আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব-৫০

0
1280

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৫০]

কোলাহলপূর্ণ শাহ্‌ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ আপনজন কে বিদায় জানাতে এসেছে। আবার কেউ বহুদিন পর আপন মানুষদের নিতে এসেছে। এতো এতো মানুষদের ভীরে চুপচাপ এক পাশে বসে আছে রাজ। হাতে তার মোবাইল। স্কিনে ভেসে আছে পুরনো দীবার শাড়ি পরা সেই ছবি। যেটা মেলাতে লুকিয়ে তুলেছিলো রাজ। সেই ছবির দীবার সঙ্গে বর্তমানের দীবার অনেক পার্থক্য। তবুও রাজ দীবাকেই ভালোবেসে এসেছে। নিয়তি বোধহয় দীবাকে তার জন্য রাখে নি। কিন্তু দীবাকে ভালোবাসার সুন্দর সুন্দর অনুভূতি অনুভব করিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাজ। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে দীবার ছবিটা ডিলেট করে দিলো। পুরনো স্মৃতি গুলো ভয়ে বেড়ানোর কি দরকার? সব কিছু ভুলে গেলেই ভালো। ছবিটা ডিলেট করার পর দীবার আরো একটা ছবি পেলো রাজ। এই ছবিটা তুলেছিলো গতবছর এইসএসসিদের র‍্যাগ ডের দিন। এটাও ডিলেট করে দিতে গিয়েও থেমে গেলো। দীবার পিছনে আরো একটা মেয়েকে এতোদিনে খেয়াল করলো সে। মেয়েটা নুরা। নুরার এই হাস্যউজ্জ্বল চেহারাটা দেখে মুহূর্তেই থমকে গেলো রাজ। বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো। খালি খালি লাগলো নিজেকে। কিছু একটার অভাববোধ করতে লাগলো তার মন। ছবিটা Crop করে শুধুমাত্র নুরাকে রাখলো। ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কেন জানি নুরার ছবিটা কাটতে ইচ্ছে করলো না। নুরার সঙ্গে কাটানো সেই অল্পসল্প মুহূর্ত গুলো মনে করলো রাজ। ভালোলাগার পাশাপাশি নিজেকে একা একা অনুভব করলো।

‘এটা কে হয় তোমার?’

একজন ভদ্রমহিলার ডাকে পাশে ফিরে তাকালো রাজ। মহিলাটির বয়স আনুমানিক ষাটের কাছাকাছি। গায়ের চামড়া কুঁচকে গেছে একদম। পোশাকাশে আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে। মহিলাটির কথার প্রত্যুত্তর করলো না রাজ। আসলেই নুরা তার কে হয়? কেন-ই বা নুরার ছবি তার কাছে রাখবে? মহিলার থেকে চোখ ফিরিয়ে ছবিটার দিকে তাকালো। মৃদু গলায় শুধাল, ‘কেউ না।’

রাজের প্রত্যুত্তর শুনে ভদ্রমহিলা হেসে উঠলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘মোবাইলটা এদিকে দাও দেখি।’

রাজ বাধ্য ছেলের মতো মোবাইলটা মহিলার দিকে এগিয়ে দিলো। ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নুরার ছবিটা দেখে রাজের দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘নাতবউয়ের নাম কি?’

‘নাতবউ’ শব্দটা শুনে থমথমে খেলো রাজ। হতভম্ব হয়ে তাকালো মহিলাটির দিকে। মানছে মহিলাটি তার দাদীর বয়সী। তাই বলে নুরাকে সরাসরি নাতবউ ডাকবে? অপ্রস্তুত রাজ কোনো রকমে উত্তর দিলো, ‘নুরা হোসাইন।’

‘ভালোবাসো তাকে?’

প্রশ্নটা শুনেই যেন থমকে গেলো রাজ। তাৎক্ষনাৎ নুরার ছবিটার দিকে তাকাতেই মুহূর্তেই তার কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেলো। ঢুকঢুক শব্দ তুলে হৃদযন্ত্রটা কাঁপতে লাগলো। প্রশ্নের উত্তরটা কেন জানি বলতে পারছে না। কিন্তু সে তো নুরাকে ভালোবাসে না। তাহলে এমন অদ্ভুত অনুভূতির স্বীকার হচ্ছে কেন সে? উত্তর দিতে না চাইলেও গলা দিয়ে তার কথা বেরুলো না। রাজকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ভদ্র মহিলা স্মিতি হাসলো। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো, ‘দেখো বাবা, জীবনে আর যা-ই করো কখনো কাউকে ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিও না। একবার ছেড়ে গেলে দ্বিতীয়বার ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকে না। জেদ বাদ দিয়ে মনের কথা শুনো। মেয়েটা দেখতে অনেক মিষ্টি। তোমাদের ভালো মানাবে। নিষ্পাপ মেয়েটাকে কষ্ট দিও না।’

