আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব-২১+২২

0
10

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_একুশ



-‘অসুস্থ বোনকে তো আর ফেলে দিতে পারি না। সে আমার ছোট বোন। আমার বোন আমার কলিজা। যে যা বলেছে তার জন্য আমি হাতজোড় করে মাফ চাচ্ছি। মিথ্যা বলছি না। প্রমাণস্বরুপ ফাইল দেখালাম। সময় করে দেখিস। আর হ্যাঁ, যদি সম্ভব হয় মাফ করে দিস। ভালো থাকিস।’

এটা একজন ভাইয়ের করুণ বার্তা। যে ভাই না পারে সহ্য করতে আর না পারে কাউকে বলতে৷ তাই বাধ্য হয়ে মেসেজ করেছে বন্ধুর রাগ কমাতে।আর প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছে এতদিন লুকিয়ে রাখা অপ্রিয় সত্যটা। যা আড়ালে রাখলে অঘোষিতভাবে বন্ধুর মনেও একটা গভীর দাগ পড়তো। হতে পারত সেই দাগই তাদের বন্ধুত্বের ভীত নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার সুক্ষ একটি কারণ। আর রিদওয়ান তাদের ভুল বুঝেছে। খুব খারাপ ভেবেছে। ভাই অথবা বন্ধু হিসেবে তার’ও উচিত এই ভুল শুধরে দেওয়া। এজন্য সে রিদওয়ানকে মেসেজ করেছে। আর মেসেজ করতে গিয়েই কতশত বার চোখে মুছেছে তার হিসাব কেবল রুপকেরও অজানা।

রুপকের মেসেজ পড়ে রিদওয়ান নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। ভাবনাগুলো যেন অসাড়। কুহু এত জটিল মানসিক সমস্যায় ভুগছে? দেখে তো মনে হয় নি। মেয়েটা সুস্থ রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিকই কিন্তু মানসিক সমস্যায় দিন পার করছে। সিজোফ্রেনিয়া রোগ নাহয় এক্সিডেন্টের পর হয়েছিল কিন্তু ইরোটোম্যানিয়া! ওয়েট! ওয়েট! ইরোটোম্যানিয়া রোগের কারণেই কি সে রুপককে ওইদিন এসব বলেছিল? তার মানে কুহু ভাবে সে তাকে পছন্দ করে? ভালোবাসে! এজন্যই বাস্তব আর কল্পনা সংমিশ্রণে একটা ঘটনার সৃষ্টি করেছিল? আর সেই ঘটনা ছিল জড়াজড়ি আর লিপকিস নিয়ে? রাতে এসব কল্পনা করে সকালে ভুলে স্বাভাবিক আচরণ করছিল । আর সে ভেবেছিল তাকে তাড়াতেই কুহু রুপককে এসব বলেছে৷ মিথ্যা বদনাম দিয়ে অপমান করেছে। বন্ধুর কাছে ছোটো করার চেষ্টা করেছে।
এজন্য সে রাগে সেদিন বাসা থেকেও চলে এসেছিল। মুহূর্তের মধ্যেই সে দু’য়ে দু’য়ে চার মিলিয়ে ফেলল। তার হিসাব মিলেও গেল। মিললো দেখে হতবাক হয়ে গেল। মাথায় ঘুরতে লাগল কুহুর বর্তমান অবস্থার হালচাল দেখে। এভাবে কতদিন? কি আশ্চর্য! চেনাজানা চঞ্চল মেয়েটা এত বড় অসুখ পুষছে! সেই সঙ্গে সুস্পষ্ট হলো রুপপ কেন বোনকে চোখে চোখে রাখে। সে বহুবার ব্যাপারটা খেয়াল করেছে৷ সে কলেজে থাকাকালীনও বেশ কয়েকবার কল করে খোঁজ করত। কুহু যদি কলেজ থেকে বের হয় সঙ্গে সঙ্গেই কুহুর ফ্রেন্ডরা রুপককে জানায়। রুপক যেই কাজেই থাকুক
সব ফেলে বোনকে খুঁজতে বের হয়। ফলো করে। যতক্ষণ না কুহু বাসায় ঢুকে সে অদূরে দাঁড়িয়ে বোনের প্রতি লক্ষ্য রাখে। কখনো বুঝতেও দেয় না কাউকে। এমন কোনো কথা বা কাজও করে না যেটা দ্বারা কুহুর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। প্রথম প্রথম এগুলো তার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হতো।
বোন! তাতে কি? তাই বলে এভাবে গোয়েন্দাগিরি করতে হবে? স্বাধীনতা বলে তো কিছু আছে। এতবড় এক মেয়েকে এভাবে চোখে চোখে রাখতে কেন? রুপককে বলেওছিল সে। রুপক শুধু হেসেছিল। আজকে সে ওই হাসির কারণ বুঝল। আর এখন এটাও প্রমাণ পেল রুপক যোগ্য ভাই।

