#আমার_অগোছালো_জীবনে_গোছালো_তুই
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
পার্ট(৩)
মাঃ মানে?
নাহিদঃ মানে হলো আমি আর জারা দুজন দুজনকে আগে থেকেই চিনতাম।তবে সামনাসামনি কখনোই কাউকে দেখেনি আর না অন্য কোনো ভাবে। আমাদের সম্পর্কটা ছিলো একদম অন্য রকম।
মাঃ কি রকম সম্পর্ক?
নাহিদঃ বন্ধুত্ব + ভাই বোনের সম্পর্ক।
নাহিদের মা চমকে উঠলেন নাহিদের কথা শুনে।
মাঃ ভাই বোনের সম্পর্ক।
নাহিদঃ হ্যা আমি জারাকে নিজের ছোটো বোনের মতোই দেখতাম আর জারা আমাকে দাদার মতো দেখতো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আজকে আমরা স্বামী স্ত্রী।
মাঃ এসব কি বলছিস তুই?
নাহিদঃ সব সত্যি বলছি আমি আমার জীবনের সবকিছুই জারার সাথে শেয়ার করেছিলাম আমার জীবনের সব ঘটনায় জারার জানা ছিলো। আর ওটা এটাও জানে আমি একজনকে ভালবাসতাম আর এখনো ভালোবাসি।
মাঃ তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস?
নাহিদঃ হুম।
মাঃ কাকে কে সে?
নাহিদঃ তার অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। তাতেই জারার সাথে ঝামেলা হয়ে আমার আর ওর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
মাঃ জারা কি জানতো তোর সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে।
নাহিদঃ হুম কোনো ভাবে জানতে পেরেছিলো কিন্তু কোনো ভাবে বিয়েটা ভাঙ্গার চেস্টা করেনি, আমাকেও কিছু বলেনি।
মাঃ চেস্টা করেও পারতো না। তোদের জুটি আল্লাহ তায়ালা তৈরি করেছে , সেই জুটি ভাঙ্গার ক্ষমতা কারোর নেয়।
নাহিদঃ কিন্তু আমি কিভাবে ওকে মেনে নেবো।
মাঃ জারা যেভাবে তোকে মেনে নিয়েছে ঠিক সেভাবেই।
নাহিদঃ মানে?
মাঃ দ্যাখ বাবা যে মেয়েটা তোর অগোছালো জীবনটা গুছিয়ে দেবার জন্য তোকে বিয়ে করেছে তুই তার গোছানো জীবনটা এভাবে অগোছালো করে দিস না। মেয়েটা নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার শুরু কর।
নাহিদ চুপ করে আছে।নাহিদের মা ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললোঃ বাবা এভাবে জীবনটাকে নস্ট করিস না। মেয়েটার তো কোনো দোষ ছিলো না কেন ওর জীবনটা এভাবে নস্ট করছিস ওর তো ওর স্বামীকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো তোর কিন্তু কোনো অধিকার নেয় সবকিছু শেষ করে দেবার।যা মেয়েটার কাছে যা।
নাহিদ ঘরে গিয়ে দেখলো জারা ফোনে কিছু করছে।
নাহিদঃ জারা
জারাঃ জ্বি বলুন।
নাহিদঃ তুই আবার আমাকে কবে থেকে আপনি বলতে শুরু করলি।
জারাঃ কি বলবেন বলুন।
নাহিদঃ সরি।
জারাঃ সরি কেন?
নাহিদঃ সবকিছুর জন্য।
জারা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ সবকিছুর জন্য তো আমার সরি বলার কথা ছিলো,, আমিই বলছি সরি। আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছি
নাহিদ অবাক হয়ে বললোঃ মানে?
জারাঃ মানে আমি আর আপনাকে এই মিথ্যা সম্পর্কের জালে আটকে রাখতে চাই না। আমি কালকেই আমার বাড়ি চলে যাবো। আপনি আমার কোনো একটা ভুল ধরে ডির্ভোসের জন্য ফাইল করুন।
নাহিদ অবাক হয়ে জারার দিকে তাকিয়ে আছে।জারা নাহিদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললোঃ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি মজা করছি না সত্যি বলছি আমি আব্বুকে বলেছি উনি আমাকে যাবার পারমিশন দিয়েছেন ,কালকে শুধু একটু কস্ট করে আমাকে রেখে আসবেন।
নাহিদ কিছু বলতে যাবে কিন্তু জারা আটকে দিয়ে বললোঃ আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি এটা বদলাবে না।
জারা চলে যায়। হ্যা জারা সত্যি সত্যি ওর বাড়িতে চলে যায়। নাহিদ জারাকে আটকানোর কোনো চেস্টাই করেনি ,হয়তো নাহিদ ওহ চাইছিলো জারা চলে যাক। নাহিলের মা কিন্তু ছেলের উপর বেজায় চটেছেন।
কেটে যায় ৭ দিন….
দুপুর বেলা জারা ঘুম থেকে উঠে দেখলো. নাহিদ ওর সামনে বসে আছে। জারা প্রথমে নিজের মনের ভুল ভেবেছিলো কিন্তু পরে বুঝলো সত্যিই নাহিদ এসেছে কিন্তু কেন?
জারাঃ আপনি সত্যিই এসেছেন।
নাহিদ মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ কেন বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি।
জারা নাহিদের কথার উত্তর না দিয়ে আবারো প্রশ্ন করলোঃ কেন এসেছেন আপনি?
