আসক্তি২ পর্ব-৫০

0
2031

#আসক্তি২
পর্বঃ৫০
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে গাড়িতে বসে আছে শান।সে জানে না পরমূহূর্তেই তার জন্যে কি অপেক্ষা করছে।ক্ষনকাল পরেই চোখ খুলে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এরপর ছুটে চলে মেডিকেলের রাস্তায়।

রাস্তার দুইপাশে কতো কিছু ছুটে চলেছে।ছুটে চলেছে হাজারও জীবন।মনের মাঝে হাজারও কল্পনা নিয়ে শেষমেশ এসে পৌঁছায় গন্তব্যে। গাড়ি পার্ক করে পা রাখে গাড়ির বাহিরে।শানের মনে হচ্ছে পায়ের তলার মাটিটা কাঁপছে মৃদু।পরপর কতোগুলো শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে চলে ভিতরের পথে।সম্মুখেই দেখা মেলে ডক্টর আনভীরের।পাশ কাটিয়ে যায় শান।কারণ মাথায় এখন একটাই চিন্তা চলছে, “কিভাবে সামলাবো সবটা!”
অন্যদিকে ধ্যান দেয়ার মতো মনমানসিকতা শানের নেই।

“স্যার “,ক্ষীনস্বরে ডেকে ওঠে আনভীর।
সাড়া না দিয়েই শান অদ্ভুত দৃষ্টিতে ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে তাকায়।
“ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে ”
আনভীরের কথায় মাথা উপর নিচ করে শান চলে যেতেই।আবার পিছনে ডাকে আনভীর।

“স্যার রিপোর্টটা আপনার ড্রয়ারে রেখে লক করেছি, এই যে চাবি টা”,বলেই একটা চাবি ধরিয়ে দেয় আনভীর
“এতো দেরি হলো কেন রিপোর্ট আসতে?”
“আপনিই তো বলেছিলেন স্যার ব্যপারটা যেন গোপনীয়তা আর নমনীয়তার সাথে করা হয়।বিশ্বস্ত মানুষ দ্বারা করতেই একটু দেরি হলো স্যার”
“আচ্ছা, যাও”

___________

আইসিইউ রুমের সামনে বাড়ির সকলেই অপেক্ষা করছে।টনক নড়ে শানের।ভ্রুকুচকে রনির দিকে তাকায়।এগিয়ে চাপাস্বরে কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”সবাই কেন?কেউ কি ভিতরে গেছিলো?পাখির সাথে কথা বলেছে নাকি?”
“না ভাইয়া।আমি কাউকেই ভিতরে এলাউ করিনি।টেনশন করো না”
হাঁফ ছেড়ে বাঁচে শান।সবার দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।সবার চোখে মুখেই আতঙ্কের ছাপ।কিছু জানার জন্যে উৎসুক।

শান চোখ নামিয়ে দরজায় শটান হয়ে দাঁড়ায়।এলোমেলো চুল গুলো পাঁচ আঙ্গুলে সেট করে নেয়।চশমার ফ্রেমে হাত রেখে ঠিক করে নেয়।পিছনে ঝুলে যাওয়া শার্টের কলারটা টেনে টুনে ঠিক করে নেয়।হাতের ঘড়িটা ঠিক করে শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নেয় জিহ্বা দিয়ে।শানের মনে হচ্ছে পৃথিবী যদি এখানেই থেমে যেত! তাহলে হয়ত এ দিনটার মুখোমুখি হতে হতো না।

পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখে রনি।
“তুমিই যদি এরকম করো তাহলে কেমন করে হবে ভাইয়া!তোমায় যে অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে হবে! ”
শান নিজেকে এইবার পুরোপুরি প্রস্তুত করে পাখির সামনে যাওয়ার জন্য।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে।
চট করে ফোনটা হাত নিয়ে মিছেমিছি স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে ফোন স্ক্রোল করে ইকরার উদ্দেশ্যে বলে,”ইকরা মহারানীর জ্ঞান ফিরলো তবে!এবার তুমি যাও, মহারানীর সেবায় মহারাজ হাজির”
বলেই মুখে জোড়পূর্বক মিথ্যে হাসি টেনে ইকরার দিকে তাকায় শান।বেডে শুয়ে থাকা পাখির দিকে তাকানোর মতো সাহস কেন জানে না পাচ্ছে না সে।