বাগান থেকে রিমির চেঁচামেচি, হাসাহাসির শব্দ ভেসে আসছে। কি নিয়ে খুব হাসছে রিমি। তার হাসির শব্দ শুনেই রিদওয়ান মুখ বাড়িয়ে বাইরে তাকাল। লারা পড়ে গেছে দেখে রিমি হাসছে। হাসতে হাসতে সেও বসে পড়েছে। বোনকে এভাবে হাসতে দেখে দু’চোখ ভরে, মন জুড়িয়ে, দেখল রিমির মুখভর্তি হাসি মুখ। বোনের মুখে হাসি দেখে প্রাণ ভরে গেল। রিমি যেমন তার বোন। কুহুও রুপকের ছোটো বোন। যার যার রক্ত তার তার টান। মায়া। স্নেহ। বোন সর্বদা বোনই হয়। হোক সুস্থ অথবা অসুস্থ। আর রুপক যে নিজেও এসবে লজ্জ্বিত তা অনুধাবন করতে পারছে সে। এই অবস্থা সেও থাকতে পারত! এসব ভেবে রিদওয়ান উঠে বসল। তারপর কল দিলো রুপকের নাম্বারে কিন্তু কেউই রেসপন্স করল না। অগত্যা সে ফ্রেশ হয়ে নিজেই কফি বানিয়ে রুমে চলে এলো। রিমি কতবার ডাকল তাদের সঙ্গ দেওয়ার জন্য। কিন্তু সে শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে রুমে চলে এলো। আসলে তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কুহুর কথা। বন্ধুর কথা।
এর সমাধান খুঁজতে হবে। প্রাণবন্ত মেয়েটার সারাজীবন পড়ে আছে। সে কতটুকু দেখেছে এই সুন্দর পৃথিবী। এভাবে চলতে থাকতে কুহুর সমস্যা আরো বাড়বে। মোদ্দাকথা, সব জেনে শুনে চুপ করে বসে থাকা যায় না।
বসে থাকা সম্ভব নয়। এর একটাই কারণ তার বন্ধু। সে কফির মগ রেখে
কল করল ফিনিক্সের নাম্বারে। ফিরিক্স তার এখানকার ফ্রেন্ডের নাম। সে
তার কলিগও বটে। আর ফিনিক্সের বড় ভাই ডেইজি সাইক্রেটিস।এখানে
তার সিরিয়াল পাওয়া মুশকিল। সে তাকে দিয়েই কুহুর টিটমেন্ট করানো সিদ্ধান্ত নিলো। ফিনিক্সের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনাও করল। ফিনিক্স
তাকে বাসায় যাওয়ার কথা বলল। কারণ এসব নিয়ে সরাসরি ডেইজির সঙ্গে কথা বললেই ভালো হবে। সে ডাক্তার। ডাক্তারই বুঝবে ভালো মন্দ।
রিদওয়ান রাজিও হলো। আজ উইকেন্ড। ডেইজিও বাসায়। সে বের হবে
না। তার নাকি ব্রেকআপ হয়েছে। বাসাতে নাকি ব্রেকআপ পার্টি করবে।
একথা শুনে রিদওয়ান জানাল রাত আটটার পর ডেইজির সঙ্গে সে মিট করবে। ফিনিক্সও সহমত জানাল। সে ফিনিক্সের সঙ্গে কথা বলে একটা বার্তা লিখল।
-‘ বন্ধুত্বের অধিকারে বন্ধুর উপর যেমন রাগ করতে পারি। কথা বলা অফ করতে পারি। তেমনি বন্ধুর বিপদে বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোর মতো সৎ সাহসও রাখি। এত টেনশনের কিছু সেই আমি আছি। ‘

এইটুকু লিখে সে রুপকের নাম্বারে সেন্ড করল। এরপরই পরিকল্পনা করে নিলো একটা দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার। নিজের মর্জির মালিক সে নিজে। তাই কারো সঙ্গে সেই ব্যাপারে আলোচনা করারও প্রয়োজন বোধ করল না।

