডিও অন করে ধরে রাখে তাদের পানে।আর ছেলেটা হাতের লাগেজ সেভাবে দু’দিকে ফেলে দিয়ে বেশ ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে আসে চাঁদপানে।চাঁদের হৃদস্পন্দন তীব্র হতে তীব্রতর হয়েছে।চোখদুটো অশ্রুসিক্ত।গালে লালচে আভা ছড়ানো ছিটানো।নড়তে চড়তে পারছেনা,পা দুটো জমে সেখানেই স্থির।কেবল তাকিয়ে আছে সামনে থেকে দৌড়ে আসা ছেলেটার দিকে।অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটলো।চাঁদের থেকে ঠিক এক হাত দূরত্ব রেখে নিজ গতিকে স্থির করলো সে।অপলক তাকালো চাঁদপানে।চোখজোড়া তারও অশ্রুসিক্ত হলো তবে নাক টেনে হাসতে হাসতেই দু’হাত মেলে দিয়ে বললো,
“কাম মাই বেইবি”
চাঁদের গালদুটো লজ্জায় ফুলে উঠলেও সে সকলকিছুকে উপেক্ষা করে সামনে থাকা ছেলেটার বক্ষপটে লাফ দিয়েই পড়ে গেলো।অতঃপর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো কিছুক্ষণ।সেভাবে থেকেই ছেলেটা বললো,
“মাই গড জান!ইট হ্যাজ বিন সো মেনি ইয়ার্স!”
চাঁদও বুকে শ্বাস সঞ্চার করে বললো,
“ইয়েস!অলমোস্ট নাইন্থ ইয়ার হা?”
অতঃপর হাসতে হাসতেই চাঁদকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেটা চাঁদের থুতনি ধরে বললো,
“হ্যা হ্যা!ঠিক ন’বছর চার মাস এগারো দিন পর তোকে আমি দেখলাম ডাবল ব্যাটারী!”
ছেলেটার কথা শুনে প্রথমে খুশি হলেও পরক্ষণেই রেগে গিয়ে চাঁদ বললো,
“হোয়াট?হোয়াট ডিড ইউ জাস্ট সে?”
ঠোট চেপে খানিক হেসে ছেলেটা চাঁদের থুতনি হতে হাত সরিয়ে দু’গালে আলতোভাবে তার তিন আঙুল দ্বারা স্পর্শ করে চাঁদের চোয়াল খানিক নাড়িয়ে বললো,
“নাথিং!নাথিং মাই লাভ”
নিজের গাল থেকে ছেলেটার হাত সরিয়ে চাঁদ বললো,
“হয়েছে ঢং করা লাগবেনা।বাড়িতে চল”
“কার বাড়ি তোর?”
দুই ভ্রু উচিয়ে চাঁদ বলে,
“তো আর কার বাড়ি যাবি তুই?”
ছেলেটা তর্জনী দ্বারা কপালের ডানপাশে খানিক চুলকিয়ে বলে,
“না মানে আরকি!”
চাঁদ বেশ রেগে নিয়ে নাকমুখ ফুলিয়ে বলে,
“ওহ জাস্ট শাট আপ সমুদ্র।ঐ ডাইনীর টার বাসায় যাওয়ার নামও যদি নিয়েছিস আয় উইল জাস্ট কি*ল ইউ রাইট নাও!”
বেশ ভয় পাওয়ার ভঙ্গিমায় সমুদ্র বলে,
“ওকে ওকে মেরি মা! যাবোনা।তোর সাথেই যাবো হ্যাপি?”
নাকের ডগার কাছে এসে পড়া চশমাটাকে চোখের সাথে এঁটে নিয়ে বেশ ভাব দেখানোর সহিত চাঁদ বলে,
“হ্যাপি মানে?মোর দ্যান ইউ ক্যান এভার থিংক মাই ডার্লিং”
বলেই চোখজোড়া কুচকিয়ে চুমু দেয়ার ভঙ্গিমায় সমুদ্রের দিকে ঠোটজোড়া গোল করে নিজেই হেসে দেয় চাঁদ।আর সমুদ্র বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে,
“উহ!এভাবে চুমু খেয়োনা জান ম!রেতো আমি আগেই গিয়েছি এখন কি মৃ!ত মানুষকে জ্যান্ত করে আবারও মা*রতে চাও ময়নাপাখি?”
চাঁদ এবার সমুদ্রের বাহু ধরে তাকে টানতে টানতে বলে,
“থাম শা*লা!নাটকবাজি কম করে চলতো”
অতঃপর চৈত্রের দিকে চেয়ে বলে,
“ভিডিও অফ করে সোইম্মার লাগেজ গুলো নিয়ে এসো ভাই”
সমুদ্র কপাল কুচকে বলে,
“তুই ভাইয়াকে তুমি করে বলিস কবে থেকে আবার?”
চৈত্র হাসতে হাসতে বলে,
“ইটস আ সিক্রেট সমুদ্র।তোমরা এগোয় আমি তোমার লাগেজ নিয়ে আসছি”
“না না ভাইয়া।তুমি থাকো আমিই আনছি”
চাঁদ বাকা চোখে সমুদ্রের পানে চেয়ে বলে,
“নাটকবাজি কম করতে বলেছি না?”
চাঁদের থেকে খানিক দূরে সরে তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে ডান হাত বার দু’য়েক ঘুরিয়ে চাঁদের সম্মুখে তা মেলে দিয়ে সমুদ্র বলে,
“জো হুকুম মেরি রানী!”
এবার খানিক কেশে উশ্মি বলে,
“কেউ হয়তো নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে পেয়ে আরেকজনকে দেখার সময়ই পায়নি?”
এবার সমুদ্রের নজর পড়ে উশ্মির দিকে।অতঃপর সে সামান্য ইতস্ততবোধ করে বলে,
“না মানে তোকে আসলে…..”
“হয়েছে থাম বলতে হবেনা বাট তোকে এতবছরেও এত সহজভাবে কখনো দেখিনি সমুদ্র”
উশ্মির কথায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে সমুদ্র।সে কিছু বলার পূর্বেই চাঁদ উশ্মিকে বলে,
“সমুদ্র পুরো দুনিয়ার সামনে একরোখা,বদমেজাজী বা গম্ভীর যাই বলোনা কেন।আমার সাথে টোটালি অন্যরকম উশ্মি।এবং এটা আজ থেকে নয়,সেই শুরু থেকেই।আফটার অল হি ইজ মাই হাফ বয়ফ্রেন্ড,রাইট বেইবি?”
বলেই সমুদ্রের পানে চায় চাঁদ।আর এক ভ্রু উচিয়ে সমুদ্র চাঁদের বাহুতে হাত রেখে নিজের দিকে তাকে টেনে এনে বলে,
“ইয়েস ডার্লিং”
অতঃপর পিছু ঘুরে উশ্মির দিকে চেয়ে বলে,
“চাঁদ আর আমি একে অপরকে এভাবেই ট্রিট করি।বিস্মিত হবার কিছু নেই।চলে আয় ভাইয়ার সাথে।আমরা গেলাম”
কপাল কুচকে উশ্মি জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় যাবি?”
“আমার হাফ গার্লফ্রেন্ডের সাথে এতবছর পর দেখা তাকে যদি ঘুরতে নিয়ে না যাই শি উইল জাস্ট কি*ল মি।তোরা যা আমরা পরে আসবো”
“কিন্তু ভাবিরতো আজকে হসপিটালে….”
ঘাড় সোজা করে সামনের দিকে এগোতে এগোতেই সমুদ্র বলে,
“তোর ভাবির হসপিটাল আছে তা আমিও জানি।তবে তুই হয়তো জানিস না তোর ভাবি আজ ছুটি নিয়েছে”
চাঁদও পিছু ঘুরে বললো,
“হ্যা উশ্মি আজ যাবোনা আমি।বহুবছর পর দেখা।না ঘুরলে আমাদের জমবেইনা।তুমি ভাইয়ের সাথে চলে যাও”
উশ্মি বেশ অবাক হয়ে বলে,
“তোমাদের দু’জনকে কখনোই এই রূপে দেখিনি ভাবি।আমি সত্যি সত্যিই বারবার অবাক হচ্ছি।তুমিও এতটা প্রাণবন্ত হতে পারো তাও আবার কোনো ছেলের সাথে?তোমার সম্পর্কে যা জানি কোনো ছেলের হাত পর্যন্ত ধরোনা সেখানে সমুদ্র আই মিন!…..”
উশ্মিকে মাঝ পথে আটকে দিয়ে চাঁদ বলে,
“ওয়েইট?কে বলেছে ও ছেলে?”
একই সময় সমুদ্রও বলে,
“ইয়েহি হ্যা ব্যারিস্টার সমুদ্র চৌধুরী কা জাদু!” [এটাই হচ্ছে ব্যারিস্টার সমুদ্র চৌধুরীর জাদু]
অতঃপর চাঁদের কথা শুনে বিস্ফোরিত নয়নে তার পানে চেয়ে কপাল কুচকে সমুদ্র বলে,
“হোয়াট?হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আমি ছেলে নই?”
চাঁদ ঠোট চেপে বলে,
“আরেহ সোইম্মার বাচ্চা আমি বুঝিয়েছে তুই জাস্ট আমার বেস্টু।এছাড়া ছেলে-মেয়ে ডাজেন্ট ম্যাটার টু মি ‘বাউট ইউ।অ্যান্ড কে কী ভাবলো আই জাস্ট……”
চাঁদের কথাকে সম্পন্ন করলো সমুদ্র,
“হার্ডলি কেয়ার?”
অতঃপর দুজনে একসাথে হাসতে হাসতেই সামনের দিকে এগোয়।এবং এক সময় সমুদ্রের দাড় করানো গাড়ির কাছে যেতেই ফ্রন্ট সিটের ডোর ওপেন করে দিয়ে চাঁদকে ভেতরে বসিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে সমুদ্র।অতঃপর যেই পর্যন্ত না গাড়ি উশ্মির দৃষ্টি সীমানার বাইরে গেলো সেই পর্যন্ত তাকিয়ে থাকলো সে সে’পানে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রমনা পার্কের ভেতরে ঢুকে আশপাশে নজর বুলিয়ে এক নিরিবিলি সাইডে গিয়ে দাঁড়ায় আহিন।অতঃপর সেখানে থাকা পাকা এক বেঞ্চের মতো বসার স্থানে প্রণয়কে বসতে বলে নিজেও বসে পড়ে।আর তাদের ঘিরে বিভিন্ন রক্ষীকর্মী দূরে দূরে অবস্থানরত।মূলত কর্মীগুলো আহিনের।বসার স্থানে বসতেই দু’জনেই নিজেদের মুখের মাস্ক খুলে পকেটে রাখে।আর প্রণয় তার গায়ের এপ্রোণ খুলে পাশে রেখে আহিনের পানে চাইতেই দেখে আহিন তাকে দেখে হাসছে।আহিনকে হাসতে দেখে প্রণয় কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে বলে,
“কী?”
নিজের হাসি থামিয়ে আহিন বলে,
“ভাবছি যে আগে যখন কলেজ লাইফে এখানে আসতাম মাস্ক বা এসব গার্ডের প্রয়োজন ছিলোনা।বিন্দাসে আসতাম,আড্ডা দিতাম আবার চলে যেতাম।কিন্তু এখন মাস্ক ছাড়া বেরই হতে পারিনা।তুই যাও পারিস আমি তার এক বিন্দুও পারিনা”
শান্ত কন্ঠে প্রণয় শুধায়,
“হ্যা ইয়াং এবং হ্যান্ডসাম পলিটিশিয়ান বলে কথা একটুতো মেয়েলি ঝামেলায় থাকবিই”
এক ভ্রু উচিয়ে আড়চোখে প্রণয়ের পানে চেয়ে আহিন বলে,
“এত হ্যান্ডসাম হয়েওতো লাভ হলোনা।তোর বউ না আগে আমায় পাত্তা দিয়েছে না জীবনে কখনো দেবে।জীবনের সবচাইতে বড় আফসোস তো এটাই”
এবার কপাল বেশ কুঞ্চিত হয় প্রণয়ের।অতঃপর ভাজগুলো শিথিল করে গম্ভীরভাবে সে আহিনকে বলে,
“আমার বউও বলছিস আবারও পাত্তাও চাচ্ছিস?তুই বারবার ভুলে যাচ্ছিস আমার সামনে থেকেই তুই চাঁদকে নিয়ে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছিস।আরেকবার কিছু বললে আমি ভুলে যাবো কোনো একসময় তুই আমার বন্ধু ছিলি”
“আচ্ছা ভাই রিল্যাক্স!আমি পাত্তা চাইলেই কি তোর বউ আমায় পাত্তা দেবে?দেবেনাতো।কারণ যখন তোর সাথে ওর কোনো সম্পর্ক ছিলোনা তখনই দেয়নি।এখনতো তোর ওয়াইফই।তাছাড়া আমিতো বিয়ে করছি বললাম না?”
