#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_ঊনিশ
-‘ কিছুদিনের জন্য গেস্ট টিচার হয়ে এসেছিল। কাজ শেষ তাই রিজাইন করেছেন।’
-‘আর কখনোই আসবে না উনি?’
-‘না। তাছাড়া উনি প্রফেশনাল টিচার নন উনার পেশা অন্যকিছু। আমি সঠিকটা জানি না যদিও। তবে শুনেছি আর কি! তবে উনাকে কলেজ থেকে অফার করা হয়েছিল থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু উনি থাকেন নি। কিছুক্ষণ আগে শুনলাম দেশ ছাড়ছেন। আগামীকালকে সন্ধ্যায় ফ্লাইটে চলে যাচ্ছেন।’
-‘কোথায় যাচ্ছে?’
-‘যেখান থেকে এসেছিল, সম্ভবত সেখানে।’
মোবারক স্যারের কথা শুনে কুহু অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ সে ভেবে হিসাব মেলাতে পারছে না। সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা। মন দিয়ে সবই শুনল কিন্তু সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগল। সকাল থেকে কি সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। বলা নেই, কওয়া নেই, রিদওয়ান কোথায় চলে গেল, গতকালকে বিকেলে নাকি বৃষ্টিই হয় নি। রিকশাওয়ালা তখন তাইই বলল, অথচ সে
বৃষ্টিতে ভিজেছে। ছাদে গিয়ে ইচ্ছেমতো ভিজেছে। কলেজে আসার পর কি হলো? নিকিতা তার গলার তিলটাই খুঁজে পেল না। অথচ এই তিলের জন্য রিদওয়ান তাকে পছন্দ করে। বলা বাহুল্য ভীষণ পছন্দ করে৷ কত কি বলে প্রশংসা করে।সে এ কয়েকদিনের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করল। কিন্তু তেমন কিছুই স্মরণে এলো না৷ শুধু মনে হলো রিদওয়ান গতকাল তাকে সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে বলেছিল। সে সরাসরি নাকচ করেছে। আর? আর কিছু কি ঘটেছিল.. করেছিল…অথবা বলেছিল? সম্ভবত না! কি আশ্চর্য! আজকাল কি সে কথা মনে রাখতে পারছে না। তারচেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে সে ভাবছে, প্রচুর ভাবছে। তার ভাবনায় শেষ হচ্ছে না। আর ভাবতে ভাবতে তার নিজস্ব ভাবনার জগৎ তৈরি হচ্ছে। যেখানে সে ভাবনা জমা করে। গুছিয়ে রাখে। সেখানে শুধু তার অধিপতি। তার কথা বিরাজমান। এ মুহূর্তেও সে ভাবছে আর ভাবছে বলে এখন ডাউট হচ্ছে রিদওয়ান সত্যিই কি তাকে সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে বলেছিল? নাকি এটাও তার ভাবনার একটা অংশ ছিল? নাকি অপছন্দের মানুষটাকেও
ভাবনা রাজ্যের বাসিন্দা করে ফেলেছে। যেগুলো ঘটে নি সেগুলোকেও বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে? একথা ভেবে এবার তার নিজের মাথা ঘুরতে লাগল। আসলেই কি তাই? আদৌ সম্ভব এটা? কি বিরক্ত! কি জ্বালা! এমন হয় নাকি? আজকাল সে বাস্তব জীবন আর ভাবনার জগৎ আলাদা করতে পারছে না। ভাবনার জগতের চিন্তা-ভাবনা, কথোপকথন, সবই বাস্তব জীবনের সঙ্গে গুলিতে ফেলছে।
মাঝে মাঝে ভাবনার জগতকে ওর বাস্তব বলে মনে হচ্ছে আবার কখনো কখনো বাস্তবকে তার মনে হচ্ছে মামুলি কোনো ভাবনা।
