আসক্তি২ পর্ব-৫২

0
2475

#আসক্তি২
পর্বঃ৫২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

ছেলেদের শোকে পাথর আজ সেলিনা বেগম।দিনে কয়েকবার করে জ্ঞান হারাচ্ছেন।একছেলের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই ছোট ছেলের গুম হওয়ার খবরে এক পৃথিবী সমান মূর্ছনা তার মাঝে স্পষ্ট হয়।সকাল বিকেল একা একা প্রলাপ বকেই তার সময় কাটছে যেন।
এদিকে নিজের ডান হাত, বড় ছেলে আয়ানের মৃত্যুর খবরে হার্টে এট্যাক আসে আজাদের।খুব বেশি একটা সুস্থ নন তিনি।পাপের বোঝা যেন কাঁধে এসে জেঁকে বসেছে শেষ বয়সে।আয়ানের মৃত্যুর সাত দিন পর ছোট ছেলেটার হারানোর খবর জানতে পারে আজাদ।পর পর এতো বড় ধাক্কাগুলো তিনি সহ্য করতে পারে নি।প্যারালাইজড হয়ে পরে রয়েছেন সেই ২৩ দিন থেকে।

“আম্মা, এমনে শব্দ করে কাঁদবা না একদম। তোমার ছেলেরা তোমাদের দুজনের আহ্লাদে অধঃপতে চলে গেছে।আর যার পাপের শাস্তি তারা পেয়েছে পাবেও”,রাগে গর্জন করে বলে ওঠে ইরা।

শ্বশুর বাড়ি থেকে সদ্য দুই দিন হলো বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে ইরা।ইচ্ছা ছিলো বেশ কিছুদিন থাকার, তা আর হয়ে ওঠে না।বাড়ির পরিবেশ বড্ডো বিষাক্ত লাগছে ।ভাইদের এতো পতনে তার মোটেও খারাপ লাগছে না। কারণ পাখির সাথে হওয়া সমস্ত অন্যায়ের স্বাক্ষী সে।ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে যায় আবারও শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।

“যা যা, সবাই চলে যা।আমি একা একটা মানুষই এ সংসারে পরে মরি।আল্লাহ্ আমারে উঠায় না কেন?প্যারালাইজড মানুষটার সেবা করা।সংসার সামলানো তার উপরে ছেলেগুলোরে হারানো।আল্লাহ্ আমার আয়ানরে ভালো রাখো গো মাবুদ।আর আমার রায়ানরে ফিরায়া দেও।”
দাঁত কিড়মিড় করে আবার বলে,”আমার হায় লাগুক ঐ পোড়া কপালির সংসারে।ধ্বংস হোক ওর সংসার।জ্বলে পুড়ে যাক ঐ মা*”

“খবরদার আম্মা। পাখি আপা রে আর একটাও অবিশাপ দিবা না কইলাম।নিজের পাপের শাস্তি পাইতেছো।মেয়েটার জীবনটাই তো ছাড়খাড় করেছো।আর কি বাকি রেখেছো?ওর স্বামী কপাল বড্ডো ভালো ওরে এখনো কতো ভালোবাসছে”,পিছন ফিরে এসে সেলিনার সামনে এসে দাঁত কিড়কিড় করে বলে ইরা

_____

আয়ানের মৃত্যুর ৭ দিন পর হঠাৎ গুম হয় রায়ান।সেদিন পুলিশের দৌঁড়ানি খেয়ে গা ঢাকা দেয় নিজের গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।যখন আজাদ আর আয়ান জেল থেকে বের হয় তখন সে আবারও বুক ফুলিয়ে বেড়ানো শুরু করে।কিন্তু কি হলো, কে জানে?আর খুঁজে পাওয়া যায় নি রায়ানকে।সবার ধারনা হয়ত আবারও গা ঢাকা দিয়ে আছে কোন কারণে।

এই গত একটা মাসে গ্রামে ক্ষমতার প্রভাব কমে গেছে আজাদের।কেউ আর আগের মতো মান্য করে না।পোষা কুকুরগুলো পাশ কেটেছে সেই কবেই।রায়ান যে নিখোঁজ তাতে যেন কারোর কিচ্ছু যায় আসে না।সবটাই মুখ বুজে চোখের জল ফেলে সয়ে যায় আজাদ।বিছানায় যার সকাল শুরু বিছানায় রাত।মরার মতো পরে পরে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোন ক্ষমতাই তার অবশিষ্ট নেই।