ইসমত আরা বেগম ড্রয়িংরুমে বসে কুহুর চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে রাগে গজগজ করছেন। মেয়ে চুলে তেল দেয় না, চুল আঁচড়ায় না,ভেজা চুল ভালোমতো শুকায় না, ইত্যাদি নানান ধরনের অভিযোগ উনার। কুহু সেসব শুনছেই না। সে নুডলস খেতে খেতে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত।
সিরিয়ালে চলছে নায়ক নায়িকার মান অভিমান পর্ব। এখন দৃষ্টি সরানো যাবে না। তখনই ইসমত আরা বেগমের ফোনে কল এলো। উনার হাতে তেল তাই কুহুকে বললেন রুম থেতে ফোনটা এনে দিতে। কুহু খুব বিরক্ত
নিয়ে উঠে দাঁড়াল।তারপর সেই কলারকে গালি দিতে দিতে রুমের দিকে গেল। অসময়ে কল দেওয়ার আর সময় পেল না। ইসমত আরার বেগম হাত কনট্রোল করে নিলেন। নয়তো পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিতেন।
এত বড় মেয়ে অথচ একটা কাজ করতে বলতে এই মেয়ের মাথার চাঁদি ঘুরে যায় । ওই আবার রাগ দেখায়। গজগজ করে। ততক্ষণে কুহুর চুলে তেল দেওয়া শেষ। উনি বেসিনে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আঁচলে হাত মুছে বসলেন। এদিকে ফোন নিয়ে আসার নাম নেই। উনি ডাকলেন,
-‘এ্যাই কুহু তুই কি ফোন আনতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লি?’

কোনো সাড়াশব্দ নেই। তখন কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। উনি মেয়ের হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন, কার সঙ্গে কথা বলছে সে। কার সঙ্গে কথা বলার কারণে মেয়ের মুখে হাসি ফুটেছে। উনি কিছু বলার আগেই কুহু ফোনের দিকে তাকিয়ে বিষ্ময়ভরা কন্ঠে বলল,
-‘রিদ ভাইয়া, আপনার পেছনে ওটা কি, হ্রদ? পানির রং কি নীল! হায় আল্লাহ, কি সুন্দর দেখতে!’
-‘হুম। এটা হ্রদ। ওই যে দূরে দেখো সবুজ পাহাড়। এগুলো কাঠের ঘর।
এখানকার প্রতিটা কাঠের ঘর দো’তলা। আর ঘরের পাশে একটি করে আপেল গাছ।’
-‘আপেলগুলো কেউ চুরি করে না? না মানে, বাংলাদেশে হলে এত বড় হওয়ার সুযোগই দিতো না। তার আগেই চুরি হয়ে যেতো। আমি ছাদে একবার মাল্টা গাছে লাগিয়েছিলাম, ছোটো ছোটো সবুজ সবুজ মাল্টা ধরেছিল কেবল। তারপর মাল্টা সহ গাছ উধাও!’
-‘ওহ।’
-‘আপনি ওখানে একা গিয়েছেন?’
-‘হুম। আমি এখানে মাঝেমধ্যেই ঘুরতে আসি। ভীষণ পছন্দের জায়গা এটা। চোখ জুড়িয়ে যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে। আর জানোই তো সুইজারল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশের একটি।’
-‘ইশ! আমিও যদি যেতে পারতাম! ওই সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে দৌড়াতে পারতাম। আকাশের কাছাকাছি গিয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম। দুই হাত মেলে দিয়ে চিৎকার করে মনের আক্ষেপগুলো বলতে পারতাম! ‘
-‘তাহলে চলে এসো। ‘
-‘যেতে পারলে তো এখনই যেতাম। তা তো আর সম্ভব না।’
-‘সম্ভব না কেন? রুপককে বলো। তাহলে নিয়ে আসবে সে।’
-‘জীবনেও নিয়ে যাবে না। ভাইয়া আমাকে দূরে কোথাও যেতে দেয় না, নিজেও নিয়ে যায় না।’
-‘তুমি আসতে চাও কি না ভেবে বলো। বাকিটা আমি দেখছি।’
-‘আমি এত এত সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখতে চাই। আমি রাজি। একশতবার রাজি।’
-‘পরে সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করবে না তো?’
-‘প্রশ্নই আসে না।’
-‘তাহলে রুপককে আমি আজই বলব তোমাকে এখানে নিয়ে আসতে।
এত সৌন্দর্যের সঙ্গে তোমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে। জানো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি কত সুন্দর! কত মহিমান্বিত। রুমের এক কোণে বসে না থেকে ঘুরে বেড়াও, দেখো, জানো। এতে মুড ফ্রেশ হবে। রোগ বালাই সারবে। ব্রেণ সচল হবে। ‘
-‘আমি একদম ফিট আছি। আমার কোনো রোগ টোগ নেই। আমাকে কি অসুস্থ মনে হয় আপনার? যে আমার রোগ বালাই সারার কথা বললেন, আশ্চর্য তো!’
-‘ আরে না, না, অসুস্থ মনে হবে কেন? আমি তো কথার কথার বললাম।’
-‘রিদ ভাইয়া!’
-‘হুম বলো।’
-‘আপনি কি আর কখনো দেশে ফিরবেন না?’
-‘কেন বলো তো?’
-‘কলেজ কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। রাকিব স্যার, মোবারক স্যারা এসেই গল্প জুড়ে দেয়। উনাদের গল্পই শেষ হয় না। সবাই আপনাকে ভীষণ মিস করে। আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়।’
-‘আমার সঙ্গে যোগাযোগ? কিন্তু কেন?’
-‘অনেকেই ভাবে আপনাকে রিকুয়েষ্ট করলে আপনি ফিরে আসবেন। আবার জয়েন্ট করেন আমাদের কলেজে, তাই।’

