#গল্পঃ_ইচ্ছেটা_তোমারই
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ__২
?
বিয়েটা আখির ইচ্ছায় না হলেও আকাশের বাবার কথা ভেবে আকাশের সাথে চার মাস থাকতে রাজি হয় সে। কারন একজন মৃত্যুর পথযাত্রী বাবার মনে কষ্ট দেওয়াটা ঠিক হবেনা এটা ভেবে। আখি ছোট বেলা থেকেই বাবার আদর পায়নি বলে বাবা শব্দটার প্রতি একটা দুর্বলতা আছে তার। হয়তো সেই দুর্বলতাটাই তাকে এখন এভাবে ধরে রেখেছে।
সকালের সকল নাস্তাই তৈরি করা হয়ে গেছে আর তা সাজিয়ে রাখা আছে টেবিলে। আকাশই তৈরি করেছে এইসব। রান্না যে তার নিজেকেই করতে হয়, কারন বাবা বলেছিলো কোনো কাজের মেয়ে রাখা হবেনা এই বাসায়। যত দিন বিয়ে না করবি ততোদিনই এভাবে রান্না করতে হবে।
সকল কিছু শেষ করে আকাশ চলে যা আখিকে ঘুম থেকে ডাকতে।
ওদিকে ফ্রেস হয়ে রুমে বসে আছে আখি। আকাশ রুমে প্রবেশ করে আখির দিকে চোখ পরতেই একটু থমকে যায়। কাল রাতের চাইতেও আখির চেহারায় দ্বিগুন সোন্দর্য ফুটে উঠেছে। অদ্ভুদ এক মায়া কাছ করছে তার ওই গভির চাহোনিতে। সব চাইতে বেশি সুন্দর্য ফুটে উঠেছে আখির ওই ঠোট জোড়ায়, ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে হাত দিয়ে আলতো করে ঠোটজোড়া ছুয়ে দিতে। কিন্তু সেটা যে সে পারবেনা। কারন সকলের কাছে এটা রিয়েল ম্যারিজ মনে হলেও, তাদের দুজনার কাছে এটা কন্টেক্ট ম্যারিজ। যার মেয়াদ হয়তো খুব জোরে চার থেকে পাচ মাস।
— কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
আখির কথায় ধ্যান ভাঙে আকাশের। আখির থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠে,
— টেবিলে নাস্তা রেডি করা আছে ফ্রেস হয়ে নাও।
— আমি ফ্রেস হয়েই নিয়েছি, চলুন।
— আখি।
— আমি বুঝেছি আপনি কি বলবেন। আপনার বাবা কিছুই বুঝতে পারবেনা। আমি রাজি আছি আপনার বাবাকে হাসি খুশি রাখতে। আমার বাবার প্রতি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছেন আপনি। আপনি সব সময় আমার কাছ থেকে দুরে থাকবেন আর রাফিনের বিষয়টা মাথায় রাখবেন।
— বলছিনা সব কিছু তোমার ইচ্ছেতেই হবে।
— ওকে চলুন।
টেবিলে বসে নাস্তা করছে তিন জন মিলে। তার মাঝেই আসিফ সাহেব বলে উঠে,
— বৌমা, তুমি এই বাড়িতে এসেছো মানে এই বাড়িটা সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব এখন তোমার। ইনফ্যাক্ট এই পুরু বাড়িটাই এখন থেকে তোমার।
আসিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয় আখি। আকাশ চুপ চাপ খেয়ে যাচ্ছে।
— আর হ্যা এখন থেকে আমি আর আকাশের হাতের রান্না খাবোনা। তোমার হাতের রান্নাই এখন থেকে আমার একমাত্র আহার।
এবার আকাশের দিকে একটু ভ্রু কুচকে তাকায় আখি। রান্না করবে আর সে? রান্নার “র” টাই সে ঠিক বুঝেনা আর সে রান্না করবে।
,
,
,
,
— দেখেন মি. আকাশ আমি কোনো রান্না বান্না করতে পারবোনা।
— তুমি না বাবাকে হাসি খুশি রাখবে বলেছো।
— প্রথমতো, আমি এই খানে থাকতে রাজি হয়েছি শুধু আপনার বাবাকে একটু সঙ্গ দিতে। দ্বিতীয়ত আমি কোনো রান্নাবান্না পারিনা।
— তহলেতো দেখছি তুমি একেবারেই ঢেড়স। মেয়ে হয়ে রন্না বান্না পারোনা এটা ভাবা যায়?
— একেবারেই পারিনা তা না। আমার কিছু কিছি স্পেসাল রেসিপি আছে।
— কি কি?
— ডিম অমলেট, ডিম সেদ্ধ, আর চা।
— খুব স্পেসাল তোমার রেসিপিগুলা। রাফিনের বাসায় গিয়ে তার বাবা মা কে সারা জীবন এগুলোই খাইয়ে রাখবে নাকি?
