#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৬
আষাঢ় এবং বেলী বেগম বসে আছেন পাশাপাশি। আষাঢ় মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। বেলী বেগম হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন ছেলের মাথায়। আষাঢ় নিরবতা কাটিয়ে বলল,,,
“আম্মা চিত্রা অতীতে অনেক কিছু সহ্য করেছে। আমি ওকে আর কোনো কষ্ট দিতে চাই না। আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করবো ওকে খুশি রাখার”
আষাঢ় খুলে বলল সব তার আম্মাকে। বেকী বেগমের চিত্রার অতীত শুনে অনেক খারাপ লাগলো। তার মেয়েও যদি এমন কিছু করে বসে। এ নিয়ে মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেলো। চিত্রার জন্য তার মায়া হলো। মেয়েটা কত কষ্ট করেছে। সে মৃদু স্বরে বলল,,,,
“আজ মেয়েটাকে অনেক খুশি লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো সে আগের ন্যায় হয়ে যাচ্ছে। যাক ভালো হলেই ভালো”
“হুম। আজ বিকালে উনাকে নিয়ে একটু বের হতে চেয়েছি। উনিও রাজি হয়েছেন আম্মা।”
“নিয়ে যাও তো মেয়েটাকে। তবে আষাঢ় তুমি যেনো তাকে কখনো অসম্মান করো না। সে এমনিতেও অতীতে বাজে ভাবে ঠকেছে ধোঁকা খেয়েছে।”
“আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করবো।”
আষাঢ় নিজের রুমে চলে আসে। মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরছে তার। চিত্রাকে খুশি করতে যা করতে হয় তাই করবে সে। কখনোই সে তার চিত্রাকে কষ্ট দিবে না। দুঃখ যেনো না ছুঁতে পারে তার প্রিয় নারীকে সেই চেষ্টা করবে। আষাঢ় নিজেকে শান্ত করতে ওয়াশরুমে ঢুকলো। গোসল সেরে বের হলো। চিত্রা একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছে। তাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। আষাঢ় সেই দিনের কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করলো যেদিন সে চিত্রাকে নিজের মনের কথা বলেছিলো। অনেক চিন্তা ভাবনা করার পর আষাঢ়ের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা দিলো।
“ ভালোবাসি আপনায় চিত্রা, একটু বেশিই ভালোবাসি কি না”
–
সমুদ্রের অবস্থা খুব বেশি ভালো নাহ। ফারাহ বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। সমুদ্র ফারাহকে মিস করছে। মেয়েটা আর আগের মতো হুটহাট চলে আসে না। তাকে জ্বালায় না। আসলেই মানুষ থাকতে মূল্য দিতে জানে নাহ। যখন হারিয়ে যায় তখনই আমরা তার গুরুত্বটা অনুধাবন করতে পারি। সমুদ্র নিজের সাথে অনেক সময় যুদ্ধ করলো। শেষ মেশ না পেরে কল করলো ফারাহর ফোনে। দুই তিনবার রিং হওয়ার পরে অপাশ থেকে রিসিভ হলো ফোন। দুজনেই নিশ্চুপ। সমুদ্র নিরবতা ভেঙে বললো,,,
“কেমন আছিস ফারু?”
“জি ভালো আছি। ফোন কেনো দিয়েছেন তাই বলুন। ব্যস্ত আছি”
“তোর আমার জন্য সময় নেই ফারু?”
“ফারু বলবেন না সমুদ্র ভাইয়া। আপনি আমার কাজিন। কাজিনের মতো থাকবেন। ফারু নামটা আমার একান্ত প্রিয় মানুষদের জন্য। তারা ছাড়া এই নামে আমায় কেউ ডাকুক আমি তা চাই না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন?”
সমুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,
“আমি তোর প্রিয় নাহ? আপনি আপনি কেনো করছিস ফারাহ। তোর মুখে আপনি ডাকটা কেমন অদ্ভুত শুনাচ্ছে। আমায় কি ক্ষমা করা যায় না?”
