#আয়নামতী
#পর্ব_৩১
#পুষ্পিতা_প্রিমা
ফজরের নামাজ পড়ে আয়না ঘর থেকে বের হলো। উদ্দেশ্য নিচে যাওয়া। বাগান দেখবে। কিন্তু দোতলার সিড়ি বেয়ে নিচ ঘরে নামতেই অদ্ভুত এক আওয়াজ ভেসে এল কোথা থেকে। উমউম কারো গলার আওয়াজ। যেন কে কারো মুখ চেপে ধরেছে। দোয়া দরূদ পড়ে নিল আয়না। শাড়ির আঁচলটা টেনে ভালো করে মাথায় দিল। এদিকসেদিক তাকাতেই আওয়াজটা আর ও ভারী হতে লাগলো। আয়না আবার দোতলায় উঠে গেল। কোন ঘর থেকে এই আওয়াজ আসছে? আয়না ভয়ে ভয়ে পা বাড়ালো। কেউ বোধহয় বিপদে পড়েছে। কাউকে তো দেখা ও যাচ্ছে না। এখনো ভালো করে ভোরের আলো ফুটেনি। অনুরাগকে ঠেলেঠুলে মসজিদে পাঠিয়ে দিয়েছে আয়না। লোকটা ইদানীং ভীষণ পাজি হয়েছে। মাঝরাত অব্দি ফোন গুতাগুতি করবে, হ্যালো, ট্যালো করবে। তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠতে চাইবে না। কত নাম গায় তার মা দাদী। তাদের ছেলে, নাতি নামাজ পড়া ছাড়া ভাত মুখে নেয় না। আগে তো সব ঠিকঠাক ছিল। এখন কি হলো? লোকে শুনলে কি বলবে? বলবে বিয়া করার পর নামাজ পড়ায় আলসেমি এসে গেছে। পিটিয়ে পিটিয়ে মসজিদে পাঠাবে আয়না। তার উপর কোনোরকমে অপবাদ আসতে দেবে না সে। কি পেয়েছে ওই লোকটা?
এলোমেলো ভাবনার সুঁতো ছিড়লো বেশ অনেক পথ আসার পর। এই বাড়িটা সত্যিই অদ্ভুত। আওয়াজ আর ও ঘন হয়ে এল। আয়না। কালো কাঠের একটি দরজা দেখতে পেল। অন্য ঘরের দরজাগুলো বাদামী রঙের। এটির রঙ কালো কেন? আয়না হেঁটে গেল সেদিকে। আওয়াজ এই ঘর থেকেই আসছে। কিছু নড়াচড়ার আওয়াজ। মনের ভুল ও হতে পারে।
কারো গর্জনে বুক কেঁপে উঠলো আয়নার। মনে পড়ে গেল বুড়িটার কথা। পেছনে ফিরলো সে ভয়ার্ত চোখে। বুক কাঁপছে। হাত পা ঠান্ডা হওয়ার মতো অবস্থা। সাদা শাড়ি আর সাদা চুল। অথচ মুখটা বিচ্ছিরি রকমের কালো এবং কুৎসিত। মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে এরকম সেজেছে বুড়িটা। কালকের চাইতে ও আজকে ভীষণ ভয়ংকর দেখাচ্ছে বুড়িটাকে।
আয়না মনে সাহস আনলো। শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলার আগেই ভেসে আসলো
‘ কি চাই ওখানে? তুমি ওখানে কি করছ মেয়ে?
‘ আমি? আমি আসলে?
‘ কি আসলে আসলে করছ? সোজা ঘরে যাও। এদিকে আরেকবার দেখলে হাত পা কেটে ঘরে বসিয়ে রাখব।
এত বড় ধমক শুনে আয়নার চোখ ছলছল করে উঠলো। নীরব হয়ে তাকিয়ে রইলো সে। এক পা ও নড়লো না।
বুড়িটার চোখ স্বাভাবিকের চাইতে বড় হলো। আয়না বুড়িটাকে আগাগোড়া দেখল। লাঠি ধরলে ও এখনো অনেক তরতাজা বুড়িটা। মনে হচ্ছেনা লাঠিতে ভর দিয়ে চলতে হচ্ছে বুড়িকে। তবে বুড়ির চোখের দিকে চোখ ফেলতেই দুপা পিছিয়ে গেল আয়না। চোখ বড় বড় করে হিংস্র দৃষ্টিতে বুড়ি তাকিয়ে রয়েছে তারদিকে। আয়না আর ও কয়েক পা পিছিয়ে গেল। বুড়ি এগিয়ে আসতেই আয়না দৌড় লাগালো। এক পা ও এগোতে পারলো না। খেয়ালই ছিল না তার পেছনে দেয়াল। কপালে আঘাত পেয়ে সেখানেই ছিটকে পড়লো। উপর থেকে নিচে মেঝেতে পড়ে যাওয়ায় সাথেসাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল আয়না । বুুড়িটা হায়হায় করে উঠলো। কপাল অব্দি থাকা শাড়ির আঁচলটা নাক অব্ধি টেনে নিয়ে হাঁটা ধরলো অনুরাগের ঘরের দিকে। বউ রেখে এই পোলা গেল কই?
_________________
নামাজ পড়ে এসে অনুরাগ তার ঘরের বাইরে কয়েকজন পুরুষ মহিলাকে দেখতে পেল। তাদের পেছনে গিয়ে বলল
‘ কি সমস্যা। ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কেন?
ভয়ার্ত চোখে তাকালো লোকগুলো। মহিলাগুলো মুখ ঢাকা পড়েছে ওড়নার আঁচলের নিচে। বজ্রগম্ভীর স্বরে অনুরাগ বলল
‘ আরেহ কি হয়েছে? আয়নামতী কোথায়? ওর কিছু,,,
উৎকন্ঠিত শোনা গেল কথাগুলো। সরতে না বলেই এগিয়ে গেল অনুরাগ। সরে পড়লো সবাই। দেখলো আয়না বিছানায় শায়িত। চোখের নিচে কালো দাগ জমে গেছে এই অল্পসময়ে। পাশে বসা দুজন মহিলা। বুড়ি মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা দেখা যাচ্ছেনা ভালো করে। অনুরাগ এগিয়ে গেল। সে বেরোনোর সময় ও তো আয়নামতী ঠিক ছিল। একদম সুস্থ সবল। এখন হঠাৎ করে কি হলো? অনুরাগ আসতেই মহিলা দুজন সরে গেল। অনুরাগ পাশে বসে মুখটা ধরে ফিরাতেই ভড়কে গেল কপালে চোখ পড়তেই। আলতোহাতে ফুলে রক্তজমাট বেঁধে থাকা কপালটাতে হাত ছুঁয়ে বলল
‘ এসব কি করে হলো? তোমরা কোথায় ছিলে সবাই? কি করে হলো?
