আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব-৩৫+৩৬

0
131

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_পঁয়ত্রিশ



প্রবাদে আছে, ‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে’ এটি বহু পুরনো একটি প্রবাদ। কিন্তু এর মানেটাও যথার্থ। সঙ্গের সঙ্গী যদি ভালো হয় তবে পথচলাও সহজ হয়। সঙ্গের সঙ্গী যদি খারাপ হয় তাহলে কর্মযোগে জীবনে পড়ে বিরুপ প্রভাব। এ যেন অপ্রিয় একখানা সত্য। এর যথাযথ উদাহরণ ধরা যাক, কহু আর রিদওয়ানের বর্তমানে অবস্থানকে, বিয়ের পরে বন্ধনকে।
কিছুদিন আগেও হঠাৎ হঠাৎ ভুলে যাওয়া, কল্পনার জগৎ, তিক্ত তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে এতদিন নিজেও বিরক্ত ছিল কুহু। তার এই রোগ, রোগের চিকিৎসা, মেডিসিন খাওয়া নিয়ে চলতো একপ্রকার বাকদ্বন্দ। নিজেকে অসুস্থ বলে মনে করত না। উল্টে,ভাবত সবাই জোর করে অসুস্থ বানাতে চাচ্ছে, তাকে মেন্টালি টর্চার করছে। অথচ বর্তমানে তার মাঝে এসবের
কোনো লক্ষণ দেখা যায় নি। বিরক্তি ভাব নেই। চিন্তা নেই। অসুস্থতার’ও
রেশ নেই। বাক বিতর্কতা। আছে শুধু তার চঞ্চলতা আর প্রিয় মানুষদের ভালো রাখার নিদারুণ প্রচেষ্টা।

রিমির দেশে যাওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। রিমি বাংলাদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন বন্ধুত্বপূর্ণ।
দেশ, দেশের মানুষ, সবকিছু ভীষণ ইনজয়ও করে। নিলুফা ইয়াসমিনের আরো আগে দেশে ফেরার কথা থাকলেও ছেলের অনুরোধে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছেন। তবে ধীরে ধীরে কাজ গুছিয়েও নিয়েছেন। রুপকও বোনের সঙ্গে সেখানেই আছে। অনলাইনেই নিজের কাজকর্ম করে এবং রিদওয়ানের অফিসে গিয়ে তাকে সাহায্য করে। দূর থেকে খেয়াল রাখে তার বাবা মায়ের প্রতি। ছেলে হিসেবে, ভাই হিসেবে, বন্ধু হিসেবে কোনো দায়িত্বকেই হেলা করে না। দেশে রিমি আর আতিকুল রহমান নিজেদের
অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছে। এদেশে নিলুফা ইয়াসমিন, রিদওয়ান, কুহু, রুপকের জীবনও চলছে সময়ের গতিতে। এরিমধ্যেই কুহুকে কয়েকবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। খেতে হয়েছে কড়া কড়া মেডিসিন।
মেডিসের প্রভাবে প্রচুর ঘুম হয়। ঘুম মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে। টেনশন মাথায় ঘুরপাক খায় না। কল্পনার জগতের দুয়ার খুলতে পারে না, অকারণে যা তা ভেবে বাস্তবের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে না। তবে ঘুমের কারণে আজকাল স্বাস্থ্য খানিকটা বেড়েছেও। স্নিগ্ধ শীতল মুখখানা ভরাট ভরাট লাগে। সে দেখতে এমনিতেই ভীষণ আদুরে। তবে মুখের ভরাট ভাব তাকে আরো
পরিপূর্ণ করেছে। এখন তার সকাল শুরু হয় কারো বাহুডোরে নিজেকে আবিস্কার করে।ভালোবাসার চাদরে সিক্ত হয়ে। মন ভালো করার রেশ খুঁজে পায় প্রিয় মানুষটার ঘুমন্ত মুখ দেখে। এরপর ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে সকালের নাস্তা নিয়ে শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে হাতে হাত কাজ করা, একসঙ্গে নাস্তা করা, নাস্তা করতে বসে গল্পের মহাড়া খোলা, রিদওয়ান আর রুপককের বিদায় জানিয়ে উনার সঙ্গে শপে যাওয়া। সেখানে গিয়ে শাশুড়িকে হেল্প করা, মাঝে মাঝে উনার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, টুকটাক শপিং, শপ থেকে ফিরে প্রিয় মানুষটার জন্য নিজেকে পরিপাটি করে তার জন্য অপেক্ষা, অপেক্ষার অবসাদ ঘটিয়ে সেই মানুষটার আগমন। ক্লান্ত শরীর প্রেমময় চাহনি। মন কেমন করা হাসি। সেই হাসিতে সর্বাঙ্গের শিহরণ। এভাবেই সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে তার দিনগুলো কাটছে। আসার পর যা ভেবেছিল ততটাও খারাপ লাগে না তার। তবে বাবা মায়ের জন্য ভীষণ মন খারাপ হয়। চুপিচুপি কাঁদে। তার কান্না দেখে রিদওয়ান কিছু না কিছু করে মন ভালো করে দেয়। হাসায়। তাছাড়া রিদওয়ান নিজে হাতে নিয়ম করে মেডিসিন খাওয়ানোর ফলে মেডিসিন মিস হওয়ারও সুযোগ মিলে না। ফলস্বরূপ, ওর সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। এটা সবার নজরে পড়েছে। এতে সবাই খুশিও। এত তাড়াতাড়ি, এত পরিবর্তন কেউ আশা করে নি। ভাবেও নি পরিবেশ পরিবর্তন করা কুহুর জন্য এতটা উপকারে আসবে। কারো নিগূঢ় ভালোবাসায়, যত্নে, তার মাঝে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। এসবের মধ্যে এত বকার পরেও কুহু নিলুফা ইয়াসমিনের পিছু ছাড়ে না। মা ডাকতে দ্বিধা করে না। সে মিশতে চায়, ভালো থাকতে চায়, সবাইকে ভালো রাখতে চায় দেখে তিনিও আর দূর দূর করেন না। কথার খোঁচা মারে না শাসণের আড়ালে ভালোবাসেন। স্নেহ’ও করেন। তবে তা
প্রকাশ করতে চান না। অথচ কুহু তা বুঝেও ফেলে, ধরে ফেলে শাশুড়ির ভালোবাসার নমুনা। এইতো কয়েক সপ্তাহ যাবত নিলুফা ইয়াসমিন যেচে তাকে নিজেকে সাজিয়ে তোলার কিছু টিপস্ দিয়েছে।সাধারণ পোশাকে কিভাবে পরিপাটি রাখা যায় তা শিখিয়েছেন। মোদ্দাকথা, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া শিখিয়েছেন। সেও শাশুড়ির কথামতো তাই করে। এতে তার বাহ্যিক রুপসহ, ড্রেসআপেও কিছু পরিবর্তন এসেছে।তাকে খুব সাধারণ লুকেও অভিজাত্যের ছাপ লক্ষ করা যায়।