সবকথার এক কথা রিদওয়ানের জায়গায় এখন মোবারক স্যারকে তার পছন্দ হচ্ছে না। ক্লাসে মন বসছে না। কান আর মাথার মধ্যে অদ্ভুতস্বরে
পোঁ পোঁ শব্দ হচ্ছে। খুব বিরক্ত লাগছে। স্যারের অযথা বকবকগুলো ওর মস্তিষ্কে বারি খেতে খাচ্ছে। খুব অসহ্য লাগছে মোবারক স্যারকে। এই যে অকারণেই হাসা। আজাইরা বকবক। সবকিছুই বিরক্তিকর। স্যার হওয়া উচিত রিদওয়ানের মতো। ক্লাস থাকা মানেই সিংহের মতো ভাব বজায় রাখা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সবার দিকে নজর দেওয়া। তার পছন্দমতো কিছু না হলেই শাস্তি। নিজের শাস্তি নিজের চুজ করার অপ্রিয় নিয়ম জারি।এসব
কিছুতেই যেন আলাদা কিছু মিশে আছো। জড়িয়ে আছে। না, তার আর ভালো লাগছে না। কেন জানি শূন্য শূন্য লাগছে। সে এবার দাঁড়িয়ে গেল।
স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনয়ীভাবে স্যারকে জানাল, তার হঠাৎ খুবই শরীর খারাপ করছে। ক্লাস করা তার পক্ষে সম্ভব নয়৷ এই মুহূর্তে বাইরে যেতে চায়। নয়তো বমি করে ক্লাস ভাসিয়ে দেবে আর নয়তো সে জ্ঞান হারাবে। একথা শুনে মোবারক স্যার পারমিশন দিতেই সে ছুটে বেরিয়ে গেল। কলেজে থেকে বেরিয়ে সোজা গেল, নন্দনপার্কে। তেমন কেউ নেই এখানে। বিকেলের দিকে একটু আধটু ভিড় হয়। মন খারাপের মতো এক বিশ্রী অনুভূতি নিয়ে বাসায় ফিরতেও ইচ্ছে করছে না। তারচেয়ে এখানে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটাক। ভাবনার দুয়ার খুলে বসুক।
সে পার্কে প্রবেশ করে সফেদা গাছের নিচে চুপ করে বসল। গলায় হাত বুলিয়ে থম মেরে রইল। সেলফি নিলো। সেলফি জুম করে গলা দেখল।
তার গলায় তিল নেই। অথচ রিদওয়ান বলেছিল তিলের জন্য নাকি সে খুব ভালোবাসে। তিলটা দেখলে রিদওয়ানের পাগল পাগল লাগে। বড্ড কষ্ট হয় তার নিজেকে সামলাতে। গতরাতেও সে পাগলামি করল। অথচ
এখন দেখে তিলই নেই।তাহলে কে সত্যি, তিল? রিদওয়ানের বলা কথা? নাকি ওর চোখে দেখা? সবকিছু জট পাকিয়ে তার মাথা এলেমেলো হয়ে গেল। সে দুই হাঁটুর উপর থুতনী ঠেঁকিয়ে কাঁদতে লাগল। কি হচ্ছে এসব?
মাঝে মাঝে তার মনে হয় জীবনটা ভীষণ সুন্দর। আবার ক্ষণিকেই মনে হয় জীবনের মতো গোলমেলে জিনিস আর কিছুই নেই। জীবনের কথা বাদ। কিন্তু মেয়ে হওয়া যেন আরো বড় পাপ। এই যেমন, সে খুব ভালো করে বুঝে রিদওয়ান তাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে বাসে। আবার মাঝে মাঝে এমন ব্যবহার করে যেন তাকে সে চেনে না। পছন্দ করে না। একটু
এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। এ কেমন ব্যবহার রিদওয়ানের? মানুষ এত দু’মুখো হয়ে কি করে? সে আর ভাবতে পারল না চোখের সামনে চরকির মতো রিদওয়ানের মুখ, রুপকের মুখ, বাবা, মা, আর তাদের সবার সঙ্গে কাটানো সুখের মুহূর্তের দৃশ্যগুলো ঘুরতে লাগল। সে এবার নিজেকে খুব অসহায় বোধ করল। ঘামতে লাগল। হাত-পা সহ সর্বাঙ্গ কাঁপতে লাগল থরথর করে। এখন বাসায় যাবে কিভাবে? বাসার পথটা বা কোনদিকে?
কোন দিক দিয়ে এসেছিল?
