#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam
আই হেইট আষাঢ়!
নিজের দিকে ফুটবল কে এভাবে ছুটে আসতে দেখে ভয়ে, উত্তেজনায় আয়শা কে বলতে পারলো না তুই কিন্তু বলবি না আই হেইট আষাঢ় মাস।
আষাঢ় দৌড়ে এসে বল আটকায় নয়তো মেয়েটার মুখে গিয়ে লাগতো।
বল হাতে তুলে নিয়ে চলে যেতে নেয় আষাঢ় কিন্তু মাথায় আসে মেয়ে টা একটু আগে আই হেইট আষাঢ় বলেছে। বল হাতে নিয়েই আষাঢ় মেয়ে দুটোর দিকে এগিয়ে যায়।
আষাঢ় কে এগিয়ে আসতে দেখে আয়শা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দোলন আষাঢ়ের হাতে থাকা বলটার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলটার গুষ্টি উদ্ধার করছে সে।কতো বড় সাহস বলের তাকে ভয় দেখিয়েছে। যদি ছেলেটা বল না আটকাতো তখন কি হতো? সোজা এসে মুখে লাগতো আর মুখের মানচিত্র পাল্টে যেতো।দোলন চিন্তা করে মুখে বল টা লাগার পর তখন তাকে কেমন দেখা যেতো। ভাবতেই নাআআআ বলে চিল্লিয়ে উঠে ।
আষাঢ় দোলনের কান্ডে থতমত খেয়ে যায়।
আয়শা দোলনের হাত ধরে টেনে বলে,,দোস্ত কি না?
এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? (আষাঢ়)
— আ- আমার? আমার আবার কি সমস্যা?
— সেটাই তো জানতে চাচ্ছি সমস্যা কি তোমার? যখন দেখলে বল তেড়ে আসছে তোমার দিকে তখন খাম্বার মতো না দাঁড়িয়ে সরে গেলেই পারতে।
— ইয়ে মানে,,,
— কোনো মানে জানতে চাইনি তোমার কাছে। ভাবতে পারছো বলটা লাগলে কি অবস্থা হতো তোমার?
— সেটাইতো ভাবছিলাম এতক্ষন ধরে।
— আষাঢ় দোলনের দিকে একবার তাকিয়ে বলে শরীরে তো হাড্ডি ছাড়া কিছু নেই। হাসপাতালে এতক্ষনে দৌড়াদৌড়ি করা লাগতো। শুকনা পাট কাঠি।
— আমার শরীর নিয়ে কিছু বলবেন না। অনেক কষ্টে পছন্দের খাবার ত্যাগ করে ডায়েট করে তারপর এমন হয়েছি আপনি কি বুঝবেন?
— দোলনের কথায় আষাঢ়ের হাসি পায়। আষাঢ় ঠোঁট টিপে হেসে বলে,,, হোয়াট এভার বুঝতে ও চাই না। আষাঢ় মাঠের দিকে বল ছুঁড়ে দিয়ে বলে,,,,তুমি সবার সামনে আই হেইট আষাঢ় বলেছো তোমার সাহসের তারিফ না করে পারছি না।
— না না ওটা মিসটেক আই হেইট আষাঢ় হবে না ওটা হবে আই লাভ আষাঢ়,,,, দোলনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আয়শা টানতে টানতে ওখান থেকে চলে যায়।
আষাঢ় ওখানেই দাঁড়িয়ে দোলনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কানে বাজছে “আই হেইট আষাঢ়। ”
“আই লাভ আষাঢ়। ”
দোলন আর আয়শা চলে গেছে সেই কখন আষাঢ় এখনও ঐদিকে ই তাকিয়ে আছে।
আষাঢ়ের হুঁশ আসে তার বন্ধুর ডাকে,,
— কিরে আষাঢ় আয় বৃষ্টি থেমে গেলে মজা লাগবে না খেলতে।
— এখনও মজা লাগছে না। তোরা খেল আমি আর খেলবো না আমার একটা কাজ আছে। আমি গেলাম পরে দেখা হবে। কথাগুলো বলেই আষাঢ় সেখান থেকে চলে যায়।
হুট করে আষাঢ়ের কি হলো কেউ ই বুঝলো না। নিজেই খেলার কথা বলে নিজেই চলে গেলো।
******
ক্লাস রুমে বসে আছে দোলন আর আয়শা। আয়শা মনে হচ্ছে একটা ঘোরের মধ্যে আছে। সেই কখন থেকে দোলন আয়শা কে ডাকছে তার নোট খাতাটা দিতে কিন্তু মেয়ে টা কি ভাবছে কে জানে। কোনো সারা শব্দ নেই আয়শার দোলন আরো কয়েকবার ডাকে কিন্তু মেয়ে টা কি ধ্যান করছে কে জানে।
দোলন আয়শা কে ধাক্কা দিতেই আয়শা বলে,,,
দোস্ত ওটা কি মানুষ ছিলো?