🌸🌸🌸

ঘরময় সেদিনের তার আর্তনাদ গুলো কানে ভাসে শুধু।গত একটি মাস ধরে বিছানায় শুয়ে বসে কাটিয়ে, শানের সেবা যত্নে এখন একটু সুস্থ স্বাভাবিক পাখি।যতোটা না সুস্থ তার থেকেও কয়েকগুন বেশি সুস্থতার ভান করে।যাতে শানের মন খুশি থাকে।তবে কিছুতেই এ ঘরে তার প্রাণ টেকে না।আজ উঠে সারা ঘরে একা একা কিছুক্ষন হাঁটলো পাখি।সব ঘটনা যেন জ্বলজ্বল করছে চোখের সামনে।কিছুই ভালো লাগছিলো না।জানলার কাছে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে থাকে।

“কি ব্যপার, কি দেখছো ওখানে?”,

কানে ভাসে শানের বলা কথাটা। হকচকিয়ে চমকে ফিরে তাকায় শানের দিকে।হাফ ছেড়ে বলে,”তুমি!”
শান এগিয়ে এসে হাতের ঘড়িটা, ফোন দুটো, চশমা টা খুলে সাইড টেবিলে রাখে।এরপর এগিয়ে যায় পাখির দিকে।সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বোতাম খুলে দিতে ইশারা করে।পাখি কাঁপা কাঁপা হাতে বোতামে হাত রাখতেই হাত ধরে ফেলে শান।চকিতে মাথা তুলে তাকায় পাখি।

“এখনো এতো কিসের আতঙ্ক পাখি?ডাকলাম, চমকে উঠলে!গা কাঁপছে এখনো থরথর করে।কেন পাখি?আর তো কোন ভয় থাকার কথা নয়”,আহত কন্ঠে বলে শান।
পাখি নজর নামিয়ে বলে,”আমার না এ ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না।সেদিনের কথাগুলো খুব করে চোখে ভাসছে।এতোদিন বলি নি তোমায়।কিন্তু আজ না বলে থাকতে পারলাম না ”

শান বুঝতে পারে পরিবেশ পরিবর্তন করাটা অতীব জরুরী। পাখিকে বুকের সাথে মিশিয়ে সিঁথি বরাবর চুমু এঁকে বলে,”দেখছি কি করা যায়”
কিছুক্ষন দুজনে ওভাবে থেকেই পাখি প্রশ্নাতুর চোখে বলে,”আপনি বেশ কিছুদিন ধরে কোথায় যান?তখন ফোন দিলে ফোনেও পাই না আপনাকে।অনেকক্ষন করে বন্ধ রাখেন ফোনটা।কিছু জানতে চাইলে বলেন কাজ ছিলো।আমার কিন্তু ভালো লাগে না এতো কাজ ”

শান ভ্রুকুচকে বুক থেকে পাখিকে সরিয়ে বলে, “বাড়ির সবাই আসে না তোমার ঘরে?”
“হ্যা আসে তো।সবসময়ই কেউ না কেউ আসে।আর ইনায়াহ্ তো সবসময় কাছে থাকে।তবুও আমি আপনাকে মিস করি “,ঠোঁট উল্টিয়ে অভিমানি স্বরে বলে পাখি।
শান দুষ্টু হেসে বলে,”তাই!!!!! ”
বলতে বলতে মুখ এগিয়ে আনে পাখির দিকে।লজ্জায় শানের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয় পাখি। শান তবুও গালে আলতো চুমু এঁকে দেয় জোড় করে।

বুঝতে পারে পাখি কাঁদছে।শার্ট খামচে ধরে কাঁদছে।আপনাআপনি বুকের গহীন থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে শানের।পাখির এ কান্না নতুন নয়।ত্রিশ টা দিন এভাবেই শানের ছোঁয়ায় কেঁদে ফেলেছে পাখি।যতোবারই শান ছুঁয়েছে ততোবারই উপচে পরা কান্নার ঢেউ এসে বাসা বাঁধছে চোখে।

