#ইতি_তোমার_সুখফুল
#দুখীফুলের_দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_৫
ফুল আর চিঠি লেখে না। লোক দেখানো হাসিটাও হাসে না। সবসময় কাজ নিয়ে পড়ে থাকে। মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ারও কোনো আগ্রহ দেখায় না। ফুল নিজের জগত তৈরি করে নিয়েছে সেই চিঠি পাওয়ার পর থেকে। মনে অদম্য অভিমান পুষে সামনে আগাচ্ছে সে। কার জন্য এতো যন্ত্রণা সহ্য করছে ফুল যে, তার কথা ভাবে না। ফুল নিজেকে তৈরী করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শুভর চিঠি পড়ার পর বাকী দুই চিঠি খুলে দেখেনি সে। চিঠি দুটো অযন্তে ড্রয়ারে পড়ে আছে। ফুল যদি একবার সেই চিঠি দুটো খুলে পড়তো, তাহলে শুভর কাছে চলে যেতো। শুভর এতো বছরের অবহেলা, অবজ্ঞা ভুলে যেতো। আফসোস, ফুল পড়লো না।
এতোদিন ফুল শাহিন নেতার নাম শুনে এসেছে। কখনো দেখেনি, আগ্রহ জন্মায়নি। ফুলকে ফুসলিয়ে সংগঠন বন্ধ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হয়নি। ফুল শাহিনকে ভয় পায়না। ফুল জানে, সে সৎ। তার সততার জোড়ে একদিন সে সকল বাঁধা অতিক্রম করে সফলতা অর্জন করবে। ফুল ঘরের মধ্যেই আছে। এই মাসে সংগঠনের জন্য চরজন মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছে। মূলত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সময় নিচ্ছে সে। কাজ থেকে দূরে থাকার আরো একটি কারণ হলো আদিল ও সাগরিকা। সাগরিকার দ্বিতীয় বাচ্চাটা দুইমাস হওয়ার আগেই গর্ভপাত হয়ে যায়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক উন্নতি হলেও মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এজন্য আদিল দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। চার বছর পর ঘরের সন্তান ঘরে ফিরবে দেখে ফুলের শাশুড়ির খুশির অন্ত নেই। ছেলে ফেরার উপলক্ষে সারাবাড়ি রং করিয়েছেন। বাগানের ঘাস পরিষ্কার করিয়ছেন। শিউলি ফুলের গাছের চারপাশের ঘাস উঠিয়ে নিয়েছেন। ফুল দোতলা থেকে শিউলি ফুলের গাছের দিকে তাকিয়ে রয়। তার হাতে রং মাখানো সাদা উড়না। যেখানে শুভ ও ফুলের হাতের ছাপ রেয়েছে। ফুলের চোখের সামনে ভেসে উঠে বিয়ের পরের বছরের স্মৃতি।
ফুলরা তখন উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। ফাইনাল পরীক্ষার চারমাস আগে তখন শিউলি ফুলের মৌসুম ছিল। ফুল প্রতি সকাল সন্ধ্যা নিয়ম করে ফুল কুড়াতে চলে যেতো। একদিন গাছের গোড়ায় অসাবধানতা বশত পা লেগে কে’টে গিয়েছিল। শুভ সেদিন পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছিল। পরেরদিনই ইট সিমেন্ট দিয়ে গাছের চারপাশে বিছিয়ে দিয়েছিল। শুভর প্রিয় লাল রং দিয়ে রংও করে দিয়েছিল। শুভ নিজের হাতে রং করেছিল। ফুল তখন সামনেই ছিল। রং করা শেষ করে শুভ, ফুলের উড়না টেনে ধরেছিল। ফুল সামান্য ভয় পেয়েছিল বটে তবে শুভর মন ভুলানো হাসি দেখে নিজেকে সামলে নিয়েছিল। শুভ ফুলের ওড়না ঘাসের উপর বিছিয়ে নিজের ও ফুলের হাতে রং মেখে হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে বলেছিল,” আমাদের বাচ্চাকালের কিছু স্মৃতি রেখে দেই। বুড়ো হলে নাতি নাতনিদের দেখিয়ে বুখ ফুলিয়ে বলব, দেখ নাতিরা! তোর দাদীকে আমি কতো জ্বালাতন করতাম!”
