আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-০৭

0
28

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam

আষাঢ় জান তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করতে করতে শেষ। তোমার এখন আসার সময় হলো? তোমার মন কি জানান দেয় নি তোমার জন্য কেউ একজন বসে থাকবে।তুমি এটা অন্যায় করেছো এরজন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। আমি মোটেও তোমাকে ক্ষমা করবো না, এরজন্য তোমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। কথাগুলো বলেই মেঘ দেয়ালে বড় করে বাঁধাই করে রাখা আষাঢ়ের ছবির দিকে তাকিয়ে রয়। এতক্ষন ধরে মেঘ আষাঢ়ের ছবির সাথেই কথা বলছিল।

— কি হলো কথা বলছো না কেন? তুমি কি আমাকে আর আমার ভালোবাসা কে কখনোই বুঝবে না? একবার অন্তত আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পারো। চোখের দিকে তাকালেই বুঝতে আমার মনে তোমার জন্য কতো ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। কবে বুঝবে আষাঢ় আমাকে তুমি?

তুই কাকে নিয়ে কথা বলছিস তুই নিজেও জানিস না। এক থাপ্পড় দিয়ে তোর বাপের নাম ভুলিয়ে দিবো আমি বেয়াদপ। ( আষাঢ়)

আষাঢ়ের এহেন কথায় মেঘের অন্তর আত্না কেঁপে ওঠে। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। আষাঢ় কি তাহলে সব কথা শুনে নিয়েছে? কিন্তু কি করে শুনলো? মেঘতো সব কথা মনে মনে আষাঢ়ের ছবির সাথে বলেছে।

ফোনে দেখে তুই বেঁচে গেলি। সামনা-সামনি হতি দেখিয়ে দিতাম আষাঢ় কি জিনিস। কার সাথে তুই লাগতে আসছিস।

আষাঢ়ের এই কথা শুনে মেঘ বুঝতে পারে আষাঢ় ফোনে কথা বলছে। মেঘ স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। এমন ভয় কবে পেয়েছিল মেঘের মনে নেই। আরেকটু হলেই হার্টঅ্যাটাক করতো মেঘ। এক ভয় শেষ হয়ে আরেক ভয় ঢুকেছে মনের ভিতর মেঘের। আষাঢ়ের রুম থেকে এখন কি করে বের হবে মেঘ।
মেঘ মোটেও ভাবেনি আষাঢ় এই মুহূর্তে বাড়িতে আসবে। গাড়ির আওয়াজ ও আজ শুনতে পায় নি।

আষাঢ় এখন মেঘ কে নিজের রুমে দেখলে ঝামেলা বাঁধাবে। আষাঢ় এমনিতেই মেঘকে তেমন একটা পছন্দ করে না। মেঘ আষাঢ়ের কথায় তা বুঝতে পারে। নিজের রুমে এভাবে অনুমতি ছাড়া আষাঢ়ের অনুপস্থিতিতে কাউকে দেখলেতো খবর ই আছে।

মেঘ কি করবে বুঝতে পারছে না। আষাঢ় এখনই রুমে ঢুকবে। কোনো উপায় না পেয়ে আলমারির পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পরে।

আষাঢ় নিজের রুমে ঢুকে ফোনটা বের করে। কি মনে করে গ্যালারিতে ঢুকে।ফোনের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে ফোনটা বিছানায় রাখে,তারপর শার্ট খুলে ওয়াশরুমে চলে যায়।

মেঘ আলমারির পিছন থেকে বের হয়ে আসে। বিছানার উপর ফোনের দিকে চোখ যায় মেঘের। আষাঢ়ের ফোনের স্ক্রিনের আলো এখনও জ্বলজ্বল করছে। মেঘ উল্টো পাশ থেকে শুধু লম্বা চুল দেখতে পায়। বুঝতে পারে কারো ছবি। মেয়ের ছবি নয়তো? এই ভেবে একটু এগিয়ে যাবে দেখার জন্য তারমধ্যে ফোন বেজে ওঠে, ওয়াশরুমের দরজা খুলার ও শব্দ হয়। মেঘ ভয়ে আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