নাহিদঃ তোমাকে নিয়ে যেতে।
জারাঃ আমি যাবো না।
নাহিদঃ পাগলামি করিস না চুপচাপ চল।
জারাঃ দেখুন আমি তো বলে দিয়েছি আমি আপনাকে মুক্তি দিতে চাই তাহলে কেন আমাকে নিয়ে যেতে চাইছেন।
নাহিদঃ ওটাই তো আসল ঘর ওখানেই তোকে থাকতে হবে।
জারাঃ সবার চাপে পড়ে আমাকে আনতে এসেছেন তাই না। মা হয়তো বকেছে আপনাকে তাই এসেছেন। আমি মাকে বলে দেবো আপনি চলে যান আমি যাবো না।
নাহিদঃ কি চাইছিস বল তো তুই।
জারাঃ আপনাকে সুখে দেখতে আর সেটা আমার সাথে থাকলে কখনোই সম্ভব না।তাই আপনার জীবন থেকে চলে যাবো।
নাহিদঃ পাগলের মতো কথা বলিস না। তুই থাকলেও আমি যেমন থাকবো আর না থাকলেও তেমন থাকবো।
জারা হেসে বললোঃ তাহলে আমাকে ছাড়াই থেকো।
নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। জারা বড্ড জেদি মেয়ে ওকে মানানো সত্যি খুব কঠিন ব্যাপার।
জারাঃ তুমি চলে যাও আমি যাবো না।
নাহিদঃ আমি তোকে নিয়েই যাবো।
জারাঃ জেদের করছো কেন?
নাহিদঃ আমি নয় তুই জেদ করছিস। একবার নিজের কথাটা ভাব,নিজের পরিবারের কথা ভাব। তূই শশুরবাড়ি ফেলে বাপের বাড়িতে থাকলে সবাই কি ভাববে একবার ভাব। সবাই তোকে তোর পরিবারকে নানা ভাবে কথা শোনাবে সেটা মেনে নিতে পারবি তো।
জারা আলতো করে হেসে বললোঃ নিজের আর আমার পরিবারের সম্মানের জন্য আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছো তাই তো।
নাহিদঃ হুম সেটাই এবার চল আমার সাথে।
জারাঃ না, কালকে বাড়ি যাবো আজকে এখানেই থাকো কালকে একসাথে ফিরবো।
নাহিদঃ ওকে। দাঁড়া মাকে একবার কল করে বলে দিই।
নাহিদ ওর মাকে ফোন করতে লাগলো জারা ভাবতে লাগলো ওই মানুষটার অগোছালো জীবনটাকে কি কখনোই গুছিয়ে দিতে পারবে না ওহ।
পরেরদিন কথা মতো নাহিদের সাথে জারা ফিরে যায়। ওই বাড়িতে জারাকে দেখে সবাই খুব খুশি হয় বিশেষ করে নাহিদের মা।নাহিদের মা খুশিতে একপ্রকার কেঁদেই দিয়েছিলেন। উনি জানতেন জারা নাহিদের সাথে ঝামেলা করেই এই বাড়ি থেকে চলে গেছে। তিনি আর কোনো মতেই নাহিদের জীবনটা অগোছালো হতে দিতে পারবেন না। যেভাবেই হোক ওদের দুজনকে একসাথে রাখবেন।
জারাকে নাহিদের মা নিজের ঘরে ঢেকে পাঠালো।
জারাঃমা ডেকেছিলেন?
মাঃ আমি জানি তোর সাথে নাহিদের সবকিছু কেন কোনো কিছুই ঠিক নেয়। তবে আমি তোকে একটা কথা বলবো নিজের জিনিসকে এভাবে অবহেলায় ফেলে দিস না। নাহিদ তোর শুধুই তোর ওর সবটা জুড়ে তোর রাজত্ব তৈরি কর। এমনভাবে নাহিদের মনে জায়গা করে নে।জানো নাহিদ তোকে ছাড়া কিছুই কল্পনা না করতে পারে।
নাহিদের মায়ের কথা মতোই জারা কাজ করা শুরু করলো। আগের তুলনায় নাহিদকে বেশি সময়,কেয়ার দিতে লাগলো। যতটা সময় পারতো নাহিদের সাথে কথা বলতো। জারা নিজেই আসতে আসতে বুঝতে পারলো নাহিদ আগের থেকে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
জারা নাহিদ বাড়ি ফেরার অনেকক্ষন পরও জারা ওর কাছে আসলো না। বিষয়টা ওর মন খারাপ হয়ে গেলো,একরাশ বিরক্তি জমা হলো জারার প্রতি। অন্যদিন সবার আগে জারার মুখোমুখি ওকে হতে হয় কিন্তু আজকে জারাকে ই দেখতে পেলো না।
অনেকক্ষন হয়ে যায়…
তবুও জারা এখনো আসলো না। নাহিদ এবার কিছুটা রাগ নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো। গিয়ে দেখলো ভাবি রান্না করছে আর কেউ নেয়। কপাট রাগ নিয়ে বললোঃ ভাবি জারা কোথায় গো?
নাহিদের এমন প্রশ্নে ভাবির মুখটা কিরকম ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। নাহিদ কারনটা বুঝতে না পেরে বললোঃ কি হয়েছে চুপ করে আছো কেন? আর জারাই বা কোথায়।
ভাবি ক্ষিন স্বরে বললঃ তুমি কিছু জানো না।
নাহিদ বললোঃ কি জানি?
ভাবি যে কথাটা বললো তাতে নাহিদ দু-পা পিছিয়ে গেলো।
#চলবে..
বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।