মহিলাটির কথা শেষ হতেই রাজ হুট করে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো, ‘দাদী? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নুরাকে আমার প্রয়োজন। আবার মনে হচ্ছে নুরাকে তো আমি ভালোবাসি না। ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে তাকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে কেন? নুরার কথা মনে পরতেই অদ্ভুত ভাবে মনে ভালোলাগা কাজ করে। আমি…”

রাজের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ভদ্রমহিলা বলে উঠলো, ‘তাহলে ছেড়ে যাচ্ছো কেন? যার কাছে তোমার প্রশান্তি মিলে তার কাছে থেকে যাও।’

রাজ নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘কিন্তু দেশে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।’

এইটুকু বলে থামলো ভদ্রমহিলা। তখুনি সেখানে উপস্থিত হলো একটা ছেলে। ছেলেটা এসেই বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘দাদু কেমন আছেন?’

হাসতে হাসতে নাতিনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চলে গেলো ভদ্রমহিলা। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো রাজ। নিশ্চুপ সে। আবারো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগলো। বারবার নুরার মুখখানি চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নুরা? ঠোঁট নাড়িয়ে কয়েকবার নুরার নামটা আওড়ালো রাজ। তপ্ত শ্বাস ফেলে চুল গুলো খামচে ধরলো। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।
___________________

শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘ জমেছে। বিষণ্ণ কালো মেঘের ছায়ায় ঢেকে আছে গোলাকার চাঁদটা। পরিবেশ করেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অস্থির নুরা বারংবার মোবাইলে সময় দেখছে। তার মনে হচ্ছে রাস্তাটা দ্রুত এগুচ্ছে না।

‘তাড়াতাড়ি চালান চাচা। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

ড্রাইভার কে তাড়া দিয়ে বলে উঠলো নুরা। গলা শুকিয়ে আছে তার। বারবার মোবাইলে সময় দেখছে। কলিজা ধুকধুক করছে। দেরি করা যাবে না। যেভাবেই হোক রাজকে আটকাতে হবে। কিন্তু তার মনে হচ্ছে রাস্তা যেন শেষ হচ্ছেই না। তাই আবারো তাড়া দিলো। এবার ড্রাইভার কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ে বলে ফেললো, ‘আর কত জোরে চালাইতাম? আইয়া পরছি। আরেকটু বও।’

নুরার অস্থিরতা কমলো না। বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলো। মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো। এয়ারপোর্টের সামনে গাড়ি থামতেই নুরা গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো, ‘চাচা, বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেড়িয়েছি তো তাই টাকা আনতে মনে নেই। ভাড়া টা কালকে দিবো।’

নুরা পরিচিত হওয়ায় মেনে নিলো লোকটা, ‘আইচ্ছা তুমি যাও।’

গাড়ি থেকে নেমেই সোজা এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকলো নুরা। লেহেঙ্গা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে গেলো। আশেপাশে মানুষজনের ভীর। এতো এতো মানুষের ভীর রাজকে খুঁজে বের করা কষ্টকর। তবুও নুরা খুঁজছে। ঘড়িতে সময় দেখে আবারো অস্থির হয়ে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। চেহারায় তার ক্লান্তিজনক। কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা। সেদিকে পাত্তা নেই নুরার। এয়ারপোর্টের ভিতরটায় খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ-ই চোখ পরলো যাত্রী বসে থাকার চেয়ার গুলোর দিকে। সেখানেই চুপচাপ বসে আছে রাজ। তাকে দেখেই শব্দ করে একটা নিশ্বাস ছুড়লো নুরা। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রাজের দিকে এগিয়ে গেলো।

রাজ মাথা তুলে সামনে তাকাতেই নুরাকে দেখতে পেয়ে বিস্মিত হলো। এখানে নুরার আসার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ কল্পনাতীত ছিলো তার কাছে। অবাক চোখেমুখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাজ। ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে উঠলো, ‘তুমি এখানে?’