রিদওয়ান নিশ্চুপ! একথা শুনে কেন জানি তার ভীষণ ভালো লাগল। সে কেবলই মুচকি হাসল। কলেজের শুরুর দিকে তাকে কেউ’ই পছন্দ করত না। মোদ্দাকথা, রিদওয়ান স্যার এই সেই কত কি। অভিযোগের কোনো অন্ত ছিল না। তাকে দেখলে সবাই ভদ্রবেশে সালাম দিতো ঠিকই তবে মুখ বেজার করে। মনে মনে হয়তো গালির বর্ষণ ছুঁড়েছে ।সবই বুঝতো সে। তারপরেও নিজের সিদ্ধান্তে একচুল পরিমাণ পরিবর্তন আনে নি।
বরং তার বাবাকেও বাধ্য করেছে কলেজের কিছু কিছু রুলস কড়াকড়ি করতে। আর এসব করার একমাত্রই কারণ তার কড়া শাষণ। অথচ সেই শাষণকে নাকি সবাই মিস করছে। এইকথার জবাব দিলো না রিদওয়ান।
সে আসল প্রসঙ্গে ফিরে এলো,
-‘তাহলে তুমি কি সত্যি সত্যি এখানে আসবে?’
-‘হুম। অবশ্যই। ‘
-‘ঠিক আছে, তোমাকে এখানে আনার দায়িত্ব আমার।’
-‘সত্যিই!’
-‘তিন সত্যি! মামনি কোথায়?’
-‘পাশেই আছে। কথা বলবেন?’
-‘দাও।’
তারপর কুহু ইসমত আরা বেগমকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে রুমে চলে এলো। তাকে এখন থেকে একটু একটু করে রেডি হতে হবে। সব গুছিয়ে রাখতে হবে। তাছাড়া কতকগুলো ড্রেস কিনতে হবে। হুঁটোপুঁটি গ্যাংয়ের সবাইকে জানাতে হবে। সে রুমে এসে আগে ড্রেস গুলো দেখতে লাগল।
একটা ড্রেসও পছন্দ হচ্ছে না। হঠাৎই তার মনে হলো গাছে পানি দেওয়া হয় নি। সে বেলকণিতে থাকা সব গাছে একে একে পানি দিলো। আগাছা পরিষ্কার করল। তখন ঝগড়া শুনে বেলকনি থেকেই নিচে তাকাল। এক
অটোওয়ালার সঙ্গে এক রিকশাওয়ালা হাতাহাতি লেগেছে। কয়েকজন
দাঁড়িয়ে তা দেখছে। হাতাহাতি কয়েক মিনিট পর এক ভদ্রলোক তাদের ঝগড়া মিটিয়ে চলে যেতে বলল। তারা চলে গেল। কুহু সেখানে দাঁড়িয়ে
আকাশ দেখল। পাখি দেখল। রাস্তার মানুষ দেখল। মানুষের ড্রেসআপ দেখল। রিকশা, অটো, গাড়ি, যাচ্ছে তা দেখল। একদল কুকুর ছানাদের
একটা কুকুর রাস্তা পার হলো। সেই দৃশ্যটুকুও দেখল। ফোন দিয়ে ছবিও তুলল। এভাবে একঘন্টা অতিবাহিত করল। তারপর রুমে এসে কতক্ষণ গেম খেলল। গান শুনল। রুম গুছালো। হাত মুখ ধুঁতে গেল। ওয়াশরুমে গিয়ে মনে হলো গোসল করে নেওয়া ঠিক হবে। সত্যি সত্যি গোসল করে
তোয়ালে গায়ে পেঁচিয়ে রুমে এলো। ড্রেস পরল। তারপর চুল মুছে ভেজা
তোয়ালে হাতে বেলকনিতে মেলে আসতে যাবে তখন তার গেস্ট রুমের বেলকনির দিকে নজর গেল। এইসময়ে রিদওয়ান দাঁড়িয়ে কফি খেতো। কখনো বা লেপটপে কাজ করত নয়তো গোসল সেরে তার কাপড় মেলে দিতো। আজ রিদওয়ান নেই। বেলকনিটাও ফাঁকা। সে বেলকণির গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে ফাঁকা বেলকণির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বিরবির করে বলল,
-‘আপনি আমাদের কারো সঙ্গেই আর যোগাযোগ করেন না কেন, রিদ ভাইয়া? ওভাবে চলেই বা গেলেন কেন? এতদিন আমাদের সঙ্গে থেকেও আমাদের উপর একটুও মায়া জন্মায় নি আপনার? আপনি খুব পাষাণ! ভীষণ পাষাণ মনের মানুষ।’

