আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-১০+১১

0
66

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam

তুই অন্যায় করেছিস আষাঢ় ঘোর অন্যায়।তুই একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলেছিস।তুই কি করে একটা মেয়ে কে আঘাত করতে পারলি? তাও মানতাম মেয়েটা যদি তোর কিছু হতো তাহলে।মেয়েটা তোর কিছু হয় না আষাঢ় তুই কোন অধিকারে তার গায়ে হাত তুললি?সে শাড়ি পরুক আর যাই পরুক তাতে তোর কি? তার দিকে কে তাকালো না তাকালো সেটা দেখার তুই কেউ না।তুই মোটেও ভালো কাজ করিস নি। একদম ভালো কাজ করিস নি তুই। মেয়ে টা তোর কেউ না! কেউ না! কেউ না! বলেই হু হা করে হেসে উঠে।

আষাঢ় নাআআআ বলে চিল্লিয়ে উঠে। পুরো শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে তাও আষাঢ়ের শরীরে যেনো বাতাস লাগছে না। রাতে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব দেখে এসি অফ করে পাখা ছেড়েই ঘুমিয়েছিল আষাঢ় যার দরুন আরো ঘেমে নেয়ে একাকার। নিজেকে শান্ত করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে এতক্ষন স্বপ্ন দেখেছে সে। ঘড়ির কাটায় পাঁচটা বাজে।আষাঢ়ের পরনের টিশার্ট টা ঘামে ভিজে চিপচিপে হয়ে আছে। টিশার্ট টা খুলে রুমের এক কোণায় ছুঁড়ে মারে আষাঢ়। বিছানার পাশের টেবিল থেকে পানি নিয়ে এক নিমিষেই শেষ করে দেয় পুরোটা।

আষাঢ়ের কানে একটা বাক্য প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে বারবার মেয়েটা তোর কেউ না। যতোবার বাক্যটা কানে বাজছে আষাঢ় ততো উতলা হয়ে উঠছে।
মনের মধ্যে অশান্তি বাসা বেঁধেছে।

আষাঢ় ও মনে মনে বলে,,, দোলন আমার কেউ না!
যতোবার আষাঢ় দোলন আমার কেউ না বলে ততোবারই তার ভিতর থেকে বলে উঠে দোলন তোর সব আষাঢ়। তুই দোলন বলে মেয়েটাকে পছন্দ করিস শুধু পছন্দ না ভালোবেসে ফেলেছিস। ইউ লাভ হার আষাঢ়।

আষাঢ় নিজেকে ধাতস্থ করতে না পেরে উঠে দাঁড়ায়। রুমের মধ্যে কিছু সময় পায়চারি করে এতেও তার শান্তি মিলে না। ফোনটা নিয়ে আষাঢ় বারান্দায় চলে যায়।

আষাঢ়ের বিবেক বুঝি এতক্ষনে জাগ্রত হলো। দোলন কে একদম তার মারা উচিত হয়নি।আষাঢ় যতোই দোলনকে পছন্দ করুক বা ভালোবাসুক এভাবে তার একটা মেয়ে কে মারা একদম ঠিক হয়নি। দোলনের কাছে সরি বলতে হবে। আষাঢ় বুঝতে পারে মেয়েটার কাছে মাফ না চাইলে শান্তি মিলবে না। আষাঢ় ফোন বের করে মেসেজ দিতে যায় দোলনকে এখন কল দেওয়া মোটেও ঠিক হবে না। মেসেঞ্জারে কল দিতে গিয়ে দেখে মেয়েটা তাকে ব্লক করে রেখেছে। এটাতো হওয়ারই ছিলো তাই আষাঢ় বেশি অবাক হলো না।আষাঢ় এবার নিজেকে সামলাতে না পেরে সময়ের চিন্তা না করেই দোলনের নাম্বারে কল দেয়। দোলনের নাম্বারটা অনেক কষ্টে যোগাড় করেছে আষাঢ়। দোলনের বান্ধবী আয়শা কে সাত পাঁচ বুঝিয়ে তারপর নিয়েছে নাম্বারটা।

দোলন বিছানার উপর বসে বসে ঘুমে ঢুলছে। ভোর হওয়ার অপেক্ষায় আছে আজ হাঁটতে যাওয়ার দিন। এরমধ্যেই দোলনের ফোনটা বেজে ওঠে। দোলন চোখ কচলাতে কচলাতে ফোনের দিকে তাকায়। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কলটা কেটে যায়, কল কাটার কয়েক সেকেন্ড পর পুনরায় বেজে উঠে আবার ফোন।