ফুল সেদিন শুভর সাদা টি শার্টে রং মাখিয়ে উত্তর দিয়েছিল,” আমি কিন্তু তোমাকে জ্বালাতন করি না। নাতি নাতনিদের কাছে আমাকে খারাপ বানালে ভালো হবে না।”
শুভ উচ্চস্বরে হেসে বলেছিল,” আমি তার থেকেও খারাপ কথা বলব, নাতি নাতনিদের।”
ফুল রেগে শুভকে সারা বাগান দৌড়িয়েছিল। শুভ ইচ্ছে করেই ফুলকে ক্ষ্যাপানোর জন্য দুষ্ট কথা বলেছিল।
অতীতের কথা স্মরণ করে ফুল আনমনে হেসে ফেলল। ঠোঁটের কোণে হাসি অথচ চোখে বিরহের পানি। ফুল ওড়নায় শুভর হাতের ছাপের উপর চুমু খেলো। ওড়না গায়ে জড়িয়ে বলতে থাকল,” আমার অভিমান আজ উচ্চ আকাশে। শত চেষ্টা করলেও তুমি এই অভিমান ভাঙতে পারবে না।”
—————–
দুপুর তিনটায় আদিলরা দেশের মাটিতে পা রাখে। বাড়ি আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে। এই সময়টুকুতে ফুল নিজের সব কাজ করে নিলো। রান্না থেকে শুরু করে, ঘর গোছানো সবকিছু নাসিমাকে নিয়ে করে ফেলেছে সে। ফুলের শাশুড়িই প্রথম হাত দিয়েছিল, ফুল নিষেধ করে দেয়। এতো বছরে ফুল শাশুড়ির, মায়ের স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। অনিয়ম হলেই ছোট বাচ্চাদের যেভাবে শাসন করে সেভাবে শাশুড়ির শাসন করে, ফুল। সুইটি খানম বউরূপী মেয়েদের শাসন মাথা পেতে নেয়। ছেলেদের ছাড়া এভাবেই দিন পাড় করেছে সুইটি খানম। দুই ছেলের মাঝে আদিল জান হলে শুভ সুইটি খানমের প্রাণ। আদিল ভালো আছে তিনি জানেন কিন্তু ছোট ছেলে ভালো থেকেও ভালো নেই তিনি জানেন। ছেলের জন্য দীর্ঘ চার বছর দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছেন তিনি। তবে আজ সুইটি খানমের খুশির অন্ত নেই। কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অনেকদিন পর ফুল বিরিয়ানি রান্না করেছে। অবশ্য আদিল আবদার করাতে রান্না করেছে সে। শুভর মতো আদিলও ফুলের হাতের বিরিয়ানি খুব পছন্দ করে। সাগরিকা ফুলের হাতের পায়েস খেতে চেয়েছে। কাজ শেষ করে ফুল উপরে উঠতে নিলে শাশুড়ি ডেকে উঠলো। ফুল শাশুড়ির ঘরে গেলে দেখতে পেলো, বিছানার উপর কয়েকটা শাড়ি বিছিয়ে আসে আছে সুইটি খানম। উনার চিন্তিত মুখখানা দেখে ফুল হেসে ফেলল। কোথাও যাওয়ার আগে অথবা বাসায় মেহমান আসলে সুইটি খানমের মুখ এমন হয়ে যায়। উনি ছোট বাচ্চাদের মতো পোশাক বাছাই করতে দ্বিধায় পড়ে যান। ফুল কাছে গিয়ে মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলল,” ছোট বাচ্চাদের মতো বিছানায় শাড়ি ছড়িয়ে রেখেছো কোনো, মা?”