‘ সাহেব আমরা তো ঘুম থেকে মাত্রই উঠলাম। বুড়িমার চেঁচামেচি শুনে গিয়ে দেখলাম বৌরাণি মেঝেতে পড়ে আছে অজ্ঞান হয়ে।
রাগান্বিত চোখে বুড়িটার দিকে তাকালো অনুরাগ। বুড়ি ঘোমটার আড়ালে থেকে বলল
‘ বাছা তোমার বউটারে আগে ডাক্তার দেখাও। বেশি আঘাত পেয়েছে বেচারি। বললাম এভাবে দৌড়াইও না। শুনল না মাইয়্যাটা। আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?
অনুরাগ বলল
‘ ও আপনাকে ভয় পায় যখন আপনি ওর সামনে না পড়লেই তো হয়। কাল রাতে খাবার টেবিলে ও ও খেতে যায়নি আপনার জন্য। চিনতে, মিশতে তো সময় লাগবে।
‘ তুমি আমার উপর পড়ে দেখাও বাছা। আগে বউ বাঁচাও।
অনুরাগ পাঁজা খোলা করে তুলে নিল আয়নাকে। বলল
‘ ড্রাইভারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলো কেউ। সোজা ডাক্তার বাড়ি যাব। তাড়াতাড়ি।
ড্রাইভার তাড়াতাড়ি ছুটে এল। গাড়ি ছাড়লো দ্রুত। অনুরাগের পরিচিত ডাক্তার বাড়ি পৌঁছে গেল অতিশীঘ্রই। পরিচিতির সুবিধার্থে ডাক্তার তাড়াতাড়ির ব্যাথার ইনজেকশন পিশ করে জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করলো আয়নার। অনুরাগকে বলল
‘ মারাত্মকভাবে ফুলে গিয়েছে। রক্ত জমাই বেঁধে গিয়েছে। ফেটে রক্ত পড়ে গেলে আর ও ভালো হতো।
অনুরাগ উদ্বিগ্ন গলায় বলল
‘ এখন? পড়ে কি কোনো মারাত্মক ক্ষতি হবে?
‘ রক্ত জমাই বাঁধার স্থানে থেকে জমাট রক্ত সরিয়ে ফেলার জন্য ঔষধ দেব। চিন্তা নেই। তবে সাড়তে একটু সময় লাগবে। এই আর কি।
আয়না চোখ খুললো প্রায় আর ও দশ বারো মিনিট পরে। ব্যাথার কারণে চোখ ও ভালো করে খুলতে পারলো না। অনুরাগ গিয়ে ধরলো তাকে। বলল
‘ আয়নামতী তুমি কি হাঁটতে পারবে? নাকি আমি,,
আয়না নিজেকে সরিয়ে নিল। মিনমিনে গলায় বলল
‘ দরকার নেই আপনাকে।
ডাক্তার হেসে ফেলল। ছোট্ট করে বলল
‘ রাগ করেছে আপনার মিসেস।
অনুরাগ বিড়বিড় করে বলল
‘ সে তো আজন্ম রাগ আমার উপর।
_______
গাড়িতে চেপে বসতেই অনুরাগ বলল
‘ বলেছিলাম আমি না আসা অব্ধি ঘর থেকে বের না হতে। বলিনি? আমার কথা শুনোনি কেন?
আয়নার চোখ ব্যাথায় ভেজা এমনিতে। তার উপর অনুরাগের ধমকাধমকি। বুড়ির কথা বললেও বিশ্বাস করবে না। আয়না শুধু বলল
‘ আমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে এনেছেন। আমি বুঝতে পারছি। আপনার তো কিচ্ছু হবেনা আমি মরে গেলে। দু-একদিন আফসোস থাকবে তারপর নেচেনেচে আবার বিয়ে করতে যাবেন আরেকটা। সুন্দর দেখে, লম্বা দেখে, দশ লাখ টাকা পণ নিয়ে। ক্ষতি সব আমার পরিবারের হবে আমার স্বপ্ন গুলো স্বপ্নই থেকে যাবে।
‘ কষ্ট হচ্ছে তারপর ও এত কথা বলতে যাচ্ছ কেন আমি বুঝতে পারছিনা আয়নামতী।
‘ আমার কষ্ট হচ্ছে আপনাকে বলেছি আমি? এত বেশি বুঝতে যান কেন?
‘ আমি বুঝতে পারি।
‘ সেজন্যই ওই জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছেন আবার।
‘ চলে যাব শীঘ্রই। তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে মা বকবে আমায়।
‘ আপনার কাজ তো কিছুই হলো না। পরে তো আমার দোষই দিবেন। আমার জন্য সব শেষ, হ্যানত্যান।
কপালে হাত দিল আয়না।
‘ বারবার করে বলছি কথা না বলতে। কতটুকু আঘাত পেলে মানুষ অত সময় ধরে অজ্ঞান থাকে। কাজের গুলি মার।
‘ রাগগুলো তো আমার উপরেই দেখাচ্ছেন। বুঝতে পারছি আমি। সহানুভূতি দেখাবেন না আমায়। আমার সহ্য হয়না দয়া, সহানুভূতি।
‘ আমার সবকিছুই তোমার দয়া আর সহানুভূতি মনে হয়। ভালো চোখে দেখেছটা কি? আমার দোষগুলোই তোমার চোখে পড়ে। শালা আমি ও বেকুব। এসব ভীতুটিতু নিয়ে এইখানে উঠেছি।
কপালে হাত চেপে গাড়ির সিটে হেলান দিল আয়না। গাড়ি একটু উপরনিচ হওয়ায় লাগলো কপালে। উহ শব্দ করে উঠলো। অনুরাগ দাঁত চেপে বলল
‘ বলেছি এদিকে আসতে।
‘ যাব না।
______________
বাড়িটাতে ফিরতেই আবার বুড়ি মুখোমুখি আয়নার। তবে বুড়ির মুখটা ঢাকা। আয়না অনুরাগের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনুরাগ বলল
‘ সবটা তোমার মনের ভয় আয়নামতী। কিচ্ছু হবে না। আমি আজকেই গ্রামে ফিরব।
‘ আমি ফিরব না।
‘ আগে ঘরে চলো।
বুড়ি বলল,
‘ বাছা তোমার বউ কি খাবে বলল ডাক্তার?
