ইট পাটকেল পর্ব-১২+১৩

0
1007

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১২

অন্ধকার কোন ঘর থেকে কারো বিভৎস চিৎকার ভেসে আসছে। মস্তবড় এক গুদাম ঘরের বিলাসবহুল এক রুমে বসে আছে আশমিন। তার পাশের ই কোন রুম থেকে কারোর আর্তনাদ ভেসে আসছে। সোফায় বসে হাটুতে দুই হাত ভর দিয়ে পা নাচিয়ে যাচ্ছে আশমিন। সানভি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। লোকটার আর্তনাদ শুনে তার নিজের ই বুক কাপছে।অথচ আশমিন গুন গুন করে গান গেয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই সোজা হয়ে বসলো আশমিন। পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু দেখায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। সানভি বার কয়েক ঢোক গিলে শুকনো গলা ভিজিয়ে নিলো।আশমিনের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,

— আর কিছুক্ষণ এভাবে চললে লোকটা ম*রে যাবে স্যার।

— তাহলে তোমার কপালে দুঃখ আছে সান।ম*রতে পারবে না ও। মা*রতে থাকো। অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার দেখাও।সুস্থ করে আবার মা*রো। যতক্ষণ মুখ না খুলছে এভাবে চলতে থাকবে।

সানভি হন্তদন্ত পায়ে চলে গেলো ডাক্তার ডাকতে। মিনিট দশেক পর ডাক্তার নিয়ে একটা অন্ধকার নোংরা রুমে প্রবেশ করলো সানভি।একটা মাঝবয়েসী লোককে উল্টো ঝু*লিয়ে রাখা হয়েছে। নাক মুখ দেখে চেনার উপায় নেই। আশমিনের নির্দয় লোক গুলো সারা মুখ থেত*লে দিয়েছে। দাত পরে গেছে কয়েকটা। ডাক্তার নিজেও শিউরে উঠল।এভাবে কেউ কাউকে মা*রে!কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস পেলো না।

— এভাবেঝুলিয়ে রাখলে ট্রিটমেন্ট করবো কিভাবে?নামিয়ে শুয়িয়ে দিন প্লিজ।

সানভির কপালে চিকন ঘামের দেখা দিলো।কাপা কাপা চোখে রুমে সেট করা সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকালো। শুকনো ঢোক গিলে কাপা কাপা গলায় বলল,

— যা করার এভাবেই করুন।নিচে নামানো যাবে না।

ডাক্তার আর কিছু না বলেই নিজের কাজ করতে লাগলো। সে জানে যে বলেও কোন কাজ হবে না। র*ক্ত পরিস্কার করে ব্যন্ডেজ করে দিলো সে।ব্যথা নাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।লোকটার কোন হুশ নেই।আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু দেখে চলেছে। শত রেগে গেলে ও আশমিন নিজের চেহারায় তা কখনোই প্রকাশ করে না।নিজেকে সবসময় রাখে শান্ত। কিন্তু ইদানীং তার মেজাজ ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। নূর তো উঠে পরে লেগেছে তাকে ধ্বংস করতে। এই যে এখন ধৈর্য ধরে দু ঘন্টা যাবত তার রুম তল্লাশি করে চলেছে।ঠিক কি খুজছে তা আশমিন জানে। হাজার খুজলেও নূর কিছুই পাবে না আশমিন তা জানে।তবুও সে এক ধ্যানে নূরকেই দেখে যাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পেয়ে নূর এখন রীতিমতো রাগে ফুসছে।আর নূরের রাগী ফেস দেখে মুচকি হাসছে আশমিন।সেই মুহুর্তে আবার সানভির আগমন।

— জ্ঞান ফিরেছে স্যার।

— যাও।আমি আসছি।

আশমিন নিজের শুভ্র পাঞ্জাবি বদলে একটা ক্যাজুয়াল শার্ট পরে সেই অন্ধকার রুমে ঢুকলো। লোকটা তাকে দেখে থরথর করে কাপছে। আশমিন ইশারা করতেই গার্ড গুলোর মধ্যে কয়েকজন এসে লোকটাকে নামিয়ে দিলো।আশমিনের সামনে রাখা একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আবার নিজেদের জায়গায় গিয়ে দাড়িয়ে গেলো।

আশিমিন লোকটার মুখোমুখি বসে শান্ত গলায় বললো,

— কেমন আছেন ড্রাইভার আংকেল?