তাকে এই অসহায় অবস্থায় থেকে উদ্ধার করল রুপক। আধাঘন্টা আগে
সে পিয়াসের ম্যাসেজ পেয়েই ছুঁটে এসেছিল। হন্ন হয়ে বোনকে খুঁজতে খুঁজতে পনেরো মিনিট আগে এখানে পৌঁছেছে। এতক্ষণ অদূরে দাঁড়িয়ে সে তাকিয়ে দেখছিল অসহায় কুহুর কান্না। বোনের কান্না তার বুকে যেন শূলের মতো বিঁধছিল। কিছু করতে না পেরে অসহায় হয়ে বোনের দিকে তাকিয়েছিল। রিদওয়ান তো ঠিকই চলে গেল। কিন্তু সে কি করবে? কিছু করার আছে কি তার? সে ভাই! বড় ভাই! বড় ভাইদের অনেকক দায়িত্ব। আর দায়িত্বশীল ভাইয়েরা কখনো বোনদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। সে পারার কথা চিন্তাও করে না। সে ভালোবাসে, প্রচন্ড ভালোবাসে তার এই
ছোটো বোনকে। কারণ তাদের এক্সিডেন্টের পর থেকে বোনটা শারীরিক দিক থেকে ফিট হলেও মানসিক দিক দিয়ে ভীষণই সিক। সে দাঁড়াল না। এগিয়ে গেল কুহুর কাছে। বোনের মাথায় হাত রাখল। কারো স্পর্শ পেয়ে কুহু মাথা তুলে অশ্রুভেজা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখল। আর এ মুহূর্তে ভাইকে পেয়ে সে অসহায়ের মতো আকঁড়ে ধরল ভাইয়ের হাত। ভাইয়া! বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। রুপক কাঁদল না। হাসলও না। শুধু রক্ত বর্ণ চোখ নিয়ে বোনকে স্নেহডোরে বুকে আগলে নিলো। মাথায় আলতো করে হাত বুলাতে বুলাতে ভেজা কন্ঠে বলতে লাগল, ‘বনু কাঁদছিস কেন? তোর ভাইয়া আছে না? কাঁদিস না। আমি আছি। তোর ভাইয়া সব সময়
তোর পাশে আছে। সারাজীবন থাকবে।’
কুহু জবাব দিলো না। অসহায় হয়ে ভাইয়ের বুকেই পড়ে রইল। এটা আর নতুন কি! বিগত কয়েক বছর ধরে রুপক এভাবে ই আগলে রাখছে তার কলিজার টুকরো বোনটাকে। আমরণ আগলে রাখবে। কেন রাখবে না? ছোটো বোন হয়ে যদি ভাইকে বাঁচাতে চলন্ত বাসের সামনে থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পারে। তাহলে সে কেন সারাজীবন অসুস্থ বোনটাকে আগলে রাখতে পারবে না? সে পারবে।অবশ্যই পারবে। কারণ বড় ভাইরা সব পারে।
–
সেদিনের পর থেকে রিদওয়ানের সঙ্গে আর কারোই যোগাযোগ হয় নি।
তবে সে সত্যিই দেশে ছেড়েছে। কুহুদের বাসা থেকে বেরিয়ে সে দুইদিন হোটেলে থেকে ফিরে গেছে অচিন পুরীতে। তার কর্মস্থলে। আর কখনো আসবে কি না তাও জানে না কেউ। রুপকও আর যোগাযোগ করে নি। বন্ধু হয়েছে তাতে কি! সবাই ভালো থাকুক সবার মতো। সবারই ভালো থাকার অধিকার আছে। সেদিন ইসমত আরা বাসায় ফিরে সব শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। নীরবে কেঁদেছিলেন। কেন কেঁদেছিলেন তা জানেন না তবে খুব কেঁদেছিলেন। এরপর আবারও পূর্বের মতো দিনগুলো কাটতে
লাগল। এরমধ্যে রুপক কুহুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। কারণ কুহুর একটাই কথা সে অসুস্থ না। সে যাবে না। আর তার এই যেতে না চাওয়াটাও সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ।
