আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-০৬

0
33

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam

দোলন অবাক হয়ে বলে,,আপনি?
দোলনের কথায় আষাঢ় ব্রু কোঁচকায়। সরি? আপনি কি আমাকে চিনেন বা আমি আপনাকে চিনি?

— আল্লাহ আপনার স্মৃতি শক্তি এতো দূর্বল?

— এক্সকিউজ মি?

— আরে আমাকে চিনতে পারছেন না? ঐযে সকালের মেয়ে টা যাকে আপনি ফুটবল থেকে বাঁচিয়েছেন।

–চিনার উপায় আছে? কাঁদা দিয়ে যেভাবে মেকআপ করে আছেন দেখেতো সকালের মেয়েটা না পেত্নীর মতো লাগছে।

— আষাঢ়ের কথায় দোলন নিজের মুখে হাত দিয়ে দেখে পুরো মুখে কাঁদায় মাখামাখি। এদিক ওদিক তাকিয়ে দোলন পানি খোঁজার চেষ্টা করে। কোথাও টিউবওয়েল বা পানির ট্যাপ দেখতে পায় না। এখন বৃষ্টি ও হচ্ছে না যে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাবে এভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মানুষ হাসবে,কথাগুলো ভেবে নিমিষেই দোলনের মন টা খারাপ হয়ে গেলো।

আষাঢ় দোলনের দিকে তাকিয়ে নিজের গাড়ি থেকে একটা পানির বোতল বের করে হাতের ইশারায় বোঝায় মুখ ধুয়ে নিতে।

দোলন পানির বোতল নিয়ে এক সাইডে গিয়ে মুখ ধুতে থাকে।
আষাঢ় নিজের পকেটে হাত দিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন দেখতে থাকে। ফোন দেখতে দেখতে হুট করেই আষাঢ়ের চোখ যায় দোলনের দিকে। কিছু একটা দেখে আষাঢ়ের চোখ ঐখানেই আঁটকে যায়।
আষাঢ় ফোনটা হাতে নিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। আষাঢ় নিজেও জানে না এই কাজটা সে কেনো করলো।

দোলন হাত মুখ ধুয়ে বোতলটা আষাঢ় কে ফিরিয়ে দেয়।
আষাঢ় চোখের ইশারায় গাড়ির পিছনে বোতল রাখতে বলে। দোলন বোতল রেখে নিজের ভাঙা ছাতা আর ঔষধের ব্যাগটা তুলতে গিয়ে একটা ঘুমের ঔষধের পাতা বেড়িয়ে পরে। দোলন ঔষধের পাতাটা তুলে নেয় সময় আষাঢ় ঐ দিকেই তাকিয়ে ছিলো।

” বাই এনি চান্স তুমি সু’ই’সাইড করার প্লেন করছো নাতো আবার? “(আষাঢ়)

আষাঢ়ের কথায় দোলন এদিক ওদিক তাকায়।দোলনকে তাকাতে দেখে বলে,,আমি তোমাকেই বলছি বুদ্ধু।

দোলন কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,আমাকে? আমি সু’ই’সাইড করতে যাবো কোন দুঃখে শুনি?

তাহলে এতোগুলা ঘুমের ঔষধ তোমার ব্যাগে কি করছে? ডাক্তারের পার্মিশন ছাড়া এতো ঘুমের ঔষধ পাওয়া যায় না। এই তোমার কাছে এতগুলো ঘুমের ঔষধ বিক্রি করলো কি করে? প্রেসক্রিপশন দেখাও দেখি আমাকে।

— সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ। এবার আপনি আসুন আমিও গেলাম টাটা।

— তোমাকে যা বলছি তা করো। তারপর কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেললে। আমি একজন সচেতন নাগরিক হয়ে তা হতে দিতে পারি না।

— দেখাবো না আমি কি করবেন? আর আপনি কে যে আপনাকে আমার দেখাতে হবে।

— আমি ফিউচার ডক্টর। শার্টের কালার উঁচিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে আষাঢ়।

আমিও ফিউচার লেডি গুন্ডি হেহেহে বলেই দোলন সেখান থেকে দৌড়ে পালায়।

আরে আরে,,,,,,

দোলন কিছুটা দূরে গিয়ে আষাঢ় কে ভেংচি কেটে চলে যায়।
আষাঢ় দোলনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরমধ্যে আষাঢ়ের ফোন বেজে উঠে ।
মামনি কল করেছে।

— হ্যা মামনি বলো।

— কোথায় তুমি? তোমাকে আজ কি করতে বলেছিলাম সেটা ভুলে বসে আছো? তুমি এতো ভুলো মনা কেন আষাঢ়?

