আমার চন্দ্রাবতী পর্ব-২০

0
804

#আমার_চন্দ্রাবতী
লেখিকা- সালসাবিল সারা

২০.
–“ছেলের বিয়ের কার্যক্রম নির্ধারিত করেছেন।এইবার মেয়ের পালা।আমার কনিষ্ঠ ছেলের জন্যে দুআর হাত চাইছি আমি।মেয়েটাকে আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে।যদিও আমার ছেলে কিছু করে না এখনো,বিয়ের পর দায়িত্ববোধ এলে সবটা সামলে নিবে সে।”
বনেদি পরিবারের মালকিন সার্জা অনুনয় করলো আহেলীকে।মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব কমবেশি সবসময় এসেছে তার নিকট।তবে এইভাবে সরাসরি কেউ মেয়ের হাত চাইনি।প্রস্তাব প্রথমে ভালো ঠেকলেও ছেলে বেকার শুনে মুখ কুঁচকে উঠলো আহেলী।যদিও উনি এখন মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভাবছেন না,তবে বনেদি পরিবারের বেকার ছেলের জন্যে মালকিনকে অপমান করে জবাব দেওয়াটা শ্রেয় মনে করলেন আহেলী,
–“আমার মেয়ের জন্যে বেকার ছেলে!ভুলে যাবেন না,আপনার স্বামীর নিকট সকল ইনকাম এবং সম্পত্তি।বর্তমানে আপনার ছেলের নিকট কিছুই নেই।এমন ছেলের জন্যে আপনি আমার আদরের মেয়ের প্রস্তাব দিলেন ই বা কিভাবে?”
সার্জা অপমানে গম্ভীর হলো।ইচ্ছে করলো আহেলীর মুখটা চড়ের সাহায্যে বন্ধ করতে।তার ছেলের ব্যাপারে কটু কথা বলতে এই মহিলা একটুও ছাড় দিলো না!
সার্জা কঠোর ব্যক্তিক্ত সম্পন্ন।যদিও মেয়েদের অপমান করাটা তার নির্বোধ বলে মনে হয়,কিন্তু সন্তানের অপমানের জবাব অন্যর সন্তানকে অপমান করার মাধ্যমে দেওয়াটা উচিত মনে করলেন উনি,
–“মেয়ের রূপ আছে, এটা তো সবাই দেখে।কিন্তু রূপের আড়ালে শরীরে যে দাগের বসবাস,এইসব জেনে কে বিয়ে করবে আপনার স্নেহশীল কন্যাকে? সৌভাগ্য এসেছিল আপনার হাতে,সেই সৌভাগ্য নিজ হাতে দুর্ভাগ্যে রূপান্তর করলেন আপনি।আফসোস!”
অন্তর জ্বলে উঠলো আহেলীর।মেয়ে ত্বকের ভেতরকার খবর বাহিরে কিভাবে এলো জানা নেই তার।কিন্তু,
এইভাবে মেয়ের অপমান কিছুতেই মা সহ্য করতে নারাজ।মুখে হিংস্রতা ছেয়ে গেল নিমিষেই।মুখশ্রীর ফর্সা আভায় রাগী আভা স্পষ্ট। ভারী স্বর্ণালংকার পরিধানের কারণে আজ আহেলীর জমিদারনি ভাবটা বেশি ফুটে উঠেছে যেনো।সাথে গম্ভীর জমিদারনির ন্যায় স্পষ্ট তার রাগী আভা।এই যেনো সাক্ষাৎ জমিদারের রাগী অর্ধাঙ্গিনী!সার্জা চমকালো।মেয়েটার ব্যাপারে এমন না বলাটাই তার শ্রেয় মনে হলেও সময় এখন দূরে গড়িয়ে গেলো অনেকটা।

ক্ষিপ্ত হলো দুআর মা,
–“আপনার ছেলে বড়লোক তবে বেকার, এটা আপনার ছেলের দুর্বলতা।আমার মেয়ের ত্বকের সমস্যা কোনো সমস্যাই না।আমার মেয়ে শুভ্র,পবিত্র।আপনি আমার মেয়ের সমস্যা জেনেই নিজের বেকার ছেলের জন্যে আমার মেয়েকে চাইছিলেন।আর কি ভাবছেন,আমার মেয়ের ত্বক নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা আছে?ঐযে উপরে একজন আছেন।যিনি সব ঠিক করে রেখেছেন।আমার মেয়ে যেমন পবিত্র আর নরম দিলের অধিকারিণী,তার জন্যে আল্লাহ্ ঠিক তার সর্বাঙ্গে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে একজন রেখেছেন।এটা একজন মায়ের বিশ্বাস।এসেছেন খেয়ে যাবেন।”
আহেলী সরে এলো সার্জার মুখশ্রীর সম্মুখ থেকে।ভেতরটা হাহাকার করছে তার।এইভাবে মেয়ের কথা বাহিরের লোক কিভাবে জানলো মাথায় আসলো না আহেলীর।চোখ ঘুরিয়ে মেয়েকে খোঁজার চেষ্টা করলো।পেয়েও গেলো মেয়েটার সন্ধান।রিজোয়ানের মামী শাশুড়ির সাথে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা।কে বললো তার মেয়ের ত্বকে সমস্যা?কোনো হুর থেকে কি তার মেয়েকে কম লাগছে? একদমই না!মেয়েটা কি সুন্দর হাসছে মধ্যবয়সী মহিলাটার সহিত কথা বলার ছলে।মেয়েকে ছুঁতে ইচ্ছা করলো মায়ের।
দ্রুত হেঁটে মেয়ের নিকট পৌঁছালো,
–“কিছু খাবি?”