সিজোফ্রেনিয়া হলো এক ধরনের মানসিক রোগ। এই রোগে ব্যক্তিদের মধ্যে বাস্তব চিন্তা একদম কমে যায়, বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন হয়, গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়, যা ঘটেনি বা যা নেই এমন জিনিসে বিশ্বাস করে। এটি মূলত সাইকোটিক ডিজঅর্ডার। এই রোগীরা মানতেও চায় না তারা কোনো রোগে ভুগছে। এজন্য চিকিৎসকের কাছেও তারা যেতে চায় না। কুহুর এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছি এক্সিডেন্টের ছয়মাস পর থেকে৷ এবং
সেটা চিকিৎসার মাধ্যমে আয়ত্তে ছিল। কিন্তু হঠাৎ সেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইরোটোম্যানিয়ার রোগের কিছু কিছু উপসর্গ।
এটা আবার অদ্ভুত রোগ। এই রোগের ব্যক্তিরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন উচ্চ অবস্থানে থাকা কোনো ব্যক্তি তাঁর প্রেমে পড়েছে ৷ তাকে খুব কাছে পেতে চাচ্ছে। তার প্রতি অধিকার খাটাচ্ছে। আর এটাই ঘটেছে কুহু আর রিদওয়ানের সঙ্গে। নয়তো রিদওয়ান জানে তার সীমাবদ্ধতা। তবুও সে কেন রাতেব বেলা কুহুর রুমে যাবে? অযাচিত স্পর্শ করবে? তাছাড়া কুহু নিজেই ভেতর থেকে তার রুমের দরজা আঁটকে দিয়েছিল (১৬ নং পর্বে উল্লেখ করা আছে)। বন্ধ রুমে সে কিভাবে রুমে ঢুকবে? কিভাবেই বা কুহুর উপর নিজের অধিকার খাটাবে? তাছাড়া যতই বেপরোয়া হোক
যেচে পড়ে কেন বন্ধুত্ব নষ্ট করতে যাবে। সে অবুজ নয়। বরং খুব ভালো করেই জানে একাজ করলে তাদের বন্ধুত্বে টান পড়বে।
এইদিকে,
রুপকও জানে তার বোন অসুস্থ। বন্ধু আর বোন বাসায়। তবুও সে কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? কোনো ভাই বসে থাকতে পারে? বসে থাকা সম্ভব? যতই বন্ধু হোক। চিন্তা হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? রিদওয়ানের
বন্ধু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে একজন বড় ভাই। বোন আছে অথচ চিন্তা হবে না এটা ভাবা বোকামি। আর চিন্তার বশেই ফাইল তৈরির অজুহাতে বন্ধুর সঙ্গে সময় পার করেছে। অজুহাত দাঁড় করিয়েছে অন্যকিছুর। ব্যক্তিসম্পূর্ণ রিদওয়ানও একজন ভাইয়ের চিন্তা বুঝেও না জানার ভাণ করেছে। কারণ সেও কারো ভাই। সেও জানে এই পরিস্থিতিতে একজন ভাইয়ের চিন্তা কেন হতে পারে। কেমন হতে পারে!
To be continue………!!
#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_বিশ
–
–
–
‘কোনো এক বৃষ্টিরদিনে চুপিচুপি তোমার রুমে উপস্থিত হবো৷ নীলচে আলোর ড্রিম লাইটে তোমাকে দেখামাত্রই জাপটে নেবো বক্ষমাঝে।আর তুমি ছটফটিয়ে উঠবে। নিজেকে ছাড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করবে। আমি ছাড়ব না। বাঁধা মানব না। শুনব না কোনো কথা।বরং আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেবে আমার বুক পাঁজরে। আদরে আদরে ভরিয়ে দেবো তোমার গাল। ঠোঁট। মৃসন কাঁধ। কথা বলব ঠোঁটে ঠোঁটে। চোখে চোখ রেখে। আঙুলে আঙুলে গুঁজে। শোনো হে প্রিয়শী, বাক্য বিনিময় হবে না। কারণ, বারণ ঠাঁই পাবে না। হবে শুধু আদরের খেলা। বাইরে তুমুল বৃষ্টি।মেঘের গর্জন। সঙ্গে উন্মাদ আমি। আর এই আমিটাকে সামলাতে ব্যর্থ তুমি।’
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি বাঙালির আগ্রহ বরাবরই বেশি। যেখানেই বারণ সেখানেই খুঁজবে এরা কারণ, এটা বাঙালিদের চিরাচরিত বাজে স্বভাব।
