আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি পর্ব-১৫

0
336

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫

নিস্তব্দতায় ঘিরে আছে চারপাশ। রাতের আকাশে চাঁদখানা দেখতে অপূর্ব লাগছে।চিত্রার জবাব শুনে আষাঢ় অবাক না হয়ে পারেনি।তখন চিত্রা বলেছে,,
“জি বলুন কি বলবেন?”

আষাঢ় বিষ্মিত হয়েছে। সে ভেবেছিলো আজও বোধহয় চিত্রা তাকে এড়িয়ে চলে যাবে। তবে আজ চিত্রা তার ডাকে সাড়া দিয়েছে এই অনেক।সে একেবারে কিনারা ঘেষে দাঁড়িয়ে চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“আপনি এতো রাতে এখানে যে। পূর্বে দেখেছি আপনায় এই সময়টাতে”

চিত্রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলো,,“নিস্তব্দতা আমার প্রিয়। তাই তাকে আপন করতে এইখানে আসা।রাতের আকাশও ভীষণ প্রিয়। চাঁদের মতো আমিও যে ভীষণ একা।”

আষাঢ় মৃদুস্বরে বলল,,,
“চাঁদ একা নয় চিত্রা। দেখুন চাঁদের আশেপাশে অসংখ্য তারা রয়েছে।আর খুব কাছে একটি তারা দেখতে পাচ্ছি। আপনি চাঁদ হলে সেই ছোট্ট তারাটি আপনার আব্বু।যে আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে।আর আশেপাশের তারাগুলোর মতো আপনার জীবনেও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছে।”

চিত্রা প্রথমবারের মতো আষাঢ়ের কথায় মুগ্ধ হলো।আগে যদিও সে কথা বলেনি। আষাঢ়ের বলা কথা সে মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। হ্যাঁ সে একা নয়। তার আব্বু,ভাই,আম্মা,সাজিয়া তাকে ভীষণ ভালোবাসে।তাহলে সে একা কি করে হলো।সে একা নয়।তারও নিজের আপন মানুষ আছে। সব থেকে আপন হলো তার আব্বু।আষাঢ়কে যেমন খারাপ ভেবেছিলো সে তেমন নয়।এ কথা ভেবে সে মৃদু হাসলো।চিত্রাকে হাসতে দেখে অবাক হলো আষাঢ়। তার কথা শুনে হাসছে চিত্রা। তার কারণে হাসছে এটাই অনেক।

“আপনি হাসছেন যে?”

“উহু তেমন কিছু নয়। আসলে আপনাকে অনেক খারাপ মানুষ মনে করেছিলাম। তবে এখন দেখছি আপনি ততটাও খারাপ নন।ধন্যবাদ আপনাকে, কথাগুলো বোঝানোর জন্য”

“ ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে একটা আবদার করবো রাখবেন?”

চিত্রা ভেবে বলল,,,“বলুন রাখার মতো হলে রাখবো।”

“বন্ধু হবেন,শুধু বন্ধু। আর কিছু নয়। আমি জানি বাস্তবতার বেড়াজালে আপনার মানুষকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটা সত্য। তবে সব মানুষ কিন্তু বিশ্বাস ভাঙে না। কিছু মানুষ বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে জীবন দিতে রাজি”

“আমার পক্ষে খুব সহজ নয়। বন্ধু বানানো।আমি ঠকেছি অনেকবার,বহুবার। আপনার সাথে আজ বা কখনই কথা বলতাম না। আসলে এতোদিন যাবত আপনার ব্যবহার গুলো লক্ষ্য করেছি। খারাপ মনে হয়নি তাই কথা বলা।তবে বন্ধু হওয়ার জন্য বিশ্বাস অর্জন করতে হবে আপনাকে। তারপর না হয় হলাম বন্ধু।”

“ঠিক আছে রাজি আমি। বিশ্বাস অর্জনের কাজ না হয় আজ থেকেই শুরু করলাম।অনেক রাত হলো বাড়িতে যান। আমিও যাবো।”

“জি শুভ রাত্রি ভালো থাকবেন। আসি”

