#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-২৬]
আষাঢ়মাসের তেইশতম দিন! সুবিশাল অম্বর ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন। তিমিরাচ্ছন্ন পরিবেশে শীতল বাতাস প্রভাহমান। খুব ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিলো। তাই পুরো ছাদ বৃষ্টির পানিতে ভিজে টুইটুম্বুর। ঘন মেঘের কারণে দিবাকরের দেখা নেই এখনো। বাড়ির পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছটার একাংশ ছাদের একপাশে হেলে পরে আছে। তার চিকন চিকন সবুজ নেত্রপল্লব বর্ষণের ফোটায় ভিজে চিকচিক করছে। কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুল গুলো বৃষ্টির ফোটার সাথে না পেরে ঝরে পরেছে। ছাদের কার্নিশ থেকে অনেক টা অংশ জুড়ে পরে আছে তারা। এক এক করে অনেক গুলো পরে থাকা কৃষ্ণচূড়ার ফুল তুলে নিলো দীবা। তারপর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়ালো। রিমি ছাদে জমে থাকা পানিতে পা দুলিয়ে দুলিয়ে বললো, ‘বর্ষাকাল আমার এই জন্যই ভালো লাগে।’
দীবাও বললো, ‘আমারো।’
নুরা গালে এক হাত রেখে আনমনে বলে উঠলো, ‘আর আমার রাজকে।’
তার এমন কথা শুনে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো রিমি। দীবা অল্প শব্দে হেসে নুরার বাহুতে হালকা করে একটা থা প্প ড় দিলো। হকচকিয়ে গেলো নুরা। লজ্জা পেলো ভীষণ। ইতস্তত করে বললো, ‘কি বলেছি আমি? এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?’
রিমি স্থির দৃষ্টিতে নুরার দিকে তাকালো। অবিচলিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো, ‘তুই কি রাজ স্যারের ব্যাপারে সিরিয়াস? নাকি মজা করছিস শুধু?’
নুরা ফাজলামোর স্বরে বললো, ‘নেভার! আই’ম জাস্ট কিডিং!’
নুরা কথাটা মজার ছলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও দীবা ও রিমির কাছে পারলো না। তারা ঠিকই ধরে ফেললো। তবে নুরা অস্বীকার করায় রিমি কিছুটা ক্ষুব্ধ চোখে দীবার দিকে তাকালো। দীবা রিমিকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে নুরার দিকে তাকালো। নুরার চোখেমুখে অস্বস্তি লক্ষ্য করলো সে। গুরুগম্ভীর হয়ে নুরাকে তার দিকে ফিরালো। শান্ত গলায় জানতে চাইলো, ‘সত্যি করে বল। তুই স্যারের ব্যাপারে সিরিয়াস? মিথ্যে বলার চেষ্টা করবি না। আমরা দুইজন সব জানি। আমাদের থেকে লুকাতে যাবি না।’
নুরা তার মলিন চোখ দুটো ফিরিয়ে অন্যত্র তাকালো। দৃষ্টি তার স্থির নেই। উদ্বিগ্নচিত্ত চোখে এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেকে আড়াল করতে চাইলেও পারলো না। কাদুকাদু চেহারায় মলিন কন্ঠে বললো, ‘আমি জানি না। উনার প্রতি আমার সফট কর্ণার রয়েছে। ভালোলাগা থেকে অনেক বেশি কিছু ফিল করি আমি। কিন্তু ভয় হয়! এটা আদৌ সম্ভব কিনা জানা নেই আমার। বাট আই ডিপলি লাভ হিম।’
দীবা নুরার বাহুতে হাত বুলিয়ে নিঃশব্দে শান্ত্বনা দিলো। রিমি চিন্তিত কন্ঠে বললো, ‘কিন্তু উনি তো আমাদের টিচার। তাহলে কিভাবে হবে?’
রিমির কথার অর্থোদ্ধান হলো কিভাবে রাজের সাথে নুরার সম্পর্ক তৈরি হবে? নুরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। স্মিতি হেসে বললো, ‘দেখা যাক!’
