#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২৬
#Jhorna_Islam
মি.শ্রাবণ ড্রয়িং রুমে সকলকে একসাথে দেখে বেশ অবাক হয়। মাত্রই তিনি বাড়িতে ঢুকেছেন।কিছু কাগজপত্র রেখে গিয়েছিলেন এজন্য আবার বাড়িতে ফেরত আসতে হয়েছে। যদিও বা আজ আর অফিসে যাবেন না। হুট করে সকলকে একসাথে দেখে বলেন,,বাহ এখানে দেখছি সকলের মিলনমেলা চলছে।
মিসেস খেয়া দোলনকে বুকে নিয়ে কাঁদছিলেন হুট করে কারো কন্ঠ স্বর শুনে চুপ হয়ে যান। সেই কন্ঠ স্বর যেটা আজ থেকে বহু বছর আগে উনার খুব চেনা ছিলো। আজও সেই স্বর তিনি ভুলেন নি। কি করে ভুলবেন? সবকিছু কি সহজে ভুলা যায়? কিছু কিছু জিনিস যুগ যুগ পাড় হয়ে গেলেও মস্তিষ্কের ভিতর গেঁথে থাকে। চাইলেও মানসপট থেকে সরানো যায় না।
মি.শ্রাবণ কথাটা বেশ জোরেই বলেছেন যার দরুন সকলের দৃষ্টি এখন উনার দিকে।
মিসেস খেয়া ও ঘাড় ঘুরিয়ে সেই কন্ঠের মানুষটির দিকে তাকায়।
দুই জোরা চোখ যখন মিলিত হয় তখন স্তব্ধ হয়ে যায় সবকিছু। দুইজনের চোখেই অবাক বিস্ময়।
মিসেস খেয়া মি.শ্রাবণকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। আজ কতো বছর পর এই লোকটাকে দেখছে।
মি.শ্রাবণ মিসেস খেয়ার দিকে এক পল চেয়ে তাৎক্ষনিক নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় ভাবটা এমন মিসেস খেয়া উনার কাছে অপরিচিত।
মিসেস খেয়া এখনও দৃষ্টি সরাননি। উনি এখনও মি.শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আছেন।
মি.শ্রাবণ গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলেন,,,কি এমন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে, আমাকে বাদ দিয়ে?
–“তুমি ঠিক সময় এসেছো বাবা।সকলেই উপস্থিত ছিলো তুমি ছাড়া। তোমার খুব প্রয়োজন ছিলো এখানে।” আষাঢ় মি.শ্রাবনকে উদ্দেশ্য করে বলে।
তারপর কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বলে,,, ওহ তার আগে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই,,ইনি হলেন দোলনের খালামনি আর এ হলো দোলনের খালাতো ভাই সুমন।
মি.শ্রাবণ মিসেস খেয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মিসেস খেয়া এখনও উনার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। মি.শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে যায় ওমন চাহনিতে।
মিসেস খেয়ার কানে আষাঢ়ের বলা বাবা ডাকটা এখনও বাজছে। তারমানে আষাঢ় মি.শ্রাবণের ছেলে। উনি এই বিষয়ে আগে কল্পনা ও করেন নি।মাথায়ও আসেনি আষাঢ় কার ছেলে হতে পারে। আষাঢ়ের বাবার নাম শুনেও ওমন একটা পাত্তা দেয়নি।এক নাম তো কতো মানুষেরই থাকতে পারে এইভেবে।কিন্তু আজ সকল ধারণা পাল্টে গেছে।
এরমধ্যে আষাঢ়ের খালামনি আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলে,, কি এমন জরুরি তলব যে আমাদের এভাবে ডেকে পাঠিয়েছিস আষাঢ় তুই? তোর আংকেল জরুরি কাজ ছেড়ে এখানে এসেছে।
–“এতো তারাহুরো করছো কেন আন্টি? যতো সময় যাবে তোমাদের জন্যই ভালো। ”
–মানে?