মায়ের কথায় পাশ ফিরলো দুআ।অধর কোণে এখনো ঝুলে রইলো সুপ্ত হাসি।
–“নাহ, আম্মা খাবো না।”
–“আপনার মেয়েটা খাবারে বড্ড অনীহা দেখায়।আমার বাড়িতেই বুঝেছি,মেয়েটা একদম অনিয়ম করে খাবারে।”
ডালিয়া স্নেহপূর্ণ বাক্যে বললো।
–“জ্বী ভাবী।ছোট থেকেই এমন মেয়েটা।”
–“আম্মা, বদনামি করা বন্ধ করবে?”
দুআ লাজুক হেসে প্রশ্ন করলো মাকে।আহেলী হাসলো কেবল।মেয়ের হাসিমুখ তার সর্বপ্রিয়।
–“চাঁদ আপু,চলো না আমরা ছবি তুলতে যায়?”
–“হ্যাঁ চলো।”
মারিয়ার কথায় দুআ কদম ফেললো সামনে।আশেপাশে রামিসা,মাহি,জেনি তো আছেই।

–“আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে,ভাবী।কোনো সমস্যা?”
ডালিয়ার প্রশ্নে অবাক হলো আহেলী।মাথা নাড়িয়ে নরম সুরে বলল,
–“নাহ।আমি ঠিক আছি।”
–“আপনাকে কিছু বলার ছিলো।দুআ মায়ের ব্যাপারে।”
–“জ্বী বলুন।”
আহেলীর উৎসুক কণ্ঠ।
–“আমার ছোট মেয়ে মারিয়া বড্ড পাগল দুআর প্রতি।সারাদিন সেই দুই মেয়ে একসাথে কথা বলে মোবাইলে,
আমি দেখি।দুআর ব্যাপারে সব জানে মারিয়া।আর মেয়েটার দাগ সম্পর্কেও অবগত।বলছি কি আপনি একদম দুশ্চিন্তা করবেন না।আমি অনুষ্ঠানে আছি,আমি সব দেখছি,উপলব্ধি করছি।অনেকেই হয়তো বলবে মেয়ের জন্যে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দাগ সরিয়ে ফেলতে।কিন্তু, আমি বলবো এমনটা না করতে।আল্লাহ্ দুআর জন্যে যাকে নির্ধারণ করেছেন,সে বিনা দ্বিধায় মেয়েকে আপন করে নিবে।অযথা ভাববেন না।দুআ যথেষ্ট রূপবান।তার এই রূপের কাছে ভেতরকার সব দাগ ফিঁকে।”

মনটা প্রশস্থ হলো আহেলীর।এই যেনো তার বড় বোন তাকে ভালো উপদেশ দিচ্ছে।মন খারাপ উবে,উদিত হলো ভালো লাগা।
–“আপনি খুব ভালো ভাবী।আজকাল এমন সহজ সরল মনের মানুষ পাওয়া দুষ্কর।খুব করে চাই আমার মেয়েটার জন্যে ভালো কেউ আসুক।”
ডালিয়ার দৃষ্টি তখন পাশে দাঁড়ানো নিজ ছেলের দিকে। স্নেহভরা দৃষ্টিতে দুআর পানে চেয়ে আছে ইয়াদ।তার দৃষ্টিতে কোমলতা দৃশ্যমান।কিছু একটা আন্দাজ করলো ডালিয়া।মনটাতে এক শান্তির পরশ অনুভব করলো যেনো।সন্তর্পনে দুআর মায়ের কাঁধে হাত রেখে জবাব দিল,
–“ছেলেটা হয়তো এসে গেছে,দুআ মায়ের জীবনে।”
.
অনুষ্ঠানে ভিড় কমছে।খাবার পর্ব শেষ করে অনুষ্ঠানে টিকে থাকে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য। মাত্রাতিরিক্ত ভিড় কমে এখন পরিবেশ স্থিতিশীল।অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে খাবার খেয়েই পগারপার হলো তাসনিম।সেদিনকার অপমানের পর এখনো বাবার বাড়িতে থাকছে সে।ঠিক করলো মাইশার হলুদের দিনেই ফিরবে এই বাড়িতে।এদের অতিরিক্ত তামাশা তাসনিমের হজম করা দুষ্কর।যাওয়ার পূর্বে ইদ্রিস জমিদারের দিকে তাকাতে একবারও ভুললো না সে।অতীতের ব্যাথাদায়ক স্মৃতি মনে আসতেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো সে।
.

