আসক্তি২ পর্ব-২৬

0
2620

#আসক্তি২
পর্বঃ২৬
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

ভালোবাসা গোপন রাখার জিনিস নয়
ঠিকই সেটা নির্দিষ্ট মানুষের সামনেই প্রকাশ পায়, নির্দিষ্ট সময় পরে।নিজেকে যতো কঠিন করেই উপস্থাপন করা হোক না কেন ভালোবাসা তো ভালোবাসাই।একদিন ঠিকই নিজের রূপে ফিরে আসে।
পাখির দুইহাতে চেপে ধরা নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে শান।ফলাফল! শূন্য।কপোট রাগ দেখিয়েও কোন কাজ হয় না শানের।পাখি হাত চেপে রেখে কটমটে দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শানের দিকে।দুহাত চেপে রেখেই খুব সাবধানে বিছানা ছাড়ে পাখি।হাতে ঢিলে পাওয়ায় শান চলে যেতেই দুই হাত দুইদিকে সোজা করে পাখি সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“আজ যদি সবটা না জানতে পারছি, তো আমার নামও পাখি না।দরকার পরলে নিজেকে শেষ করে দিবো;বলে রাখলাম”,বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে পাখি।শান পাখির দিকে এগিয়ে চুলগুলো ডান হাতে কানের পিঠে গুঁজে মুচকি হেসে বলে,”নেক্সট টাইম এই শব্দগুলো বলো না কেমন!”,
চুপসে যায় পাখি।কারণ হাস্যোজ্বল আর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেও কথাটার ঘনত্ব বেশ গাঢ় ছিলো।শুকনো দুটো ঢোক গিলে বলে,”তাতে আপনার কি?”
শান কোন কথা না বলে ডান হাত বাড়িয়ে পাখির বাম হাতটা টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,”যখন জানতেই পারছো আমি ভালোবাসি তোমায় তখন এভাব পরীক্ষা নিও না। হুমম?আর আমার ভালোবাসার গভীরত্ব মাপতে এসো না তলিয়ে যাবে”
শানের বুকে মুখ গুঁজেই পাখি অস্ফুটস্বরে বলে,”আমি সবটা জানতে চাই।”

পাখির কথার কোন প্রতিউত্তর না করে হাত টেনে নিয়ে যায় ঘরের বাহিরে।
“কোথায় নিচ্ছেন আমায়”,হকচকিয়ে বলে পাখি।
ঠোঁটে সামান্য হাসি এলিয়ে শান জবাব দেয়,”ভয় হচ্ছে?”
যে হাসি পাখির দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়।শানের জবাবে নিজের সব বুলি যেন ফুরিয়ে যায়।হেঁটে চলে যায় সামনে তার ভালোবাসার মানুষটিকে অনুসরন করে।

ছাদের একদম মাঝ বরাবর এনে দাঁড় করায় পাখিকে।চারিদিকে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে দেখছে পাখি।কতো শত দালান মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে নির্দ্বিধায়। কোথাও ক্ষীন আলো জ্বলছে, কোথাও নিশুতি।পাখির শানের দিকে তাকিয়ে দেখে দূর আকাশের জ্বলজ্বল করা তারাটার দিকে তাকিয়ে আছে।হাতদুটো বিজ্ঞের মতো পিছনে একটার সাথে আরেকটা আটকানো।খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে তারাটা।

পাখি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেসা করে, “কি হলো এখানে কেন আনলেন?”
কোন জবাব দেয় না শান।ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।পরিবর্তন শুধু এটুকুই হয়, দৃষ্টিটা তারা থেকে সরিয়ে সামনে ফাঁকা যায়গায় নিবদ্ধ হয়।শানের বাড়ির পিছনে ছোট্ট একটা ডোবা মতোন কিছু হবে।তার ওপাড়ে আবারও বড় বড় দালানের সাড়ি।সেদিকেই অপলক চোখে চেয়ে আছে শান।পাখি আরেকটু কাছে এসে বলে,”বলবেন?”
“সে রাতে তুমি জোড় করে আমার ঘরে ঢুকেছো।আমার সাথে আমার বিছনায় থাকতে চেয়েছ”,পাখিকে অবাক করে দিয়ে বলতে শুরু করে শান।কিন্তু শানের একেকটা কথা ভীষণ লজ্জাজনক লাগছে পাখির কাছে।লজ্জার কাঁটা গুলো শরীরে ফুটছে এদিক সেদিক।অবনত মস্তিস্কে পাখি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।