“হয়তো ছিলেন কখনো প্রিয়। তবে এখন নেই। আপনি আমার কাজিন বয়সে অনেকটাই বড় তাই তুমিই ঠিক আছে। আর ক্ষমা! আপনি কি ভুল করতে পারেন নাকি যে ক্ষমার প্রশ্ন আসছে। আপনাকে খালামনি হয়তো একটা কথা জানাতে ভুলে গিয়েছে বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার। সামনের মাসে বিয়ে। আমায় আর ফোন করে জ্বালাবেন না।”
ফারাহর শেষে বলা কথা যেনো বিষের মতো লাগলো সমুদ্রের কাছে। সে যে কখন কিভাবে এই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে টেরই পায়নি। এখন ফারাহর এমন ব্যবহার তাকে কষ্ট দিচ্ছে। এখন সে ভীষণ আফসোস করছে কেনো সে ফারাহকে তখন এড়িয়ে চলতো। সে কিছুক্ষণ পর বলল,,
“আমি তোকে ভালোবাসি ফারাহ”
ফারাহ চমকে উঠলো। এই কথাটা শোনার জন্য কত কিছুই না করেছে তবে প্রতিবার বিরক্তির কারণ হয়েছে। যখন শুনতে চেয়েছে তখন বিরক্তি ছাড়া কিছু পায়নি, আর এখন না চাইতেও কাঙ্ক্ষিত সেই কথা এবং মানুষটিকেও পেতে চলেছে। তবে এতো সহজ। সেদিনের বলা প্রতিটা কথা এখনো মনে আছে তার। এতো সহজে তো হবে না। তার আত্মসম্মানে সেদিন আঘাত করেছে সমুদ্র আর সে এখন শুধু ভালোবাসি বললেই মেনে নিবে। কখনোই নাহ। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,,,
“তো আমি কি করতে পারি? বলুন”
“আমি তোকে ভালোবাসি ফারাহ। তোর এই ব্যবহার আমায় যন্ত্রণা দিচ্ছে। সহ্য হচ্ছে না আমার। দয়া করে ক্ষমা করে দে আমায়। বুঝিনি প্রিয় মানুষের এড়িয়ে চলার বিষয়, এখন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত কর”
“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সমুদ্র ভাই। আপনাকে আমি তা জানিয়েছি। আমায় দয়া করে এভাবে ফোন করে আর জ্বালাবেন না।”
“বিয়ে ঠিক হয়েছে হয়নি তোহ। আমি প্রমান করে ছাড়বো আমি তোকে কত ভালোবাসি। তুই তো জানিসই জেদ উঠলে আমি কি করতে পারি। রাখছি রেডি থাক এরপর যা হবে তার জন্য”
সমুদ্র কল কেটে দিলো। ফারাহর চোখে পানি। ভালোবাসি শোনে খুশি লাগলেও খারাপ লাগছে তার। সহজে মেনে নেওয়া যাবে না। সেও দেখতে চায় কি করতে পারে সমুদ্র তাকে পাওয়ার জন্য। সে নিজেও চায়নি কখনো সমুদ্রকে কষ্ট দিতে তবে সমুদ্রের সেদিনের ব্যবহার যে সে ভুলতে পারে না। তবে আজ যা হয়েছে এর জন্য সে ভীষণ খুশি।
–
সাজিয়া, জান্নাত ইসলাম, নিশীথ বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে। তাদের দিনকাল বেশ ভালোই যাচ্ছে। আগামীকাল যে নিশীথের জন্মদিন এটা সাজিয়া রাতেই জানতে পেরেছে জান্নাত ইসলামের থেকে। আজ সাজিয়া রাতে নিশীথকে সারপ্রাইজ দেওয়ার চেষ্টা করবে। জান্নাত ইসলাম বলে উঠলেন,,,
“নিশীথ আমি একটু মায়ের বাড়িতে যেতে চাইছি। তুমি আর সাজিয়াও কি যাবে?”
“আম্মা এখন সময় হবে নাহ আমার। যদি সাজিয়া চায় তবে তুমি ওকে নিয়ে যেতে পারো, আমার সমস্যা নেই।”
জান্নাত ইসলাম ছেলের মনোভাব বুঝতে পারলেন। সে বুঝলেন ছেলে যেতে দিতে চায় না সাজিয়াকে। এ ভেবে তিনি হেসে শুধালেন,,,
“ওকে নিলে সমস্যা হবে তোমার। বরং সাজিয়া থাকুক।আমি একাই বরং ঘুরে আসি। অনেক দিন যাওয়া হয় না তো”
“আচ্ছা আম্মা। কবে যাবে বলো? আমি টিকিট কেটে রাখবো”
“রবিবার যাওয়ার চিন্তা করেছি। তুমি সেদিনের টিকিট কাটো।”
খাওয়া শেষ করে তিনি উঠে পরলেন। সাজিয়া নিশীথ খেয়ে রুমে চলে আসলো। দরজা আঁটকে বিছানায় বসতেই নিশীথ সাজিয়াকে টেনে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। সাজিয়া কিছু বলবে তার আগেই নিশীথ বলে,,,
“চুপচাপ শুয়ে থাকো বউ। এই ক’দিন ব্যাংকে অনেক চাপ গিয়েছে। তোমাকে সময় দিতেও পারিনি। ঠিক মতো না ঘুমাতে পেরেছি। এখন ঘুমাতে দাও আমায়।”
সাজিয়া শব্দ করলো না। চুপচাপ শুনে গেলো। নিশীথ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। সাজিয়া মৃদু হেসে নিজেও চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। তার পাগল বর আসলেই এ ক’দিন বেশ ব্যস্ত ছিলো। তাকে সময় দিতেও পারছিলো নাহ। তবে এতে অভিযোগ নেই তার। সে সব মেনে নিয়েছে।
–
চিত্রা নীলরঙা একটা সেলোয়ার-কামিজ পরে তৈরি হলো। আষাঢ় আগেই তাকে মেসেজ করে দিয়েছে সময়। বাড়ি থেকে বের হতেই দেখলো আষাঢ়কে। হাসি মুখে তার অপেক্ষা করছিলো। চিত্রা তার সামনে এসে বলল,,,
“আপনাকে কি খুব বেশি অপেক্ষা করিয়ে ফেললাম আষাঢ় সাহেব?”
আষাঢ় হেসে বলল,,
“মোটেও না চিত্রা ম্যাডাম আমি মাত্রই এসে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর আপনিও তখনই এসে উপস্থিত হয়েছেন”
ম্যাডাম ডাকটা শুনে চিত্রা ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো। অতঃপর দু’জন একটা রিকশায় চড়ে বসলো। যদিও আষাঢ় অটো ভাড়া করে যেতে চাইছিলো চিত্রা বারন করেছে। সে বলেছে সে আষাঢ়কে বিশ্বাস করে। যা শুনে আষাঢ় প্রচন্ড খুশি হয়েছে। আষাঢ় মাঝে অনেক খানি দূরত্ব নিয়ে বসেছে। আষাঢ়ের সময়টাকে থামিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। যেনো সে চিত্রাকেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে পারে।
#চলবে~