‘ চাপ দিয়ে খেতে হয় এমন খাবার দিবেন না। নরম খাবার দিবেন।
‘ ঠিক আছে।
আয়নার হাত ধরে নিয়ে গেল অনুরাগ। যেতে যেতে আয়না বলল
‘ আপনি আমার হাত ধরেন কেন হুটহাট? আমি আপনাকে এখনো মানতে পারিনি। ভাববেন না সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
অনুরাগ তাকালো না। হাতটা ছেড়ে দেওয়ায় ঝড়ে পড়লো। তারপর গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল৷ পায়ের আওয়াজে রাগের আভাস স্পষ্ট। আয়না আর এগোলো না। শরীর খারাপ লাগছে। তবে টেরই হলো না বুড়ি এসে দাঁড়িয়েছে তার পেছনে।
____________
দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরপরই নিচের ঘরে অনেকগুলো লোকজনের গলার আওয়াজ শোনা গেল। অনুরাগের সাথে কথা বলতে এসেছে। আয়না তাই নিচে গেল না৷ সকালে যে ঘরটার দিকে গিয়েছিল সেদিকেই পা বাড়ালো। প্রফেসর এখন বাড়িতে আছে। সমস্যা নেই। বুড়িকে ও কোথাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা৷ আয়না দ্রুত পা বাড়ালো। ঘরটার সামনো গিয়ে মৃদুস্বরে আওয়াজ করে ডাকল
‘ কেউ আছেন ওখানে?
সাথে সাথে কিছু অচেনা শব্দ বের হলো। নড়াচড়ার শব্দ পাওয়া গেল। মাথা ব্যাথা বেড়ে গেল আয়নার। দেখলো দরজায় তালা দেওয়া। বেশ পুরোনো একটি তালা ঝুলছে। দুইজন মহিলা এসে দাঁড়ালো আয়নার পেছনে। আয়না পিছু ফিরে তাদের দেখে ভড়কে গেল।
‘ কি খুঁজছেন আপনি?
আয়না আমতাআমতা করে বলল
‘ চাবি। এই ঘরের চাবি।
মহিলা দুটো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আয়না আর কিছুদূর চোখ দিতেই বুড়িকে দেখতে পেল। অনুরাগের সামনে একদম নাক অব্ধি ঘোমটা টেনে রাখে এরা। আয়না বলল
‘ আমাকে এই ঘরের চাবি দিন।
‘ চাবি নেই।
গর্জন ভেসে এল। একজন বৃদ্ধার গলার আওয়াজ এত ঠনঠনে? আয়না বলল
‘ আমি প্রফেসরকে ডেকে আনছি। এই ঘরের দরজা আমি খুলবই। কি লুকিয়ে রেখেছেন এখানে?
‘ শোনো মেয়ে এই বাড়ির সবকিছু জানবে এমন কোনো কথা নেই। এটা তোমার স্বামীর বাড়ি নয়।
‘ বাড়ি হবে। এই বাড়ি ওনি কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আর বাড়ির মালিক বিগত তিনবছর ধরে ইন্ডিয়ায় বসবাসরত। এখানে তেমন কিছু থাকার কথা নয়। আপনি তো ওনার সামনে আমার সাথে শক্ত গলায় কথা বলেন না।
বুড়ি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আয়না শুকনো ঢোক গিললো। তারপর দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল ঘরে। অনুরাগ তখনি ঘরে এল। আয়না বলল
‘ ওই কালো দরজার ঘরের চাবিটা আমায় এনে দিন।
অনুরাগ গেল। আর বুড়ির কাছ থেকে চাবিটা এনে দিল। আয়না চাবি পেয়ে খুশি হলো।
অনুরাগ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল
‘ আমাকে বেরোতে হবে। আমার সাথে চাইলেই যেতে পারে। নাহলে এখানে থাকতে হবে।
‘ যাব না কোথাও। ভয় পাইনা আমি।
‘ ঠিক আছে। না বললে তো আবার আমারি দোষ। আমি রাতেই ফিরব।
‘ আমি আপনার ফেরার অপেক্ষায় থাকি না।
‘ ভুলে গিয়েছি। দুঃখিত।
বলেই চলে গেল অনুরাগ। আর যেতে যেতে ভাবলো, এমন একটা দিন আসুক যেদিন আয়নামতী তার জন্য খুব অপেক্ষায় থাকবে, আর সে সেদিন ভুলে ও ফিরবে না। দিনটা হয়ত তার দেখার সুযোগ হবেনা কিন্তু আসুক এমন একটা দিন। খুব ভয়ংকর ভাবে আয়নামতী অনুভব করুক তার অনুপস্থিতি।
আয়না অনুরাগের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ধুর আমি ওভাবে বলতে চাইনি।
অনুরাগ যেতেই আয়না চাবি নিয়ে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। দৌড়ে উপস্থিত হলো ওই ঘরের সামনে। দুইজন মহিলাকে চুপিসারে ডেকে বলল
‘ বুড়ি আসলে বলবেন আমাকে।
মহিলা দুটো আওয়াজ করলো না। আয়না চাবি লাগালো তালায়। বেশ খানিকক্ষন মোচড়ামুচড়ি করার পর যখন তালা খোলার সময় হয়ে এল তখনি চোখে অন্ধকার নামলো আয়নার। মাথার পেছনে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ঢলে পড়লো আয়না। বুড়ি এসে লাঠি দিয়ে আয়নাকে ঠেলল। অতঃপর সবাইকে ডেকে বলল
‘ এই মেয়ের এমন হাল কর যেন ওই চৌধুরীর ঢাল না হতে পারে। এই মেয়ে সবকিছুতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাড়াতাড়ি কর নাহলে মরবি।
একজন মহিলা বলে উঠলো
‘ সগিরের উপর দিয়ে ফেলেন। ও সামলাবে।
বুড়ি বলল
‘ না না ওগুলো দিয়ে কোনো কাম হবে না। ওসব করার সময় নেই। ওই চৌধুরী টের পেলে জীবন্ত কবর দেবে। হাত পা ভেঙে যায় এমন কিছু কর। যাতে হাঁটতে না পারে, হাত নড়াতে না পারে।
মহিলা দুটো বলল
‘ বাড়িতো তো আমরা ছাড়া কেউ নেই। দোতলার সিঁড়ি থেকে লাতি মেরে ফেলে দিই?
‘ তাই কর।
__________
ভয় যখন পায় তখন একা ফেলে আসলি কেন? ওকে গ্রামের বাড়ি রেখে না হয় রেখল আসতি।
‘ যাবে না বলেছে রাশেদ ভাই। ত্যাড়া ওই মেয়ে।
‘ তোর ওভাবে একা রেখে আসা উচিত হয়নি। ছোট মেয়ে এখনো। ওখানে কাউকে চেনেনা, জানেনা।
‘ ওরা সবাই আমার বিশ্বস্ত লোক। আমি যতবারই এখানে আসি ততবারই এই বাড়িতে উঠেছি। মা ও কতবার থেকে গেছে। বুড়িমা খুব ভালো মানুষ। আমি সবাইকেই চিনি।
‘ তারপরও।
‘ তুই মিটিংটা শান্তিতে সাড়তে পারবি? পারলে যাহ।
রাশেদের কথায় চিন্তা আরও বাড়লো অনুরাগের। বলল
‘ আমি একবার বাড়ির ফোনে ফোন লাগায়।
‘ কর।
অনুরাগ ফোন দিল। কয়েকবা রিং হলেও কেউ ধরলো না। শেষমেশ বুড়ি ধরলো।
‘ আয়নামতী কোথায় বুড়িমা?