ইয়াদের নজর এখনো দুআতে সীমাবদ্ধ। মনের কথাগুলো সরাসরি প্রকাশ করে নিজেকে যুদ্ধজয়ী সেনা মনে হচ্ছে তার।দুআ নিজেই চোখের ইশারায় তাকে বুঝিয়ে দিল সহস্র চুপকথা।ইয়াদ বুঝে নিয়েছে, দুআ নিজেও ইয়াদের প্রতি দূর্বল।তার বলা প্রত্যেক কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে লক্ষ্মী মেয়েটা,এটা বুঝতেও বেগ পেতে হলো না খেলোয়াড় সাহেবের।দুআ তার বাবার সাথে দাঁড়িয়ে আছে।আজ প্রথম ইয়াদ দেখলো জমিদার বাড়ির আসল জমিদারকে।শরীরের গঠম মধ্যম।মাথায় পাগড়ি বাঁধা।চোখে সীমাহীন অস্পষ্টতা।এই লোকের চোখের ভাষা পড়া যেনো দুষ্কর।দুআর মায়ের সাথে পরিচয় হয়েছিলো তার অনুষ্ঠানেই।মহিলাটা বড্ড সুশীল তবে জমিদারি ভাবটা যেনো তার মাঝে কানায় কানায় পূর্ণ।কিয়ৎ পরে বাবা মেয়ের সাথে যোগ দিলো আহেলী।

ইয়াদ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো,দুআ ঠিক কার চেহারা পেয়েছে!বেশ কিছুক্ষণ উপলব্ধি করে বুঝতে পারলো,
দুআর গায়ের রং তার মায়ের পেলেও চেহারায় বাবার ছবি কিছুটা ভাসমান।হঠাৎই খেয়াল করলো দুআর চেহারার রং পরিবর্তন হচ্ছে।জমিদার সাহেবের চেহারাটা রাগী রাগী।দুআকে তার বাবা বকছে?কিন্তু কেনো?কি করেছে তার চন্দ্র!ভাবে মশগুল চন্দ্রের প্রেমিক পুরুষ।
–“এই ইয়াদ,তোর সাথে জমিদার সাহেবের পরিচয় করিয়ে দিতে বললো ভাবী।আয় তো বাপ।”
মীরা ভাইয়ের ছেলেকে পরম আদরে কথাগুলো বললো।
মানা করলো না ইয়াদ।বাধ্য ছেলের ন্যায় হেঁটে যাচ্ছে ফুফুর পেছনেই।দৃষ্টি এখনো অশ্রুসিক্ত মেয়েটার দিকে।তার প্রেয়সী কাদঁছে!!

–“খানাতে অনিয়ম হইলে রোগ বাসা বাঁধে।এতো অনিয়মে এই মাইয়্যা বাঁচবো?”
চাপা স্বরে রাগের পরিমাণ প্রচুর।দুআর বাবার কথায় বুঝতে বেগ পেতে হলো না,আদরের মেয়ে খাবারে অনীহার জন্যেই একটু রাগারাগির শিকার হতে হচ্ছে।

–“ভাই সাহেব,আমার ভাইয়ের ছেলে;ইয়াদ।”
মীরা হাসলো।
ইদ্রিস জমিদার দৃষ্টি মেললো।মাথাটা একটু উঁচুতে তুলতে হলো তার।ছেলেটা যে বেশ লম্বা!

–“ভালো আছো?খেলোয়াড় ছেলেটা নি?”
প্রশ্ন করলো ইদ্রিস জমিদার।
–“আসসালামুআলাইকুম,আঙ্কেল। জ্বী ছোট খাটো খেলোয়াড়।”
–” না না।তুমি ছোডো খাটো না। মস্ত বড় প্লিয়ার।আমি তোমার খেলা দেহিনাই।তারপরও জানি আমি।”
ইয়াদ হাসলো কেবল।দুআর পানে দৃষ্টি জ্ঞাপন করতেই দেখলো,মেয়েটা এখনো ফোঁপাচ্ছে।