ওইদিকে রিদওয়ান জেইজির সঙ্গে কয়েকবার কথাও বলেছে। ডেইজির জানিয়েছে পেশেন্টের সঙ্গে তার সরাসরি কথা বলা জরুরি। কথা বললে বোঝা যাবে আসল সমস্যা। ডেইজির কথাগুলো রিদওয়ান রুপককেও জানিয়েছে। রুপক হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো করেই বলেছে, কুহু বাসা ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকতে পারে না। যদি যায়ও সারাদিন কোনোমতে থাকলেও রাতে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন যেখানেই থাকুক বাধ্য হয়ে
তাকে বাসায় আনতে হয়। সুইজারল্যান্ড গেলেও যদি এই সমস্যা হয়? এ কথা শুনে রিদওয়ান কুহুর সঙ্গে এভাবে কথা বলল। কাজ ফেলে সুন্দর একটা জায়গায় গিয়ে মনোরকম সৌন্দর্য দেখালো। মুগ্ধ করল। সুযোগ বুঝে তাকে সৌন্দর্য দেখার বাহানায় আসার কথাটাও বলল। কুহুর রাজি হলো। রুপক নিয়ে গেলে যাবে কথাও দিলো। রিদওয়ান মনে মনে স্বত্বির নিঃশ্বাস নিলো। কিন্তু রিদওয়ানের অজানায় থেকেই গেল, কুহু যাওয়ার কথা দিলেও কয়েক ঘন্টার ব্যাপারে সব ভুলে গেছে। শুধু সেদিনের চলে যাওয়ার মুহূর্তটুকু তার মস্তিষ্কে গেঁথে আছে। পরিশেষে রুপককের মতো এতদিনের করা এত চেষ্টার মতো সেও প্রথমধাপে ব্যর্থ।

To be continue……!!

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_বাইশ




সন্ধ্যা সাতটা।
হঠাৎ তুমুল বৃষ্টি। ঝড়ো বাতাস নেই। তবে অঝর বৃষ্টি। বাসায় ফেরার পথে বৃষ্টিতে ভিজেপুরে রুপক তেলেভাজা খাবার এনেছে। গরম গরম বেগুনি, পেঁয়াজু, রোল, কুহুর ভীষণ পছন্দ। আনার সঙ্গে সঙ্গে সে খেতে শুরু করেছে। খেতে খেতে ফোনে নাটক দেখছে। ভীষণ হাসির নাটকটা।
হাসতে হাসতে একা একা গড়াগড়ি খাচ্ছে সে। তার হাসিতে ড্রয়িংরুমের প্রতিটি কোণে যেন ঝলমল করছে। হাসছে। গাইছে। সাজছে। রঙিন রুপ ধারণ করেছে আশপাশ। রুপক তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে সেই হাসি প্রাণ ভরে দেখছে। সে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, বাসার মেয়ে, বউরা, হাসলে বাসাও হাসে। সুখসমৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়ে। এখন যেমন তার বোনটা হাসছে দেখে তার পৃথিবীও ঝলমল করছে। সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে।

সে বোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে এসে রান্নাঘরে উঁকি মেরে মাকে খুঁজল। মাকে না পেয়ে গেল বাবা মায়ের রুমে। সে বাইরে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিলো। আম্মু! আম্মু! ডেকে জানাল নিজের উপস্থিতি। এর
আগে কারোই অনুমতি নিতো না সে। যার তার রুমেই ঢুকে পড়তো। নক করে ধৈর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকার মতো ধৈর্য্য ছিল না কখনোই। কিন্তু ক্লাস ফাইভে থাকাকালীন তার মা তাকে বেত দিয়ে ইচ্ছে মতোন পিটিয়েছিল।
অপরাধ ছিল, তার সদ্য বিবাহিত চাচ্চুর রুমে অনুমতি না নিয়ে সে ঢুকে পড়েছিল। সেই মুহূর্তে চাচ্চু আর চাচি ছিলেন রোমান্সে ব্যস্ত। এরপর যা যাওয়ার তাই হলো। তাদের রোমান্স করতে দেখে বাসার সবাইকে বলে দিয়েছিল। হাসাহাসিও হয়েছিল। এতে ভীষণ লজ্জাও পেয়েছিল চাচ্চু।আর চাচি রাগে লজ্জায় বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল, বাসায় প্রাইভেসি নেই, গোঁয়ো ভূত, আদব কায়দা জানে না, এসব নানান কথাবার্তা বলে।
কোনোভাবেই সেদিন চাচিমাকে কেউ আঁটকাতে পারে নি। সে নিজেও সরি বলেছিল। তবুও চাচি চলে গিয়েছিলেন। চাচিমা চলে যাওয়ার পর ইসমত আরা তাকে জিলাপি দেওয়ার নাম করে রুমে ঢুকিয়ে মনের রাগ না কমা অবধি ইচ্ছেমতো পিটিয়েছিল। সেই মার খেয়ে আজও ভোলেনি কারো রুমে প্রবেশের আগে নক করা ভদ্রতা। সভ্যতা। আর ভদ্রতা জ্ঞান টুকু সবার মধ্যে থাকা উচিত।ছেলের উপস্থিতি বুঝে ইসমত আরা জলদি শাড়ির আঁচল ঠিক করে অনুমতি দিলে রুপক তখন রুমে প্রবেশ করল।
বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে মুদু হাসল। বিছানার উপর বসল। বাবা ইজি চেয়ারে বসে পেপার পড়ছিল। আর তার মা বড় আলমারি খুলে কিসব ঘাটাঘাটি করছিলেন। গুছাচ্ছিলেন। সে বাবা মাকে বসতে বলে আসল কথা দিয়ে কথা শুরু করল,