শঙ্কিত মুখে ইকরা কেবিন ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। শান আরো বেশি করে ফোনের দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করে। চোখের মণিটা সামান্য ঘুরিয়ে পাখির দিকে তাকাতেই বুঝতেই পারে একধ্যানে চেয়ে আছে সে উপরের দিকে।শান নিজেকে কোনমতে ধাতস্ত করে পাশে রাখা টুলটায় বসে।

“কেমন আছেন ডাক্তার সাহেব?”

বসতে বসতেই কানে আসে পাখির ভাঙ্গা কন্ঠের কথাটা।মাত্রাতিরিক্ত চিৎকারে গলার স্বর ভাঙ্গে পাখির।বসতে গিয়েও থমকে যায় শান।চাপা আর্তনাদ টা ভিতরে মাটি চাপা দিয়ে চট করে বসে পরে।তাকিয়ে দেখে পাখির দিকে।ঠিক আগের মতোই উপরের দিকে তাকিয়ে পাখি।
বাম হাতটা দুইহাতের মুঠোয় ভরে শান জবাব দেয়,”রাজা এতোক্ষন ভালো ছিলো না।এখন, এখন অনেক ভালো।কিন্তু রানী?”
হাতটা খুব সন্তোর্পনে শানের হাতের ভাঁজ থেকে বের করে আনে পাখি।ঠোঁটের কোণের কাটা দাগটা এখনও দগদগে।কপালের কাটা দাগটায় মেডিসিন লাগানো।শান মাথা তুলে একে একে সবটাই পরোখ করে পাখির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে।

মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “বললে না তো এখন কেমন লাগছে?”
পাখি মাথার উপর থেকে শানের হাতটা সরিয়ে বলে,”প্রতিটা সুন্দর জিনিসেরই একটা করে ভয়ানক দিক থাকে।দেখুন না,পৃথিবী কতো সুন্দর তবে তা এখন ভয়ানক সুন্দরে পরিনত হয়েছে”
“আচ্ছা বাদ দাও এসব।অতিরিক্ত কথা হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটা খুব ফাঁকা লাগছে তোমায় ছাড়া। আজকেই বাড়ি নিয়ে যাবো “, মজাকের স্বরে কথাটা বলে পাখির দিকে তাকায় শান।
অনুভূতিহীন চোখ দুটো তিড়তিড় করে কাঁপছে পাখির।ঠোঁট এলিয়ে স্মিত হেসে বলে,”আইসিইউ থেকে কোন রোগীটা ডিরেক্ট বাড়ি যায় ডাক্তার বাবু!”

পাখির কথায় স্তম্ভিত শান।

“কেন দেরি করলেন?আপনি না বলেছিলেন জীবনের শেষ নিঃশ্বাসের শেষ বিন্দু পর্যন্ত পাশে থাকবেন!তাহলে কেন ২.১৫ মিনিট আমার পাশে থাকলেন না।কেন একা ছাড়লেন আমায়?কেন এভাবে আপনার উপর নির্ভরশীল করে গড়ে তুললেন?আমি তো জীবনযুদ্ধে সর্বদাই একা ছিলাম।একা লড়েছি, একা চলেছি। কেন এভাবে পরনির্ভরশীল করে…… “,
বাকি কথা আর বলতে পারে না পাখি।কেমন যেন দম খাটো হয়ে আসে।

শান পাখির পুরো কথাগুলো মাথানত করে শুনে চলেছে।সে জানে এই মূহূর্তে পাখিকে থামানো সম্ভব না।কিন্তু পাখির থেমে যাওয়ায় চট করে মাথা তুলে তাকায় শান।চেয়ে দেখে, মুখে ব্যথার নীল বেদনায় বিষিয়ে উঠছে পাখি।হাতটা ধরে বলে,”আমি তোমার সব কথা শুনবো জান।সব অভিযোগ মাথা পেতে মেনে নেবো।শুধু তুমি একটু সুস্থ হও”

