আশার হাত বাড়ায় পর্ব-৪+৫

0
294

#আশার_হাত_বাড়ায় |৪|
#ইশরাত_জাহান
🦋
কাচের দরজা খুলে শ্রেয়া বলে,”মে আই কাম ইন?”

সাথে সাথে শ্রেয়ার দিকে তাকালো ফারাজ ও বৃদ্ধ স্মার্ট মহিলা।মহিলাটির মুখে হাসি।উনি বলেন,”ইয়েস নাই লেডি কাম।”

শ্রেয়া এগিয়ে আসে।মহিলাটি বলে,”প্লিজ সিট।”

শ্রেয়া বসে চেয়ারে।ফারাজ দেখলো শ্রেয়ার দিকে।নার্ভাস হয়ে আছে শ্রেয়া।তাই ফারাজ নিজে কিছু না বলে মহিলাটিকে বলে,”আপনি আজকের ইন্টারভিউ নিন মিস এনি।”

মহিলাটির নাম এনি।উনি এই কোম্পানির ফ্যাশন এক্সপেরিমেন্টাল।যত ড্রেস ডিজাইন বা নতুন কালেকশন আসবে তার দেখাশোনা তিনি করেন।এছাড়া তিনি নিজেও ডিজাইন করে থাকেন।এনি মুখে মাধুর্য ফুটিয়ে বলে,”তোমার পুরো নাম?”

“শেহনাজ উম্মে শ্রেয়া।”

“শেহনাজ ইজ এ বিউটিফুল নেম।কে দিয়েছে এই নাম?”

“আমার বাবা।তার কাছে এই নামটা প্রিয় তাই।”

“গ্রেট।তোমার কোয়ালিফিকেশন?”

“আমি মার্কেটিং নিয়ে বিবিএ কমপ্লিট করেছি যশোর এমএম কলেজ থেকে।”

“ওয়েল তোমার সিভি আমরা দেখেছি।যেটা একদম পারফেক্ট।তোমাকে আমরা মেইনলি অ্যাসিসট্যান্ট পদে রাখতে চাই।লুক দিস হ্যান্ডসাম।উনি তোমার বস।তোমার কাজ হলো বিভিন্ন সিডিউল দেখে রাখা।তোমার বসের বিভিন্ন উপদেশ ফলো করা।মাঝে মাঝে আমাদের কোম্পানির কাজে তোমাকে আমাদের সাথে বাইরেও যেতে হবে। আর মিটিংয়ের সময় তোমাকে তোমার বসের সাথে থাকতে হবে।তার প্রয়োজনীয় ডিটেইলস তোমাকে সেফ রাখতে হবে।মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট তোমাকে ফ্যাশন সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে।যেটা সম্পর্কে আমি তোমাকে ট্রেইনিংয়ে রাখবো।তুমি কি এই কাজগুলো করতে পারবে?”

শ্রেয়ার কাছে কাজগুলো সহজ মনে হলো।যদিও অতটা সহজ না।কারণ এটা বড় কোম্পানি।কিন্তু এটাতে টিকতে না পারলে সে ভবিষ্যতে এগোতে পারবে না।মাঝে মাঝে বাবার কেসের কাগজপত্র শ্রেয়া নিজের কাছে রাখতো। আর শ্রেয়া খুব বেশি কিছু না জানলেও মার্কেটিং পড়ার জন্য একটু আধটু অনুমান সে ফ্যাশন সম্পর্কে রাখে।যশোরের গ্রামের দিকে থাকলেও শ্রেয়া শহরের দিকে মাঝে মাঝে যেতো।টুকটাক অনলাইন ভিডিও দেখেছে।যেহেতু এনারা নিজেরাও ট্রেনিং দিবে তাই শ্রেয়া সৎ সাহস নিয়ে বলে,”জি আমি পারবো।”

শ্রেয়ার সম্মতি পেয়ে ফারাজ এবার একটি পেপার বেড় করে বলে,”আপনাকে কাল তারিখ থেকে জয়েন হতে হবে।কিছু ট্রেনিং আছে।আমার মনে হয় আপনি আগে থেকে ট্রেনিংয়ে থাকলে কাজ সম্পর্কে বুঝতে বেশি সুবিধা হবে।আপনার সেলারি আর টাইম এই পেপারে দেওয়া আছে।দেখে নিন আর সাইন করুন।”

কাগজটা ভালোভাবে পড়ে নিলো শ্রেয়া।কিছু কিছু কঠিন ইংরেজি পড়তে কষ্টও হয়েছে তার।এমনিতেও বাইরে কথা বলে না সে।তার ভিতর এদের সামনে ইংরেজি পড়ছে।ভয় মনে কত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।একমাত্র ভালোভাবে পড়াশোনা করার কারণে সে আজ কাগজের লেখাগুলোর অর্থ বুঝতে পারছে।সেলারি আর টাইম সবকিছু শ্রেয়ার জন্য পারফেক্ট।শুধু তাই না যে সেলারি তাতে শ্রেয়া খেয়ে পড়ে জমাতে পারবে। তাই নির্দ্বিধায় সই করে দিলো শ্রেয়া। এনি হাত বাড়িয়ে বলে,”কংগ্রাচুলেশন শেহনাজ মাই লেডি।যদিও তোমার অফিসিয়াল কাজ এক তারিখ থেকে বাট তুমি আগে আগে এসো।আমি তোমাকে ফ্যাশন সম্পর্কে ডেভেলপ করে তুলবো।”