শান পিছন ফিরে আবার বলে,”মজার ব্যপার কি জানো, আমায় জোড় করে কিসও করেছিলে তুমিই।”
ফট করে চোখ দুটো বুজে নেয় পাখি।এ লজ্জার থেকে কথা না শোনাই ভালো ছিলো।হরবরিয়ে বলে,”আমার আর শুনতে হবে না।আপনি নিজের কথা বলুন”
মুচকি হেসে শান বলে,”শুনতে যখন চেয়েছো তখন তো আমি আর ছাড়ছি না পাখি”
শান আবার বলতে শুরু করে,”তোমার অবস্থা এতোটাই বেগতিক হয়েছিলো যে আমার নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছিলো।খুব সাবধানে কৌশলে আমার গলায় সাপের মতো পেঁচিয়ে রাখা তোমার হাত দুটো সরিয়ে দিয়ে উঠি।তখন তুমি প্রকৃত নেশাখোরদের মতো কান্ড শুরু করলে।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।দ্রুত নিচে চলে গেলাম ফ্রিজ থেকে লেবু কেটে একগ্লাস পানি সমেত তোমার সামনে রাখলাম।তুমি সেটা স্বাবাবিকভাবে খাওয়ার মতো কোন অবস্থায় ছিলে না।বাধ্য হয়ে আমিই খাইয়ে দেই তোমায় আর তুমি রাগে পানিটা না খেয়ে কামড় বসিয়ে দাও আমার গলায়।পাখি তোমার সেদিন এতোটাই খারাপ আর শোচনীয় অবস্থা ছিলো, চাইলেই তোমার সবটা তোমার অবচেতনায় নিয়ে নিতে পারতাম।গলায় করা তোমার স্পর্শ গুলো অন্য এক নেশার জন্ম দিচ্ছিলো আমার মাঝে”

এবার পাখি আর ঠিক থাকতে পারে না। দুহাতে কান চেপে অনুরোধ করে, “আমি আর শুনতে চাই না প্লিজ।এসব!আমি?ছিহহ”
ছিহ ছিৎকারে বিড়বিড় করে পাখি।শান হেসে দিয়ে বলে,”এতো লজ্জা পেতে হবে না।বাকিটা শুনো তারপর না হয় নিজেকে গালি দিও”
শান উল্টোদিকে ফিরে বলে,”তোমার নেশা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এক প্রকার জোড় করেই লেবু পানিটা খাওয়াতে হয়।আর তারপর বিঁধিবাম!
কিছুক্ষন পর গলগল করে বমি করে দিলে আমার গায়ের উপর।যার কিছুটা তোমার শরীরেও লেগেছিলো।মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেলো আমার, এতোসব সামলাবো কি করে!দরজা খুলে চাচিকে ডাকতে যাব তখন রাখি আসে।তোমায় নাকি শ’খানিক কল দিয়েছিলো তুমি ধরো নাই।পরে বাধ্য হয়ে বাসা থেকে আবার ব্যাক করে।অবশ্য আমার জন্যে উপকারই হয়েছিলো।ওকে টেনে নিয়ে আসলাম আমার ঘরে।রাগ দেখিয়ে বলেছিলাম ‘দেখো তো এসব কি?’রাখি আমার কথার মানে বুঝতে পেরেছিলো।অপরাধিনীর মতো মাথা নিচু করে ছিলো।আমিও তেমন কিছু বললাম না।পরে ওর সহযোগীতায় তোমার ড্রেস চেঞ্জ করানো হয়।”