-‘কুহুর জন্য আরেকটা নতুন ডাক্তার ঠিক করেছি। ভাবছি উনাকে দিয়ে দেখাব।’
ইসমত আরা বেগম ছেলের পাশে বসলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন,
-‘কোন ডাক্তার?’
-‘ডাঃ ডেইজি।’
-‘কোন হসপিটালে বসে?’
-‘আসলে রিদওয়ান জানে। সেই ঠিক করেছে। কথাও বলেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কুহুকে ওখানে যেতে হবে।’
-‘কোথায় যেতে হবে?’
-‘সুইজারল্যান্ড!’
-‘পাগল হলি? তোর বোনকে তুই চিনিস না? সে দূরে কোথাও যায়? গিয়ে থাকতে পারে?’
-‘এটাই তো সমস্যা। কিন্তু কুহুর সমস্যাগুলো দিন দিন বাড়ছে দেখছোই তো। এবার সিরিয়াসলি ট্রিটমেন্ট না করলেই নয়। আর আমিও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছি না আম্মু।’
-‘কিসের সুযোগ?’
-‘বাইরের দেশে গিয়ে কুহুর চিকিৎসা করানোর সুযোগ। আর রিদওয়ান যাকে তাকে ঠিক করবে না। এটাও আমি জানি। সে এই পরিস্থিতি দেখে বুঝে নিজ দায়িত্বে ডেইজিকে দিয়ে চিকিৎসা করানোর কথাজানিয়েছে।
যেভাবেই হোক কুহুকে ওখানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।’
-‘রিদওয়ানের বাবা মায়ের দেশে ফেরার কথা। তারা নাকি তাড়াতাড়িই দেশে সেটেল্ড হবে। তাহলে তোরা গিয়ে কোথায় থাকবি? কি করবি? কি বলছিস, না বলছিস কিছুই তো বুঝতে পারছি না আমি।’
-‘ আন্টি এতদিন দেশে বাইরে ছিল। উনি নিজে জব করতো। শপ আছে উনার। রিমিরও পড়াশোনা। উজ্জ্বল ভবিষ্যত। রিদওয়ানের অফিস সবই তো ওখানে। এসব ছেড়ে হুট করে আসার কথা বললেই কি আসা যায়? আর রিদওয়ান যতটুকু জানাল, সে নাকি তার বাবাকেই ওখানে থাকার কথা জানিয়েছে। কারণ এমন আরাম আয়াশের জীবন এ দেশে হবে না।
আঙ্কেল এখনো কিছু জানায় নি যদিও। তবে রিদওয়ান আমাকে বলল, আমরা গেলে নাকি কোনো সমস্যা হবে না। সে সব হ্যান্ডেল করে নেবে।’
এতক্ষণ মা ও ছেলের কথোপকথন শুনে এবার রুপকের বাবা নড়ে চড়ে বসলেন। চিন্তিত সুরে জিজ্ঞাসা করলেন,
-‘ কিন্তু কুহু কি যেতে রাজি হবে?’
-‘ রাজি করতে হবে বাবা। আর ভুলেও বলা যাবে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাব। তাহলে সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে।’
-‘তাহলে কিভাবে কি করবে?’
-‘বেড়ানোর লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাব । আজকে যেমন রিদওয়ান তাকে সুন্দর কিছু জায়গা দেখাল। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলল। এভাবেই প্ল্যান এগোতে হবে। নয়তো হবে না।’
-‘কবে যেতে চাচ্ছো?’
-‘তোমাদের পারমিশন পেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাব।’
-‘যাব বললেই তো যাওয়া হয় না। ভিসা লাগবে। কুহুকে রাজি করাতে হবে।’
-‘ভিসার চিন্তা করছি না কারণ আমার ফ্রেন্ড দোয়েলের বাবা এসবেরই কাজ করে। টাকা খসালে ভিসা ম্যানেজ হয়ে যাবে। এখন বলো তোমরা কি বলছো?’
-‘তুমি কি বোনকে একা সামলাতে পারবে? এটাই তো চিন্তার কারণ।’