এর ব্যক্তিক্রম নয় কুহুও। বয়স অল্প। মাথাভর্তি আবেগ। বয়স অনুযায়ী পছন্দসই কথাগুলো। সেদিন ফেসবুক লগইন করা মাত্রই সে দেখেছিল এমন একটা পোস্ট। কথাগুলো মন দিয়ে পড়েওছিল। কার পোস্ট, কে করেছে, দেখে নি। তবে লেখাগুলো বার বার পড়েছিল। ভেবেছিল। উক্ত পোস্টের কথাগুলো অর্থ বুঝে লজ্জায় লাল হচ্ছিল। ভবিষ্যত কল্পপুরুষ নিয়ে এমন পোস্ট দেওয়ার বাসনা জেগেছিল। মাথাতে গেঁথেছিল এমন
ঘটনা। মনে জেগেছিল মামুলি ভাবনা। ফলস্বরূপ ভাবনার ফল সেদিনের রাতের অযাচিত ঘটনা। যার ভাষা নেই। ভিত্তি নেই। শুধুই ভাবনা। ভাবনা হলেও এতটাই জোরালো যে ভুলতে পারে না এসব যাতনা। রিদওয়ানের অস্তিস্ত নেই এখানে। তার দোষ নেই। উপস্থিতি নেই। তবুও বেপরোয়া এ মন রিদওয়ানের দিকেই আঙুল তুলেছে। কারণ তার মন বিদ্রোহী সুরে বলে রিদওয়ান তাকে পছন্দ করে। ভালোবাসে। তার ভালোবাসা পেতে রিদওয়ান উন্মাদ।
মানুষ যা ভাবে তাই মনে মস্তিষ্কে গেঁথে যায়। তার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।
আপন মন। আপন শরীর।রোগের কারণে মানুষ ভুলে যায় নিজ শরীরের কথা। কুহুর গলার তিলের ক্ষেত্রেও তাই। এতদিন পরে সে এখন ভাবতে
শুরু করেছে তার গলায় চমৎকার একটা তিল আছে। ভীষণ সুন্দর সেই তিলটা। রিদওয়ানের ভীষণ পছন্দ। এটাও ভাবনা। আর তার গলার তিল নিয়ে করা ভাবনা এসেছিল কলেজ থেকে ফেরার পথে এক বাবড়ি চুল ওয়ালা বড় ভাইয়ার প্রেমালাপ শুনে। রাস্তাঘাটে দেখা যায় না? যারা পথ ঘাট ভুলে রাস্তা রাস্তা ফোনে কথা বলেই যায়। বলেই যায়। আগে পিছে কে আছে, না আছে, দেখে না। তেমনই মানুষ ছিল বাবড়ি চুলওয়ালা ভাইটিও। সে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই রগরগে গলায় প্রেমিকাকে বলছিল,
-‘জানো, তোমার গলার কুচকুচে কালো তিলটা আমাকে না পাগল করে দেয়। যখন দেখি আমার মাথা কাজ করে না। পাগল পাগল লাগে। আমি ভুলে যায় পাপ পূর্ণ্যের কথা। মন উস্কে বলে তিলটাকে আঁচড়ে, কামড়ে, আমাকে জ্বালানোর সাধ মিটিয়ে দিতে। কিন্তু পারি না। সম্ভব হয় না। কি যে বিধস্ত লাগে তখন।’
পুরো কথা শুনে কুহু থমকে দাঁড়িয়ে যায়। ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে। কেউ এভাবে কথা বলে? তিল আবার বিশেষ কিছু নাকি? তিলে কি থাকে যে লোকটার নিজেকে বিধস্ত লাগে? পাগল পাগল লাগে? সে মনে মনে কত কথা বলে। প্রশ্ন করে নিজেকে। তার হঠাৎ মনে হয় তার নিজের গলাতে এমন তিল থাকলে কেমন হতো? তার প্রেমিকও কি এভাবে বলত। তখন
তিলের কথাটাও তার মনে জেগে ওঠে। কত কি ভাবে। আর এখানে দাঁড় করায় মেয়েলি আরেকটা সমস্যা। যেমন, মেয়েরা সুন্দর জিনিস দেখলে নিজের জন্যও সেটা পাওয়ার আফসোস তৈরি করে ফেলে। কারো চুল, সুন্দর নখ, গায়ের রং, ডাগল ডাগল চোখ, দেখলেই মনে বাসনা জাগে, ‘ইস! আমারও যদি এত হতো।’ আমারও যদি হতো এই ব্যাপারটা কুহুর
মধ্যেও বিদ্যামান। ফলস্বরূপ সে এখন ভাবে তার গলায়ও তিল আছে।
আর এই দুটো কাহিনি ই ভিন্ন। ভিন্ন চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত। অথচ মনের ভাবনাগুলো এসে একসঙ্গে জুড়ে বসে আছে। মর্জিমতো তৈরি করেছে এক অভাবনীয় ঘটনার