নুরার মন খারাপের কারণ হতে চায় না কেউ। তাই তাকে হাসাতে রিমি উৎকণ্ঠিত হয়ে বলে উঠলো, ‘বাহ্, আমাদের নুরা মনি যে এভাবে কারোর প্রেমে পরতে পারে জানা ছিলো না।’
ছাদের আনাচ-কানাচ বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ। দীর্ঘসময় ছাদে পানি জমে থাকায় কিছু কিছু অংশে শ্যাওলা জমে গেছে। পিচ্ছিল হয়ে আছে ছাদ। বৃষ্টির পানি শীতল। দীবা পানিতে পা দুটো দুলিয়ে রিমির সঙ্গ দিতে বলে উঠলো, ‘পরেছে তো পরেছেই। একদম ডুব দিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে।’
কথাটা বলতে দেরি, কিন্তু দীবার ধপাস করে আ’ছা’ড় পরতে দেরি হয়নি। শ্যাওলা জমে যাওয়া পিচ্ছিল ছাদের ভিজে অংশে পা দিয়ে নাড়াতে গিয়ে বড়োসড়ো একটা বোয়ালমাছ ধরলো। ছাদে জমে থাকা পানিতে দীবার শরিরের অর্ধভাগ ভিজে গেছে। তাকে এভাবে পরতে দেখে উচ্চস্বরে হাসিতে মেতে উঠলো রিমি ও নুরা। দীবা ঠোঁট উলটে তাকালো দুজনের দিকে। নুরা হাসতে হাসতে বললো, ‘আমি তো পরেছি, আর তুমি আ*ছা*ড় পরেছো।’
দীবা মুখ কালো করে আসন পেতে বসে রইলো নিচে। ভাগ্যবশত ব্যাথা লাগেনি। অম্বরে ঘন কালো মেঘ থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সূত্রপাত ঘটলো। পানির তাপমাত্রা শীতল। রিমি তাড়া দিলো ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য। নুরাও দীবাকে বলে দ্রুত হাঁটা ধরলো চলে যেতে। দীবা ‘আসছি’ বলে বসে রইলো সেখানে। রিমি নুরা ভেবেছে হয়তো একটু পর আসবে। তাই দুইজন গুরুত্ব না দিয়ে নিচে চলে গেলো। উঠলো না দীবা। মৌনতার সঙ্গে বসে থেকে আকাশের পানে মুখ তুলে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। অনুভব করলো আষাঢ়ের ইলশেগুঁড়ির বর্ষণ। হঠাৎ-ই ধরনী কাঁপিয়ে অম্বরে মেঘের গর্জন ভেসে আসলো। কেঁপে উঠলো দীবা। বুকটা ধুরুধুরু করতে লাগলো। তবুও ছাদ থেকে নামলো না। আজ বৃষ্টি ভিজার ইচ্ছে পোষণ করলো তার অবুঝ মন।
__________________
দীবার রুমে তাকে না পেয়ে ভ্রুঁ জোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকা করলো আবরার। উষ্ঠধয় কামড়ে ভাবতে লাগলো। নাস্তা শেষে মেয়েটা যে উপরে এসেছে তারপর থেকে তার দেখা নেই। গেলো কোথায়? রিমি ও নুরার কথা মনে পরলে দীবার রুম থেকে বের হলো আবরার। কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখলো ছাদের সিঁড়ি থেকে নুরা আর রিমি দৌড়ে আসছে। ঠিক দৌড়ে আসছে না। রিমিকে কোনো কারণে দৌড়াচ্ছে নুরা। তাদের এভাবে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে পরলো আবরার। রিমি দৌড়ে এসে আবরারের পিছু দাঁড়িয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইলো। নুরা রিমিকে ধরার চেষ্টা করে চেঁচাল, ‘রিমোট কোথাকার। তোর চু’ল গুলা আজ ছিঁ’ড়’বো আমি।’
দুইজনই আবরার কে ঘিরে আছে। নুরা রিমিকে ধরতে চাইলেই রিমি আবরারের অন্য পাশে চলে যাচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষণ কাড়াকাড়ি হলো। আবরার বেচারা কারণ বুঝতে না পেরে অবশেষে ধমকেই উঠলো, ‘হচ্ছে টা কি ভাই? ঝ’গ’ড়া করছিস কেন তোরা?’
নুরা রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো, ‘এই মেয়ে আমার…!’ এইটুকু বলেই থেমে গেলো নুরা। মস্তিষ্ক সজাগ হলো তার। বড় ভাই যতোই হোক, সব কথা তো আর শেয়ার করা যায় না। ইশ কি করতে যাচ্ছিলো সে! আরেকটু হলে রাজ স্যারের ব্যাপারে সব জেনে যেতো আরব ভাই। নিজের বোকামিতে নিজেই বিরক্ত হলো। রিমি দাঁত কেলিয়ে হাসলো। ভ্রুঁ জোড়া নাচিয়ে নাচিয়ে বললো, ‘কি হলো জান? বলো।’
নুরা তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রাগে কটমট করতে করতে চলে গেলো। নুরা যেতেই আবরার বলে উঠলো, ‘কি হয়েছে?’