দোলন ফোন রিসিভ করে ভাবে হয়তো আয়শা অন্য নাম্বার দিয়ে কল দিয়েছে, যদি আজ হাঁটতে যেতে মানা করে তাহলে আজ খবরই আছে আয়শার।

— “হ্যালো?”
— দোলনের ঘুমু ঘুমু কন্ঠে কি যেনো একটা ছিলো।আষাঢ় তার সব গুলিয়ে ফেলছে।আষাঢ় চেয়েও মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও উচ্চারণ করতে পারছে না।

–” হ্যালো কে বলছেন?” দোলন আবার জিজ্ঞেস করে।
,,,,,,,,,,,
আষাঢ় নিশ্চুপ।
দোলন বিরক্ত হয়ে নিজেই কল কেটে দেয়। হয়তো ভুলে চলে এসেছে। ফোন রাখার একটু পর আবার কল আসে এবার ও দোলন হ্যালো বললে কোনো প্রতিউত্তর আসে না। এবার দোলন বেশ বিরক্ত হয় গা;লি দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে কল আবার কেটে দেয়। কল কেটে দোলন আয়শা কে ফোন দেয় বের হবে বলে হাঁটতে।

আষাঢ় আবারও কল দেয় সরি বলতে গিয়ে কিছু বলতেই পারছে না সে তবে দোলনকে জ্বালাতে বেশ ভালো লাগছে। আষাঢ় আবার কল দেয় দোলনকে। দোলনের ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে। আষাঢ় ফোন ব্যস্ত পেয়ে ব্রু কোঁচকায় এসময় আবার কার সাথে কথা বলছে মেয়ে টা। আষাঢ় একের পর এক কল দিতে থাকে দোলনের ফোনে।

দোলন আয়শার সাথে কথা বলা শেষ করে দেখে আবার ও ঐ নাম্বার থেকে কল আসছে। এটা যে ইচ্ছে করে কেউ করছে বিরক্ত করার জন্য দোলন বেশ বুঝতে পারছে। দোলনের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে,দৌড়ে গিয়ে রান্না ঘর থেকে কিছু একটা নিয়ে আসে। বিছানায় আরামসে বসে এবার শয়/তানি হাসি দিয়ে ফোন রিসিভ করে দোলন।

আষাঢ় ভেবে নেয় এইবার সরি বলবেই দোলনকে। দোলন ফোন রিসিভ করতেই আষাঢ় ফোন কানে ধরে। ফোন কানে ধরে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। আষাঢ়ের মনে হচ্ছে তার কানের মধ্যে কেউ বো’মা ফাটাচ্ছে। এইবার আষাঢ় হ্যালো হ্যালো করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না কি এক বিদঘুটে শব্দ আষাঢ়ের কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। এতো শব্দ সহ্য করতে না পেরে আষাঢ় ফোন কেটে বারান্দায় রাখা চেয়ারে মাথা চেপে ধরে বসে পরে। আষাঢ়ের মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে শব্দের তীব্রতায়।

দোলন একটা বাটি এনে তার ভিতর ফোন রেখে চামচ দিয়ে এতক্ষন ধরে বাটিতে শব্দ করে গেছে। দোলনের খুব হাসি পাচ্ছে। এই ট্রিক্স দোলন ফেসবুকে দেখেছে তাই বুদ্ধি খাঁটিয়ে নিজে ট্রাই করলো। অনেক সময় যাওয়ার পর বাটি তুলে ফোন হাতে নিয়ে দেখে কল কেটে দিয়েছে। হু হাহা আর জীবনে মনে থাকলে কল দিবে না উচিৎ শিক্ষা দিয়েছি বজ্জাত লোকটাকে আমাকে ডিস্টার্ব করা না? এবার মজা বুঝো কেমন লাগে বলেই দোলন দরজার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে।

দরজার সামনে দোলনের খালামনি আর সুমন দাঁড়িয়ে আছে। দোলনের খালামনি দোলনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও সুমন কাঁচা চি’বিয়ে খাওয়া লুক নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