“শিওর ম্যাম। আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”
বলেই হাত মেলায় শ্রেয়া।

শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে ফারাজ বলে,”আপনার সিভির কপি আর একটা ছবি জমা দিবেন।এটা কোম্পানির কর্মকর্তাদের জন্য আবশ্যক।”

“ওকে স্যার।
বলেই হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে চলে আসে শ্রেয়া।শ্রেয়া বেড় হতেই এনি বলে,”দিস লেডি ইজ আউটস্ট্যান্ডিং।বাট হার লাইফ ইজ ইন সো ডেঞ্জার। আই হোপ সি উইল ট্রাই হার বেস্ট ফর থ্রো আউট দ্যা ইভিল পারসন ফ্রম হার লাইফ।”

“ডোন্ট নো এনি।”
বলেই দীর্ঘশ্বাস নেয় ফারাজ।শ্রেয়া বেড় হতেই। অর্পা তাকিয়ে থাকে শ্রেয়ার দিকে।বলে,”কি হয়েছে দোস্ত?”

“আমি সিলেক্টেড।ওনারা কনফার্ম করেছে।”

খুশি হলো অর্পা।শ্রেয়াকে নিয়ে বাইরে আসে তাড়াতাড়ি।বলে,”আমার অনেক ভালো লাগছে তোর সফলতায়।”

“এসব কিছু তোর জন্য সম্ভব হয়েছে।”

“আমার হাত ধরে হয়তো তোর ভাগ্য বদলাতে যাচ্ছে কিন্তু তোর চেষ্টার ত্রুটি নেই।তুই এগুলো ডিজার্ভ করিস।”

“আমি আজ মন থেকে দোয়া করি।যেসব মেয়েদের জীবনে কেউ নেই তাদের জীবনে একটা করে অর্পা থাকুক।অন্তত মুক্ত বাতাসে শান্তিতে বেঁচে থাকার একটা আস্থা পাবে তারা।”

“তুইও তো আমার জন্য অনেক করেছিস।আমার হোমওয়ার্ক করে দিতি আবার আমার কলেজের বেতন আংকেলকে বলে তুই দিয়ে দিতি।আমার পড়াশোনার জন্য তোর হাতও তো আছে।আমরা দুই বান্ধবী একে অপরের জন্য।তাই কেউ কারোর প্রতি কৃতজ্ঞ দেখাবো না।”

“হুম।”

“কি রে মন খারাপ কেনো?”

“ওনারা বলছে কাল থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য আসতে।আসলে আমার ভালো হবে।কিন্তু আমার দ্বারা তো সম্ভব না।বাসা ঠিক করা হয়নি তো।”

“এই সময় তো একটু টাফ কিন্তু আমাদের ড্রাইভার আংকেলের পাশেই একটা ছোটখাট ঘর আছে।একটা ঘর একটা রান্নাঘর আর বাথরুম।সাথে ছোট্ট করে একটা বারান্দা।আমার মনে হয় তোর হয়ে যাবে।আংকেল বলেছিলো ওটার কথা আজ আমাকে।তুই কি দেখবি ওটা?”

“চল দেখি।”

“আচ্ছা চল।আংকেল এখন বাজারে।আমি কল করে তার বাসায় আসতে বলবো।”

“আচ্ছা।”
দুই বান্ধবী মিলে বাসা দেখতে গেলো।যদিও একটু সমস্যা হয়েছে কিন্তু ড্রাইভার পরিচিত থাকায় সমস্যা হয়নি।এছাড়া অর্পা ওর পরিচয় দেওয়াতে বাড়িওয়ালা রাজি হলো।বাড়িটি অর্পার বাসা থেকে কিছুটা দূরে কিন্তু একই এলাকায়।

*****
সব কাজ শেষ করে বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে আসে শ্রেয়া।চুপচাপ রান্না করতে থাকে।বাবার দেওয়া ঈদের টাকাগুলো জমানো আছে শ্রেয়ার কাছে। রিমলির থেকে ওগুলো চেয়ে নিলো।প্রথম মাস ওটা দিয়ে চালাতে হবে। কাল সে চলে যাবে এই বাড়ি থেকে।

রান্না করার পর খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে শ্রেয়া সবাইকে ডাক দিতে থাকে।রুবিনা আর তার দুই মেয়ে মিলে এসেছে খাবার খেতে।রনি তার মতো বাইরে ব্যাস্ত।আজকে শ্রেয়া ছোট মাছ চরচরী করেছে আর ডাল।অনেক দেরি করে আসাতে শ্রেয়ার তাড়াহুড়ো করে এই রান্না করতে হয়।রুবিনা নাক সিটকে বলে,”এগুলো কি রেধেছো?আমার মেয়েরা এগুলো খায় না।ভালো কিছু রান্না করতে পারোনি?”

