আমার চন্দ্রাবতী পর্ব-৩৫

0
850

#আমার_চন্দ্রাবতী
লেখিকা- সালসাবিল সারা

৩৫)
–“ইয়াদ,পেট ব্যথা করছে অনেক।”
দুয়ার ক্ষীণ কণ্ঠ।ঠোঁট চেপে মেয়েটা ফুপিয়ে কাদঁছে।ইয়াদ গভীর ঘুমে।থাকবে নাই বা কেনো! ঘড়ির কাঁ’টা এখন সাড়ে তিনটার ঘরে।এই সময়কালের ঘুম ইহকালের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের মাঝে অন্যতম। যার দরুণ,দুআর এমন মিনমিনে সুর ইয়াদের কর্ণগুহরে প্রবেশ করতে বেগ পাচ্ছে।তবে,মেয়েটার মধ্যকার শান্তি নেই।ব্যথায় অতিষ্ট সে।পরপর দুইদিন হলুদ এবং বিয়ের ছোটখাটো অনুষ্ঠানে মেয়েটার যতো খাটনি।রাতের দিকে খারাপ লাগলেও,ইয়াদের ক্লান্ত শরীরের কথা ভেবে কিচ্ছুটি বলেনি সে।রাত বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়লো মেয়েটার ব্যথা।এইসব ব্যথা লুকাতে নেই, তা এই মেয়েকে কে বুঝাবে?নিজের দোষে নিজেই এখন ব্যথায় জর্জরিত।
দুআ শংকিত।তার মনে ভয় হয়।এই অবস্থায় হঠাৎ এমন পেট ব্যথা অশুভের লক্ষণ।ভয়ে দুআর ভেতরকার সত্তা কুঁকড়ে উঠে।এক হাতে পেট চেপে মেয়েটা অন্যহাতে ইয়াদকে ধাক্কায়।ইয়াদ হালকা নড়লো।

পরপর দুইবার কেশে দুআ এইবার নিজের কণ্ঠস্বর তীব্র করলো,
–“ইয়াদ!ব্যাথা করছে তো।”

মস্তিষ্ক অচল ইয়াদের। কাঁচা ঘুম ভাঙতেই দুআর এমন উক্তি শুনে তব্দা খেলো ছেলেটা।ঝাপসা আঁখিতে কয়েকবার হাত কচলিয়ে দেখে,দুআ তার পাশে কান্নারত।এইবার তার মস্তিষ্কের কার্যক্রম দ্রুত কাজ করার জন্যে একেবারে প্রস্তুত।ধড়ফড়িয়ে উঠলো ছেলেটা।কাছে টানলো তার প্রেয়সীকে,
–“কি হলো,দুআ?”
–“ব্যথা।অনেক ব্যথা।”
তার হাতের ইশারায় ইয়াদ বুঝলো দুআর পেটে ব্যথা।

সূক্ষ্ম ঘামের দেখা মিললো কপালের কিনারায়।অথচ,
প্রাকৃতিক ঠান্ডার কারণে হিম হয়ে আছে কক্ষটি।দুআর গায়ের উপর হতে কম্বল সরালো।আলগোছে তাকে নিজের কোলে বসালো ইয়াদ।দৃষ্টি তার পরিষ্কার বেডশিটে।দুআর কাপড়ও শুষ্ক।বুকটা যেনো হালকা হলো তার।অবস্থা বুঝতে পেরে দুআকে শান্ত হওয়ার নির্দেশনায় সে বললো,
–“সব ঠিক আছে।ব্লা’ড নেই,চন্দ্র।ব্লা’ড থাকলে চিন্তার বিষয় ছিলো।কিন্তু,হঠাৎ ব্যথা কেনো উঠলো?”

দুআ এখনো হেচকি তুলে অশ্রু বিসর্জন করছে।মনের ভয়ে এতটা কাবু ছিলো সে,ভাবলো আজ তার জীবনে কালো আঁধার নামবে।হঠাৎই তার মনে এলো, ক্লান্ত থাকার দরুণ রাতের খাবার খেয়ে ইয়াদের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে।অর্থাৎ,তার রাতের ঔষধ মিস।ইয়াদ এইমুহুর্তে এহেন কথা শুনলে অগ্নিমূর্তি লাভ করবে।তাও বলতে তো হবেই!এমন পেট ব্যাথা নিয়ে কিছুতেই দুআ মেঝেতে পা রাখবে না।

সন্তর্পনে সে ইয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে ফিচেল কণ্ঠে বললো,
–“ঔষধ খাইনি।”
–“রাতের!ঘুম দেখে তোমাকে আমি জাগায়নি।ভেবেছি বাচ্চার কথা ভেবে কখনো মিস দিবে না তুমি ঔষধ।কিন্ত,তোমার কিছুই খেয়াল থাকে না।”
ইয়াদের রাগী কণ্ঠ।