‘ তোমার বউ ঘুমাইতেছে বাছা।
‘ আচ্ছা একটু দেখে রাখবেন।
‘ আচ্ছা। চিন্তার কিছু নেই।
তারপরও চিন্তা কমলো না অনুরাগের। দু’ঘন্টার বৈঠক আধঘন্টায় শেষ করে ফেলল। তারপর পরই রওনা দিল। তবে বাড়ি ফিরতেই দোতলার সিঁড়ির নিচে শাড়ি পড়া একটি রমণীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখলো সে। আশেপাশে অনেকেই দাঁড়ানো।
পা দুটো যেন মুহূর্তেই অচল হয়ে পড়লো অনুরাগের । টলমলে পায়ে হেঁটে গেল সে। বসে নিজের বাহুডোরে তুলে নিল আয়নাকে। গাল ছুঁয়ে কোমল স্বরে ডাকল
‘ আয়নামতী? তুমি আমার সাথে এইবার বেশি অন্যায় করে ফেলছ। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। চোখ খোলো। আয়নামতী?
বাকিরা সবাই ছুটে এল দলেদলে। বলল
‘ আমাদের কথা না শুনেই দৌড়ে নামছিল। পড়ে গিয়েছে সাহেব। বৌরাণির এমনিতেও মাথায় চোট পেয়েছিল। মাথা ঘুরেছিল হয়ত। কারো কথা শোনেনা আপনার বউ।
অনুরাগ বলল
‘ ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। হাত পা ভীষণ ঠান্ডা। আমি আসি, খুন করে ফেলব সবাইকে।
ড্রাইভারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অনুরাগ। মুখে ঘষা লেগে ছিঁড়ে গিয়েছে। হাতটা আলগা দেখাচ্ছে। অনুরাগের বুক কাঁপলো দুরুদুরু। কি উত্তর দেবে সে আয়ানকে, আজহার সাহেবকে, আয়শা বেগমকে? সে কেন এই মেয়েকে একা ছাড়তে গেল?
ডাক্তার জানালো। হাতের পেশিতে আঘাত পেয়েছে ভীষণ। কপালে যেখানে চোট পেয়েছিল সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর কোমরে আর বুকে ও আঘাত পেয়েছে। পায়ের দুটো আঙুলে জখম হয়েছে।
‘ একদম সুস্থ হয়ে যাবে তো ডক্টর?
‘ এত আঘাত দিচ্ছেন কেন বলুন তো? কপালের ব্যান্ডেজ তো এখনো নতুন।
‘ আমার ভুল হয়ে গেছে ডক্টর।
____________
আয়না চোখ খুললো প্রায় মাঝরাতে। অনুরাগ কাউকে জানায়নি। আয়নাকে নিয়ে চলে যাবে গ্রামে৷ আয়না চোখ খুলে অনুরাগকে দেখে হু হু করে কেঁদে দিল। অনুরাগ বলল
‘ ভীষণ জেদি তুমি। ভালো না এতটা। আমার ভুলটা শোধরানোর একটা সুযোগ তুমি ইচ্ছে করেই দিচ্ছ না।
আয়না নিভু নিভু চোখ বন্ধ করে বলল
‘ আমাকে ওরা মেরেছে প্রফেসর। আপনাকেও মারবে। ওরা আপনার শত্রু। আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র,,,,
অনুরাগ বলল
‘ এখন কোনো কথা নয়। তুমি সুস্থ হও বাকিটা পরে দেখব।
আয়না চোখ খুললো। বলল
‘ আপনাকে ওরা মেরে ফেলবে প্রফেসর।
‘ তুমি তো খুশি হবে৷
‘ নাহ। আমি চাই না এমনটা৷ অন্যায় সমর্থন করিনা আমি।
‘ আমার সাথে তো রোজ রোজ অন্যায় করছ, তার বেলা?
‘ আমি করব, আর কাউকে করতে দেব না৷
‘ অধিকার?
‘ নাহ। আমি অনধিকার চর্চা করতে যাই না।
‘ হৃদয়হীন৷ পাথর।
চলবে,,,,
টাইপিং মিসটেক অনেক থাকতে পারে পাঠক৷
#আয়নামতী
#পর্ব_৩২
#পুষ্পিতা_প্রিমা
সকাল সাতটা কিংবা আটটা তখন। অনুরাগ চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। সেলোয়ার-কামিজ পড়া একজন মহিলা পেছন পেছন এসে বলল
‘ সাহেব বৌরাণিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি চলে এসেছে।
‘ আমি যাচ্ছি। তুমি যাও।
মহিলাটি চলেই যাচ্ছিল। অনুরাগ আবার ডাক দিল
‘ কালকে তোমরা সবাই কোথায় ছিলে? একটা মানুষ ওভাবে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যাচ্ছিল আর তোমরা কি তখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছিলে?
মেয়েটি ভালো করে মুখটা ঢেকে নিয়ে বলল,
‘ আমরা মেয়েরা সবাই তো রান্নাঘরে ছিলাম সাহেব।
‘ তোমরা কয়জন যেন?
‘ ছয়জন।
‘ চারজন মহিলা দুজন পুরুষ?
‘ জ্বি সাহেব।
‘ তাহলে তোমাদের তিনজন ছাড়া আরেকজনকে দেখিনা কেন?
‘ বুড়িমা ছাড়া সবাই একরঙের কাপড় পড়ি তাই হয়ত বুঝেন না সাহেব।
‘ গতবার যখন এসেছি তখন তো অন্য দুজন ভদ্রলোক ছিল। করিম আর বাবলু। ওদেরকে কাজ থেকে আউট করে দিয়েছে নাকি?
‘ জ্বি সাহেব।
‘ আরেকটা কথা বলো,, আয়নামতী কেন বলল তোমরা ওকে মেরেছ?
‘ বৌরাণির মাথা খারাপ হয়ে গেছে সাহেব।
বলেই মেয়েটি জিভে কামড়ে দিল। সাথে সাথে বলল
‘ দুঃখিত সাহেব ওরকমভাবে বলতে চাইনি। আসলে বৌরাণির বোধহয় আছরের সমস্যা টমস্যা আছে।
‘ ওসব কিচ্ছু নেই। এখানে কোনো গোলমাল আছে। ছয়জন মানুষ থাকতে একটা মানুষ ওভাবে সিঁড়ির নিচে পড়ে থাকে কি করে?