আজ আর শ্রেয়া চুপ থাকলো না।তবে তর্ক না করে বলে,”আসলে মা বাইরে অনেক কাজ করে এসে ক্লান্ত ছিলাম।আপনার মেয়েরা এগুলো না খেলেও বাইরের খাবার খুব খায় যেটা অনেকদিন আমার খাওয়া হয় না।আজকে আপনি এই শিলে করে ঝাল বাটা তরকারি খান আমরা অনলাইন অর্ডার করে খাই।কি বলো আপুরা ভালো হবে না?”

সবাই অবাক হলো শ্রেয়ার কথাতে।কিন্তু অনলাইনের খাবারের নাম শুনে লোভ লাগলো রুহি আর রুমার।ওরা বলে,”আমাদের সমস্যা নেই।ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার করো।”

আলতো হেসে শ্রেয়া বলে,”আচ্ছা।”
তারপর অর্ডার করে দেয়।রুবিনা চোখ ছোটছোট করে দেখতে থাকে শ্রেয়াকে।শ্রেয়া এবার ননদদের দিকে তাকিয়ে বলে,”অর্ডার করেছি।আসতে সময় লাগবে আমি একটু রূপচর্চা করে নেই।মুখটা কেমন তেল চিপচিপে হয়ে আছে।তোমাদের ভাইয়ের নজর আবার ইদানিং আমার দিকে নেই।একটু তার নজর ফিরাতে চাই।”

বলেই শ্রেয়া ঘরে চলে আসে।আজকে সে রূপচর্চা করবে।ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে লাগালো শ্রেয়া।চোখের উপর শসা দিয়ে ফ্যানের নিচে শুয়ে থাকে।রুহি আর রুমা এসে উকি দিয়ে দেখলো।রুবিনা কোনমতে খেয়ে নিলো আজ।এমন না যে মাছ খেতে খারাপ হয়েছে।ছোট মাছ আর ডাল খারাপ কিসে?

শ্রেয়াকে দেখ রুমা বলে,”হ্যা রে আপু আজ এই মেয়ের হলো টা কি?”

রুহি নিজেও উকি দিয়ে বলে,”কি জানি কি হয়েছে!আমি কিভাবে জানবো।তুই যেখানে আমিও সেখানে।”

“সকালেও তো বকা শুনেছে আজ।মায়ের শাড়ির জন্য।যে মেয়ে এত কষ্ট করার পরও আমাদের সবার পছন্দে আলাদা খাবার রান্না করে সে আজ মাত্র দুইটা পদ রান্না করেছে।তাও কি না ডাল আর ছোট মাছ।”

“সে যাই হোক আমরা তো আজ ইয়াম্মি খাবার খাবো।”

বলেই দুই বোন হাসতে থাকে।শ্রেয়া মুখটা ধুতেই আজ তার মুখটা অনেক ফ্রেশ দেখায়।নিজের কাছেই ভিন্ন অনুভব করে।নিজেকে আয়নায় দেখে মনে মনে বলে,”এভাবে নিজেকে সাজিয়ে রাখলে হয়তো আমার বরটা অন্য নারী দেখতো না।”

অনলাইনের খাবার চলে এসেছে।অনেকগুলো খাবার দেখে তাড়াহুড়ো করে শ্রেয়ার দুই ননদ।শ্রেয়া তাদেরকে থামিয়ে বলে,”দাড়াও সার্ভ করতে হবে তো।এখানে তো আমরা সবাই আছি।খুদা লেগেছে খুব।তোমরা তো এমনভাবে খাও যে শেষে এসে ঝুটা খাবার আমাকে খেতে হয়।”

অবাক হলো রুহি আর রুমা।রুবিনা পাশেই ছিলো। জোরে চিল্লিয়ে বলে,”আমার মেয়েদের খাওয়ার খোটা দেও।আমার বাড়িতে থেকে আমার মেয়েদের কথা শোনাও তুমি?সাহস কত তোমার?”