“শুভ রাত্রি চিত্রা। বাসায় যান।”

চিত্রা ছাদ থেকে নিচে নামা পর্যন্ত সে দাঁড়িয়ে থাকলো। অতঃপর নিজের রুমে আসলো। তার হৃদয় যে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। প্রিয় মানুষটি আজ প্রথম তার সাথে সুন্দর করে কথা বলেছে। এই অনেক তার কাছে। তার বিশ্বাস সে একদিন চিত্রাকে নিজের করে পাবেই। ভালোবাসার অনুভূতি বোধহয় এরকমই। সে তাকাতেই হৃদয়ে খুশির বন্যা বয়ে যায়। ভালোবাসা সুন্দর, ভয়ংকর সুন্দর।

রোদের আলো চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো সাজিয়ার। সাজিয়া চোখ মেলে নিজেকে অপরিচিত রুমে আবিষ্কার করলো। ধীরে ধীরে মনে পরলো সে এখন বিবাহিত এবং সে নিশীথের রুমে অবস্থান করছে। দ্রুত নিজের দিকে তাকালো সে। নাহ শাড়ি একদম ঠিক আছে। আগে কখনো শাড়ি পরে ঘুমাইনি। যদি ঠিক না থাকতো তবে লজ্জায় সে আড়ষ্ট হয়ে যেতো। পাশে তাকাতেই নিশীথের ঘুমন্ত মুখখানা নজরে আসলো।তার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে আছে। ইশ লোকটা কত দায়িত্ববান। সাজিয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। মুখ মুছতে মুছতে রুমে আসে। তার হঠাৎই মাথায় আসে তারা দু’জন তো গতকাল রাতে বারান্দায় বসে ছিলো। সে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে,টেরই পাইনি। তবে কি নিশীথ তাকে নিয়ে এসেছে।

দরজায় ঠকঠক করে শব্দ হলো। সে চুলগুলো আলগোছে খোঁপা করলো। মাথায় ঘোমটা দিয়ে দরজা খুললো।জান্নাত ইসলাম তাকে দেখে বললেন,,
“শুভ সকাল সাজিয়া। ঘুম হয়েছে তোমাদের? নিশীথ কি এখনো ঘুম।”

“শুভ সকাল আম্মা। জি আম্মা। ভেতরে আসুন আপনি।”

“না না তোমাকে কিছু কথা বলতে এসেছি। আসলে বাড়িতে অনেক মেহমান তো আজ আরও মেহমান আসবে। বউভাত তো আজ। আর এই ট্রে তে তোমাদের খাবার দেওয়া আছে। খেয়ে নিও। রুম থেকে তোমার বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি দশটা এগারোটার দিকে এসে তোমাকে শাড়ি দিয়ে যাবো”

সাজিয়া মাথা নাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ট্রে টা নেয়। জান্নাত ইসলাম যাওয়ার আগে রুমের দরজা বন্ধ করতে বলে গিয়েছেন। বাড়িতল ছোট ছোট অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা রুমে চলে আসতে পারে।সাজিয়া খাবার রেখে নিশীথের কাছে আসলো।

“এই যে শুনছেন উঠুন। নিশীথ উঠুন”

নিশীথের ঘুম ভাঙতেই কানে এলো মিষ্টি কন্ঠস্বর।চোখজোড়া খুলতেই দেখলো তার রাঙা বউকে। নিশীথ উঠে বসলো।নিশীথকে উঠতে দেখে সাজিয়া বলল,,,
“শুভ সকাল নিশীথ সাহেব। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। আম্মা খাবার দিয়ে গিয়েছে।”

নিশীথ মৃদু হেসে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সাজিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘোমটা সরিয়ে খোঁপা খুলে দেয়। তার কোমড় ছাড়িয়ে যাওয়া চুলগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়। চিড়ুনি চালিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নেয় সে। নিশীথ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এমন দৃশ্য দেখে থমকে যায়। সে আগে কখনো সাজিয়ার চুল দেখেনি। আজই দেখছে। চুলগুলো আবারও খোঁপা করে নেয় সাজিয়া। সে এখনো নিশীথকে খেয়াল করেনি। নিশীথকে খেয়ালে আসতেই সে বলল,,,