–মানে জানার আগে এটা বলো তুমি নাকি খুব অসুস্থ?
–আমি আবার কখন অসুস্থ হলাম? আর অসুস্থ হলে এখানে কিভাবে এলাম? কোন পাগল দিলো তোকে এই আজগুবি খবর?
মেঘ এক কোণে দাঁড়িয়ে মাথা চাপড়াচ্ছে।সেই কখন থেকে ইশারা দিচ্ছিল মাকে কিন্তু উনি তাকালেনই না। কোনো কিছু বলতে ও পারেনি মেঘের মাকে আষাঢ় ফোন নিয়ে নিয়েছে এজন্য।
আজ হাঁটে হাঁড়ি ভাঙা যাচ্ছে।
আষাঢ় অবাক হওয়ার ভান করে বলে,,কি বলছো তুমি এসব? তোমার অবস্থা তো খুব খারাপ। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে তাইতো মেঘ দিশেহারা হয়ে আমাদের কিছু না বলে তারাতাড়ি ছুটে যাচ্ছিলো তোমার কাছে।
কিরে মেঘ বল কিছু।
মেঘ আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে।
মেঘের মা বিস্ফোরিতো নয়নে মেঘের দিকে তাকায়।
তারপর চোখ মুখ কুঁচকে মনে মনে বলে,, আহাম্মকের আহাম্মক কি কারণে আমাকে অসুস্থ বানালি।বানালি যখন আমাকে তো একবার বলতে পারতি।
মেঘ নিজের মায়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝায় এবারের মতো বাঁচিয়ে নাও মা। মিসেস রিমি ও তখন মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলছে মেঘ কেন এসব বলল।কি ঘটেছে কিছুই তিনি বুঝতে পারছে না। এই মেয়েটা কাজের কাজ কিছু করতে পারে না সব সময় একটা না একটা গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়। এতো অধৈর্য হলে চলে? এখন পরিস্থিতি ভিন্ন আগে না হয় দোলন ছিলো না আষাঢ় কে ইমোশনাল ব্লে;কমেইল করে কার্জ সিদ্ধি করা গেছে। এখনতো দোলন আছে এখন আর ইমোশন দিয়ে কাজ হবে না এখন অন্য ভাবে কায়দা বের করে সব হাসিল করতে হবে। এখন জানা নেই মেঘ কি করেছে জানলে না হয় কিছু একটা উপায় বের করে তারপর বিষয়টা আয়ত্তে আনা যেতো।
মিসেস রিমির ভাবনার মাঝেই আষাঢ় মেঘকে আবার সকলের মাঝে এসে দাঁড়াতে বলে।
মেঘ ঐখানেই রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকে এক চুল ও নড়ে না।
“কিরে মেঘ তোকে আসতে বলছি না আমি?”
