#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৪
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
অভিক আর সুজানা ছাদ থেকে নেমে আসার পরেই সবার একসাথে খাওয়া দাওয়া হলো। খেতে খেতে অনেক গল্প গুজব হলো।
ডেজার্ট খাওয়ার সময় সাজিয়া বেগম সবার অলক্ষ্যে অভিকের কাছে এসে জানতে চাইলেন
মাস্টারমহাশয় ভালো করে খেতে পেরেছে?
অভিক নির্মল হাসলো এত সুন্দর সম্বোধন শুনে। বলল
ঝাল কম কি করে হয়েছে?
বাবুদের মা বলেছে তার দেবর নাকি ঝাল কম খায়।
আচ্ছা, এই ব্যাপার। ঝাল কম মানে মজা। আর করিমের আন্টির হাতের সবকিছুই বেস্ট যতটুকু আমি জানি।
আমি মাস্টারমশাইয়ের কাছে জানতে চাই।
অভিক জবাব দিল।
রান্নাগুলো তাহার কথার মতোই মিষ্টি।
সাজিয়া বেগম প্রশংসা শুনে হাসলেন। বললেন
থেকে যাওয়ার কথা হয়েছিল বোধহয়।
যদি আবার আসার সুযোগ হয় আজকের রাতসহ দুটো রাত থেকে যাব। কিন্তু নবকুঠিরেও তো যাওয়া যায়। আজকে রান্না খেয়েছি সেদিন না হয় রান্না করে খাওয়াবো।
মাস্টার রান্না পারে?
খুব পারে।
তাহলে তো অমৃতটুকু খেতেই হবে।
অভিক মাথার পেছনে চুলকে হাসলো।
সুজানা এসে বলল
আপনাকে আরেকটু পায়েস দেব?
অভিক প্লেটের শেষেরটুকু খেতে খেতে বলল,
যদি শুনতে চান ” আপনার বরের ডায়াবেটিস “।
সুজানা বলল
সবসময় বাজে কথা।
************
আজীম সাহেব আর সালমা বেগমের সাথে সাজিয়া বেগমের খোলামেলা কথা হয়েছে । যদি কোনো সমস্যা না থাকে সেই চার হাত এক হতে সমস্যা কোথায়?
কিন্তু সাজিয়া বেগমের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর কথা কি উনারা বুঝবেন? মেয়ের বিয়ের খরচ বলতে একটা ব্যাপার স্যাপার তো আছে। তাছাড়া হুট করে বিয়ে নামানো যায় না । এখনো সুজানার নানার বাড়ি, দাদার বাড়িতে কাউকে কিচ্ছুটি বলা হয়নি। হুট করে হয়ে গেল সব। উনি টাকা পয়সার বন্দোবস্ত করে মেয়ে তুলে দেবেন লোকজন খাইয়ে। অতবড় বনেদী পরিবারের সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছে বেশ নামীদামী মানুষ আসবে বিয়েতে। ভালো একটা কমিউনিটি সেন্টার থেকে শুরু করে লোকজন খাওয়াদাওয়ার খরচ বেশ। বড় ভাইকে জমি বেচার চূড়ান্ত কথা বলে দিতে হবে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে সময় চেয়ে নিলেন তবে সমস্যাটা উনার নয় সুজানার বলে চালিয়ে দিলেন। সুজানা কখন চায় তার উপর নির্ভর করে উনি সিদ্ধান্ত নেবেন বলেছেন।
সালমা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন। সুজানাকে উনি ফোন করে ভালো করে বুঝিয়ে বললে হয়ে যাবে। উনি জানেন সুজানা উনাকে বেশ ভয়ের চোখে দেখে। তাছাড়া উনি আর দেরী করতে চান না। রমজান চলে এসেছে। ঈদের পর ছাড়া আর কথা নেই।
সুজানার মতামত এবং সাজিয়া বেগম উনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তঃ জানাতে জানাতে রমজান চলেই এল।
এই পুরো রমজানে সুজানার আর তার মাস্টারমশাইয়ের দেখা হয়েছিল ক্যাম্পাসে ভর্তির সময়। সেই দূর থেকে দেখে একটুখানি মৃদু হাসা। আর সুজানার বন্ধুদের সাহায্য পাঠানো আরও একটি টিস্যুর প্যাকেট। সুজানার তার ভেতরে আবিষ্কার করলো একটি নীল চিরকুট। তাতে লেখা ছিল,
রমজান মোবারক সুজানা আফরিদা । আগামী রমজানে সেহেরিতে ডেকে দেয়ার জন্য হলেও আপনি আমার হোন।
সুজানা চিরকুটটা কতবার পড়েছে হিসেব নেই। মায়ের বারণে তারা দু’জনের অনেকদিন একসাথে হাঁটা হয়নি । কথা হয়নি সামনাসামনি দাঁড়িয়ে। ফোনে সেই কয়েকয়েক মিনিটের কুশল বিনিময়। অল্প সময়ে কি অতশত কথা বলা যায়? তাদের তো কথা গুলিয়ে যায় দুজন দুজনের গলার আওয়াজ শুনলে।
রমজানের প্রায় শেষের দিকে আজীম সাহেব ছেলের বউয়ের জন্য ঈদের কাপড়চোপড় নিয়ে এলেন। সাথে বউয়ের মা ভাইয়ের জন্যও। উনি চুপিসারে সুজানাকে বলেছেন সবগুলো অভিক ফারদিনের পছন্দে কেনা। কাপড়ের ভাঁজে নাকি কিছু সিক্রেট আছে। সুজানা ছাড়া তা অন্য কারো দেখা মানা।
সুজানা তার কাপড়ের ভাঁজে পেল আরও একটি চিরকুট। তাতে লেখা,
ঈদ মোবারক মাই মিসেস।
সুজানার অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হলো। এত নতুন অনুভূতিগুলো! সে নাম জানেনা তাদের।
চলবে….
#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৫
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
ঈদের দিন সন্ধ্যেবেলা।
নবকুঠিরে তখন মেহমানের আনাগোনা। অভিকের মামার বাড়ি খালার বাড়ির সবাই ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে এসেছে। কোনো বছর ঈদে সবাই আসে না। এই বছরের ঈদটা বিয়ে বিয়ে আমেজ নিয়ে এসেছে। বেড়াতে আসার ফাঁকে নতুন বউটা একটু দেখে যাবে এই নিয়ে আসা।
তাছাড়া অভিকের মামার বাড়ির দিক থেকে সেই একমাত্র যে বিয়ে উপযুক্ত। তার বিয়ে নিয়ে হৈচৈ এর শেষ হওয়ার কথা নয়।
অভিক সিজান আর মামার ছেলে রিছানকে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে ফিরেছে। অনেকগুলো বছর পর দেশে তার ঈদ উদযাপন।
তাকে বাড়ি ফিরতে দেখে সবাই আরও মেতে উঠলো। সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষে তরী আর খড়িকে দেখলো। তারা দুবোন ছোট একটা ভাই আছে। তারা এসে সালাম বিনিময় করে বলল
ঈদ মোবারক। আমাদের বখশিশ।
অভিক মাথা চাপড়ে দিয়ে বলল
ঈদ মোবারক। বখশিশ আপাতত পকেটে নেই। ঘরে যাই। ফ্রেশ হই । তারপর।
ওকে ওকে। সিজান ভাই রিছান ভাই বখশিশ রেডি করো।
ওরা দুজনেই হাসলো। রিছান তরীর মা সাঈদা বেগমকে বলল
ছোট ফুপী বখশিশের বদলে ওদের জন্য জামাই ঠিক করে দিলে ভালো হয় না? দুটো লাল টুকটুকে বর।
খড়ি বলল
অ্যাহ বর আবার লাল টুকটুকে হয় কেমনে? বউ হয় লাল টুকটুকে।
সবাই তার কথায় হেসে উঠলো।
সাঈদা বেগম অভিককে বললেন
হ্যা রে অভি বখশিশ সব শেষ করলে হবে? আসল মানুষকে তো বখশিশ দেয়া বাকি।
অভিক টি টেবিলে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে গিয়ে বলল
আসল মানুষ কে?
জিনিয়া বলে উঠলো।
সু—জা—না।
অভিক কেশে উঠলো। সাঈদা বেগম বললেন
হায় হায় একটু আস্তে খা।
খড়ি খিক করে হেসে উঠে বলল
বউয়ের কথা শুনে কাশি উঠে গেছে।
অভিক বলল
আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।
মমতাজ বেগম এসে বললেন
অহ দাদুভাই তোমরা ফিরেছ? সবাই তো নতুন বউকে দেখার জন্য মুখিয়ে আছে। হবু শ্বাশুড়িকে মাতিয়ে আসবে না? সুজানা সালামি পাবে তোমার কাছে। না গেলে ভারী অন্যায় হবে।
আনিকা বলল
অভি সুজানা কিন্তু তোর কাছ থেকে মোটা সালামি পাবে। হুমমম।
সুজানার হয়ে সালামি খোঁজার মানুষের দেখছি অভাব নেই।
কি বললি?
অভিক হেসে উঠে চলে গেল।
গোসল নেয়া শেষ হতে না হতেই দরজায় ঠোকা পড়লো। ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে অভিক ঘরের দরজা খুললো। দেখলো লাল টকটকে ফ্রক পড়া একটা ছোট্ট পুতুল। গোলগোল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
অভিক হাঁটু মুড়ে বসে বললো
কি সুন্দর! কি হয়েছে আম্মি?
অনা হেসে তার গলা জড়িয়ে ধরলো।
অভিক কোলে তুলে গালে আদর দিয়ে বলল
ওরেবাবা আমি তো ভুলেই গিয়েছি আম্মিকে বখশিশ দেয়া হয়নি। আম্মি কত বখশিশ চায়?
অনা ওর গালে গাল লাগিয়ে হেসে বলল
সুজান।
অভিক তার দিকে চাইলো।
সুজান কি হয়েছে?
সুজানির কাছে যাবো।
অভিক তার গালে চেপে চুমু খেয়ে বলল
ওক্কে।
পমিচ বোলো অভি।
অভিক হেসে উঠে বলল
ওকে প্রমিজ আম্মিজান।
ঘরের ভেতর হৈহল্লা করে ঢুকে এল সবাই। বলল
আমরা সবাই রেডি। বউ দেখতে যাব।
অভিক ভুরু কুঁচকে তাকালো অনার দিকে। অনা খিকখিক করে হেসে আবারও জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মাথা রাখলো।
আচ্ছা এটা প্ল্যান ছিল?
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো
ইয়েসস।
আবিদ এসে গাল ফুলিয়ে বলল
অভি বুনুকে কুলে নিচে।
অভি অনাকে রেখে তাকে কোলে তুলে দুগালে আদর করলো। তারপর বখশিশ দিল সবাইকে। আনিকা বলল
আমারও।
অভিক তাকেও বখশিশ দিল। বলল
সালাম ছাড়া সালামি?
আনিকা হেসে তার সামনের চুল টেনে দিয়ে বলল
তুই আমাকে সালাম করবি।
করতেই পারি। সম্পর্কে তুমি বড়। কিন্তু বয়সে বড় কে?
আনিকা হেসে উঠলো। কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল
সালাম নিয়েন ভাইজান।
অভিক হাসলো।
সালমা বেগম ঘরে প্রবেশ করলেন। হাতে কফির মগ। মগটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললেন
সুজানাকে তোর মামী আর খালাম্মা দেখতে চাচ্ছে।
অভিক সাথে সাথে বলে উঠলো।
নো ওয়ে। এত ঝামেলায় ফেলে লাভ আছে উনাদের? পরে।
সালমা বেগম অবাক চোখে তাকালেন। জিনিয়া বলল
বাবারে বাবা শ্বশুরবাড়ির জন্য এখন থেকে যা দরদ!
আনিকা বলল
আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে। সুজানাকে এখানে নিয়ে আসলে কেমন হয়? সবাই দেখতে পারবে। ভালো হবে না?
অভিক বলল
খুব খারাপ হবে না।
ধুরর সোজা কথা বল। তুই গিয়ে সুজানাকে নিয়ে আয়। খুব মজা হবে। তরী খড়ি যাক তোর সাথে।
হুমম।
সালমা বেগম বললেন
কি হুম ? তোর যাওয়া উচিত। সাথে ওকে নিয়ে আসবি। ব্যস।
অভিক আবিদের গালে টুপ করে আদর বসিয়ে বলল
আপনিও যাবেন জুনিয়র?
হ্যা সুজান বাড়ি যাবো।
অনা বলল
অভি অভি আমি যাব।
অভিক বলল
ওকে।
আনিকা বলল
সুজানাকে একটা ফোন দেব?
অভিক কফির মগে চুমুক দিয়ে মাথা নাড়ালো।
দেব না? কেন?
সারপ্রাইজ থাকুক।
ওহ আচ্ছা আচ্ছা তুমি এত সারপ্রাইজ দিতে পছন্দ করো তাকে। বুঝিতে পারিয়াছি।
সবাই হাসলো। তরী বলল
তাহলে আমরা রেডি হই? জিনি আপু তুমি যাবে না?
জিনিয়া অভিকের দিকে তাকালো।
যাই?
ইয়াহহ।
থ্যাংকিউউউ।
তারা সবাই রেডি হতে চলে গেল।
****
অভিক রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে সেই তখন থেকে সিজান আর রিছানের সাথে।
আনিকাকে ডেকে বলল
ওদের হয়েছে?
ওরা একটু সাজগোছ করছে। তোর দেখছি তর সইছে না।
আর পাঁচ মিনিট। তারপর আমি চলে যাব।
আনিকা দ্রুত পায়ে হেঁটে তাদের কাছে চলে গেল তা জানাতে। তারা নেমে এল রেডি হওয়ার পর। অভিক তাদের দেখে বলল
ময়দার দাম এজন্যই এত বেশি।
জিনিয়া বলল
কি বললে?
কিছু না। লেটস গো।
ওদের সাথে সাথে অনাকে দেখলো অভিক। সাদা গোলাপি একটা স্কার্ট পড়েছে। অভিককে দেখে ছুটে আসলো। অভিক তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
আবি কই?
আবি সুসু কততে গেচে।
সবাই হেসে উঠলো তার কথায়। সালমা বেগম বললেন
জরুরী সময়ে তার সুসু পায়।
আবিদ আনিকার কোলে করে এল। রিছান তাকে কোলে নিয়ে বলল
যাওয়া যাক আবিদ সাহেব।
_________
আছরের আজানের পরপরই বন্ধুরা এসেছে সুজানার বাড়িতে। তারা সবাই একসাথে সবার বাড়ি যাবে। তারপর নীলা ম্যামের বাড়িতে যাবে উনি অনেক জোরাজুরি করেছেন যাওয়ার জন্য। সুজানা আহিরের বাড়িতে গিয়ে মাত্রই পৌঁছেছিল তারমধ্যে সাইফ ফোন করে জানালো যে ওই বাড়ি থেকে মানুষ এসেছে। সে যেন দ্রুত চলে আসে।
বন্ধুদের রেখে একপ্রকার ছুটে এল সে। যদিও জায়িনদের বাসায় যাওয়া হয়নি কিন্তু এমতাবস্থায় ওইখানে থাকা আর সম্ভব না। কতগুলো দিন পর একটু সামনাসামনি দেখা হবে।
সাজিয়া বেগমের সাথে তরী খড়ি আর জিনিয়ার অনেক গল্পগুজব হলো। অভিক এল তারও খানিকটা পরে সাইফের সাথে। ড্রয়িংরুমে সবাই বসা ছিল। অনা আবিদ সোফায় বসে সুজানের জন্য অপেক্ষা করছে আর আপেল খাচ্ছে। অভিক ড্রয়িংরুম পার হয়ে সাজিয়া বেগমের সাথে দেখা করার জন্য ভেতর রুমে পা রাখলো। উনার হাতে আঙুরের প্লেট। অভিককে দেখে উনি থেমে গেলেন। হাসলেনও।
অভিক সালাম করে বলল
ঈদ মোবারক।
সাজিয়া বেগম হেসে বললেন।
ঈদ মোবারক।
অভিক বলল কান মলে বলল
কি একটা অবস্থা। এত পালিয়ে থাকলে চলবে?
পালাচ্ছে কে?
মা মেয়ে দুজনেই।
এটা কোনে কথা? ও তো সন্ধ্যায় বেরুলো। মাস্টারমশাই আসবে জানলে কি বেরোতো?
সায়েম কোথায়?
ও বন্ধুদের সাথে। ঘরে থাকে নাকি? সেই রাত করে আসবে।
আচ্ছা। সুজানাকে নিয়ে যাই? বাসায় মামী আর খালামণিরা এসেছে। সবাই দেখতে চাচ্ছে।
কিন্তু….
আমি কোনো কিন্তু শুনতে আসিনি।
এভাবে যাওয়া আসা করলে লোকে মন্দ বলবে না?
আমি মন্দ কথা আমার কানে যায় না ?
ঠিক আছে। যেতে পারে কিন্তু রাতে আবার এনে দিতে হবে।
কেন? থাকুক। ওখানে সবাই আছে। সবার সাথে থাকবে। আমি না শুনতে আসিনি।
না না ওভাবে থাকাটা খারাপ দেখায়। লোকে কি বলবে? বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়িতে ওভাবে যাওয়াও যায় না। অনেক মন্দ কথা শোনাবে লোকে। না না।
অভিক বলল
আচ্ছা সুজানা যদি থাকতে চায়?
ও চাইবে না।
যদি চায়?
সাজিয়া বেগম ওর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালেন। অভিক হেসে বলল
আমি উনাকে রাজী করিয়ে নেব। আসি।
এমা কোথায়? কিছু তো খাওয়া হলো না। কতকিছু বানিয়ে রেখেছি মাস্টার আসবে বলে।
অভিক প্লেট থেকে আঙুর নিয়ে মুখে দিল। বলল
খাওয়ার সময় অনেককক পড়ে আছে। কত আসা যাওয়া হবে।
সাজিয়া বেগম হাসলেন। বললেন
ওরা তো প্রথম এসেছে বসুক না।
বসুক সমস্যা কোথায়? আমি সুজানাকে নিয়ে আসি।
ও আসছে তো।
আমি একটু আগ বাড়িয়ে নিয়ে আসি। সমস্যা কোথায়?
না সমস্যা নেই।
তাহলে আসি। টা টা।
সাজিয়া বেগম হাসলেন।
সাজিয়া বেগম বাকিদেরকে
হালিম, ফালুদা, শির কুরমা, আমের কুলপি আর ফলমূল সাজিয়ে দিল। অনা আবিদ খেতে খেতে বলল
তুমি সুজান আম্মু?
হ্যা।
সুজান নাই?
সাজিয়া বেগম তাদের আদর করে বললেন
আসছে।
__________
সুজানাকে আহির একটা সিএনজিতে তুলে দিয়েছে। সিএনজি থেকে নামার পর সরিষাবাড়ির পথ ধরতেই অনেকগুলো দোকানের দেখা। দোকান গুলো পার হয়ে যেই একটু নির্জন রাস্তায় উঠেছে দুটো কুকুর দেখতে পেল সাদা কালো। ভয়ে বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। সড়ক বাতির আবছা আলোয় দেখতে পেল একটা গাড়ি ধেঁয়ে আসছে তার দিকে। কিছুটা দূরে সেটি থেমেও গেল। সুজানা হাঁটা বন্ধ করলো না। সরু চোখে তাকাতে তাকাতে দেখতে পেল গাড়ি থেকে অভিক নামছে। সুজানা তারপর থেমে গেল। যদিও এখানে তাহার দেখা পাওয়াটা কোনো কাকতালীয় নয় কিন্তু চোখজোড়া ছানাবড়া হতেও সময় লাগলো না।
অভিক এগিয়ে গেল তার দিকে। চোখের মিলন হতেই দুজনের চোখজোড়া হাসলো ঠোঁটের সাথে। সুজানা হেসে বলল
ঈদ মোবারক।
অভিক হেসে বলল
শাদী মোবারক।
সুজানা হেসে উঠলো খলখলিয়ে। হাসার সময় ওর চোখজোড়া বন্ধ হয়ে যায়। অভিক ধীরপায়ে কাছে এগিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
কোথায় যাওয়া হয়েছে?
সুজানা ও নরম পায়ে হেঁটে যেতে যেতে বলল
সবার বাড়িতে গিয়েছি। শুধু জায়িন ছাড়া। বেশি সময় কেটেছে ম্যাডামের বাসায়। ম্যাডাম ছাড়তে রাজী নন। খুব ভালো উনি। আমাকে খুব স্নেহ করেন।
কেমন আছে আপনার বন্ধুরা?
তারা ভালো।
আপনার ম্যাডাম?
উনি বিচ্ছেদের আগুনে পোড়া একটা মানুষ। সবসময় ভালো থাকতে দেখা যায়। ভেতরের খবর তো আর আমি জানিনা।
বিচ্ছেদের আগুনে পোড়া মানুষগুলো কেমন হয়?
খাঁটি সোনার মতো।
অভিক তার কাছে এসে থামলো। বলল
আচ্ছা খাঁটি সোনা হতে গেলে বিচ্ছেদে পুড়তে হবে বলছেন?
যদি খাঁটি সোনা হতে চান।
উহু, আমি হতে চাই না। না মানে না। আমি অতশত কিছু বুঝিনা। আমি শুধু বুঝি থাকতে হবে, থেকে যেতে হবে, থাকা উচিত বরং না থাকাটা অনুচিত।
সুজানা নির্মল হাসলো।
অভিক তার নিকটে এসে দাঁড়ালো। মুখোমুখি। বলল
এই বিচ্ছেদের শহরে আপনি আমার থেকে যাওয়ার মানুষ হোন । অকারণে তো ভুলেও না, কারণেও ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবা যাবে না। পাপ হবে পাপ।
সুজানাকে বিমূঢ় হয়ে তাকাতে দেখে অভিক মাথা দুলিয়ে বলল
হুমম।
সুজানা ছোট্ট করে বলল
আপনাকে ছেড়ে দিলেই আমি ধ্বংস মাস্টারমশাই।
তারপর বাকিটা পথ তার হেঁটেই গেল।
হাত ধরে একসাথে চলা হয়নি হয়ত কিন্তু তাদের খানিকটা পথের এই গল্পগুলো আগের মতো ভালোবাসাহীন নয়। ভালোবাসারা তাদের গল্পেসল্পে ঠাঁই পেতে চায়।
চলবে………….
#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৬
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
সুজানা বাসায় পৌঁছে দেখলো সবাই ড্রয়িংরুমে বসে সাজিয়া বেগম আর রাশেদা বেগমের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।
সুজানাকে ফিরতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো। ঈদ মোবারক বলে কুশল বিনিময় আদানপ্রদান শেষে সুজানা বলল
আমি খুব খুশি হয়েছি সবাই এসেছেন বলে। তরী খড়ি কখন এল?
চারটের দিকে এসেছি আপু। আম্মু ও এসেছে। মামীও এসেছে। আর বলেছে যাওয়ার সময় তোমাকে নিয়ে যেতে।
সুজানা অভিকের দিকে ফিরে তাকালো। অভিক মাথা দুলিয়ে তরীর কথায় সম্মতি জানালো।
সাজিয়া বেগম বললেন
সবাই বসো। আমি চা টা নিয়ে আসি।
সাইফের সাথে সিজান আর রিছান প্রবেশ করলো। সুজানা বলল
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
ওয়ালাইকুমুস সালাম। বেড়ানো শেষ?
চলে এসেছি আপনারা এসেছেন শুনে।
রেডি হয়ে নাও। বেরোতে হবে তো।
সুজানা আমতাআমতা করে বলল
কিন্তু…
অভিক সোফায় বসে পড়ে বলল
আমরা কোনো কিন্তু শুনতে আসিনি।
অনা আবিদ এসে সুজানার হাঁটু জড়িয়ে ধরলো।
সুজান আম্মু ভালো।
সুজানা তাদের চুলে হাত বুলিয়ে হাসলো। নীচু হয়ে আদর করে দিল। বলল
তাই? আপনাদের ঈদের ড্রেস তো সুন্দর হয়েছে। দুটো পুতুল।
জিনিয়া বলল
আপু তুমি রেডি হয়ে নাও। আমরা বেরোবো।
সুজানা বলল
আচ্ছা আম্মার সাথে কথা বলি।
ওকে।
*******
সাজিয়া বেগম চায়ে চিনি হয়েছে কিনা চেক করতে করতে সুজানাকে বললেন
হাত মুখ ধুঁয়ে নে। ওরা যে ড্রেসটা দিয়েছে ওটা পড়ে নে। ওটা না পড়লে আবার অন্য কিছু মনে করবে।
সুজানা মাথা নাড়ালো। সাজিয়া বেগম ট্রে হাতে তুলে নিলেন। বললেন
আর ওইরকম কিছু জানতে চাইলে যেটা বলেছি সেটা বলবি।
আমি কি ছোট। কি বলতে হবে আমি জানি আম্মা।
ঠিক আছে। রেডি হয়ে নে।
সাজিয়া বেগম চায়ের ট্রে নিয়ে রান্নাঘর পার হতে যাবে তখনি অভিককে দেখতে পেল। সে এসে চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে নিল। বলল
শুনতে চলে এসেছি কি শলাপরামর্শ চলছে। সুজানা যাচ্ছে?
সাজিয়া বেগম হাসলেন। বললেন
হ্যা।
গুড। না গেলে কিন্তু সুজানারই লস।
কিসের লস?
সালামি পাবে না।
সাজিয়া বেগম হেসে বললেন
ওহহ।
অভিক সুজানার দিকে তাকালো। বলল
তাহলে রেডি হয়ে নিন?
সুজানা মাথা নাড়ালো। বলল
আপনি চা খান?
সাজিয়া বেগম বললেন
ওমা চা খায় না? তো কি খায়? কফি ? জানা ছিল না তো।
অভিক বলল
কে বলেছে খায় না। যেটা যেখানে ভালো। হতে পারে করিমের আন্টি চা খুব ভালো বানায়। না খেলে তো লস খাব। তাই না?
সাজিয়া বেগম হেসে উঠলেন।
সুজানাও হাসলো। কাকে কিভাবে বুঝ দিতে হয় তাতে একদম ওস্তাদ।
——–
সুজানা অভিকের দেয়া সেলোয়ার-কামিজটা পড়ে নিল। ড্রেসটা মেরুন আর সোনালী রঙের। ওড়নায় ভারী কাজ। কামিজের বুকে আর নীচে হাতে কাজ। সুজানার ভারী পছন্দ হয়েছে। মাস্টারমশাইয়ের পছন্দ তার অপছন্দ হবে না কভু।
সে ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে খানিকটা সাজুগুজু করে ঘর থেকে বেরুতে যাবে তখনি জিনিয়া আর তরী চলে এল। বলল
রেডি?
সুজানা মাথা নাড়ালো।
**
সাজিয়া বেগম সবাইকে সালামি দিলেন। সবাই নিতে না চাইলেও জোর করে দিলেন। অনা আবিদ বখশিশ পেয়ে সে কি খুশি।
অভিককে বলল, সুজান আম্মু বখশিশ দিচে।
অভিক রিছান আর সিজানকে রুমালের ভেতরে করে বখশিশ দিলেন। অভিক বলল
কি এগুলো?
সামান্য বখশিশ। এসব নিতে হয়। খুশি হয়ে দেয় তাই খুশি হয়ে নিতে হয়।
অভিক তাই আর কিছু বলল না।
তারপর সবাই একসাথে বেরিয়ে পড়লো।
______________
নবকুঠিরে পৌঁছুতেই গাড়ি থেকে নেমে সবাই সুজানাকে রেখে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। জিনিয়া সবাইকে ডেকে বলল
বউ চলে এসেছে। বড় মামী ছোট মামী মিষ্টি নিয়ে আসো।
আনিকা চলে গেল সুজানার কাছে। সালমা বেগমের পেছন পেছন আনজুমা বেগম আর অভিকের ফুপী মামী খালামণি সবাই গেল। সুজানাকে তখনো দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সবাই।
সবার সাথে কুশল বিনিময় পর্ব শেষ হলো। সবার সাথে সুজানার পরিচয় করিয়ে দিলেন সালমা বেগম। প্রথম দেখা হওয়ায় সবাই মিষ্টিমুখ করিয়ে ঘরে নিয়ে এল।
আজীম সাহেব এসে বলল
সুজানা চলে এসেছে?
সুজানা সালাম করতেই উনি মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিয়ে বললেন
ঈদ মোবারক সুইটি।
সুজানা হেসে বলল,
ঈদ মোবারক আঙ্কেল।
অভিক ফারদিন আজকাল কাজের কাজ করছে সব। গুড জব মিস্টার।
অভিক মাথার পেছনে চুলকে বলল
থ্যাংকস বাবা।
তারপরেই দাদু এলেন। বললেন
আমার নাতিবউ এসেছে?
সুজানা উনাকে সালাম করে বলল
ঈদ মোবারক দাদু।
ঈদ মোবারক বোন আমার। তুমি ভালো আছ তো? তোমার মা ভাই ভালো আছে?
আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো।
এই দেখ আমার ভাইয়ের পছন্দ কত সুন্দর। যেমন পোশাক তেমন মানুষ।
একথা শুনে ভরা মজলিশে সুজানা ভারী লজ্জা পেল। অভিক বলল
ওকে আমি এখন ঘরে যাই। প্রচুর টায়ার্ড।
সে চলে গেল।
সুজানা সবার সাথে বসে কিছু সেমাই মিষ্টি খেল। মামী আর খালামণিদের সাথে কথা বলতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল।
আবিদ এসে বলল
সুজান অভি ডাকে।
সুজানা সবার দিকে তাকালো। অভিকের খালামণি বললেন
যাও।
সুজানা চলে গেল। অভিকের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিতেই অভিকও উঁকি দিয়ে তাকালো। বলল
আমার ঘরে কি?
সুজানা হাসলো। বলল
তাহলে চলে যাই?
কি আজব! বলবেন এটা আমার ঘর। এটাও শিখিয়ে দিতে হবে?
সুজানা মাথা নামিয়ে হাসলো। ঘরে ঢুকে পার্সটা বিছানায় রেখে বুক সেলফের কাছে গিয়ে বইগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলো। বলল
আপনি মাসে কয়টা বই কিনেন?
হিসেব থাকেনা। যখন যেটা পাই।
সুজানা একপাশে অনেকগুলো নতুন বই দেখলো। বলল
এগুলো নতুন কিনেছেন মনে হচ্ছে।
আপনাকে নিয়ে পড়ব বলে কিনেছি। আপনি কখন আসছেন?
সুজানা একটা বই নিল হাতে। সবসময় তাকে লজ্জায় ফেলার ধান্ধা।
বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলল
এই বইটার অর্ধেক আমার পড়া হয়েছে।
অভিক তার পেছনে এসে দাঁড়ালো। বলল
আমার তিনটে প্রশ্নের উত্তর দেয়া বাকি। মনে আছে?
সুজানা বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
হ্যা। খুব মনে আছে।
কয়টার উত্তর পারবেন?
তিনোটার।
সিরিয়াসলি?
সুজানা মাথা দুলালো।
কিন্তু এখন জানতে চাইবেন না।
কেন?
সুজানা বইটা দিয়ে মুখ ঢেকে হাসলো। অভিক বইয়ের অপর পাশে তার কপাল ঠেকিয়ে বলল
ঠিক আছে। আপনার সালামিটা নিন এবার।
সুজানা বইটা ধীরে ধীরে নামালো। দেখলো একটা চকচকে হাজার টাকার নোট।
নিন।
সুজানা নিল। বলল
আম্মা দিয়েছে বলে শোধ দিচ্ছেন?
অভিক অবাক চোখে তাকালো।
কি আজব ব্যাপার! আমি আমার বউকে সালামি দেব না? যতই হবু হোক।
আপনার আম্মা কি দিল সেটা তো আমি খুলেও দেখিনি। এখন দেখি। ওয়েট।
অভিক তার পাঞ্জাবিটা নিল। পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুমালটা বের করে সুজানার কাছে চলে এল। রুমালের ভাঁজ খুলতেই দেখলো
দুটো পাঁচশ টাকার নোট।
তারপর রুমালে হাতের কাজ করা তোলা ফুল আর সুঁতো দিয়ে লেখা “জামাইরাজা”।
অভিক হাসলো। সুজানাকে দেখিয়ে বলল
কি সুন্দর! এটা আমি খুব যত্নে রাখব।
আম্মা এটা রমজানে বসে বসে তুলেছে। আমি দেখতে চেয়েছিলাম। দেখাইনি। আম্মা করিমকে খুব ভালোবাসে।
জরিনার মতো?
সুজানা বই দিয়ে মুখটা আবারও ঢেকে নিল।
বাইরে থেকে হাসাহাসির আওয়াজ ভেসে এল। আনিকা বলল
আসা যাবে?
সুজানা অপ্রস্তুত হয়ে অভিকের দিকে তাকালো।
অভিক বলল
আসা যাবে না কেন?
না মানে আমরা ভুল সময়ে টময়ে এসে পড়িনি তো।
সব বাজে কথা।
ওরা ঘরে ঢুকলো মিটিমিটি হেসে। সুজানা বলল
আপনারা হাসছেন কেন?