শান বুঝতে পারে এ কান্না অনুশোচনার।এ কান্না তাকে বোঝায় অপবিত্র শরীরে পবিত্র স্পর্শের গভীরতা কতোটা। কিন্তু শানের মনে কখনোই এ ভাবনার উদয় হয় নি।
দুইহাতে চোখ মুছিয়ে বলে, “দেখি এদিকে আসো”
বিছানায় এনে বসায় পাখিকে।
“এভাবে কাঁদলে সাগরও শুকিয়ে যাবে রে ভাই!দেখো কতোগুলো দিন হয়ে গেলো। তবুও তুমি এই একটা কারণে এখনো কাঁদো।আর যখন কাঁদো সত্যি বলছি আমার নিজেকে সব থেকে অক্ষম মনে হয়।মনে হয় আমার আকাশ সম ভালোবাসা দিয়েও ঐ সামান্য একটা রাতকে ভোলাতে পারছি না।এটা আমার কতো বড় ব্যর্থতা তা কি তুমি বোঝ?”

পাখি কোন কথা ছাড়াই চোখের জল ফেলে চলেছে।শানের বেশ ভালো করেই জানা এ অসুখের ঔষধ কি।তাই তো কিছুক্ষন চুপ করে একধ্যানে পাখির দিকে তাকিয়ে থাকে।
এদিকে শানের আর কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে মাথা তুলে তাকায় পাখি।আর তখনি মুখটা দুইহাতে আঁজলা ভরে তুলে ধরে শান।কান্নাজড়িত চোখের পানিতে ভেজা পাপড়ি দুটোয় চুমু খায়।প্রতিটা চুম্বনের গভীরত্ব বুঝিয়ে দেয় পবিত্র স্পর্শ কতোটা প্রশান্তিদায়ক।ধীরে ধীরে গাঢ় হতে থাকে সে স্পর্শ।

🌸🌸

সকাল বেলা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে বালতিতে জমানো শানের গত রাতের শার্টে চোখ আটকে যায় পাখির।সচরাসচর শান আধোয়া কাপড় এতো গুছিয়ে বালতিতে রাখার মানুষ নয়।অন্তত বিয়ের পর একদিনও ওতোটা গোছালো পায় নি পাখি।কেমন যেন সুন্দর মতো কাপড়ের উপরে শার্টের পিঠটা বিছিয়ে রাখা।
মনের মাঝে খটকা লাগলেও ব্যপারটাকে মনের ভুল ভেবেই কাপড়গুলোকে মুঠোভরে হাতে নেয়।উদ্দেশ্য ওয়াশিং মেশিনে দেয়া।হাতে আঠালো কিছুর অস্তিত্বের অনুভূতি জানান দেয় মন মগজে।দ্রুত হাতের উপরের কাপড় গুলো ফেলে দেয়।একে একে সব কাপড় খুঁজতে থাকে।

চোখ আটকে যায় শার্টের বুক পকেটের কাছে ছিটেছিটি রক্তের বিন্দু দেখে।গা কাঁপা শুরু হয় পাখির।বুকে কেউ যেন বিশাল হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।সেদিন রাতে চোখের সামনে ওতো ওতো রক্ত দেখার পর সামান্য রক্তের কণিকাও পাখির কাছে ভীতিস্বরূপ।
কাঁপা কাঁপা হাতে শার্টটা হাতে তুলে নিতেই শার্টের ভিতর থেকে চট করে নিচে পরে যায় সাদা রঙ্গের স্যান্ডো গ্যাঞ্জি টা।সেটা দেখে ক্ষীন চিৎকারে দুই কদম পিছিয়ে আসে পাখি।গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় মূহূর্তেই।মুখে দুইহাত চেপে সমানে ফুঁপিয়ে কাঁদে পাখি।

নিজের সারা শরীরের কাটা, ছেড়া জায়গা গুলোতে চোখ রেখে দেখে কোথাও কোন রক্ত বের হয়েছে কিনা।কিন্তু না কোথাও তো রক্ত নেই।
“তাহলে এতো রক্ত কিসের!”,আনমনে বিড়বিড় করে পাখি।

দৌঁড়ে ছুটে যায় ঘরে।বিছানায় বসে শানের সারা শরীরে খেয়াল করে। কোথাও কোন কাটাছেড়া নেই তাহলে রক্তের উপস্থিতি কেন গ্যাঞ্জিতে।