নো রেসপন্স।
মেঘ??? কিছুটা চিল্লিয়ে ডাকে আষাঢ়।
মেঘ তখনও ঐভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ভিতরে তার গলা শুকিয়ে কাঠ। শরীর বারংবার ভয়ে কেঁপে উঠছে। মেঘের মস্তিষ্ক কাজ করছে না কিছু একটা বলে বিষয়টাকে সামলাতে।
আষাঢ় এইবার প্রচন্ড রেগে যায় সুমাকে চিল্লিয়ে ডাকে।
–সুমা এই সুমা এদিকে আয়।
আষাঢ়ের ডাক শুনে সুমা এক দৌড়ে আষাঢ়ের সামনে এসে উপস্থিত হয়।
“এই যে আমি।” সুমা হাত উঁচিয়ে বলে।
–আমাদের মেঘের কানে সমস্যা বুঝলি?তাই ডাক দিলেও শুনতে পায় না। সুমা তুই এক কাজ কর আমাদের মেঘ রানীর চুলের মুঠি ধরে এখানে টেনে নিয়ে আয় দাঁত কিড়মিড় করে শেষের কথাটা বলে আষাঢ়।
আষাঢ়ের এহেন কথায় সকলেই বেশ অবাক হয়ে যায়।
–আষাঢ় এইবার একটু বারাবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তোমাদের বাড়িতে বলে যে এইসব মেনে নিবো তা কিন্তু না।তোমার সাহস হয় কি করে আমার মেয়েকে এসব কিছু বলার? ভুলে যেও না মেঘের পরিচয়। মেঘের বাবা এখানে উপস্থিত। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমার সাহস দেখে।
আষাঢ় মেঘের বাবার কথায় তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,, আমি একদম ভুলে যাইনি মেঘ কে। আপনার কাছে হয়তো মেঘ আপনার রাজকন্যা কিন্তু আমার কাছে মেঘ একজন খু/নি ছাড়া আর কিছুই না।
আষাঢ়ের মা এবার বলে,,কি বলছিস কি তুই আষাঢ় তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
মি.শ্রাবণ ও এবার গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলে,,হ্যা আষাঢ় তুমি এসব কি বলছো?
–আশ্চর্য খু/নি কে খু/নিও বলতে পারবো না তোমাদের জন্য?
মেঘের মা বলে,,,কাকে খু:ন করেছে আমার মেয়ে? আমার মেয়ে তোকে ভালোবাসে তারমানে এই না তুই যখন যা বলবি যা অপমান করবি সব মেনে নিবো।
–তোমরা সকলেই জানতে চাও তো তোমাদের আদরের মেঘ রানী কে কেনো আমি খু/নি বলছি?
তাহলে শুনো,,,,চা,,,আষাঢ় চাঁপাফুল বলতে গিয়ে ও বলে না। দোলন তুমি বলো সব,,,
দোলন চোখ পিটপিট করে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,,,এ-এই ম-মেয়েটা আ-আমাকে স-সসিড়ি থেকে ধাক্কা দি-দিয়ে ফেলে দিতে চেয়েছি-ছিলো। অনেক কষ্টে দোলন কথাটুকু বলে। এই কথাটুকু বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেছে প্রায়।
দোলনের কথা শেষ হওয়ার কিছু মুহূর্ত পরেই কোনো কিছুর ঠাস ঠাস শব্দ হয়। মুহূর্তের মধ্যে মেঘ আহ্ শব্দ করে মেঝেতে পরে যায়।
সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে সুমন রাগী দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘকে সুমনই চড় মেরেছে দুইটা।
মেঘ বলেই মেঘের মা দৌড়ে মেঘের কাছে যায়। মেঘ এখনও মেঝেতে একইভাবে পরে আছে। গাল দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে।জ্বলে যাচ্ছে গাল
দুটো, সারাজীবনে মনে হয় এতো জোরে শরীরে কখনো আঘাত পায়নি মেঘ।
মেঘের লাল হয়ে যাওয়া গালের দিকে তাকিয়ে মেঘের মা আপা বলে চিল্লিয়ে উঠে।
–আপা তুমি কোনো কিছু বলছো না কেনো? সকলে মিলে প্লেন করে আমার মেয়েকে অপমান করছে। আর এই বাইরের ছেলের কি করে সাহস হয় আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলার? তোমার কি খুব ভালো লাগছে এসব দেখতে?