আজকে ছুটির দিন। সবাই বাসাতে আছে। সকালের নাস্তা সেরে নিলুফা ইয়াসমিন কুহুকে নিজের রুমে ডেকে পাঠালেন। জানালেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হবেন সেও যেন দ্রুত রেডি হয়। কুহু বাড়তি কথা না বাড়িয়ে
রেডি হতে গেল। রিদওয়ান বাসায় তাই ইচ্ছে ছিল না কোথাও যাওয়ার।
কিন্তু শাশুড়ির কথা ফেলতে পারবে না বলেই আর কথা বাড়াল না। সে
জানে, শাশুড়ি তাকে কোনো না কোনো কাজেই নিয়ে যাচ্ছে। রিদওয়ান তখন রুমে বসে ফোন স্কল করছিল। কুহুকে রেডি হতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাতেই কুহু বলল, বের হবে।মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে দেখে রিদওয়ান কিছু বলল না। অথচ তার প্ল্যাণ ছিল আজ কুহুকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার। সে এটাও জানে, যেই কাজেই যাচ্ছে বেশিক্ষণ সময় ওয়েস্ট করবে না তার মা। কারণ বাঙ্গালি শাশুড়ির মতো তার মায়ের মন মানসিকতা না। যারা ছেলে আর ছেলের বউকে দূর দূরে রেখে পৈশাচিক এক আনন্দ অনুভব করে। ছেলে, ছেলের বউয়ের মধ্যে দুরত্ব বাড়িয়ে মিটিমিটিয়ে হাসে। সে জানে, তার মা সবকিছু স্মার্টলি ভাবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পছন্দ করে। তারপর কুহু রেডি হতেই নিলুফা ইয়াসমিনের ডাক পড়ল, সে রিদওয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রুমে একা বসে না থেকে রিদওয়ান বেরিয়ে লনে গেল। এখানে ঘাস হয়েছে। বড় কাঁচি নিয়ে ঘাসগুলো কাটল। নিজের গাড়ি পরিষ্কার করল। এমন আরো কিছু কাজ সারতেই রুপকও এসে সঙ্গ দিলো। গল্পে গল্পে দুই বন্ধু মিলে বাগান সাফ করে ফেলল। এসব করে ঘন্টা দুয়েক পেরিয়ে গেছে অথচ কুহুরা ফিরে নি। কোথায় যাচ্ছে বলেই যায় নি। সে অস্থিরতা দমাতে এটা করে যাচ্ছে কিন্তু শান্ত হতে পারছে না। রুপক ওর অস্থিরতার কারণ বুঝলেও প্রকাশ করল। শুধু মনে মনে হাসল। বোন জামাই নাহলে এতক্ষণে বেফাঁস কিছু বলে ফেলত। এই সম্পর্কের কারণে বেফাঁস কিছু বলা হারাম হয়ে গেছে।
এখন যেটাই বলুক বোনের কথা মাথায় রাখতে হবে। বন্ধুর বউকে নিয়ে
মার্জিত ভাষায় দু’একটা ফাজলামিমার্কা কথা বলাই যায় কিন্তু বোনকে নিয়ে নয় তাই মুখেও লাগাম টেনে চলে। দুই বন্ধু বাইরের কাজ সেরে মুখ হাত ধুয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। আজ ভারত পাকিস্তানের খেলা আছে। শুরু হবে মিনিট দু’য়েক পর। রুপক ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে খেলা দেখতে লাগল। রিদওয়ান দুই মগ কফি করে একটা রুপককে দিয়ে পা বাড়াতেই রুপক বলল,