“প্রথমত মা আপনার মেয়েদের নিয়ে সত্যি কথাটাই বলেছি।কোনো খাবার খোটা দেইনি। আর দ্বিতীয়ত এটা আপনার একার বাড়ি না।এই বাড়িতে আপনিও যেমন বউ হয়ে এসেছেন আমিও তেমন বউ হয়ে এসেছি।সেক্ষেত্রে এই বাড়ি আপনার হলে এই বাড়ি আমারও।আপনিও অন্যের মেয়ে আমিও অন্যের মেয়ে আপনিও এই বাড়ির বউ আমিও এই বাড়ির বউ।সুতরাং বাড়ি নিয়ে কথা শুনাবেন না।আপনাদের স্বভাবটা বলেছি কোনো অন্যায় করিনি।”

বলেই খাবার বাড়তে থাকে শ্রেয়া।সবার জন্য না।শুধু নিজের প্লেটে নেয় খাবার।বাকিদের প্লেট গ্লাস এনে দিয়ে বলে,”তোমাদের আমি যতই দিবো কম হয়ে যাবে।তখন আবার আরেক কথা শুনতে হবে।তাই তোমরা নিজেরা নিয়ে খাও।আমি খেতে বসলাম।এখন না খেয়ে থাকার মতো ধৈর্য আমার নেই।”

শ্রেয়া বসলো খাবার খেতে।অবাক হয়ে আছে বাড়ির সবাই।রুহি আর রুমা একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে।তারপর খেতে বসে।যেহেতু শ্রেয়া আজ কঠোর হয়ে নিজে থেকে খেতে বসেছে তাই রুবিনা আর কিছু করতে পারলো না।তার দায়িত্বে থাকলে সে শ্রেয়ার জন্য মেয়েদের না খাওয়া খাবারই দিতো।এই দৃশ্য দেখে শ্রেয়া মনে মনে বলে,”যাওয়ার আগে তোমাদের নাস্তানাবুদ করতে চাই।কাল তো চলেই যাব।বুঝবে কাল থেকে সব।আমাকে নিয়ে আসার পর কাজের মহিলা বেড় করে দেওয়া।কাল তো হঠাৎ করে চলে যাবো।দেখবো কাজগুলো কে করে।”

ঘরে এসে ব্যাগ গুছাতে থাকে শ্রেয়া।এই সময় রুবিনা ঘুমিয়ে আছে।রুহি আর রুমা নিজেদের মতো ব্যাস্ত।এটাই সুযোগ সবকিছু গুছিয়ে রাখা।বিয়ের সময় তার যেসব জামা কাপড় ও গহনা দেওয়া হয়েছিলো সেগুলোই গুছিয়ে নিলো শ্রেয়া।খাটের দিকে তাকাতেই মনে পড়লো এই খাট আর ড্রেসিং টেবিল তার বাবার জমানো টাকা দিয়ে বানানো।বাড়ি করার জন্য টাকা গুছাতে থাকে শ্রেয়ার বাবা।সেখান থেকে কিছু অংশ নিয়ে মেয়ের জন্য ছোট ছোট স্বর্ণের গহনা ও ফার্নিচার করে দেন তিনি।মেয়ের সুখের জন্য সবকিছু দেওয়া।চারপাশে তাকিয়ে শ্রেয়া কল করে অর্পাকে।

মিমির সাথে খেলাধুলা করছে অর্পা।শ্রেয়ার কল পেতেই রিসিভ করে বলে,”কিছু হয়েছে দোস্ত?”

হাসি পেলো শ্রেয়ার।অর্পা তাকে নিয়ে এত চিন্তিত।হালকা হেসে বলে,”আরে না কিছু হয়নি।বলছি যে এই রুমের বেশিরভাগ ফার্নিচার আমার বাবার টাকায় গড়া। কাল তো চলে যাবো।লোকজন তো তেমন চিনি না।তোদের ড্রাইভার আংকেলের নাম্বারটা দে আমি কথা বলে লোক ডাকতে বলি।ফার্নিচরগুলো নিয়ে যাবো।”

“বাব্বাহ!শ্রেয়া রানীর দেখছি বুদ্ধি বেড়েছে।এটাই তো চেয়েছিলাম।আচ্ছা লোক পাঠাবো আমি।আর শোন কাল সকালে আমিই আসবো তোকে নিতে।যখন কল করব রেডি হয়ে থাকবি।রনি কোনো ঝামেলা করলে আমি আছি।”

“আচ্ছা দোস্ত।”

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায় |৫|
#ইশরাত_জাহান
🦋
রাত করে বাসায় ফিরতেই বউয়ের নামে নালিশ পেলো রনি।রুবিনা নালিশের ঝুড়ি নিয়ে বসেছে।রনি এসে বসতে পারেনি ওমনি রুবিনা বলে,”আজকে তোর বউ আমার মেয়েদের খাবার নিয়ে খোটা দিয়েছে।আমাকে ডাল আর ছোট মাছ খাইয়েছে। নবাবজাদী আজকে একটা কাজও করেনি।উল্টো রূপচর্চা করে নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছে।”

“বর বাড়িতে আসতে না আসতেই বউয়ের নামে নালিশ শুরু করলেন মা?অন্তত ছেলেটাকে রেস্ট করতে দিতেন।আপনার ছেলে তো আপনার কথা শুনেই আমাকে মারতে আসতো।এটুকু তো আপনি বিশ্বাস করেন।তাহলে তাকে রেস্ট করতে দিলে কি এমন অসুবিধা ছিলো?”