“এই উঠো না “,ক্ষীণস্বরে শানকে ডাকে পাখি।

গত কয়দিনে পাখির যত্নে এমন অভ্যেস হয়ে গেছে যেন, পাখি সামান্য ঠোঁটের ডগা নাড়িয়ে কিছু বললেও শানের ঘুম ভেঙ্গে যাবে।

হড়বড়িয়ে উঠে বসে শান।
“কি হয়েছে পাখি?”,পাখির হাত চেপে ধরে ভয়ার্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে শান।
“তোমার গ্যাঞ্জিতে কিসের রক্ত ওগুলো”,বলতে বলতে রক্তের ছবি চোখে ভাসতেই ভিতর থেকে উল্টি আসে পাখির।দুহাতে মুখ চেপে ধরে।
শান ওর দুইবাহুতে হাত রেখে কপোট রেগে বলে,”তুমি ওসবে হাত দিয়েছো কেন?”
পাখি কোন প্রতিউত্তর না করে মুখ চেপেই শানের দিকে তাকায়।শান পাখির মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে আমতাআমতা করে বলে,”ওসব রং রে বোকা।কাল মেডিকেল রং করিয়ে নিয়েছি তো”
“রং?”
“হুমম রং।এতো ভয় পেতে হবে না।আর ওসবে হাত দিও না।আমি ধুয়ে দিয়ে মেডিকেল যাবো”

পাখির ততোক্ষনে কান্না থেমে যায়।কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে।গলার কাছে মুখটা ঠেকিয়ে বলে,”আজ না গেলে হয় না!”

থমকে যায় শান।মনে পড়ে সে দিনটার কথা।সেদিন সকালেও একই কথা বলেছিলো পাখি।শান রাখে নি।আর তার পরিমান এতো বড় ক্ষতি।শান ফোন হাতরিয়ে কল করে আনভীরের কাছে।
“আজ একটু সামলে নিও আনভীর।আমি সময় পেলে বিকেলে একবার যাবো ”
“ওকে স্যার, নো প্রবলেম”

🌸🌸🌸

“একটু পানি,একটু পানি দাও কেউ।এক ফোটা পানি দেও আমায়”,ক্লান্ত, শ্রান্ত, রক্তাক্ত শরীরে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বলে রায়ান।

হাত পা খাটের চারদিকে ছড়িয়ে লোহার শিকলে বাঁধানো।দীর্ঘ একমাসের বাঁধনে একটি বারের জন্য সে শিকল থেকে মুক্তি পায় নি রায়ান।শিকলে বাঁধানো প্রতিটা হাতের কব্জি ও পায়ের গিড়ায় গিড়ায় ঘা হয়ে গেছে।লোহার ঘর্ষনে সে ঘা যেন মূহূর্তে মূহূর্তে দগদগে হয়ে উঠছে।

সেই দীর্ঘ তিন ঘন্টা একটা ফোঁটা পানির জন্যে তড়পাচ্ছে রায়ান। তৃষ্ণার্ত কুকুরের ন্যায় জিহ্বা একহাত নেমে এসেছে।তবুও উপস্থিত কারোরই একটু দয়া হচ্ছে না।সামনে শটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার দুটো মানুষ।যাদের একজনও কোন দেশী মানুষ নয়।

চোখ বন্ধ করে চোখের দুই কোণ দিয়ে ছেড়ে দেয় অজস্র চোখের পানি।ভাবতে থাকে সেদিনের কথা।

_______

সেদিন রনি রাফিরা অনেক খুঁজেও পায় না পাখিকে।এরপর হতাশ হয়ে চলে যায় তারা।সবই বুঝতে পারে পাখি কিন্তু কিছুই মুখ ফুটে বলতে পারে না।সেন্স হারিয়ে ফেলে পরপরই।নিজেতে ফিরে আসে কোন পিশাচের হাতের জঘন্য স্পর্শে।ব্যথার স্থানগুলোয় আরো বেশি ব্যথা দিচ্ছে লোকটা।চোখদুটো তখনো বুজে আছে পাখি।শক্তি হচ্ছে না লোকটাকে দেখার।গলা ছেড়ে কাঁদতেও পারছে না।কোমড়ের নিচ থেকে পুরো অংশ জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে প্রতিটা মূহূর্তে।দূর্বল শরীরের সমস্ত মনোবল দিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে নিজের এতো কাছে আবিষ্কার কারে রায়ানকে।দাঁতে দাঁত চিপে দুহাতে বুকে ধাক্কা দেয় পাখি।এতে আরো হিংস্র হয়ে ওঠে রায়ান।জীবন যেন যায় যায় তার।