— রিলেক্স মামনি শ্বাস নাও বড় করে।

— তুমি আমার সাথে একদম মজা করবেনা আষাঢ়। আমি কিন্তু মজা করার মোডে নেই একদম।

— আমি মজা করছি না মামনি। সে এখন কোথায়? আমিকি যাবো আনতে?

— দরকার নাই। ড্রাইভার গিয়ে নিয়ে এসেছে।

— তাহলেতো হয়েই গেলো।

— তুমি এখন কোথায়? বাসায় আসবে কখন?

— মামনি আমার আসতে লেইট হবে। এখন রাখছি বাড়িতে গিয়ে কথা বলবো। কথাগুলো বলেই আষাঢ় কল কেটে দেয়।

*******
দোলন বাড়িতে এসে দেখে খালামনি তারজন্যই অপেক্ষা করছে। দোলনের এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করে,, কিরে তোর এই অবস্থা হলো কি করে?

দোলন গাল ফুলিয়ে বলে,,,পরে গিয়েছিলাম খালামনি।

আহারে কোথাও ব্যাথা পেয়েছিস?

নাহ্ খালামনি তবে একটা জিনিস পেয়েছি।

কি সেটা?

লজ্জা খুব লজ্জা পেয়েছি খালামনি।

তুই লজ্জা পেয়েছিস? আর আমি ভাবছি যেই জায়গায় পরেছিস ঐজায়গার কি অবস্থা এখন। আহারে জায়গাটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে এখন। তোর পড়াতে বেচারা মাটির মনে হয় নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে বলেই মুখ টিপে হাসে সুমন।

সুমনকে এখানে খেয়াল করেনি দোলন নয়তো জীবনেও পরে যাওয়ার কথা বলতো না। এই ছেলে এমনিতেই দোলন কে রাগানোর জন্য সারাক্ষণ পিছনে লেগে থাকে । এখন তো আবার মোক্ষম কারণ পেয়েছে পিছনে লাগার।

দোলন সুমনের কথায় খালামনি তোমার ছেলেকে কিছু বলো নয়তো খারাপ হবে বলে দিলাম। আমাকে আকারে ইঙ্গিতে মোটা বলছে। তোমার ছেলের চোখেই শুধু আমি মোটা কিন্তু ঐ ফুটবল ওয়ালা লোকটা আমাকে চিকন বলেছে। এজন্য বলেছি আমাকে কম খাবার দাও খালামনি। আজ আর আমি খাবো না বলেই দোলন রুমে চলে যায়।

সুমন কেন যে তুই মেয়েটার পিছনে লাগিস।

সুমনের মায়ের কথা কানে যায় না। দোলনের বলা ফুটবল ওয়ালা লোকটাতে আঁটকে আছে সে।
কে ফুটবল ওয়ালা লোক দুলি? সুমন প্রশ্ন করে তাকিয়ে দেখে দোলন চলে গেছে। সুমন ভাবনায় পরে যায় দুলি কার কথা বলছে।

**********
বিকেলে দোলন খালামনির সাথে বের হয় কিছু কেনাকাটা করার জন্য। খালামনির পিছন পিছন হাঁটছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে পছন্দ হয়ে যায় কিনা কেনার জন্য। হুট করেই দোলনের চোখ আঁটকায় একটা ফুলের দোকানে। মুহূর্তের মধ্যে দোলনের চোখ জোরা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। দোলনের খালামনি কে না বলেই ছোট লাগায় ঐদিকে।

ফুলের দোকানে দোলনচাঁপা ফুল। দোলন আগে কখনো এই ফুল দেখেনি। খুব আফসোস হতো নিজের নাম দোলনচাঁপা অথচ নিজে কখনো এই ফুল ছোঁয়াতো দূরের কথা চোখেই দেখেনি। আজ যখন দোলন সামনা-সামনি দেখছে দোলন কে আর আঁটকায় কে? আজ এই ফুল কিনে নিয়ে যাবে সে।