রনি ঘুরে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়ার মুখে এমন কথা শুনে রুবিনা বিষম খেলো।শ্রেয়ার উদ্দেশে রনি বলে,”মায়ের সাথে এগুলো কেমন ব্যাবহার করছো?”

“আমি কোনো খারাপ ব্যাবহার করিনি। যাই হোক বাইরে থেকে লেডিস পারফিউম নিয়ে এসেছো।মা সেকেলের মানুষ উনি কি বুঝবেন এসবের।আমরা তো এই যুগের তাই কোনটা লেডিস আর কোনটা জেন্স পারফিউম এটা বুঝি।যাও একটু পবিত্র হয়ে এসো।”

শ্রেয়ার মুখে এমন কথা শুনে রনি ও শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে আছে রুবিনা।রনি কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।শ্রেয়া কোনো রকমে কিছু রান্না করে সবাইকে দিয়ে নিজের মতো খেয়ে নিলো।

আজকে সবাই ঘুম থেকে উঠেছে কিন্তু শ্রেয়া এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি।আটটা বাজে এখন।রনি বেড় হবে একটু পর।বাসা থেকে অফিস বেশ দূরে তার।রুবিনা সকালে চা খায় রুহি আর রুমা সকালে কাঁচা বাদাম খায়।রাতে বাদাম ভিজিয়ে রাখেনি শ্রেয়া।এখন রুহি আর রুমা এই নিয়ে চিল্লা চিল্লি করছে।কিন্তু আরামে ঘুমিয়ে আছে শ্রেয়া।রনি মাত্র উঠলো ঘুম থেকে।শ্রেয়াকে তার পাশে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।এই মেয়ে তাকে সকালে ডেকে দেয়।আজকে বোনেরা চিল্লিয়ে কান ফাটিয়ে দিচ্ছে আর শ্রেয়ার ঘুমের শেষ নেই।না পেরে রুবিনা এবার এলো শ্রেয়ার ঘরে।শ্রেয়াকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো।ধড়ফড়িয়ে উঠে শ্রেয়া বসে পড়লো।রুবিনা বলে,”মহারানীর ঘুম হলো?সকালের খাবারটা তো বানাতে হবে।এভাবে পরে পরে ঘুমালে হবে?”

রুবিনার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে শ্রেয়া বলে,”আপনি আর বোনেরা তো অক্ষম হয়ে যাননি এখনও।কি সুন্দর তরতাজা হয়ে হাঁটছেন।রান্নাবান্না করুন। আর বাদাম খেলে আপনার মেয়েরা হবে রূপবতী এদিকে আমি না খেয়ে কাজ করে হবো খয়রাতি এটা তো হয় না।এবার নিজেরাও একটু কাজ করুন।”

বলেই আবার শুইয়ে পড়ে শ্রেয়া।ঠিক তখনই কল আসে অর্পার।এবার শ্রেয়া উঠে কল কেটে ম্যাসেজ দেয়।শ্রেয়ার ম্যাসেজ পেয়ে লোকজন নিয়ে হাজির হয় অর্পা।

রনি ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই শ্রেয়া ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।বেড় হয়ে দেখলো অর্পার সাথে আসা লোকেরা খাটের স্ট্যান্ডগুলো খুলছে।ড্রেসিং টেবিল থেকে রনির জিনিসপত্র সরিয়ে দিচ্ছে।রনি ও রুবিনা ওদের বরণ করতে থাকে কিন্তু কেউ শুনছে না।শ্রেয়া এসব দেখেও না দেখার মত করে অর্পার পাশে এসে দাঁড়ায়।

শ্রেয়াকে দেখে অর্পা বলে,”তোর ব্যাগ কোথায়?”

শ্রেয়া ওয়াড্রবের পিছন থেকে ব্যাগ নিয়ে আসে।রনি এটা দেখে শ্রেয়ার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে,”এগুলো কি শ্রেয়া?”

শ্রেয়া কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের কাজ করে।ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে আসে আর লোকগুলোকে বলে,”জিনিসগুলো সাবধানে আনবেন।আমার বাবার কষ্টের ফল এটা।”

বলেই বেড় হয় শ্রেয়া। অর্পাও থাকে তার সাথে। রনি রুবিনা ও রুহি রুমা মিলে বেড় হলো শ্রেয়ার পিছনে।রনি এসে বাঁধা দিলো শ্রেয়াকে।বলে,”কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

হাত ছাড়িয়ে শ্রেয়া বলে,”কোথায় যাচ্ছি সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নই।তবে এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখানে তোমার মতো মানুষ থাকবে না।”

রুবিনা শ্রেয়ার কাছে এসে বলে,”কি বলতে চাও?এই সকালে কোন নাটক শুরু করছো?”