-‘এসে যাবে এত টেনশন করিস না।’

-‘খেয়ে কাজ নেই টেনশন করব, হুহ।’

-‘কাজ আছে কি নেই তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে চান্দু। এদিকে আয়, বস, কথা আছে।’

-‘কি কথা?’

-‘বস তো আগে।’

রিদওয়ান সিঙ্গেল সোফায় বসে কফিকে সিপ নিলো। রুপক কফির মগ হাতে নিয়ে উঠে বসেছে। সে টিভির দিকে তাকিয়ে রিদওয়ানের দিকে ঘুরে তাকাল। তারপর কিছু ভেবে বলল,

-‘কুহুর ভুলে যাওয়ার সমস্যাটা কী আর খেয়াল করেছিস? আমি কিন্তু ওর মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখছি।’

-‘ হুম। ওর পরিবর্তন নজরে পড়ার মতোই। ওর সমস্যা হচ্ছে ওকে একা থাকতে দেওয়া যাবে না। এক থাকলেই অবান্তর ভাবনা ওর মাথায় ঘুরে তারপর সব গুলিয়ে ফেলে। তাছাড়া এখন পোপার রেস্ট, মেডিসিনও নিচ্ছে টাইম টু টাইম।’

-‘ বিডিতে যেসব ডাক্তার দেখাতাম সে তো ডাক্তারকেও দেখতে পারত না। তাদের দেওয়ার মেডিসিন তো আরো দূর। এমনই কড়া পাওয়ারের
মেডিসিন দিতো একটা মেডিসিন খেলে সে টানা তিনদিন ধরে ঘুমাত।
হাত পা কাঁপতো। একারণে জোর করেও মেডিসিন খাওয়াতে পারতাম না। লাস্ট চেকাবে ডেইজি আর কিছু বলে নি?’

-‘কনসিভের ব্যাপারে সাবধান হতে বলেছে। মেডিসিনও দীর্ঘদিন চলবে।
কুহু ক’দিন যাবৎ ইমপ্রু়ভ করতে শুরু করেছে এখন’ই কনসিভ করলে ঝুঁকি’ও আছে। মেডিসিনের প্রভাবে বাচ্চা ইমম্যাচিচুর হওয়ার সম্ভবণা বেশি।’

-‘হুম।’

-‘ কল্পনা আর বাস্তবতাকে গুলিয়ে ফেলার ব্যাপারটা ওটা সারবে কবে? এটা সারলে আমার চিন্তা কিছুটা কমবে।’

-‘ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে প্যারা নিস না।’

-‘ আরেকটা কথা বলার ছিল। আসলে…।’

-‘মেয়েদের মতো ন্যাকামি করা শিখলি কবে? যা বলার সরাসরি বল।’

-‘ আম্মুর শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। বাবারও তাই। একটার পর একটা অসুখে জর্জরিত তারা। আমাকে বলতে চায় না যদিও। তবে বুঝি আমি। আচ্ছা আমি দেশে ফিরলে কুহুকে সামলাতে পারবি না? সে তো আগের তুলনায় অনেক ইমপ্রুভ করেছে। তুই বোঝালে সেও বুঝবে।’

-‘কবে যেতে চাচ্ছিস?’