দোলন আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুমন এগিয়ে আসতে আসতে বলে,,,আমার ঘুম ভাঙানো তাই না দাঁড়া তোকে মজা দেখাচ্ছি।
দোলন খালামনি বাঁচাও বলেই বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।

বাথরুমে থেকে দোলন চিল্লিয়ে বলে,,,,
” খালামনি তোমার রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা করো।”

আমি পারবো না এতো দুষ্টুমি করে কেউ? আমি গেলাম বলেই তিনি চলে যান।

খালামনি তুমি এটা করতে পারো না আমার মতো অসহায়ের সাথে।

মা চলে গেছে তুই এবার বের হো তুই অসহায় না অন্য কিছু আমি দেখছি।
বসলাম তোর বিছানায় দেখি কতক্ষন থাকতে পারিস ঐখানে। সুমন সত্যি সত্যি দোলনের বিছানায় বসে থাকে।

এভাবে অনেকটা সময় কেটে যায়। দোলন আস্তে করে বাথরুমের দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে সুমন এখনও যায়নি। দোলন সুমনকে দেখে হেঁসে উঠে, সুমন দোলনের বিছানায় ই ঘুমিয়ে গেছে। দোলন আস্তে করে পা টিপে টিপে বের হয়ে দৌড় দেয়,, যাওয়ার আগে ঘুমন্ত সুমনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে যায়।

***********
দোলনের জন্য ঘুমাতে পারলেন না সকালে মিসেস খেয়া।তাই আজ হাঁটতে বের হয়েছেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে গেছেন। শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছে উনার একা একা এতো দূর আসা ঠিক হয়নি বুঝতে পারছেন। ইদানীং এমনিতেই শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না উনার।কয়েকদিন আগে মাত্র জ্বর থেকে উঠেছে এজন্য আরো দূর্বল শরীর। বাড়িতে রিকশা করেই ফিরবেন বলে ঠিক করে নেন।এদিকে ওদিকে তাকিয়ে রিকশা খুঁজতে থাকে তবে একটা রিকশা ও দেখতে পাচ্ছেন না।

শরীরের সব শক্তি যেনো শেষ মনে হচ্ছে না বসতে পারলে এখনই মাথা ঘুরে হয়তো পরে যাবেন।মিসেস খেয়া কোনো উপায় না পেয়ে রাস্তার সাইডেই বসে পরেন।

আষাঢ় ঐদিন দোলনের সাথে যেখানে দেখা হয়েছে সেখানে এসে বসে আছে। বৃষ্টিতে মেয়েটা পরে কিরকম জুবুথুবু হয়ে গেছিলো।এখানেই আষাঢ়ের চোখ দুটো থমকে গিয়েছিল। দোলনকে সরি বলতে না পারলে আষাঢ় শান্তি পাবে না, দোলনের সাথে দেখা হওয়ার আশায় এখানে বসে আছে। দোলনের বাড়ি আষাঢ় চিনেনা এজন্য এখানেই বসে আছে।
গাড়ির ভিতর বসে থেকেই অনেকক্ষন ধরে আষাঢ় লক্ষ করছে একটা মহিলাকে মনে হচ্ছে বেশ অসুস্থ তবে সামনে থেকে দেখেনি পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে শুধু।

আষাঢ় গাড়ি থেকে নেমে যায় যদি কিছু সাহায্য লাগে এজন্য।

“আন্টি কোনো সমস্যা? আপনি ঠিক আছেন?”

হুট করে কারো করা প্রশ্নে মিসেস খেয়া পিছনে ফিরে তাকায়।

“আরে আন্টি আপনি? বলেই আষাঢ় পাশে এসে বসে। ”

“হ্যা বাবা দেখো না একটু হাঁটতে বের হয়েছিলাম,শরীরে আর কুলোচ্ছে না তাই বসে পরেছি।একটা রিকশা ও পাচ্ছি না বাড়িতে যে যাবো।”

“আপনি আমার সাথে আসুন আন্টি।আমি আপনাকে গাড়িতে করে পৌঁছে দিচ্ছি।”

“না বাবা তার দরকার নাই আমি রিকশা দিয়ে যেতে পারবো শুধু শুধু তোমার ঝামেলা। ”

আষাঢ় মনে মনে বলে,,এই সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না। আষাঢ় জোর করে মিসেস খেয়াকে গাড়িতে তুলে নেয়। এই সুযোগে দোলনের বাড়ি ও চেনা যাবে আর সরি ও বলা হয়ে যাবে।

আষাঢ় ধরে ধরে দোলনের খালামনিকে নিয়ে যায় ওদের বাড়িতে। মিসেস খেয়া অনেক বলেছেন তিনি যেতে পারবেন কিন্তু আষাঢ় তা শুনেনি।

বাড়ির ভিতরে ঢুকে মিসেস খেয়া দোলনকে ডাকতে থাকে,,, দুলি এই দুলি কই গেলি?