–“খাবার খেয়েছো?”
–“জ্বী,আন্টি।”
ইয়াদ জবাব দিলো আহেলীর কথায়।

–“মীরা,সবাইকে নিয়ে চলো।কমিশনার সাহেব চলে যাবেন।বিদায় দেওয়া প্রয়োজন।জমিদার সাহেব,চলুন।”
মাইশার বাবা এসে কথাটা বললেন।

সকলে বিচলিত হয়ে সামনে এগুচ্ছে।তাদের সাথে বাকি আত্মীয়রা যোগ দিচ্ছে নিভৃতে।সিনিয়র আত্মীয়রা বড় মাপের লোকেদের বিদায় জানাতে হুরুস্তুল করছে।সেথায় যাওয়ার পূর্বে আহেলী দুআর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–“জেনিকে পাঠাচ্ছি।ওর সাথে বসে খেয়ে নিবি।”
দুআ মাথা কাত করলো।

ইয়াদ,দুআ পাশাপাশি। বাকি সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত।অনুষ্ঠান যে শেষের পথে!
ইয়াদ প্রেয়সীর পানে চেয়ে রইলো নিভৃতে। অশ্রুতে জ্বলজ্বল আঁখি জোড়া বড্ড আকর্ষণীয় ঠেকছে।সাথে মেয়েটির নাকের ডগায় এক বিন্দু লাল রঙের উৎপত্তি হলো।

–“এই মন খারাপ?”
দুআ মাথা নাড়ালো দুইদিকে।তাকালো না ইয়াদের পানে।
–“খাও না কেনো?”
–“ইচ্ছা করে না।”
এইবার মুখ খুললো প্রেয়সী।
–“এতটুকু তো শরীর।না খেলে নানান রোগ বাঁধবে।”
ইয়াদের কণ্ঠে অধিকারত্বের ছোঁয়া।

দুআ আঁখি মেলে তাকালো ইয়াদের পানে।লোকটার মুখশ্রী বড্ড মনোরম।পাঞ্জাবিতে লোকটাকে বেশ মানিয়েছে।শক্ত হয়ে বসে থাকা চুলের গোছা থেকে অবাধ্য কিছু চুল ছুটে আলাদা হলো।তবে এরাও অনড়।ইয়াদের নির্দেশ ছাড়া যেনো চুলগুলো নড়বে না বলে সিদ্ধান্ত নিলো অতি দায়িত্ববোধে। ঘোর লেগে যায় দুআর দৃষ্টিতে।তার মুখশ্রীর প্রধান উপকরণ যেনো মাদক।আর এই মাদকেই মাতাল হতে বাধ্য হয় দুআ!পলক ঝাপটালো তিন-চার বার। আঁখি জুড়ে শুধু এই লোকের মুখশ্রী ভেসে আসছে বারংবার।

–“মালকিন,খাবার খাইতে আসেন।”
জেনি এসে হাজির।

–“খেয়ে নাও।”
ইয়াদের কণ্ঠে আদেশের সুর।
দুআ যেতে নিলেই ইয়াদ তাকে থামালো,
–“দেখি একপাশ ফিরো।”
দুআ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে তার পানে ফিরলো।ইয়াদ কানের উপরিভাগে বিদ্যমান চুল গুঁজে দিয়ে নরম হাতে কানের দুল খুলে নিলো দুআর।কম্পিত হলো দুআর তনু।কানে অনুভব করলো চিনচিন ব্যাথা।
–“এটা নাও।”
ইয়াদ কানের দুল এগিয়ে দিলো দুআর দিকে।দুআ হাত পেতে নিলো দুলখানা।

অতঃপর ইয়াদ টিস্যু সমেত দুআর কানে জমে থাকা রক্ত মোছা অবস্থায় বলতে লাগলো,
–“এতো বড় দুল পড়ার কি দরকার?কান থেকে রক্ত বেরুচ্ছে।খাবার খেয়ে পেইন কিলার খেতে হবে অবশ্যই।”
ইয়াদ টিস্যু ছাড়তেই দুআ নিজের কানে হাত রাখলো টিস্যুর উপরেই।

জেনি ফ্যালফ্যাল চেয়ে রইলো।এই ঘটনা চেপে গেলো না অন্য বাহিনী থেকেও।তারা সবাই মুখ চেপে হাসলেও জিয়ার ভ্রু কুচঁকানো।জিয়া বেশ ভালই আন্দাজ করতে পারছে তার ভাইয়ের কাজকর্ম।খুশি হতে চেয়েও খুশি হলো না জিয়া।

–“যাও।”
দুআ ব্যথিত নজরে ইয়াদের পানে চেয়ে সামনে হেঁটে যাচ্ছে।অন্য কানের দুল খুলে জেনির হাতে দিলো। নিজ দায়িত্বের ভারে দুল জোড়া সামলে রাখলো মেয়েটা।