_______
আতিকুর রহমান বসে আছে সহধর্মিণী নিলুফা ইয়াসমিনের মুখোমুখি। হাতে কফির মগ। দু’জনেই ব্যাক ইয়ার্ডে। এখানে দাঁড়িয়ে সব দেখা যায়।
ভীষণ সুন্দর এই এরিয়া টুকু। সামনেই নেইবার হুডের রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে মাঝারি আকারের সারি সারি ম্যাপেল গাছ। ম্যাপেল গাছেল লাল পাতা অন্যরকম সৌন্দর্যের অধিকারী। যাকে বলে নজরকাড়া সৌন্দর্য।
উনাদের ইয়ার্ডের কাছাকাছিই গাছের মগডালে দুটো পাখি বসে আছে। মাঝামাঝি আকৃতির। নাম ল্যাপউইংস। মাথা ঝুঁটি। ডাকছে আপনস্বরে।
এখন ঘড়িতে সময় বিকাল পাঁচটা। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। দলগুচ্ছভাবে পাখি ফিরছে আপন আলয়ে। ম্যাপেল গাছের পাতার মতো রং ধারণ করেছে লালিমাযুক্ত গোধূলি আকাশ। গাছের গোড়ায় জমা হয়েছে ঝরা পাতা।
সেই শুকনো পাতায় মড়মড় শব্দ তুলে একদল কাঠবিড়ালী দিকশূন্য ছুঁটছে কুকুরের তাড়া খেয়ে। আজ উইকেন্ড। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এই দিনটাকে আনন্দমুখর করতে রিমি এবং তার ফ্রেন্ডরা বারবিকিউ করার আয়োজন করছে। করছে হাসাহাসি। ছুটাছুটি। সব ঠিকঠাক করে যখন বারবিকিউ করতে যাবে তখনই দেখা দিলো ইলেকট্রনিক বারবিকিউ গ্রিল মেশিনে সমস্যা। হচ্ছে না। রিমির ফ্রেন্ডরা নিজেরা ঠিক করার চেষ্টা করল পারল না। অগত্যা রিমি তার আম্মুকে ডেকে নিয়ে গেল। নিলুফা ইয়াসমিন চেক করে কোনো সমাধানই করতে পারলেন না। সবারই মুড অফ হয়ে গেল। তখন রিদওয়ানের গাড়ি পার্কিং লটে এসে দাঁড়িয়েছে। সে গাড়ি থেকে নামতেই রিমি ছুটে এলো। হাত ধরে টেনে বাগানের দিকে নিয়ে যেতে যেতে তার সমস্যার কথা বলল। রিদওয়ান রিমির ফ্রেন্ডদের দেখে মুচকি হেসে হাই হ্যালো করল। তারপর নিজেও দেখল মেশিন ঠিক হবে না। তবে বাচ্চাদের মজা নষ্ট করতে ইচ্ছে করল না তার। তাই জর্জ আর ম্যাশানকে ডেকে কাঠ কয়লা দিয়ে বারবিকিউ করার ব্যবস্থা করে দিলো। জর্জ আর ম্যাশান বারবিকিউ করে দেবে। নয়তো এরা অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে। যা বিচ্ছু একেকটা। তবে এদেরমধ্যে সবচেয়ে ডেঞ্জারাস
বিচ্ছুর নাম লারা। মেয়ে হলেও প্রচুর ডেঞ্জারাস সে। বাবার গালফ্রেন্ডের গায়ে আগুন লাগানোর ট্রাইও করেছিল মেয়েটি। কিন্তু শেষ অবধি পারে নি। তারপর থেকে সে আর তার মা বাবার সঙ্গেই থাকে না। বাবার মুখও দেখে না। রাস্তায় কখনো দেখা হলে এমন ভাব করে যেন চেনেই না। মুখ্য কথা,লারা সর্ব সম্মুখে তাকে এই অবধি সতেরোবার প্রোপোজ করেছে।
আর সে সতেরোবারই নাকচ করেছে। এই নিয়ে কত হাসাহাসিও যে হয়। তবুও একজন প্রোপোজ করে ক্লান্ত হয় না আরেকজন নাকচ করতেও সময় ব্যয় করে না। লারা এই মুহূর্তে একবোল চিংড়ি নিয়ে বসে আছে। তার কাজ চিংড়ির সাসলিক বানানো। সে আবার এই একটা কাজই খুব ভালো মতো করতে পারে। এছাড়া এখন হবে চিকেন আর কোরাল মাছ বারবিকিউ। জর্জ আর ম্যাশান কাজে লেগে পড়েছে। সমস্যার সমাধান করে রিদওয়ান গাড়ি থেকে ফাইলটা হাতে নিয়ে রুমে গেল। ক্লান্ত শরীর নিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ল। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আপন মানুষজন, চেনা রুম, চেনা সবকিছু, তবুও শূন্য শূন্য অনুভব হচ্ছে। চোখের সামনে ভাসছে রুপকের মুখটা। হাসির আড়ালে সে বুঝেছে বন্ধুর কষ্ট। কিন্তু কি করবে সে? এসে অবধি খোঁজও নেওয়া হয় নি। রুপক রেগে খোঁজ করে নি সেও জানে। ওই বাসায় থাকা ওতার পক্ষে আর সম্ভব ছিল না। কারণ