— আসছি খালামনি বলেই দোলন ড্রয়িংরুমে এসে আষাঢ় কে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে।
মনে মনে বলে,, এই ব’দের হাড্ডি এখানে কি করছে?,,,,

আষাঢ় এখনও দোলনকে দেখেনি সে দেয়ালে টাঙানো মিসেস খেয়ার পাশে দাড়াঁনো এক হাস্যজ্জোল ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। ছবিতে থাকা ব্যাক্তিকে কোথায় যেনো দেখেছে মনে করতে পারছে না কিছুতেই।

#চলবে,,,,,?

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam

আষাঢ় মিসেস খেয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে কোথায় যেনো দেখেছে তবে কিছুতেই তা মনে করতে পারছে না। মাথায় আসছে না কোথায় দেখেছে। আষাঢ় মনে করতে না পেরে ভেবে নিলো হয়তো মনের ভুল হবে।

মিসেস খেয়া দোলনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আস্তে করে হাতের ইশারায় চা নাস্তা দিতে বলল।দোলন মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো। মিসেস খেয়া মনে মনে বলল এই মেয়েকে নিয়ে আর পারি না। এখন যদি ছেলেটা দেখতো তাহলে কি হতো! কতোটা লজ্জায় পরতে হতো।

আষাঢ় এবার মিসেস খেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,আন্টি আমি এবার আসি। ভালো থাকবেন। মুখে এটা বললেও আষাঢ় চাইছে মিসেস খেয়া যেনো আটকায় আর কিছু সময় থাকতে চায়। কোনো ভাবে দোলনের সাথে দেখা করতে চায়।

“মোটেও আমি তোমাকে যেতে দিবো না বাবা। চা, পানি না খাইয়ে ছারছি না আমি তোমায়।”

” ঝামেলার দরকার নাই আন্টি অন্য এক সময় এসে শুধু চা পানি না আপনার হাতের রান্না ও খেয়ে যাবো।”

“পরের টা পরে দেখা যাবে বাবা এখন অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যাও এই আন্টির সাথে। ”

আষাঢ় হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,,কি আর করার আছে আমার? তুমি যখন ছাড়বেই না খেয়ে যাই চা পানি।

মিসেস খেয়া আষাঢ়ের কথায় খুশি হয়ে গেলো।তারপর সে নিজেও আষাঢ়ের পাশে বসে পরলো। ছেলেটাকে উনার বেশ লাগছে। আজকালের দিনে এমন ভালো ছেলে খুব কমই দেখা যায়।
মিসেস খেয়া হুট করে কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বলল,,দেখেছো কান্ড? এতো কথা বলছি অথচ তোমার নামটাই এখন পর্যন্ত জানা হলো না। এটাতো আরো আগেই জিজ্ঞেস করা দরকার ছিলো।বয়স হয়ে গেলে যা হয় আরকি।

এটাতো আমার ভুল আন্টি আরো আগেই আমার বলার দরকার ছিলো। আমার নাম আষাঢ় এহমাদ।

এখন তো দেখা যায় তোমার মাস চলছে তাহলে,,আষাঢ় মাস। তবে নামটা খুব ইউনিক কিন্তু।

!থ্যাংক’স আন্টি।”

ওদের কথার মধ্যে দোলন হাতে ট্রে নিয়ে ঢুকে। মুখে জোর পূর্বক হাসি এনে টেবিলের উপর ট্রে টা রাখে।

মিসেস খেয়া মাথায় হাত দিয়ে বলে,, কিরে কি কান্ড করেছিস তুই?

দোলন ভুলাভালা ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বলে,,আমি আবার কি করলাম?