সুইটি খানম গালে হাত রেখে বললেন,” দেখতো, কোন শাড়িটা পরবো? এতোদিন পর ছেলে মেয়েরা আসবে। আমাকে পরিপাটি হয়ে থাকতে না দেখলে ভাববে, নিজের যত্ন নেইনি। আমার নাতির সামনে স্মার্ট দাদী না সাজলে কী ভাব জমাতে পারব?”
ফুল হাসে। বেছে বেছে কাঁঠালি রঙের শাড়ি হাতে নিলো, ফুল। বলল,” এটা পরো।”
সুইটি খানমের চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। ফুলের হাত থেকে শাড়ি নিয়ে বলল,” আরেহ, এই শাড়িটা তো শুভ কিনে দিয়েছিল। জানিস শাড়িটা কেনার সময় পাগলটা কি করেছিল? বিকালে শাড়িটা দোকানে দেখে এসেছিল তখন নাকি পছন্দ হয়নি। এরপর রাতের দশটায় তার মনে হলো শাড়িটায় আমাকে মানাবে। তখনই মার্কেটে কিনে আনতে গিয়েছিল। দোকানী তো তখন দোকান বন্ধ করে দিচ্ছিল। শুভ চিৎকার চেঁচামেচি করে দোকান আবার খুলিয়ে নিয়ে আসছিল। পাগল ছেলে একটা!”
ফুল মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে কথা শুনছিল। ছেলের কথা বলতে বলতে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। চোখের পানি মুছে পুনরায় বলল,” তোর জন্যও একটা শাড়ি রেখেছি।”
ফুল বলল,” আমি শাড়ি পরব না, মা।”
ফুলের শাশুড়ি কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ” মায়ের মুখের উপর কথা বলা শিখে ফেলেছিস? আমি বলছি মানে পরতেই হবে। ফ্রেস হয়ে আয়, আজ আমি ঠিক আগের মতো শাড়ি পরিয়ে তোকে সাজিয়ে দিব।”
ফুল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মাঝে মাঝে মনে হয়, ফুলের শাশুড়ি পারলে ফুলকে পুতুল সাজিয়ে নিজের সামনে বসিয়ে রাখতো। ফুলের আফসোস হয় এই ভেবে যে, কোনো তার ঘরে কন্যা সন্তান জন্ম নিলো না? পরমুহূর্তে আবার ভাবে, মেয়ে হলে তো ফুল এতো আদর ভালোবাসা পেতো না।
ফুলের শাশুড়ি বেগুনি রঙের শাড়ি বাছাই করলো ফুলের জন্য। ফুলকে বলল,” তুই শাড়ি নিয়ে ঘরে যা। আমি একটু পর এসে শাড়ি পরিয়ে দিব।”
ফুল শাড়ি নিয়ে উপরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফুলের শাশুড়ি এসে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলো। সাজাতেও ভুলল না। চোখে মোটা করে কাজল এঁকে দিয়ে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো। চুলগুলো খোঁপা করে দিল। আয়নার সামনে দাড়িয়ে ফুল নিজেকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। শাড়ি পরাতে নিজেকে পূর্ণাঙ্গ নারী মনে হচ্ছে। সেই আগের ফুলের মতো একদমই লাগছে না। এই ফুল শুঁকনো, ছোট ফুল নয়। সুস্থ, স্বাস্থ্য সম্পন্ন পরিপূর্ণ নারী। ফুল আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। কি লাভ, নিজেকে খুঁটিয়ে দেখার? তার জীবনের রং, আনন্দ কিছুই অবশিষ্ট নেই।
ঘরে বসে দরকারী কাগজপত্র উলোটপালোট করছিল। আরো একঘণ্টা লাগবে আদিলদের আসতে। ফুলের হঠাৎ মনে হলো, শুভকে নিয়ে কিছু লেখার। অবশ্য ফুল চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু মনকে শান্ত করার জন্য লেখাই যায়। শুভর কাছে না গেলেই হয়। ফুল কাগজ কলম নিয়ে লেখল,
প্রিয়,
চার বছর! চারটি বছর পেরিয়ে গেল, আর তুমি বাড়ি ফিরোনি। সময়ের সাথে সাথে আমার জীবনের প্রতিটি কোণ যেন শূন্য হয়ে গেছে, একমাত্র তোমার উপস্থিতি ছাড়া কিছুই পূর্ণতা পায় না। প্রতিটি দিন চলে যায়, কিন্তু তোমার অভিমান যেন আমার হৃদয়ে গভীর ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে।
তুমি যখন চলে গিয়েছিলে, আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে এটা সাময়িক কিছু। হয়তো কিছুটা সময় নিয়ে তুমি ফিরে আসবে, হয়তো কিছুটা সময়ের পর আমরা আমাদের পুরনো সম্পর্কের শিহরণ ফিরে পাব। কিন্তু, চার বছর ধরে তোমার ছাপ ছাড়া এই ঘর শূন্য। এতদিন তোমার অপেক্ষা করতে করতে আমি ভাবি, আমার কি ভুল ছিল? কি এমন ঘটেছিল যা তোমাকে এতটা দূরে ঠেলে দিয়েছে? পিতাকে শেষ দেখার শাস্তি এভাবে দিলে?