এতোক্ষনে লজ্জা ভুলে যায় পাখি।মাথা তুলে তাকিয়ে বলে,”তখন কোথায় ছিলেন আপনি?”
“বাহিরে”,এক শব্দে জবাব দেয় শান।
“তোমার ড্রেস খুঁজতে যেতে অনেকটা সময়ের দরকার ছিলো কিন্তু তুমি তো শরীরে একটা ড্রেসও রাখতে চাচ্ছিলে না।অগত্যা আমার একটা শার্ট বের করে রাখিকে দেই যাতে কোণমতে সেটা তোমার গায়ে জড়ায়।রাখি তোমায় একদম চেঞ্জ করে দিয়ে বাড়ি চলে যায়।আর তুমি বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলে।আমি পাতলা ব্ল্যাঙ্কেট টা তোমার কোমড় অবধি জড়িয়ে আমি পাশের ঘরে চলে আসি ঘুমানোর জন্যে।কিছুক্ষন পর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো গোঙ্গানিতে।দ্রুত উঠে এসে দেখি তুমি গোঙ্গাচ্ছো।গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তোমার।দ্রুত মোটা ব্ল্যাঙ্কেট বের করে গায়ে জড়িয়ে দেই।মাথায় পানি ঢালি পর পর কয়েক বালতি।এসব করতে করতে রাতের শেষাংশ শুরু হয়। তখন তোমার জ্বরটাও কিছুটা কমে আসে।সামনের সোফায় বসে তোমার জাগনা হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম।আর মনে মনে একটা ডিসিশন নিলাম তোমাকে একটা আতঙ্কিত সকাল উপহার দিবো।যেটা তোমার পাগলামি গুলো বন্ধ করবে চিরতরে আর সেই ভাবনা থেকেই তোমায় মিথ্যে বলা। এটা বোঝানো যে আমাদের মাঝে সবটা হয়ে গেছে।বাট অনেস্টলি, তোমার ঐ চুমু আর লাভ বাইট ছাড়া কিছুই হয় নি”,
শেষের কথাটা বেশ রসিকতার স্বরে বলে শান।

শানের প্রতি যেন ভালোবাসাটা আরো দ্বিগুন বেড়ে যায় এই ফাঁকা অম্বরের শামিয়ানার নিচে।অজানা ভালো লাগায় ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসে ফুটে ওঠে পাখির।

“নিজের ভালো লাগার কাছে প্রশ্নগুলোকে তো দাফন করলে চলবে না! আজ তো আমায় জানতেই হবে সবটা”,ভাবতেই পাখির হাসিটা মিলিয়ে যায় ঠোঁট থেকে।এরপর ঝনঝনে গলায় বলে,”সেসব না হয় বুঝলাম কিন্তু আপনার জীবনে এমন কি আছে যার জন্যে আমায় দূরে রাখছেন!এটা আমার জানতেই হবে।”
“জানতেই হবে?”,হেসে বলে শান।
“হ্যা হ্যা জানতেই হবে।”,একরোখা জবাব দিয়ে বুকের কাছে দুহাত গুঁজে পাখি শানের জবাবের প্রত্যাশা করে

“আমার জীবনে সব থেকে ভালোবাসার মানুষ ছিলো আমার জন্মদাত্রী ;আমার মা।মাকে ছাড়া একটা পা চলার সামর্থ্য আমার ছিলো না।তবে আমি বাবাকেও প্রচন্ড ভালোবাসতাম।এতো ভালোবাসার সেই মা যদি ১৬ বছর বয়সি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে ও সাত বছর বয়সি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েকে রেখে নিজের সুখের আশায় পুরোনো প্রেমিকের হাত ধরে পাড়ি জমাতে পারে বিদেশের মাটিতে, সে মা’কে আর যাই হোক কখনো ক্ষমা করা যায় না পাখি।

পুরো নারী জাতটার প্রতিচ্ছবি ছিলো আমার মা।আর তাকে ঘৃনা করা মানেই সমস্ত নারীর প্রতি বিশ্বাস, ভরসা,ভালোবাসা,সম্মান সবটাই উঠে যাওয়া।”,এটুকু বলেই থেমে যায় শান।গলাটা যেন কাঁপছে তার।সাথে সারা শরীর।অবাক হয়ে যায় পাখি। এসে শানের বাম বাহুতে হাত রাখে।নজর এদিক সেদিক করে শান জবাব দেয়,”আই’ম ওকে”