হালকা হেসে শ্রেয়া বলে,”নাটক মনে হলে চুপ করে দেখতে থাকুন।নাটক শেষ হতে বেশি সময় লাগবে না।”

ধমক দিয়ে রনি বলে,”বেয়াদপি করবে না শ্রেয়া।”

এবার শ্রেয়া চেঁচিয়ে বলে,”তুমি বাড়াবাড়ি করবে না রনি।কি মনে করো কি নিজেকে?ঘরে বউ থুয়ে অন্য নারীর সাথে রাত দিন কাটিয়ে আসবে আর আমি সহ্য করব!তোমাদের অত্যাচার সহ্য করেছি অনেক।কিন্তু চুপ থাকতাম যে কোনো একদিন তোমাদের মন পাবো।হয়তো তোমাদের মনে হবে যে আমিও একজন মানুষ আমারও ভালো লাগা ভালো থাকার অধিকার আছে।কিন্তু না তোমরা তেমন মানুষই না।তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারবে আবার আমার অধিকার টুকুও আমার থেকে ছিনিয়ে নিবে।তোমার বউ হয়ে এই বাড়িতে তোমার ভালোবাসাটাও আমি পাইনি।ওকে ফাইন ভালো নাই বাসো কিন্তু যাকে ভালোবাসো না তাকে বিয়ে করার দরকার কি?ওহ হো তোমরা তো আবার গরীব ঘরের শিক্ষিত কর্মঠ মেয়ে খোঁজ।যে কি না তোমাদের বিনা বেতনে চাকরানি হয়ে থাকবে। যার কাজ এই বাড়ির লোকের জন্য দিন রাত খেটে মরা কিন্তু স্বামীর ভালোবাসা পাবে না উল্টো স্বামীর তিক্ত ব্যাবহার পাবে।”

আশেপাশে থেকে লোকজন জড়ো হয়েছে।এটা অনেক আগেই হয়।রুবিনা অনেক জোরে জোরে কথা বলে।তার কন্ঠ পেয়ে অনেকে নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে উকি দিয়ে দেখছে।আবার অনেকে নিজের কাজের জন্য বাইরে বেড় হয়ে এদের কীর্তি কলাপ দেখে দাড়িয়ে পড়েছে।শ্রেয়া সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো।তারপর রনিকে উদ্দেশ্য করে আস্তে আস্তে বলে,”আমরা মেয়েরা বিয়ের আগে থেকে শিখেছি স্বামীর সেবা করতে হয়।শাশুড়ির আদেশ পালন করতে হয়।শ্বশুরবাড়ির সব কাজ নিজে করতে হয়।এটা মেয়েদের দায়িত্ব।আমিও এমন পর্যায়ের মেয়ে।আমিও এই কাজগুলো করার মতো মন মানসিকতা রাখি।আমিও আমার স্বামীর সেবা শাশুড়ির সেবা পুরো পরিবারের সেবা করতে রাজি।কিন্তু বিনিময়ে কি পাচ্ছি?স্বামী আমার বাইরের নারীর সাথে ঘুরে বেড়ায় নষ্টামি করে আর শাশুড়ি আমাকে কুকুরের মতো খাটিয়ে মারে তার সাথে যোগ আছে দুই ননদ।এটাই কি মেয়েদের জীবন?না এটা মেয়েদের জীবন না।মেয়েদের যেমন তার স্বামীর সংসার মনোযোগ দিয়ে করতে হয় তেমন একজন ছেলেরও তার বউ তার সংসারের প্রতি মনোযোগী হতে হয়।আমার এই সংসার এক তরফা সংসার।যেটা আমি গোটা দেড় বছর ধরে একা একা সাজিয়েছি।তোমাকে নিয়ে মাকে নিয়ে বোনদের নিয়ে সুখে থাকার বহু চেষ্টা করেছি।কিন্তু দিনশেষে আমি হেরে গেছি।তোমরা আমার ভালোবাসার মূল্য দেওনি।বাইরের চাকচিক্য দেখে সেদিকে চলে গেলে আমাকে বানিয়ে দিলে মরিচা ধরা এক অবহেলিত নারী।এখন আমি এই মরিচার আড়ালে থেকে বেড়িয়ে চাকচিক্য হব।তবে তোমাদের মতো নোংরা সমাজের লোকেদের মতো মন মানসিকতা কখনই আমি আমার মধ্যে আনতে পারবো না।আমার এক তরফা করা সংসারে হার মেনে চলে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু হারিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।”

কথাগুলো বলেই চারপাশটা দেখলো শ্রেয়া।ফ্ল্যাটের মালিক মাত্র এসেছে সেখানে।মালিকের বউ শ্রেয়ার কাছে এসে বলেন,”কি হয়েছে মা।এভাবে চলে যাচ্ছো কেনো?”