জেনি দোটানায় ভুগছে।এই বড় মাপের খেলোয়াড়ের সর্বক্ষণের কাজকর্ম জেনির শুকুন দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি।এই খেলোয়াড় কারো সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ তো দূরে থাক,বেশ কড়া মুখশ্রী বানিয়ে ছিলো সর্বক্ষণ।তাহলে দুআর সাথে এতো সাবলীলভাবে কথা বলার কারণ কি?তার মালকিনের দিকে এই খেলোয়াড়ের স্নেহপূর্ণ আচরনের কারণ কি, খেলোয়াড় মানুষটা তার মালকিনকে পছন্দ করে?জেনি পেছনে বাঁক ফিরলো।ইয়াদ এখনো দুআর পানেই চেয়ে আছে।জেনি যা বোঝার বুঝেছে।দুআর জন্যে ইয়াদ সুপাত্র হবে বলে মনে মনে খুশি হলো জেনি মেয়েটা।এমন বড় মাপের খেলোয়াড় এর সহধর্মিণী হবে তার মালকিন!ব্যাপারটা সৌভাগ্য ছাড়া আর কি?

তাও দুআর মনের কথা জানতে সে আওড়ালো,
–“খেলোয়াড় সাহেব দেহি আপনার প্রতি খুবই যত্নশীল।অথচ অন্য মাইয়্যা কি, সাধারণ মানুষের দিকাও ফিরে দেখলেন না উনি।জেনির নজর কিন্তু বেশ তেজী। বুঝলেন মালকিন!”

শুধু যত্নশীল?নাহ, জেনি এই ব্যাপারটায় ভুল।ইয়াদ দুআর প্রতি সম্পূর্ণভাবে ঘায়েল।পুকুরপাড়ের রোমাঞ্চকর মুহূর্তের কথা মনে আসতেই রাঙ্গা হয়ে উঠল দুআর গালখানা।দুআর লাজুক মুখশ্রী দৃষ্টিপাত করে বিনা বাক্যে সবটা বুঝে নিলো জেনি।আজ মালকিনকে বেশ যত্ন করে খাইয়াবে সে। খেতে না চাইলে এই খেলোয়াড় লোকটার কথা বলে বাধ্য করবে খেতে।দুআ নিশ্চয় লোকটার কথা শুনে অবাধ্য হবে না জেনির!
—————————-
ইশফাক কলেজের সম্মুখে গিয়ে পুনরায় ফেরত গেলো গাড়িতে।দুআ নেই।সাথে নেই তার সঙ্গীরা।দারোয়ান থেকে জানলো জমিদার বাড়িতে অনুষ্ঠানের কারণে দুআ অনেকদিন আসেনি কলেজে।ঢাকায় থাকার দরুণ এইখানকার কোনো খবর পেলো না ইশফাক।গভীর ভাবনায় মত্ত হলো সে।দুআর দেখা পাওয়াটা যেনো তার ভীষণ দরকার।তার বাবা শক্ত করে বলে দিয়েছে,দুআ কখনো তার বাড়ির বউ হবে না।রক্ষিতা হিসেবে থাকবে।ইশফাক এতে আপত্তি জানালো না।তার দরকার শুরু দুআ আর তার নরম তনু।বিয়ে ছাড়াও দুআর সাথে থাকতে রাজি সে।এখন ইশফাক অপেক্ষা করছে দুআকে নিজের প্রতি ধাবিত করতে।তার মতে ভালোবাসার চাহিদা শুধু শারীরিক প্রশান্তি।যতবার সে দুআকে দেখতে পায় ততবার দুআর সত্তায় মিশে যাওয়ার জন্যে তার পুরুষালি মনটা আনচান করে।এই যেনো এক অসুরের অতৃপ্ত চাওয়া পাওয়া!
ভ্রু কুঁচকে গাড়ি ঘুরালো বিগড়ে যাওয়া লোকটা।