এরপর অপূরণীয় ক্ষতিটা সম্পাদন করে রায়ান। আরো দুই তিন ঘা বসিয়ে দেয় পাখির ক্ষত বিক্ষত হওয়া প্রতিটা স্থানে।পাখির চিৎকারের গতিতে বেড়ে যায় রায়ানের পাশবিক নির্যাতন।প্রতিটা চিৎকারই যেন রায়ানকে এনে দেয় পৈশাচিক সুখ।।এরপর দ্বিতীয় দফায় সজোড়ে চিল্লিয়ে প্রাণ সপে দেয় রায়ানের কাছে।

রক্তে রঞ্জিত পাখির অবচেতন দেহটাকে টেনে হিঁচড়ে কিচেন কেবিনেটে ঢুকিয়ে রাখে রায়ান।এরপর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্তে মাখা পুরো শরীর।ঘৃনায় নাক কুচকে রান্নাঘরের পানির খোঁজ করে রায়ান।যতোই রাত হোক কারো না কারো নজরে ঠিকই এই রক্তের চিহ্ন পড়বেই।পুরো রক্ত শরীর থেকে ধুয়ে দ্রুত বেড়িয়ে যায়।
সালামের সাথে কথা শেষ করে বাড়ির একদম বাহিরে চলে আসে।কিছুদূর এগোতেই বুঝতে পারে আয়ান কতোগুলো পুলিশের সাথে দাঁড়িয়ে ছবি উঠাচ্ছে।পাশে তার বাবাও রয়েছে।শুকনো ঢোকে গলা ভিজিয়ে পিছন পথেই দৌঁড়ে অন্য গলিতে ঢুকে পরে রায়ান।এরপর সে রাতেই চলে আসে সিলেটে।

দুইদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকে সীমান্তবর্তী এক জেলে বাড়িতে।স্ববাবতই প্রভাবপ্রতিপত্তি একটু বেশিই হওয়ায় রায়ানের খারাপ স্বভাব জেনেও জেলে তাকে বের করে দিতে পারে নি।এরপর একদিন জেলে বাড়িতে না থাকার সুযোগে নষ্ট করে দেয় তার একমাত্র আদরের ষোড়শী মেয়েটার জীবন।মাথা উচু করেই ছাউনি ছেড়ে চলে আসে রায়ান।খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তার বাবা ভাই ছাড়া পেয়েছে।আর ঠেকায় কে?আসমান যেন হাতের মুঠোয়।রায়ান বুক ফুলিয়ে চলে আসে বাড়িতে।বাড়িতে যাওয়ার পরদিনই সকালে খবর আসে আয়ানের নির্মম মৃত্যু।তাতেও ক্ষান্ত হয় নি রায়ান।নিজেকে তখন রাজ্যের একচ্ছত্র মালিক হিসেব জাহির করা শুরু করলো।ভাই মরার দিন বিকেলেই হ্যাং আউটের জন্যে বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পরে চা বাগানের দিকে।

সিগারেটের ধোঁয়া ছড়িয়ে সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় চোখ পরে চা বাগানের বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসা এক নারী অবয়বের দিকে।সিগারেটা পায়ে পিষে এগিয়ে চলে সেদিকেই।যতোই এগোয় অবয়বটা ততোই বাগানের ভিতরে ঢোকে।একটু দূরে এসে চারিদিকে তাকাতেই রায়ানের খেয়াল হয় রাত নেমে গেছে।ঘুটঘুটে আঁধারে ঢেকে গেছে চারপাশে।কিন্তু সে এখন বিশালাকার বাগানটার মাঝখানে।দুইপাশে পাহাড়।রাস্তার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।এরপর চোখ দুটোর উপর চলে আসে কালো কাপড়ের পুরু আস্তরন।নাকে একটা শ্বাস নিতেই দুনিয়া ভুলে যায় রায়ান।নেতিয়ে পরে ঘৃন্য শরীরটা।

চলবে…..