-‘ যত তাড়াতাড়ি যাওয়া সম্ভব।’

-‘এক কাজ কর আম্মু আর কুহুকেও নিয়ে যা। এদিকের কাজ প্রায়ই গোছানো শেষ। ওদিকে আব্বু আর রিমিও একা থাকছে। যেতে হবেই একে একে গেলেই ভালো হবে।’

-‘আর তুই? তুই একা থাকবি?’

-‘আমি কয়েকদিন পরেই যাব। রানিং প্রোজেক্টের কাজ প্রায় শেষ। ওটা ফুলফিল করে আমিও চলে যাব।’

-‘কুহু তোর সব কথা শোনো। তোর সঙ্গে পেয়ে তার অভাবনীয় পরিবর্তন তাই বলছি তাকে কুহু নাহয় থাক। তোরা দু’জন একসাথে আয়। আন্টি
আর আমি আগে যাই?’

-‘ভয় পাচ্ছিস?’

-‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সেখানে তোকে না পেয়েই কুহু আবার অনিয়ম শুরু করবে। যা ওর জন্য মোটেও ঠিক হবে না।’

-‘ঠিক আছে ওরা ফিরুক কথা বলে দেখি। যদি রাজি হয়, স্যামালিনাকে বলে তিনটে এয়ার টিকিট কনফার্ম করে দেবো।’

-‘হুম।’

এসব আলোচনার সমাপ্তি টানতেই বাইরে থেকে গাড়ির হর্ণ কানে এলো।
কুহুরা এসে গেছে। বউ শাশুড়ি মিলে কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে এসে প্রবেশ করল।নিলুফা ইয়াসমিন বসলেন না টুকটাক কথা বলে ফ্রেশ হতে
রুমে চলে গেলেন। কিন্তু কুহু রুপকের পাশে ধপ করে বসে পড়ল। ঘাড় কাত করে ভাইয়ের কাঁধে মাথা রাখল। রুপক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে বোনের দিকে। কুহুর মুখটা একটু অন্যরকম লাগছে। সে মনোযোগ দিয়ে দেখেও ধরতে পারল না। তাই রিদওয়ানকে বলল,

-‘কিছু একটা চেঞ্জ হয়েছে কিন্তু সেটা ধরতে পারছি না। তুই পারছিস?’

-‘বিড়ালমার্কা চোখ, ভোতা নাক, ঠিকই তো আছে, তুই আবার চেঞ্জের কি দেখছিস?’

-‘কিহহ! কি বললেন আপনি? আমার চোখ বিড়ালমার্কা? ভোতা নাক?’

-‘হুম ঠিকই তো বললাম।।মানুষ সত্য কথা মানতে চাই না কেন বুঝি না। আচ্ছা শোনো, আমি.…!’

-‘পারব না শুনতে। যার ডাগর ডাগর চোখ, টিকালো নাক, তাকে গিয়ে আপনার মধুর বাক্য শুনিয়ে আসুন।’

একথা বলে কুহু উঠে হনহন করে চলে গেল। যেতে যেতেই রিদওয়ানের নামে অভিযোগ দিয়ে গেল নিলুফা ইয়াসমিনের কাছে। এদের দু’জনের কান্ড দেখে রুপক হাসল। ইঁদুর বিড়ালের মতো এরা ঝগড়া করবে কিন্তু কেউ কাউকেই ছাড়া একদন্তও থাকতে পারে না। কুহুকে রাগিয়ে দিয়ে রিদওয়ান মিটিমিটি হেসে চলল রুমের দিকে। কুহুকে ছাড়া রুম কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। চেনা রুমটাকেও অচেনা মনে হচ্ছিল এজন্য সে বাইরে ঘুরছিল। এখন রুমের মালকিন যখন রুমেই আছে তখন বাইরে সময় কাটানোর মানেই হয় না। এদিকে রিদওয়ানকে যেতে দেখে রুপক ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিমির মেসেজ। মেসেজ দেখে সে হাসল। পাগলি কত ধরনের হয় এই মেয়েটাকে না দেখলে তার জানা হতো না। তাছাড়া আজকাল রিমির সঙ্গে তার ভালোই কথা হয়। রিমির বলে দেওয়া বেশ কিছু জায়গাতে ঘুরেছেও সে। সব সময় রিদওয়ান আর কুহুর সঙ্গে বের হওয়া যায় না। তাদেরও স্পেস দেওয়া দরকার। তাই সে রিমির কথাতে এখানে বেশ কিছু জায়গায় ঘুরেছে, শপিং’করেছে। তার নিঃসঙ্গতাকে কাটাতে সময়ও দিয়েছে।

To be continue…….!!