“গায়ে মরিচা ধরেছে আমার।স্বামী তাই অন্য নারীতে মেতেছে।চাকচিক্য দেখে সেদিকে মোহিত হয়েছে আমার স্বামী।অথচ ঘরের মরিচা তার জন্য নিজেকে চাকচিক্য করে গড়ে তুলতে পারেনি।”

শ্রেয়ার উক্তিগুলো শুনে বুঝে নিলো মহিলাটি।ঘুরে তাকালো রনির দিকে।এই বিষয়ে কিছু না বলে শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”লোহায় মরিচা ধরলে যে লোহা অক্ষম হয় এটা কিন্তু ভুল।নিজেকে শক্ত রাখতে হয়।ব্যাবস্থা কি হয়েছে তার?এই ঢাকা শহর যে বড় ভয়ানক।”

চোখের পানি মুছলো শ্রেয়া।রনিকে কথাগুলো বলার সময় তার চোখ দিয়ে ঝরতে থাকে অশ্রু বর্ষণ।অথচ যার জন্য শ্রেয়া দুঃখ পাচ্ছে তার কোনো হেলদোল নেই।শ্রেয়া এবার ওড়না শক্ত করে ধরে বলে,”মরে যাবো তাও নিজেকে বাজে ভাবে রূপান্তর করব না।তবে সুন্দরভাবে বসবাস করার মতো ব্যাবস্থা করা হয়েছে আমার।”

কথাগুলো বলে শ্রেয়া অর্পার কাছে আসে।যেহেতু ফার্নিচার দুইটা তাই বেশি সময় লাগেনি।ওগুলো গাড়িতে নেওয়ার সাথে সাথে অর্পা ও শ্রেয়া এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।কিছুদূর হেঁটে আবারও পিছনে ঘুরে তাকালো শ্রেয়া।রনির দিলে তাকালো সে।বিয়ে করে বউ হয়ে এসেছিলো এই ফ্ল্যাটেই।লোকগুলোর তিক্ততা সহ্য করলেও ওগুলো পানসে হয়ে যায়।কিন্তু স্ত্রী হয়ে স্বামীর মনে জায়গা করতে না পারলে এই সংসার ফিকে পড়ে যায়।সংসারে তৃতীয় ব্যাক্তি আসলেও তাকে সুযোগ দিতে নেই।আর সেখানে রনি সাদরে গ্রহন করেছে তার জীবনে অন্য নারীকে।শ্রেয়া মনে মনে ভাবছে,”একটিবার যদি আমার হাত ধরে বলতে পাপ করেছি এখন আমাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে দেও।আমি ভালো পথে চলব।অট্টালিকায় না রাখি কুঁড়েঘরের রাজরানী হবে তুমি।কিন্তু পবিত্র সম্পর্ক ছেড়ে যেও না।ভালোবাসবো মন থেকে ভালোবাসবো তোমাকে।আমি তাহলে তোমাকে ছেড়ে যেতাম না রনি।পাপ করলে আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে আল্লাহ মাফ করে দেয়।কিন্তু যে পাপকে স্বীকার করে না তাকে কিভাবে মাফ করা যায়?”

কথাগুলো শ্রেয়া মনে মনে ভাবছে। যার কারণে তার মনে হতে থাকে রনি তাকে এই কথাগুলো বলছে।কিন্তু না এগুলো তার ভ্রম।আসলে ইচ্ছার বাইরে কোনোকিছু করতে গেলে মাঝে মাঝে চাওয়া পাওয়াগুলো না চাইতেই কানে বাজতে থাকে।এটা এক রকম মনের রোগ।যেমন শ্রেয়ার মধ্যেও চলছে।সে চায় রনি একটিবার তার ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করুক।সংসার ছাড়তে কেউ চায় না।শ্রেয়ার নিজেরও ইচ্ছা নেই সংসার ছাড়ার।কিন্তু এদের ভাবগতিতে কোনো কিছুই প্রকাশ পায় না।রনি একটিবারও বলেনি যে আমি তোমার হয়ে থাকব।শাশুড়ি একটিবার বলেনি তুমি থেকে যাও আমার ছেলেকে আমি শাসন করব যাতে ও বাইরে নজর না দেয়।কথাগুলো ভেবে কান্না পেলো শ্রেয়ার।মানুষ এতটাও নির্দয় হয় কিভাবে?

কাধে অর্পার হাত পেতেই শ্রেয়া তাকালো অর্পার দিকে।তারপর রনির উদ্দেশ্যে বলে,”ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে তুমি।একটু সময় লাগবে আমার।কিন্তু ডিভোর্স তো আমি দিবই।”

বলে গাড়িতে ওঠে শ্রেয়া।অর্পা এসে বসেছে তার পাশে।এতক্ষণ নিজেকে সংযত রাখলেও এখন আর পারলো না।হাউমাউ করে কান্না করে দিলো শ্রেয়া।অর্পার কোলে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো হয়ে গেলো।কান্না করতে করতে বলে,”ঘরে কুকুর বিড়াল পুষলে ওদের প্রতিও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় আমি তো জলজ্যান্ত মানুষ ছিলাম।কেনো আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসতে পারলো না?আমার দোষটা কোথায়?”