মূহূর্তেই চোখের পাতা বুজে নেয় পাখি।কোণ দিয়ে দুইপাশে গড়িয়ে পরে শ্রাবণধারা। শান হাত উচিয়ে মুছে দিতেই পাখি চোখ খুলে মুখ ফিরিয়ে নেয় অপরপাশে।আবারও হাতটা বের করে আনে শানের মুঠো থেকে।শান ব্যপারটা বুঝতে পেরে ভ্রুকুচকে সবটা বোঝার চেষ্টা করে।

“ওরা আমায় বাঁচিয়ে কেন রাখলো?মারলো না কেন?কি করবো বেঁচে থেকে? আমার সন্তান সে তো সেই কবেই মরে গেছে।ডাক্তার বাবু ওকে না, ওকে না আয়ান মেরেছে বুঝেছেন!কি করেছে জানেন,আমার এই যে, এই যে তলপেট এখানে না জোড়ে একটা লাত্থি দিয়েছে।”,হড়বড়িয়ে নিজের তল পেটে হাত রেখে বলে পাখি।

শানের বুকের ভিতর তোলপাড় উঠে যায় মূহূর্তেই।কারণ ঝড়টা দোরগোড়ায় এসে গেছে।

“ইনায়াহ্’র ঘরে যখন ও আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো, আমি ভাবছিলাম ও আমার ক্ষতি করবে।তাই পালানোর জন্যে পথ খুঁজছিলাম।বিছানার চারিদিকে দৌঁড়ে বেড়িয়েছি ওর থেকে বাঁচতে।ও তখন ভীষণ রেগে যায়।আমি দরজার দিকে এসে ছিটকিনিটা খুলে বের হতেই আমায় ধরতে ওড়না টা ধরে ফেলে। ছুড়ে মারে মেঝেতে।এরপর আমার না, চুলের মুঠি ধরে ফেলে।আমি ব্যথায় ককিয়ে উঠি।এরপর দেয়ালে সজোড়ে ধাক্কা মারে আমায়।ব্যথার চোট সামলাতে না পেরে পরে যাই নিচে।তখন ও দাঁতে দাঁত চেপে আবারও আমায় নিচেই কপাল ঠেকিয়ে ধাক্কা মারে।এই যে দেখেন না কপাল টা কেটে গেছে গো।এরপর মাথায় হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করে বলে,’তোর শরীরের প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ আমার নাই।দলিল টা সাইন কর আমি চলে যাব।যতো ছুটবি ততো কাঁদবি’।
আমি দলিলটা হাত বাড়িয়ে চেয়ে নেই ;বাঁচতে।দ্রুত কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে দেই।তখন ও কিড়মিড় করে বলে,’আমি সাপকে আধমরা করে ছাড়ি না’
আমি ওর কথায় আবারও উঠে ভয়ে দরজা খুলে বাহিরে চলে আসি। ও আবার আমার পিছু নেয়।তখন মনে হয়েছিলো এবার আমার জীবন বুঝি শেষ হবে।দৌঁড়ে আসি ডায়নিং এর কাছে।কাপাঁ কাপাঁ হাতে ফলের ছুড়িটা হাতে নিতেই ও খেপে যায়।দ্রুত এসে ছুড়িটা কেড়ে নিয়ে আমার দুইগালে কষিয়ে থাপ্পোর দেয়।আমি না খুউউব ব্যথা পেয়েছিলাম।কেঁদে কেঁদে কতো চিৎকার করেছি কেউ শোনে নি।এরপর জীবন বাঁচাতে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতেই ও আরো খিপ্ত হয়।আমি রান্না ঘরের দরজাটা খোলা পেয়ে ঢুকে পরি।আয়ান কতোগুলো লাত্থি দিতেই ছিটকিনি টা খুলে যায় রান্নাঘরের। এই ডাক্তার সাহেব, ও আমারে তল পেটে লাত্থি যখন দেয় তখন আমি রান্নাঘরের পিছন দেয়ালে ঐ যে লোহার স্ট্যান্ড গুলো, যেখানে হাতা খুন্তি রাখি সেখানে গিয়ে পরে যাই।শরীর টা খুব দূর্বল হয়ে চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে গেছিলো আমার। মাথার পিছনে হাত দিয়ে দেখি অনেকখানি লোহা ঢুকে যাওয়ায় মাঝে মাঝে গর্ত হয়ে গেলো।ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো। এই যে, এই যে এখানে।ডাক্তার ঐ জায়গা গুলোর চুল উঠায় দিছে না? “,মাথার পিছনে হাতরিয়ে বলে পাখি।