ঠিকঠাক কাজ করো নয়ত এই বাড়ি কেনার সাথেসাথে তোমাদের এখান থেকে আউট করে দেব। কাজের মানুুষের অভাব হয় না টাকা দিলে।
‘ না না সাহেব মন দিয়ে কাজ করব। কাজ কেড়ে নিবেন না। আমরা ছয়জনের তো অনেক কাজের দায়িত্ব সাহেব। বুড়িমা তো কোনো কাজই করেনা। এইবার থেকে মন দিয়ে কাজ করব।
‘ ঠিক আছে যাও। তোমাদের মালিক আসছে এই সপ্তাহে। এই মাসের বেতন উনিই দেবেন। আগামী মাস থেকে আমি। ঠিক আছে?
‘ ঠিক আছে সাহেব।
‘ যাও আর আয়নামতীকে জোর করে হলেও কিচ্ছু খাওয়াও। ঔষধ খেতে হবে ওর। তারপর চলে যেতে হবে।
‘ বেয়াদবি মাফ করবেন সাহেব। কাজটা আপনি করলে ভালো হতো। ওনি আমাদের সহ্য করতে পারেন না।
‘ ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
____________
আয়না তখনও বিছানার সাথে লেপ্টে। গা ছেড়ে দেওয়া। প্রচন্ড ব্যাথা পুরো শরীরে। ডান হাতটা ব্যান্ডেজে মোড়ানো গলার সাথে। কপালটা ও ঢাকা সাদা ব্যান্ডেজে। এলোমেলো ঢিলে হয়ে আসা মাথার লম্বা বেণুনিটা অবহেলা হয়ে পড়ে আছে আয়নার পাশে। চেহারার উজ্জ্বলতা ফ্যাকাশে রঙে ঢাকা পড়েছে। চোখের নিচে কালো দাগ বসে গেছে।
খাবারের প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে অনুরাগ ভাবলো আয়নাকে এই অবস্থায় দেখলে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে সবার। অনেক সেবাযত্ন দরকার আয়নার। কিছু মুখে ও নিতে চাচ্ছেনা। এভাবে চলতে পারেনা। আয়নাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। সে এখানে থেকে যাবে। কাজ শেষ হলেই চলে যাবে।
কিন্তু আয়না চোখ মেলার সাথে সাথে বলে উঠলো প্রফেসর আপনি আমাকে কোথায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন? আমি কোথাও যাব না।
অনুরাগ বলল
‘ আগে খাওয়া, কথা পরে।
‘ না আমি যাব না প্রফেসর।
‘ যেতে হবে না। খেয়ে নাও। ঔষধ খেতে হবে।
নাক টানলো আয়না । নিজেকে আগাগোড়াই দেখে ফুঁপিয়ে উঠলো। বলল
‘ ব্যান্ডেজ রশি এগুলো খুলে দিন। আমি এভাবে থাকতে পারব না। আমার কষ্ট হচ্ছে।
‘ তোমার হাতের পেশিতে আঘাত লেগেছে। হাত ভেঙে গেছে তোমার। বুঝতে পারছ? একদম মাথা খারাপ করবে না। চুপচাপ বসো। খাইয়ে দেই।
‘ না খাব না। এগুলো খুলে দিন আগে। পায়ের আঙুলের গুলো খুলে দিন। তাহলে খাব।
অনুরাগ আর না পেরে গর্জে বলল
‘ একদম চুপ। আরেকটা কথা বললে খুব খারাপ হবে।
আয়না ফোঁপাতে থাকলো। অনুরাগ প্লেট নিয়ে গিয়ে আয়নার পাশে বসলো। ভাত মেখে খাইয়ে দিতে গেল। আয়না মুখ ফিরিয়ে রাখলো।
‘ বাড়িতে পাঠিয়ে দেব নইলে।
রেগে তাকালো আয়না। অনুরাগ চোখ তুলে তাকালো না। লোকমা মুখ বরাবর তুলে দিয়ে বলল
‘ তাহলে খেয়ে নাও।
আয়না বহুকষ্টে খেয়ে নিল। ঔষধ খাওয়ালো অনুরাগ। আয়না খাওয়ার পরপরই ঘুমে ঢলে পড়লো। অনুরাগ তার গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিল। চলে যাওয়ার সময় কপালের ব্যান্ডেজের উপর আলতোকরে চুমু বসালো। বলল
‘ আমি তোমার এমন পরিণতি কখনো চাইনি আয়নামতী।
তারপর দ্রুত পায়ে নিচে বারান্দায় চলে গেল। সগিরকে গিয়ে বলল
‘ ঘুমন্ত অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। আমি সন্ধ্যায় ফিরে আসব আবার।
‘ আচ্ছা সাহেব।
টান টান উত্তেজনা তখন অনুরাগ ছাড়া আর সবার মধ্যে।
সব ঠিকঠাক কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যখন আয়নাকে গাড়িতে বসানো হলো। অনুরাগের কাঁধে মাথা রাখতেই আয়নার চোখ ছুটে গেল। চারপাশটা চোখ বুলিয়ে সে বলল
‘ আমি গাড়িতে কেন?
অনুরাগ কিছু না বলে ড্রাইভারকে গাড়ি ছাড়তে বলল। কিন্তু আয়নার জন্য পারলো না। সে চেঁচিয়ে উঠলো।
‘ আপনি আমাকে রেখে আবার চলে আসবেন?
‘ হ্যা। আমার অনেক কাজ এখানে। গ্রাম থেকে শহরে আসা যাওয়া করতে পারব না আমি। আর এখানে সবাই আমাকে ভালোবাসে। আমি মাসের পর মাস এই বাড়িতে থেকেছি। তুমি চুপ থাকো।
আয়না অনুরাগের হাত থেকে ছুটে গিয়ে গাড়ির কাচের সাথে বাড়ি খেল মাথায়। বলল
‘ এক্ষুণি দরজা খুলুন৷ এক্ষুনি। আমি যাব না। খোদার কছম আমি সব শেষ করে দেব। আমাকে নিয়ে যাবেন না। আমি এখন যাব না। যদি যাই আপনি আর এখানে আসতে পারবেন না।
‘ এগুলো কেমন শর্ত আয়নামতী? পাগল হয়ে গেছ তুমি। ড্রাইভার গাড়ি ছাড়ো।
আয়না জোরে কামড়ে ধরলো অনুরাগের হাতের বাহু। ছাড়লো বেশ সময় ধরে। অনুরাগ স্তব্ধ হয়ে গেল। ড্রাইভারকে বলল
‘ তাড়াতাড়ি নামো। পানি আনো। কামড়ে শেষ করে দিল। এতই যখন জামাই দরদী তখন হাত পা ভাঙলে কেন? আশ্চর্য মেয়েমানুষ।
আয়না বারবার নাক টানলো। বাম হাতটা দিয়ে গাল মুছতে মুছতে বলল
‘ আপনাকে মেরে ফেলব আমি।
‘ সেজন্যই তো থেকে যাচ্ছ। তোমার হাতে আমি মরতে ও রাজী আছি আয়নামতী।
আয়না বলল
‘ তাহলে আমাকে ঘরে নিয়ে যান।
‘ আমি কেন নিয়ে যাব? তোমার যেতে ইচ্ছে হলে যাও।
‘ গাড়ির দরজা খুলে দেন তাহলে। আমি যেতে পারব, হাঁটতে পারি আমি।
অনুরাগ কোলে নিয়ে নিল চট করে। এগিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ জামাই থাকতে হাঁটতে হবে কেন?