-‘এতদিন তো সামলে এসেছি। তাছাড়া রিদওয়ান তো আছে। চিন্তা কোরো না।’
-‘তোমার মাকে নিয়ে যাও।’
-‘আম্মুকে নিয়ে গেলে তোমার দেখভাল কে করবে? আমি আম্মুর ভিসা করতে দেবো। যদি খুব প্রয়োজন হয় টিকিট কেটে চলে যেতে পারবে। প্রথম আমরা দু’জন যাই। অবস্থা বুঝি।’
-‘ঠিক আছে।’
এরপর আরো কিছু ব্যাপারে আলোচনা সেরে রুপক ড্রয়িংরুমে এলো।
কুহু এখানে নেই। সে বোনের উপর উঁকি মেরে দেখে কুহুর চোখে কাজল পরছে। একচোখে পরা হয়ে গেছে। আরেক চোখে পরতে গিয়ে তার হাত থেমে গেল। কিছু ভাবল। তারপর আরেকচোখেও কাজল পরল। রুপক এবার বোনকে ডাকতে ডাকতে রুমে প্রবেশ করল। তারপর ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে উৎফুল্ল সুরে বলল,
-‘কত্তদিন পর বেড়াতে যাচ্ছি। কি যে আনন্দ হচ্ছে। ‘
-‘কোথায় বেড়াতে যাচ্ছ ভাইয়া?’
-‘বলব না।’
-‘কেন?’
-‘যদি তুইও যেতে চাস।’
-‘যেতে চাইলে নিয়ে যাবে।’
-‘জি না। ওখানে তোকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। অনেক দূর।’
-‘কতদূর শুনি?’
-‘সুইজারল্যান্ড।’
-‘সুইজারল্যান্ড? ওখানে কি করতে যাবে? ‘
-‘আরে পাগলি ওটাই তো বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশের একটি। ঘুরে বেড়ানোর দারুণ জায়গা।’
-‘কি কি আছে ওখানে?’
-‘দেখবি?’
-‘এখানে বসে কিভাবে দেখব?’
-‘আরে বোকা ফোন আছে কি করতে? সার্চ দিয়ে দেখব।’
-‘ওহ তাই তো।’
একথা বলে কুহুও ভাইয়ের পাশে ধপ করে শুয়ে পড়ল। রুপক গুগলে সার্চ দিয়ে কিছু দৃশ্য দেখাল। কুহু বিষ্ময় নিয়ে দেখল। এভাবে কিছু স্থান দেখে কুহু বলল,
-‘ভাইয়া!’
-‘আমি যেতে চাই, প্লিজ!’
-‘না।’
-‘কেন? আমার খরচের টাকা বাবা দিবে।’
-‘তাও নিয়ে যাব না।’
-‘কেন?’
-‘তোর মুডের ঠিক নেই। এখন বলছিস যাবি। একটুপর বলবি, যাব না। তখন এত টাকা দিয়ে ভিসা টিসা করিয়ে হুদাই টাকাগুলে জলে যাবে। এরচেয়ে তুই বাসায় থাক আমি বরং ঘুরে আসি।’
-‘না, না, আমি কথা চেঞ্জ করব না সত্যি। আমাকে নিয়ে চল ভাইয়া। বড় বড় পাহাড়, লেকের নীল পানি ছুঁয়ে দেখতে চাই আমি। আমি যাব।’
-‘তোর মুড সুয়িং হলেই পাল্টি খাবি আমি জানি। তুই এমন কিছু কর যাতে প্রমাণ পাই আর পাল্টি খাবি না তাহলে নিয়ে যাব।’
কুহু কিছুক্ষন ভাবল। তারপর একটা সাদা পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লিখল, ‘আমি সুইজারল্যান্ড বেড়াতে যেতে চাই। যেতে চাই! যেতে চাই! পরে পাল্টি খাব না। ভিসার টাকাও জলে ফেলতে দেবো না। যদি পাল্টি খাই অথবা আমার কারণে ভিসার টাকা জলে যায় তাহলে আমি…! ‘
একটু লিখে রুপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-‘আমি কার বউ হলে খুশি হবে তুমি?’
-‘গরিলার বউ।’
-‘গরিলা কেন? রিকশাওয়ালার বউ হই?’
-‘না। আমার টাকা জলে গেলে তোকে গরিলার সঙ্গে বিয়ে দেবো। আর গরিলাকে শিখিয়ে দেবো যেন তোকে প্রতি বেলায় নিয়ম করে পাঁচটা করে থাপ্পড় দেয়।’
কুহুর করুণ চোখে তাকাল। চোখ বন্ধ করে ভেবে নিলো গরিলার মুখ। কালো কুচকুচে একটা গরিলা। মোটা ঠোঁট। বিশ্রী দাঁত। কুহু চোখ খুলে