আমার চোখে, তুমি কেবল স্বামী নয়, আমার সঙ্গী, আমার বন্ধুও ছিলে। আমরা একসাথে স্বপ্ন দেখেছিলাম, একসাথে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়েছিলাম। সেই মুহূর্তগুলো এখন শুধু স্মৃতি, আর তাতে তোমার অনুপস্থিতি যেন এক অমোচনীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। আমি জানি, তুমি অভিমান করে দূরে চলে গিয়েছিলে, কিন্তু আমার ভেতর সেই অভিমান এখনও অজানা। তুমি কি জানো, আমি এক মিনিটও তোমাকে ভুলে থাকতে পারি না? তোমার অভিমান আমাকে প্রতিটি মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন করেছে, কিন্তু আমি জানি না কিভাবে তা ঠিক করতে হবে।
তুমি ফিরে এসো, শুধু আমাদের পুরনো সম্পর্ক আর কখনো ভাঙা হোক না। ফিরে এসো, যেন আমাদের জীবনের সমস্ত অসমাপ্ত অধ্যায় সম্পূর্ণ হয়। আমি জানি, অনেক কিছু হতে পারে যা আমাদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, কিন্তু আমি এখনও আশা করি আমাদের মধ্যে সেই ভালোবাসা আছে যা সময়ের ধারে ক্ষয়ে যায় না।
তুমি ফিরে এলেই, আমি তোমাকে সে সমস্ত কথা বলব যা আমি এতদিন চুপ করে রেখেছি। তুমি কি জানো, আজও আমি তোমার সেই হাসির অপেক্ষায় আছি, সেই হাসি যা এক সময় ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। আমি তোমাকে ভালোবাসি, এবং তা কখনো কমবে না, যতই সময় কাটুক না কেন।
তুমি যখন ফিরবে, তখন আমরা আবার একসাথে হাসবো, একসাথে বাঁচবো—সেই দিনের অপেক্ষায় আমি প্রতিটি মুহূর্ত গুনছি।
ইতি,
তোমার সুখফুল।
চিঠি লেখা শেষ করে ফুল গভীর ভাবনায় মশগুল হয়ে পড়লো। ফুলের মুঠোফোন তখন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখল, আরিফার কল। রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে চিৎকার শুনতে পেলো। ফুল কান থেকে ফোন সরিয়ে নিলো। এই মেয়েটা হাতে পায়ে বড়ো হয়েছে কিন্তু স্বভাব সেই বাচ্চাদের মতোই আছে। ফুল লাউডস্পিকারে ফোন রেখে কাগজগুলো গুছিয়ে নিতে নিতে বলল,” নিচু আওয়াজে সুন্দরভাবে বল, নয়তো রেখে দিচ্ছি।”
আরিফা দ্বিগুণ স্বরে চিৎকার করে উঠলো,” দোস্ত, রাখিস না। গরম গরম নিউজ দিতে ফোন করেছি।”
ফুল জিজ্ঞেস করল,” তোর গরম গরম নিউজ নিশ্চয়ই নাফিসকে নিয়ে! কি করেছে নাফিস?”