রিমি হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করলো। নড়েচড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। মাথা এপাশ থেকে এপরপাশ দুলিয়ে বললো, ‘কিছু না। এটা সিক্রেট। বলা যাবে না।’
ওদের ব্যাপারে আবরার আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। দীবার কথা জানতে চাইলেই রিমি বললো তারা তিনজন এতোক্ষণ ছাদে ছিলো। বৃষ্টি নামায় তারা নেমে এসেছে কিন্তু দীবা আসে নি। ব্যাস! আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না আবরার। দ্রুত ছাদে চলে আসলো। দরজার কাছে এসে দেখলো দীবা বৃষ্টি ভিজছে। পা দুটো উঁচু করে দুই হাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে ছাদের রেলিংয়ের পাশে থাকা কৃষ্ণচূড়ার বড় ডাল টা ধরার। কিন্তু অল্প দূরত্বের কারণে হাতের নাগালে পাচ্ছে না।
কিয়ৎক্ষণ পূর্বে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি থাকলেও এখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। কালো মেঘে ঢাকা বিশালাকৃতির অম্বর আলোকিত করে বিদুৎ চমকাচ্ছে। প্রবল বাতাসে গাছের সবুজ নেত্রপল্লব নড়বড়ে। বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ালো আবরার। এক মনে দীবাকে দেখতে লাগলো। আকাশী রঙের কুর্তি পরে আছে। পুরো জামাটা ভিজে গায়ে লেপ্টে গেছে একদম। সাদা ওড়নাটা গলায় ঝুলানো। বেনী করা চুল গুলো থেকে চুপসে পানি ঝরছে। দীবার আপাতমস্তষ্ক পর্যবেক্ষণ করার সময় হঠাৎ-ই নিষিদ্ধ স্থানে চোখ যেতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। তবে দীবার থেকে চোখ ফিরালো না। বার বার লাফিয়ে ফুল পারার চেষ্টা করছে দীবা। মৃদু হাসলো আবরার। নিজেকে আর সংযত করতে পারলো না। ধীর পায়ে দীবার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে দীবা টের পেলো না। আবরার দীবার পিছনে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে কৃষ্ণচূড়ার ডালটা টেনে দীবার নাগালে এনে দিলো। দীবা প্রবৃত্তি হয়ে ঘাড় পিছু ফিরে তাকালো। আবরারকে নিজের অতি সন্নিকটে দেখে অসাড় হলো শরির। এতোক্ষণে আবরারের শরির বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। কৃষ্ণচূড়ার একটা ফুল ছিঁড়ে দীবার কানে গুঁজে দিলো আবরার। কপালে লেপ্টে থাকা কিছু চুল এক হাতে যত্ন সহকারে মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। দীবা নিশ্চুপ! নিস্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। দুজনের মধ্যিখান দূরত্ব ঘুচিয়ে একদম নিবিড় হলো আবরার। দীবার কোমড়ে এক হাত রেখে অপর হাত গালে রেখে চোখে চোখ রাখলো। ঠোঁট প্রসারিত করে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘কালো মেঘের মাঝে জমে থাকা অভিমান বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পরুক। স্বচ্চ হোক ভালোবাসার আকাশ।’
দীবা আবরারের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে গভীরত্ব বুঝলো। চোখের মায়ায় পরলো। আনমনে নিজের এক হাত উঠিয়ে আবরারের হাতের উপরে রাখলো। দৃষ্টি অনুন্নত করলো না কেউ। আবরার নিজের মুখটা দীবার দিকে এগিয়ে নিলো। তাৎক্ষনাৎ চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো দীবা। আবরারের একদম কাছাকাছি আসায় ভয়ে উষ্ঠধয় থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার। কম্পিত এই উষ্ঠধয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালো আবরার। নেশা লাগলো তার মনে। মুগ্ধ হলো চোখ। ধীর গতিতে এগিয়ে দীবার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিল। গভীর ভাবে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে চুমু খেলো একটা। তারপর দীবার কানের কাছে মুখ এনে ফিশফিশ করে বললো, ‘ভালোবাসি সুহাসিনী!’