বোনের কথায় মিসেস রিমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আষাঢ়ের কথা শুনতে পায়,,, এখন মুখ যা বলবে ভেবে চিন্তে বলো মা। কারণ জিজ্ঞেস করো না কেন বলছি।তবে যা বলবে ভেবে বলবে।
আষাঢ়ের এহেন কথায় মিসেস রিমি স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের বলার ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলেছে।
এরমধ্যে মেঘের বাবা এক পা দুই পা করে মেঘের কাছে এগিয়ে যায়। মেঘ বাবাকে এগিয়ে আসতে দেখে শুকনো ঢুক গিলে। বাবাকে সে বড্ড ভয় পায়। মা সবকিছুতে সাপোর্ট করলেও বাবা খুব ভিন্ন।
মেঘের বাবা এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে মেঘকে উঠায়। মেঘ বুঝতে পারলো বাবা হয়তো এইবার তার সাপোর্টে।মেঘ বাবার দিকে তাকিয়ে মুখটা হাসি হাসি করে ডাকে,,,বাবা।
কয়েক মুহূর্ত পরে আবার ও বিকট শব্দ হয়।সকলে যেনো সেই শব্দে তব্দা খেয়ে যায়।
#চলবে,,,?
#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২৭
#Jhorna_Islam
মেঘের কপাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝড়ছে।সে সেইদিকে না তাকিয়ে তার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। তার মাথা কেমন আউলিয়ে গেছে। একটু পর পর দা’নবীয় চড় খেতে খেতে তার গাল দুটো অবশ হয়ে গেছে। তার বাবা যে খুব রাগী সেটা তার জানা ছিলো তবে তিনি বকাবকি করলেও কখনও গায়ে হাত তুলেন নি। আর বাবাকে বেশি সময় মেঘ কাছে পায় ও নি কারণ বাবা তার ব্যবসা নিয়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলা ঘুরে বেরিয়েছে। বাবা কে খুব কম কাছে পেয়েছে। বাবার সাথে এজন্য খুব মধুর স্মৃতি ও নেই। বাবা একটুতেই অনেক বেশি জ্ঞান দিতো যেটা মেঘের একদম পছন্দ ছিলো না। এজন্য বাবার সাথে তার দূরত্ব অনেক। বাবা একটুতে শাসন করলেও কখনো গায়ে হাত তুলেনি। এই প্রথম তিনি মেঘের শরীরে আঘাত করেছে।
মেঘ ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘের মা দৌড়ে আসে মেঘের কাছে। মেয়েটাকে কিরকম ভাবে চ’ড় দিয়ে দূরে ছিটকে ফেলে দিয়েছে লোকেটা।
মেঘের মা মেঘের মুখটা উঁচু করে ধরে গাল দেখতে গিয়ে নজর যায় কপালে। কপাল কেটে রক্ত ঝড়ছে। মেঘের মা আ বলে চিল্লিয়ে বলে,,, আপনি আমার মেয়েকে কিজন্য মেরেছেন? আপনি কি মানুষ? পুরো বিষয় না জেনে আমার মেয়েটাকে এভাবে কি করে মারলেন? মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখেন কি অবস্থা করেছেন আপনি। ওর কপাল ফেটে রক্ত ঝড়ছে।
–“আমি মানুষ কিন্তু আমি আমার মেয়েকে মানুষ করতে পারিনি। তোমার হাতে দায়িত্ব দিয়েছিলাম মেয়ের। নিজের কাজ থাকায় তোমাকে ওর সব দায়িত্ব দিয়েছিলাম।এখন মনে হচ্ছে সব থেকে বড় ভুল করেছি আমি। তোমার আশকারা পেয়ে পেয়ে মেয়ে আমার মানুষ না হয়ে একটা কুলা/ঙ্গার তৈরি হয়েছে। এই থাপ্পড়টা ওকে না মেরে তোমার গালে মা’রা দরকার ছিলো কিন্তু আফসোস তোমার গায়ে হাত তুলতে ও আমার বিবেকে বাঁধছে। মেয়ের জন্য
দরদ উতলায় পরছে না? তোমার মেয়ে মেয়ে আর অন্যের মেয়ে জলে ভাসা কচুরিপানা তাই না? এই খু/নি কে আমি আর আমার বাড়িতে জায়গা দিবো না।তুমি যদি এরে নিয়ে আমার বাড়িতে আসো তাহলে আমার বাড়ির দরজা চিরদিনের জন্য তোমার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।