দোলন দৌড়ে দোকানে ঢুকে পড়ে । গিয়ে দোলনচাঁপা ফুল কে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে। দোলনের মনটা খুশিতে নেচে উঠে। বার কয়েক স্পর্শ করে দোকানদার কে দাম জিজ্ঞেস করতে যাবে এরমধ্যে শুনতে পায় পিছন থেকে কেউ একজন বলছে,,,দোকানের সবগুলো দোলনচাঁপা ফুল গাড়িতে তুলে দিন।সবগুলো ফুল আমার চাই।
দোলন পিছনের লোকটার দিকে না তাকিয়ে দোকানদার কে বলে,,আংকেল আমিও কিনতে এসেছি এই ফুল সবগুলো দিয়েন না।

দোকানদার দোলনের কথায় পাত্তা দেয় না। সবগুলো ফুল গাড়িতে উঠিয়ে দিতে দিতে বলে,,, তুমি অন্য সময় নিও উনিতো আগে এসে অর্ডার করেছিলেন উনার জন্যাই আনা সবগুলো।

— কিন্তু আমিতো দোকানে আগে এসেছি তাই না?

দোকানদার বলে,,আগে আসলে কি হবে মা।? উনি আগের দিন অর্ডার করে গিয়েছিলেন। উনাকে বলে দেখো দেয় কিনা তোমাকে এখান থেকে।

দোকানদারের কথায় দোলন পিছনে ফিরে বলে,,আপনার কি সবগুলো ফুল লাগবে? আমাকে দিন না ওখান থেকে৷ আমার অনেক পছন্দের ফুল এটা।

দোলনকে দেখে সামনে থাকা ব্যক্তি চোখ বড় বড় করে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে। দোলনের দিকে তাকিয়ে ঘামতে থাকে। মনে মনে বলছে এ কি করে হতে পারে? এটাও কি সম্ভব? না না আমি হয়তো ভুল ভাবছি।

দোলন একটু সামনে এগিয়ে বলে,,শুনছেন? দিননা ঐখান থেকে ফুল আমি টাকা দিবো আপনাকে।

দোলনকে আগাতে দেখে ব্যক্তিটা পিছনে পিছাতে থাকে। কাঁপা কাঁপা হাতে গাড়ির দরজা খুলে তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে পরে।
দোলন কিছু বুঝে উঠার আগেই ব্যক্তিটা গাড়ি নিয়ে ঐখান থেকে চলে যায়।

দোলন যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হা করে আছে।কতো বা’জে দোলনের কথা শুনলোই না। দোলনের মনটা খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ করে খালা মনি কাছে ফিরে যায়।খালামনিকে সব বলে,, খালামনি বেশ অবাক হয় এটা শুনে দোলন কখনো দোলনচাঁপা ফুল দেখেনি। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,চিন্তা করিস না সুমনকে দিয়ে তোর জন্য অনেকগুলো দোলনচাঁপা ফুল আনিয়ে দিবো।

দোলন খালামনির কথায় খুশি হয়ে যায়।

*********
আষাঢ় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে বসে। ফোনের গ্যালারি থেকে কিছু একটা বের করতে গিয়ে চোখ আঁটকায়। তখনকার তোলা সেই ছবি।
দোলনের চোখ মুখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে। চোখের পানিতে ভিজে একাকার, এ যেনো এক অন্যরকম সৌন্দর্য।

আষাঢ়ের এক বন্ধু আষাঢ়ের পাশেই বসেছিলো। আষাঢ় কে ওমন করে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,কিরে কি দেখছিস? সিক্রেট কিছু নাকি? দেখি আমাকেও দেখা একটু বলেই উঁকি দিতে নিবে তার আগেই আষাঢ় ফোন তারাতাড়ি পকেটে ঢুকিয়ে বলে,,,সবকিছুতে উঁকি দিতে নেই।
তারপর ধুম করে পিঠে কিল লাগিয়ে বলে,, অন্যের চোখের শান্তির দিকে উঁকি দিতে নেই বুঝলি?

#চলবে?,,,,,,,