দুআ নিজের হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় করলো,
–“ক্লান্ত ছিলাম।মনেই ছিলো না।ঘুম পাচ্ছিলো অনেক।ব্যথা করছে।”

ইয়াদ আর কথা বাড়ালো না আর।প্রচুর রাগতে গিয়েও মেয়েটার কথা বিবেচনায় সেই রাগের অস্তিত্বকে বিদায় জানালো ।দুআকে বেডে বসিয়ে কবার্ড হতে দুআর ঔষধের বক্স উদ্ধার করে নির্দিষ্ট ঔষধ খাওয়ালো সে মেয়েটাকে।দুআ পা লম্বা করে বসলো।ইতিমধ্যে তার পায়ের ব্যথাটাও বাড়ছে। দুই দিনে তার হাঁটাচলার পরিমাণটাও অত্যন্ত ছিলো।অথচ ইয়াদ এইসবের কিছুই জানেনা।ছেলেটা বড্ড ব্যস্ত ছিলো সকল আয়োজনে।তবে নিজের এমন বেখেয়াল ভাবনায় নিজেই জর্জরিত হচ্ছে দুআ।

ইয়াদ তার পাশে বসতেই মেয়েটা পা বটতে নিলেও পারলো না।টান অনুভব করছে পায়ে।কি মহামুশকিলে পড়লো সে!তার অবস্থা যাচাই করে ইয়াদ পুনরায় দুআকে শুধালো,
–“পায়ে কি হলো?”
দুআ ভীত।আশঙ্কাজনক অবস্থায় তার গলায় সকল শব্দ কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।
–“কিছু না তো!”
দুআ বললো অতি মোলায়েম সুরে।
জোরজবরদস্তি পা বটতে নিলে ব্যথার দরুণ তার ভেতরকার অস্ফুট স্বর বেরিয়ে আসে,
–“আহ,মা!”

ইয়াদ চুপচাপ বসে মেয়েটার কান্ড পর্যবেক্ষণ করছে।তার ব্যথায়িত শব্দ কর্ণপাত হতেই ইয়াদ দুআর পায়ে হাত রাখলো,
–“শুয়ে পড়ো সোজা হয়ে।আমি পা মালিশ করছি।”

–“এই না।আমি ঠিক আছি। পায়ে হাত দিবেন না।”
মেয়েটা বললো।ইয়াদ তার পায়ে হাত রাখুক,এটা সে হজম করতে পারছে না যেনো!

–“শুয়ে পড়ো,চন্দ্র!তোমার সত্তায় নিজের অস্তিত্বের বিলিনের সময় পা কি বাদ যায়?তাহলে এখন কেনো পা ছুঁতে বারণ করছো?তুমি পুরোটাই আমার।তাই চুপচাপ শুয়ে পড়ো।”
ছেলেটার এহেন বাক্যে মেয়েটার লাজের আগমন হলো।চুপটি করে শুয়ে পড়লো সে ইয়াদের বালিশে।কিছুতেই আজ মেয়েটা নিজের বালিশে শুবে না।প্রায়ই ইয়াদ দুআর বালিশে এসেই ঘুমায়,তাই আজ মেয়েটা বালিশের অদল বদল করলো কেবল।

ইয়াদ পা মালিশ করে দেওয়া অবস্থায় দুআর পানে দৃষ্টি জ্ঞাপন করেন।মেয়েটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো প্রেমিক পুরুষের সুন্দর অবয়বে।শীতকালেও লোকটার উদোম শরীরে ঘুমাতে হয়?লোকটার কি শীত লাগে না?নীল আভার হালকা আলোতে কি অমায়িক লাগছে লোকটাকে!লোকটার হাত দুআর পায়ে সীমাবদ্ধ হলেও লোকটার দৃষ্টি দুআতেই আবদ্ধ।হালকা মালিশে পায়ের ব্যথা অনেকাংশে কমেছে।দুআ কম্বলের আস্তরণ হতে দুই হাত বের করে কাছে আসার ইশারা করলো ইয়াদকে,
–“এইদিকে আসুন।”

দুআর পায়ে অধর ছুঁয়ে ইয়াদ প্রশ্ন করলো,
–“পা ব্যথা কমেছে?”
–“হুম হুম। আসুন না।”
ইয়াদ হাসলো।মেয়েটার অসচেতনতার কারণে বড্ড বকতে ইচ্ছে করেছে তার।কিন্তু,দুআর সহজ সরল অপূর্ব মুখশ্রীর পানে চেয়ে তা আর হলো কই?প্রেমিক পুরুষটা যে তার প্রেয়সীতেই ঘায়েল!