লজ্জাভূতি হলো দীবা। দুই গালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে এলো। লজ্জায় ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মাথা নিচু করে ফেললো। লজ্জায় নত হওয়া দীবার মুখশ্রী দেখে মৃদু শব্দে হাসলো আবরার। আরো লজ্জা পেলো দীবা। আবরারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো স্বস্তি পেল না আর। তাই নিজে থেকে আবরারকে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। ছাদের দরজার কাছে গিয়ে একবার পিছু ফিরে আবরারের দিকে তাকালো। মিষ্টি করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেলো। দীবার এই হাসিটা আবরারের বুকে গিয়ে বিঁধল। দীবার প্রেমে নতুন করে মাতোয়ারা হলো। ‘আহঃ’ বলে বুকে এক হাত রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে রেলিংয়ে হেলান দিলো।
রুমে এসে দরজা লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো দীবা। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। লজ্জায় লাল হয়ে আসা গাল দুটোর দিকে তাকালো। ডান হাত উঠিয়ে ঠোঁটের কাছে আনলো। নিজের ঠোঁটে আবরারের ভালোবাসার স্পর্শের কথা মনে পরতেই আনমনে লাজুক হাসলো। মনে পরলো আবরারের ফিশফিশ করে বলা কথাটা। ‘ভালোবাসি সুহাসিনী! ‘
খুশি হলো দীবার মন। আবরার তাকে ভালোবাসে জানিয়ে দিয়েছে আজ। খুশিতে আত্মহারা হলো মন। দীবা বাংলা ক্যালেন্ডার বের করলো। আষাঢ়মাসের তেইশ তারিখ বরাবর লাল কলম দিয়ে দাগ টেনে দিলো। চার পাঁচ শব্দের ইংরেজিতে একটা লাইন লিখলো। ক্যালেন্ডার টা ড্রয়ারে রেখে মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো কাপড় বদলাতে।
____________________
পুরোটা দিন ভারি বর্ষণে কেটেছে। সাঁঝ বেলায় বর্ষণ শেষে কালো মেঘ কাটিয়ে উজ্জ্বল আকাশ উঁকি দিয়েছে। দিবাকর সন্ধ্যাবেলায় পশ্চিম আকাশে ডুব দিয়ে পরিবেশ করেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। মৃদু মৃদু আবছায়া আলোতে আগ্রাবাদ শহরাঞ্চল মোহনীয় করে তুলেছে। মাগরিবের নামাজ শেষে রোশান সবাইকে তৈরি হওয়ার জন্য বললো। রাইমার চাইতেও বেশি এক্সাইটেড হয়ে আছে রিমি, নুরা আর দীবা। ‘কি পরবে’ ‘কি পরবে’ বলে রাইমার মাথা খেয়ে ফেলছে তিনজন। অবশেষে রাইমা তাদের একই ডিজাইনের গ্রাউনের সাথে হিজাব পরার কথা বললো। রাইমার কথা অনুযায়ী তারা তিনজন সেম ডিজাইনের গ্রাউন পরে তৈরি হয়ে নিলো। নিশিতা পরলো শাড়ি। রোহানার শরির তেমন একটা ভালো নেই তাই যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলো না। জোর করলো না কেউ। রোহানার শরির খারাপ তাই আয়েশাও থেকে গেলো। নিশিতা যেতে চায় নি প্রথম। বাড়ির কর্তি হিসেবে তার যাওয়া বাধ্যতামূলক করলো আয়েশা!
.
বাহিরের আকাশ জ্যোৎস্নাময়। অন্তরিক্ষে বিশালাকৃতির চাঁদ থেকে এক ফালি আলো দীবার রুমের বারান্দায় এসে পরেছে। রুমের বিছানায় শুয়ে থেকেও স্পষ্ট বারান্দা জুড়ে থাকা জ্যোৎস্না দেখছে দীবা। চোখ দুটো ব্যাথা করছে ভীষণ। মাথাটা ভার হয়ে আছে। কারণটা দীবার বুঝতে বাকি নেই। সকালে বৃষ্টি ভেজার কারণে মাথা ভার হয়ে আছে এখন। ক্লান্ত চোখ দুটো ধীরে বন্ধ করলো দীবা। তখুনি রিমির কণ্ঠস্বর কানে আসলো তার।
‘কিরে? ঘুমাচ্ছিস কেন? এখন না বের হবো আমরা?’
অনিচ্ছা থাকার পরেও মাথা তুলে রিমির দিকে তাকালো দীবা। দেখলো রিমি তৈরি হয়ে তার রুমে এসেছে। সে নিজেও বাহিরে যাবার জন্য তৈরি। শরির দুর্বল দুর্বল লাগছিলো তাই একটু বিশ্রামের জন্য শুয়েছে। জোরপূর্বক শুয়া থেকে উঠে বসে মলিন কন্ঠে বললো, ‘রিমি আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।’
রিমি তো আর কারণ জানে না! তাই দীবার কথার পাত্তা দিলো না। হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামাতে নামাতে বললো, ‘কোথাও যাওয়ার আগে এতো এতো প্ল্যান করার পর ভালো লাগছে না বলা তোর কাজ। এটা তোর জন্মগত অভ্যাস। চুপচাপ চল। কোনো কথা বলবি না। নুরা আমাদের অপেক্ষা করছে। ‘
দীবা বাধা দিলো না। কারণ সে জানে! তাকে ছাড়া এই দুই শ’য়’তা’ন কখনোই নিচে যাবে না। তাই নিরবে রিমির সাথে নিচে গেলো।
চলমান…