‘ মানিনা জামাই-টামাই। এমন একটা বেকুব মানুষ কখনোই আমার অর্ধাঙ্গ হতে পারেনা।
আমি মানিনা আপনাকে। ভালোবাসা বহুদূর, আপনাকে ঘেন্না করি আমি। আপনার প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান সব ধুলোয় মিশে গেছে আমার। ফিরিয়ে দিন সেসব। মেনে নেব সবটা।
‘ সত্যি? কথা দিচ্ছ তো ?
আয়না চোখটা সরিয়ে নিল। বলল
‘ আমাকে তাড়াতাড়ি দিয়ে আসুন। আপনার কোলে থাকতে ভালো লাগছেনা।
‘ ঠিক আছে।
_______________
বাম হাতটা দিয়ে কোনোমতে পায়ের আঙুলের ব্যান্ডেজগুলো খুলে নিল আয়না। ঠনঠনে ব্যাথা সেখানে। তারপর পা নামিয়ে জুতোজোড়া পড়ে নিল। বুড়ো আঙুলে ভর না পড়ে মতো হেঁটে চলে গেল দরজার কাছে। অনুরাগ বাইরে থেকে দরজা লক করে কাজে চলে গেছে। আয়না অনেক ধাক্কাধাক্কি করলো। অবাক হলো মাত্র তিনবার ধাক্কা দেওয়ার সাথে কে যেন এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খোলামাত্রই বুড়িটাকে দেখতে পেল আয়না। ভয় পেল না। বলল
‘ ওনি আপনাকে শ্রদ্ধা করেন। আর আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন?
‘ আমার সাথে সাথে এসো।
‘ কিছু বললেন না যে,,,,
‘ যেটা বলেছি সেটাই করো।
আয়না পিছু পিছু চলে গেল। বুড়ি ওই কালো দরজাটির কাছে গিয়ে থেমে গেল। চাবি দিয়ে তালা খুললো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা ঘরটিতে কোনো আলো নেই। আয়না বলল
‘ আমি ওখানে যাব না। আপনার উদ্দেশ্য কি? যাব না মানে যাব না।
সাথেসাথে ঘরটিতে আলো জ্বলে উঠলো। লাল রঙের বাল্বটি। লালচে আভা ঘরটির কোণায় কোণায়। আয়না তাড়াতাড়ি পা রাখলো ঘরটিতে। চোখে তখন অপার বিস্ময়। ডান হাতটা কাঁপা শুরু করে দিয়েছে। মুখ, হাত, পা বাঁধা তিনজন মহিলা, আর দুজন ভদ্রলোক। আয়নাকে দেখে ছটপটানি আর ও বেড়ে গিয়েছে তাদের। আয়না শুকনো ঢোক গিলে তাকালো বুড়িটার দিকে। রাগে, আক্রোশে বলল
‘ কি করছেন আপনি? ওনাদের এত কষ্ট দিচ্ছেন কেন? আপনার মায়া দয়া হয় না? কষ্ট হচ্ছে ওনাদের। কি চান আপনি?
বুড়ি জোরো লাঠির করাঘাত করলো আয়নার ভাঙা হাতে। নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে এল আয়নার। গালটা ভিজে গেল। আর্তনাদে মুখ ফুটে বের হলো
‘ প্রফেসর?
‘ কোথাও নেই তোর প্রফেসর। বেশি কথা বলবি মাইর খাবি। চুপচাপ আমার কথা শোন।
আয়না বাম হাতটা ডান হাতে বুলাতে বুলাতে বলল
‘ অমানুষ। আজ ওনি আসুক। আমি সব বলে দেব।
বলেই আয়না বের হয়ে যেতেই যাচ্ছিল। ধপ করে দরজা বন্ধ করে দিল একটি মহিলা এসে। বুড়ি হেসে উঠলো। আয়না বুড়ির লাঠিটা কেড়ে নিল। জোরে আঘাত করলো পিঠে। ঢলে পড়লো বুড়ি। আয়না বলল
‘ এদের সবার বাঁধন খুলে দিন। নইলে মেরে ফেলব। দিন।
বুড়ি রক্তাক্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো। আয়না বামহাতের সাহায্য জোরে আরেকটা করাঘাত করলো। বুড়ি একেবারে লুটিয়ে পড়লো। আয়না লাঠিটা রাখলো একটা লোকের পাশে। বামহাতটা দিয়ে কোনোমতে মুখ খুলে দিল। তারপর ধীরে ধীরে হাতটা খুলে দিল। হাত খুলে দেওয়ায় বাবলু নিজে নিজে পায়ের বাঁধন খুললো। বাকিদের খুলতে সাহায্য করলো। বুড়ি উঠতে চাইলো আয়না বলল
‘ উনাকে বেঁধে দিন তাড়াতাড়ি। আমি আর মারতে পারব না। তাড়াতাড়ি করুন। সবাই মিলে তাড়াতাড়ি করে বুড়িকে রশিগুলো দিয়ে বেঁধে ফেলল। মুখ খোলা রাখলো। আয়না বলল
‘ এইবার ওদেরকে বলুন দরজা খুলে দিতে। তাড়াতাড়ি বলুন।
বুড়ি কাঁপতে কাঁপতে বলল
‘ তোর স্বামীর মরার পথ তুই সহজ করে দিয়েছিস। বাইরে যতগুলো কাজের মানুষ আছে সবগুলো তোর স্বামীর শত্রু। আমাকে এভাবে বেঁধে রেখে ভালো করিসনি। কত বড় বড় শত্রু আছে তোর স্বামীর তুই ভাবতে ও পারছিস না। আমাকে খুলে দে।
পাশ থেকে একজন হ্যাংলা পাতলা মহিলা বলে উঠলো
‘ তুমি এত লোভী হলে কবে থেকে? সাহেবকে মারার জন্য তাদের হাতে হাত মিলিয়েছ? শুধু টাকার জন্য? ছিঃ।
আয়না বলল
‘ তারমানে আপনাদের ছদ্মবেশে ওই পাঁচজন ছিল। আমাকে ও ওরাই আঘাত করেছে। এত বড় ষড়যন্ত্র? আমি এখন কি করব?