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_ছত্রিশ


বাঙালি নারীর মন পূর্ণ করা শখ, আহ্লাদ ও স্বপ্নে। নারী মানেই সৃষ্টি। সৃষ্টি মানেগড়া। সৃষ্টিকর্তা নারীকে তেমনভাবেই গড়েছেন। তাদের মধ্য বরকত দান করেছেন। দিয়েছেন অসীম মায়া ও মমতা। এজন্যই সংসারে নারীর ছোঁয়া ছাড়া সংসার পরিপূর্ণ হয় না। সুখ সমৃদ্ধির স্পর্শন লাগে না। পুরুষ যত বড়ই বাড়ি বানাক নারীর মত করে সেই বাড়িতে মায়া ঢালতে পারে না। যত্নে সাজাতে পারে না৷ নারীর অনুপস্থিততে দামী দামী আসবাবপত্র
ও যেন লুকাতে পারে না শূন্যতার ভাব। এজন্য বলে পুরুষ, বাড়ি-গাড়ি যতই করুক নারী ছাড়া তারা অসম্পূর্ণ।

আজ মাসের সতেরো তারিখ। মঙ্গলবার। রাত বাজে আড়াইটা। কয়েক বছর পর এই মুহূর্তে দেশের মাটিতে পা রাখলেন নিলুফা ইয়াসমিন। এক বুক কষ্ট, মান-অভিমান নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। আজ সব অভিমানের রেশ ভুলে ফিরে এসেছেন। তিনি এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছেন শাহজালাল এয়ারপোর্টে। লোকজন গিজগিজ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকটা ফ্ল্যাইট ল্যান্ড করবে সেটার এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে। উনার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে রিদওয়ান, কুহু আর রুপক। তাদের তিনজনের আবার ঝগড়া লেগেছে। ঝগড়ার কারণ অজানা তবে ঝগড়া হচ্ছে তিনি ভালোই বুঝতে পারছেন। লং জার্ণির পথে তিনজনের গুজর গুজর শেষ হয় নি।
এত কিসের গল্প উনিও খুঁজে পান না। আগে রিদওয়ান এত কথা বলতো না। বিয়ের পর তার কাজ কুহুকে খোঁচানো। মেয়েটাকে না খোঁচালে যেন শান্তি পায় না সে। তবে এই ব্যাপারটা তিনি পজেটিভ হিসেবে নেন। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে খুনশুঁটি, দুষ্টু-মিষ্টি অভিমান, থাকা ভালো। এত সম্পর্ক সহজ
থাকে। তাদের ঝগড়া করতে দেখে উনি এগিয়ে গেলেন তারপর ধমকে তাদের ঝগড়া থামিয়ে হনহন করে সামনে হাঁটা ধরলেন। উনাকে যেতে দেখে তারাও এগিয়ে এলো। আতিকুর রহমান কিংবা রিমি কেউই জানে না আজকে উনারা আসবেন। আগামীকাল রিমির জন্মদিন। মূলত ওকে
সারপ্রাইজ দিতেই এভাবে আসতে হয়েছে। আর এই দুষ্টু বুদ্ধিটাও কুহুর।
বুদ্ধিটা সবার পছন্দ হয়েছে দেখে চলেও এসেছেন। গতমাসেই রুপকের সঙ্গে উনার আসার কথা ছিল। কিন্তু গন্ডগোল পাকিয়েছিল কুহু। বাসায় নাকি একা থাকতে পারবে না আবার রিদওয়ানকে ছাড়া সে আসবে না।
এত বলে বুঝিয়েও লাভ হয় নি। ওইদিকে রিদওয়ান প্রজেক্টের কাজ না সেরে কোথাও যেতে পারত না। কুহু এটা শুনতেও নারাজ। রুপককেও ছাড়বে না সে। আবার মায়ের অসুস্থতার কারণে মায়ের কাছেও যাবে। তার কথা পুরো পরিবারকেই তার লাগবে। এই নিয়ে দু’দিন কান্নাকাটি, ঝগড়া, জেদও করেছে। অগত্যা বউয়ের জেদে রিদওয়ানকে প্রজেক্টের কাজ শেষ করে আসতে হয়েছে। এই সময়েই নিলুফা ইয়াসমিন উনার শপ সেল করে দিয়েছেন। বাসা ভাড়া দিয়েছেন। বাসাটা সেল করে দিতে পারতেন কিন্তু দেন নি কারণ রিদওয়ান যাওয়া আসা করবে। বছরে এক বার হলেও কুহুর চেকাব করাতে যাবে তারা। তাছাড়া রিদওয়ানের হাতে গড়া নিজস্ব অফিস রয়েছে। বর্তমানে অফিসের ভার বিশ্বস্ত ম্যানেজারই দেখবে। দেশে বসেই রিদওয়ান সবকিছু সামলাতে পারবে। এছাড়া তার
অফিসের আরেকটি ব্রাঞ্চ দেশে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।যেহেতু
স্ব-পরিবারে বাংলাদেশে স্থায়ী হবে তাই এই সিদ্ধান্ত।