এমনি এমনি।
সিজানের বউ তানিয়া বলল
নতুন বউ কোথায়?
আনিকা সুজানাকে দেখিয়ে বলল
এইটা।
সুজানা সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কোলের বাবুকে দেখে বলল
বাবু তো ঘুম।
হ্যা আমি বাবুর সাথে রুমে ছিলাম। ঘুম চলে এসেছিল। আপনি এসেছেন শুনে চলে এসেছি।
তরী আর খড়ি বিছানায় উঠে বসলো অভিকের ফোন নিয়ে। অভিক বলল
ফোনের চার্জ শেষের দিকে।
শেষ হলে দেখা যাবে।
সবাই বিছানায় গিয়ে বসলো। সুজানা বইটা সেলফে রেখে তাদের সাথে বসলো। দরজা ঠেলে অনা আবিদ চলে এল। সেন্টু গেঞ্জি গায়ে। গরমের কারণে ঈদের জামাকাপড় খুলে ছুঁড়ে ফেলেছে।
দু’জনেই বিছানায় উঠে সুজানার পাশ ঘেঁষে বলল। আনিকা সুজানাকে দেখিয়ে জানতে চাইলো।
কে এটা?
সুজান।
আর কি?
টিচার।
আর?
অভির বউ।
সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
অভিক বলল
এসব ট্রেনিং দেয়াও হয়ে গিয়েছে? ব্র্যাভো!
জিনিয়া ওর ড্রয়ার থেকে লুডু বোর্ড করে বলল
ব্রোহ চলো লুডু খেলি। আমি, তুমি, ভাবী আর তোমার বউ।
কি একটা অবস্থা! এখনো বউ হয়নি বউ বউ শুরু করে দিয়েছ। বউ হয়ে গেলে তখন কি বলবে?
জিনিয়া খিক করে হেসে বলল
ইসতিরি।
সবাই আবারও হেসে উঠলো।
তানিয়া বাচ্চা নিয়ে বসে থাকলো।
জিনিয়া কাগজে এক, দুই, তিন চার লিখে লটারি দিল। এক আর দুই এক পক্ষে থাকবে, তিন চার অন্য পক্ষে। লটারিতে সুজানা আনিকার সাথে পড়লো। অভিক আর জিনিয়া অন্য পক্ষে।
তরী ফোনে মনোযোগ রেখে বলল
এর পরের বার আমরাও খেলব।
ওকে।
খেলা শুরু হলো। শুরুতেই স্বাভাবিক খেলে যাচ্ছিলো সবাই। সুজানার সব গুটি ছক্কা দিয়ে উঠে গিয়েছে। অভিকের একটাও না। সে মন খারাপ করে বলল
এটা কোনো কথা?
আনিকা বলল
আজ তোরা হারবি। দেখে নিস।
খেলার মাঝপথে জিনিয়ার গুটি কেটে দিল আনিকা তারপর পরপর সুজানাও কেটে দিল। সে অভিককে বলল
ধ্যাত তুমি কোনো খেলাই পারো না।
অভিক বলল
তুই খুব পারছ দেখতেই পাচ্ছি।
একদম ওরকম বলবে না। আজ হারলে তোমার জন্য হারবো।
আনিকা খিকখিক করে হেসে বলল
আহ মাথা নষ্ট হয়ে গেল দু’জনের। সুজানা হারলে চলবে না।
অভিক চুপচাপ খেলছে। তার হার জিত নিয়ে সমস্যা নেই। জিতলেও সে জিতবে, হারলেও সুজানা জিতবে। সমস্যা কোথায়? কই বাত নেহি।
তারপর ঘ্যাচাং করে সুজানার তার একটা পাকা গুটি কেটে দিল। অভিক হা করে তাকালো। বলল
হাউ সেলফিশ ইউ আর সুজানা! আমি আপনার একটা গুটি কাটিনি কিছু আগে।
সুজানা বলল
কি?
জিনিয়া বলল
কিহ? গুটি কাটোনি?
বলেই ঠাস ঠাস অভিকের বাহুতে মেরে দিল।
অভিক বলল
সুজানা এটা কি করলেন? আপনার জন্য কতগুলো মার খেলাম।
সুজানা হাসলো। বলল
আমি কি বলেছি আমার দিকে টানতে।
জিনিয়া নাকিসুরে কেঁদে বলল
বউয়ের দিকে টানছে। অসভ্য ছেলে। তুমি আর একটা গুটিও সরাবে না। তোমার গুটি আমি চালাবো।
অভিক গালে হাত দিয়ে
ওকে ফাইন।
শেষমেশ সুজানা আর আনিকাই জিতলো। আনিকা সুজানাকে জড়িয়ে ধরে বলল
ভালো মেয়ে।
অভিক বলল
আমি গুটি কাটিনি বলে জিতেছেন।
সুজানা বলল
কাটেননি কেন? আমি বলেছি?
কি আশ্চর্য! যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর।
সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
চলবে……..