বুড়ি মাথা কাত করে পড়ে রইলো। আয়না বলল
‘ আপনি এভাবে চুপ থাকবেন না। ওনার সাথে এমন করবেন না। ওনার মা বাবা পাগল হয়ে যাবেন। দেখুন ওনি তো আপনার কোনো ক্ষতি করেনি তাহলে আপনি কেন অমন করছেন? টাকা আমি আপনাকে দেব। কত টাকা চাই আমার? কত? দরজা খুলে দিতে বলুন।
বুড়ি মাথা নিচু করে ঝুলে থাকলো। কিছুক্ষণ পর দরজা আপনাআপনি খুলে গেল। তবে চকচকে ধারালো ছুরি নিয়ে প্রবেশ করলো কালো বোরকা পড়া একজন। মুখ বাঁধা। আয়না বুঝে ফেলল এইটা পুরুষ লোক। তবে কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটা বুড়ির কাছে গিয়ে খপখপ ছুরিকাঘাত করলো পরপর দুইবার। মুখ দিয়ে টকটকে লাল রক্ত বের হয়ে এল বুড়ির সাথে সাথেই মারা গেল বুড়ি। আয়না টের ও পেল না বাকিরা পালিয়েছে। আয়না লুটিয়ে পড়লো মাটিতে এমন ভয়ংকর হত্যাকান্ড দেখে। বাকিরা ও বন্দী হলো মুহূর্তেই।
আয়না যখন নিজেকে আবিষ্কার করলো তখন দেখলো সুসজ্জিত একটা ঘরে সে বন্দী। রঙবেরঙের আলোয় আর গোলাপি রঙের পর্দা ঝুলছে ঘরটাতে। হাতের ব্যাথা যেন মগজ ছুঁলো। যন্ত্রণায় কাঁদলো আয়না। প্রফেসর তাকে ফেলে কোথায় গেল? বুড়িটাকেই বা কেন মেরে ফেলল ওই লোকটা? বাকিরা কি বেঁচে আছে? সে কোথায় এখন?
সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির হলো লাল টকটকে হালকা পাতলা সিল্কের শাড়ি পড়া একজন মেয়ে। আয়নার চিনতে অসুবিধে হলো না কুহেলী সরকারকে । ভালো করে চিনতে পারলো এইবার। টিভিতে কুহেলীকে দেখাতেই টিভি বন্ধ করে দিয়েছিল শায়খ চৌধুরী।
গতবার যিনি তার বাগানের ফুল ছিঁড়েছেন। আর এজন্যই প্রফেসর তার উপর এত রেগে গিয়েছিলেন। আয়না তেড়ে গেল। বলল
‘ আপনার সাথে উনার তো কোনো শত্রুতা ছিল না। তাহলে আপনি কেন এমন করছেন? কেন কতগুলো প্রাণ নিয়ে এইভাবে খেলা করছেন। বুড়ির কথা বাদ দিলাম ওই মহিলাগুলো আর লোকগুলোকে মুক্তি দিন। অনেকে ওনাদের পথ চেয়ে বসে আছেন। স্ত্রী, স্বামী কিংবা সন্তান।
‘ এত দরদ?
রসিকতা করে বলল কুহেলী।
‘ হ্যা। দরদ। মুক্তি দিন।
‘ আর তোমার স্বামী। আমি তো ভালোবাসিনি, তুমি কি খুব ভালোবাসো নাকি? শুনেছি সেইরকমের বউ পাগলা অনুরাগ চৌধুরী। একেবারে চোখে হারায়। লাইলির মজনু।
আয়না দাঁতে দাঁত চাপলো। বলল
‘ কি চাচ্ছেন আপনি?
শাড়ির আঁচলটা হাতে নিল কুহেলী। উদরের অর্ধেকাংশ উন্মুক্ত। আয়নাকে ভালো করে দেখে বলল
‘ তোমাকে এই শাড়িতে ঠিক মানাচ্ছে না। তোমার ওই হাবাগোবা স্বামী তোমাকে দিয়েছে না?
‘ আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন কেন? আশ্চর্য! আমাকে ওনার কাছে যেতে দিন।
‘ মেরে ফেলেছি।
গলা কেঁপে উঠলো আয়নার। কুহেলী নিজের হাতের ব্যাগটা থেকে একটা সাদা শাড়ি বের করলো। ছুঁড়ে মারলো আয়নার দিকে। বলল
‘ পড়তে সাহায্য করব নাকি পড়ে নিতে পারবে। স্বামীর মঙ্গলের জন্য পড়ে নাও। বেচারা বিদায় জানিয়েছে পৃথিবীকে।
আয়না কেঁপেকেঁপে বলল
‘ আমাকে ছেড়ে দিন। খুব খারাপ হবে আপনাদের সাথে।
কুহেলী এগিয়ে এল। এল টান দিয়ে শাড়ি টেনে ধরলো আয়নার। টেনে হিঁচড়ে যেভাবে শাড়িটা ছাড়িয়ে নিল। আয়না ভাঙা হাত নিয়ে পারলো না কুহেলীর সাথে। কুহেলী সাদা শাড়ি পড়িয়ে দিল। নাকের ফুল টেনে খুলে নিল। বলল
‘ আমাকে না দিলে লোক পাঠাতাম। ভাগ্যিস হাতটা ভেঙে দিয়েছিলাম। বেচারি বুড়ি। শেষমেশ মরতে হলো।
‘ জঘন্য কাজের জঘন্যরকম শাস্তি পাবেন আপনি। আমি এখন বুঝতে পারছি ওই বুড়িটাকে ব্যবহার করেছেন আপনি। কাজ শেষ হওয়ায় মেরে দিয়েছেন। সত্যি করে বলুন প্রফেসর কোথায়?