আশমিনের ‘কেমন আছেন’শুনে ড্রাইভার মতিন মিয়া থরথর করে কাপতে লাগলো। মুখে কিছু না বলতে পারায় বার বার হাত জোর করে মাফ চাইতে লাগলো। আশমিন ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। চেয়ারের পিছনে মাথা এলিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— দীর্ঘ বিশ বছর যাদের নুন খেয়েছেন তাদের সাথেই বেঈমানী করলেন আংকেল! ব্যাপার টা আমার একদম ই ভালো লাগে নি।

আশমিনের গলায় দুঃখী দুঃখী ভাব।সানভি পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছে ফেললো। আশমিনের দুঃখী গলা শুনে ভীতু চোখে তাকালো আশমিনের দিকে।
আশমিন আফসোসের স্বরে বললো,

— আমার আপনাকে মা*রতে ইচ্ছে করছে না আংকেল। আর কয় বছর ই বা বাচবেন বলুন?এখন আর আপনাকে মে*রে লাভ কি!আমি বরং আপনারা দুই ছেলে কে মে*রে ফেলি।

লোকটা ভয়ার্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। অস্পষ্ট গলায় গুঙ্গিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো বার বার। কিন্তু আশমিন সেই আকুতি শুনলো না।সে পায়ের উপর পা তুলে পা নাচিয়ে গার্ড কে ইশারা করলো। সাথে সাথে সেখানে বাইশ বছরের এক যুবক কে নিয়ে হাজির হলো গার্ড।ছেলেটার হাত পা বাধা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাকে খুব টর্চার করা হয়েছে।মতিন মিয়া ছেলের এমন দুর্দশা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এই ছেলেদের জন্য ই তো রাফসান শিকদারের মতো মানুষের সাথে বেঈমানী করেছে।তার পাপ আজ তাকে এনে এখানে দাড় করিয়েছে।

আশমিন রি*ভালভার হাতে নিয়ে ঘার কাত করে মতিন মিয়ার দিকে তাকালো। মতিন মিয়ার বড় ছেলে মারুফ ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে নিজের বাবার দিকে।ছেলের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস নেই তার।

— আমার জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এসো সান।গরমে গলা শুকিয়ে গেছে একেবারে।

শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো আশমিন। দুটো বোতাম খুলে দিয়ে শার্ট কিছুটা এলিয়ে দিলো ঘাড়ের দিকে।সানভি ইশারা করতেই একজন এক বোতল ঠান্ডা মিনারেল ওয়াটার এনে দিলো আশমিনের হাতে।আশমিন দুই চুমুক দিয়ে মতিন মিয়ার কে শান্ত গলায় বললো,

— সে এখন কোথায় আছে আংকেল?

মতিন মিয়া অস্পষ্ট গলায় বলল,

— আমি সত্যিই জানি না সে এখন কোথায়।বিশ্বাস করুন বাবা।তবে সে দেশে নেই।

— কোন দেশে আছে।

— জানি না। তবে কিছু দিনের মধ্যেই সে দেশে ফিরবে।

— তার সাথে আর কে কে জড়িত?

আশমিন ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করতেই কেপে উঠলো মতিন মিয়া। চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের নজর লুকালো।আশমিন শক্ত গলায় বলল,

— এটাই আপনার শেষ সুযোগ।

মতিন মিয়া মাথা নিচু করে ফেললো। কাপা কাপা গলায় বলল,

— আপনি বিশ্বাস করবেন না।

— আপনি বলুন।

— আপ আপনার মা কামিনী চৌধুরী আর লারার বাবা।

চোখ বন্ধ করে ফেললো আশমিন। ব*ন্দুকের নল দিয়ে কপাল ঘষে চোখ বন্ধ করেই পর পর পাচ টা শু*ট করে দিলো মতিন মিয়ার বুকে।মারুফ ডুকরে কেদে উঠলো। ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলো বারবার। শত হোক,নিজের বাবা তো।তার এমন করুন মৃ*ত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে।আশমিন মারুফের সামনে গিয়ে হাটু মুরে বসলো।মারুফের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— তোমার বাবা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মারুফ। তার জন্য ও কেউ তার বাবা কে হারিয়েছে। আমি বিশ্বাসঘাতক দের বাচিয়ে রাখি না মারুফ। তোমার পরিবার কে দূরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তোমরা এখানে নিরাপদ নও।আমি চাইলে তোমাদের সবাইকে মে*রে ফেলতে পারতাম।কারণ তোমার গায়ে ও বিশ্বাসঘাতকের রক্ত বইছে।কিন্তু আমি তা করবো না। সব মানুষ এক হয় না। যেমন বিশ্বাসঘাতকের সন্তান হয়েও আমি বিশ্বাস ঘাতক নই।কখনো আমাকে ভুল প্রমাণ করো না।