ব্যস্ততায় কাটলো কিছুদিন।বিয়ের অনুষ্ঠানের নানান কার্যক্রম শুরুর পূর্বে সকলে সিদ্ধান্ত নিলো,তারা ভ্রমণে যাবে।তাই আজ,সবাই মিলে ঘুরতে যাচ্ছে গ্রামের পশ্চিম দিকে ইদ্রিস জমিদারের ধান ক্ষেতের বিশাল আড়তে।জায়গাটা অত্যন্ত মনোরম।স্নিগ্ধ পবনে যেকারো মন ভালো করতে উস্তাদ এই জায়গা।দুআ তার ভাইয়ের সাথে বেরিয়েছে।ড্রাইভিং সিটে রিজোয়ান,তার পাশের সিট বরাদ্দ রাখলো মাইশার জন্যে।পেছনের সিটে জানালার পাশে বসেলো দুআ।অম্বরে আজ ধূসর রঙের মেঘের আনাগোনা।প্রকৃতি শীতল।নেই কোনো উত্তাপ।জানালা খুলে রমণী হিম পবন উপলব্ধি করছে।মাথার কাপড় এলোমেলো হয়ে কিছু অবাধ্য বেশ উড়ছে পবনের ঝাপটায়।দুআ মলিন হাতে এলোমেলো হয়ে আসা ওড়না ঠিক করে নেয়।পড়নে তার বাসন্তী রঙের কামিজ।লম্বা হাতা টেনে আরেকটু সামনে টেনে নিল মেয়েটা।আজও পুনরায় প্রেমিক পুরুষের সম্মুখীন হবে,এটা ভাবতেই লাজে রাঙা হলো রমণীর সারা সত্তা।এই মেয়েটা বড্ড লজ্জাবতী!

রিজোয়ানের গাড়ি করেই সকলে যাবে গন্তব্যে।মাইশাদের বাসায় সম্মুখে গাড়ি থামতেই দৃশ্যমান হলো উপস্থিত মানব মানবী। রামিসার কিছু কাজিন আগেই হুড়মুড় করে ভেতরে চলে এলো।জিয়া,মারিয়া বসলো দুআর পাশে।রামিসা,মাহি,মাইশা মাঝের সিটখানায় নিজেদের জায়গা করে নিলো।মারিয়া ইতিমধ্যে দুআর কাঁধে মাথা রেখে বসলো আয়েশ করে।মাইশার দিকে তাকিয়ে দুআ প্রশ্ন করলো,
–“ভাইয়ার পাশে জায়গা রেখেছিলাম তোমার জন্যে। সেখানে বসলে না কেনো?”
–“আমি বসি না তোমার ভাইয়ার পাশে। আস্ত একটা শয়..”
মাইশা বাক্য শেষ করতে পারলো না,পূর্বেই রিজোয়ান রাগী কণ্ঠে বললো,
–“মাইশু!মুখ সামলে কথা বলো।এইখানে আমরা দুইজন একা না।”
মাইশা বুঝতে পেরে চুপ হলো।তবে এখনো মুখে তিক্ত ভাব।সবাই বুঝতে পারছে হবু জামাই বউয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব লেগেছে।

–“ইয়াদ বসবে সামনে। ও কখনো ভিড়ে বসে না।”
জিয়া টানটান গলায় বললো।
দুয়ার কাছে অন্যরকম ঠেকলো জিয়ার স্বর।সে মৃদু সুরে বলে উঠলো,
–“আচ্ছা আপু।”
জিয়া আড় চোখে তাকালো দুআর পানে। মেয়েটাকে তার মায়াময়ী লাগলেও, ভাইয়ের কারণে কেনো যেনো দুআর প্রতি অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে জিয়ার।

ইয়াদ আসলো মিনিট পাঁচেক পর। দেখে মনে হলো সবেমাত্র গোসল সেরেছে মানব।পড়নে তার মোটা কাপড়ের ফুল হাতা গেঞ্জি।বুকের উপরে স্পষ্ট লিখা “Laugh And Live” অর্থাৎ হাসো এবং বাঁচো।
খোঁচা দাড়ি আজ গায়েব। পূর্বের খরশান চোয়াল আবারও দৃশ্যমান।লোকটাকে সবধরনেই যেনো চোখ ধাঁধানো লাগে দুআর।একবার তাকাল দৃষ্টি সরানো দায় হয়ে পড়ে মেয়েটার।

–“কেমন আছো,ইয়াদ?”
ইয়াদ বসতেই গাড়ি চালু করে প্রশ্ন করলো রিজোয়ান।
–“ভালই ভাইয়া।আপনি?”
–“আছি আলহামদুলিল্লাহ্।”
টুকটাক কথা বলছে দুজন।ইয়াদের পূর্ব অবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করলো রিজোয়ান।এই ইয়াদের সাথে পূর্বের ইয়াদের বড্ড অমিল।এই ইয়াদ রিজোয়ানের মন জিততে বাধ্য।
.
নেমে পড়লো সবাই। ছুটে যাচ্ছে যে যার ইচ্ছে মতো।মারিয়া ব্যতীত সকলেই ম্যাচিউর।তাই রিজোয়ান কাউকে বাঁধা দিচ্ছে না।ঘুরে দেখুক সবাই।মন খুলে উপভোগ করুক এই প্রকৃতি।

মাহি,দুআ,রামিসা,মারিয়া একসাথে দাঁড়িয়ে রইলো।জিয়া অন্যদের সাথে চললো জায়গা ভ্রমণে।ইয়াদ কিছু দূরে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত।