কুহেলী বলল
‘ তোমার গায়ের সাদা শাড়ির দিকে ভালো করে তাকাও। বুঝে যাবে। দেখছ না আমি লাল শাড়ি পড়েছি। আজ আমার খুব খুব খুশির দিন। ওই চৌধুরীদের যদি আমি পথে না বসায় আমার নাম ও কুহেলী সরকার নয়।
‘ এত অমানুষ আমি এই প্রথম দেখছি। এতটা খারাপ মানুষ আমি কখনো দেখিনি। আমি তো ভেবেছি সবচাইতে খারাপ মানুষটা শুধু আমি। নাহ। আমার চাইতে খারাপ মানুষ ও তাহলে আছে? ছিঃ।
কুহেলী হেসে ফেলল। বলল
‘ তোমার স্বামী তো পরপারে। এবার দেখি একা একা লড়ো তো। তোমাকে কি নামে ডাকতো যেন? ও হ্যা, আয়নামতী। এইবার তাহলে অনুরাগ চৌধুরীর আয়নামতী হয়ে দেখাও তো। তোমাকে সাদাই বেশি মানাচ্ছে আয়না। বলি কি আমার সাথে সিনেমার জগতে চলে আসো। এই বোকা হাঁদারাম গেছে তো গেছে।
‘ আপনি সবটা মিথ্যে বলছেন। আমি আপনার কথা কিচ্ছু বিশ্বাস করছিনা। কোথায় ওনি? দয়া করে মিথ্যে বলবেন না। সৎ সাহস যদি থেকে থাকে সত্যিটা বলুন।
‘ বললাম তো মারা গেছে। তোমার স্বামীকে আটক করে রাখা হয়েছে খালেকুজ্জামানের এই গোপন আস্তানার কালো কুঠুরিতে । ওর সহচরদের সহ। বাকিদের ডাবল টাকা খাইয়ে কিনে নেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই মৃত্যুর সংবাদ এসেছে তোমার স্বামীর । চিন্তা নেই তোমার ও মৃত্যু হবে যদি আমাদের কথা অনুযায়ী না চলো।
আয়না দু পা পিছিয়ে গিয়ে খাটের উপর বসলো। গায়ে ধবধবে ঝকঝকে সাদা শাড়ি। শাড়িটার উপর ফোঁটা ফোঁটা জল গড়ালো। প্রফেসর তার কথাগুলো কেন বিশ্বাস করলো না। নিজের শত্রুদের অত হেলাফেলা করাটা ঠিক নয়। এখন কি করবে সে?
কুহেলী চলে গেল হেসেহেসে। আয়না দরজা খোলা পেয়ে বের হয়ে গেল পিছুপিছু। দেখলো সে অন্য একটা বাড়িতে। তারমানে এটাই খালেকুজ্জামানের গোপন আস্তানা। তার ও মৃত্যু হবে কিছুক্ষণ পর? কিন্তু কেউ তাকে বন্দী করছেনা কেন? কিছুটাদূরে মিটমিট করে মোমবাতি জ্বলছে। আশেপাশে অনেকগুলো মোমবাতি আর দেশলাই। আয়না কতগুলো নিয়ে নিল সে। অন্ধকার ঘরগুলোতে কি কি আছে তার দেখতে হবে। তখন তার কাজে লাগতে পারে। তবে বেশি নিয়ে নেওয়ার আগেই তার ঘাড় ধরে কেউ একজন টেনে নিয়ে গেল তাকে। চোখ বেঁধে দিল। তারপর ঢুকিয়ে দিল অন্ধকার কুঠুরিতে। তারপর চোখ খুলে দিল। মিটমিট করে একটা লাল রঙের আলো জ্বলছে। চারদিকে কেমন শূন্য শূন্য। তবে কুঠুরির এককোনায় আধমরা হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেল একটা লোককে। ভয়ে অন্তরআত্মা শুকিয়ে গেল আয়নার। চোখে বৃষ্টি নামলো ভয়ংকরভাবে। দৌড়ে গেল আয়না। মেঝেত লুটিয়ে থাকা মানুষটার মাথা তুলে রাখলো তার কোলে। ঘনঘন ডাকল
‘ প্রফেসর? শুনছেন? একবার চোখ খুলুন৷ এভাবে আমাকে ভয় দেখাবেন না।
চারপাশে আঘাতের দাগ অনুরাগের মুখে,কপালে,গলায়,হাতে, বুকে। গায়ের সাদা শার্টটি হালকা রক্তেভেজা। আয়না অনেক ডাকলো। অনুরাগ পানি খুঁজলো। আয়না পানি পানি বলে অনেকক্ষণ চিৎকার করলে ও কেউ পানি দিল না৷ তবে অনুরাগ নিজ থেকেই আয়নার দিকে তাকালো। উঠে বসার চেষ্টা করলো। আয়না হাত ধরে বসালো। বলল
‘ প্রফেসর ওই বুড়িটা মরে গেছে। ওই লোকগুলো আর মহিলাগুলো। সবটা সাজানো ছিল। ওরা আপনার শত্রু।
‘ আর আমি তোমার। তাই না?
‘ প্রফেসর এখন সেসব কথা বলার সময় না।
‘ আমি তোমাকে বোধহয় ভালো রাখতে পারব না। আমার সবকিছু শেষ আয়নামতী। তুমি ঠিকই আমাকে বেকুব বলো। বেকুবদের জন্য সমাজসেবা আসেনি আয়নামতী। মানুষের ভালো করতে গেলে যে শত্রুতা বাড়ে সেটা জানতাম না। গুপ্তচর রেখে যে শত্রু পাহাড়া দিতে হয় সেটা ও জানতাম না। আমি তো তোমার অপছন্দের হবোই। আমাকে ক্ষমা করো আয়নামতী। তোমাকে আর ভালো রাখা হলো না।
আয়না বলল
‘ প্রফেসর এখন এসব কথা থাক না। কি করে এখান থেকে,,,
‘ এখান থেকে আর মুক্তি নেই আয়নামতী। সবটা শেষ। আমাকে শুধু কথা দাও, যদি আমার কিছু হয়ে যায় আমার পরিবারকে তুমি দেখে রাখবে। কথা দাও।
‘ কি বলছেন এসব?
‘ কথা দাও। কেন কথা দিচ্ছ না?
‘ কথা দিলাম।
অনুরাগ ঢলে পড়লো আয়নার দিকে। আয়না তার মাথা কাঁধে রাখলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। অনুরাগ হেলে পড়ে বলল
‘ আয়নামতী একটা কথা বলো।
‘ আপনার তেষ্টা পেয়েছে। কম কথা বলেন। আমাকে ভাবতে দিন।
‘ আমার কিছু হলে তুমি কি অন্য কাউকে বিয়ে করবে আয়নামতী?
আয়না চুপ করে থাকলো।
‘ আচ্ছা বিয়ে করো। ভালো ও বেসো। কিন্তু আয়নামতী ডাকতে দিওনা। দেবে?
‘ আপনি বেশি কথা বলছেন।
অনুরাগ শক্ত করে ধরলো তাকে। বলল
‘ আয়নামতী আমি তোমার কাছে মূল্যবান কবে হবো বলতে পারো?
‘ তার জন্য আপনাকে থেকে যেতে হবে।
এত যন্ত্রণার মাঝে ও অনুরাগ হাসলো। বন্ধ চোখ, শুকনো ঠোঁট বিদ্ধ হলো আয়নার কাঁধে। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেল। মুখ তুলে অনুরাগ বলল
‘ আমার এখন তোমার সাথে বহুবছর বাঁচতে ইচ্ছে করছে আয়নামতী। নিজের জায়গাটা ছেড়ে অন্যকে দেওয়া খুব কষ্টের। এপাড়ে কিংবা ওপাড়ে থাকি তোমাকে অন্যের হতে দেখলে খুব কষ্ট হবে আমার। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচাও প্রাণোমোহিনী।
চলবে
তাড়াহুড়ো করে লিখেছি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন।