#আমার তুমি
#পর্বঃ৪০
#তানিশা সুলতানা
আজকেই বাংলাদেশে ফিরে যাবে সায়ান তুলতুল। আর বাকি সবাই থেকে যাবে।
ফজরের নামাজ আদায় করে দুজনই শুয়ে আছে। সায়ান তুলতুলের চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর তুলতুল সায়ানের বুকে ঘাপটি মেরে পরে আছে।
“বলছিলাম কি?
তুলতুল আমতা আমতা করে বলে।
” হুমমম
সায়ান চোখ বন্ধ রেখেই উওর দেয়।
“মুগ্ধকে মনে আছে? ওই যে প্লেনে দেখা হয়েছিলো?
ওর সাথে একবার দেখা করে গেলো হয় না?
তুলতুল উৎসাহ নিয়ে মাথা উঁচু করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে।
সায়ান বিরক্ত হয়। চোখ মুখ কুঁচকে তুলতুলের দিকে তাকায়। দমে যায় তুলতুল। মুখটা কালো হয়ে যায়।
” মুগ্ধ ফুগ্ধ এসব নাম যেনো আর তোমার মুখে না শুনি। তোমার মুখে শুধু সায়ান থাকবে। বুঝেছো?
সায়ান চোখ পাকিয়ে বলে।
“আজব কথা বার্তা তো।
শুধু আপনার নাম কেনো থাকবে?
তুলতুল সোজা হয়ে বসে ভ্রু কুচকে বলে।
” কারণ আমি তোমার বর তাই।
“বর বলে আপনার নাম সব সময় মুখে থাকতে হবে?
“অবশ্যই।
আর হ্যাঁ এখন থেকে তোর কোনো ফোন থাকবে না। তোর নিশ্চয় ফোনের কোনো প্রয়োজন নেই?
আর প্রয়োজন পড়লে মায়ের ফোন আছে সুমুর ফোন আছে।
সায়ান চোখ বন্ধ করে বলে।
তুলতুলের রাগ হচ্ছে। এটা বর? এভাবে স্বাধীনতা কেঁড়ে নেবে?
” আমার ফোন থাকবে। আমি ফোন ছাড়া থাকতে পারবো না।
তুলতুল বালিশের নিচ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে বুকে আগলে নেয়।
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
“আমি বলছি মানে তোর ফোন থাকবে না গট ইট।
তোকে আমি একটা রুটিন বানিয়ে দিচ্ছি।
সেই রুটিন মাফিক চলবি।
সায়ান উঠে বসে আড়মোড়া ভেঙে বলে।
তুলতুল অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে। আগেই তো ভালো ছিলো। এখন এমনটা কেনো হলো?
” সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠবি গোছল করবি নামাজ পড়বি তারপর কুরআন পড়বি। সাতটায় মায়ের সাথে রান্না করবি কার কি লাগবে দেখবি।
পারলে একাই রান্না করবি মাকে রেস্ট দিবি। কারণ মায়ের বয়স হয়েছে।
সাড়ে আটটার মধ্যে সব কাজ শেষ করে রুমে চলে আসবি। আধঘন্টা আমার সামনে বসে থাকবি। তারপর একসাথে নাস্তা করে আমি অফিসে চলে যাবো আর তুই ভার্সিটিতে। রাত আটটা পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখবি মায়ের খেয়াল রাখবি, মায়ের সাথে গল্প করবি। সুমুকে সঙ্গ দিবি। সুমু আর তুই রাতের রান্না করবি। আটটার সময় আমি চলে আসবো। তারপর আর রুম থেকে বের হওয়া যাবে না।
এখন তুই দেখ তুই ফোন হাতে নেওয়ার সময় কখন পাবি?
সায়ান তুলতুলের হাতের ভাজে নিজের হাত নিয়ে বলে।
তুলতুলের মাথা ঘুরছে। এই রুটিন মাফিক তুলতুল কখনোই চলতে পারবে না। শুকনো ঢোক গিলে তুলতুল। সায়ানের দিকে অসহায় চোখে তাকায়।
“পারতে হবে। একটুও হেরফের হলে খুব রেগে যাবে আমি। আর তুমি তো জানোই আমি রেগে গেলে কি কি হয়?
তুলতুলের নাক টেনে দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল মুখ বাঁকায়।
” আর হ্যাঁ বোরকা ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। ভার্সিটিতে কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানানো যাবে না।
নাহলে হাত পা ভেঙে রুমে বসিয়ে রাখবো।
চোখ পাকিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল গোল গোল চোখ করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“বজ্জাত একটা।
দুপুর বারোটার ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসে তুলতুল আর সায়ান। তুলতুলের মন খারাপ। তুহিনকে খুব মিস করবে। এই কয়দিনে একদম বন্ধুর মতো মিশে ছিলো। ছেলেটা খুব ভালো।
বাড়ি আসতে আসতে রাত বারোটা বেজে যায়। শান গেছিলো ওদের রিসিভ করতে।
সাহেদা বেগম তুলতুলকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। জড়িয়ে ধরে তুলতুলকে।
” দাদিমা কবে হচ্ছি?
মায়ের কথা শুনে সায়ান লজ্জা পেয়ে যায়। ছোট ভাই বোন বাবা সবার সামনে কি করে বলতে পারলো মা?
তুলতুল মুচকি মুচকি হাসছে সায়ানের দিকে তাকিয়ে।
“বলেদিবো না কি?
কনুই দিয়ে সায়ানের পেটে গুঁতো দিয়ে ফিসফিস করে বলে তুলতুল।
” কি বলবা?