শান চোখ বন্ধ করে একটিবার সেই ঘটনাটা কল্পনা করতে থাকে।কাঁপতে থাকে পুরো শরীর।

“আমি যখন মাথা চেপে ধরে শরীরের ভার আর ধরে রাখতে পারছিলাম না।তখন ও আবারও আমার তলপেটে লাত্থি মেরে আমায় ফেলে দেয়।দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে খাড়া কোমড়ে পরে যাই মেঝেতে।আর তখনি, তখনি আমার ব্লিডিং শুরু হয় ডাক্তার।এই ডাক্তার সাহেব আমার বাচ্চাটা তখনি শেষ হয়ে যায় গো।নিচের দিকে একবার তাকিয়ে আয়ানের দিকে দেখতেই ও হকচকিয়ে খারাপ একটা গালি দিয়ে বলে,’তুই কি প্রেগন্যান্ট ছিলি’

আমার পুরো পৃথিবী তখন অন্ধকার হয়ে আসছিলো।মুখের সামনে আয়ানের মুখটা ঝাপসা হয়ে এলো।আধখোলা চোখ দুটো দিয়ে একনজর দেখে মাথা উপর নিচ করে বললাম ‘হ্যাহহ’

মনে হচ্ছিলো মরে যাচ্ছি।তলপেটে খামচি দিয়ে ধরলো ভিতরে।চিনচিন করে ব্যথার পরিমান বেড়ে গেলো দ্বিগুন।পুরো শরীর আমার থরথর করে কাঁপছিলো।মনে হচ্ছিলো মরে যাচ্ছি কিন্তু মরছি না।আয়ান বাচ্চার কথা শুনে ছটফট করা শুরু করলো।আর তারপর আমি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। দুচোখের কোণা দিয়ে অজস্র জোনাকিপোকা বেড়িয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আমার কান খাড়া।কানে ভেসে আসলো রনি আর রাফির গলা।ওরা গলা উচিয়ে আমায় ডাকছিলো।চোখ খুলতে পারলাম না। গলা দিয়ে কথা এলো না। কান দিয়ে সবই শুনতে পেলাম।বুঝলাম আয়ান রান্নাঘরের জানলা দিয়ে লাফ দিলো বাহিরে।”

“চুপ করো, চুপ করো পাখি।আমি আর নিতে পারছি না। এর থেকে আমাকেই মেরে ফেলো জান।আমার জীবন কেন থেমে গেলো না কাল?কেন রাস্তায় চলতি পথে মৃত্যু হলো না আমার”,বসে দুহাতে কান চেপে চোখের দুকোনা ভিজিয়ে বলে শান।

“আচ্ছা ডাক্তার সাহেব, রনি সব ঘর খুঁজলো রান্না ঘরের দরজাটা ঠেলে কেন ভিতরে তাকালো না।একটু খেয়াল করে যদি খুঁজত!আমি তো ওখানেই ছিলাম!
আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেললো, আমার দুনিয়াকে আঁধার করে দিলো।আমার সারা শরীরের দাগ লাগিয়ে দিলো।না না একদম ছোঁবেন না আমায়। আমি অপবিত্র, আমি নোংড়া”,শানের হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে বলে পাখি।

শান টুল ছেড়ে উঠে পাখির দুগালে হাত রেখে কপালে, গালে, নাকে, চোখে, মুখে, ঠোঁটে অজস্র চুমুর স্পর্শ দিতে থাকলো।ক্ষত হওয়া প্রতিটা স্থানে ঠোঁট বুলিয়ে দিতেই কান তালা মেরে যায় পাখির গগন বিদারী চিৎকারে।