ফোনের অপরপাশ থেকে আরিফার হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ফুল নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলল। এই মেয়ে কখনো ভালো হবে না। আরিফা সুর টেনে বলল,” দোস্ত রে! তোর বন্ধ আজ আমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছে।”
ফুলের হাত থেকে কাগজগুলো পরে গেলো। ফ্যানের বাতাসে কাগজগুলো উড়ে দরজার বাহিরে চলে গেলো। ফুল লাউডস্পিকার বন্ধ করে আরিফাকে ধমক দিল,” অসভ্য মেয়ে, নিজেদের পার্সোনাল কথা এভাবে অন্যকে কেউ বলে?”
আরিফা উত্তর দিল, তুই অন্যকেউ নাকি? তুই তো আমার বেস্টফ্রেন্ড।”
” যাই হই। আর কখনো বলবি না।”
” কেনো হিংসা লাগে নাকি, ব্রো!”
আরিফার কণ্ঠে দুষ্ট হাসি। আকস্মিক ফুলের কী হলো কে জানে? শরীরে অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো। ফুলের মনে পড়লো, শুভর প্রথম ছোঁয়ার দিনটির কথা। ফুলকে যেদিন শুভ ছুঁয়ে দিল সেদিন ফুলের থেকে বেশি শুভ নার্ভাস ছিল। এতোদিন পর সেই দিনটার কথা মনে পড়তে হলো? ফুল চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে উত্তর দিল,” বাজে কথা বকিস না। ফোন রাখ।”
আরিফা রাখলো না উলটে বলল,” দোস্ত, একবার চুমু খায়নি তো! চারবার চুমু খেয়েছে।”
ফুল নিচু হয়ে কাগজ উঠাচ্ছিল। আরিফার কথা শুনে কান থেকে ফোন নিচে পড়ে গেলো। শুধু পড়লোই না, কীভাবে যেনো লাউডস্পিকার চালু হয়ে গেলো। ফুল, ফোন হাতে নিয়ে লাউডস্পিকার বন্ধ করতে নিচ্ছিল তখনই দরজার সামনে একজন আগন্তুক আসলো। বসা অবস্থায় ফুল শুধু পা দেখতে পেলো। আরিফা সমান তালে তার কথা চালিয়ে যাচ্ছে,” দোস্ত রে! প্রথম চুমুর অভিজ্ঞতা নিয়ে শরীর কেমন নিশপিশ করছে রে! তোকে সামনে পেলে প্র্যাক্টিক্যালি দেখাতাম। সে কী উত্তেজনা!!!
ফুলের কানে আরিফার কোনো কথা প্রবেশ করছে না। সে মাথা উঁচু করার সাহস পাচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে, এই পা জোড়া তার সর্বনাশের কারণ। ফুল দেখলো, পা জোড়ার মালিক ধীরপায়ে দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে। ফুল থরথর করে কাঁপছে। তার নাকে চিরচেনা ঘ্রাণ ভেসে আসছে। পা জোড়ার মালিক ফুলের সামনে এসে বসলো। চোখ তুলে ফুল তাকালো না। দুরুদুরু বুকে কাঁপতে থাকলো বসেই। মানুষটা কয়েকটা কাগজ তুলে নিলো। একটি কাগজে চোখ সামনে মেলে ধরলো। সময় নিয়ে পড়ে কাগজখানা প্যান্টের পকেটে ঢুকালো। আরিফা তখনই বলে উঠলো,”দোস্ত, তোর প্রথম চুমুর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?”
মানুষটা তখন ফোনের লাউডস্পিকার বন্ধ করে কানে ধরে উত্তর দিল,” মধুরত্বের মতো। সেই স্বাদ এখনো ঠোঁটে লেগে আছে।”
অপরপাশ থেকে আরিফা ফোন কে’টে দিল। মানুষটা ফুলের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,” কেমন আছো, ফুলবউ?”
চলবে……….