#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam
দরজায় নক করার শব্দে আষাঢ় পিছনে ফিরে তাকায়। একটা নার্স দাঁড়িয়ে আছে। আষাঢ় চোখের ইশারায় জানতে চায় কি?
নার্স নিজের হাতের দিকে ইশারায় দেখায় ঔষধ, তারপর নিচু স্বরে বলে,,, স্যার পেশেন্টকে ঔষধ দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
— ঠিক আছে ভিতরে আসুন। গম্ভীর স্বরে বলে আষাঢ়।
নার্স ভিতরে প্রবেশ করে।
— ওর নাম দোলন হয় দোলন বলবেন নয়তো ম্যাম ও বলতে পারেন কিন্তু আর কখনো পেশেন্ট বলবেন না। অন্তত আমার সামনেতো কখনোই না।
— নার্স আষাঢ়ের কথায় থতমত খেয়ে যায়,,মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় আর পেশেন্ট বলবে না। তারপর নিজের কাজে মন দেয়। নার্সের মুখস্থ হয়ে গেছে সব দোলন কে কখন কি ঔষধ দিতে হবে তাই আর আষাঢ় কে জিজ্ঞেস করে না।
নার্স যখন ইনজেকশন হাতে তুলে নেয় দোলন কে দেওয়ার জন্য আষাঢ় খপ করে ইনজেকশন টা কেঁড়ে নেয় নার্সের হাত থেকে । নার্স ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,,, কি-কি-কি হয়েছে স্যার?
— কিছু হয় নি আপনি সরুন আমি দিচ্ছি। আর হ্যা ইনজেকশন পুশ করতে হলে সব সময় আমাকে ডাকবেন। এই কাজটা এখন থেকে আমি করবো।
আপনি যান আমি সামলে নিচ্ছি বাকিটা।
— ঠিক আছে স্যার। নার্স চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে তাকিয়ে বলে,,,স্যার দশটায় যে সার্জারীটা আছে ঐটার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ।
— আমি এখনই আসছি।
আষাঢ় সযত্নে দোলন কে ইনজেকশন দিয়ে বলে,,তুমি কিছুক্ষন থাকো চাঁপাফুল আমি একটু পর আবার আসছি তারপর দোলনের হাতে নিজের অধর আলতো করে স্পর্শ করে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়।
****
আষাঢ় সার্জারি করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে নিজের বরাদ্দকৃত ক্যাবিনের দিকে পা বাড়ায়।ক্যাবিনের সামনে আসতেই দেখতে পায় মেঘ আসছে।
মেঘ কে এই সময় এখানে দেখে আষাঢ় কপাল কোচকে ফেলে।
মেঘ আষাঢ় কে দেখে হাসি মুখে কিছু বলতে যাবে,,
আষাঢ় মেঘকে দেখে ও না দেখার ভান করে নিজের শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে ক্যাবিনে ঢুকে যায় বড় বড় কদমে।
আষাঢ় ক্যাবিনে ঢুকেই নিজের হাত ঘড়িটা খুলতে থাকে।
আষাঢ়ের পিছন পিছন মেঘ ও প্রবেশ করে।
—আষাঢ় তুমি আমাকে দেখেও এভয়ড করে চলে এলে?(মেঘ)
— আসার মুখ টা গম্ভীর করে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলে,,অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে নেই কোথাও জানিস না? আর যারা এসব সাধারণ বিষয় গুলোও পালন করতে জানে না তাদের আমি একদম পছন্দ করি না।
— – মেঘ আষাঢ়ের টেবিলে হাত রেখে আষাঢ়ের দিকে ঝুঁকে বলে,,,, কিছু কিছু জায়গায় কোনো অনুমতি নেওয়ার দরকার পরে না অধিকার থাকে সেখানে এন্ট্রি নেওয়ার। সো আমার ও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনি স্পেশালি তোমার ক্ষেত্রে বুঝলে?
— আষাঢ় কিছুটা ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,, তাও ঠিক আমার খালাতো বোনন বলে কথা কিছুটা টেনে বিদ্রুপ স্বরে বলে।
— আষাঢ়ের মুখে বোন শব্দটা শুনে মেঘ রেগে যায়।অনেক কষ্টে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নিজের মুখে হাসি এনে বলে,,,হ্যা খালাতো বোন যাকে বিয়ে করে নিজের ঘরের বউ করা যায়।
— কোন পর্যায়ে গিয়ে এই পরিস্থিতি এসেছিল সেটা নিশ্চয়ই তোকে নতুন করে বলতে হবে না।বাদ দে এসব কি কারণে এসেছিস জিজ্ঞেস করবো না। এখন এখান থেকে বিদায় হো।
— এটা কেমন কথা আষাঢ়? প্রথমবার তোমার হাসপাতালে এসেছি আমাকে ঘুরে দেখাবে না?
— এটা তোর ঘুরার জায়গা না আর তোর জন্য এর থেকে বেটার জায়গা আছে, আমি সাজেস্ট করতে পারি যাবি?