এই অবধি সব ঠিকই ছিল কিন্তু সারপ্রাইজের ঠেলায় তারা কাউকে না জানিয়ে আসায় গাড়ি পাঠায় নি কেউ। এত রাতে গাড়ি পাবে কোথায়?
তারপর রুপক তার বাসার ড্রাইভারকে আসতে বলল। উনি শুনে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছেন। জ্যাম পেরিয়ে সময় নিয়ে ড্রাইভার এলে তারা রওনা দিলো আতিকুর রহমানের বাসার দিকে। ড্রাইভারের পাশে রুপক। আর বাকি তিনজন পেছনের সিটে। চলছে গালগল্প। কুহু জানালা দিয়ে মুখ বের করে শ্বাস নিচ্ছে। কতদিন পর সেই আপন আপন ঘ্রাণ। এটাই বুঝি দেশের ঘ্রাণ। মাটির ঘ্রাণ। মায়ার ঘ্রাণ। কত্ত শান্তি। এই শান্তি ভীন দেশে পায় নি। তার কান্ডে নিলুফা ইয়াসমিন ধমকালেও শুনল না। মনটা চনমনে হয়ে আছে তার। বকা গুলোও মধুর শোনালো। সে ভেতর ভেতর অস্থির। কখন তার মায়ের কাছে যাবে। মাকে জড়িয়ে ধরবে। মা মা ঘ্রাণ শরীরে মাখবে। মায়ের হাতের আদর মাখা খাবার। খাওয়াতে খাওয়াতে ফোন টিপা নিয়ে বকা। এতদিন দেশের বাইরে থেকে আদর পেতে মনের তৃষ্ণা যেন বেড়েই চলেছে তার। কালই যাবে মায়ের কাছে। হঠাৎ তাকে দেখে বাবা-মা নিশ্চয়ই চমকে যাবে। খুশিতে হাসতে হাসতে কেঁদে দিবে।
মনে মনে এসব ভেবে কুহু কোনোমতে নিজেকে সামলে রাখল।

আতিকুল রহমানের বাড়ির মেইনগেট খুলে তাদের গাড়ি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করছে। রিদওয়ানকে দেখে ঘুম জড়ানো চোখে দারোয়ান বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল। তারপর তাকে কিছু বলতে হয় নি তার আগেই গেট খুলে দিয়েছে। কুহু আড়চোখে নিলুফা ইয়াসমিনের দিকে তাকাল। উনার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না সে। এই নারী
কঠিন ধাঁচের। তার মনে কখন কি চলে বোঝা মুশকিল। সে রিদওয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আফসোস করে বলল,

-‘ প্রথমবার শশুরবাড়িতে এলাম। অথচ পরনে লাল বেনারসি নেই। গা ভর্তি গয়না নেই, বিয়ের সাজ নেই। এই ছিল কপালে।’