এতোক্ষণ অস্থির থাকার কারণে নুরার হার্টবিট দ্রুত চলছে। হাঁপাচ্ছে সে। কোনো রকমে শুকনো ঢোক গিলে বললো, ‘চলে যাচ্ছেন কেন?’

নুরার এখানে আসার ব্যাপারটা রাজ এখনো হজম করতে পারলো না। হতভম্ব, বিস্মিত হয়ে বলল, ‘যাওয়ার কারণ তুমি জানো। কিন্তু তুমি এখানে.??’

লেহেঙ্গা ধরে রাজের দিকে দু-কদম এগিয়ে এলো নুরা। অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো, ‘কতোবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি আপনি থেকে যান। এক জনের জন্য পরিবার ছেড়ে যাওয়া একদম ভুল সিদ্ধান্ত। প্লিজ যাবেন না।’

ফুঁশ করে তপ্ত শ্বাস ফেললো রাজ। শান্ত কন্ঠে নুরাকে বুঝাতে চাইলো, ‘নুরা এই ব্যাপারে আগেই আমাদের কথা হয়েছে। আর বলতে চাইছি না। তুমি কি এখানে একা এসেছো?’

তখুনি সেখানে উপস্থিত হলো একজন গার্ড। লোকটা এসে সকল আরোহীদের ভিতরে যাওয়ার কথা জানালো। সবাই এক এক করে উঠে ভিতরে যেতে লাগলো।তাদের যেতে দেখেই অস্থির হয়ে উঠলো নুরা। কম্পিত কন্ঠে রাজকে আকুতি করে বলে উঠলো, ‘প্লিজ স্যার থেকে যান। এই, এই ভুল সিদ্ধান্তটা বদলে ফেলুন। আরো অনেক উপায় আছে দীবাকে ভুলে থাকার। প্লিজ দেশ ছাড়বেন না। প্লিজ।’

গার্ড সবাইকে তাড়া দিলো। রাজ কোনো কিছু না ভেবে ব্যাগটা হাতে নিয়ে নুরাকে শান্ত কন্ঠে বললো, ‘বাড়ি যাও নুরা।’

স্তব্ধ হয়ে গেলো নুরা। রাজকে চলে যেতে দেখে ভাবার আর সময় পেলো না। পিছন থেকেই চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো ‘আই লাভ ইউ স্যার।’

তাৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে পরলো রাজ। কান দুটো টার বেজে উঠলো নুরার কথায়। বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে। অবাক চোখেমুখে পিছু ফিরে নুরার দিকে তাকালো। বিশ্বাস হলো না কিছুতেই। নুরা জোরপূর্বক শুকনো ঢোক গিললো। ধীর পায়ে রাজের দিকে একটু এগিয়ে জড়তাহীন গলায় বললো, ‘আই রিয়েলি লাভ ইউ স্যার। প্লিজ ট্রাস্ট মি। এভাবে ছেড়ে যাবেন না। সব কিছুর সমাধান ছেড়ে যাওয়া হয় না।’

বাকহারা হয়ে পরেছে রাজ। প্রত্যাশার থেকে যখন মানুষ একটু বেশি কিছু পেয়ে যায় তখুনি সে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পরে। যেমনটা হয়েছে রাজ। এই মুহূর্তে প্রত্যুত্তর করার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেলো না। স্তব্ধ হয়ে নুরার চোখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তখুনি পিছন থেকে সেই গার্ড ডেকে উঠলো। গার্ডের ডাক শুনে হুশ আসলো রাজের। নুরার দিকে বিস্মিত চোখে একবার তাকিয়ে চুপচাপ ভিতরে চলে গেলো।

চোখের কার্নিশে জমে এলো নোনাজল। বাকরুদ্ধ নুরা। নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হলো তার। ভীষণ কষ্টে ঠোঁট ভেঙ্গে এলো। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না আর। নিঃশব্দে অঝোরে কেঁদে উঠলো। দাঁড়িয়ে না থেকে বেড়িয়ে এলো এয়ারপোর্ট থেকে। বাহিরে এসেও কান্না থামছে না। আকাশটা বিরাট শব্দ তুলে চারপাশ কাঁপিয়ে তুললো। গুড়িগুড়ি মেঘের গর্জনে চারপাশ কম্পিত। প্রকৃতিও যেন আজ সঙ্গ দিলো নুরার। বুঝাতে চাইলো, দুনিয়াতে কেউ একা কষ্ট পায় না। কষ্টের সইতে পারলেই স্বস্তি মিলে।