একবার..দুইবার..তিনবারের বেলায় সবাই এসব বিশ্বাস করবে। ভাববে বন্ধুর বাসায় থেকে সুযোগ নিচ্ছে। যেটা মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভবই না। তাছাড়া প্রথম কয়েক সপ্তাহ কুহুকে ঠিকঠাক লাগলেও পরে অদ্ভুত আচরণ করতো সে। এই যেমন এক কথা বললে আরেকটা উত্তর দিতো।
ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে কিসব বিরবির করতো। অকারণে রেগে যেত। হাসত। সেদিন ইসমত আরা বেগম উনার ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় তাকে বলেছিল কুহুকে দেখে রাখতে। সেই সম্মতি জানিয়ে গিয়েছিল উনাকে এগিয়ে দিতে। ফেরার সময় সমস্যা বাঁধে স্বপন নামের বখাটের সঙ্গে। সে যেমন স্বপনকে আচ্ছামতো দিয়েছে স্বপনের চ্যালারাও তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সেই ব্যথায় জ্বর এসে গিয়েছিল। চুপ করে শুয়ে
ছিল নিজের রুমে। তারপর কুহুর ডাক ‘রিদ ভাইয়া! ভাইয়া! আপনি কি রুমে আছেন?’
পরপর কয়েকবার ডাকার পরও সাড়াশব্দ দিলো না। সত্যি বলতে ইচ্ছে ছিল না দরজা খোলার। তারপর ভাবল কোনো দরকার হবে বোধহয়।
তাই লাইট জ্বালিয়ে দরজা খুলল। কুহু পেছন ফিরে তাকে দেখে আঁতকে উঠল জিজ্ঞাসা করল, মাথার কি হয়েছে আপনার? ব্যান্ডেজ কেন?’
কন্ঠে যেন আতঙ্ক ঝরে পড়ছিল। সে তবুও জবাব দেয় নি আবারও গিয়ে শুয়ে পড়েছে। হতভম্ব কুহু প্রশ্ন করতে থাকল। একে তো মাথাব্যথা। তার উপর এসেছে আবার জ্বর। সে চোখ খুলে রাখতে পারছিল না। এমনিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। হঠাৎ কপালে কারো স্পর্শ অনুভব করল। না চাইতেও চোখ খুলে দেখে কুহু কপালে হাত রেখেছে। কিসব বলছে। তার বকবকানি শুনেও চুপ করে ছিল। জবাব দিতে ইচ্ছে করছিল না। মুখ্য কথা তার অস্বস্তি হচ্ছিল। তখন কুহু উঠে রুমাল আর পানি এনে বলল,
-‘টি শার্ট খুলুন। শরীর মুছে দিলে জ্বর নেমে যাবে।’
-‘লাগবে না। এমনিতেই কমে যাবে।’
-‘এত কথা বলতে ভালো লাগছে না আমার। যা বলছি করুন।’
-‘রুমে যাও। কিছু খেয়ে রেস্ট নাও।’
-‘কি খাবো? রান্নায় তো হয় নি। আপনি কলেজে যান নি কেন? এই অবস্থা কিভাবে হলো?’
-‘চলো আমি কিছু বানিয়ে দিচ্ছি।’
একথা বলে রিদওয়ান উঠতে গেলে কুহু তাকে থামিয়ে দিলো। তারপর
জানাল ভাত বসিয়েছে। ভাত হয়ে গেলে ডিম ভেজে খেয়ে নিতে পারবে। একথা শুনে উঠল না। বরং স্বস্তিই পেয়েছিল। তাকে নিশ্চুপ দেখে তখন
কুহু তার টি- শার্ট ধরে টানতে লাগল। সে বিরক্ত হয়ে তার হাত সরিয়ে বলল,
-‘কুহু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে এবার। বাসায় কেউ নেই। তুমি রুমে যাও। আমি ঠিক আছি। ‘
-‘ঠিক থাকলে এতক্ষণ নেন নি কেন? নিজের প্রতি এত অবহেলা কেন শুনি?’