— কোনটা?(দোলন)
— একটু আগে নিচে যাকে দেখে আসলাম। (আয়শা)
— দোলন ব্রু কোচকে আয়শার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা কেমন ঘোরের মধ্যে ডুবে আছে।
নারে দোস্ত ওটা মানুষ না ওটা একটা জ্বীন ছিলো।
— আমিও তাই ভাবছি বুঝলি নয়তো একটা মানুষ ওমন হ্যান্ডু কি করে হয়।
— হ্যান্ডু কি? দোলন জানতে চায়।
— আরে এটা জানিস না? হ্যান্ডসাম গা’ধী।
— ওহ আচ্ছা। তারপর নিজের হাতের খাতা দিয়ে আয়শার মাথায় বাড়ি মে’রে বলে স্যার আসবে এক্ষনি ক্লাসে মন দে লুচি পরোটা কাহিকা।
ক্লাস শেষে ছুটির পরে দোলন আর আয়শার সাথে নতুন একটা মেয়ের আলাপ হয়। মেয়ে টা ট্রান্সফার হয়ে এখানে এসেছে। মেয়েটা খুবই মিশুক টাইপ কিছু মুহূর্তের মধ্যেই আয়শা আর দোলনের সাথে বেশ ভাব জমে গেছে। কি সুন্দর ভাব জমিয়েছে দেখে মনে হবে কতো বছরের চেনা জানা তবে মেয়ে টা একটু বেশি কথা বলে। মেয়েটার সম্পর্কে অলরেডি অর্ধেক কিছু জেনে গেছে আয়শা আর দোলন।
মেয়ে টা নাকি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। আয়শা কে জিজ্ঞেস করে ওদের পরিবারে কে কে আছে।
আয়শা জানায় বাবা মা, আর ছোট একটা ভাই।
দোলন কে জিজ্ঞেস করতেই দোলন অন্য মনস্ক হয়ে বলে,,আমার কেউ নেই আমি একা।
মানে?
দোলন হেসে বলে,, আসলে আমিও বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিলাম। একটা দূর্ঘটনায় বাবা মা আমাকে একা করে চলে গেছে।
ওহ সো সেড!
সেডের কি আছে? এখন আমার মায়ের মতো একটা খালা আছে আর একটা ভাই আছে। ওরাই আমার সবকিছু এখন ওদের নিয়েই এখন আমার জীবন।
আমি খুব দুঃখিত দোলন বলেই মেয়েটা মন খারাপ করে।
আয়শা বলে দুঃখের কিছু নাই আমরা এখন গেলাম তোমার সাথে পরে কথা হবে। এই দোলন চল বলেই আয়শা দোলনের হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায়।
দোলনের মন টা হুট করেই কালো মেঘে ছেয়ে যায়। বাবা মায়ের কথা খুব করে মনে পরছে তার। কতোই না রঙিন ছিলো দিনগুলো বাবা মা যখন বেঁচে ছিলো। দোলন ভাবতে ভাবতে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটে। আয়শা চলে গেছে তার বাড়িতে। দোলন বাড়ির আগে আয়শার বাড়ি তাই এখন দোলন একাই আছে।
হুট করেই দোলন মনে পরলো খালামনির জন্য ঔষধ নিতে হবে। দোলনরা যেখানে থাকে সেখানে ফার্মেসী থাকলেও দোলনের খালামনির জন্য যে ঔষধ লাগে ঐগুলা পাওয়া যায় না। দোলনদের বাড়িতে যাওয়ার সময় যে মোড়টা পরে সেখান থেকেই সব সময় ঔষধ নেয়। আজও দোলন গিয়ে ঔষধ নিয়ে নেয়।
এক হাতে ঔষধ আরেক হাতে ছাতা ব্যাগ পিছনে ঝুলানো। দোলন আস্তে ধীরে হাঁটতে থাকে রাস্তা পিচ্চিল হয়ে আছে বৃষ্টিতে। একটু বেখায়ালি হলেই ধপাস করে পরে যাবে। রাস্তায় এতো এতো মানুষের সামনে পরে গেলে মান সম্মান আর থাকবে না তাই খুব সাবধানে পা ফেলছে।
কথায় আছে না আমরা যেইটা ভয় পাই ঐটাই হয় আমাদের সাথে। দোলন আস্তে করে হাঁটতে গিয়েও হুট করে ছোট্ট একটা গর্তে পা পড়ে যায়। দোলন ঐখানেই পরে যায়। পুরো শরীর কাঁদায় মাখামাখি। হাতের ঔষধ কাঁদায় মাখামাখি ছাতাটা ও ভেঙে গেছে। অনেকেই দোলনের দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে, কেউ কেউ যেতে যেতে দোলনকে পরে যেতে দেখে হাসছে। দোলন এসব দেখে কান্না করে দেয়। খুব লজ্জা লাগছে তার এতো সাবধান হয়েও লাভ হলো না। দোলন এখনও নিচেই বসে আছে। কয়েকজন দাঁড়িয়ে দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে।
এরমধ্যে একজন বলে,,,কাউকে সাহায্য না করলে তামশা দেখার কোনো দরকার নাই। যে যার কাজে যান এখানে কোনো সার্কাস চলছে না।এমন গম্ভীর কন্ঠে কথায় সকলেই চলে যায়।
দেখি উঠে আসুন আমার হাত
ধরে।
দোলন কোনো উপায় না পেয়ে হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। এখনও দেখেনি দোলনকে সাহায্য করার ব্যক্তিটা কে।
বৃষ্টিতে পরে যাওয়া ইট’স নরমাল তাই বলে এভাবে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবেন? যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামশা দেখছিল আর হাসছিল তাদের তো পারতেন কাঁদা দিয়ে ভূত বানিয়ে দিতে।
দোলন এবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই ছেলেটা, অবাক হয়ে বলে আপনি?
চলবে?,,,,,,,