শুরু থেকেই মাইশার হাত চেপে রাখলো রিজোয়ান।দুআর সম্মুখে এসে তাকে নির্দেশের সুরে বলে উঠলো,
–“সাবধানে থাকবি।আমি তোর ভাবীর সাথে আছি।মেয়েটা বড্ড অভিমানী।”
মাইশা হাত ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে কেবল।
–“ঠিক আছে ভাইয়া।”
দুয়ার শান্ত কণ্ঠস্বর।

ইয়াদ এগিয়ে আসছে।তাদের পাশাপাশি দাঁড়াতেই রিজোয়ান নির্দ্বিধায় ইয়াদকে বলে উঠলো,
–“এদের দেখে রেখো।আমি একটু আসছি।বুঝতেই পারছো!”
রিজোয়ান মাইশার দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই ইয়াদ আশ্বাস দিলো,
–“সমস্যা নেই।আপনি যেতে পারেন।আমি আছি এদের সাথেই।”

চলে যাচ্ছে দুজন।মাইশার গা ঝাঁকানি দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা আজ বড্ড অভিমান করেছে।

মারিয়ার মোবাইলে “ক্লিক,ক্লিক” শব্দের প্রতিফলন হচ্ছে।একে একে ছবি তুলছে সে।সবচেয়ে বেশি তুলেছে ইয়াদ এবং দুআর পাশাপাশি ছবি।লজ্জায় দুআ একটু খানি হয়ে গেলো।মাঝে মাঝে দুআর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিতে ভুললো না ইয়াদ।

–“নরম ঘাসের হাঁটবে, মারু?অনেক ভালো লাগবে।”
–“অবশ্যই হাঁটবো,চাঁদ আপু।”
দুআ মুচকি হেসে মারিয়ার উদ্দেশ্যে বললো।

মারিয়া হেসে জুতা জোড়া খুললো বিনা দ্বিধায়।

–“সঞ্জয়কে মিস করছি।এই অসময়ে সে গেলো শহরে মাসীর বাসায়।অনুষ্ঠানেও এলো না।আজব ছেলে।”
–“মাসীর ছেলের বাৎসরিক অনুষ্ঠান ছিল।তার সেখানে যাওয়াটা জরুরি।”
রামিসা জবাব দিলো মাহির কথায়।

–“এই আপু,এইভাবে হাঁটো।অনেক মজা হবে।”
মারিয়ার দেখাদেখি দুআ ব্যতীত সবাই জুতা খুললো।মারিয়া,মাহি,রামিসা খালি পায়ে বিচরন করছে ঘাসের উপর।ধীরে ধীরে তাদের দূরত্ব বাড়ছে।আর অস্থিরতা বাড়ছে প্রেয়সীর।প্রেমিক পুরুষের নিকট আবারও সে একা!হৃদস্পন্দন বাড়লো মেয়েটার।লোকটা ঠিক তার পেছনেই।তনু স্পর্শ করেও যেনো স্পর্শ করছে না।
অস্থিরতায় উথাল পাথাল করছে ছোট্ট মন।

–“আমার দিকে তাকাও,চন্দ্র।”
মাদকতায় ভরপুর কণ্ঠ।দুআ ভেবে পায় না ইয়াদের সবকিছুই কি নেশালো?কেমন ঘোরে চলে যায় মেয়েটা!
দুআ ফিরলো না।জুতো খুলে সামনে হাঁটছে ধীর পায়ে।ইয়াদ তার নিকট এসে হাত ধরলো মেয়েটার।
–“তাকাও।”
চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো খেলোয়াড়ের হাস্যোজ্বল চেহারা।মুঠোফোনের ক্যামেরায় তাদের দুজনের অবয়ব বিদ্যমান।আশ্চর্য হলো দুআ।পাশাপাশি তাদের বেশ মনোরম লাগছে।লোকটার সাথে দুআর উচ্চতার ব্যবধান দেখে মনে মনে হাসলো মেয়েটা।

হঠাৎই দমকা হাওয়া ভেসে এলো।মাথার কাপড় পড়ে ওড়না নিচে পড়ে যাওয়ার পূর্বে ইয়াদ দক্ষ হাতে রক্ষা করলো ওড়না।দুআ ঘুরে দাঁড়াতেই পিঠে বিদ্যমান নকশা নজরে এলো ইয়াদের।অতটা বুঝা যাচ্ছে না।জামার আয়তনের উপর কিছুটা বুঝা যাচ্ছে। বাকী দাগ জামার কারণে ঢেকে আছে।ইয়াদের অবাধ্য আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে চাইলো সেই নকশা।ভালোবাসাময় স্পর্শে উষ্ণতা সৃষ্টি করতে চাইলো ইয়াদের অবাধ্য মনটা।কিন্তু বাঁধা এলো ভেতর থেকে।সামনের মেয়েটা যে নাজুক!সহ্য করতে পারবে না মেয়েটা।দুআ অস্বস্থিবোধ করার পূর্বে ইয়াদ তার মাথায় সুন্দর করে ওড়না ঠিক করে দিলো।