— সেটা পরে দেখা যাবে শিখে নিবো।
— তুমি চাইলে এই চার মাসে আমার কাছ থেকে সকল প্রকার রান্না শিখতে পারো। আর বাবার চাহিদা এটাই তোমার হাতের রান্না খাবে সে। আর তার সাথে বসে একটু গল্প করবে। যানো আমার বাবার অনেক আশা ছিলো তার একটা মেয়ে হবে। তার আাশা পুরণও হয়েছিলো। আমার বয়স তখন মাত্র আট কি নয় হবে। একটা গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায় মা ও আমার সাত মাসের ছোট বোন। আমি তখন স্কুলে ছিলাম। বাবারও ক্ষতি হয়েছিলো সেই দিন। কয়েক দিন বাবার সাথে হসপিটালে ছিলাম আমি। মা ও আমার বোনটাকে বাচানো গেলোনা। তার পর থেকে আমি আর বাবা। খুব আদরে বড় করেছে আমায় মায়ের অভাবটা বুঝতে দেয়নি কিছুতেই।
— থাক বেশি ইমোশনাল হওয়ার দরকার নেই। আমি শিখে নিবো আপনার কাছ থেকে রান্না। আর হ্যা বিকেলে আমি আমি রাফিনের সাথে দেখা করতে যাবো। ও নিশ্চই এখনো আমায় ভুল বুঝে আছে।
— বিয়েটা হয়েছে গত কাল। আজকে গেলে বাবা বিষয়টা ভালোভাবে নিবেনা। আগামি কাল যেও।
— কোনটাকে আপনি বিয়ে বলছেন ওটা বিয়ে? নাকি চার পাঁচ মাস আপনার বাবার খেদমত করতে বাধ্য করা। আর আমি আজই যাবো রাফিনের সাথে দেখা করতে।
— প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো। কালকে তোমার সাথে আমিও যাবো আমি নিজে রাফিনকে সব বুঝিয়ে বলবো।
____________________________
বিকেলে বেলকনিতে বসে আছে আসিফ চৌধুরি হাতে দু,কাপ চা নিয়ে আসিফ চৌধুরির পাসে গিয়ে দাড়ায় আখি।
— আরে আখি মা তুমি? ভালোই করেছো এসে। একা একা ভালো লাগছিলোনা।
— এই নিন আপনার জন্য চা নিয়ে এসেছি।
— হ্যা এই সময়টাই আমার চা খুব ভালো লাগে। আর মেয়ের হাতের চা তো কোনো কথাই নেই। কিন্তু তোমাকে আমি এখনো মেয়ে মনে করতে পারছিনা। কারন, আসার পর থেকে তুমি আমায় একবারও বাবা ডাকোনি।
বাবা, বিষয়টা আবারও ভাবিয়ে তোলে আখিকে। সত্যিই কি এই লোকটাকে সে বাবা ডাকবে? যে কিনা আমাকে নিজের মেয়ের মতো মনে করে, আমার মাঝে নিজের মেয়েকে খুজে পায়। হুম তাকে বাবাই ডাকবো, কিন্তু আকাশের সম্পর্কে নয়। অন্য একটা সম্পর্কে। কিন্তু এই সম্পর্কটার নাম কি হবে? যাই হোক।
— এই নিন বাবা। এবার চা টা নিন।
— হ্যা, এবার ঠিক আছে। তোমাকে আমি সত্যি সত্যিই নিজের মেয়ের মতোই ভাবি।
বাবা মেয়ে মিলে অনেক্ষন আড্ডা দিলো সেখানে।
,
,
,
রাতে খেয়ে ঘুমানোর সময় আধ শোয়া হয়ে ভেবে যাচ্ছে আখি। এতোদিন পর সে সত্যিই একটা বাবাকে খুজে পেয়েছে। সারাটা দিনই খুব ভালো লেগেছে বাবার সাথে সময় কাটিয়ে। কিন্তু এই খুশিটা যে দির্ঘ সময়ের জন্য নয়।
আকাশ তখন সোফায় গভির ঘুমে। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দির্ঘ শ্বাস নিয়ে ঘুমিয়ে পরে আখিও। কি হচ্ছে তার জীবনটা নিয়ে? কাল রাফিনের সাথে দেখা করতে যাবে আখি। রাফিন কি বলবে তখন। রাফিনের সামনে দাড়ানোর সাহসটা যে নেই আখির। তবুও তাকে দাড়াতেই হবে। রাফিনকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে হবে। নিশ্চই সে বুঝবে, কারন সে তো আমায় কখনো অবিশ্বাস করেনি।
_______________________________
পরদিন সকালে নাস্তা শেষে আকাশকে বলে আখি,
— আপনার নিশ্চই মনে আছে, আজ আমার রাফিনের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা।
— হুম জানি, আমি রাফিনকে বলেছি আসতে।
— এখানে?
— না, তোমাদের নাকি একটা পছন্দের জায়গা আছে সেখানে।
— আচ্ছে সে আমাকে ভুল বুঝবেনা তো।
— মনে হয়না ভুল বুঝবে, আর ভুল বুঝলেও আমি বুঝিয়ে বলবো।
______________________________
বিকেলে বাবাকে বলে রওনা দিলো আকাশ আখিকে নিয়ে। রাফিন হয়তো সেখানে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
ড্রাইবিং সিটে বসে ড্রাইবিং করে যাচ্ছে আকাশ। আর বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে আখির দিকে। রাফিনের সাথে দেখা করতে যাবে, মুখ ভর্তি খুশির আলো ফুটে উঠেছে তার। হালকা সাজে তার উপর মুখে পুরুপুরি খুশির ছাপ হালকা হাসিতে যেনো কোনো এক পরীকেও হার মানাবে।
To be continue…………