শ্রেয়ার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে অর্পা বলে,”বাঙালি ঘরোয়া নারী দেখে বিয়ে করে আবার তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া এদের স্বভাব।তবে আমি বলব সব পুরুষ এক না।কিছু কিছু নারীও আছে পুরুষদের জীবনটা নষ্ট করে দেয়।অনেক মেয়েই আছে পুরুষদের থেকে তার চাহিদা তার সবকিছু ছলে বলে আদায় করে নেয় কিন্তু যার কাছ থেকে সবকিছু আদায় করে তার মনের ভিতরের অবস্থা বুঝতে চায় না।এভাবে কান্না করবি না।যে তোর মূল্য দেয় না তার জন্য চোখের পানি ফেলে কি পাবি তুই?”

উঠে বসে শ্রেয়া।চোখের পানি মুছে বলে,”আমি এতকিছু করতে চাইনি।একটা স্বাভাবিক সংসার আমি ডিজার্ভ করি। হ্যাঁ সংসারে খুঁটিনাটি ঝামেলা অশান্তি থাকে।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে খুঁটিনাটি ঝামেলা না হলে এটা মিষ্টি মধুর সম্পর্ক হয় না।কিন্তু আমার জীবনটা পুরোই আলাদা।এরা সম্পর্কের মূল্যই দেয় না।ওদিকে আমার ভোলা ভালা মা।মা নিজে ঠিকমত চলতে পারে না।বোনের জন্য খরচ করে কোনো রকমে দিন পার করে।কিন্তু শাশুড়ি কিছু চাওয়ার সাথে সাথে ধার দেনা করে শাশুড়ির চাওয়া পাওয়া পূরণ করে।আমার সুখের কথা ভেবে। আর এগুলো দেখলে মনে হয় জন্মের সময় মরলাম না কেনো?”

সাথে অর্পা চেপে ধরে শ্রেয়ার মুখ।বলে ওঠে,”বাজে কথা বলবি না।এটাও তোর ভাগ্যে লেখা ছিলো।যেখান থেকে নিজেকে বেড় করতে সক্ষম হয়েছিস তুই।কত মানুষ আছে ভাগ্য ভাগ্য বলে মুখ বুঝে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়।তুই এটা করিসনি।জীবনে এগিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ তুই পেয়েছিস।আমি তোকে একটা বীজ এনে দিয়েছি।এবার এটাকে যত্ন করে কিভাবে বৃক্ষ রোপন করবি আর তা থেকে ভালো ফল পাবি এটা তোর উপর নির্ভর করবে।”

“আমাকে এবার থেকে সাহসের সাথে চলতে হবে।আমার মা বোনের পাশে দাঁড়াতে হবে।আমি জানি মা যদি একবার বুঝতে পারে যে এই সংসার জীবনের বাইরেও মেয়েরা নিজ যোগ্যতায় সততার সাথে জীবন এগিয়ে নিতে পারে তাহলে মা আমাকে সাপোর্ট করবে।মা তো পুরনো রীতি নীতি অনুসরণ করে।তখন নানী দাদীদের কথা ছিলো অন্য রকম।বাবা থাকলে মা এতটা জোর আমাকে কখনই করতো না।মা মায়ের জায়গায় ঠিক আছে।হাজার হোক তার গর্ভে দুই কন্যা সন্তান হয়েছে।আমাকে নিয়ে বড় জোর দুই তিনদিন সুখে থাকতো।তারপর আমরা তিন মেয়ে মানুষ মিলে এই সমাজে সুখে থাকতে পারতাম না।ভাগ্য যখন আমার সুখের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে আমাকেই পরিবর্তন হতে হবে।সততার সাথেও মেয়েদের জীবন বদলানো যায়।আমি সেটা প্রমাণ করব।”

শ্রেয়ার কথা শেষ হতেই একজন লোক এসে বলে,”মালগুলো বাধা হয়ে গেছে।আপনারা গাড়ি নিয়ে যান আমরা আপনাদের পিছন পিছন আসছি।”

লোকটির কথায় ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে।গাড়ির ফ্রন্ট সিটের মিররে তাকালো শ্রেয়া। দেড় বছরের সংসার হাজার হোক এত তাড়াতাড়ি মন থেকে মুছবে না।আয়নায় তাকিয়ে দেখলো রনিকে।রনির মধ্যে কোনো হেলদোল নেই।রুবিনা হা হুতাশ করতে থাকে।প্রতিবেশীরা মুখ ভেংচি দিয়ে নিজেদের কাজে চলে যাচ্ছে।শ্রেয়া এটা শিওর যে সে আগে থেকে বলে রাখলে এরা এই দুঃখটা ভোগ করতো না।অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও শ্রেয়ার শূন্যতা বুঝুক।আজ বাড়িতে কাজ করার কেউ নেই।এবার বুঝুক এত জনের জন্য একা কাজ করতে কেমন লাগে।যেটা শ্রেয়া একা একা মুখ বুঝে সহ করতো ওটা এবার তিনজনে মিলে করুক।

চলবে…?