ইয়াদ নিজেকে দুআর বাহুডোরে সঁপে দিলো।অর্ধেকের বেশি তনু তার বিছানায়,কেবল তার মাথা স্পর্শ করলো মেয়েটার বক্ষদেশে।দুআ সন্তর্পনে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মানবটার চুলের খাঁজে খাঁজে।ইয়াদের অধর স্পর্শ করলো দুআর চিবুকে।মেয়েটা হাসলো আর ফিসফিসিয়ে বলে,
–“ঘুমিয়ে পড়ুন।”
–“ঘুমাও তুমি।”
ইয়াদ মেয়েটার উদরের উপরে হাত পেঁচিয়ে রাখলো।দুইজনের ক্লান্ত আঁখি জোড়া মিনিট খানিকের মাঝেই বুজলো।
_______
তন্দ্রায় শায়িত অবস্থায় মেয়েটার ব্যথা কোথায় যেনো গায়েব ছিলো।তবে,ঘুম হতে জাগতেই পুনরায় সেই ব্যথা আবারও স্বাগতম জানাচ্ছে।দুআ কক্ষে একা।ইয়াদ নেই।কোনো ভাবে বাথরুমের কাজ সমাপ্ত করে বিছানায় এসে বসলো।এমন শীতের দিনেও মেয়েটা ঘামে চুপচুপ।তার নিকট ব্যথাটা দুর্বিষহ মনে হচ্ছে।রুমেও কেউ আসছে না।সকলেই আজ রিসিপশনের কাজে ব্যস্ত নিশ্চিত!দুআর অস্বস্থির পরিমাণ বাড়ছে।শক্তি জুগিয়ে ফোন লাগলো ইয়াদকে।তবে সে ফোন তুলছে না।দুআর মনে ভয়টা আরো জেঁকে বসলো।আরো দু তিনবার ইয়াদের নাম্বারে ডায়াল করলেও ফলাফলের উন্নতি হয়নি।বুদ্ধি খাটিয়ে সে জিয়াকে ফোন করলে দ্রুতই ফোনটা রিসিভ করে জিয়া।

অতঃপর দুআ নিজের সমস্যার কথা জানালে,জিয়া সাত পাঁচ না ভেবে বিনা ইয়াদের পরামর্শে ডাক্তারকে বাড়িতে আসার অনুরোধ করে ফোনের মাধ্যমেই।জিয়া,আহেলী,রামিসা এবং ডালিয়া দ্রুতই আসে রুমে।ডালিয়া দুআর নিকটে বসতেই দুআর মাথায় হাত রেখে বলল,
–“কখন থেকে ব্যথা?”

দুআর গালে অশ্রুর মাখামাখি,
–“কাল রাত থেকে, আম্মি।কিন্তু ঔষধ নেওয়ার পর ঠিক ছিলাম।এখন আবারও ব্যথা করছে।”
–“কান্না করো না দুআ।ডাক্তার আসছে।”
জিয়া দুআর নিকট আসলো।
–“উনি কোথায় আপু?ফোন দিচ্ছিলাম,তবে ধরলেন না।”
–“ইয়াদ বাহিরে। ড্রাইভিংয়ে আছে হয়তো,তাই মোবাইল ধরেনি।”
জিয়া পুনরায় বললো।

দুআ পীড়ায় রীতিমত ছটফট করছে।ডাক্তার আসার পরপর রুমে আত্মীয়ের জটলা পাকলেও ডালিয়া সকলকে নিয়ে নিচে নামে।পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এখন বড্ড জরুরি।

ডাক্তার চেকাপ করলো দুআর।ডাক্তারের সমেত কক্ষে জিয়া উপস্থিত।দুআকে ইনজেকশন দিলে মেয়েটা আবারও ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।ডাক্তার বেশ বিরক্ত নিয়ে জিয়াকে বললো,
–“তিনমাস পর্যন্ত বেডরেস্ট করা বেশ প্রয়োজন।উনার ফার্স্ট বেবি এটা।আর মেয়ের বয়স একদম পরিপক্ক এমনটাও তো নয়।মিসেস দুআ বেশ হাঁটাহাঁটি করেছে এবং জোরপূর্বক নিজের শরীরের সাথে পাল্লা দিয়ে স্ট্রেস নিয়েছে।বুঝতেই পারছি,বিয়ে আর হলুদের অনুষ্ঠানে উনার উপর ধকল গিয়েছে।আর এরই কারণবশত উনার এমন সমস্যা।বড় কিছু হতে পারতো উনার।তবে,ভাগ্যিস সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাচ্ছে।আজকে তো রিসিপশন উনাদের।চেষ্টা করবেন উনি যেনো খুব কম সময়ে ক্লাবে উপস্থিত হয়। নতুবা,উনার উপরেই যতো মুসিবত আসবে।আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি,এগুলো বাকি ঔষধের সাথে এড করবেন।”
জিয়া শুনলো কেবল।আসলেই গত দুইদিন মেয়েটার উপর বড্ড খাটনি হয়েছে।টানা দুইঘন্টা বসিয়ে রেখে মেয়েটাকে মেহেদী দিতেও হয়েছিল!জিয়া সকল দোষ মাথা পেতে নিলো আলগোছে।

বাহির হতে ইয়াদ ফিরলো।কানে তার মোবাইল ঠেকানো।দুআর কল দেখে কল ব্যাক করেনি সে,বাড়ির কাছেই যে ছিলো ছেলেটা!ভেবেছে সরাসরি এসেই কথা বলবে।আপাতত ইয়াদ ব্যস্ত ক্রিকেট দলের কতৃপক্ষের সহিত।চারিদিকের মানুষ কিছু বলতে চেয়েও পারলো না।কারণ ইয়াদ নির্বিকার। ডানে বামে না তাকিয়ে সরাসরি হাঁটছে।

দরজার নব ঘুরাতেই ইয়াদ বুঝলো দরজা লক ভেতর থেকে।ইয়াদ হাঁক ছাড়লো দুআর নাম ধরে।মিনিট দুয়েক পরেই দরজার খুললো জিয়া।তাকে দেখেই মসৃণ ভ্রু-দ্বয়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো ইয়াদের,
–“তুমি এইখানে?”
–“দুআ অসুস্থ।ডাক্তার এসেছে।”
হঁচকিয়ে উঠলো ইয়াদ।ভেতরটা কেমন ফাঁকা হলো মুহূর্তেই।এইতো সকালে মেয়েটা আয়েশ করে তারই বাহুডোরে নিদ্রায় বেঘোর ছিলো।তাহলে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কি হলো এমন?মেয়েটা তাকে ফোনও করেছিলো,অথচ ইয়াদ সেদিকটায় তেমন মাথা ঘামায়নি।বুক ভার হলো ছেলেটার। ভেতরে যেতেই ডাক্তার তার নীতি বাক্য পুনরায় শুনিয়ে দিলো ইয়াদকে।নিশ্চুপ দর্শকের মতো ইয়াদ কেবল ডাক্তারের পরামর্শ শুনলো কিছু বললো না।

ডাক্তার যেতেই আহেলী, ডালিয়া,রামিসার মা এসে দুআকে দেখে গেলো পুনরায়।ইয়াদ ঠাঁই বসে আছে দুআর মাথার কিনারায়।জিয়া কক্ষ হতে বেরুতে নিলেই ইয়াদ তাকে বলে উঠলো,
–“আপু, ও আজকে যাবে না প্রোগ্রামে।মা,বাবাকে বুঝিয়ে বলো।আমার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।”
জিয়ার পা থমকে,
–“ইয়াদ!এতো মানুষ আসবে।কি বলছো এগুলা।”
–“ও সিক।রাতেও কান্নাকাটি করেছে ব্যথায়।আজকের ধকলটা আরো খারাপ ভাব বাড়াবে তার।”
ইয়াদের দৃষ্টি দুআর মুখপানে।
–“আমি দুআর জন্যে সব কিছুই সিম্পল থেকে আবারও ঠিকঠাক করছি।একেবারে না গেলে বড্ড বেমানান লাগবে।এক ঘণ্টার জন্যে হলেও তাকে সবার সামনে উপস্থিত হতেই হবে।হল আমাদের এইখান থেকে একেবারে কাছে।তুমি এত ভেবো না।এখন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেস্ট নিক,দুআ।”
জিয়ার প্রস্তাব ইয়াদের কাছে মন্দ বলে মনে হলো না।সে সায় জানালো বোনের বক্তব্যে।দরজা ভিড়িয়ে জিয়া চললো নিচে।

ইয়াদ নিরুত্তর।মেয়েটার জন্যে তার ভেতরটা এলোমেলো।কি দরকার ছিলো তার,এতো জলদি মেয়েটার জন্যে এমন বড় দায়িত্ব এগিয়ে দেওয়া!আফসোস হয় ইয়াদের।নিজেকে যদি একটু সামলিয়ে নিতো সে,তাহলে আজ মেয়েটা এমন অসুস্থতায় ভুগতো না।দুআর মাথায় হাত বুলিয়ে ইয়াদ সেথায় অধর ছুঁয়ে ফিচেল কণ্ঠে বলে,
–“সরি,চন্দ্র!”

দুআ বেখবর।তবে,সত্যিকারে যদি সে জেগে থাকতো;তাহলে ইয়াদের এমন “সরি” শুনে মেয়েটা নিশ্চিত কেঁদেকুটে ইয়াদের বুক ভাসাতো!


ইদ্রিস জমিদারের গাড়ির পিছু এক বিরাট ট্রাক।উনি গ্রামেই ছিলেন এতদিন।মেয়ের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি কাজের চাপে।গ্রামের মানুষ তার উপর বেজায় নির্ভরশীল।গাড়িতে উঠেছেন অব্দি ইদ্রিস খেয়ালে আছেন সেই ট্রাকের।সেটা ডানেও যায় না বামেও যায় না।একেবারে তার গাড়ির পিছু পিছু।ঢাকার নিকটবর্তী আসলে ইদ্রিস জমিদার কাউকে ফোন লাগায়।ট্রাক ড্রাইভার হয়তো জানেনা,ইদ্রিস জমিদারের কানেকশন দুর্দান্ত শক্তিশালী।রাস্তায় গাড়ির প্রভাব থাকায়,ট্রাকটি তার নির্দিষ্ট কাজে সক্ষম হতে সময় নিচ্ছে বেশ।কিছুতেই কনট্র্যাক্ট অনুযায়ী ইদ্রিসের প্রাণ বি’নাশ করতে সফল হচ্ছেনা।

ঢাকায় পরিচিত পুলিশ বক্সের সামনে গাড়ি থামলো ইদ্রিসের।পুলিশ ফোর্স পূর্ব হতেই প্রস্তুত ছিলো অ্যাকশনের।ইদ্রিস ইশারা করতেই সেই ট্রাকের চাকায় বন্দুক চালালে ট্রাক থামে।ড্রাইভার পালাতে গেলে পুলিশ তাকে সঙ্গে সঙ্গে অ্যারেস্ট করে।

–“আমারে মা’রার কারণ?”
জমিদারের প্রশ্নে দমে যায় ড্রাইভার। মিথ্যা বলার কোনো সুযোগ না পেয়ে সে বলে উঠে,
–“ইশফাক নামের একজন টাকা দিলো আপনারে মারো’নের জন্যে।”
জমিদার যারপরনাই অবাক।ইশফাক নামের কাউকে চিনে বলে তার স্মৃতিতে এলো না।

ড্রাইভার হতে খুঁ’চিয়ে সব তথ্য বের করে ইশফাকের বিরুদ্ধে অ্যারেস্ট নামা পাঠালো ইদ্রিস।এই ছেলের সাথে তার অনেক বোঝাপড়া বাকি আছে।
,
সকলেই উপস্থিত কনভেনশন হলে।দুআর সাজসজ্জা, গয়না,লেহেঙ্গা সবকিছুই অত্যন্ত সাবলীল।মেয়েটার যেনো একবিন্দু অতিরিক্ত ভার সহ্য করতে না হয় এমনটাই সব ব্যবস্থা করেছে জিয়া।
অনুষ্ঠানে এক ঘণ্টার জন্যে এসেছে শুনে মনঃক্ষুন্ন হয় দুআর।যেনো অনুষ্ঠানে সে মুখ্য নয়।তবে তার এই দুঃখী মুখশ্রীর বদলে সকলে তার সুশ্রী চেহারা বেশ উপভোগ করছে।ইয়াদের জন্যে দুআ যেনো একেবারে নিখুঁত।সকলের বাহ্বার তালে ভাসছে ইয়াদ এবং দুআ দম্পতি।
তারা স্টেজে উঠতেই নানান আত্মীয়,খেলোয়াড়,দেশী বিদেশী নামকরা মানুষ সকলেই তাড়া দিলো তাদের সহিত ফটো তুলে এই দিনটায় স্মরণীয় দিনের খাতায় নাম লেখাতে।
দুআর অস্বস্তি হাওয়ায় মিললো।মেয়েটা এই অনুষ্ঠানে বেশ খুশি।এতো এতো নতুন মানুষের সাথে মিশে তার শরীর খারাপ কোথায় ছুটে পালালো।ইয়াদ তার হাত ধরে।এক মুহূর্তের জন্যেও মেয়েটার হাত ছাড়লো না প্রেমিক পুরুষ।
অনুষ্ঠানের মধ্য পর্যায়ে এখনো ইদ্রিস জমিদারের দেখা না পেলে দুআ দুশ্চিন্তায় ভুগে।বাবার জন্যে তার হৃদয় ব্যাকুল,
–“আব্বা কোথায়?একটা ফোন দিন না বাবাকে।”
দুআর অনুরোধ ইয়াদ পালন করলো।ইদ্রিস জমিদার তখনই হলের মুখ্য দার দ্বারা প্রবেশ করলো অনুষ্ঠানে। সকলের কাছে আজকের ঘটনাটা চেপে গেলেন উনি।ইশফাক ছেলেটার কঠোর শাস্তির বন্দোবস্ত করেছেন উনি।ইদ্রিস সবচেয়ে বেশি কঠোর হলো তার প্রতি যখন সে জানলো তারই দুশমনের ছেলে এই ইশফাক।ইদ্রিস তার উপর হামলাকারী এবং দুশমনদের ছেড়ে দেওয়ার লোক নন।

______
ইয়াদের রিসেপশনের পর একমাস ছুটি কা’টিয়েছিল সে।এরপর তাকে ফিরতে হলো মাঠে।ইদ্রিস জমিদারের সহিত ইশফাকের ঘটনা শুনে ইয়াদ সকল সম্পর্ক শেষ করলো সেই পরিবারের সাথে।তাছাড়া ইশফাক এখনো জেলে।ইদ্রিস জমিদার বেশ কঠোর মানুষ।

এইভাবে চলতে চলতে অতিক্রান্ত হলো চারমাস।দুআ সারাদিন ঘরে বসে কাটিয়ে দেয়।মারিয়া স্কুল থেকে ফিরলে অবশ্য সে দারুণ সময় উপভোগ করে।মাঝে মাঝে বাগানের দিকটায় সময় কা’টায় শাশুড়ি আর ননদের সাথে।
পাঁচ মাসের ভারী শরীর নিয়ে রুমে হাঁটছে সে।ডাক্তারের নির্দেশ,দুআর হাঁটাহাঁটির বড্ড দরকার।ইয়াদ তার রুম পরিবর্তন করেছে।তাদের দরকারি সবকিছু নিচে শিফট করা হলেও উপরের রুমে যাবতীয় সকল জিনিসের ছড়াছড়ি।এইতো গতমাসে ইয়াদ নিচে শিফট হলো তার বউকে নিয়ে।
বর্তমানে ইয়াদ অস্ট্রেলিয়ায়।আগামীকাল ফিরবে বলে জানিয়েছিল দুআকে।ইয়াদের এমন বিদেশ পাড়ি দেওয়া বর্তমানে অভ্যস্ত দুআ।লোকটা যতদিন বাইরে বাইরে থাকে সে বিহীন, ততোদিনের জমানো ভালোবাসা তার চেয়ে বেশিগুণে সুদে আসলে পূরণ করে ছাড়ে ইয়াদ।

দুআ সবেমাত্র বিছানায় বসলো।অমনি কক্ষে প্রবেশ করলো ডালিয়া এবং মারিয়া।দুআ শুভ্র হাসলো,
–“ভালোই হলো এসেছো তোমরা।আমি অনেক বিরক্তবোধ করছিলাম।”

–“ভাগ্যিস রুম থেকে বের হওনি একা একা।নাহলে আমার ভাই ফি’নিশ করতো সবাইকে।”
মারিয়া অভিনয় করলো গলার কাছাকাছি হাত নিয়ে।
–“আম্মু ঠিকভাবে বসো,মাথা মালিশ করে দিই।”
ডালিয়া দুআর পিঠের পিছে বালিশ রাখলো।
ঠিকভাবে বসলো মেয়েটা।ডালিয়া আঙ্গুলের নৃত্যের সাহায্যে মেয়েটার ঘন চুলে বিলি কাটছে।আবেশে চোখ বন্ধ করে মেয়েটা আওড়ালো,
–“আপনার ছেলেটা এমন কেনো,আম্মি?উনি আমাকে সামান্য রুম থেকেও বেরুতে দেননা।তার উপর এইখানের লোকেরা সব উনার দল।এইভাবে রুমে কি থাকা যায়?”

–“এতো বিশাল রুম,তোমার কাছে ছোট মনে হচ্ছে?ভুলে গিয়েছো,গতমাসে ইয়াদ থাকা অবস্থায় ডাইনিংয়ের ফ্লোরে পড়ন্ত পানিতে পা পিছলে যাচ্ছিল তোমার!সেদিন আমার ছেলেটা তোমাকে ধরেছিল বলে।নাহলে কি যে হতো?”
গা শিউরে উঠে কক্ষে অবস্থানরত তিনজনের।সবচেয়ে বেশি হতাশ হয় দুআ।সত্যিই তো,সেবার ইয়াদ না ধরলে তাকে, এই বাচ্চাটার সময়কাল এতদিন বাড়তো না।এরপর থেকেই ইয়াদ দুআর প্রতি সকল কঠোর সচেতনতা জারি করেছে।

–“আম্মি,আপনার ছেলে কবে আসবে?”
দুআর মন হতাশ ।
–“এইতো কালকেই চলে আসবে। কাঁদতে বসো না আবার!”
দুআ মাথা দোলালো।তবে তার আঁখি টুইটুম্বর।
দুইজনের আড়ালে শাড়ির আঁচলে নেত্রযুগল পুছলো মেয়েটা।

–“ভাবী তোমাদের এইচএসসি শুরু হবে সামনে।প্রিপারেশন নিচ্ছো!”
মারিয়া মোবাইলে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে প্রশ্ন করলো।

দুআ আঁতকে উঠলো হঠাৎ।তার প্রিয় পড়ালেখা এখন তার নিকট বড্ড অপ্রিয়।ইয়াদ তার বই খাতার বন্দোবস্ত করেছিল অনেক পূর্বেই। তবে মেয়েটা অস্থির।সে “পড়বে না” তেই অটল।

–“আমি নেই এইসব পড়ালেখায়।যতটুক পড়েছি তাই অনেক। ভালো ইংরেজী বলতে পারি আমি।ইন্টার পড়ুয়া হিসেবে আমি পড়ালেখায় বেশ চালু ছিলাম। আম্মি আমি আর পড়ালেখা করবো না।”
দুআ জিদ করলো।ডালিয়া হাসলো দুআর বাক্যে,
–“ঠিক আছে।পড়া লাগবে না আর।”
দুআ নিজের প্রাণ ফিরে পেলো তার বাক্যে।ডালিয়ার সত্তায় নিজের ভারী শরীর এলিয়ে দিলো মেয়েটা। প্রচন্ড স্বস্তি এই “মা” নামক জিনিসটায়।হোক না সে শাশুড়ি,তাও তো মা!
____

যথারীতি দিনে ইয়াদ দেশে ফিরলো।সকলের কলরবে প্রেয়সীকে না দেখে তার মুখশ্রী প্রশ্নবিদ্ধ।সকলে সোফায় বসে।ইয়াদের লাগেজ খুঁজে মারিয়া তার গিফটের খোঁজে।একটা নির্দিষ্ট লাগেজ ইয়াদ পরিবারের গিফটের জন্যে আলাদা রাখে।সেটা নিয়েই মারিয়া ব্যস্ত।

–“দুআ কি ঘুম?”
ইয়াদ তার মাকে প্রশ্ন করলো।
–“হ্যাঁ,আব্বা।তুমি আসলেই এতো রাতে।সে ভেবেছিল দশটার দিকে চলে আসবে।”
ডালিয়া হাসলো।
–“রাস্তায় জ্যাম ছিলো প্রচুর।”
ইয়াদ জবাব দিলো হাতঘড়িতে তাকিয়ে।
গিফটের লাগেজ বাদে ইয়াদের বাকি দুই লাগেজ টেনে নিয়ে যেতেই মারিয়া তাকে প্রশ্ন করলো,
–“ভাইয়া,দুআ ভাবীর জন্যে কিছু আনোনি?”
–“আমার লাগেজে আছে।”
ইয়াদের সোজা জবাব।
–“আব্বা,খাবার এখন দিবো?”
ডালিয়ার চিন্তিত প্রশ্ন।
–“দুআ উঠলে দিবে।তোমরা শুয়ে পড়ো।রাত গভীর হচ্ছে।”
ইয়াদের নির্দেশনায় যে যার যার স্থানে ছুটলো।মারিয়া গিফটের লাগেজ নিজ থেকে আলাদা করলো না।সে নিজের সবকিছু বুঝে নিয়ে পরবর্তীতে হস্তান্তর করবে এই লাগেজ।

কক্ষে প্রবেশ করতেই সাদা আলোতে সর্বপ্রথম নজরে এলো বিছানায় শায়িত মেয়েটাকে।এক পাশ হয়ে শুয়ে সে।গায়ে মোটা কম্বল। রুমের তাপমাত্রা হিম।
মেয়েটাকে বিরক্ত করলো না সে।সর্বপ্রথম গোসল সারলো ছেলেটা।গলায় তাওয়াল ঝুলিয়ে মেয়েটার পাশে আলগোছে বসলো।দুআর মুখ পর্যন্ত ঢেকে এখন।ইয়াদ কম্বল সরাতেই ঝঙ্কার দিলো তার তনু।মেয়েটা তার টি শার্ট পড়ে।বক্ষদেশের অর্ধেকাংশ দৃশ্যমান। ঘোর দৃষ্টিতে ইয়াদ সেথায় অধর ছোঁয়ালো।মেয়েটা নড়তেই পরপর অধরে অধর মেলালো সে।

দুআ জাগ্রত হলো প্রিয়তমের স্পর্শে।ঘুম ঘুম দৃষ্টিতে ইয়াদের বাহুডোরে আবদ্ধ মেয়েটা।প্রিয়তমের গালে হাত ছোঁয়ালো পরম আদরে,
–“কখন এসেছেন?”
–“অনেক্ষণ।”
ইয়াদের হাতের এলোমেলো স্পর্শে শ্বাস ভারী হয় মেয়েটার।
–“খেয়েছেন?”
–“নাহ।খেতে দাও।”
ইয়াদ হাসলো।
–“ফাইজলামি না।রাতের খাবার?”
–“উহু।”
দুআ নিজেকে ইয়াদ হতে ছাড়ালো।হেড সাইডে রাখা ওড়না নিয়ে আবৃত করলো নিজেকে।ইয়াদ দুআর পিছু পিছু হাঁটছে।ইয়াদ এবং দুআ টেবিলে খাবার সজ্জিত অবস্থায় দেখলো।ডালিয়ার কাজ নিশ্চয়! হটবাটিতে খাবার সংরক্ষিত।
অতঃপর ইয়াদের সমেত দুআর আরেকদফা খাবারের পর্ব চুকলো।
দুআ ইয়াদের পূর্বেই শেষ করলো খাবার।ইয়াদ খাওয়া অবস্থায় একে একে সবটা গোছালো মেয়েটা।দুআ হেঁটে বড় জানালার কাছে পৌঁছালো।বাহিরে বৃষ্টির আগমন।অথচ সে বুঝেনি।

পেছন হতে ইয়াদ তাকে আলিঙ্গন করলে দুআ জানালায় হাত রাখে,
–“বৃষ্টি হচ্ছে। ফোয়ারার দিকটায় নিয়ে যাবেন?”
–“এখন?”
ইয়াদের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন।
–“হুম,পেছনের দিক দিয়ে যায়?ছাউনী আছে তো।”
–“আচ্ছা,আসো।”
ইয়াদ দুআর হাত চেপে।বাড়ির পেছনের দিকটায় যাচ্ছে তারা।
পেছনের দরজা হতে ফোয়ারা পর্যন্ত লম্বা ছাউনী দেওয়া।এর দু পাশে আবার ছোট ছোট গাছপালার অবস্থান।ইয়াদ দুআকে আগলিয়ে হাঁটছে।বৃষ্টির ফোঁটা তাদের তনু স্পর্শ করতে অক্ষম।
সরাসরি বৃষ্টির নৃত্য উপভোগ করছে দুআ।আর তার এমন হাস্যোজ্বল চেহারা উপভোগ করছে তারই প্রেমিক পুরুষ।প্রেয়সীর উচুঁ পেটে হাত রাখলো ইয়াদ।মেয়েটা তার নিকটে সপলো নিজেকে।
–“মিস করেছি দুজনকে।অনেক বেশি।”
ইয়াদ ফিসফিসিয়ে বললো।
–“মিস না ছাই? ফোনেও পাওয়া যেতো না আপনাকে।”
–“আমি সেখানে বসে নেই চন্দ্র।তাও রোজ খবর নিতাম তোমার।জানো,দূর হতে তোমার কান্না আমাকে বড্ড পোড়ায়।এইভাবে আর কেঁদো না।”
–“কান্না পেলে মানুষ হাসে?”
–“উহু।”
ইয়াদ হাসলো শব্দ করে।মেয়েটা এখন তার কথার পিঠে ভালো জবাব দিতে শিখেছে।
–“পড়ালেখা বাদ দিলে কেনো? আম্মি আমাকে বলেছে সবটা।”
ইয়াদ ফের প্রশ্ন করলো।
–“আই’ম ওয়েল এডুকেটেড।”
দুআ ভেংচি কাটলো।

–“বুঝেছি চন্দ্র।যেমন তুমি চাও।আমার বাচ্চাটা কি বেশি জ্বা’লাচ্ছে তোমায়?”
ইয়াদ মেয়েটার কানে হাত ছোঁয়ালো।
–“আপনার চেয়ে কম জ্বা’লায়,জনাব খেলোয়াড়।”

দৃষ্টি মিললো দুজনার।তৃষ্ণার্ত মনে প্রেমের জাগান।মেয়েটার নেশায় আবদ্ধ হলো ইয়াদ।ছাউনির পিলারের সাথে মেয়েটাকে ঠেকে দাঁড় করলো।গাল জোড়া লাল আভায় সিক্ত দুআর।হাতের দৃশ্যমান ডোরাকাটা দাগে আঙ্গুল বুলালো ইয়াদ।তিরতির দুআর অধর।গলার নিচ বরাবর অধর চেপে ফিচেল কণ্ঠে ইয়াদ আওড়ালো,
–“লেট মি লাভ ইউ,চন্দ্র।”

চলবে…..