–“সেফটিপিন ব্যবহার করবে।অন্যের সামনে এমন দুর্ঘটনা আমার সহ্য হবে না।”

–“তাড়াহুড়োয় ভুলে গিয়েছিলাম।”
দুআর অনুতপ্ত কন্ঠ।

–“সমস্যা নেই।আমার সামনে সাত খু’ন মাফ তোমার।কিন্তু, অন্যের সামনে এমন পরিস্থিতি আমি হজম করবো না,দুআ।”
ইয়াদের কণ্ঠে নির্দেশনা।

দুআ খুশি হলো।এমন প্রেমিক পুরুষের নির্দেশনা কঠোর হলেও ভালোবাসায় ভরপুর।প্রেয়সীর জন্যে চিন্তিত প্রেমিক পুরুষ,এটাই তো চাই একজন সত্যিকারের প্রেমিকা!

–“খালি পায়ে হাঁটবেন?”
দুআ দ্বিধা কা’টিয়ে প্রশ্ন করলো।
–“নাহ।আমি ঠিক আছি।”

দুআ প্রতিত্ত্যুর করার পূর্বে তার পায়ে কিছু বিঁ’ধলো যেনো।থেমে গেলো পদচালিত মানবী।
ফিরে তাকালো ইয়াদ।দুআর কুঁচকানো চেহারা দেখে প্রশ্ন করলো,
–“এনি প্রব্লেম?”
নিচের অধর চেপে অশ্রুসিক্ত নয়নে মাথা নাড়ালো দুআ।
বাম পা উঁচু করে রাখতেই ইয়াদ বুঝলো তার পায়ে কিছু বিঁ’ধেছে।ইয়াদ হাঁটু গেড়ে বসে দুআর পায়ে হাত দিল অতি যত্নে।পায়ের তালুতে বিঁ’ধে আছে বরই গাছের কাঁ’টা।ইয়াদ আঙ্গুলের সাহায্যে কাঁ’টা বের করার কার্য পরিচালনা করার মাঝে দুআকে বলে উঠলো,
–“কাঁদে না।এই তো এখনই ব্যাথা চলে যাবে।”
কাঁ’টা বের করতেই দুআ অস্ফুট শব্দ করলো।

–“তোমাকে কাঁদতে মানা করতেও মন চায় না আমার।এই কান্নামুখ আরো বেশি আকর্ষণ করছে আমায়।তুমি এমন কেন বলো?এতো সুন্দর হতে কে বলেছে তোমায়?এইযে আমি এখন তোমার ফোলা চোখের প্রেমে পুনরায় মত্ত হয়েছি,এখন আমায় কে সামলাবে?অবশ্যই তোমাকে সামলানো লাগবে।দেখি চোখের পানি মুছো।”
ইয়াদ ওড়নার এক কোণা তুলে দুআর গাল ছুঁয়ে দিলো।
লাজে মাথা তুলতে পারলো না প্রেয়সী।এই লোক দিনের পর দিন দুআকে তার প্রতি দিওয়ানা বানাচ্ছে।

–“আপনি যান,সবার সাথে ঘুরে আসুন।”
–“তোমায় একা ফেলে যাবো আমি?ব্য’থা কমুক। তোমায় নিয়ে একসাথে যাবো।ততক্ষণ আমি দেখি তোমায়।তোমাকে দেখার তৃষ্ণা এই জনমে মিটবে বলে মনে হয় না,চন্দ্রাবতী।”
দুআর মাথায় হাত বুলালো প্রেমিক পুরুষ।

ঝিরিঝিরি বাতাসে হিম হয় আসে দুইজনের তনু।তবে মনের উষ্ণতা সেই হিম ভাবকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে বারংবার।
ইয়াদ অপলক চেয়ে রইলো মাথায় ঘোমটা দেওয়া শুভ্র মানবীকে।লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়া মানবী প্রেমিক পুরুষের পানে দৃষ্টিপাত করবে না হয়তো আজ।তার মাথা তোলা এখন বড় দায়।প্রেমিক পুরুষের দিকে নজর দেওয়া এখন অসম্ভব।একেবারেই অসম্ভব।

ইয়াদের আঁখি নিবদ্ধ লাজুকলতার পানে।যার গালে অশ্রুজল লেপ্টে আছে।ইয়াদের মতে দুআর এই রূপ, অপরূপ সুন্দর।আরেক কথায়, ভয়ংকর সুন্দর!

চলবে…..