এই সকাল বেলা ঠান্ডা ওয়েদারে আমি চা করতে বললাম আর তুই জুস আনলি? এই মেয়ে কে নিয়ে যে আমি কি করবো।

আষাঢ় দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলে,,সমস্যা নেই আন্টি।আজ না হয় ঠান্ডা ওয়েদারে জুসই ট্রাই করলাম। তারপর দোলনের দিকে তাকাতে তাকাতেই গ্লাসটা হাতে তুলে নেয়।

দোলন আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দেয়। আষাঢ় সেই হাসির মানে বুঝলো না। গ্লাসে চুমুক দিতে দিতেই দোলনের কান্ডে ব্রু কোঁচকায়।

গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে আষাঢ় কিছু সময় চুপ হয়ে যায়। একবার মিসেস খেয়ার দিকে তো একবার দোলনের দিকে তাকায়।

দোলন হাসি হাসি মুখ করে বলে,,,, কেমন লাগছে জুসটা? খুব যত্ন করে তৈরি করেছি নিজের এই হাত দিয়ে চড় দেখানোর ভঙ্গিতে বলে দোলন।

আষাঢ় কিছু বলে না এখনও দোলনের দিকেই তার দৃষ্টি।

দোলন আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আসছে। দোলনের খুব মজা লাগছে বুঝ বেটা কেমন লাগে। এই দোলনকে চ’ড় দেওয়া তাই না। দেখ এবার কতো ধানে কতো চাল।মনে মনে বলে দোলন কথাগুলো।
” কি হলো বলছেন না কেন কিছু? কতো কষ্ট করে বানালাম আমি।ভাবলাম আপনার থেকে ভালো রিভিউ পেলে একটা জুস বার খুলবো। আপনি দেখি কিছুই বলছেন না। আপনার কি ভালো লাগেনি? তাহলে কি আমার জুস বার খোলার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে?

মা’র না খেতে চাইলে এখান থেকে যা দুলি।এখানে ও তোর মজা করা লাগবে?চোখ গরম করে দোলনের দিকে তাকিয়ে এখান থেকে যেতে বলে খেয়া। দিন দিন বড় হচ্ছে আর মেয়েটার দুষ্টুমি বাড়ছে।

তারপর আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন,,কি হলো বাবা তুমি জুসটা শেষ করো।নাকি আমার ছেলে মেয়ের মতো ডায়েট ফায়েট করো।আজ-কালের ছেলে-মেয়ে গুলোও না কি যে করে ঠিক মতো না খেয়ে নাকি স্বাস্থ্য ঠিক রাখে বুঝি না কিছু। এই জুসস খেলে তোমার ডায়েট শেষ হয়ে যাবে না। আন্টির বাসায় এসেছো অন্তত জুসটা শেষ করো।

আষাঢ় না পারছে কিছু বলতে না পারছে এটা শেষ করতে। এটা জুস নাকি মরিচের গুঁড়া পানি সেটা আষাঢ় বুঝতে পারছে না।

” আন্টি আজ আমি আসি একটা কাজ আছে। ” জুসের গ্লাসটা রাখতে রাখতে বলে।

“সেকি বাবা শেষ করো এটা।”

নানা আজ আর না আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম বলে আষাঢ় সেখান থেকে পালায়।

আষাঢ় কে ওমন করে পালাতে দেখে দোলন রুমে গিয়ে হাসিতে লুটিয়ে পরে। হাসতে হাসতে দোলন তাকিয়ে দেখে সুমন ওর দিকে খেয়ে ফেলা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। দোলন ভুলেই গেছে সুমন যে সকালে দোলনের রুমে ঘুমিয়েছিলো।

সুমনের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে পালায় দোলন।

***********
এরমধ্যে অনেক দিন কেটে যায় আষাঢ় দোলনের দেখা হয় না। কিন্তু কেন জানি দোলনের মনে হয় সে যখনই বাইরে বের হয় কেউ তাকে ফলো করে। দোলন কিছুতেই বুঝতে পারছে না এটা তার মনের ভুল নাকি সত্যিই কেউ তাকে ফলো করে।
দোলনের মনে কিছুটা ভয় ঢুকে গেছে এজন্য এখন দরকার ছাড়া বাইরে ও বের হয় না। সারাদিন রুমে বসে ফোন নিয়ে পরে থাকে।