আষাঢ় এই খু/নির যা করার তুমি করতে পারো।পুলিশে ও দিতে পারো আর নয়তো তুমি নিজেও শাস্তি দিতে পারো।আমার তরফ থেকে তুমি যা করবে তাতেই সম্পূর্ণ সাপোর্ট আছে।
তারপর দোলনের কাছে এগিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে হাত জোর করে অনুরোধ স্বরে বলে,,, তুমি আমার মেয়ের বয়সী। বাপ হিসেবে আমি ব্যর্থ পারলে তুমি এই হতভাগা বাপকে মাফ করে দিও মা।
দোলন মেঘের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,, আআংকেল আ-আপনারতো ককোনো দোষ নেই।
মেঘের বাবা মুচকি হেসে দোলনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
মেঘ এতক্ষন ধরে নিজের বাবার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।কপাল বেয়ে রক্ত ঝড়ছে সেইদিকে তার হুঁশ নেই। মেঘ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে। কানের মধ্যে বাবার বলা প্রতিটা শব্দ বারংবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মেঘের বাবা যাওয়ার আগে মেঘের আর তার মায়ের দিকে রাগী চোখে তাকায়।
সবকিছুর মধ্যে সকলেই এতো সময় ধরে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। সকলের দৃষ্টি যখন মেঘের বাবার চলে যাওয়ার দিকে তখন মেঘের মায়ের চিৎকারে সকলে আবার ওদের দিকে তাকায়।
মেঘ মেঝেতে বেহুশ হয়ে পরে আছে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। মিসেস রিমি দৌড়ে মেঘের কাছে গিয়ে ডাকতে থাকে। সুমা এনে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে মেঘের চোখে মুখে কিন্তু কিছুতেই তার জ্ঞান ফিরছে না।
আষাঢ় এগিয়ে আসছিল দেখার জন্য যতোই হোক নিজের খালাতো বোনতো।হয়তো নিজের ভুল এবার বুঝতে পেরে নিজেকে শুধ্রে নিবে। আষাঢ় এগিয়ে যেতে নিলে আষাঢ়ের বাবা আষাঢ় কে আঁটকে দেয়।
–আষাঢ় বাদ দাও। ওকে নিয়ে হসপিটাল যাচ্ছি। তারপর ওর একটা ব্যবস্থা করা যাবে। মেঘ এখন এখানে থাকলে আবার হয়তো নতুন কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হবে। এর থেকে ভালো হসপিটালে নিয়ে সুস্থ হলে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো।
আষাঢ় ও আর ঝামেলা চাচ্ছিলো না তাই আর বাঁধা দেয়নি। মি.শ্রাবণ প্রথম মিসেস রিমি কেও সাথে নিয়ে যেতে চায়নি তারপর কি মনে করে যেনো নিয়ে যায়। মেঘের সাথে তার মা আর আষাঢ়ের বাবা মা হসপিটালের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
****
এতো প্রেশার দোলন নিজেও নিতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পরে। শরীর খুব খারাপ লাগতে থাকে। দোলন যখন হেলেদুলে পরে যাচ্ছিল তখন শুধু মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে খালামনি আআমাকে ধ,,,কথা আর শেষ করতে পারে না। কথা শেষ করার আগেই দোলন হাত পা ছেড়ে মেঝেতে পরে যেতে নেয়। আষাঢ় দোলনকে পরে যেতে দেখে দৌড়ে আসে ধরার জন্য। আষাঢ় দোলনকে ধরার আগেই তাকে ধরে নেয় সুমন।
আষাঢ় দাঁড়িয়ে যায়। সুমন দোলনকে ধরে সোফায় শুইয়ে দেয়। সোফায় শুইয়ে সুমার দিকে তাকিয়ে বলে,,, একটু পানি এনে দেনতো। সুমা মাথা নেড়ে তারাতাড়ি পানি আনতে চলে যায়।
সুমন দোলনের কাছে বসে গাল চাপড়ে ডাকতে থাকে,,, দুলি? এই দুলি চোখ খুল।দুলি কি হয়েছে তোর? তুই না ভালো হয়ে গেলি? তাহলে আবার কি হলো তোর? দুলি শুনতে পাচ্ছিস না আমার কথা? তোর সুমন ভাই ডাকছে উঠ এই দুলি?