এরপর শান বলতে থাকে,”আমার বয়স যখন ষোল, তখন মা চলে যায়।আমার তখন মাধ্যমিক এক্সামের ফর্ম ফিলআপ হয়ে গেছে।বাবা নাকি অনেক কেঁদেছিলো মা কোন কথা শোনে নি।নিজের সুখের আশায় চলে গেছিলো।তখন আমাদের অবস্থা হয়ত এতোটা স্বচ্ছল ছিলো না তবে আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই আমরা ছিলাম।তখন থেকেই রাহেলা চাচি আমাদের বাড়িতে আমাদের দেখাশোনা করত।ঠিক কাজের লোক নয় কিন্তু পরিবারেরই একজন ছিলো।আর আব্দুল্লাহ্ চাচা বাবার ব্যবসায় দেখাশোনা করত। সংসারে টাকার সংকট কখনোই ছিলো না। বাবা যথা সাধ্য চেষ্টা করত আমাদের ভালো রাখতে।কিন্তু মা’র লোভী মন ভরাতে আমার অসহায় বাবার সামর্থ্য ছিলো না।

একদিন দুপুর বেলা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখি বাবা কাঁদছে। পাশে সাত বছরের ছোট বোন টিনাও বসে কাঁদছে মায়ের ছবি বুকে জড়িয়ে।আমি অজানা ভয়ের আশঙ্কায় এগিয়ে যেতেই বাবা আমায় জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।
‘তোর মা নাই রে বাবা,আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।আমায় শর্মিলাকে এনে দে শান।তোর মাকে এনে দে’বলেই হুহু স্বরে কেঁদেছিলো বাবা।কতোটা ভালোবাসলে পালিয়ে যাওয়া বউয়ের জন্যে এভাবে কাঁদতে পারে কেউ আমার জানা ছিলো না।আমিও পাথর বনে গেলাম। কতোটুকুই বা বয়স তখন।ধরে নিলাম মা আমাদের ছেড়ে পরজগৎে পাড়ি জমিয়েছে।কিছুক্ষন পরে জানতে পারি মা পালিয়েছে।লজ্জায় ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করেছিলো।একে একে চারিদিকে ছড়িয়ে গেলো কথাটা।গ্রামে থাকাটা দূর্ভিষহ হয়ে উঠলো।বিষিয়ে উঠল চারিপাশ।স্কুলে যেতে পারতাম না সবাই খিল্লি করত।লজ্জায় কয়েকবার সুইসাইডের চেষ্টাও করেছি।কিন্তু বাবা আর টিনার কথা ভেবে কিছুই করতে পারি নি আমি।আর কিছু দিন পর মাধ্যমিক পরীক্ষা। অথচ মাথায় তখন সারাদিন মায়ের স্মৃতি মনে উঠত।পড়া মাথায় রাখতে পারলাম না।ছোটবোন টা মায়ের কষ্টে শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেলো।ছোট কাকা আমেরিকা থাকত পুরো পরিবার সহ।তিনি এসে টিনাকে নিয়ে যায়

বাবাও মায়ের শোকে নেশা করে রাত বিরেতে বাড়ি ফিরত।খুব কষ্টে পরিক্ষা দিলাম।রেজাল্ট খুব একটা খারাপ হয় নি।অথচ আমি জিপিএ ৫ এর স্টুডেন্ট।পুরো গোছানো জীবনটাই মায়ের একটা সিদ্ধান্তে এলোমেলো হয়ে যায়।আস্তে আস্তে ঘৃনা জন্মালো শর্মিলা নামের ঐ মহিলার উপর।সাথে পুরো নারী সমাজের উপর।এরপর গ্রাম ছেড়ে চলে এলাম ঢাকার এই অজানা শহরে।যেখানে কেউ কাউকে চেনে না, জানে না।খুব আনন্দ না হলেও মায়ের জন্যে হওয়া বদনাম গুলো থেকে বেঁচে গেলাম।

আমাদের সাথে আব্দুল্লাহ্ চাচাও তার পরিবার সহ চলে এলো ঢাকায়।অজানা কোন এক কারণে রাহেলা চাচি আমায় ছাড়লেন না।অনেক বার বলেছিলাম আমি একা থাকতে পারব, উনি কথা শুনে নি।
ঢাকায় এসে বাবার ব্যবসার সাথে যুক্ত হলাম।স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হওয়ার; বাবারও তাই।পড়াশুনার প্রতি তখন কোন ইচ্ছেই ছিলো না।তবুও রিস্ক নিলাম।খুব কষ্টে উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার প্রস্তুতি নিলাম।পড়াশুনায় মন দিলাম।ভালো স্টুডেন্ট হওয়ায় স্যারদের নজরে এসে গেলাম তাড়াতাড়ি।গ্রামের ছোট ব্যবসাটা এখানে বেশ পাকাপোক্ত ভাবেই দাঁড় করালো বাবা।তারপর আর আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি একে একে বাড়ি হলো,গাড়ি হলো অথচ তবুও বাবা কোথাও না কোথাও মায়ের শোক কাটিয়ে উঠত পারত না।মাসের বেশীরভাগ সময় ব্যবসায়ের কাজে শহরের বাহিরে থাকতে বাবা। উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট অনেক ভালো হয়।তখন ভীষণ খুশি হয় বাবা।ভর্তি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করে ভর্তি হলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে ।শুরু হলো আমার স্বপ্নের পথে এক পা বাড়ানো।”

আর রাহেলা চাচি দেখাশোনা করলেন আমার।আব্দুল্লাহ্ চাচাকে বাড়ির কেয়ার টেকার হিসেবে রাখলেন বাবা।রাহেলা চাচির সাথে মায়ের বরাবরই যোগাযোগ হতো বাবার অগোচরেই।যেটা আমি বুঝতে পারতাম কিন্তু কখনো বাবাকে বলি নি।ঢামেকে ভর্তি হওয়ার পর মা অনেকভাবে চেষ্টা করেছিলো আমার সাথে যোগাযোগ করার। আমি করি নি। ভালো যে একেবারে বাসি না তা নয়।তবে ভালোবাসাটা ঘৃনার কাছে বড্ডো তুচ্ছ। তুমিই বলো, যে মা’র কারণে আমার ফেরেসতার মতো বাবাকে দিনের পর দিন কষ্ট করতে দেখেছি।নেশা করে পরে থাকতে দেখেছি,যে মায়ের কারনে এতো বদনাম এতো লাঞ্ছনা সহ্য করেছি সে মা কে কী করে মেনে নিই!আমার বাবা ঐ মহিলাকে অনেক ভালোবাসতো।মজার ব্যপার কি জানো পাখি?

“কী?”
“তোমার ঠোঁটের নিচে যেখানে একটা কালো তিল ঠিক সেইম জায়গায় মায়েরও একটা বড় তিল ছিলো।যেটা মায়ের সৌন্দর্য অনেক গুন বাড়িয়ে তুলত।আর আমার সবথেকে পছন্দ ছিলো মায়ের ঐ তিলটা।”

শান কিছুক্ষন থেমে বলে,”বলো এবার।কোন মেয়েকে আদৌ বিশ্বাস করা সম্ভব?যেখানে নিজের মা সন্তানের বিশ্বাস ভেঙ্গে দেয়!জানো আমার বাবা কতো কষ্ট করে দিন কাটাতেন!মা কে প্রচন্ড মিস করতেন।

“কিছু মনে না করলে একটা কথা বলব”,ছলছলে চোখে প্রশ্ন করে পাখি।
শান পাখির দিকে চেয়ে বলে,”করো”
“ইনায়াহ্’কে নিতে যে ভদ্র মহিলা এসেছিলেন তিনিই কি……..”,পাখির আধা কথায় শান ঘুরে তাকায় পাখির দিকে।কথা থেমে যায় পাখির।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান জবাব দেয়,”হ্যা,তিনিই সেই”

পাখি কিছুক্ষন সময়ের জন্যে কিছু একটা ভেবে বলে,”রাগ করবেন না একটা কথা বলি।তাকে দেখে আমার একটুও মনে হয় নি তিনি এরকম কোন কাজ করতে পারেন।বেশ ভদ্র, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আর ভাবগাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ মনে হয়েছিলো।”
“হাহাহা…বাহির দেখেই যদি সবটা বোঝা যেত তবে মুখোস বলতে কোন কথা থাকত না পাখি”,কটাক্ষ করে হেসে বলে শান।

“এটা না হয় মেয়েদেরকে ঘৃনা করার প্রথম কারণ, দ্বিতীয় কারণ কি?”,থমথমে কন্ঠে প্রশ্ন করে পাখি।

চলবে……