আষাঢ়ের সাথে ঐদিনের পর থেকে আবার ফোনে মেসেজে কথা হয় দোলনের। ঐদিন ব্লক খুলে জিজ্ঞেস করেছিল জুস টা কেমন হয়েছে। এমন করে মেসেজ আদান প্রদান হতে হতে এখন দিনে রাতে মনে হয় বেশির ভাগ সময়ই তারা কথা বলে।

দোলন এখন আষাঢ়ের মেসেজের অপেক্ষা করে। একটু লেইট হলে মেসেজের কেমন পাগল পাগল লাগে নিজেকে।আষাঢ় অনলাইনে থেকে যদি একটা মেসেজ দিতে দেরি হয় তাহলে দোলনের ভিতর ছটফটানি শুরু হয়ে যায়। মাথায় শুধু ঘুরে কি করছে অনলাইনে থেকে,কেন মেসেজ দিচ্ছে না আরো নানান ভাবনা।

দোলনের শুধু মন চায় দিন-রাত শুধু আষাঢ়ের সাথে কথা বলতে।আষাঢ়ের সাথে কথা বললে আর কিছু লাগে না তার।খাওয়ার কথা ও ভুলে যায় কথায় ধ্যানে পরলে। আষাঢ়ের সাথে কথা বললে দোলনের খুব সুখ সুখ লাগে। দোলনের জানা নেই এসব অনুভূতি কেন হয়। সে শুধু জানে আষাঢ়কে ছাড়া তার সাথে কথা বলা ছাড়া দোলনের দিন ভালো কাটে না।

******
আষাঢ় আগে থেকেই দোলনের জন্য কিছু একটা ফিল করতো।সেটা এখন আরো জোড়ালো হয়েছে। তার জীবনে এখন চাঁপাফুল। অন্তরে চাঁপাফুলের বসবাস। মন জুড়ে সুবাস দিয়ে যাচ্ছে তার চাঁপাফুল।

আষাঢ় ঠিক করে নিয়েছে দোলনকে সে প্রপোজ করবে। খুবই ইউনিক ভাবে মেয়েটাকে মনের কথা সে জানাবে।
বন্ধুদের সাথে প্লেন করছে কি করে কি করবে।কেমন করে প্রপোজ করলে ভালো হবে। একটু ইউনিক স্টাইলে করতে চাচ্ছে সবকিছু। এই নিয়েই ফোনে আলাপচারিতা চলছে।

অন্যদিকে মেঘ আষাঢ়ের কাছেই আসছিল পড়াশোনা নিয়ে একটু দরকার ছিলো। এখন আষাঢ় তার সাথে ভালো ব্যবহার করে। ভালো মতো তার সাথে কথা বলে। মেঘ বুঝতে পারছে হয়তো আষাঢ়ের টান তৈরি হচ্ছে তার প্রতি। আষাঢ়ের দরজার সামনে আসতেই মেঘের কানে আসে আষাঢ়ের কিছু কথা।

” দোস্ত সবকিছু ইউনিক স্টাইলে করতে হবে।সে যেনো দেখেই খুশি হয়ে যায়। তার মুখের হাসিটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশি। আমি আর একটু সময় ও দেরি করতে চাই না আমার মনের কথা তাকে বলতে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে আমার মনের কথা বলে তাকে নিজের করে তারপর আমি যাবো।”

— আষাঢ়ের কথায় মেঘ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। তারমানে আষাঢ় তাকে প্রপোজ করার পরিকল্পনা করছে? তার স্বপ্ন এতো দিনে সত্যি হতে চলেছে তাহলে।আষাঢ় কে নিজের করে পাবে ভাবতেই চোখ জোরা আনন্দে চিকচিক করে উঠে।

আষাঢ় তার কথা শেষ করে ফোনের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে। একটু পর ফোনের গ্লাসে নিজের ঠোঁটজোরা ছোঁয়ায়।

মেঘ এটা দেখে লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।

আষাঢ় ফোনটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
আষাঢ় ওয়াশরুমে ঢুকার সাথে সাথে মেঘ রুমে প্রবেশ করে। রুমে প্রবেশ করেই ফোন হাতে নিয়ে দেখতে যায় তার কোন ছবিটা আষাঢ়ের এতো পছন্দ হয়েছে যে অধর যুগল ছুঁইয়েছে তাতে।
ফোন নিয়ে মেঘ থমকে যায়। পুরো দুনিয়া তার কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে সকল আশা আকাঙ্খা ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে অন্য একটা মেয়ের ছবি।

#চলবে,,,,?