কিছুক্ষণ গাঁইগুঁই করল। কিন্তু রুপকের একই কথা। তাই সে বাধ্য হয়ে
লেখা সম্পূর্ণ করল,
-”আমি সুইজারল্যান্ড বেড়াতে যেতে চাই। যেতে চাই! যেতে চাই! পরে পাল্টি খাব না। ভিসার টাকাও জলে ফেলতে দেবো না। যদি পাল্টি খাই অথবা আমার কারণে ভিসার টাকা জলে যায় তাহলে আমি গরিলার বউ।’
এইটুকু লিখেই নিচে সাইন করে দিলো। রুপক সেটা নিয়ে আঠা দিয়ে কুহুর ড্রেসিংটেবিলের আয়নার লাগিয়ে দিলো। এবার যতবারই চোখে পড়বে ততবারই লেখাটা নিয়ে ভাববে। মেয়ে মানুষ আয়না দেখে বেশি।
আর কুহুর আয়না দেখার সময় লেখাটা বার বার চোখে পড়লে ভোলার চান্স কম। তারপর বোনের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সে রুমে এলো। তার, কুহুর এবং মায়ের ভিসার জন্য যাবতীয় কাগজপত্রও রেডি করল।
কাল সকালে যাবে ভিসার ঝামেলা মেটাতে। তখন হঠাৎ ফোন এলো।সে
ফোনের দিকে তাকিয়ে রিদওয়ানের নাম দেখে হাসল। কিন্তু কল রিসিভ করতেই কুহুর চিৎকার শুনতে পেল। সে ফোন হাতে নিয়ে বের হলো রুম থেকে। গিয়ে দেখে কুহু মেঝেতে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে কলা খেয়ে খোসাটা ছুঁড়েছে খেয়ালই নেই তার। এখন বেখেয়ালে কলার খোসায় পা পিছলে পড়ে গেছে। রুপক বোনকে তুলে সোফায় বসাল। ব্যথা পেয়েছে নাকি জিজ্ঞাসা করল। ইসমত আরাও ছুটে এসেছে চিৎকার শুনে। উনিই কুহুকে বকতে বকতে এ্যান্টিসেপটিক ক্রিমও লাগিয়ে দিলো বাম হাত ও ডান পায়ের গোড়ালিতে। পুরো ঘটনা বুঝে এতক্ষণে রিদওয়ান মুখ খুলল,
-‘বোনকে ঠিকঠাক মতো হাঁটা শিখাস নি? শুকনো জায়গায় পড়ে কিভাবে?’
রুপক রিদওয়ানের কথা শুনে পাশের সোফায় বসল। ফোনটা মুখের সামনে ধরে হাসতে হাসতে বলল,
-‘ওকে রেললাইনের ধাঁরে কুঁড়িয়ে পেয়েছিলাম তো তাই যত্ন করে হাঁটা, কথা বলা, শেখানো হয় নি। বিয়ে দিয়ে তাড়িয়েই তো দেবো শুধু শুধু কষ্ট করার কি দরকার?’
-‘ তাও ঠিক। এজন্যই কুহুকে পড়া ধরলে তোতলায়।’
-‘তোতলায়? সিরিয়াসলি?’
-‘হুম। ওকেই নাহয় জিজ্ঞাসা কর। ‘
-‘ওর তোতলানো কমাতে নদীর পেটমোটা পটকা মাছ খাইছিলাম। এখন দেখি আরেকবার খাওয়াতে হবে।’
-‘খাইয়ে দিস। মেয়ে মানুষ। বিয়ে টিয়ে দিতে হবে।’
ওদের কথা শুনে কুহু রাগে গজগজ করতে করতে উঠে চলে গেল। এই লোকটাকে সহ্য হয় না তার। বিরক্তিকর লোক। বাসাতে থাকতেও খোঁচা মারত। জ্বালাত। এখন দূরে থেকে শান্তি দিচ্ছে না। কুহুকে যেতে দেখে
রুপক কথার প্রসঙ্গ চেষ্টা করল। তারপর বলল,
-‘ভাই মুখে যাইই বলি আমার খুব টেনশন হচ্ছে। ডাক্তার দেখানোর কথা শুনলে কুহু হাঙামা শুরু করবে। আমি বোনকে ভয় পাই না। ভয় পাই ওর জেদকে। ‘
-‘আমিও কোনো দায়িত্ব নিলে সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে না সারা অবধি শান্ত থাকতে পারি না। টেনশন করে লাভ নেই। নিজেকে শক্ত কর। কুহুর জন্য যতটুকু করার দরকার। আমরা সবটুকু করব।’

To be continue…………!!