“নিশীথ সাহেব আসুন খেয়ে নেই।”

নিশীথের ধ্যাণ ভাঙলো।সে এসে বিছানায় বসলো। দু’জন একসাথে খেয়ে নিলো।কিছুক্ষণ গল্প করলো। নিশীথ বাইরে চলে গেলো।সাজিয়া ফোন হাতে নিলো। চিত্রার সাথে কথা বলা প্রয়োজন। গতকালকের পর থেকে এখনো কথা হয়নি । কল করলো সে চিত্রা নামক রমনীকে।

“ভুলে গিয়েছিস আমাকে?একবারো কল করার প্রয়োজন মনে করলি না”

অপর পাশ থেকে চিত্রার হাসির শব্দ শোনা গেলো। সাজিয়া বিষ্মিত হলো। এই মেয়ে সহজে হাসে না আর আজ কি না সামান্য কথাতেই হাসছে। কি হলো এর। সে বিষ্মিত কন্ঠে শুধালো,,
“কি হয়েছে তোর চিত্রা?”

“কিছু হয়নি। আসলে তোদের সদ্য বিয়ে হয়েছে এখন কিভাবে ফোন দিতাম বলতো।আচ্ছা নিশীথ সাহেব কি তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?”

“উহু আমার মনে হয় সে অনেক ভালো। তাকে আমি হয়তো বিশ্বাস ভরসা করতে পারি”

“হুম। গতকাল আষাঢ় সাহেবের সাথে কথা বলেছিলাম।”

“কিহ সত্যি। কি বলেছিস”

চিত্রা সব বললো। সাজিয়া বিষ্মিত হয়েছে প্রচুর। চিত্রা কথা বলেছে আষাঢ়ের সাথে এটাই তো অনেক। তবে সে ভীষণ খুশি। যাক তবে এক ধাপ তো এগোলো এদের সম্পর্কের। সম্পর্ক হতে গেলেও কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়। চিত্রা প্রথম ধাপ শেষ করেছে। ধীরে ধীরে সব হবে। একসময় চিত্রাও ভালোবাসবে আষাঢ় নামক ব্যক্তিটিকে। দু’জন টুকটাক কথা বলে ফোন রাখলো। সাজিয়ার মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো। নিশীথ রুমে আসলো কিছুক্ষণের মধ্যে। সাজিয়া আমতা আমতা করে বলে উঠলো,,,

“শুনুন কিছু কথা বলবো আপনাকে”

“হুম বলো”

“আষাঢ় ভাইয়া কেমন মানুষ বলুন তো”

নিশীথ এমন প্রশ্ন শুনে থতমত খেলো। হুট করে এমন প্রশ্ন কাম্য ছিলো না। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,,“হঠাৎ এই প্রশ্ন যে?”

“আসলে চিত্রার জন্য। হয়তো আষাঢ় ভাই ভালোবাসেন চিত্রাকে। আমার যতটুকু মনে হলো আরকি”

“তুমি ভেবো না চিত্রার জন্য আষাঢ়ই বেস্ট।”

“হু তাহলেই ভালো। আপনি তো আছেন আমার জীবনে, এখন শুধু চিত্রার জীবনে কেউ একজন আসলেই হবে। ওকে যত্ন করে আগলে রাখবে। আষাঢ় ভাই হোক তাহলে সেই মানুষটি।”

নিশীথ হাসলো। সাজিয়া রানী তার। ইশ এতো কিউট তার রাঙা বউ। তাকালে শুধু চেয়ে থাকতে মন চায়। নিশীথ ওই মায়াবী চেয়ারার দিকে তাকিয়ে হাজার বছর পার করতে হবে। হয়তো বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের জন্যই এতো মায়া কাজ করে মেয়েটির জন্য। তার চোখে এই দুনিয়ার সব থেকে সুন্দর নারী তার মা এবং সাজিয়া। যাদের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম তার কাছে।

#চলবে~