আষাঢ় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ব্রু কোঁচকায় দরজার পর্দা নড়ছে। দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে বাইরে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ এসেছিলো কিনা, কাউকে না দেখতে পেয়ে আষাঢ় ভাবে হয়তো বাতাসে নড়াচড়া করছে। বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায় আষাঢ়।

অন্যদিকে মেঘ নিজের রুমে এসে জোরে জোরে হাঁপাতে থাকে।বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে। এক গ্লাস পানি এক নিমিষেই শেষ করে ফেলে। বিছানায় শুয়ে নিজের ফোন বের করে আষাঢ়ের ছবিতে হাত বুলায়। পরোক্ষনে মাথায় আসে আষাঢ়ের ফোনে থাকা ছবির কথায়। ছবির কথা ভেবে বেশ চিন্তায় পড়ে যায় মেঘ।

আষাঢ় আবার অন্য কাউকে,,,,না না মেঘ আর ভাবতে পারছে না। খুব দ্রুত মামনির সাথে কথা বলতে হবে। আষাঢ় কে মেঘ হারাতে পারবে না।

**********
প্রতিটি ভোর নতুন দিনের সূচনা। অন্ধকার কেটে কারো কারো জীবন আলোকিত হয় আবার কারো জীবনে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। একেকটা দিনের জন্য মানুষের কতো শতো আয়োজন। ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে মানুষের কর্ম ব্যস্ততা শুরু। নিজেকে গড়ে তোলার লড়াই নিজের জীবিকা নির্বাহের লড়াই। প্রতিটি মানুষ তাদের লক্ষ অর্জনের জন্য ছুটে চলেছে প্রতিনিয়ত।

দোলনের কাছে সকাল মানেই উড়াধুড়া ঘুম। সকালের ঘুমে কি যে নেশা।বিছানা যেনো হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,,আরেকটু ঘুমা, আরেকটু ঘুমা মাত্র সকাল হয়েছে। দোলনের খালামনি দোলনকে টেনে হিঁচড়ে ও উঠাতে পারে না ঘুম থেকে । আবার মাঝে মাঝে ভোর চারটায় উঠে বসে থাকে মেয়েটা। এই মেয়ের মতিগতি বোঝা বড় মুশকিল। সপ্তাহে চারদিন বিছানা থেকে টেনে তোলা যায় না,আর তিনদিন চারটায় উঠে বসে থাকে।

আজও দোলন ভোর চারটায় উঠে বসে আছে। অপেক্ষা করছে কখন চারদিক আলোকিত হবে আর সে বাইরে যাবে।আয়শা কে ফোন দিয়ে আগেই তৈরি হয়ে থাকতে বলে দিয়েছে হাঁটতে বের হবে।
আয়শা সপ্তাহে তিনদিন শান্তি মতো ঘুমাতে পারে না, আর না কিছু বলতে পারে দোলনকে। আয়শা কিছু বল্লে হয়তো আর কখনো কথাই বলবে না দোলন। মেয়ে টা বড্ড অভিমানী তাই কিছু বলে না।

চারদিকে আলো ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে দোলন বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। খালামনি জানেই আজ দোলনের বাইরে যাওয়ার দিন, তাই দোলন না বলেই বেরিয়ে গেছে ।

দুই বান্ধবী পার্কে হাঁটছে। লোকজনের আনাগোনা বাড়ছে সকলেই হাঁটাহাঁটি করছে রোবটের মতো। এখানে দোলন একটা কারণে আসে। এই লোকজন হাঁটাহাঁটি করছে মনে হচ্ছে অন্যগ্রহের বাসিন্দা সকলে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নেই সবাই হাঁটাহাঁটি নিয়ে ব্যস্ত।

আয়শা হেলতে দুলতে দোলনের পিছন পিছন হাঁটছে।
একটু দূর যেতেই পার্কে একটা সুন্দর কুকুর দেখতে পায়। মনে হয় কারো পোষা কুকুর। কুকুরটা শান্তিতে ঘুমোচ্ছে।