দোলন কোনো রেসপন্স করে না। সুমন মায়ের চোখে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,,, মা দেখো দুলি উঠছে না।
মিসেস খেয়া তখনও নিশ্চুপ। আষাঢ় একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
মিসেস খেয়া এবার সুমনকে আদেশের স্বরে বলে,,, সুমন তুমি সরো আষাঢ় কে দেখতে দাও।
সুমন মায়ের কথায় কিছু সময় চুপ থেকে বলে,,তোমার কি মনে হয় মা? দুলি আমার কথায় সাড়া দিচ্ছে না আষাঢ়ের কথায় দিবে?
–তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো সুমন আষাঢ়ের পেশা কি। আষাঢ় একজন ডক্টর। তাই বলছি তুমি সাইড দাও দেখতে দাও আষাঢ় কে।
সুমন মায়ের দিকে তাকিয়ে দোলনের হাতটা আলগোছে ছেড়ে কয়েক কদম পিছিয়ে আসে। আষাঢ় তখন এগিয়ে গিয়ে দোলনকে দেখে।
সুমন একবার আষাঢ়ের দিকে তো একবার দোলনের মুখের দিকে তাকিয়ে পিছাতে থাকে। পিছাতে পিছাতে ঘুরে চলে যেতে থাকে। মিসেস খেয়া সুমনকে চলে যেতে দেখে বলে,,কোথায় যাচ্ছিস সুমন? একটু অপেক্ষা কর দুলির জ্ঞান ফিরলে আমিও যাবো।
সুমন কোনো কথা আর শুনে না সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মিসেস খেয়া নিজের ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
আষাঢ় দোলনকে রুমে নিয়ে আসে আপাতত দোলন ঘুমোচ্ছে। আষাঢ় ঠিক করে নিয়েছে আজ দোলনের রুমেই বসে কাটিয়ে দিবে। হুট করে কোমা থেকে উঠায় শরীর খুব দূর্বল।
মিসেস খেয়া চলে গেছে সন্ধার দিকে। আষাঢ় অবশ্য পৌঁছে দিয়ে আসতে কিন্তু উনি জানান নিজেই যেতে পারবেন।
ভোর চারটা হুট করেই কিছুর শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায় দোলনের। চোখের সামনে কারো অবয়ব দেখে শুকনো ঢুক গিলে বিছানার চাদর খামচে ধরে। তোতলাতে তোতলাতে দোলন বলে,,আ,,আপনি?
দোলন আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না। খুব ভয় করছে তার। এরমধ্যে কারো বিদঘুটে শব্দে কিছু শুনে থমকে যায় দোলন।
কিরে? তোর দেখি কই মাছের জান। কতকিছু করলাম কিন্তু সেই বেঁচে গেলি।শেষ মেষ গাড়ির ধাক্কায় ও কিছু করতে পারলো না তোর? এই তুই কি জাদু জানিস নাকি? বল বল বলছিস না কেন?বলেই দোলনের গলা টিপে ধরতে যায়।
এরমধ্যে কারো পায়ের আওয়াজ শুনে লোকটা তারাতাড়ি সরে যায়।
আষাঢ় রুমে ঢুকে দেখে দোলন কেমন করছে। দোলন আস্তে আস্তে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। আষাঢ় কোনো উপায় না পেয়ে তারাতাড়ি দোলনকে ইনজেকশন পুশ করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
#চলবে,,,,?