মারুফ অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। ধরা গলায় বলল,

— আমি আপনাকে প্রমাণ করে দিবো আমি বাবার ছেলে হলেও বিশ্বাস ঘাতক নই।

আশমিন মলিন হাসলো। ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। সানভি আশমিনের পিছু পিছু আসলো। আশমিনের মনের ভিতর যে তুফান চলছে তা সানভি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে।কিন্তু আশমিন ঠিক আগের মতোই শান্ত,গম্ভীর।

— এদিকটা সামলে নিয় সান।আমি বের হচ্ছি।

— আমি ও আসছি আপনার সাথে।

সানভির দ্রুত জবাব। আশমিন গাড়ির দরজা খুলে গম্ভীর গলায় বলল,

— দরকার নেই।আমি একা যেতে পারবো।

আশমিনের গাড়ি চলে যেতেই সানভি আরো চারটি গাড়ি আশমিনের পিছনে পাঠিয়ে দিলো। এভাবে সিকিউরিটি ছাড়া তাকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না ।

চলবে

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৩

ক্লান্ত পায়ে বাড়িতে ঢুকলো আশমিন।ড্রয়িং রুমে কামিনী চৌধুরী আর আমজাদ চৌধুরী বসে আছে। নিজেদের মধ্যে হয়তো কিছু আলোচনা করছে।আশমিন কে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে চিন্তিত চোখে তাকালো আমজাদ চৌধুরী।কামিনী চৌধুরীর কপালে ও ভাজ পরেছে।আশমিন কারোর দিকে না তাকিয়ে সোজা নূরের রুমে চলে গেলো। নূর নিজের ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। হুট করে আশমিন কে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। আশমিন নূরের কাছে গিয়ে মুখোমুখি দাড়ালো। নূর ল্যাপটপ ছেড়ে আশমিনের সামনে দাড়াতেই আশমিন মলিন হাসলো। ক্লান্ত গলায় বলল,

— আমাকে একটু জরিয়ে ধরবে নূর?

আশমিনের এমন গলা শুনে হালকা কেপে উঠলো নূর। জহুরি চোখে পর্যবেক্ষণ করল আশমিন কে।রাগী গম্ভীর লোকটা কে আজ ভঙ্গুর লাগছে।নূর এগিয়ে গিয়ে আশমিন কে হালকা হাতে জরিয়ে ধরলো। আশমিন তাদের মধ্যকার ফাকা টুকু ঘুচিয়ে নূর কে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। নূরের দম বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও কিছু না বলে আশমিন কে শান্ত হতে সময় দিলো।আশমিনের বুকের কাপনি স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে।কপালে কয়েকটা ভাজ পরলেও খুব একটা পাত্তা দিল না।কয়েক মিনিট এভাবে কাটার পর নূর নিজের মুখ খুললো।

— খারাপ সময়ে এভাবে জরিয়ে ধরার জন্য একজন মানুষ দরকার।যে হবে একান্ত ব্যক্তিগত। সে দিক থেকে আপনি আমার চেয়ে লাকি মন্ত্রী সাহেব। আমি আবার খারাপ সময়ে মানুষ কে দুরছাই করতে পারি না।

নূর কে ছেড়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো আশমিন।নূরের সুক্ষ্ম খোচা সে বুঝতে পেরেছে। নির্লিপ্ত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। নূর গভীর মনযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো পুরোটা। আশমিন বরাবরের মতো শান্ত গলায় বললো,

— তুমি আমার থেকেও ভাগ্যবান নূর। আমি আগেও বলেছি এখন ও বলছি,কখনো এমন কোন কাজ করবে না যার জন্য পরে অপরাধবোধে ভোগো।ধনুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া তীর আর মানুষের মুখের কথা কখনো ফেরত আসে না। তোমাকে বলা আমার কথাগুলো ও কিন্তু আমি ফিরিয়ে নিতে পারিনি। আমার তখনকার অপারগতা ও ওই কথাগুলো কে মলিন করতে পারে নি। একই ভুল তুমি করলে আমার খারাপ লাগবে।

কথা গুলো বলে যেভাবে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চলে গেলো আশমিন। নূর শান্ত চোখে তাকিয়ে দেখলো আশমিনের চলে যাওয়া।কিছুতো একটা হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে তা বুঝতে পারছে না নূর।

সেদিন রাতে এভাবে নূরের লাগানো আ*গুন নিভিয়ে দিয়ে নূরকে অনেকটা কাছে টেনে নিয়েছিল আশমিন।দীর্ঘ ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে এত কাছাকাছি আসা হয়নি তাদের।আশমিন অনেকটা ডুবে গিয়েছিল নূরের মাঝে ভেজা দুটো শরীর একসাথে লেপ্টে ছিল অনেকটা সময়। আশমিন অবাধ বিচরণ করেছে নূরের উপর। দুজনের নিশ্বাস পাল্লা দিয়ে ভারী হচ্ছিল। আশমিন নূরের বুক থেকে মুখ তুলে আশমিনের ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নিতেই নূর আশমিন কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। হুট করেই আশমিন কে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। নূর চোখ বন্ধ করে হাপাচ্ছে।উপর থেকে পানি পরা বন্ধ হয়নি এখনো। নূরের শরীরে পরা পানির বিন্দু গুলো এক একটা মুক্তোর দানা মনে হচ্ছে আশমিনের কাছে।গায়ে লেপ্টে থাকা সাদা শার্ট টা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে দিয়ে নূর কে কোলে তুলে নিলো আশমিন। ততক্ষনে ঘোর থেকে বেরিয়ে এসেছে নূর।আশমিনের কোল থেকে নামার জন্য মোচড়া মুচড়ি করতেই আশমিন বাকা হাসলো। নূরের রক্তিম নাকে হালকা কামড় দিয়ে ভরাট গলায় বলল,

— মোচড়া মুচড়ি করে লাভ নেই। বাসর করতেই তো এসেছো।এখন তোমাকে কিছু না করেই ছেড়ে দিলে তুমি আমার সম্পর্কে ভুলভাল ভাবতে পারো।তবে আমি এভাবে বাসার করতে চাই না বুঝলে।তাই আজ শুধু হতে হতে ও হইলো না টাইপ বাসর হবে। আগুনের ভেজা বাসর।

নূর হতভম্ব হয়ে কথা বলতেই ভুলে গেলো। হাজার কিল ঘুসি দিয়েও আশমিনের হাত থেকে মুক্তি পেলো না। নিজের নখ রাক্ষুসিদের মতো না রাখার জন্য নিজেকেই ভৎসনা করতে লাগলো। তাহলে অন্তত খামচে খামচে এই অসভ্য লোকের চেহারার নকশা বদলে ফেলা যেতো। সেদিন এক অন্য আশমিন কে আবিষ্কার করেছিল নূর।যাকে ভাবলে মনের মধ্যে শুধু একটা কথাই আসে।আর তা হলো, অসভ্য অসভ্য অসভ্য।

পরের দিন থেকেই দুজন ঠান্ডা জ্বর লাগিয়ে কেলেঙ্কারির বাধিয়ে ফেললো। আশমিন কে দেখে সানভির মনে হলো তার সামনে একটা পাকা টমেটো ঝুলে আছে।বাসর করতে গিয়ে এভাবে জ্বর বাধানোর কি হলো আজব!এমন হলে তো সে মোটেও বাসর টাসর করবে না। আশমিন জ্বর নিয়ে পরপর কয়েক টা মিটিং করে ফেললো। এদিকে নূর শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে আশমিন কে বকে গেলো। কয়েক হাজার অভিশাপ দিয়ে ও খান্ত হলো না। আশমিনের কাবার্ডের সমস্ত সাদা শার্ট গুলো জ্বালিয়ে দিলো।এই সাদা শার্ট পরা দেখেই সে পিছলে গিয়েছিল। দুই দিন রুমের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে রইলো। এই অবস্থায় বাইরে গিয়ে লোক হাসানোর মানেই হয় না। অথচ আশমিন নির্দিধায় নিজের কাজ করে গেলো।একবেলায় জ্বর ছেড়ে গেলেও ঠান্ডা তাকে কুপকাত করে ফেললো। আশমিন কয়েক বার বিরবির করে বলে ও ফেললো, বউয়ের অভিশাপ বউয়ের অভিশাপ।

তার পর থেকে টানা সতের দিন দুজনের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ। নূর আশমিন কে এড়িয়ে চলেছে এ কয়দিন।আশমিন ও সেদিকে পাত্তা দেয় নি। আজ হুট করেই আশমিন এভাবে সামনে চলে এসে বিভ্রান্ত করে দিয়ে গেলো নূর কে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো নূর। আকাশের মস্তো বড় চাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো নিজের অগোছালো জীবন নিয়ে।সব কিছু স্বাভাবিক থাকতে পারতো।অন্য সব মেয়েদের মতো সে ও একটা সাজানো গোছানো সংসার করতে পারতো।কয়েকজন মানুষের লোভ তাদের জীবন টা এলো মেলো করে দিয়েছে।ফোনের শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো নূর।

— বলো অমি।

— ম্যাম, মতি মিয়ার খোজ পাওয়া গেছে।আজ সকালে আশমিন স্যারের লোকেরা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।কিছুক্ষণ আগে থেকেই তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরিবার ও কয়েক ঘন্টার মধ্যে উধাও।

— তাদের খোজা বন্ধ করো অমি।আপাতত তোমার স্যারের উপর নজর রাখো।সে যেন বুঝতে না পারে কিছু।

— ওকে ম্যাম।

অমি ফোন রাখতেই নূর চাঁদ দেখায় মনোযোগ দিল।

— এই খেলার শেষ ধাপে আপনি ই আমাকে নিয়ে যাবেন মন্ত্রী সাহেব। আজ থেকে আমার কাজ গুলো আপনার। (বাকা হেসে)

সকালের নাস্তার টেবিলে আশমিন কে সবার আগে উপস্থিত হতে দেখা গেলো। নিজের মতো করে গুন গুন করছে সে।নূর রেডি হয়ে এসে বসলো তার চেয়ারে।আশমিনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। আমজাদ চৌধুরীর ছেলের মতিগতি ভালো ঠেকছে না। কামিনী চৌধুরীর সেদিকে ধ্যান নেই। সে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। একজন গার্ড এসে একটা খাম কামিনী চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিলো। রেজিস্ট্রার করা এনভেলাপ। কামিনী চৌধুরী ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো।

— এখানে আপনার সাইন লাগবে ম্যাম।

গার্ডের কথায় রেজিস্ট্রার খাতায় সাইন করে খামটি হাতে নিল সে।ভিতর থেকে বের হওয়া ডকুমেন্ট পড়তেই মাথা ঘুরে গেল তার।হাত পা কাপতে লাগলো। নূর বাকা হেসে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আমজাদ চৌধুরী সন্দিহান গলায় বলল,

— এটা কিসের কাগজ কামিনী?

কামিনী চৌধুরী কিছু বলতে পারলো না। অতিরিক্ত শকে কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে। নূর সেদিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,

— কোর্ট থেকে নোটিশ এসেছে।কোম্পানি থেকে সারে তিন শ কোটি টাকা হেরফের করার জন্য তাকে কোম্পানি কে চার শ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। তা ও আগামি দুই মাসের মধ্যে।

আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব হয়ে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালো। আশমিন একটা পেপার আমজাদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

— এসব বাদ দাও আব্বু।এখানে একটা সাইন লাগবে। তারাতাড়ি করে দাও তো।

আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব চোখে পেপারের দিকে এক পলক তাকালো। কয়েক পলক সেদিকে তাকিয়ে থেকে নির্লিপ্ত ভাবে সাইন করে দিলো পেপারে।

— ধন্যবাদ আব্বু।ওহ,আরেকটা কথা। আমি ভেবেছি তোমাকে আবার বিয়ে করাবো।মিসেস চৌধুরী ও থাকবে।তবে নূরের নাকি একটা ননদ লাগবে।তাই তোমার একটা বিয়ে করা দরকার। সানভি কিছু ছবি দিবে। দেখে পছন্দ করে রেখো।

নূরের বিষম লেগে পানি তালুতে উঠে গেলো। কামিনী চৌধুরী চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। আমজাদ চৌধুরী ছেলেকে ধমক দিতে ও ভুলে গেলো।

আশমিন নূরের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল।

চলবে