তার কথা শুনে নিলুফা ইয়াসমিন মুচকি হাসলেন। তাকালেন ছেলের দিকে। রিদওয়ানের দৃষ্টি ফোনের দিকে। কুহুর কথা শুনলেও সে মায়ের সামনে কোনো জবাব দিলো না। তবে সময় মতো এর জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রইল। ঘড়ির কাঁটা এখন তিনের ঘরে। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণে রিমি শুয়ে শুয়ে তামিল মুভি দেখছিল। মুভিটা এই নিয়ে পাঁচবার দেখছে। ভীষণ পছন্দের মুভিটা। কিন্তু এতরাতে হঠাৎ গাড়ির শব্দ পেয়ে সে উঠে বসল। বাংলাদেশে চুরি হয়। কিন্তু চোর মশাই গাড়ি নিয়ে চুরি করতে আসবে না নিশ্চয়ই? তাহলে কে এলো?সে লাইট অন না করে বেলকনিতে গিয়ে দেখে গাড়ি থেকে রুপক নামছে।এরপরই নামল রিদওয়ান, কুহু, আর তার মা। তিনি আশপাশ তাকিয়ে দেখছেন। কতদিন পর! উনাদের দেখেই রিমি চট করে বেলকনির লাইট জালিয়ে
ভাইয়া! বলে চেঁচিয়ে উঠল। তার কন্ঠস্বরে যেন আনন্দরা ঝরে পড়ছে।
তার চিৎকারে সবার দৃষ্টি গেল রিমির দিকে ততক্ষণে রিমি বাবা! বাবা! করে ডেকে দৌড়ে নামছে সিঁড়ি বেয়ে। এতরাতে মেয়ের ডাক শুনে চট করে উঠে পড়েছেন আতিকুর রহমানও। তিনিও দ্রুতপায়ে বেরিয়ে এসে দেখে মেয়ে দরজা খুলে দিচ্ছে। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই দেখল কুহু দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে রিদওয়ান আর রুপক। তিনি আরো ভালো করে তাকালেন নিলুফা ইয়াসমিনকে না দেখে সামনে এগিয়েও গেলেন।
ছলছল চোখ আর হাসি মুখে তাদের তিনজনকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। কুশল বিনিময় করলেন। এরপর ভেতরে প্রবেশ করিয়ে পেছনে তাকিয়ে কাউকে না পেয়ে ভেজা ভারী কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
-‘নিলু আসল না?’

রিদওয়ান নিশ্চুপ। তবে কুহু মন খারাপ করে মাথাটা নিচু করে নিলো। তারপর বিষাদে ভরা সুরে বলল,

-‘মা আসবে না। আসতেই চেয়েছিল ফ্ল্যাইটের আগ মুহূর্তে অসুস্থ হওয়ার কারণে আমাদের পাঠিয়ে দিলো। বললেন, সুস্থ হলেই নাকি আসবেন।’

আতিকুল রহমানের মুখটা হঠাৎ যেন চুপসে গেল। দুঃচিন্তার ছাপ পড়ল উনার কপালে। রিদওয়ান আর রুপক কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে। রিমি মুখ টিপে হাসছে। সে বাইরে মাকে দেখেছে আর কুহু পন্ডিতি করে তার মাকে বাইরে রেখে এসেছে তাও জানে। আতিকুর রহমান উনার কাজের লোক রাজুকে ডেকে দ্রুত নাস্তাপানির ব্যবস্থা করতে বললেন। এবংদ্রুত রুমগুলো দেখিয়ে দিতে বললেন।রিদওয়ানরা আসবে জানার পর থেকে উনি প্রতিদিন বাড়ি পরিষ্কার করান। রুমগুলো ডেকোরেটও করিয়েছেন নতুনভাবে। তবে যার আগমনের জন্য এতকিছু সেই এলো না দেখে মন ভার হয়ে গেছে। উনি পকেট থেকে ফোন বের করে নাম্বার বের করতেই দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে কেউ বললেন,

-‘ভাগ্য করে ড্রামাকুইন পুত্রবধূ পেয়েছি। আমাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে অভিনয় করা হচ্ছে। ‘

সুপরিচিত কন্ঠ শুনে উনি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। সঙ্গে সঙ্গেই উনার মুখ থেকে মন খারাপের রেশটুকু হারিয়ে গেল। ফুটে উঠল উৎফুল্ল পূর্ণ এক চিলতে তৃপ্তির হাসি। প্রিয় মানুষের আগমন বুঝি এমনই হয়। প্রিয় কারো আগমনে কর্পূরের ন্যায় উবে যায় মন খারাপের রেশ। আনন্দে ঝুম ঝুম করে ওঠে চারিপাশ। বয়স বাড়ে দেহের। মনের বয়স বুঝি একই রকমের থাকে।উনার মুখভঙ্গি হঠাৎ পরিবর্তনের দৃশ্যটুকু মনভরে দেখল উপস্থিত থাকা রিদওয়ান’রা। বুঝে নিলো অনেককিছুই। নিলুফা ইয়াসমিন ভেতরে প্রবেশ করে আশেপাশে দেখলেন। এটা উনার সংসার। উনি নিজে হাতে সাজিয়েছিলেন এই বাড়ি। ঘরদোর। এবং এ সংসার হারিয়েছিলেন কিছু বছর আগে। চলে যেতেও বাধ্য হয়েছিলেন। পুরনো কথাগুলো মনে করে উনার ছলছল চোখ ছলছল করে উঠল। বুকের ভেতরে জমে থাকা কষ্ট গুলো কান্না হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইল। উনার কষ্টটুকু বুঝে আতিকুর রহমান বললেন,