“ওরা আমায় বাঁচতে দিলো না ডাক্তার সাহেব,আমার সন্তানকে বাঁচতে দিলো না।আমার সম্ভ্রমকে বাঁচতে দিলো না।আমার সুখের পৃথিবী কেড়ে নিলো ওরা।”
পাখির চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যায় মূহূর্তেই। জমে যায় আইসিইউ কেবিনের বাহিরে মানুষের ঢল।দরজা ঠেলে আনভীর ভিতরে আসতেই পাখির কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে পিছনে হাত উঠিয়ে বেড়িয়ে যেতে বলে শান।

“কিচ্ছু হয় নি তোমার।তুমি তো কোন পাপ করো নি।তাহলে এভাবে কেন কষ্ট পাচ্ছো।এভাবে চিৎকার করো না জান।তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।সদ্য অপারেশান হয়েছে গো।আমার নতুন করে গড়ে তোলা সব স্বপ্ন ভাঙ্গিয়ে দিও না।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচব, বলো না আমায়”

“আমার বেঁচে থাকার সকল কারণ মাটিতে মিশিয়ে দিলো……ওরা”,বলেই সেন্স হারিয়ে ফেলে পাখি।

শান উঠে পাখির দুগালে হাত রেখে বলে,”এইই না না না, একদম না হুহহ!কি হলো তোমার।পাখি?”
বলেই ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ক্যানুলা খুলে রাখা।শানের আর বোঝার বাকি থাকে না কে খুলেছে এটা।
দ্রুত বেডের অপর পাশে গিয়ে নতুন করে ক্যানুলা লাগাতে বার বার হাত কেঁপে ওঠে শানের।
চিল্লিয়ে বলে,”আনভীর”
দরজা ঠেলে ভিতরে হন্তদন্ত হয়ে ঢোকে আনভীর।শান হাতের ইশারায় পাখির হাত দেখায়। কিন্তু মুখে কিছুই উচ্চারন করতে পারে না।

“ওহহ শিট,স্যার কখন হলো এসব?”,বলতে বলতে দ্রুত এগিয়ে যায় সেদিকে।
শান মুখে হাত দিয়ে নজর এদিক সেদিক করে আনভীরকে বলে,”ও বাঁচবে তো আনভীর”
কথায় আছে বিপদে জ্ঞানশক্তি লোপ পায়। শানেরও তাই।আনভীর বুঝতে পারে শানের মাথা এখন পুরো হ্যাং হয়ে গেছে।ক্যানুলা দ্রুত লাগিয়ে শানের কাছে এসে হাত ধরে পাশে বসায়।
“স্যার একটু শান্ত হোন।ক্যানুলা খুলে যাওয়াতে ম্যামের কিছু হবে না স্যার।এরকম করবেন না”
“ও এতো হাইপার কেন হলো আনভীর?যখন ঘরে ঢুকলাম তখন শান্তশিষ্ট ছিলো।কথা বললো আমার সাথে।তারপর হঠাৎই ওসব কথা বলতে বলতে এতো হাইপার হয়ে গেলো…….”
“স্যার কাল তো আপনাকে বললামই ম্যামের ব্রেইনে প্রচুর আঘাত পরেছে।তার তো একটু ইফেক্ট থাকবেই।সচরাসচর এরকম কেইসে পেশেন্ট কিছুদিনের জন্যে মানসিক রোগীতে পরিনত হয় বা শর্ট টাইমের জন্যে ম্যামরি লস হয়ে যায়।ভাগ্য ভালো সেরকম কিছুই হয় নি।”

🌸🌸

চোখ জ্বলছে শানের।তবুও এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে অবচেতন পাখির দিকে।বুকের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে লম্বা দীর্ঘশ্বাস। তাকিয়ে দেখে পাখির চোখ দিয়ে পানি পরছে।পাখির হাতের উল্টোপিঠে চুমু একে দিয়ে একটু উঠে সন্তোর্পনে চোখ মুছিয়ে দেয় শান।

ফোনে কারো কল আসে।স্ক্রীনে না তাকিয়েই কলটা রিসিভ করে কানে নিয়ে ক্ষীনস্বরে বলে,”হ্যালো”
“দারোয়ান ধরা পরেছে।একটিবার থানায় আসতে পারবি?যদিও রাত এখ…”
“আমি আসছি”,কঠিন কন্ঠে জবাব দেয় শান।

চলবে….