মেঘ খুশি মনে বলে,,, কোথায়? তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে? আমি অবশ্যই যাবো। একবার শুধু বলো কোথায় নিয়ে যাবে আমায়।
আষাঢ় ক্যাবিন থেকে বের হতে হতে বলে,,পাবনা মেন্টাল হসপিটাল, রেডি থাক খুব শিঘ্রই তোকে সেখানে নিয়ে যাবো।
মেঘ আষাঢ়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকে।ক্যাবিনের আশেপাশে তাকিয়ে আষাঢ়ের চেয়ারটা টেনে পায়ের উপর পা তুলে হেলান দিয়ে বসে।
ডা. আষাঢ় এহমাদ তোমাকে সাথে নিয়ে পাগলাগারদ কেন যে কোনো জায়গায় যেতে আমি রাজি আছি। কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়ায় মেঘ তাকে খোঁজ করতে হবে আষাঢ়ের পাগলামো করার কারণ কি আর তার চাঁপাফুল?
*************
আষাঢ় সার্জারি শেষে নিজের ক্যাবিনে এসে মেঘকে দেখতে পায় না। মেঘ কে আর খোঁজার চেষ্টা ও করে না ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় আষাঢ় বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজ তার। একেই কাল কান্না করার কারণে মাথা ব্যাথা ছিলো তারপর আবার ঘুমোতে পারেনি রাতে। ঠিকমতো খাওয়া ও হয়নি কাল থেকে আজ এতো বেলা হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত এক গ্লাস পানি ও পান করেনি আষাঢ়।
চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসতেই ঘুম এসে হানা দেয় চোখের পাতায়। এরমধ্যে দরজায় কেউ নক করে।
— কামিং চোখ বন্ধ রেখেই বলে।( আষাঢ়)
— স্যার দোলন ম্যামকে একজন দেখতে এসেছে,,,
নার্স আর কিছু বলার আগেই চকিতে চোখ খুলে তাকায় আষাঢ়। মুহূর্তের মধ্যে মাথায় আসে মেঘের কথা। মেঘ দোলনের কথা জেনে যায়নি তো আবার? এই মেয়ে যদি আবার ও দোলনের কোনো ক্ষতি করে দেয়, এই মেয়ে একটা সা’ইকো যে কোনো কিছু করতে পারে একে নিয়ে বিশ্বাস নেই।
ভাগ্যিস আষাঢ় নার্সকে বলে রেখেছিল কেউ আসলে যেনো তাকে জানায়। দোলনের কিছু একটা ক্ষতি করে দিবে মেঘ এরকম কিছু একটা আষাঢ় ভাবতে পারছে না দৌড়ে নিজের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে দোলনের ক্যাবিনের দিকে ছুটে।
এক দৌড়ে দোলনের ক্যাবিনে ঢুকে পরে,,
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,মেঘ তু,,,,,
সামনে তাকিয়ে মেঘের বদলে অন্য কাউকে দেখতে পায় আষাঢ়।
আষাঢ়? আষাঢ়ের সামনে দাড়িয়ে থাকা মহিলা টা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আষাঢ়ের দিকে।
— আ-আন্টি?
— চিনতে পারছো তাহলে? যাক খুশি হলাম এটা ভেবে এতো বছরেও ভুলে যাও নি।
— ভুলে যাবো কেন আন্টি? তোমরা কি ভুলে যাওয়ার মতো লোক?
— তাও ঠিক যাদের সাথে জীবনের সবচেয়ে বড় অন্যায়টা করেছো তাদের কি ভুলে যাওয়া যায়?
— মহিলাটির কথায় আষাঢ় ব্রু কোঁচকায়? কিসের অন্যায়ের কথা বলছেন উনি? পরোক্ষনে মাথায় আসে দোলন কে ফেলে রেখে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে হয়তো বলছে।
আ- আসলে আন্টি আমি জানি, আমি যা করেছি তা সব ভু,,,,,,,
— মা, দোলনের ডাক্তার নাকি চেঞ্জ করেছেন দুই দিন আগে,, অথচ আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না। এই হাসপাতালে দুলিকে আর রাখবো না আজই নিয়ে যাবো এখান থেকে। কথাগুলো বলতে বলতে একটা ছেলে চোখ মুখ লাল করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে ঢুকে।
রুমে ঢুকে যেনো তার রাগটা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায় আষাঢ় কে দেখে। কোনো কিছু না বলে এলোপাতাড়ি কি’ল ঘু’ষি লাগিয়ে দিতে থাকে আষাঢ়ের পেটে নাকে মুখে।হুট করে আক্রমনের জন্য আষাঢ় মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
— সুমন থাম,, থাম বলছি কি করছিস তুই?
— তুমি আজ আমাকে থামতে বলবে না মা আমি থামবো না। আজ মে’রেই ফেলবো ওকে আমি।
আষাঢ় চাইলেই ছেলেটা কে এর দ্বিগুণ আঘাত করতে পারবে কারণ আষাঢ়ের তুলনায় ছেলেটা কিছুই না। তবুও পাল্টা আক্রমন না করে ছেলেটার হাত ছাড়িয়ে বলে,,,সুৃমন আমরা ঠান্ডা মাথায় বসে কথা বলি?
সুমন হাত ছাড়িয়ে আষাঢ়ের নাকে ঘু’ষি লাগিয়ে বলে,, তোর সাথে কিসের ঠান্ডা মাথায় কথা?
আষাঢ় নাকে হাত দিয়ে দেখে নাক থেকে গলগলিয়ে রক্ত ঝড়ছে।
#চলবে?,,,