সায়ান আতঙ্কে উঠে বসে।
“রোমাঞ্চ প্রপোজ ফুলসজ্জা সব কিছু?
বাঁকা হেসে বলে তুলতুল।
সায়ানের চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।
” মার খাইবা কিন্তু তুমি।
সায়ানের ধমকে তুলতুল একটুও ভয় পায় না।
“মা জানো
তুলতুল চেঁচিয়ে বলে ওঠে।
সায়ান ঢোক গিলে।
” মমমমা কি জানবে?
সায়ান ফট করে বলে।
“বলছি?
তুলতুল সায়ানকে চোখ টিপে বলে।
” প্লিজ?
সায়ান হাতের ইশারায় বলে।
সাহেদা বেগম সুমু শান সোহেল মিয়া হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। সায়ান ভাবছে কোন দিক দিয়ে দৌড় দিবে। পালাতে হবেই। নাহলে মানসম্মন আজ শেষ।
“তোমার ছেলে বলছে আমাকে নিয়ে গ্রাম থেকে ঘুরে আসবে।
তুলতুল এক গাল হেসে বলে। সায়ান দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তুলতুলের কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায়। বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস টানে। আর একটু হলেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো।
” সে তো ভালো কথা। আমরা সবাই যাবো।
সাহেদা বেগম বলে।
“মা সত্যি?
সুমু লাফিয়ে উঠে বলে।
” তাহলে আমরা কালকেই যাবো।
তুলতুল বলে।
“আমিও যাবো।
ইশার কন্ঠ শুনে চমকে ওঠে শান। এটার ভয়ই পাচ্ছিলো। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ইশা।
” তুই কোথায় যাবি?
সুমু ভ্রু কুচকে বলে। ইশা ততখনে সাহেদা বেগমের কাছে চলে এসেছে।
“তোমাদের সাথে যাবো।
” তোর না সামনে এসএসসি পরীক্ষা?
সাহেদা বেগম বলে।
“তবুও যাবো আমি। ওনাকে ছাড়া আমি একটা সেকেন্ড থাকতে পারি না। উনি আমার কপালে চুমু না দিলে তো আমার ঘুমই হয় না।
মন খারাপ করে বলে ইশা।
শান ছিটকে দু হাত দুরে সরে যায়। বাকি সবাই হা করে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান বেপারটা বুঝতে পেরেছে।
মুখ টিপে হাসে সায়ান।
” তো প্রতিদিন কয়টা করে চুমু খাওয়া হয় বাচ্চা?
সায়ান জিজ্ঞেস করে।
সোহেল মিয়া কাশি দেয়।
“আসছি আমি।
বলেই কেটে পড়েন তিনি।
সাহেদা বেগম কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে।
“বারোটা। কিন্তু ঠ
” বববারোটা বাজে
ইশাকে থামিয়ে শান জোরে বলে ওঠে।
ইশা কটমট চোখে শানের দিকে তাকায়।
“একটা পনেরে বাজে।
ইশা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে।
শান দোয়ালে কপাল ঠুকে। এই ছিলো কপালে?
” শানের সাথে তোর কি চলছে? আর এতো রাতে তুই আমাদের বাড়িতে কেনো?
সাহেদা বেগম বলে।
“উনি আমাকে আমি ওনাকে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। উনি আমার আয়াতের বাব।
একটু লজ্জা পেয়ে বলে সুমু।
আবারও সবাই আতঙ্কে ওঠে। আয়াতটা কে?
” এই আঘাতটা কে?
তুলতুল ইশার পাশে দাঁড়িয়ে বলে।
“আমাদের হবু বেবির নাম।
লজ্জা পেয়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে বলে ইশা।
শান এক দৌড়ে রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে ফেলে। সুমু সায়ান তুলতুল সাহেদা বেগম হো হো হেসে ওঠে। এতে আরও লজ্জা পেয়ে যায় ইশা।
” তো এতে রাতে এখানে কেনো?
সুমু বলে।
“এটা বললে উনি আমার আমাকে চুমু খাবে না।
বলেই এক দৌড়ে চলে যায় ইশা।
আরেক দরজা হেসে ওঠে সবাই।
” বেঁছে বেছে ভাইয়া গাল ফ্রেন্ড জুটিয়েছে।
সুমু অফসোসের সুরে বলে।
“তোরা ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়।
সায়ান তুলতুল রুমে চলে যায়। সাহেদা বেগম মেইন দরজা বন্ধ করে রুমে চলে যায়।
” আল্লাহ আমাদের দুই ভাইয়ের কপালে দুটো মেয়ে জুটিয়ে দিয়েছে। একন হাফ পাগল আর একজন ফুল পাগল।
সায়ান মনে মনে বলে।
সায়ান রুমে ঢুকতেই তুলতুল সায়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“কিহহহহ ফ্রেশ না হয়ে এখানে কেনো?
সায়ান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” আমরা তো বেবির নাম ঠিক করলাম না?
তুলতুল লজ্জায় রাঙা হয়ে বলে।
“কাল ইশাকে সাথে নিয়ে ঠিক করে নিও।
সায়ানের কথা শুনে তুলতুলের মুখটা চুপসে যায়। কত সুন্দর রোমান্টিক মুড নিয়ে বলেছিলো। বজ্জাতটা নষ্ট করে দিলো।
কই একটু বলবে ” এসো এখনই ঠিক করে নিচ্ছি”
অনরোমান্টিকের বস্তা।
” আর তুমিও তোমার ভাইয়ের থেকে একটু রোমান্টিক হওয়া শিখো।
বলেই তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়ান তাজ্জব বনে যায়। হঠাৎ রেগে গেলো কেনো?
চলবে