দোলনের মনে শ’য়তানি বুদ্ধির উদয় হয়। এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজত থাকে। পেয়েও যায় একটা কাঠি৷ আস্তে করে পা টিপে টিপে কুকুরটার কাছে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে কাঠি দিয়ে খোঁচা দেয়। প্রথম খোঁচায় কুকুরটা কিছুটা নড়েচড়ে আবার শোয়। দোলন আবার ও খোঁচা দেয়, এইবার দোলন খোঁচা দেওয়ার সাথে সাথে কুকুরটা ঘেউঘেউ করে উঠে।
দোলন লাফ দিয়ে পিছনে চলে যায়।

দোলন আর আয়শা প্রানপনে দৌড়ে চলেছে কারণ তাদের কুকুরটা তাড়া করেছে।
দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে একটা লোককে দেখতে পায় উল্টো দিকে ঘুরে কথা বলছে ফোনে।
দোলন দৌড়ে লোকটার কাছে গিয়ে পিছন থেকে থেকে শার্ট টানতে টানতে বলে,,,আংকেল আংকেল প্লিজ হেল্প!

দোলনের কথায় লোকটা পিছনে ঘুরে ব্রু কোচকে ফেলে। ঐদিকে কুকুরটা ঘেউঘেউ করেই যাচ্ছে।

কাকু প্লিজ হেল্প কাকু,,, দোলন লোকটার দিকে না তাকিয়ে শুধু এক কথা বলে যাচ্ছে।

এই মেয়ে এই কে তোমার কাকু? এক থাপ্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।
কারো ঝাঁঝালো কণ্ঠে এমন কথা শুনে দোলন তাকিয়ে দেখে ঐ ছেলেটা।

আরে ভাইয়া আপনি?
দোলনের মুখে একবার ভাই তো একবার কাকু ডাক শুনে আষাঢ় চটে যায়।রাগে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,টমি বা’ইট হার,,,

কুকুর টা যেনো এই অনুমতির অপেক্ষাতেই ছিলো।আষাঢ় বলতে দেরি কুকুর লাফ দিতে দেরি হয় না।

দোলন আআআআ বলে চিল্লিয়ে উঠে। কিছু সময় যাওয়ার পরও যখন কোনো সারা শব্দ পায়না তখন তাকিয়ে দেখে কুকুরটা আষাঢ়ের কোলে। আষাঢ়, আয়শা,আর কুকুরটা কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে দোলনের দিকে।

দোলন শুকনো ঢুক গিলে কুকুরটার দিকে তাকিয়ে। কুকুরটা এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো এখনই কাঁচা চিবিয়ে খাবে দোলনকে। আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আষাঢ় রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

— আপনারা কি ভাই ভাই? (দোলন)
— মানে?(আষাঢ়)
— না মানে আপনি আর কুকুরটা একই লুক নিয়ে তাকিয়ে আছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম হেহেহেহে!
— আষাঢ় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, ফা/জিল মেয়ে কতো বড় সাহস আমাকে টমির সাথে তুলনা করছো?

আয়শা এতক্ষন নীরব দর্শক ছিলো।নিজের বান্ধবীর লাগাম ছাড়া কথায় এখনই ক’ল্লা কা/টা যাবে বুঝতে পারছে। তাই দোলনের হাত ধরে দৌড় দিতে দিতে বলে,,,ভাগ দোলন ভাগ! নয়তো একবার কুকুর থেকে বাঁচলে ও এখন আর বাঁচবি না।তোকে আর আমাকে কুকুরটার ব্রেকফাস্ট হতে হবে।

দোলন ও বুঝতে পারে একটু বেশি বলে ফেলেছে তাই আয়শার সাথে সেও দৌড়ে পালায়।

আষাঢ় ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,, দোলন?
দোলনচাঁপা ফুল!

#চলবে?,,,,,