“হ্যা তো নিজের বউয়ের দিকে নজর দে।অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিলে চোখ তু!লে ফেলবো”
ঠোট চেপে হেসে আহিন বলে,
“অন্যের বউ নাকি শুধুমাত্র তোর বউ?”
প্রণয় কিছু না বলে কেবলই বাকা চোখে আহিনের পানে তাকিয়ে থাকে।তা দেখে আহিন বলে,
“দেখ মামা,তোর আর চাঁদের সম্পর্ক যে ভালো চলছেনা তা আমি জানি।আর দুই মাস আগের সেই ঘটনার পর থেকে তোকে আমি অবলোকন করেছি।এখন এটা কেনো করেছি জানিনা।হয়তো তুই আমার বন্ধু বলেই।একসময় তোকে বেস্টফ্রেন্ড ভাবতাম বাট আলাস!তোর বেস্টফ্রেন্ড আমি নই,অরণ।কিন্তু অরণকে আমি ছয় বছরের বেশি হবে দেখিনা।ও কি বিদেশ চলে গিয়েছে?আই মিন পিএইচডির জন্য?”
অরণের প্রসঙ্গ আসায় প্রণয় তা ছাপিয়ে যাবার জন্য বলে,
“পুরোনো জিনিস না তুলে নতুন জিনিস বল”
“আংকেল তোকে এখনও বাড়ি নেন নি তাইনা?থাকছিস কোথায় তুই?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রণয় বলে,
“এতকিছু যেহেতু জানিসই কোথায় থাকি তাও অবশ্যই জানার কথা”
মৃদু হেসে আহিন বলে,
“এতগুলো বন্ধুবান্ধব থাকতে তোকে কলোনিতে থাকতে হয় প্রণয়?”
দৃষ্টি ঘাসের পানে দিয়ে প্রণয় বলে,
“সবই কপাল”
“আমি জানি চাঁদের সাথে সেই কাহিনীর জন্যই সকলে তোর প্রতি রুষ্ট।কিন্তু তুই অমনটা কেনো করেছিস?”
ঘাসপানেই দৃষ্টি রেখে প্রণয় শুধায়,
“যে কথা আজ অব্দি কাউকে বলিনি তা তোকে বলবো ভেবেছিস?”
“না তা বলবিনা।কারণ তুমিতো আবার দি ইগোয়েস্টিক প্রণয়।এখনতো আবার ডাক্তার হয়েছো।তাও যেনোতেনো নয় কার্ডিয়াক সার্জন রুহায়ের প্রণয়।তুমি কি কিছু বলবে আদোতে?”
“মজা করিস না।একচুয়ালি আমি নিজেও জানিনা এত ভুলের মাশুল আমি কী করে দেবো?”
“এত ভুল বলতে?”
“কিছুনা”
“হয়তো আগের মতো সম্পর্ক নেই কিন্তু আগেতো আমরা ক্লোজ ছিলাম।বলেই দেখ,মেইবি আই ক্যান হেল্প ইউ”
“তোর হেল্পের প্রয়োজন নেই।তোকে কিছু বললে তুই যে তোর বাবাকে বলে দিবিনা তার কী গ্যারান্টি?তোর বাবার মতো নিকৃষ্ট প্রাণী যাচ্ছেতা করতে পারে।সো ওসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিনা”
এবার বেশ গম্ভীরভাবে আহিন বলে,
“আমি মানছি আমার বাবা একজন পলিটিশিয়ান হিসেবে অতটা সৎ ছিলেন না কিন্তু তুই এভাবে তাকে নিয়ে বলতে পারিস না”
তাচ্ছিল্যের সুরেই প্রণয় বললো,
“কেবল পলিটিশিয়ান না।সে একজন মানুষ হিসেবেও সৎ নয়।পশুও বোধহয় তার চাইতে উত্তম!”