-‘যত্ন নেওয়া মানুষ নেই তাই অবহেলা করি। এবার যাও।’
-‘যাও, যাও, করছেন কেন? আমি আপনার রুমে থাকতে আসি নি। যা করতে চাচ্ছি করতে দেন, করে চলে যাচ্ছি।’
-‘না।’
-‘কেন লজ্জা লাগে? রুপক ভাইয়াও বাসায় খালি গায়ে ঘুরে। আর আমি আপনাকে খালি গায়ে দেখলে হা করে তাকিয়ে থাকব তা নয়। এতটাও শেইমলেস না আমি।’
-‘আপনি গুড গার্ল আমি জানি। যান গিয়ে খেয়ে নিন।’
-‘আচ্ছা আমি ভাত নিয়ে আসছি। খেয়ে অন্তত মেডিসিন নিন।’
-‘না।’
-‘শুধু জেদ করছেন কেন?’
রিদওয়ান জবাব দিলো না। চোখের উপর হাত রেখে অনড় হয়ে শুয়ে থাকল। কুহু শক্তি খাঁটিয়ে কোনোভাবেই কিছু করতে পারল না দেখে উঠে চলে গেল। আর সে উঠে দরজা আঁটকে শুয়ে পড়ল। কুহু এতবার ডাকলেও দরজা খুলে নি। জবাবও দেয় নি। এরপর আর কিছু জানে না সে। যখন ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছিল রুপকের কল আসে তখন কথা হয়েছিল। ব্যস এইটুকই। এরপর জ্বর কমলে রান্না করে। কুহুর একবার উঁকি মেরে হনহন করে রুমে চলে যায়। এরপর আর দেখা যায় নি ওকে। তারপর রান্না সেরে ফ্রেশ হয়ে যখন খেতে বসে তখন দেখা হয় আবার।
দু’জনেই নিঃশব্দে খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়। অথচ মেয়েটা সকালে বলে, সে নাকি তাকে জড়িয়ে ধরেছে। লিপকিস করেছে, ছিঃ! এই রাগে সে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে। রুপকের সঙ্গেও কোনো কথা বলে নি।
যোগাযোগ করে নি। আর এসবের মধ্যে সে একটা ‘কিন্তু’ খুঁজে পাচ্ছে।
বারবার কিছু প্রশ্নে এসে আঁকটে যাচ্ছে। গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। এসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। কেন কুহু এসব বলল? কেন রুপকের কাছে তাকে ছোটো করতে চাচ্ছে? কেন তাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে? এই কেন এর উত্তর একমাত্র রুপকই দিতে পারবে। সে উঠে আধশোয়া হয়ে বসল। হাত বাড়িয়ে লেপটপ বিছানায় এনে অন করতেই খেয়াল করল কিছুক্ষণ আগে দুটো ইমেল এসেছে। আর দুটোই রুপকের ইমেইল থেকে। সে ইমেল চেক করে যা দেখল তাতে ক্ষণিকের জন্য কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। শুধু বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল লেপটপের স্কিণে। সেখানে শো করছে কুহুর মেডিকেল রিপোর্ট + ফাইল। সে ভালো করে দেখল একটা রিপোর্টে সিজোফ্রেনিয়ার রোগ উল্লেখ করা হয়েছে।
আর আরেকটা ফাইলে শো করছে ইরোটোম্যানিয়ার রোগের নাম। আর ইরোটোম্যানিয়া রোগের নাম দেখে সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। বুঝতে পারল আসল সমস্যা। এসব ফাইলের সঙ্গে ছোট্ট একটা বার্তাও এসেছে,
-‘অসুস্থ বোনকে তো আর ফেলে দিতে পারি না। সে আমার ছোট বোন। আমার বোন আমার কলিজা। যে যা বলেছে তার জন্য আমি হাতজোড় করে মাফ চাচ্ছি। মিথ্যা বলছি না। প্রমাণস্বরুপ ফাইল দেখালাম। সময় করে দেখিস। আর হ্যাঁ যদি সম্ভব হয় মাফ করে দিস। ভালো থাকিস।’
To be continue…………..