____________________

স্টেজ থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে দীবা। অতিরিক্ত চিন্তায় নখ কামড়াচ্ছে। মোবাইলে সময় দেখলেই তার কান্না পাচ্ছে। তখন কোন বদলের মা/র খেয়ে নুরাকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার কথা বললো সে? গায়ের হলুদ প্রায় শেষ। অথচ নুরার আসার কোনো নাম নেই। সবাইকে সে কি জবাব দিবে? তাছাড়া নুরা একা একা কোথায় আছে, কি করছে কিছুই জানে না। কল দেবার পরেও নো রেসপন্স আসছে। বদল মেয়ে রাজ জাহান্নামে যাক না তাতে তোর কি? বাড়ি ফিরে আসছিস না কেন তুই? মনে মনে যা আসছে তা দিয়েই একবার নুরাকে, একবার রাজকে তো আরেকবার নিজেকেই বকছে দীবা। তাকে এতো চিন্তিত দেখে রিমি এগিয়ে আসলো। এসেই প্রশ্ন ছুড়লো, ‘ছিঃ নখ কামড়াচ্ছিস কেন? ভাই কি তোকে কিছু খেতে দেয় না? নাকি জামাইয়ের টাকা পয়শা কিছু নাই?’

দীবা প্রত্যুত্তর করলো না। হাত নামিয়ে ঠোঁট উলটে কাদুকাদু চেহারায় রিমির দিকে তাকালো। অবস্থা খুবই গুরুতর। দীবাকে এতো সিরিয়াস দেখে নিজেও সিরিয়াস হলো রিমি। আলতো গলায় জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি হয়েছে?’

দীবা কাদুকাদু গলায় বললো, ‘নুরা….”

এইটুকু বলতেই রিমি আশেপাশে তাকিয়ে বলল, ‘আসলেই তো। নুরাকে দেখছি না যে। কোথায়?’

‘এয়ারপোর্ট গেছে।’

‘কি?’ আতঙ্কিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো রিমি। বিস্ময়ের কারণে চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। আশ্চর্যান্বিত হয়ে অস্ফুটিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘মা..মানে? ওখানে কি করছে?’

দীবা সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। কাহিনী শুনেই দাঁতে দাঁত চিবিয়ে দীবার বাহুতে চাপড় দিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘তোর বুদ্ধি কি সব রাউজান গেছে? এতো বড় একটা কাহিনী ঘটালি অথচ জানালি না। কখন গেছে নুরা?’

ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো দীবা। বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুই যখন বারান্দায় প্রেম করছিলি তখন।’

থমথমে খেলো রিমি। তার আর অভ্রের ব্যাপার আজ নাহয় কাল সে নিজেই দীবা নুরাকে জানাতো। সে জানানোর আগেই নাহয় জেনে গেলো। ব্যাপার না। কিন্তু নুরা এখনো আসছে না কেন? চিন্তিত হয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। কপালে পরলো ভাজ।
.

হলুদের অনুষ্ঠান শেষে মেহমান বিদায় নিয়ে চলে যেতে লাগলো। অন্যান্য সময় হলে ঠিকই জমিয়ে মাস্তি করতো দুজন। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই আনন্দ তো দূর তাদের মুখে ভীতি ব্যতিত হাসির ছিটেফোঁটাও নেই। একপাশে একে অপরের হাত ধরে ভয়ার্ত চোখেমুখে দাঁড়িয়ে আছে দুজন।।এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যাওয়া ভালো মনে করে রিমি দীবাকে নিয়ে যেতে নিলেই আবরার ডেকে উঠলো, ‘নুরা কোথায়? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না তাকে।’

দীবা কোনো রকমে উত্তর দিলো, ‘নুরার শরিরটা খারাপ লাগছে তাই রুমে চলে গেছে অনেক আগেই। আমরাও গিয়ে দেখি তার কিছু লাগবে কিনা।’

আবরার কিছু বললো না। ইশারায় যেতে বললে দুজন এক প্রকার দৌড়ে বাড়ির ভিতরে গেলো। দুজনের ভীতিকর চেহারা আর দৌড়ানো দেখে সন্দেহ হলো আবরারের। কিন্তু বেশি আমলে নিলো না। সাবিতকে অন্যান্য কাজে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়ালো।

চলমান..