বেশ চেচিয়েই আহিন বলে,
“প্রণয়!”
“স্টপ!স্টপ আহিন।ডোন্ট শাউট উইথ মি।তুই জানিস আমি মিথ্যা বলিও না,শুনিও না।সো স্টপ লাউডিং।নিজের শোকে ছিলাম বলে কোনো খোঁজ রাখিনি এমনও নয়।তোর বাবাকে চৌদ্দ শিকের মাঝে আনতে না পারলে আমার নামও প্রণয় না।শুধু তোর বাবা না।তার সাঙ্গপাঙ্গদেরও ছাড়বোনা আমি।দে জাস্ট ডোন্ট হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট ডিড দে জাস্ট ডু!আর তোর বাবার সেই বাংলো?কী যেনো নাম?ওহ হ্যা ‘রাজ ভিলা’?ঐটাকে ভেঙে গুড়োগুড়ো যদি না করেছি তবে আমিও আমার ডাক্তারী ছেড়ে দেবো”
“হয়েছে কী বলবি?আর ‘রাজ ভিলার’ কথা বলছিস?সেটাতো বাবা বহু বছর আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন”
“বিক্রি করেছে মানে?”
“হ্যা অনেক আগেইতো বিক্তি করেছে।তুই ওটার পেছনে কেনো লেগেছিস?”
“মজা নিস আমার সাথে?স্টিল ওটা ওখানেই আছে”
“কী যা তা বলছিস!বাবা নিজে পেপার্স দেখিয়েছে আমায়”
“দেখ আহিন মাথা আমার গরম করিস না।এমনিতেই দু’মাসের বেশি হয়েছে আমি চাঁদের সাথে কথা বলতে পারছিনা।না পারছি দেখা করতে।তুই আবার আমার মাথা খা*স না”
“তোর ভুল ধারণা ভাঙছি জাস্ট।আমি মানছি বাবা পলিটিশিয়ান হিসেবে খারাপ বাট মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ”
ব্যঙ্গ করেই প্রণয় বলে,
“ও মাই গড রিয়েলি?হ্যা হ্যা এতই ভালো যে কাউকে মা!র……বাদ দেতো।যেই লাউ সেই কদু।তুই এখন গিয়ে তোর বাবাকে সব বলবি আ’ম ড্যাম শিওর”
“বারবার এক কথা বলবিনা প্রণয়।আমি কচি শিশু নই যে কিছু হলেই বাবাকে গিয়ে বিচার দেবো।আর আমার বাবা যদি ভুল কিছু করেই থাকেন আমি অবশ্যই সেটার বিরোধিতা করবো”
“সে তুই যা ই কর।আমার সময় কেনো নষ্ট করছিস?”
“শোন তুই ভুল বুঝছিস।ভিলাটা এখন আর নেই।সেটা আনুমানিক বারো,তেরো বছর হবে বিক্রি করা।হতে পারে যে কিনেছে সে খারাপ কাজে ইউজ করছে”
“দেখ আহিন তুই আমার মেজাজ খারাপ করিস না।আমি এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছিনা।জাস্ট আমায় কিছু ক্লু পেতে দে তারপর তোর সামনে দিয়েই তোর বাপকে আমি জেলের ভেতর ভ!রবো”
“তোর কি মনে হয়?বাবা এক ঘন্টাও ভেতরে থাকবেন?বা তুই রাখতে পারবি?”
“তুই নিজেই বলেছিস সে ভুল হলে তুই তার বিরোধিতা করবি”
“হ্যা অবশ্যই”
“প্রমাণ ছাড়া এখন আর কিছুই করবোনা”
“একচুয়ালি যে নিজের ওয়াইফের বিরুদ্ধেই মিথ্যা প্রমাণ দেয়,সে যে কিছুই করতে পারে”
“তুই আবার তাকে মাঝে টানছিস?”
“মাঝে টানছি না।তুই রীতিমতো ঝগড়া করছিস আমার সাথে।আগে ঠান্ডা হ আর এই নে কার্ড,আমার বিয়ের।চাঁদকে নিয়েই আসিস।আশা করছি তোদের মাঝের সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে”
“সমস্যা ঠিক হবে কিনা জানিনা।তার কাছ হতে ক্ষমা পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি।কারণ নিজেই যেহেতু নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনা সে বা অন্য কেউ আর কীই বা করবে?তবে তার করা অপূর্ণ কাজ যার জন্য এত ঝামেলা এত দূরত্ব আমাদের মাঝে তা পূর্ণ না করা অব্দি বসেও থাকবোনা”
“মানে?”
“নাথিং”
“ওসব বাদ দে।শোন,চাঁদ তোকে আগেও অসম্ভব ভালোবাসতো।এখনও বাসে।হয়তো প্রকাশ করছেনা তোর সাথে রেগে আছে বাট আমি বলছি বাসে।কজ ওর চোখে তোর প্রতি যেই ভালোবাসা আমি দেখেছি ইউ কান্ট ইভেন ইমাজিন।মেয়েটা তোকে এতটাই ভালোবাসে যে চোখের সামনে বহু সুদর্শন পুরুষ থাকা সত্ত্বেও কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতোনা পর্যন্ত।আমি যখন ওকে ফলো করতাম একসময় বন্ধ করে দিয়েছিলাম না?কেনো দিয়েছি জানিস?”
“কেনো?”
“কারণ চাঁদ নিজ মুখে স্বীকার করেছিলো ও তোকে ভালোবাসে।বলতো কী বলেছিলো?”
বেশ উৎসুক হয়ে শ্বাস ভেতরে নিয়ে প্রণয় জিজ্ঞেস করে,
“কী বলেছিলো?”
“হুবুহুতো ওর মতো বলতে পারবোনা।বাট শি সেইড……ওয়েইট আমার কাছে রেকর্ডিং ই আছে।শোনাই তোকে”
“এক মিনিট।তুই কথাবার্তা রেকর্ডও করিস?নিশ্চয়ই আমারটাও করেছিস”
আড়চোখে প্রণয়ের পানে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আহিন বলে,
“বাজে বকিস নাতো!সেদিন করেছিলাম কারণ ছিলো একটা”
“কী কারণ?”
“ইম….মাইন্ড করিস না।যদিও এখন তোর ওয়াইফ।বাট তখন কিন্তু ছিলোনা”
“আগে বল তারপর দেখছি কী করি আর কী করিনা”
দৃষ্টি অন্যপানে দিয়ে আমতা আমতা করতে করতেই আহিন বলে,
“আসলে তখন তোর সাথে ওকে দেখলে অতিরিক্ত মাত্রায় জ্বেলাস ফিল করতাম।ভেবেছিলাম রেকর্ড করে তোদের দু’জনকেই এ!ক্সপোজ করিয়ে তারপর বাবার হেল্পে পড়াশুনা লাটে তুলে দেবো।আই মিন বুঝেছিসই তো?”
“বুঝেছি তারপর বল তা করিস নি কেনো?”
মৃদু হেসে আহিন বলে,
“ঐ যে বললাম না?চাঁদের চোখে তোর জন্য পুরো একটা সমুদ্রের চেয়েও বিশাল ভালোবাসা দেখেছি।তাই আর পারিনি।মেয়েটাকে ভালো তো আমিও বাসতাম।বা বলতে পারিস নেহায়েতই আমার ভালো লাগা ছিলো”
“আর সেটা কীভাবে?”
“যখন ও ঢাকা ছিলোনা।অরণের সাথে সাথেতো চাঁদও নিখোঁজ।তো তখন ওর কথা তেমন একটা মনে পড়তোনা।মাঝেমাঝে ভাবতাম।ভাবলেই এই রেকর্ডিং টা শুনতাম।ওর ভয়েজটা ভারী মিষ্টি।কিন্তু যা যা বলেছে সবই তোকে ঘিরে তবুও শুনতাম ভালো লাগতো।কিন্তু পরক্ষণেই খারাপও লাগতো এই ভেবে যে মেয়েটা আমায় কেন ভালোবাসলো না?কমতি কিসে?এই প্রশ্নের উত্তর তখনও পাইনি তবে এখন জানি।কমতি হয়তো নেই তবে তোর মাঝে ও যা পেয়েছে হয়তোবা আর কারো মাঝে খোঁজার চেষ্টাই করেনি।পরে যখন আবার ওর সাথে কবে জানি দেখা হলো।কয়মাস আগে খেয়াল নেই।তখন হঠাৎ করেই আগের অনুভূতি মনে পড়লো আর ভাবলাম হয়তো এখনও ভালোবাসি।কিন্তু যেদিন জানলাম তোদের বিয়ে হয়েছে সেদিন থেকে কেমন একটা বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হলো ওর প্রতি।আর ভালো লাগেনা।কেমন জানি লাগে।তো এভাবে এভাবেই দু’মাস গেলো।পরে ডিসিশন নিলাম এবার বিয়ে করা উচিত।যেহেতু চাঁদকে আর পাবোই না আর আমারও এখন আর ওকে ভালো লাগেনা।এবার বিয়েটা করলেই ভালো।তুইও করে ফেলেছিস কবে জানি আবার বাচ্চা হয়ে যায় তোদের।তো এক মেয়ে আমার জন্য বেশ পাগল।তোদেরই মেডিকেলের।বছর তিনেক আগে নবীনবরণে দেখেছিলো আমায়।তারপর থেকেই উন্মাদের ন্যায় পিছু ঘুরেছে লাইক আমি যেভাবে চাঁদের পিছু ঘুরেছিলাম!তো ওকেই বিয়ে করছি আপাতত”
সব শোনার পর প্রণয় কেবল বলে,
“হিম,জীবনকে আরেকটা সুযোগ দে।আর চাঁদকে প্রণয় ব্যতীত আর কারো পাওয়ার সাধ্যি নেই।প্রণয় আর চাঁদ একসাথে থাকুক অথবা নাইবা থাকুক।চাঁদ কেবলই প্রণয়ের কেবলই প্রণয়ের”
“হ্যা হ্যা জানি।তো নে,কার্ড রাখ”
“রেকর্ডিং টা শোনা?”
“ওহ হ্যা শোনাচ্ছি দাড়া”
বলেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটির পর রেকর্ডিং অন করে আহিন।আর দু’জনেই শুনতে পায় আহিন আর চাঁদের পুরোনো কথোপকথন,
‘আমি ফলো করলে অস্বস্তি আর প্রণয়ের ছোয়ায় এতো স্বস্তি,কেনো নীলাম্বরী?’
‘কারণ আমি তাকে ভালোবাসি মি.আহিন’
‘এই তবে কারণ আমায় রিজেক্ট করার?’
‘আপনাকে কখনো মেনেই নিতে পারিনি রিজেক্ট করা পরের কথা আহিন’
‘এবং তার কারণটা নিশ্চয়ই প্রণয়?’
‘তার প্রতি অনুভূতিতো সেই প্রথমদিন থেকেই ছিলো।একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে আজ তা অপরিমিত’
‘খুব ভালোবাসো প্রণয়কে?’
‘আমি শুধু জানি এ হৃদয়জুড়ে কেবল ঐ শুদ্ধ পুরুষটাই বিরাজমান’
‘প্রণয়ের মাঝে এমন কী আছে যা আমার মাঝে নেই?’
‘অন্যের মাঝে যা আছে প্রণয়ের মাঝেও তাই আছে।তবে প্রণয়ের মাঝে যা আছে অন্যদের মাঝে তা নেই’
‘এতো ভালোবাসা কবে থেকে?’
‘সেদিন থেকেই যেদিন প্রথম ঐ বিড়ালাক্ষী মানবের দর্শন পাই’
‘প্রণয়ের প্রতি তোমার প্রেমময়ী বাক্যগুলো আমার হৃদয় ক্ষ!তবি!ক্ষ!ত করে দিচ্ছে নীলাম্বরী’
‘আপনার হৃদয় ভে!ঙেচুরে দিতেই আজ আপনার সম্মুখীন হয়েছি আমি’
‘আমিতো জানতামই তুমি প্রণয়কে ভালোবাসো তবুও নিজ মুখে তার প্রতি ভালোবাসাটুকু প্রকাশ করে আমার হৃদয়টা না ভাঙলেই কি হতোনা নীলাম্বরী?’
‘আমি শুধু প্রণয়ের লালগোলাপ,তার চন্দ্রময়ী এবং তারই রেডরোজ।আমায় চাঁদ বলে ডাকলেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করবো আহিন’
‘অবশ্যই চাঁদ।মিস মুহাইমা বিনতে চাঁদ’
‘তাহলে কি আমি বুঝে নেবো যে আপনি আমার প্রতি আপনার অনুভূতিগুলো মে!রে দেবেন?’
‘অনুভূতিতো মা!রা যায়না।তাকে কেবল আড়াল করা যায় নীলা….ইম…চাঁদ।আচ্ছা ভালো থেকো আর…’
‘প্রণয়ের সাথে যেহেতু প্রেমটা তোমার হয়েছে ই।এই প্রেম আমরণ জীবিত থাকুক’
‘মরণের পরেও তার সাথে আমার প্রেম হোক!’
শেষ বাক্য শুনে আঁখি জোড়া বন্ধ করে প্রণয়।হৃদয় তার শীতলতায় ছেয়ে যায়।লম্বা শ্বাস টানে সে।অতঃপর আহিনের কন্ঠে ধ্যান ভাঙে আর চোখজোড়া খোলে সে,
“এবার বল,যেই মেয়ে মরণের পরেও তোর সাথেই তার প্রেম চায় সে আদোতে তোকে ভুলতে পারবে?অথবা অন্য কাউকে ভালোবাসবে?”
“ওহ স্টপ!আমার চাঁদ আর কাউকে ভালো…….”
কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই প্রণয়ের নজর পড়ে সামনের দিকে হাতে হাত দিয়ে একসাথে হাসতে হাসতে হাটতে থাকা এক ছেলে আর এক মেয়ের দিকে।বিস্ময়ে সে কিংকর্তব্যবিমুঢ়!কপালে বেশ কয়েকটা ভাজ পড়েছে তার।সে বোঝার চেষ্টা করছে আদোতে সামনে কী হচ্ছে বা কারা সেথায়?চাঁদ?হ্যা এটাতো চাঁদই।কিন্তু ছেলেটা কে?তার সাথে কী করছে চাঁদ?নাহ!আগের বারের মতো ভুল সে এবার করবেনা।এবার কেনো?কস্মিনকালেও আর এ ধরণের ভুল সে করবেনা।নিজেকে যথেষ্ট সংযত রেখে ঘনঘন শ্বাস নিলো।এবং আহিনের থেকে কার্ড আর পাশ হতে এপ্রোণ হাতে নিয়ে বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে সামনে এগোতে চেয়েও পিছু হটে আসলো।পরবর্তীতে চিন্তা করলো অরণের সাথে দেখার পরেও সামনাসামনি সমাধান না করে এভাবেই পিছু চলে এসেছিলো।যার দরুন এত এত ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে।একই ভুল পুনরায় সে করতে চায়না।তাই সাহস সঞ্চার করে এগোতে লাগলো সামনের দিকে।দু’মাস!ঠিক দু’মাস পর কথা বলবে তার চাঁদ তার একান্ত লালগোলাপ,তারই চন্দ্রময়ীর সাথে।তার একমাত্র অর্ধাঙ্গিনীকে আর লুকিয়ে চুরিয়ে দেখা লাগবেনা।সরাসরি সচক্ষে দেখবে,কি যে এক প্রশান্তি!অতঃপর হঠাৎ করেই স্মরণে আসে অরণের বলা বাক্যসমূহ,
“এমনদিন যেনো না আসে যে যার সাথে শেষ কথোপকথন করে এসেছিস তারই সাথে একটুখানি কথোপকথনের জন্য তৃষ্ণার্থ হয়ে যাস!যার সামনে দাড়ানোতে আজব লেগেছে তার থেকেই দূরে যাওয়ার কথা ভেবে দম বন্ধ হয়ে মৃ*ত!প্রা!য় হয়ে যাস!যাকে নিজ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিস তাকেই একটাবার দেখার জন্য দিশেহারা হয়ে যাস!”
To be continued……