-‘ তোমার জন্য এতদিন এই বাড়িটা সামলে রেখেছি। এবার তোমার এই বাড়ি, তোমার সংসার, বুঝে নাও তুমি। আমি এসবের মধ্যে থাকতে চাই না।’

-‘হাঁপিয়ে গেছো?’

-‘তোমাদের অনুপস্থিতে আমি শূন্য। শূন্যতাকে পরিপূর্ণ করতে তোমার দায়িত্ব তুমি বুঝে নাও।’

নিলুফা ইয়াসমিন হাসলেন। রিদওয়ান উঠে দাঁড়াল। সে ক্লান্ত। তার রেস্ট প্রয়োজন। রিদওয়ানের দেখে কুহু, রুপক, রিমিও উঠে দাঁড়াল। তারা হই হই করতে করতেই উপরে চলে গেল। তারা বড় হয়েছে বুঝতেও শিখেছে অনেককিছুই৷ তাই এ মুহূর্তে উনাদের একা ছেড়ে দিয়ে তারা চলে গেল।
তাদের কাজ এখানেই শেষ। দো’তলায় এসে রিদওয়ানকে রুম দেখিয়ে দিলো রিমি। এই রুমটাতে আগে রিদওয়ান থাকত। বিশাল বড় রুমটা।
সাজানো হয়েছে তার পছন্দের উপর ডিপেন্ড করে। রিদওয়ানের পছন্দ হলো রুমটা। বিছানা দেখে কুহু শুতে যাবে ওমনি তাকে থামিয়ে দিলো রিদওয়ান। ট্রলি থেকে ড্রেস বের করে তাকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। বাধ্য হয়ে কুহু গনগন করতে করতে চলেও গেল। তা দেখে রিমি তাকাল রুপকের দিকে। সে আজ এখানেই থাকবে তাই তাকে গেস্টরুম দেখাতে নিয়ে গেল। রুপক গেল রিমির পিছু পিছু। রিমি তাকে গেস্টরুম দেখিয়ে আসতে যাবে তখনই হ্যাচকা টানে তাকে রুমে ঢুকিয়ে দরজাটা আঁটকে দিলো রুপক। কটমট করে তাকিয়ে রইল রিমির আদুরে মুখের দিকে। আকষ্মিক কান্ডে রিমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। হাতে ব্যথাও পেয়েছে। তাকে এভাবে তাকাতে দেখে রুপক দূরত্ব বজায় রেখে বলল,

-‘সমস্যা কি তোমার?’

-‘ আমার সমস্যা? আমি কখন বললাম আমার সমস্যা?’

-‘আমার মেসেজ সিন করছো না, কল ধরছো না,সবকিছু থেকে ব্লক! কি করেছি আমি? কিসের শাস্তি দিচ্ছো এভাবে, অপরাধটা কি আমার?’

-‘আপনিই তো সেদিন বললেন অভ্যাস জিনিসটা খুব খারাপ। এজন্যই তো কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। আপনার তো খুশি হওয়ার কথা। শুধু শুধু রেগে যাচ্ছেন কেন?’

-‘ কেন বলেছিলাম এটাও মনে আছে নিশ্চয়ই?’

-‘মনে থাকবে না কেন? খুব মনে আছে। আসলে আপনি ভয়ে আছেন। আমার প্রতি দূর্বল হয়ে যাওয়ার ভয়। বন্ধুর কাছে খারাপ হওয়ার ভয়। বোনের সংসারে অশান্তি হওয়ার ভয়। এজন্য আমাকে এখন এড়িয়ে যেতে চাইছেন। ইনডিরেক্টিলি বোঝাতেও চেয়েছেন আমি যেন কথা না বলি। যোগাযোগ না করি। আমি এখন তাইই তো করছি। আমি আপনার চাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছি।’

একথা বলে রিমি দরজা খুলে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেল আর রুপক তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

To be continue……!!